তুমিময়_প্রেম🥀♥ #PART_11,12

0
552

#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_11,12
#FABIYAH_MOMO🍁
11

–তুমি চুপ থাকবে কেন! চুপ তোমার জন্য চুজেব্যাল না!তুমি ওদের সামনে কেন চুপ ছিলে ব্লাডি ফুল!হোয়াট দ্যা হ্যাল ইজ উইথ ইউ!আমি তোমার সিচুয়েশন দেখলাম!তুমি ফাউ ফাউ ওদের শেমফুল কাজে চেহারা দেখছিলে!কেন কিছু করলেনা! আমায় চড় মারলেই ওদের কাজে রিভেন্জ পাবে? Why have you slapped me? হোয়াই?

সজোরে ধাক্কা দিয়ে আমার বাহু ছেড়ে হনহন করে চলে গেল মুগ্ধ। হাতের তালু দিয়ে আমি বাহু বুলাতে ব্যস্ত। মুগ্ধ হলরুম থেকে চলে যাচ্ছে, বারবার চুলগুলোকে ব্যাকব্রাশ করছে।। রাগের চোটে তার পায়ের গতি বেড়েছে, আমি বাহুতে হাত ডলতে ডলতে বুঝতে পেরেছি। এতো কি রাগ তার আমার উপর? কোন্ অধিকারের ভাগ ফলাচ্ছে আবার? আমি স্থান ত্যাগ করে ক্লাসে গেলাম। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছি বারবার মুগ্ধের রাগী চেহারাটা ভেসে উঠছে। রাগ যে যেমন তেমন তা না, মনে হয় পুরো এক সাগর আগুনের গোলা পুষে রাখে।। ক্লাসে গিয়ে সেখানেও খেলাম বিরাট ঝটকা! আজ নিউকামারদের ক্লাস হবেনা… ডিসমিস! ক্লাস পুরো খালি!সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নিচে চলে গেছে। কেন ডিসমিস কেউ জানে না। একজন বললো, সিনিয়র দলের নির্দেশ ! দশমিনিটে ক্লাশ খালির আদেশ! বোঝা গেল, ক্লাসের ডিসমিসটা মুগ্ধদের কাজ। খেয়েদেয়ে কিছু জানে না ক্লাসে ঘটালো ব্যাঘাত!

নিচে যেয়ে দেখি ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকটায় নতুন স্টেজ বানানো জায়গায় সব শিক্ষার্থী জমায়েত হয়ে দাড়িয়ে আছে। স্টেজে লম্বা মাইক বসানো হয়েছে। সেই সাথে মুগ্ধদের টিম স্টেজ দখলে উপস্থিত হয়েছে।। মাইক হাতে সাউন্ড টেস্টে ‘হ্যালো হ্যালো’ করছে রামিম। রিমি জেনির সাথে হাত নাড়িয়ে নানা অঙ্গিভঙ্গিতে কথা বলতে ব্যস্ত। অন্যদিকে তন্ময়, নাসিফ, আহাদ এবং মুগ্ধ মিলে বিশেষ কিছু ব্যাপারে আলোচনা করছে। আমি কৌতুহলে বশবর্তী হয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে এক মস্ত ভীড়ের ঠেলাঠেলি। প্রচুর হৈ হুল্লোড় হচ্ছে।। মুগ্ধদের আলোচনার প্রেক্ষাপট কি? তা জানার জন্য আমার মতো বহু স্টুডেন্ট দাড়িয়ে আছে।। তন্ময় কথা বলতে বলতে ভীড়ের দিকে তাকালো। স্টেজ থেকে সবার মুখখানা দেখা গেলেও আমি কিছুটা দূরত্ব রেখে দূরে দাড়িয়ে আছি। একবার মনে হলো তন্ময় স্টেজ থেকে আমাকে দেখছে, আর মুগ্ধের জরুরী ডিসকাসে হু হা করে ‘হুদাই টাইপ’ মাথা ঝুলাচ্ছে।। মুগ্ধের কথায় তার বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই। মুগ্ধ সবাইকে তার কথা বোঝাতেই খেয়াল করলো তন্ময়ের দিকে। মুগ্ধ চুপ হয়ে গেল, পাশ থেকে নাসিফ মুগ্ধের চুপ হওয়ার কারন লক্ষ্য করে বুঝে গেল তন্ময়ের ব্যাপারটা। তন্ময় তাদের ইর্ম্পট্যান্ট ডিসকাশন ছেড়ে ফাউল দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ শার্টের হাতা ভাজ করতেই চট করে গালে দিলো চড়টা! আচমকা চড় খেয়ে তন্ময় গেল চমকে। ভিড়ের চিল্লাচিল্লি সব গেল থমকে। মুগ্ধের মাথায় রাগের ভূত চেপে বসেছে। উনিশ থেকে বিশ হলেই একুশে ফেব্রুয়ারি বানিয়ে ছাড়বে। তন্ময় চড় খাওয়া গালে হাত বুলাতে থাকলে মুগ্ধ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে নেয়। কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামের কণাগুলো বুড়ো আঙ্গুলে আড় ভাবে মুছে নেয়। তন্ময় এখনো ক্যাবলা হয়ে আছে কোন্ অপরাধের শাস্তি পেলো চড় খেয়ে? মুগ্ধ কেন হঠাৎ রাগারাগী করছে। মুগ্ধ কানে ফোন লাগিয়ে কথা বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেলে আহাদ এসে তন্ময়কে সমবেদনা জানায়। বেচারা তন্ময় মুগ্ধের হাতে ক্রোধের থাপ্পর খেয়েছে!! ডিসট্রাক্ট হওয়ার কারন যে এক তরুণী! সেটা আড়াল করতে চাইছে।। কে সেই তরুনী? কাকে দেখার প্রয়াসে থাপ্পর খেলো তন্ময়?

