বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-৩০

0
718

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 30…….

রিদ্ধ বেশ খুশি হয়েই চলে যায়। তীব্র খুব শান্ত হয়েই সেলের শিকে হেলান দিয়ে বলে,
——- ” দ্যা গেইম ইজ স্টার্ট নাও। আমাকে রাগিয়ে একদম ভালো করোনি তুমি তুর। তুমি এবার দেখবে তীব্রের ক্ষমতা। তোমার কথায় যেমন সবকিছু মেনে নিয়েছি তেমনি সবকিছু মানিয়ে নিতেও দেখবে এবার। আদালতে যদি তোমাকে নিজের আপন করে নিতে না পারি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে তবে আমি তোমার তীব্র নই।’’

পরের দিন সকাল বেলা কমিশনার নিজে আসে। ওনাকে দেখে শাওন স্যালুট দেয়। কমিশনার বেশ রেগেই জিজ্ঞেস করে,
—— ‘‘ তুমি কোন অর্ডার ছাড়া ব্যাক্তিগত ক্ষোভ পূরনের গায়ে ড. রায়হানের গায়ে হাত তুলেছ? জানাে এর শাস্তি স্বরুপ তোমাকে বরখাস্ত করা যেতে পারে। “

কথাটা শুনে শাওন চুপ হয়ে আছে। সত্যি ও বেআইনি ভাবে তীব্রকে মেরেছে।
—– “ সরি স্যার। “
—– “ সরি বললে সাত খুন মাফ হয়ে যায় না ইন্সপেক্টর সায়মান রহমান শাওন। আপনি হয়ত আইন ভুলে গেছেন । কোন রকম কোর্ট অর্ডার ছাড়া ড, রায়হানের উপর যে ব্যাক্তিগত ক্ষোভ পূরন করেছেন তার জন্য আপনাকে সাসপেন্স করার রাইট আমার আছে।”

——- ” স্যার তুর ওনার সাথে দেখা করতে এসেছিল আর ওনি…. ”
—— ” জাস্ট সার্ট আপ শাওন। আমি তোমার মুখে এই ব্যাপারে আর কোন কথা শুনতে চাই না। ওনি যদি লিগ্যাল স্টেপ নেয় তাহলে তোমার ক্যারিয়ার শেষ বুঝতে পারছ। ”
—— ” ইয়েস স্যার।” — মাথা নিচু করে।
—— ” বাট আমি ওনাকে এই সেলে রাখতে চাইছি না। কোর্ট অর্ডার রয়েছে ওনাকে আজ অন্য সেলে ট্রন্সফার করা হবে। ”
—— ” ইয়েস স্যার।”

তারপর তীব্রকে ওই সেল থেকে অন্য সেলে ট্রান্সফারের জন্য বের করে নিয়ে আসা হলে তীব্র হাত উঠিয়ে নিজের বিরক্তি ঝাড়ে। তারপর ওকে অন্য সেলে ট্রান্সফারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় শাওনের কানের কাছে গিয়ে বলে,
—— ” নিজের ক্ষমতা আমি জাহির করি না। মশা মেরে হাত নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। ইচ্ছে ছিল তোমাকে কিছু বলব পরে ভাবলাম না তুমি যা করেছ ঠিক করেছ। যাই হোক যদি লাইফে কোনদিন এক রাস্তায় পরে যাই তবে আবার দেখা হবে।”
——- ” আমি আপনাকে…. ”
——- ” সেই কাজটা আর একবার ও ভেব না। তোমার মানসিকতা আমার ভালো লেগেছে আর নিজের বাইরে কিছু করার সাহস তুমি দেখিয়েছ। সো শাস্তি পাপ্য তুমি নও। আসি….. ”

শাওন তীব্রের কথা আগা মাথা কিছু বুঝল না। কিন্তু এটা বুঝল তীব্র নিজের জোরে সেল বদল করেছে কিন্তু কেন? আর কি বলে গেল এসব?

