#নিভৃতে_যতনে Part_33

0
381

#নিভৃতে_যতনে Part_33

#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

রোদের প্রখরতা বেরে চলেছে। পাখিদের গুনগুনানো ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। পরিবেশটা বেশ নিরিবিলি। আমি বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। রোয়েনের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছি তাঁর শীতল দৃষ্টি আমাতেই নিবদ্ধ। বেশ কিছুক্ষণ পর রোয়েনের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ কর্ণধারে এসে বারি খায়। আমি একপলক রোয়েনের দিকে তাকাই। শ্লেষের হাসি হেসে জিজ্ঞেস করি,

— এখনো বলবেন ওই বাসায় আমার যাওয়া উচিৎ? নাসরিন বেগমের সাথে দেখা করা উচিৎ?

রোয়েন আমার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

— উচিত-অনুচিত নিয়ে আমি কিছু বলছি না। কেন না, এই পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে কুসংস্কারে জড়িত। আমাদের তথাকথিত সমাজের বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয় এইটা। যার ভোগান্তির শিকার তোমার মত হাজারো সিয়াশা। এই বিষয় নিয়ে বললেও যা, না বললেও তা। নাথিং উইল বি চেঞ্জড। আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, যার শুরু তোমার জানা তার শেষ কেনই বা অজানা থাকবে?

আমি রোয়েনের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করি,

— মানে?

— একটা গল্প বা উপন্যাস যখন আমরা পড়ি তখন তার শুরুটা কেমন তা নিয়ে আমাদের কৌতূহল থাকে না।কৌতুহল থাকে উপন্যাসের শেষটা সার্থক কি’না। সার্থকতা উপলব্ধি নিজের মধ্যে ধারণ করার জন্য’ই উপন্যাসটা পড়ি! জীবনটা উপন্যাসের শেষ পাতার মতো।এইখানে,শুরুটা কেউ মূল্যায়ন করে না কিন্তু শেষ দাড়ি টা পর্যন্ত তখন গননা করে যদি তুমি স্বার্থক হও।

— আপনি কি তাহলে চাইছেন আমি ওই বাসায় যাই? মহান সেজে সব ভুলে গিয়ে মাফ করে দেই?

রোয়েন ভাবলেশহীন ভাবে বলেন,

— তোমায় আমি ক্ষমা করতে বলেনি। শুধু এতটুকু বলছি এর শেষ বোঝাপড়াটা বুঝে নাও তুমি। এরপর না-হয় সকল সমীকরণের ইতি আজই টেনে দিও।

আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকি। তা দেখে রোয়েন আবার বলে উঠেন,

— তোমার জীবনের গতানুগতিক ধারা ঠিক কেমন হবে তা ঠিক করবে শুধু তুমি। অন্য কেউ না। যে মনোবল এতদূর এগিয়ে এসেছো তা আঁকড়ে ধরো। গল্পটা শুরু করেছিল অন্য কেউ ইতিটা না-হয় তুমি টানো।

আমি রোয়েনের কথা শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। শীতল চাহনিতে পর্যবেক্ষণ থাকি রোয়েনকে। রোয়েনের বদলে এখন অন্য যে কেউ থাকলে হয়তো আমার প্রতি সে সর্বপ্রথম সহানুভূতি জানাতো। এরপর অনুগ্রহ অথবা সান্ত্বনা দিত। অথচ মানুষটা তা করলো না। এমনকি করুণার দৃষ্টিতেও দেখলো না। বরং আমার মনোবল শক্ত করে দিল। আমি যে দূর্বল হয়ে পড়ছি তা বুঝতে পেরে অপ্রকাশ্যেই বুঝিয়ে দিলো সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে শক্ত থাকতে হয়। সকল পরিস্থিতিতেই তিনি আমার পাশে আছে তা অন্য সকল কথার ভাঁজে বুঝিয়ে দিলেন। মানুষটা আসলেই সকলের মধ্যে অন্যান্য।