মাইক টেস্টের পর হাতে নিলো মুগ্ধ। সব স্টুডেন্টের চিল্লাহুল্লা অফ করতে বলে মূল বক্তব্যে প্রবেশ করলো। আজ তার মধ্যে নেতা নেতা ভাব প্রকাশ পাচ্ছে। ঠোটের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ডানহাতে মাইক, অপরহাত মুঠোকরে পিছনে গুটিয়ে দম্ভভরে দাড়িয়ে আছে মুগ্ধ।। রোদ্রের রোদময় ঝিলিক গাঢ় নীলের শার্টকে অদ্ভুত ভাবে স্নিগ্ধ করছে। শার্টের হাতা গুটানো জায়গায় কালো রঙটি দেখা যাচ্ছে। ফোল্ড করাতে ভেতরের কালো রঙটি উঠে এসেছে, সেই হাত দিয়ে বারবার চুল বেয়ে ঘামে ঝরা কনাগুলো অদ্ভুত মোহনীয়!! মুগ্ধের এ অবস্থা দেখে মেয়েগুলো তো লাটে ক্রাশট্রাশ খেয়ে মরে যাবে! দায়ভার কি মুগ্ধ নেবে?? মুগ্ধ স্টেজে পায়চারী ভঙ্গিতে হাটতে হাটতে ঠোটে হাসির রেশ ফুটিয়ে বলে উঠলো,

–হ্যালো এভ্রিবডি! সবাইকে তপ্ত রোদের নিচে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি রাদিফ মুগ্ধ আপনাদের সামনে কিছু জরুরী ব্যাপারে কথাসমূহ পেশ করতে যাচ্ছি। সবাই জানেন প্রতিবছর আমাদের সামারফিল্ড ক্যাম্পাস আমোদ-ফূর্তিতে এডভান্স! এবারও আমরা পিছিয়ে থাকবো না, পিছিয়ে থাকার কথাই আসেনা।। এ্যাট ফাস্ট! আমরা নিউ স্টুডেন্টদের ‘নবীন বরন’ উদযাপন করবো। দ্যান আমাদের ‘শিক্ষাসফর’। শিক্ষাসফর শেষে ট্রেডিশনাল ফেস্টিব্যাল ‘বাংলা নববর্ষ’, ‘ক্লাস পার্টি’, ‘রিসার্চ-ট্যুর এসাইনমেন্ট’, লাস্টলি আমাদের সিনিয়র ব্যাচের ‘র‍্যাগ ডে’। আপনারা জানেন ক্যাম্পাসে আমরাই সিনিয়র। আমাদের এটা লাস্ট ইয়ার।। কাজেই প্রত্যেকটা সেলিব্রেশন আমরা আমাদের মতানুসারে করবো। প্রত্যেকটা কাজে আমাদের এক্সট্রা হেল্পের হাত লাগবে।। তাই ইউ নিড হেল্প গাইজ! কাল আমাদের ক্যাম্পাসে ‘নবীন বরন’ আই হোপ এভ্রিওয়ান নোস এবাউট ইট! আগেই নোটিশ বোর্ডে নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। সো কাল আমাদের নবীন বরন উৎসবে সবাইকে সকাল দশ ঘটিকার সময় উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ করা হলো।। থ্যাংকিউ।।

.
.

ক্যাম্পাস থেকে সবার আগে আমি বের হলাম। উদ্দেশ্য একটাই মুগ্ধের সাথে আমি গাড়িতে করে যাবো না। নিজেই একটা রিকশা ধরে তার আগে বাসায় যেয়ে ফাইজাকে পড়িয়ে আসবো।। যেই ভাবা সেই কাজ, আমি রিকশা করে রাস্তা চিনে চিনে ওদের বাসায় পৌছাই। মেইন বড় গেটের কাছে রিকশা থামালে আমি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া চুকিয়ে গেটে নক করতেই দারোয়ান কাচুমাচু করে গেট খুলে দিলো। তার মুখের ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে ঠাটিয়ে দুটো চড়ের হুমকি দিয়েছে। ভয়ে পুরোপুরি ভিজাবিড়াল হয়ে গেছে। দারোয়ান দরজা খুলে দিয়ে মাথা নিচু করে আছে, আমি অবাকের দৃষ্টিতে ভেতরে ঢুকে যেতে নিলে পেছন থেকে দারোয়ান কাপা কাপা গলায় বলে উঠে-

–আফা,

আমি ‘আফা’ ডাক শুনে পিছনে তাকাই। দারোয়ান চোখে তাকিয়ে কথা বলতেই ঢোকের পর ঢোক গিলছে। আমি কপালকুচকে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