★————————-★————————★
,
,
অন্য সেলে গিয়ে কমিশনারকে ধন্যবাদ জানাল। ও যা করতে চায় তা শাওনের ওখানে করতে পারত না। তাই সেল পরিবর্তন করেছে। এইখান থেকেই আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে ওকে।

ইদানিং বড্ড ক্লান্ত লাগে তুরের। বেশ ঘুম পায়। এত ঘুম কোথা থেকে আসে জানেনা। রাতে একাই ঘুমায়। তোয়া বা অন্য কেউ কারো সাথেই থাকতে ইচ্ছে হয় না। কেমন একটা অসহ্য লাগে সব কিছু। একা একাই দিন পার হয়ে যায়। প্রচন্ড রাগ লাগে যখন বেবির কথা ভাবে পরে আবার কোথায় যেন রাগটা মিলিয়ে যায়।

রাতের খাবার খেয়ে কোনমতে দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে ও। নিজের আগের লাইফ আর বর্তমান লাইফ নিয়ে ভাবে। এখানে এসে পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে ইচ্ছে হয়নি আর। শুধু একটা কথা ভাবছে সেদিন যদি তোয়ার বিয়েতে না যেত তাহলে সবকিছু স্বাভাবিক হত। আজ ও কোন ভার্রসিটিতে ভর্তি হত। সবার মত লাইফ স্বাভাবিক হত। কারও বন্দী থাকতে হত না।

বেশ কিছুক্ষন এগুলো ভেবে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। শুয়ে পরা মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

★————————-★————————★

ঘড়ির ছোট কাটা ১টার ঘরে। তুরের রুমে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে প্রবেশ করে তুরের চিরচেনা সেই মানুষটি। তীব্র এসেছে। আর এই জন্য অন্য সেলে ট্রান্সফার হয়েছে। তবে আজকে কেন এসেছে সেই কারন টা তীব্রের কাছে স্পষ্ট নয়। ভালোবাসা নাকি রাগ। রাগ নাকি ভালোবাসা যাই হোক সেটার প্রকাশ একভাবেই হয়।

.বিছানায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে আছে তুর। ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তুরের নিষ্পাপ মুখে।না চাইতেও বড্ড আঘাত করে ফেলেছে মেয়েটাকে। কিন্তু কিছু করার ছিল না। তুরের মুখের ওই কথাগুলো বাধ্য করেছিল এমনটা করতে। তীব্র এক পা দু পা করে ধীর ভাবে তুরের দিকে এগিয়ে যায়।

আব জানে হাম
এ প্রেয়ার কেয়া হে….
দার-দে-জিগার
মুশকিল বাড়া হে…..
শুনতা নেহি
কেহেনা কহি ভি…..
দিল – বে-খাবার
জিদপে আঁড়া হে।

——- ” এখন বুঝেছি, নিজের মনের চাওয়া বুঝেছি। হ্যা তুর সত্যি মন থেকে চাইছি তোমাকে। তাই তো না চাইতেও তোমার জন্য এতটা বেশি জিদ্দি হয়ে উঠেছে আমার মন। তোমার জন্য যে অনুভুতি আমার মনে সৃষ্টি হয়েছে তার অন্য কোন নাম আমি খুজে পাইনি। ভালোবাসা নামের ৪টা শব্দ দিয়ে আদো তা বোঝানো যায় কিনা জানিনা। তাই তাকে অবুঝের মত সেই নাম দিলাম না।”

তীব্র গিয়ে তুরের পাশে বসে। আবছা অন্ধকার কিন্তু বাইরে থেকে আসা চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তুরের ঘুমন্ত মুখটা। ঠান্ডা বাতাসে বার বার শিওরে উঠছে।

——- ” পরশু আদালতে যা হবে তা আমি করতে চাইনা তুর কিন্তু তুমি আমায় বাধ্য করলে। তোমায় নিয়ে খেলা আমি সেদিন ছেড়ে দিয়েছিলাম যেদিন তোমাকে বিয়ে করার ওয়াদা করেছিলাম। কিন্তু তুমি গতকাল যেটা করলে তারপরে আবারও আমাকে বাধ্য করলে তোমাকে নিজের বন্দিনি করতে। আমার সন্তান আর তোমাকে নিজের করার জন্য আমি নিরুপায়। ”

