বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-২২

0
751

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 22…….

— তোমারও উচিত হয়নি আমাকে ঠকানোর। এর শাস্তি তো তোমায় পেতে হবে।

— তীব্র…

তীব্র তুরের গালে, কপালে, নাকে ঠোঁটে অজস্র ছোট ছোট চুমো আকতে থাকে। যাতে নিজেকে তীব্রের হাত থেকে ছাড়ানোর ছটফটানি টাও বেড়ে গেছে। কিন্তু তীব্র ওকে ছাড়ার বদলে নিজের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে তুরকে।

তীব্র তুরের গলার নিচের সেই বাইটের দাগের কাছে এলেই তুর প্রচন্ড জোরে চিতকার করে উঠে। আর পুরো বাড়ির লোকজন এসে জড়ো হয়ে যায় সেখানে কিন্তু তুরের রুমে এসে যা দেখতে পায় তাতে সবাই নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ী করতে থাকে।

তুরের মা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। তুরের কোন হুশ নেই। ও বেহুশের মত বিছানায় শুয়ে আছে আর কাদছে। আশে পাশে তোয়াকেও দেখতে পাচ্ছে না। তুরকে হালকা পানি দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করে কিন্তু তুর মেলে না। বরং নিজের মনে কিছুক্ষন বিরবির করে আবার ঘুমিয়ে পরে। এটা দেখে ওর মা ওর সবাইকে চলে যেতে বলে। তবে একটা কথায় অদ্ভুত লাগে যে তুর স্বপ্ন দেখে থাকলে পানি দিলে ঘুম ভেঙ্গে যাবার কথা । কিন্তু তুর অবাক করে দিয়ে ঘুুমিয়ে গেছে। তুরের হঠাৎ এমন করার কারন কেউ খুজে পায় না। অনেকটা চিন্তিত হয়েই তারা ফিরে যায়। কিন্তু তখনি আরেকটা কথা ভেবে থমকে যায় যে তুরের পাশে তো তোয়াও ছিল ও কই……..
.
.
.
.
.
.
.
,

— কিহল তায়ান আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছ…?? 😡 এতদিন পর তুর বাড়ি এসেছে অথচ আমি ওকে একা ফেলে তোমার সাথে বসে আছি…

— আমি কি করব? আমি তো নিজেই জানিনা 😕 আমাকে রিদ্ধ তোমাকে নিয়ে আসতে বলেছে।আমি আসতে চাইনি।

— তুমি জানো বাসায় এটা নিয়ে কি হতে পারে? 😡

— কি আর হবে আমাদের বিয়ের ডেটটা ফিক্স করে দেবে। সেটা আরো মজা তাইনা বলো…. 😊

— তায়ান দিন দিন তুমি…..

— রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছি তাই না। তোমার মনের মত?

— চুপ একদম চুপ। এখন তাড়াতাড়ি বলো আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তুর একলা আছে।

— কেউ একলা নেই ভাবিজান… [ রিদ্ধ ]

-_ আমাদের এখানে কেন নিয়ে এসেছ..? তাও আবার এত রাতে ? আমার বাসায় জানলে কি হতে পারে সেটা তোমাকে আশা করি বুঝাতে হবে না রিদ্ধ।

— চিল ইয়ার এত লুকিয়ে কি প্রেম করা যায় ।করলে আমার মত করে করবা। [ রিদ্ধ ]

— হ্যো তো তার মত করে প্রেম করব, যে ব্রেকয়াপের ভয়ে কান্না করে পাগল হয়ে যায়। [ তায়ান ]

— দেখ তায়ান ভাই আর যাই বলো আমার ব্রেকআপ নিয়ে কোনো কথা বলবা না [ মুখ ফুলিয়ে ]। সেই অধিকার আমি কাউকে দেইনি ।

— আচ্ছা যাই হোক আমদের এখানে আসতে বলেছ কেন বলেছে কেন তাই বলো। [ তোয়া ]

— আসলে স্যার আপনাদের দুজনকে কিছু দিতে বলেছিল আর সেটা দিতে এসেছি ।

— রিদ্ধ এটা তো কাল দিনেই দিতে পারতে । [ তোয়া ]

— হ্যা পরতাম । কিন্ত আপনারা তো জানেন আমি নিজের এক্সসাইটমেন্ট ধরে রাখতে পারি না । আপনাদের জিনিস আমি যাতে না খুলি তাই এখনি দিয়ে দিলাম।

— তুমি….