–কি মামা? আপনি মিনমিন করে কাহিনি করা বন্ধ করবেন? গলা ঝেড়ে বলুন তো, ব্যাপার কি!
দারোয়ান মামা মাথার টুপিটা বগলের নিচে গুজে থমথম গলায় বলে উঠলো-
–আফা আফনে এট্টু ওইহানে যাইবেন? নাইলে এই গরীবের চাকরি নট হইয়া যাইবো..
–আশ্চর্য তো! শুধু শুধু চাকরি নট হবে কেন?
–আফা এই গরীবের ইট্টু উপ্কার করেন আফা, ইট্টুখানি ওইহানে যান।।

দারোয়ান মামা গাড়ির পার্কিং লটের ওখানে যেতে ইশারা করছে। পার্কিং লটে কয়েকটা গাড়ি থামানো। পিছনে আরো গাড়ি আছে কিনা জানি না, থাকতেও পারে। বিশাল বড় এরিয়া জুড়ে ছিমছাম অবস্থাযুক্ত পার্কিং লট। এই লটে ঢোকার এন্ট্রিপথই তিনটা। আর এই গেটসহ টোটাল চারটা। আমি একপ্রকার বাধ্য হয়েই পার্কিং লটের ওখানে গেলাম। দুপুরের কড়া কাঠফাটা রোদ, তার উপর সকাল থেকে প্রায় না খাওয়া আমি। সব মিলিয়ে শরীরে কি পরিমাণ যন্ত্রণা কাজ করছে একমাত্র আমি জানি।। প্রথম দুইটা বি.এম.ডব্লিউ গাড়ি পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম। তব্দা টাইপ নিরিবিলি, একটা কাক-পঙ্খিও নেই, এখানে কেন যেতে বললো মামা? কিছু ধরতে পারছিনা। পা ঘুরিয়ে চলে আসতে লাগলাম।। হঠাৎ হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম! ছিটকে গিয়ে তিন নাম্বার গাড়ির উপর পড়লাম। হাতে জোরেসোরে ব্যাথা পেলাম, মাথা তুলে হাতে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে ঘুরে তাকাতেই দেখি পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে দুই নাম্বার গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে মুগ্ধ দাড়িয়ে আছে। বা-ভ্রু খুব উচুতে তোলা, ঠোট কামড়ে কটমট করছে। মুগ্ধকে দেখেই আমার মাথায় রাগের ঝাপটা বাজ ফাটিয়ে দিলো! মনে মনে ভয়াবহ একটা গালি ছুড়ে মারলেও মুগ্ধ আমার আগেই ধমকের সুরে বলে উঠলো-

–থাপ্পর চিনো? লাইফে থাপ্পর খেয়েছো! গুণে গুণে দশটা থাপ্পর বসালে টেস্ট কেমন হয়! ইউ নো? চামড়া লাল করে দেবো বেয়াদ্দব মেয়ে!

আমি কপালকুচকে মুখ অল্পবিস্তর হা করে আছি। কি বলছে না বলছে, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!! মুগ্ধ দু’কদম এগিয়ে আসলো। আমি পা পিছিয়ে গাড়ির সাথে সেটে গেলাম। ভয়ে ধকধক করছে, মুগ্ধ সামনে দাড়িয়ে দু’পকেটে দাত ঢুকিয়ে রাগে ফুসফুস করছে।।সত্যি সত্যি যদি ধরাম করে চার-পাচটা চড় মারে ! তাহলে তো গালের চামড়া খুলে রাস্তায় গড়াগড়ি খাবে! কি সর্বনাশ!! মুগ্ধ গলার স্বর আরো তীক্ষ্ম করে রাগান্বিত সুরে উঠলো-
–এটিটিউট কাকে দেখাও? মুগ্ধকে! আমাকে রেখে চলে আসছো কেন? সাহস দেখাতে? কত্ত বড়ো সাহস তোমার! একদম পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিবো ব্রেনলেস ডাফার কোথাকার !

মুগ্ধ রাগ ঝেড়ে একদফা মুখের বুলি শোনালো। ওর মুখের করুণ অবস্থা দেখে আমার পক্ষে পাল্টা কথার জবাব দেওয়া হলো না! আমি মম চুপচাপ শান্তশিষ্ট ভদ্রবিশিষ্ট মেয়ের মতো কুজে গেলাম। আমার সাথে কিসের রাগারাগী? মুগ্ধের সাথে গাড়িতে করে আসতেই হবে এমন কোনো পেপার সাইন আছে নাকি! কি নিয়ে আমার সাথে ক্যাচক্যাচানি! মুগ্ধ ‘ফলো মি! কুইক!’ বলে নাক ফুলিয়ে চলে যেতে লাগলো। আমিও নির্বিকার ভঙ্গিতে যেতে লাগলাম।

ফাইজা আমাকে পেয়ে পূর্বের মতো হাসিখুশিতে পরিপূর্ণ হলো। আমি চেয়ার টেনে ওকে বসিয়ে পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। ফাইজা খুব মিস্টি মিস্টি কথার প্রহর আনতে পারে। মেয়েটা খুবই মায়াবী।। আমি পড়ানো শুরু করলে মুগ্ধ রুমে গটগট করে প্রবেশ করে। ফাইজার নরম তুলতুল ফোমের বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে। মাথা উচু তুলে মাথার নিচে দুহাত রেখে দেয়। একদম ডোন্ট কেয়ার মুডে সিলিংয়ে লাগানো তিনপাখার ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আড়চোখে আমি সব পর্যবেক্ষণ করছি। মুগ্ধ কি কি করছে সবই বুঝতে পারছি।