তীব্র তুরের হাতের বন্ধন থেকে কাথা ছাড়িয়ে নিয়ে তুরের গলায় হাত বুলায়। মোবাইলের টচ অন করে গলার দিকে দেখতেই আতকে উঠে। ওর আঙুলের ছাপ বিশ্রি ভাবে ফুটে উঠেছে। ফর্সা গলায় দাগগুলো কালো হয়ে আছে৷ তীব্র ভালোভাবে দেখে নেয়। তুর গভীর ঘুমে আছন্ন। আর এই সময় এটা স্বাভাবিক। তীব্র তুরের কপালে গভীর চুমো আকে। ওর গালে হাত দিয়ে কিছু আবছা আলোয় ওর মুখটা দেখতে থাকে। তারপর কিছু মনে করে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

——– ” সরি তুর। ”

কথাটা বলে তীব্র ওর গলার বাইটের সেই জায়গায় আঙুল দিয়ে স্লাইড করে। এই দাগটাই তুরকে নিজের বন্দিনীর চিহ্ন হিসেবে দিয়েছিল। যেটা সবসময় তুর দেখত আর নিজের মনে বিড়বিড় করত। যা তীব্র ক্যামেরায় সবসময় দেখত। তীব্র কখনোই চায়নি এই দাগটা ওর শরীর থেকে মুছে যাক।আর তাই ও বার বার একই জায়গায় এই নকশা করেছে।

কিন্তু এখন সেটা হালকা হয়ে এসেছে। এই দাগটা বিয়ের পর ওর মনে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছে। আসলেই জোর করে মনের দখল নেওয়া যায় না। তীব্র পারেনি। অস্থির করতে পেরেছে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে না।
— ” তোমার মনে যখন ভালোবাসার দাগ দিতে না পারি তাহলে বন্দিনীর দাগটাই নিজের শরীরে রাখ। যেটা করা আমার দ্বারা সম্ভব। ”

তুরের গলার নিচের বাইটের সেই জায়গায় আবার তীব্র ঠোঁট ছোয়ায়। হঠাৎ ঘুমের মাঝেই তুর প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে। ঘুমের তালেই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তীব্র ওর হাত দুপাশে চেপে ধরে৷ ভয়ে তুরের নিশ্বাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। আধো আধো ভাবে চোখ মেলে তাকাতে চোখের সামনে কাউকে দেখতে পায়। আচমকা এমন কিছু দেখে ভয়ে তুর চিতকার করতে নিলেই তীব্র ওর মুখ চেপে ধরে একদম ওর কাছে গিয়ে বলে….
—– ” চিতকার কেন করছ তুর বেবি। আমি তো তোমার তীব্র৷ তোমার সন্তানের বাবা। ”

তুর নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে। ওর এই অবস্থা দেখে তীব্র বলে,
— ” আমার থেকে দুরে যাওয়ার জন্য তোমার যতটা আকুতি। আমার ততটাই তোমার কাছে আসার জন্য। ”

তুরের মুখ ছেড়ে দিতেই ও জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,
— ” আপনি এখানে কেন? আপনার তো…. ”
_- ” জেলে থাকার কথা তাইত। একটু ভেবে দেখ তোমার ইচ্ছে পুরন করতে জেলে যেতে পারলে নিজের ইচ্ছে পুরন করতে বাইরে আসতে পারব না? ”
– ” আপনি আসলেই একটা জঘন্য লোক। ”

জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলতে থাকে। কিন্তু তুরের এই কথাগুলো এখন তীব্রের গায়ে কাটার মত ফুটছে। বিষ লাগছে। শুধু এটাই মনে আসছে ও তখন বেবিকে মেরে ফেলার কথা বলছে। আর এটা ভাবা মাত্রই কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল নিজের উপর থেকে।