_______________________

বাসায় প্রায় শোকের আমেজ। নাসরিন বেগমের রুমে সকলের আনাগোনা। সকলের মুখে বিষন্নতা,নয়ন দু’টি অশ্রুসিক্ত। আমি চোখে-মুখে কঠোরতা বুজিয়ে রেখে দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে আছি। আমার থেকে বেশ কিছু হাত দূরে রোয়েন দাঁড়ানো। আমার সামনের বিছানাতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন নাসরিন বেগম। তার চেহেরা দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার অবস্থা বেশ করুন। যেকোনো সময় আকস্মিক দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমাকে দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই সকলের দৃষ্টি আমার দিকে এসে স্থির হয়। আমার আগমন দেখে মালিহা ফুপু দ্রুত নাসরিন বেগমকে আমার উপস্থিতির কথা জানান দেন। কথাটা তার কর্ণপাত হতেই তিনি ধীরে সুস্থে চোখ খুলে তাকান। ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় আমাকে তার কাছে ডাকেন। আমি বেশ কিছুটা সময় নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যাই। আমাকে এগুতে দেখে মালিহা ফুপু নিজের স্থান ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। আমি বিনাবাক্যেই সেখানে গিয়ে বসে পড়ি। অতঃপর তাচ্ছিল্যের সুরে বলি,

— আজ এই অপয়াকে কেন মনে পড়লো আপনার? শেষ সময় এসেও আমায় কথা শুনিয়ে যেতে চান বুঝি?

আমার এমন কথা শুনে সকলে চকিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। আমি সে দিকে তোয়াক্কা না করে ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকি। নাসরিন বেগম খুব কষ্টে বলে উঠেন,

— তোর লগে বহুত অন্যায় করসি আহমি। অনেক কোষ্ট দিসি তোরে। এতদিন না বুঝবার পারলেও এহন ঠিকই বুঝবার পারসি। মরণের মুখে আইসা বুঝতে পারতাসি জীবনের অনেক বড় বোঝা ঘাড়ে চাইপ্পা আসে আমার। যার লিজ্ঞা আমি মইরাও শান্তি পামু না। পারলে আহমারে মাফ কইরা দিস।

আমি ভ্রু কুটি কুঞ্চিত করে বলি,

— ঠিক কোন বিষয়টার জন্য ক্ষমা চাইছেন আপনি আমার কাছে? আমার গায়ে অপয়া তকমা লাগিয়ে দেওয়ার জন্য? নাকি আমাকে সবসময় অপদস্ত করার জন্য? নাকি আমার গায়ে সকল কিছুর দোষ লাগানোর জন্য? নাকি আমার থেকে আমার পরিবার আলাদা করে দেওয়ার জন্য? নাকি আমার শৈশব কেড়ে নেওয়ার জন্য?

আমার কথাগুলো চারদিকে গুঞ্জিত হতেই ওসমান সাহেব খেঁকিয়ে উঠেন,

— এইসব কোন ধরেন কথা? কখন কার সামনে কথা বলতে হয় জানো না?

আমি চোখ শক্ত করে বলি,

— না, জানি না। তা সত্য বলছি বলে গায়ে লাগছে? সত্যি অবশ্য সবসময় তেঁতোই লাগে। কিছু করার নেই। সে যাই হোক, আমি তো সকলের বেডলিস্টে পড়ি তাই আমার স্বভাবও এমনই। কিন্তু আপনাদের সকলের গুডলিস্টে থাকা এই বাড়ির বড় মেয়ে কোথায়? আসেনি নাকি?

মালিহা ফুপু ফোঁস করে বলে উঠেন,

— সে আসতে পারবে না জানিয়েছে।

আমি আফসোসের সুরে ‘চ’ উচ্চারণের মত শব্দ করে উঠে বলি,

— কিয়ারার জন্য কত কি-না করলো নাসরিন বেগম। ছোট থেকে আগলে রাখলো তাকে অথচ আজ তার শেষ সময়েই সে নেই?

হঠাৎ নাসরিন বেগম ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন,

— সবই ভাগ্যের লীলাখেলা। তাই তো এহন শেষ বয়সে আইসা ভুগতাসি আমি৷ কিন্তু দেহার মত কেউ নাই। যারে পাইল্লা বড় করলাম হেই এখন আমায় চেনে না। তুই পারলে আহমায় মাফ কইরা দিস। তোর মাফ না পাইলে যে আমি মইরাও শান্তি পাইতাম না।

আমি চোখ মুখ শক্ত করে বলি,

— মাফ করা কি এতই সহজ? দুধভাত নাকি বিষয়টা?

হঠাৎ বড় চাচী বলে উঠেন,

— মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের আবেদন কখনো ফিরিয়ে দিতে হয় না মা। এতে গুনাহ হয়।

কথাটা শুনে আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলি,

— অহ তাই নাকি? তা আল্লাহ বানানো সেরা সৃষ্টিকে অপয়া বা অলক্ষুণে বললে তাতে গুনাহ হয় না? মিথ্যে অপবাদ দিলে তাতে গুনাহ হয় না? যেখানে জন্ম-মৃত্যু এক আল্লাহর হাতে, সেখানে মৃত্যুর দোষ এক ছোট নবজাতক বাচ্চার উপর চাপালে গুনাহ হয় না?