সময় দেড় ঘন্টা পেরুলো। ঘড়িতে আড়াইটা বাজলো। মুগ্ধ এখন ম্যাগাজিন হাতে আধশোয়া স্টাইলে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। ফাইজা অংক কষছে। মুগ্ধ কি নিয়ে যেন ছটফট ছটফট করছে। খুচখুচানি বিহেব দেখাচ্ছে।। বেডের পাশে টেবিলে রাখা জগ থেকে একনাগাড়ে এক চুমুকে দুই তিন গ্লাস পানি গিলছে। আবারো বিছানায় শুয়ে ম্যাগাজিন হাতাচ্ছে।। ফাইজার কমিক বুক খুলে নেড়েচেড়ে দেখছে।। জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে পানি গিলছে।। অস্থির হয়ে উঠছে।। আমি ফাইজার দিকে তাকিয়ে থাকতেই মুগ্ধ ফট করে বলে উঠলো-

–এই শোনো তো!

ফাইজা চেয়ার থেকে মাথা বাকা করে পিছনে ঘুরে বলে উঠলো-
–চাচ্চু তুমি ফাইজার মিসকে ডাকছো কেন? ফাইজা এখন পড়ছে,
মুগ্ধ চেহারায় অস্থিরতার গম্ভীরভাব কেটে দিয়ে ফাইজার জন্য হাসিমুখে বলে উঠলো,

–আম্মাজান!!! আপনার টিচারের সাথে প্রাইভেট টক আছে আম্মাজান!বেশি না… একটুখানি বলবো!! একটুখানি, প্লিজ??
ফাইজা মুখে হাত চেপে খিলখিল করে হেসে বলে উঠলো-
–ঠিক আছে বাচ্চাজান!! ফাইফার মিসকে নিয়ে টক – টক করেন!!
–আম্মাজান! আপনি একটু বাইরে যাবেন? নিচে আপনার জন্য র্সাপ্রাইজ আছে দেখবেন প্লিজ??
–সাপ্রাইজ!!! আমি যাবো আমি যাবো!!

ফাইজা চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে চলে গেলো।। মাঝখানে আমি চাচা-ভাতিজির কান্ড কারখানাতে জোকার বল্টু হয়ে গেছি।। একদল বলছে আম্মা! অন্যদল বাচ্চা! মাঝে আমি খাই কারেন্টের ঝটকা! ফাইজা যেতেই ধপ করে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো মুগ্ধ। দ্রুত রুমের দরজা ঠেলে দিয়ে আমার সামনে ফাইজার চেয়ার টেনে বসলো।। হোহো করে শ্বাস ছাড়ছে মুগ্ধ। হাপানি রোগীর এনহেলার নষ্ট হলে যেরূপ থেরাপি দেওয়া লাগে মুগ্ধ এখন রোগী সেজে আমার সামনে তেমনভাবে শ্বাস নিচ্ছে।। আমি ভ্রু কুচকে খোচা মেরে জিজ্ঞেস করি-

–মরে যাবেন নাকি? কাফনের কাপড় আনবো? শেষ ইচ্ছা কি, রিপোর্টে বলুন ! আমি নিউজপেপারে ছাপিয়ে দিচ্ছি, একটা রোগী শ্বাসকষ্টে রোগী কুতুকুতু করছে।।।

মুগ্ধ কঠিন চোখে তাকালো! চোখ দিয়ে ছুড়ি মারার ব্যবস্থা থাকলে এতোক্ষনে মুগ্ধ আমায় খুন করে কুটিকুটি করে ফেলতো! কি ভয়ংকর চাহনি!! মুগ্ধ চোখের অগ্নিদৃষ্টি পাল্টে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে অসহায় ভাবে মাথা নুয়ে আছে।। আমার কোলে থাকা ব্যাগ থেকে ফোনটি হঠাৎ ভাইব্রেট হয়ে বাজতে লাগলো। আমি ফোন বের করে কল রিসিভ করে ইসুর সাথে কথা বলতে নিলে পাশ থেকে মাথা নুয়ে মুগ্ধ কি বলে শুনতে পাইনা।। মুগ্ধ সুরের ভলিউম একটু বারিয়ে কি কি যেন বলতে শুরু করলো।।