— “আমি তো জঘন্যই আর সেই জঘন্য লোকটাকেই সারাজীবন সহ্য করতে হবে তোমার। ”

তুরের দুকাধ ধরে । কিন্তু তুর পাগলের মত ছোটাছুটি করছে। প্রচন্ড রাগ লাগল। কিন্তু এখন কোন মতেই তুরের গায়ে আঘাত করতে চায় না ও। কিন্তু তুর যে নাছোড়বান্দা সেটাও বুঝল। একসময় তুরের ধাক্কায় বেডে পরে যায় তীব্র। কিন্তু ও তো কম না তুরের হাত ধরে টেনে ওকেও ফেলে দেয়। কিন্তু বিছানায় পরার আগেই তীব্র ওকে ধরে বিছানায় শুইয়ে নিজের বাম বাহুতে ওর মাথা রেখে দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে নিজের কপাল তুরের ঠোঁটে দেয়। না চাইতেই তুর ওর কপালে চুমো আকে। এটা দেখে তুর শান্ত হয়ে যায়। আর তীব্র বলে,

” কিস করতে চাও আগে বলবে তো। তাহলে..”
–“চুপ করুন। আর ছাড়ুন আমাকে। ”

বেশ রেগে তীব্রকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তীব্র নাছোড়বান্দা।

-” that’s my girl. ( আলত ভাবে তুরের গাল চাপড়ে ) জানে আমি ছাড়ব না। তবুও ছোটাছুটি করবে। তুমি জান তুমি এমন করলে আমার তোমাকে ছাগলের বাচ্চা মনে হয়। আচ্ছা তোমার বাব মায়ের ছাগলের খামার ছিল। যে তুমি তা দেখে দেখে এমন হয়েছ। ”

এইটা শুনে তুর প্রচন্ড রেগে ওর দিকে তাকায়।
– ” মজা হচ্ছে? ”
— ” হুমম। আর যদি সবাইকে জানাতে না চাও তুমি আমার আদর খাচ্ছ তাহলে এখন কথা বলো না।”

বলেই তুরকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে নিল। তুর প্রথমে কিছুটা শান্ত হলেও যে বেশিক্ষন থাকবে না তা বুঝল। ঠিক তাই হলো তুর নিজেকে আবার ছাড়ানোর চেষ্টা করল।

— ” তোমাকে দেখে আমার বোঝা হয়ে গেছে আল্লাহ সবার জন্য যোগ্য সঙ্গী পাঠায়। ”
— ” আমি আপনার কেউ না।”
— ” তুমি আমার শরীয়ত মোতাবেক বউ না হলেও আমার বেবির মা তো। আচ্ছা আমাদের বেবি কার মত হবে?” – কিছুটা চিন্তিত হয়ে।

– ” আপনার সব কিছু আপনার মতই হবে। এবার ছাড়ুন আমাকে। ”

তুর অনবরত ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। তীব্রের বুকে হাত দিয়ে কিল ঘুশির কোন কমতি রাখে নাই। কিন্তু তীব্র নাছোড়বান্দা। তুরের পাগলামিতে ও মজা নিচ্ছে। একসময় না পেরে তীব্রের বুকে কামর বসিয়ে দেয়। এতটা জোরে রক্ত বেড়িয়ে যায়৷ এবার তীব্র “আহহহ ” শব্দ করে দ্রুত তুরের হাতগুলো পিছনে একহাত দিয়ে ধরে ওর গাল আলত করে চেপে ধরে বলে,
— ” এই ছাগলের বাচ্চার মত লাফাও ঠিক আছে৷ কিন্তু এই কুকুরনির মত কামরাচ্ছ কেন?”