— আচ্ছা যাই হোক কিন্তু তোমার স্যার কই? আমি তো দেড় মাস ধরে ওর দেখাই পাচ্ছি না।

— আসলে স্যার অফিসিয়াল কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে যে অন্য দিকে কোন খেয়াল দিতে পারছে না। তাই আরকি আমাকে দিয়ে আপনাদের গিফট দিয়ে নিজের কার্য. হাসিল করতে চাইছে….. আর আপনি তো জানেন স্যার কাজের ব্যাপারে কতটা সচেতন……

— হুমম… [ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ] আজ তাইলে আসি।

— আচ্ছা,,,,,

তায়ান আর তোয়া বাইকে করে চলে যায় । আর রিদ্ধ হাফ ছেড়ে বাচে।

— যাই হোক আমার কাজ শেষ এবার স্যার নিজের কাজ ঠিকঠাক ভোবে করতে পারলেই হলো । ওনাদের লাভ দেখে মনে হচ্ছে আমি আমার লাভ লাইভ নিয়ে অনেক সুখে আছি। আমার গার্লফেন্ড ব্রেকআপ করতে চাইলেও এত প্যারা তো দেয় না বাবা। সোনা আমার দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো গফ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

তোয়া বাসায় গিয়ে অবাক হয়ে যায়। ওর বাবা , ভাই আর বড়রা ওর জন্য অপেক্ষা করছে । বুঝতে পেরেছে ও বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে ওনারা বুঝতে পেরেছে মিথ্যে বলে লাভ নেই। তাই সেই চেষ্টা করল না ও। আর ও যে তায়ানর সাথে গিয়েছে তাও সবাই জানে। ও মাথা নিচু করে ওর বাবার সামনে গেল। মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে নেই। বিশেষ করে মেয়েরা যখন বড় হয়। আর যেহেতু ওই কান্ডের পর তায়ানের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে তাই এটা নিয়ে জল ঘোলা করতে চাইলেন না তিনি….. তোয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওনি বলে উঠল……

— তুমি যথেষ্ট ম্যাচিয়ুর তোয়া তাই তোমাকে বুঝানোর মত কিছু হতে পারে না। তবে আজকের কাজটা তুমি ঠিক করোনি। আর তুর একলা ঘরে থাকতে ভয় পায় । ওকে একলা ছেড়ে যাওয়া তোমার উচিত হয়নি।

— সরি বাবা আমি….

— এ নিয়ে এখন আমি আর কোন কথা বলতে চাই না। যা বলার কাল সকালে বলব। তবে তোমার মনে রাখা উচিত ছিল তুমি আমার মেয়ে। আজ তায়ানের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক না হলে এর জন্য কঠোর শাস্তি তুমি পেতে।

তোয়া মাথা নিচু করে আছে । আজ অবধি যেই বাবা ওর উপর রোগ করতে দেয়নি । ওর একটা কাজে সে প্রশ্ন তুলছে।

— যাই হোক নিজের রুমে যাও তোয়া…..

তোয়া আর অপেক্ষা করল না নিজের রুমে চলে এলো। এসে দেখে ওর চাচি মানে তুরের মা তুরের মাথায় তেল দিয়ে মাথা আচড়ে দিচ্ছে আর তুর মৃত মানুষের মত ঘুমোচ্ছে। এভাবে ঘুমোতে কোনদিন দেখেনি তুরকে। এটা দেখে তোয়া বলে উঠল…..

— কি হয়েছে চাচি তুমি এখানে কেন?