মালিহা ফুপু এইবার বলে উঠেন,

— গুনাহ তো সবাই করে কিন্তু মাফ কতজনে করতে পারে? মাফ করা হচ্ছে বৃহৎ গুণ। আর যেখানে শয্যাশায়ী মানুষটা নিজেই নিজের ভুলে বুঝতে পেরে মাফ চাইছে সেখানে কথা বাড়ানোর মানে হয় না।

— তাহলে আমাকে এখন মহান হতে বলা হচ্ছে? সকলের করা অন্যায় ভুলে যেতে বলা হচ্ছে? আচ্ছা বেশ! আমিও মাফ করে দিব। কিন্তু এর আগে আমার এক শর্ত আছে।

বড় চাচা ভ্রু কুঁচকে বলেন,

— কি?

আমি নির্বিকার কন্ঠে বলে উঠি,

— হুম একটু দাঁড়ান বলছি। হৃদিপু! আমাকে একটা সাদা কাগজ এনে দিও তো।

হৃদিপু কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,

— কেন?

— আগে আনো তারপরই বুঝতে পারবা।

হৃদিপু আর পাল্টা প্রশ্ন না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ক্ষণেই একটা সাদা কাগজ নিয়ে আবার ফেরত আসে। কাগজটা আমায় হাতে দিতেই আমি সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকি। সকলের উৎসুক দৃষ্টি আমার পানে। আমি একপলক রোয়েনের দিকে ক্ষণেই হাতের কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে ফেলি। মুহূর্তেই অসংখ্য ভাঁজের দাগ পড়ে যায় কাগজের গায়ে। আমি পুনরায় কাগজটা মেলে ধরে সকলের উদ্দেশ্যে বলি,

— এই কাগজের সকল ভাঁজের দাগ দূর করতে পারলেই আমি সকলকে ক্ষমা করে দিব।

কথাটা শোনা মাত্র সকলে হতবুদ্ধির মত আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ ওসমান সাহেব গলা খ্যাঁকিয়ে বলেন,

— মশকরা হচ্ছে? এইটা কোন ধরনের শর্ত শুনি?

আমি শীতল কন্ঠে বলি,

— শর্তের আবার প্রকারভেদ আছে নাকি? শর্ত তো শর্তই।

মাহিলা ফুপু মাঝ দিয়ে বলে উঠেন,

— এইটা অসম্ভব। কাগজের গায়ে একবার ভাঁজের দাগ পড়লে সেটা আবার ঠিক করে কিভাবে মানুষ?

— শুনেছি, কাউকে কষ্ট দেওয়ার পর ক্ষমা চাইলে নাকি সব ঠিক হয়ে যায়। তা আমি যদি এখন কাগজটা থেকে ক্ষমা চাই তাহলে কি সে তার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে?

বড় চাচা গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,

— কি বোঝাতে চাইছো তুমি?

আমি শ্লেষের হাসি হেসে বলি,

— সামান্য কাগজের ভাঁজের দাগই আপনারা মুছে ফেলতে পারছেন না সেখানে আমাকে বলছেন আমি এত বছরের তিলে তিলে পাওয়া কষ্ট এক নিমিশেই ভুলে যাব? এই ভাঁজের দাগগুলোর মতই হচ্ছে আমার কষ্টগুলো। আমার হৃদয়ে লাগা ক্ষতগুলো। যা একবারে চিরস্থায়ী। হয়তো ক্ষমা করা যায় কিন্তু অন্তঃস্থলে লাগা এই দাগগুলো কখনো মুছা যায় না।

আমার কথা শুনে সকলে যেন বাক্যহারা হয়ে যায়। কারো মুখে নেই কোন কথা। সকলে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তপ্ত নিঃশ্বাস ত্যাগ করে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলি,