কুকুর বলাতে তুরের রাগ আরো বেড়ে গেছে। ও চোখ মুখ খিচিয়ে দাত কড়মড় করতে করতে বলল,
_- ” কি আপনি আমাকে কুত্তা বললেন? ”

বুঝল প্রচন্ড রেগে গেছে তুর। ওকে শান্ত করার জন্য বলল,
— ” কুত্তা কখন বললাম আমি তো কুকুরনি বললাম।” ইনোসেন্ট ফেস করে।
–” ওই একই হল।”
-” তা সে যাই হক। কুত্তা কুকুরনি whatever এখন কামর দিও না। ছোট বেলায় শুনতাম পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় কুকুরে কামর দিলে মানুষের পেটেও বাচ্চা হয়। এখন তুমিও প্রেগন্যান্ট। বুঝতেই পারছ । না না মরার ভয় নেই। কিন্তু যদি তোমার কামরে আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাই ব্যাপারটা কেমন না। এমনি তোমার জন্য আমার সব রেপুটেশন আল্লাহর রহমতে গেছে। এখন যতটুকু মানুষ হিসেবে ছিল তাও যাবে। সো প্লিজ ”

তীব্র এমন একটা ফেস করে আছে যাতে ওকে নিষ্পাপ শিশু মনে হচ্ছে।যেন কিছুই বোঝেই না। তুর ওর মুখে এই কথা শুনে আবুলের মত রাগী ফেস করে তাকিয়ে আছে।

— ” এভাবে দেখছ কেন? তোমার মতলব সুবিধার না। ( সন্দেহের দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকিয়ে ) এই কোথাও তোমার ক্ষিদে পাইনি তো? দেখ প্লিজ আর যাই করো না কেন? আমাকে নিজের খাবার ভেব না। ” -মিনতি করে।

-” মানে? ” – তুরের মনে হচ্ছে ও সত্যি পাগল হয়ে যাবে৷
— ” মানে। ( একটু রেগে ) আমার ঠোঁট তোমার কাছে যে স্যান্ডউইচ মনে হয় তা জানিনা ভেবেছ।”

তীব্রের এমন কথায় তুরের সত্যি সত্যি মাথা ঘোরা শুরু হল…..
” আপনি বাজে কথা বন্ধ করবেন। আর ছাড়ুন আমাকে। ”

তুর ওর থেকে উঠতে চাইলে তীব্র আবার টেনে আবার ওকে বুকের উপর ফেলে দেয়। যাতে ওর চুল তীব্রের মুখে পরে। তুর উঠার আগেই একহাত দিয়ে ওকে বুকের মধ্যে আটকে ধরে। তুর মুখ উঠিয়ে তীব্রের দিকে তাকাতেই ওর চুল গুলো তুরের কানে গুজে দেয়। তুরের চোখে পানি চিকচিক করছে। তীব্র আর কোন কথা না বলে তুরের মাথা নিজের বুকে রাখে। তুর ও আর কোনরকম ছোটাছুটি না করে শান্ত হয়ে পরে। তীব্রের হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি তুরের কানে আসছে। নিশ্চুপ তুর তা কান পেতে অনিচ্ছাতেই শুনছে। প্রথমে বিরক্ত লাগলেও ধীরে ধীরে তা ছন্দের মত লাগল ওর কাছে।

কিছুক্ষন পর যখন তীব্র উঠতে চাইলে।তুর তাতে বাধা প্রদান করল। এই ছন্দের ছন্দ পতন একদম সহ্য হল না ওর। তীব্র উঠতে চাইলে তুর “উমম” শব্দ করে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করল। তীব্র তুরের বিরক্তি বুঝতে পেরে মৃদু হাসল। এবার নিজেও একদম শান্ত হয়ে শুয়ে রইল। আর ওর বুকে কান পেতে চোখ বন্ধ করে রইল তুর। তীব্র বড় সড় নিশ্বাস নিয়ে কাথা দিয়ে তুরকে ঢেকে নিল। যাতে ওর ঠান্ডা না লাগে। তারপর একহাত দিয়ে তুরকে জড়িয়ে আরেকহাত দিয়ে চুলে হাত বুলাতে লাগল।

এভাবে কতক্ষন গড়িয়ে গেল বলতে পারবে না কেউ। ঠিক যেমন আগে ছিল এখনো ঠিক তাই। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে তীব্র বলে উঠল,
— ” আমাকে ছেড়ে ভাল আছ তুমি তুর? কষ্ট হয় না। তুমি তো আমার অভ্যাস হয়ে গেছ। তোমাকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত না বুলালে আমার ঘুম আসে না। তোমার হাতে না খেলে তৃপ্তি আসে না। এসব অভ্যাস আমার হয়েছে আচ্ছা এগুলো কি তোমার বদ অভ্যাসে পরিণত হয়নি?”

