#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৫৮
#মিদহাদ_আহমদ
‘এইটা কি গল্পের বাসা? আমরা গল্পকে দেখতে এসেছি’
‘দাঁড়ান। আমি ভেতরে জিগাইতাছি। হ এইডা গল্পের বাসা’
দারোয়ান জবাব দিলো ফারুক স্যারকে। ফারুক স্যারের দিকে তার মেয়ে মুন্নি জিজ্ঞেস করলো,
‘এইটা কি ওই আন্টির বাসা?’
‘হ্যাঁ মা। ওই আন্টির বাসা এইটা।’
দারোয়ান ভেতরে এসে ঢুকলো। আমি ডাইনিং রুমে শ্বশুরের সাথে বসে গল্প করছিলাম। দারোয়ান কাকা বললো,
‘বাইরে কে জানি আইছে। গল্পের সাথে দেখা করবো কইছে।’
‘গল্পের সাথে!’
‘হ। খুঁজলো তো গল্পরে’
আমি উঠে গেলাম। বাইরে আসতেই দেখলাম একজন মধ্যবয়স্ক সুন্দর পুরুষ আর তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটা বাচ্চা মেয়ে। উনি বললেন,
‘আসসালামুয়ালাইকুম। আমি গল্পের আর্ট টিচার। মিস্টার ফারুক। আর এই আমার মেয়ে মুন্নি।’
আমি আবার সালাম দিলাম স্যারকে। তারপর বললাম,
‘আসুন আসুন। ভেতরে আসুন।’
ফারুক স্যার আর তার মেয়েকে ভেতরে এনে বসিয়ে আমি রান্নাঘরে গেলাম খাবার আয়োজন করতে৷ ফিরে এসে দেখি শ্বশুরের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছেন ফারুক স্যার। আমি পাশে বসতেই ফারুক স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আপনি…’
শ্বশুর ফারুক স্যারের কথার জবাব নিজ থেকেই দিলেন। বললেন,
‘এই হচ্ছে আপনার ছাত্রীর মা। আমার পুত্রবধূ নুপুর ‘
‘মানে গল্পের মা আপনি?’
‘জি স্যার। আমি।’
এদিকে বাচ্চা মেয়েটা তার বাবাকে কিছু একটা বললো। তিনি বললেন
‘আসলে আমরা এসেছিলাম গল্পের মায়ের সাথে দেখা করতে। আই মিন মিস তানিয়ার সাথে। আমার মেয়েটা তাকে দেখবে বলে অপেক্ষা করছে অনেক্ষণ থেকে।’
শ্বশুর ডাক দিলেন ননাসকে। ননাস তার রুমেই ছিলেন৷ ননাস সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার আগেই স্যারের বাচ্চা মেয়েটা উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ননাসকে৷ ননাস এসে সোফায় বসলো।স্যারকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। স্যার তারপর বললেন,
‘জানেন আপনি যখন কাল তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, সে খুব খুশি হয়েছে। তারপর থেকেই বায়না ধরে আছে যে আপনার কাছে আসবে। আপনাকে দেখবে। মেয়েটা এখনও দুর্বল হয়ে গেলো।’
আমি বুঝতে পারলাম কাল দুপুরে তাহলে ননাস এই বাচ্চাটাকেই দেখতে গিয়েছে। ননাসও জড়িয়ে ধরে অণেক্ষণ আদর করলো বাচ্চা মেয়েটাকে। এমন সময় আসিফ বাসায় এসে ঢুকলো। আসিফকে দেখেই গল্পের আর্ট টিচার দাঁড়িয়ে গেলেন। উঠে বললেন,
‘আপনি আসিফ সাহেব না? আপনি…’
আসিফ কিছুটা অবাক হলো। সালাম দিয়ে বললো,
‘জি। আপনাকে ঠিক…’
ননাস আসিফকে গল্পের টিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ফারুক স্যার আসিফকে বললো,
‘আপনার মাদার এন্ড ওয়ার্ল্ড আর্টটাই তো প্রদর্শনী হয়েছিলো ল্যুভর মিউজিয়ামে। এম আই রাইট? আর পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্য থেকে যাওয়া দুইটা ছবির মধ্যে একটা আপনার৷ অন্যটা সম্ভবত চারতের চিনাই রাজপুতের ছিলো তাইনা?’
‘না না। চিনাই রাজপুত না, মাহেন্দ্র রাজপুতের।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে৷ আর আমি যাস্ট অবাক হচ্ছি, এতবড় একজন গুণী আর্টিস্টের মেয়েকে আমি আর্ট শেখাচ্ছি!’
আসিফ স্যারের হাত ধরে বললো,
‘স্যাররা সবসময় স্যার হোন৷ আমি আমার মেয়েকে এমন সময় দিতে পারিনি৷ কিন্তু আমার মেয়েকে আপনি সময় দিয়েছেন, আগলে রেখেছেন৷ সব কৃতিত্ব আপনার।’
এভাবে তাদের বেশ কিছুক্ষণ আলাপ চললো৷ আমি খেয়াল করলাম স্যারের ছোট মেয়ে মুন্নি একা একাই ননাসের কাছাকাছি চলে এলো৷ সিঁড়ি বেয়ে উপরেও উঠেছে সে। ননাসও তাকে নিয়ে মেতে আছেন। গল্প ঘুমে ছিলো। সেও ঘুম থেকে জেগে উঠেছে৷ গল্প আবার দেখলাম সহজে সবার সাথে ভাব করে নেয়৷ সে মুন্নির হাতে ধরে তার রুমে নিয়ে গেলো। একবার গিয়ে দেখে এলাম দুজনে খেলা করছে। শাশুড়ি মা স্যারকে খেয়ে যেতে বললেন৷ এর মাঝে আমি আর শাশুড়ি মা খাবারও রেডি করে নিলাম।
টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে৷ আসিফ আর স্যার কথা বলছেন আর্টের নানাকিছু নিয়ে৷ গল্পও বসলো চেয়ারে। ননাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্পকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছিলো। গল্পের পাশের চেয়ারেই স্যারের মেয়ে৷ স্যারের মেয়েকে আমি প্লেইটে তুলে চিকেন দিলেও সে কেমন জানি ননাসের দিকে চেয়ে আছে! আমার বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটা ননাসের আমার মেয়েকে খাইয়ে দেয়া দেখে সেও খেতে চাচ্ছে! আমি মুন্নির পাশে গিয়ে কানে কানে বললাম,
‘আমি খাইয়ে দেই মুখে তুলে মা?’