তখন ওনি সবকিছু তোয়াকে খুলে বলে বেশ অবাক হয় ও । তখনি চোখ যায় বারান্দার দিকে । বেলকনিতে যাওয়ার দরজা খোলা। ওদের দোতলা বাড়ির চারিদিক বাগানে ঘেরা । বাড়িটা ওর দাদুর চাকরির জন্য তুরের বাবা মা অন্য জায়গায় থাকে কিন্তু ওনারা এখানেই । আর তোয়ার রুমের বেলকানির সাইট বাগানে। আর বেলকনি গ্রিল দিয়ে আটকানো নয় খোলা । বাবা আটকে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তোয়া চায়নি । রোজ সকালে এখানে দাড়িয়ে কফি খাওয়া ওর অভ্যাস। কিন্ত তাই ঘুমোতে যাওয়ার সময় সবসময় বেলকনির দরজা লক করে ঘুমায়। আর ওর স্পষ্ট মনে আছে ও দরজা লক করেছিল । আর তুর ওর আগে ঘুমিয়েছে। তাই তুরের পক্ষে দরজা খোলা সম্ভব না তাহলে কে খুলল।

— মামুনি তুমি কি দরজা খুলেছ?

— কই নাতো ।

— তাহলে অন্য কেউ খুলেছিল।

— না। আমি এসেই তো দরজা খোলা দেখেছি। আর বাকি সবাই আমার পরেই এসেছে। কিন্তু কেন?

— না এমনি। তুমি ঘুমাও।

— নারে…

— বলেছি না ঘুমাতে । আমি তুরের মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

তারপর জোর করে ওনাকে শুইয়ে তুরের মাথায় হাত বুলাতে থাকে । কিন্তু কিছুতেই যেন মনের সন্দেহ কাটছে না ও দরজা খোলা রেখে যায়নি। তাহলে দরজা খুলল কিভাবে । তবে কি কেউ এসেছিল । আর তুর এমন করল কেন? এটা কি স্বাভাবিক । তোয়ার মাথায় এরকম অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু তার উত্তর মিলাতে পারছে না। ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়েও স্বাভাবিক লাগল না তোয়ার কাছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে যায় বুঝতেও পারে না।

গাড়ির ছিটে এতক্ষন হেলান দিয়ে ছিল তীব্র। একটু আগেই তোয়াকে ভিতরে ঢুকতে দেখল। তখনকার তুরের চিতকারে আর অপেক্ষা করতে পারেনি। তুরকে একটা একটা ইনজেকশন পুশ করে কোনো মতে বেড়িয়ে আসে…. যাতে তুর কাউকে কিছু বলতে না পারে৷ কারন তুরের কাছে গেলেও ওকে নিয়ে আসার সঠিক সময় আর সুযোগ কোনটাই ওটা ছিল না। কিন্তু তীব্র এসেছিল এই ভয়টাও ও ওর মনে রাখতে চায়নি।

-_ তুর… ঘুমাও তুর। আমি তোমাকে যতটা না আপন করে চাই তার চেয়েও বেশি চোখের সামনে দেখতে চাই। তুমি চলে আসার পর আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতটা অসহায় হয়ে পরেছি তোমাকে ছাড়া। আমি পারব না তোমাকে ছেড়ে থাকতে। তুমি খুব শীঘ্রই আমার কাছে থাকবে কথা দিলাম।

,
,
,
,
,
,

,
,

সকালে ঘুম থেকে উঠে তোয়া বাইরে গিয়ে দেখে বাইরে অনেক আয়োজন করা হয়েছে। ওর মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ওনি বলে… বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে তায়ান আর তার পরিবার আসছে। একটুবাদেই ওরা চলে আসবে। তোয়া কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। এত কিছুর পর তায়ানের সাথে ওর বিয়ের কথা বলতে হচ্ছে। তবে তোয়া যে খুশি তা নয় কারন তায়ানের সাথে ও যা করেছে তার পরেও তায়ান একবারের জন্য ওর সাথে জোর গলায় কথা বলেনি। নিজেকে সত্যি ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে সেই সাথে অপরাধী। মাঝে মাঝে ও এটাই বুঝে উঠতে পারে না তায়ান ওকে এতটা ভালোবাসে কেন?