নিশ্চুপ তুর। ওর অভ্যাস যে কতটা খারাপ করে দিয়েছে তা তুর খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। হঠাৎ তীব্র নিজের বুকে গরম পানির আভাস পায়। বুঝতে পারছে অনুভূতির চেয়ে অভিমানটা বেশি তুরের। হবে নাই বা কেন যেখানে সবাই নিজের কাছের মানুষের কাছে অভিমান ভাঙানোর আশা করে। সেখানে তীব্রের কাছ থেকে শুধু অভিমানের কারন পেয়েছে। কিন্তু তা ভাঙানোর বদলে তুরকে এটা বুঝিয়েছে তীব্রের জন্য ও কোন মেটার করে না। তাই তুরের করা এই বিহেভ অপ্রত্যাশিত নয়। এটা ওর ভালোবাসার কামাই। ভেবেই তুরের কপালে ভালোবাসার পরশ আঁকে তীব্র।

তীব্রের স্পর্শের গভীরতা আবেশ খুজে পাচ্ছে তুর। চাইতেও তীব্রকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনা। তীব্র কোন না কোন ভাবে ঠিক ওর মনকে নরম করেই দেয়।

— ” আচ্ছা তুর তোমার ইচ্ছে করে না সব কিছু ভুলে গিয়ে ছোট্ট একটা জাল বুনতে৷ যেই জালে তুমি আমার স্ত্রী হয়ে আমার পাশে থাকবে। আমাদের ছোট বেবি আমাদের ভালোবাসার কারন হবে। ভালোবাসার ছোট সেই সংসার নামের জালে আমার সাথে বাধা পরতে ইচ্ছে করেনা। ”

— ” লোভ দেখাতে চাইছেন আমাকে? কিন্তু আমি লোভী নই।”

তুরের কথায় শব্দ করেই হাসে তীব্র।

-” হাসছেন কেন? আমি তো বলেছি আমি অন্যকাউকে বিয়ে করব। ”

তুর এখনো তীব্রের বুকেই চোখ বন্ধ করে আছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে কথাগুলো বলার সময় তীব্রের শার্ট খামচে ধরছে নিজের অজান্তেই যা তীব্র খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।

–” কাকে বিয়ে করবে সানিকে? পারবে? ”
-” যাকে ইচ্ছে তাকে সেটা আপনাকে বলতে যাব কেন?”
-” কারন আমার বেঁচে থাকা অব্দি আমার বন্দীনী অন্য কারো খাচায়….. সেটা আমি কি করে হতে দি?”

হঠাৎ করেই তীব্র তুরের চুল গুলো নিজের মুঠোয় পুড়ে নেয়। তুর নিজের চুলে ব্যাথা পায়।
— ” কি করছেন চুলে ব্যাথা পাচ্ছি?”

তুর ভুলে গেছে ও এখন তীব্রের বাড়িতে ওর বন্দীনি নয়। আর তীব্র ভুলে গেছে ও তুরকে মানাতে এসেছে। দুজনেই যেন নিজেদের কয়েকমাস পিছনে চলে গেছে।

তীব্র ওর চুলের মুঠোয় তুরকে নিজের মুখের কাছে নিয়ে এসে ওর থুতনি ধরে বলে,
— ” তোমার মুখে অন্য কারো নাম যেন না শুনি তুর। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

চোখে মুখে প্রচন্ড রাগ ফুটে উঠেছে তীব্রের। এবার তুরের রাগটাও বেড়ে গেল,
-” খারাপ না হয়ে কিভাবে পারবে, আপনি লোকটাই তো খারাপ। ”
– ” আমি খারাপ তাই না? [ প্রচন্ড রেগে ] তাহলে খারাপ কাকে বলে এবার দেখবে? ”