মুন্নি বললো,
‘ওই আন্টিকে বলে আমাকে খাইয়ে দিতে ‘
টেবিলে থাকা সবাই কথাতা শুনতে পেলো। ফারুক স্যার মেয়ের দিকে চোখ ইশারায় গলা ঝেড়ে বললেন,
‘না মা। খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি৷ আন্টিরও কাজ আছে তাইনা বাবা?’
ননাস মুন্নিকে গল্পের পাশে এনে বসিয়ে ভাত আরেকটু মাড়লো। ভাত মেড়ে বললো,
‘এবার দুজন একসাথে খাবে আমার সাথে। দুজনে বড় বড় করে হা করো দেখি’
ননাসের এমন কাজের প্রতি আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি যে এতটা মানবিক হবেন আমি বুঝতেও পারিনি৷ খাওয়া শেষ হলো। তিনটা নাগাদ রফিক স্যার উঠতে চাইলেন৷ মুন্নিকে ডাক দিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু সে আসলো না৷ কিছুক্ষণ পর ননাসের হাত ধরে সে নিচে এলো। গল্পও সাথে। গল্পের অনেক ভাব হয়ে গিয়েছে মুন্নির সাথে এই কিছু সময়ের ভেতরে। ফারুক স্যার মেয়েকে বললেন,
‘কী? এখন আমাদের বাসায় যেতে হবে না?’
মুন্নি মুখ মলিন করে চুপচাপ তার বাবার কাছে এসে দাঁড়ালো৷ তানিয়া আপা বললেন,
‘স্যার আপনি ওকে নিয়ে আবার আসবেন বাসায়। কত লক্ষ্মী একটা মেয়ে!’
‘আচ্ছা। বলেছেন যখন অবশ্যই আসবো।’
‘তুমি কি আমার আম্মু হবা?’
হুট করে সবার সামনে কথাটা বলে বসলো মুন্নি। ফারুক স্যার অগ্নিশর্মা চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। বুঝতে পারলাম অনেক আদরের মেয়ে তাই খুব কষ্টে নিজের হাতকে সংযত করে রেখেছেন। আর কোন কথাই তিনি বললেন না। মেয়েকে হাতে ধরে সোজা বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন। কিন্তু আমার কানে তখন থেকে শুধুই ধ্বনিত হতে লাগলো বারেবারে বাচ্চাটার বলা সেই কথা, ‘তুমি কি আমার আম্মু হবা?’
এই গ্রুপ আমার জন্য গ্রুপ না, এইটা একটা মানবিক মানুষের মিলনমেলা। আমি আপনাদের পেয়ে প্রাউড ফিল করি। আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় পাঠক। গতদিন বলেছিলাম মাদ্রাসার চার রুমের মেঝের জন্য প্লাস্টিকের কার্পেট দরকার। আমি প্রিন্সিপালকে ইনশাআল্লাহ বলে এসেছিলাম শুধু। যাস্ট একটা পোস্ট দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সাথেসাথে ম্যানেজ করে দিয়েছেন। এতিম বাচ্চারা যখন এই প্লাস্টিক বসানো মেঝেতে বসে পড়বে, তখন এই প্লাস্টিকের কার্পেটও সাক্ষী রয়ে যাবে তাদের পড়ার। আল্লাহ এর উত্তম বদলা দিন সবাইকে৷ আমি খুশি আল্লাহ আমাকে বারবার এতিমখানায় ফিরিয়ে নিয়েছেন ডোনেশন কালেক্ট করে দিয়ে। আমার কাছে এরচেয়ে ভালোলাগার আর কোনকিছু নেই। আমি চির কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছেও। এবার সামনের কুরবানিটা সঠিকভাবে করে এতিমখানায় দিয়ে আসতে পারলেই আমার দায়িত্বটা শেষ হবে। ডাক্তার খালামণির দেয়া এই কুরবানির দায়িত্বটা যেনো আমি শেষ করতে পারি সঠিকভাবে। কেউ যদি এতিমখানার বাচ্চাদের ঈদের দিনের চাল, তেল, সেমাই এসব দিতে চান তাহলে জানাবেন। আমি মাংসের সাথে এগুলোও দিয়ে আসবো। দোয়া করবেন যেন এই কাজটাও করতে পারি আমি সঠিকভাবে। আবারও বলছি, এতিমদের সাহায্য করবেন, ভালোবাসবেন৷ আল্লাহর রাসূল এতিমদের ভালোবাসতেন। কেউ যদি কোন ডোনেশন দিতে চান মাদ্রাসার জন্য আমাকে ইনবক্স করবেন। অথবা আমার বিকাশেও মাদ্রাসার জন্য কিছু দিতে চাইলে পারবেন। আমার বিকাশ নাম্বার, 01762095729 (personal)
গতকাল মাদ্রাসায় প্লাস্টিকের কার্পেট দিয়ে আসার পোস্ট লিংক যুক্ত করে দিলাম
https://m.facebook.com/groups/438369451290135/permalink/583731950087217/