ভার্রসিটির প্রথম থেকেই তায়ানকে ওর ভালো লাগত। শান্ত শিষ্ট মিষ্টভাসী ছিল তায়ান। সবসময় নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকত। ওকে কেউ খারাপ কিছু বললে কোনোদিন কারও সাথে রাগ করেও কথা বলে নি তায়ান। বরং মিষ্টি হাসি দিয়ে সবার মন জয় করে নিত। এককথায় ছেলে মেয়ে সবার সন্মানের ছিল তায়ান। তোয়া কে তায়ান প্রোপোজ করেছে তা না। তোয়া নিজেই ওকে নিজের মনের কথা বলেছে। তায়ান প্রথমে না করলেও নিজের জেদে বাধ্য করেছে ওকে ভালোবাসতে। সেই ছেলেকে যখন অপমান করে বের করে দিয়েছে তখন তায়ানের একটাই কথা ছিল।

_- ভালোবাসি তোমায় যদি পারো ফিরে এসে। যতদিন অন্যকারো না হবে ঠিক ততদিন অপেক্ষায় থাকব তোমার।

এইকথাটা সেদিন তোয়ার রাগটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। যার ফলস্বরূপ হসপিটালে ছিল তায়ান।

কিন্তু আজ নিজের সবটা কর্ম তোয়ার মনে পরলেও তা যেন তায়ানের মনে নেই। তোয়া ফিরে আসলে শুধুই এটাই বলেছিল, ভুল করেছিল! এখন ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে মাফ করব না। এইটাই ছিল তায়ানের কাছে বাধা পরার কারন। ক্ষমা শব্দটা দিয়ে মানুষ কতটা নিচু হতে পারে তা তায়ান বুঝিয়ে দিয়েছে। নিজের কাছে লজ্জিত আজ তোয়া…. কিন্তু তায়ানের কাছে এখনো তার নিষ্পাপ তোয়াই হয়ে রইল। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে কি এমনটা করত….

যাইহোক তোয়া শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে বাইরে যেতেই দেখে ওরা চলে এসেছে। তোয়ার চোখে চোখ পরতেই তায়ান মৃদু হাসি দেয়। যাতে নিজের অজান্তেই নিজের চোখ নামিয়ে নেয় তোয়া। তোয়া আর তায়ানকে একপাশে বসিয়ে ওনারা বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করে।

বরাবরের মতই তায়ানের চোখ তোয়ার মাঝেই আটকে গেছে। আর এই প্রথমবার তায়ানের জন্য লজ্জা পাচ্ছে তোয়া।

দু পরিবারের সন্মতিতে ওদের বিয়ে ঠিক করা হয়। সামনের শুক্রবার ওদের বিয়ে ঠিক করা হয়। যেহেতু একবার বিয়ে ভেঙেছে তোয়ার। যদিও তোয়া বিয়ের মুহুর্তে নিজেই বিয়েটা করবেনা বলে বেকে বসেছিল। আর ওকে মানানো সম্ভব না তাই কেউ জোর করেনি। তাই এবার তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায় ওর বাবা।

সবাই এ নিয়ে খুব খুশি। তায়ান গিয়ে তোয়ার কাছে জিজ্ঞেস করল….

— এবার আমাকে বিয়ে করবেন। না করলে বলে দিন কষ্ট করে আসব না।

তখনি তোয়া তায়ানের পেটে খুব জোরেই চিমটি কেটে বলে…

_- এই কথা বললে এখানেই মেরে ফেলব😡

— আচ্ছা… আচ্ছা….. 😄😄 আচ্ছা তুর কই….

— আসলেই ত ।

ও রুম থেকে এসেছে অনেক আগে তাহলে…. এখনি উঠেনি। ঘড়িতে ১২টা বাজে।

— সে যাই হোক ভেবেছিলাম মেয়েটাকে ওই খারুসের বউ করব। যাতে ওর নিরামিশ জীবনটা একটু রসালো হয় তা আর হলো কই।

— তুমি কি পাগল। তোমার বন্ধু আর তুরের সাথে আকাশ পাতাল তফাত। জানিনা কেন তোমার ফ্রেন্ডকে আমার একটুও ভালো লাগেনাই। সব কথায় কেমন একটা রহস্য পেচায়। মানে এক কথা দুটোর উত্তর হয়।

— তোয়া…..