তখনি তুরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। ও কিছু করতে যাবে পরক্ষনেই মনে পরে, ও এখানে কেন এখানে এসেছে? অথচ নিজের কাজ না করেই ও তুরকে আরও রাগিয়ে দিচ্ছে। এখন টম&জেরির মত ঝগড়া করার সময় নেই ওর হাতে।

তাই তীব্র নিজেকে শান্ত করে নেয়। তারপর কিছু একটা ভেবে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে থাকে। এটা দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় তুর।
— ” কি–ক-কি করছেন আপনি? ” ঢোক গিলে।

তুরের এমন ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে ভ্রু কুচকে তাকায়। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারে তুর কেন ভয় পাচ্ছে। এটা ভেবে বেশ হাসি পায় তীব্রের। কিন্তু নিজের হাসি আটকে রেখে ও তুরের কাছে যেতেই তুর নিজেকে গুটিয়ে ভয়ে চুপসে যায়। তীব্র হালকা হেসে ওর পাশে থাকা টেবিল লাইট অন করে বলে,

— ” কি অদ্ভুত তুমি তুর। তোমার ঘরে একটা প্রত্যাশিত লোক এসে তোমার কাছে যেতে চাইল আর তুমি কোন শব্দ না করে ভয়ে চোখ বন্ধ নিলে। আসলে কি জানো? তুমি না চাইলে আমি তোমার কাছে তো ছাড় তোমার রুমেও এতক্ষন থাকতে পারতাম না। এ থেকেই বোঝা যায় কতটা ঘৃনা করো তুমি আমায়? আর কতটা অসহ্যের আমি তোমার কাছে?”

কথাগুলো বলে অদ্ভুত হাসল তীব্র। ওর কথার জবাব নেই তুরের কাছে। তবে ও চোখ খুলে বেশ অবাক হয় তীব্রকে নিজের থেকে দুরে দেখে। পরক্ষনেই তীব্র নিজের শার্টটা খুলে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তুর চোখ বন্ধ করে নেয়। কারন তীব্রের উন্মুক্ত পিঠে চোখ পরতেই নজর স্থীর রাখতে পারেনি তুর। বিভৎস্য লাগল ওর উন্মুক্ত পিঠ। তীব্র আয়নাতেই শিকারির নজরে তুরকে দেখল। তারপর ওকে ডাকল,
——- ” তুর…. ”

তীব্র কয়েকবার ডাকলেও তুর সাড়া দিল না। কিছুক্ষন পর ও ভয়ে ভয়ে আয়নার দিকে তাকাল। তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিল। যাতে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। তীব্রের চোখে চোখ পরতেই ও আবার চোখ নামিয়ে নিল।

তাই দেখে তীব্র তুরের কাছে যায়। তুর এসব দেখবে না বলে নিজের হাত দিয়ে চোখ আড়াল করে নেয়। কিন্তু তীব্র যে এগুলো দেখাবেই। তাই ও জোর পূর্বক ওর হাত সরিয়ে পিছনে আটকে রেখে তুরের থুতনি ধরে উচু করে। প্রথমে চোখ না খুললেও এবার তুর চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়।

— ” নজর কেন লুকাচ্ছ। তোমার ভালোবাসার উপহার তুমি দেখতেই ভয় পাচ্ছ কেন? তোমার তো আনন্দ হওয়ার কথা তাই না?”
— ” আমি… ”

তুরের চোখে স্পষ্ট পানির আভাস পেল তীব্র। ওর কন্ঠে জড়তা। তুর যে এটা সহ্য করতে পারবে না তীব্রের চেয়ে ভালো কে জানে? শাওনের এ আঘাত তীব্রের জন্য যে কতটা আশীর্বাদ সেটা শাওনকে বলতে ইচ্ছে করলেও উপায় নেই। শাওন নিজের অজান্তেই কতটা উপকার করেছে ওর।