“তোমাকে আমি আদর করতে চাই! তুমি দূরে থাকলে ধুকেধুকে মরি! শ্বাসকষ্ট হয় প্রচুর! রাতে ঘুমাতে পারি না! ক্যাম্পাসে তোমার পাত্তা মিলে না! আশ্চর্য হই আমি! আমি কেমন হয়ে গিয়েছি। আমার মাথা ফাটিয়ে ইনসাল্ট করেছো তুমি! আমি তোমার পেছনেই মাথা হেট করে পাগলের মতো চলছি! ক্যাম্পাসে সব জুনিয়ররা, বিপক্ষ দলের শত্রুরা সবাই ফায়দা উসুলে আমার সেল্ফ রিসপেক্টের পানি বানাচ্ছে! ইজ্জতের নস্টালজিক এক্সকিউজ করছে! আমি শ্বাস নিতে গেলেও কষ্ট পাই! তুমি ফাইজাকে পড়াও আমি চুপিচুপি তোমাকে দেখি! মাত্র দুটা ঘন্টা! মাত্র দুটা ঘন্টা কাটায় কাটায় পড়িয়ে তুমি চলে যাও! একটা নিরীহ প্রাণী বোবা সেজে তোমার আশায় পথ চেয়ে থাকে একটাবারো জানার চেষ্টা করেছো? তোমার এই ডেভিল লুকটা দেখার জন্য ইচ্ছে করে বলে তোমার ড্রেসে কালি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি! আমি সরি! সরি আমি! নিজের উপর ছিঃ ছিঃ করেছি, কেন তোমার প্রতি জটিল কায়দায় আসক্ত হয়ে গেছি! আসক্ত হয়ে কতবার যে কন্ট্রোল হারিয়েছি! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে হাতটা টেনে বুকের সাথে জাপটে ধরি! ইচ্ছে করে…তোমার হাতে হাত রেখে রাতের নিশিপথ হাটি। কত যে ইচ্ছা আমার ! কত যে বাসনা! এ কদিন তোমায় নিয়ে আমি করেছি বহু কল্পনা! কল্পনার জগতে তুমি আমার জন্য বিদ্যমান! হাতে হাত রাখলে হাতটি থাকবে আমার! পাশাপাশি হাটলে মানুষটি হবো তোমার! আকাশ চিড়ে বজ্রপাতের শব্দ হলে চিৎকার দিয়ে জাপটে ধরবে তুমি! কোনো ভুল-ত্রুটি করলে কান ছিড়ে অভিমান দেখাবে খুবই ! ঝগড়া-ঝামেলা শেষে দূরে যাওয়ার ভয় দেখাবে! আমি আরো রাগ দেখিয়ে তোমায় দূরে যেতে বলবো, তুমিও প্রচণ্ড রেগে গিয়ে দূরে চলে যাবে! দিনশেষে পাগলের মতো এলোমেলো হয়ে গেলে, তুমি ফিরবে আমাকে গুছাতে! কিছুদিন তুমি কথা বলবেনা, কিছুদিন তুমি আদর করবেনা, কিছুদিন তুমি চুপটি করে থাকবে, কিছুদিন পর আবারো স্বাভাবিক হয়ে এই রাদিফ মুগ্ধকে ডাকবে!! অপেক্ষায় আছি প্রিয়….নিরবতার কারাগার ভেঙ্গে জবাব একদিন দিও….♥

মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে বুকের উপর চাপা পাথর সরিয়ে ঝটপট করে কথাগুলো বলে দিলো। কি পরিমাণ সাহস করে কথাগুলো বলেছে!! এই সাহস যদি রণক্ষেত্রে দেখানো যায় জিত ছিনিয়ে গোটা রাজ্যে রাজ্যত্ব করা যাবে!! মুগ্ধ ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়ছে। জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তেই চোখ খুলে যা দেখলো পায়ের নিচ থেকে মাটি খসে যেতে লাগলো। তার প্রেমপূর্ণ কথাগুলোর একটিও তার প্রিয়তমা প্রিয়া কানে তুলেনি! সে ফোনের ওপাশে বান্ধুবী নামক জীবের সাথে কথা বলতে পুরোই ব্যস্তময়ী!

-চলবে

-Fabiyah_Momo

#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_12
#FABIYAH_MOMO🍁

আমি ফোনটা কান থেকে থেকে রাখতেই দেখি মুগ্ধ হা করে আমার দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে বেচারা জোরেসোরে একটা ধাক্কা খেয়েছে। আমি কপাল কুচকে ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠলাম,

–এই যে হ্যালো! কি হ্যাঁ? কি? আমার দিকে খাচ্চরের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেনো? চোখের কোটর একদম নিচে কর! নিচে করো বলছি! কাটাচামচ ঢুকিয়ে এমন ঘুরান্টি দিবো না, এক্কেবারে সানডে মানডে ফাদারস দে সব ভুলিয়ে গঙ্গার পানিয়ে ভাসিয়ে দিবো! ফালতু লোক কোথাকার! সাবধান আরেকবার যদি লুচ্চামির নজরে চোখ দিতে দেখছি!!!….চোখ নিচে!

মুগ্ধ বিষম খেয়ে হতভম্বের মতো চটপট মুখ বন্ধ করে চোখ নিচু করলো। ফাইজা এখনো আসছেনা। ঘড়িতে এখন বাসায় ফেরার সময় হয়েছে। আমি মুগ্ধকে বলে উঠলাম-

–তোমার ভাতিজি আর পড়বে? আমার তো মনেহয় নাহ্। র্সাপ্রাইজ দিতে পাঠিয়েছো, আর তো আসবে না। তাহলে আমি আজকের মতো উঠি?
মুগ্ধ কি যেন বিড়বিড় করে বললো। আমি শুনতে পাইনি।

–আমাকে সাথে নিয়ে উঠো!! একা একা এই অবুঝ ছেলেকে পাগল বানিয়ে চলে যাবে??প্লিজ একটা বার হাতটা ধরে বলো, ‘চলো’?