— দেখ তায়ান তুর যদি সানির সাথে নাও যেত তখনও আমি ড. রায়হানের সাথে ওকে বিয়ে দিতে রাজি হতাম না। এটা তোমাকে আগেও বলেছি। আর আমি না চাইলে যে চাচা চাচি আমার কথা শুনবে তা তুমি জান😡😡

-_ আচ্ছা… আচ্ছা… এখন আমাদের বিয়েটা ভেঙে দিও না।

— তায়ান… 😡😡

চলে যেতে নেয়।

_- কোথায় যাচ্ছ…

_- আসছি…

তোয়া তুরের রুমে গিয়ে দেখে তুর এখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ও আলত করে তুরকে ডেকে তোলে। তুর কোনো মতে নিজের চোখ খুলে শুধুই এতটুকু বলে…. আমাকে ঘুমোতে দে আপু। নাইলে আমি বাচব না। ” তারপর আবার ঘুমিয়ে পরে। তোয়া কিছু ভেবে পায় না। তাই ও আর ডেকে তোলে না ওকে ঘুমাতে দেয়। তুরের সবটা জেন অদ্ভুত লাগছে।

দুপুরের পরে তুর ঘুম থেকে উঠল। খুব ভারী লাগছিল নিজেক। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয় তুর। দুপুরের খাবার পর তুর আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। তখনি তোয়া তুরকে ডাকে….

— কিরে আর কত ঘুমাবী। সারাদিন তো ঘুমিয়েই কাটালি।

— জানিনা আপু কেন জানিনা অনেক ঘুম পাচ্ছে।

— কিন্তু এত ঘুমালে তো শরীর খারাপ করবে।

— আচ্ছা বিকেলের দিকে উঠব। এখন ঘুমাই

তোয়ার বিয়ের কথা না শুনেই আবার ঘুমিয়ে পরে তুর।

— আচ্ছা মেয়ে ত বাবা এসেই খালি ঘুম😡

,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙে তুরের.. ও ফ্রেশ হয়ে দেখে সবাই নানা কাজে ব্যস্ত।

— ওইযে এলেন ঘুম রানী। 😡😡 [ ননী ]

— হ্যারে তোর কি আক্কেল নেই তোয়া আপুর বিয়ে আর তুই…[ নীমি ]

— তোয়া আপুর বিয়ে মানে… 😕 কার সাথে..

— হইছে থাম। তুর তুই আমার সাথে আয়।

তোয়া তুরকে নিয়ে নিজের ঘরে যায়।

— আচ্ছা কাল রাতে তোর কি হয়েছিল। ঘুমের মাঝে চিতকার করেছিলি কেন?

— আমি আবার… [ তখনি কাল রাতের কথা মনে পরে। মুহুর্তেই কালো মেঘের আধার নেমে আসে তুরের মুখে। তীব্র এসেছিল কাল। সত্যি তীব্র এসেছিল। কিন্তু জানার কথা না তুর কোথায়। তুর কাপা গলায় তোয়া কে জিজ্ঞেস করে….] আপু কাল কি তুমি আমার সাথে ছিলা রুমে?

তোয়া সত্যিটা বলে না শুধু মাথা নাড়ায়…. এটা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তুর।

— দুঃস্বপ্ন আপু। দুঃস্বপ্ন ছিল।

— আচ্ছা চল তাহলে….