— কারো দোষ দেওয়ার মত যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু দোষ না দিলেও আপনারা সকলেই দোষী। যেখানে আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা পাতাও নড়ে না সেখানে আপনারা সকলে বিভিন্ন পরিস্থিতি আর মৃত্যুর দায়ভার আমাকে দিয়েছেন। আমার যা প্রাপ্য তা থেকে আমায় বঞ্চিত করেছেন। আমি কিয়ারার সাথে কখনোই কিছু করি নি অথচ কেউ তা বিশ্বাস করেন নি। সেদিনও কিয়ারাকে আমি ধাক্কা দেই নি। তাকে আঘাত করিনি। তখন নাসরিন বেগমও জানতে আমি নির্দোষ। সে দূর থেকে দেখেছিল ঘটনাটা। কিন্তু তাও, তিনি কিছু বলেন নি বরং আমাকেই দোষী বলে আমার পরিবার থেকে আলাদা করে দিলেন। আর সকলেও আমাকে দূরে সরিয়ে দিলেন। ক্ষণেই হয়ে উঠলাম সকলের অবহেলার পাত্রী। যখন আমার সকলের দরকার ছিল কেউ ছিল না আমার পাশে। আমি কখনো কোন কিছুতে কাউকে পাইনি। যার ফলে শৈশবটা ছিল আমার বিষাদময়। আজ এতটা কঠোর আর বেপরোয়া হয়েছি আপনাদের বদালতে। আর এখন এসে সেই আমার থেকেই আশা করছেন ক্ষমা করার?

কথাগুলো শুনে কারো মুখে রা নেই। সকলেই নিশ্চুপ। তা দেখে আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলি,

— কিয়ারা আর আমি দুইজনই ছিলাম এই বাড়ির মেয়ে। অথচ আমাদের বৈষম্য করা হতো। কিয়ারা ভুল করেও সব পেয়েছে আর আমি ভুল না করেও কিছু পাইনি। কিন্তু এর জন্য কিয়ারাকে আমি ঈর্ষা করি না। কিন্তু ও আমার সাথে যা করেছে তার জন্য আমি ওকে ঘৃণা করি। প্রচন্ড ঘৃণা করি।

নাসরিন বেগম আবার ডুকরে কেঁদে উঠে ক্ষমাপ্রার্থী হন। বাসার সকলেই কম বেশি এক বলতে থাকে। দুই-একজনের সুরে অনুতাপের রেশ। আমি চোখ শক্ত করে সেগুলো শুনতে থাকি। অতঃপর কাঠ কাঠ গলায় বলি,

— কাউকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো কি-না জানি না।।বলবও না চেষ্টা করবো। তাই এই নিয়ে আমায় আর কিছু বলবেন না। আপাতত এই বাড়ির সাথে আমি আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না। এই বাসায় আজ আমার শেষ আসা। আশা করি, এরপর থেকে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না বা ক্ষমা চাওয়ার অযুহাত খুঁজবেন না। এখন আসি!

কথাটা বলে আমি উঠে দাঁড়াই। একপলক মা আর হৃদিপুর দিকে তাকিয়ে বলি,

— চিন্তা নেই তোমাদের দুইজনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবো না। ভালো থেক।

এই বলে আমি রোয়েনের সাথে বেরিয়ে আসলাম। সিড়ি ভেঙে যখন নিচে নেমে এসে দাঁড়াই। চোখ প্রচন্ড জ্বালা করছে আমার। বার বার আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ কচলাচ্ছি। তা দেখে রোয়েন শীতল কন্ঠে বলে উঠেন,

— সবসময় কান্না দূর্বলতার পরিচয় বহন করে না। কিছু কান্না হয় একান্ত নিজের, যা জীবনের পথচলায় সাহায্য করে। তাই মাঝে মধ্যে নিজের জন্য হলেও কাঁদা উচিৎ।

ক্ষণেই আমার নয়ন দুইটির বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়ে অজস্র অশ্রুমালা। আমি কিছু না ভেবে রোয়েনকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে। রোয়েনও সপ্তপর্ণে আমায় আগলে নেন। আমার মাথার পিছে হাত গলিয়ে দেন। আজ আমি কেন কাঁদছি জানি না। শুধু জানি বড্ড হালকা লাগছে আজ আমার। ভারি মনটা এতদিন পর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। যার ফলে আজ নিজেকে ধরে রাখা দুষ্কর আমার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর শীতল কন্ঠে বলেন,

— আমি আছি তো।

কথাটা কর্ণধারে এসে বারি খেতেই আমি স্থির হয়ে যাই। অশ্রুর গতানুগতিক ধারা কমে আসে। হঠাৎই মনের মাঝে খেলে যায় প্রশান্তি উতলা ঢেউ। কথার ভাঁজে লুকিয়ে থাকা নির্ভরতা হ্রাস করে দিল আমায় ক্ষণেই। মনে হতে থাকলো, এই স্বার্থপর দুনিয়াতে আমার আপন বলে কেউ একজন আছে। যে কি-না একান্ত আমার। যার তীরেই কি-না আমার নির্ভরযোগ্য স্থান। এই মানুষটি আমার পাশে থাকলে যে আমার আর কিচ্ছু চাই না। কিচ্ছু না!

#চলবে
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here