মম মুগ্ধের বিড়বিড়ানি শুনতে না পেয়ে রেগে গেলো।সে চেচিয়ে বলে উঠলো,

–এই হ্যালো! তুই জোরে জোরে কথা বলবি? নাকি হাতের উল্টোপিঠের থাপ্পর দিবো! কি করবো? বল!! বল!!জলদি বল!!

মুগ্ধ মমর ‘তুইতোকারি’ ভাষা শুনে মুখ কুচকালো। শক্ত গলায় কিছু খারাপ কথা বলতে যেয়েও নিজেকে পবর্তসমান কন্ট্রোল করে বুক ভরে নিশ্বাস ছাড়লো। চোখ খুলে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,

— তুইতোকারি করেনা মিস মম পাকনি, সিনিয়র ছেলেদের ‘তুই’ করে বলতে হয়না… আ’ম ইউর সিনিয়র ইউ নো, না? ফোর ইয়ার সিনিয়র??রাইট ??

মম রাগে গজগজ করলেও মুগ্ধকে টেনে দুটো থাপ্পর বসালো না। সে নাক দিয়ে রাগী শ্বাস ছেড়ে ব্যাগের ফিতা আকড়ে উঠে দাড়ালো। হনহন করে চলে যেতে নিলে মুগ্ধ মমর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে উঠলো,

–মিস মম? একটা ইর্ম্পট্যান্ট কথা ছিলো?

পেছন থেকে মুগ্ধের গলা শুনে রুম থেকে বের হওয়া আটকে গেল মমর। সে কাধের ফিতাটা আরো শক্ত করে মুঠো চেপে মুগ্ধের দিকে ঘুরে তাকালো। তার চোখেমুখে ভীষন বিরক্তি। মুগ্ধ কাচুমাচু করে বলল,

— একচুয়েলি…কাল ক্যাম্পাসে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবে? না আসলে হয়েছে কি…কাল তো ‘নবীণ বরণ’ অনুষ্ঠান, আবার হেল্পার মানুষও কম।। বাজেট শর্ট, বুঝোও তো, কম বাজেটে কত কাজ!!আমার একটু হেল্প লাগবে বুঝছো? যদি তুমি কাল আস…

মুগ্ধ বলা শেষ না করতেই মম একপ্রকার তেড়ে এসে ঝাঝালো গলায় বললো,

–খবরদার! খবরদার তুই যদি আমায় হেল্পের জন্য ডাকিস! তোর হেল্পের জন্য আমি জীবনেও আসবো না ! তুই আমাকে যে টর্চার করেছিস আরো কি কি যে বলেছিস আমি কিচ্ছু ভুলিনি! আমায় একটা বার যদি কল করার হিম্মত করিস, তোর কলিজা বরাবর ছুড়ি বসিয়ে দিবো! খবরদার !

মম আগুনের মতো সব কথা ছুড়ে বাইরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। পিছু থেকে একজোড়া নয়ন স্থির চাহনিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। মুখের উপর অতোগুলি কথা শুনে মনটা উদাস হয়ে দুই টুকরা হয়ে গেল তার। মম যেতেই মুগ্ধ টেবিলে ধাম করে থাপ্পর বসালো। রাগে ঠোট কামড়ে ফাইজা চেয়ার উপড়ে ফেললো! নিমিষেই চেয়ারের একপায়া খুলে পুরো চেয়ারটা লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। মুগ্ধ চুলে দুইহাত ঢুকিয়ে বেডে ধপ করে বসলো। ইচ্ছা করছে চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে! সব শেষ করে দিতে! সব খতম করে দিতে! কেন? কেন এমন হলো আমার সাথে? আমি কি ভুল করেছি ও আমাকে বুঝতে যেয়েও বুঝতে পারেনা! কেন ওর প্রতি ফিলিংস চলে আসলো? কেন? কেন? কেন আল্লাহ? কেন?

মুগ্ধ চিৎকার হট্টগোল করছে। খুব জোরে জোরে চিৎকার করে রুমের মধ্যে কথা বলছে। রুমের চার দেওয়ালে মুগ্ধের ধ্বনি ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছে। হঠাৎ মুগ্ধের চেচানো শোরগোল পেয়ে ফাইজা রুমে দৌড়ে আসে। এসে দেখে মুগ্ধ বেডে বসে দুইহাতে মুখ ঢেকে চেচামেচি করছে, নিজেই নিজের সাথে কথা বলছে।

–চাচ্চু…
ফাইজার কৌতুহল গলায় ‘চাচ্চু’ ডাক শুনে হুশ ফিরে মুগ্ধের। মাথা তুলে ফাইজাকে দেখেই মুগ্ধ বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে ঠেলেঠুলে হাসি দেয়। ফাইজা ফ্যালফ্যাল করে মুগ্ধের দিকে তাকালে মুগ্ধ ফাইজাকে কোলে তুলে রুমের বাইরে নিয়ে যায়। লিফটের বোতাম ‘UP’ চেপে ফাইজার গাল টেনে বলে,

–আম্মাজান? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন হু? ফাইজার চাচ্চু কি এক্সট্রা কিউট লাগছে নাকি!! আচ্ছা…চাচ্চুর আইসক্রিম র্সাপ্রাইজ কেমন লেগেছে আম্মাজান??

ফাইজা এখনো অবাক চোখে হা করে আছে। মুগ্ধ ফাইজার কপালে চুমু দিয়ে দিলো, ফাইজার বেবিগুলো মাঝে সিথি করে বলে উঠলো,
–আম্মাজান? ছাদে চলুন। খেলাধুলা করে আসি কেমন?