— না আপু তুই যা আমার ভালো লাগছে না।

— তুর.…

— প্লিজ আপু…

জোরাজুরিতে যখন পারল না।।তখন তোয়া একাই চলে গেল। আর তুর কাল রাতের কথা ভাবছে। তীব্রকে ও কল্পনা করেছে। আর তীব্র কেনই বা ওকে খুজবে। এই জন্য তুর ওর বন্দীনী। সেটা তো অন্যকাউকেও করতে পারে। কিন্তু একটা কথা তুরের মাথায় কিছুতেই আসছে না তীব্র এত কিছুর পর ওকে বিয়ে করতে কেন চাইল…. আচ্ছা যদি ভাগ্যের কোনো চক্রে ওর সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে কি করবে তুর? তীব্র কি ওকে ছেড়ে দেবে। না তীব্রের চাওয়া তখন বুঝতে পেরেছে আর না এখন……

সেদিনের মত তুর আর ঘর থেকে বের হয় না। তোয়া ওকে ঘরেই খাইয়ে দিয়ে গেছে….

,
,
,
,
আজও নির্ঘুমে কেটে যাচ্ছে তীব্রের রাত। বেলকনির ইজি চেয়ারে বসে একটার পর একটা সিগারেট টেনে আজকেও পুড়িয়ে চলেছে নিজের ফুসফুসকে। তুরকে ওর কাছে নিয়ে আসার বাধা মাত্র একটাই আর সেটা হচ্ছে তায়ান। ওকে কিডন্যাপ করে আনা মানে পুরো দোষ ওই ছেলের গায়ে যাবে। তাতে ওই ছেলেটা ফাসলে সবাই এটা জেনে যাবে ওরা যা বলেছে সব মিথ্যে। তুর ওই ছেলেটার কাছে ছিল না। আর বিয়ের জন্য বলতে পারবে না। কারন তাতে তায়ান হবে ওর পথের কাটা। যেহেতু ওরা জানে তুর অন্য ছেলেকে ভালোবাসে। এখন তীব্রের কাছে একটা পথ খোলা তুরকে পাওয়ার আর সেটা হচ্ছে তুর নিজে থেকে তীব্রের কাছে ফিরে আসা। আর সেটা যে তুর এমনি এমনি আসবে না তাও তীব্র জানে।। তবে তায়ান যদি না থাকতে তাহলে এতক্ষনে তুর ওর কাছে হত। কিন্তু তায়ানকে সত্যিটা জানানো মানে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়া। কারন ও খুব ভালো করেই জানে ও যা করেছে এটা তায়ান জানতে পারলে কোনদিন তীব্রের দিকে ফিরেও তাকাবে না। ও তুরের জন্য তায়ানকে হারাতে পারবে না।

— তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে তুর। হয় তুমি সেচ্ছায় আসবে নয়তো বাধ্য হয়ে……

,
,,
,
,

,
,
,
,

যেহেতু বিয়ে এই সপ্তাহে তাই সবকিছু কেনাকাটা করা দরকার। এবার জাকজমক ভাবেই বিয়েটা হবে। কিন্তু সময় খুব কম। তাই সকাল থেকে সবাই লিস্ট তৈরি করেছে।দুপুরের খাবার খেয়েই শপিং এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরবে।।সবাই যে যার মত ব্যস্ত। ব্যস্তটা নেই শুধু তুরের…. কোনোকিছুতেই নিজেকে জড়াতে পারছে না। ৬ মাস আগে সময়টা হলে এখানে সবচেয়ে ব্যস্ত থাকতো ও। কিন্তু আজ আর তা নেই। অনেককিছু হারানোর শুন্যতা আজ সব কিছু বিষাদ ময় করে তুলেছে….. মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে হয় কিন্তু যখন এই মানুষ গুলোর ভালোবাসার কথা মনে পরে। তখন এসবের কাছে সেই মানুষটার অন্যায় গুলো নগন্য লাগে। দোষ তো ও করেনি তাহলে ও কেন মরবে। বাচার ইচ্ছেটা তখনি প্রবল হয়। মুল্যবান জিনিসটা হারানো মানেই সবকিছু হারানো না। শুন্য থেকেও সবটা শুরু করা যায়। তীব্রকে ভয় পেয়ে কাদবে না। কারন ও এখন মুক্ত ।খুজে পাবে না তীব্র ওকে। তাই নিজেকেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে চায় ও……