মাঝে সিথি কেটে মুগ্ধ ফাইজার লাল টুকটুকে গালে চুমু বসিয়ে দিলো। লিফটের দরজা কুলতেই মুগ্ধ ফাইজাকে নিয়ে ছাদের বাম কোনাটায় গেল। সাদা টাইলস বসানো ছাদ। টাইলসের উপর সূর্যমুখী ফুলের ডিজাইন করা। ছাদের একপাশে ছাউনি দিয়ে বসার জায়গা, অপরপাশে নানা ফুল ও ফলের গাছ লাগানো বাগান। ছাদে এসময় রোদের তপ্তটা খুব বেশি থাকার কথা কিন্তু আজ রোদের প্রকোপ কম। চারিদিক থেকে বাতাস ছুটে আসছে। বাতাসে হেলছে মুগ্ধের কপালের চুল, উড়ছে মাথার তালুর চুলগুলোও। ফাইজা মুগ্ধের গলা জড়িয়ে আছে দু’হাতে। মুগ্ধের কাধে ফাইজা মাথা হেলে দিয়ে চুপটি করে আছে। মুগ্ধ ছাদের রেলিংয়ের কাছে তুলোয় ভরা মেঘের আকাশ দেখছে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উড়ছে।। দিক দিগন্তে ছুটে চলছে মেঘগুলো।

–চাচ্চু…তুমি চিৎকার করছিলে কেন…

ফাইজা নরম গলায় প্রশ্ন করে মুগ্ধকে। মুগ্ধ ফাইজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

–আম্মাজান আপনার চাচ্চু না একটা সুন্দর জিনিস পছন্দ করে। জিনিসটা আপনার চাচ্চুকে সহ্য করতে পারেনা। আপনার চাচ্চু যখন ওই জিনিসটা না পায় তখন পাগলের মতো চিৎকার করে আম্মাজান…
ফাইজা বাচ্চাসুলভ মায়ায় মুগ্ধকে বলে উঠে,
–তুমি ওটা কিনে ফেলো চাচ্চু, ফাইজার চাচ্চু যা চায় সব কিনতে পারে, তোমার সুন্দর জিনিসটাও কিনে ফেলো চাচ্চু…

মুগ্ধ ঠোট কামড়ে বুকভর্তি নিশ্বাস ছাড়ে। নিশ্বাসের পরীক্ষা করলে হয়তো রিপোর্টে ধরা পড়তো, “মুগ্ধ নামক পেশেন্টের নিশ্বাসে সাংঘাতিক রোগ ধরা পড়েছে! রোগের নাম ‘দুঃখপূর্ণ যন্ত্রনা’। এ যন্ত্রণায় সে দ্বিতীয় স্টেজে আছে!! যদি শিগগিরি এর চিকিৎসা করানো না হয় তাহলে রোগী কষ্টযন্ত্রনায় অকালে মারা যাবে, কষ্টদায়ক মৃত্যু হবে ডক্টর!!” কিন্তু আফসোস! “দেহের চিকিৎসা আছে, মনের চিকিৎসা নেই।”

.
.

বাসায় এসে কাপড়চোপড় পাল্টে বিছানায় গা এলিয়ে শুলাম। টিউশন টিউশন টিউশন!! উফ! টিউশনি করতে করতে শরীরের অবষাদ, রাত জেগে জেগে লেকচার নোট, সকাল সকাল ঘুম ভেঙে জেগে উঠা…..মধ্যবিত্ত মেয়েদের রোজকার রুটিন। রুটিনটাও অদ্ভুত! যত খাটনি তুমি করো না কেন, দিনশেষে রোজগারের টাকাগুলো দেখে এক নিমিষেই দুঃখ গুলো ছুটি পায়।। অপেক্ষায় কাটানো মাসের শেষের সপ্তাহটা ঈদের মতো অস্থিরতায় কাটে!! “কবে আসবে ঈদ কবে দেখবো ঈদের চাদঁ!!” ঠিক এরকমই আমার ক্ষেত্রে ঘটে টাকাগুলোর জন্যে , “কখন আসবে মাসের শেষ তারিখ?? কখন পাবো টিউশনির টাকাটা!!”

চোখে জগতের সব ঘুম এসে কড়া নেড়েছে। কাল ‘নবীন বরন’, সকাল সকাল না উঠলে কি মজা আছে? ইসরাত আসবে, ওর সাজগোজের কারখানা দেখতে হবেনা?? ভুতনি সেজে কাল হট হট ছেলেদের দেখবে বুঝিনা?? বুঝি বুঝি!! সব বুঝি। আমিও
হাই তুলে কাথা টেনে ঘুমের জন্যে ওকাত হবো ওমনেই ফোনটা পচা রিংটোনে বাজতে লাগলো। ঠোট উল্টিয়ে ফোনের দিকে তাকাতেই এক জগ পানি ফোনের উপর ছুড়ে মারতে মন চাইলো।। ঘুমের রাজ্যে ঘুম তাড়ানো শত্রুগুলা একেকটা বদমাইশের দল! ভয়ংকর কটা গালি মনে মনে বলে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ইসুর কল! না চাইতেই মুখ ফসকে ‘বজ্জাতের ঢেকি’ গালিটা চলে আসলো!

–হ্যালো মম জান্টু! দোস্ত কালকে কি শাড়ি পড়বি??? দেখ্ আমরা কিন্তু ম্যাচিং ম্যাচিং পড়বো বলেছিলাম!! তুই কিন্তু কথা ঘুরাবি না মম!! সাবধান!
আমি ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে হাই তুলে বলে উঠলাম,
–ইসু…আআমার ঘুঘুমে ধরছে, কাল আয় পরে দেখতেছি…
–ওয়্যাক আপ মম! কাল আমাদের নবীন বরন দোস্ত!! নবীন বরন! তুই ভুলে গেলি?? কত প্ল্যানিং করছি এই নবীন বরন নিয়ে!! এটা করবো ওটা করবো, এই শাড়ি পড়বো! ওই কালার পড়বো! ওই ঝুমকা পড়বো! ভুলে গেলি? তুই মুখে পানি দে তো! চোখের ঘুম তাড়া!
–ওই শালী ! বজ্জাত অর্কমা! শালী রাত সাড়ে এগারোটা বাজে তুই আমাকে কল দিয়ে বলতেছিস নবীন বরনের শাড়ি কি কালার চুজ করছি! থাবড়ায়া চাপার দাত খুলে ভ্যাবলা বানায়া দিবো, শালী বদমাইশের ঢেকি! ফোন রাখ্!
–বইন তুই হাইপার হয়ে আছিস কেন? কে কি করলো আবার? কার রাগ কার উপর ঢালিস তুই?? কি হইছে সত্যি করে বলবি!!
মম গম্ভীরভাবে বললো,
–কালকে কিসের উৎসব?
–আবার জিগায়! কাল নবীন বরন! আমাদের নিউ কামারদের উৎসব!কত সাধনার পর নবীন বরন দিছে….ইশশশ!
–এইবার লাইনে আসছো তুমি! শুনো ইরানির মা! আমাদের এইটা ‘নবীণ বরণ’ না! এইটা হলো ‘প্রবীণ বরণ’ উৎসব! আজাইরা কাজে সেমিস্টারের এক সপ্তাহ আগে সিনিয়রের গাধাগুলা উৎসবটা দিছে!!
–তুই সোজা রাস্তা ধরে কথা বলবি? সিনিয়র কি আবার কিছু করছে? কিছু বলছে তোরে?কালকের উৎসব নিয়ে??
–হ্যাঁ বলছে! আমাকে আগে আসতে বলছে! তার মধ্যে বলছে হেল্পও করতে! আমি না করে দিছি।।
–তুই ‘না’ করে দিছিস? ওই মাইয়া কি করলি এইটা?? সিনিয়র ভাইরা তোরে কাজে রাখতে চায় তুই না করলি?তুই জানিস এইটা কতো বড় অপরচুনেটি ছিলো? ওরা একটা ইশারা দিলে তোর প্র‍্যাক্টিক্যাল মার্কস আর এসাইনমেন্ট নাম্বার ফুল আসবো আসতো !

–আহাহাহাহা…আমার কত ঠেকা! আমি কি ভোতা স্টুডেন্ট ইসু? ব্রেন নলেজ কি মাথায় নেই? ড্যামিশ আমি?? সিজিপিএ খারাপ আমার?? দেখিস দেখিস…ক্লাসে টপ গ্রেডে উঠাবো! তাও ওদের হেল্প চাবো না প্লাস হেল্প করবোও না! না মানে ন আকার না ! বায় !

ইসরাত মমর ধমকি খেয়ে ফোন রাখলো। ক্যাম্পাসের সিনিয়ররা আজ পযর্ন্ত নিজেদের কাজে নিউ স্টুডেন্টের কাছে হেল্প চায়নি মম এমন কি করলো ওর কাছে হেল্পের আবদার করলো? ও তো দেখতে সুন্দরও না, কালো। এমন মেয়ে দেখে মুগ্ধ ভাইয়ারা সিলেক্ট করলো? ওর মধ্যে ব্রেন ছাড়া কিছু নাই গোল্লা। হাহ্! কালকে আমি ওর থেকে অনেক সুন্দর সাজবো! দেখি মুগ্ধ ভাইয়া কিভাবে আমার দিকে না তাকায়!! ওর মতো ম্যাচিং শাড়ি পড়বো? কি শখ! ওর মতো ম্যাটম্যাটে কম দামী শাড়ি পড়বো না! সবচেয়ে দামী শাড়িটা আমি পড়বো! পুরো ক্যাম্পাস কাল আমার দিকে ঘুরঘুর করে দেখবে! আর ওর না রূপ! না আছে ফ্যাশন! ক
খ্যাত একটা…তাও কি ভাব ওর হুহ! যত্তসব বান্ডুলা ঢঙ! একবার ওর নোটগুলা পাই খালি !সেমিস্টারে যে খেলা দেখা দেখাবো না!! টপ গ্রেড না, একদম ফেল্টুস ইজ্জত লুটিয়ে ছাড়বো! যেমন র‍্যাগিংয়ে করেছিলো চুল কেটে তেরোটা বাজিয়ে হা হা হা হা !!! আমাকে চিনে না, আমি ইসরাত কি জিনিস!! চিনে না!!

–চলবে

_Fabiyah Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here