দুপুরের খাবার খেয়ে ওরা শপিংয়ের জন্য বেডিয়ে পরে। তখনী ননী বলে…

— তুর জিজুকেও ডেকে নে না।।


তুর কোনো কথা বলল না। হালকা হেসে আবার নিজের ভাবনায় চলে গেল।

মার্রকেটে ঢুকে তোয়া যেন পাগল হয়ে গেল। সবাই নিজেদের মত নিজেদের পছন্দের জিনিস দেখতে লাগল। কিনতে লাগল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল…. সবাই কেনায় ব্যস্ত আর তুর দাড়িয়ে দেখে যাচ্ছে কিছুই যেন ভালো লাগছে না।

বিকেলে ওর রেষ্টুরেন্ট নাস্তা করতে করতে যে যা কিনেছে আর কিনবে তার কথা বলাবলি করছে। তোয়া নিজের ব্যস্ততায় তুরের কথা ভুলে গেছে। ওকে জিজ্ঞেস করলে বলে তোমরা আগে নিজেদের ঝামেলা মেটাও। আমি চয়েজ খারাপ। তোমার কেনাকাটা হয়ে গেলে আমারটা করব।

খাওয়া শেষ করে ওরা শাড়ির দোকানে যায়। তোয়া এবার তুরের জন্য শাড়ি কিনতে চায়।ঠিক তখনি একজন মহিলা স্টাফ এসে বলে, ওনি তুরকে হেল্প করবে। তিনি তুরকে একটা টকটকে লাল রঙের গোল্ডেন কাজ করা শাড়ি দেখায়। শাড়িটা বেশ ভালোই লাগে তুরের। কিন্তু শাড়ির প্রাইজ দেখে ও না করে দেয়।

— এর চেয়ে নরমাল দেখান।

— আচ্ছা মেম আপনার যখন পছন্দ হয়েছে আপনি নাহয় ট্রাই করে দেখে নিন।

তর হ্যা সন্মতি করে।

— ট্রায়াল রুমটা কোনদিকে….

— ওইদিকে মেম…..

তুর ট্রায়াল রুমে গিয়ে দরজা আটকাতে দেখে কেউ একজন সেখানে দাড়িয়ে আছে। এটা দেখে তুর তাডাতাড়ি দরজা খুলতে চাইলে পারে না। লোকটা ওকে টেনে ভিতরে নিয়ে জড়িয়ে ধরে… তুর কিছু বুঝে উঠার আগেই অচেতন হয়ে পরে।

,
,
,
তোয়া তুরকে কল করছে কিন্তু ধরছে না। তখনি একটা ম্যাসেজ আসে।

— আপু আমি সানির সাথে যাচ্ছি। ফিরতে লেট হবে বাসায় জানিয়ে দিস।

এটা দেখে তোয়া আবার ফোন করে। কিন্তু এবার ফোন বন্ধ। সানিকে ফোন করবে কিন্তু ওর নাম্বার নেই। বিরক্ত হয়ে তোয়া নিজের কাজে মন দেয়।

,
,

,,
,
,
,
,

তুরের চোখ খুলতেই উপরে দেয়াল চোখে পরে। ও উঠার চেষ্টা করতে আটকে যায়। হাত পা বাধা। আর ও একটা টেবিলের উপর শুয়ে আছে। ডাকতে চাইল পারল না মুখটাও বাধা। । মনে হচ্ছে কোনো গোডাউন ঘর। বাইরে থেকে হালকা আলো আসছে।বুঝতে পারছে সন্ধা নেমেছে। কিন্তু কে এনেছে। সেই লোকটা কিন্তু লোকটা কে??

তুরের ভাবনা শেষ না হতেই আবছা অন্ধকারে একটা চেনা মুখ ভেসে আসে। কলিজা কেপে উঠে তুরের। বাধন মুক্ত হওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে..…

_– তীব্রকে ছেড়ে আর কতদিন দুরে থাকবে তুর বেবি।

তুরের দুদিকে হাত দিয়ে ওর কপালে আধো পরশ বুলায় তীব্র। তারপর কিছুটা দুরে গিয়ে বলে….

— welcome back to the hell… তীব্রের নরকে আবার ফিরে আসার জন্য তোমাকে স্বাগতম।

তুরের ছোটাছুটি আরো বেড়ে গেলো।

— এভাবে ছোটাছুটি করো না শোনা। হাত অলরেডি লাল হয়ে গেছে একটুপর কেটে রক্ত বের হওয়া শুরু করবে।

কিন্তু তুর শান্ত হলো না। এইটা দেখে তীব্র এতজোরে ধমক দিল যে তুর এবার কেদেই দিল। হালকা হাসল তীব্র তারপর ওর গাল খুব জোরেই চেপে ধরল।

— এইটা আমাকে ধোকা দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল। আমার কাছে ধরা পরলে তোর কি হাল হতে পারে। তুই তীব্রকে ধোকা দিয়েছিস। এবার তার শাস্তি ও পাবি….

তুর মাথা নেড়ে না করল। কিন্তু তীব্র শুনল না। তীব্র কোথাও একটা চলে গেল। কিন্তু যখন ফিরে এলো তাতে তুরের কলিজাসহ কেপে উঠল। কারন তীব্র এমনি আসেনি। ওর হাতে গরম করে লাল হয়ে যাওয়া দুটো লোহার শিক। যা দিয়ে ধোয়া উঠছে।

— আজকে তোর এমন অবস্তা করব যাতে আর কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাওয়া তো দুরে থাক তার ভাবনাও মনে আনবি না। তীব্রকে ধোকা দেওয়ার পরিনাম আজ তোকে বোঝাব….. আমার দেওয়া আঘাত তোর শরীরে স্থায়ী না হলেও এই শিকের আঘাত হবে।

এই বলে শিকগুলো তুরের দিকে এগিয়ে দিতে লাগল। একটা শিক তুরের ডান হাতে আরেকটা ওর পেটের দিকে…. তুর নিজেকে বাচানোর জন্য ছটফট করছে । এতটাই যে ওর হাত কেটে রক্ত বের হওয়ার উপক্রম। কিন্তু মুখ বাধা থাকার কারনে শব্দ করতে পারল না। ইশারায় না করল কিন্তু তীব্র শুনল না। এক পর্যায়ে তুর উপরের দিকে তাকিয়ে কানতে শুরু করল….
.
.
.
.
.
.
.
.
.

[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]

একটা কথা বলি অনেকেই বলবেন তীব্র এমন তাই ও নায়ক। আর তার কারন সবার জানা। তাই তীব্র এমন কেন এটা বলবেন না । তীব্র এমন বলেই ও নায়ক। কারন কাহিনিটাই এমন। আর তার জন্য আপনারা পরেন। আর তীব্রকে ভালো না লাগলে কিছু করার নাই । কারন ওর এসব পাগলামী আপনাদের মনে হয় কোন কাহিনি হতে পারে।

সে যাই হোক । একটা কথা বলব ও হিরো রুপি ভিলেন বা ভিলেন রুপি হিরো আমি কিন্তু ওকে ভালো বলিনি বরং ওর নেগেটিভ দিকটাই তুলে ধরেছি। ওকে ভালো বলছি বলে আমার মনে হয় না।

আর যাদের টর্রচার নিয়ে সমস্যা তাদের বলছি। এই গল্পটায় কি আশা করেন? গল্পটাই তো সাইকো। এখন একজন সাইকো কি আপনার মত করে ভাববে। আর সাইকো লাভ কাকে বলে বুঝতে পারবেন ইনশাল্লাহ…. 🤣🤣🤣 যাই হোক… আরেকটা কথা কেউ বলবেন না তীব্রের এমন করার কারন কি?? কারন পাগলরা যা করে কারন ছাড়াই করে। হাসেও কারন ছাড়া আর মারেও….

সার কোন ড্রাউট…

আর হ্যা যারা গল্পটা কত বড় হবে তার কথা বলেন তাদের বলি, উপযুক্ত সময় এমনি হবে।।আমি এখন হ্যাপি ইন্ডিং দিয়ে মিল দিলে তো হবে না তাইনা।😴😴😴

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr
#Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here