–” কিহল ভালোবাসার এত সুন্দর উপহার দিয়ে খুশি নও তুমি? অনেক খুশি আমি। কেন জানো? কারন চাইলেও সহজে এই উপহারের দাগ মেটানো সম্ভব নয়?”
— ” আমি এটা চাইনি তীব্র? ”

তুর অপরাধীর চোখে তাকিয়ে রইল। ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে।

——- ”
দন্ডিতের সাথে
দন্ডদাতা কাদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।

এই সারমর্ম অর্থ আজ পেয়ে গেলাম তুর। আমার পাওয়া বিচার শ্রেষ্ঠ কারন দন্ডদাতা আর দন্ডিত ব্যাক্তি দুজনেই কষ্ট পেয়েছে। ”

– ” কেন বলছেন আমাকে? দেখতে চাই না এসব? ” কাদঁত লাগল।
–” বাহ রে যেই বুকে মাথা রেখে এতক্ষন ক্ষতের ব্যাথা বাড়ালে।এখন তা দেখতে পারবে না কেন? ”
নিশ্চুপ তুর।
— ” আচ্ছা যাও দেখতে হবে না। পারলে একটু মলম লাগিয়ে দিও। তোমাকে আটকে রাখার অনেক শাস্তি পেয়েছি আমি। হয়ত আরো পাব। যাও ছাড়, কি করার আছে? আমি মরলেই সবার মত তুমিও খুশি হবে। তবে মনে করে কাঁদার মানুষের মত তেমন কেউ থাকবে না। ”

বলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল তীব্র। তারপর ওভাবেই বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়ল। কখন যে চোখ লেগে গেল জানেনা ও! হঠাৎ করেই তীব্র ব্যাথায় নরম হাতের আভাস পায়। আর চোখ থেকে পরা গরম পানির। ঘুমটা এসেও যেন চলে গেল। কিন্তু ও নড়াচড়া না করে ওভাবেই শুয়ে রইল। এটা বুঝতে পারছে তুর ওর ব্যাথার উপর মলম দিয়ে দিচ্ছে আর চাপা স্বরে কাদছে। এটা দেখে তীব্র মনে মনেই বলল,
-” ব্যাথা যখন তোমার জন্য পেয়েছি ঔষুধ তো তোমাকে দিতেই হত৷ ”

তুর আবার যখন ওর পিঠ স্পর্শ করতে যায় তখনি তীব্র ওর হাত ধরে। চমকে উঠে তুর। ও তুরের কোলে মাথা দিয়ে পেটে মুখ গুজে দেয়। ওর পেটে কয়েকটা চুমো দিয়ে বলে,

–” আমাদের বেবিকে মারতে পারবে তুর। আমার ব্যাথাই তো সহ্য করতে পারো না। তাহলে নিজের বেবিকে কিভাবে. ”

তুর কিছু না বলেই কেদে দিল। তীব্রের প্রশ্নের উত্তর ও পেয়ে গেছে। তুর মানসিকভাবে কতটা সবল তা তীব্রের জানা। তুর ওকে সরিয়ে দিয়ে কাদতে কাদতে বলল,
–” আপনি যেমন খারাপ লোক আমি ও তেমন খারাপ মা। আমার বেবিকে নিয়ে আমি কি করব জানিনা। তবে আদালতে আপনাকে শাস্তি ঠিক দেবে৷ ”

তুরের ছেলেমানুষী কথায় তীব্রের রাগ আর হাসি দুটোই পায়। ও উঠে তুরকে কপালে চুমো আকে। তারপর বলে,
-” তোমায় আটকে রাখার যথেষ্ট শাস্তি আমি পেয়েছি তুর। তাই আর শাস্তি নিতে পারব না। এরপর যা শাস্তি দেওয়ার তা তুমি নিজের হাতেই দেবে। ”

তুর এখনো ছেলেমানুষ। ও এই দুনিয়ার মার প্যাচ এখনো বোঝে না। ও ভেবেছে হয়তো স্বাক্ষী প্রমান দিয়ে তীব্রকে শাস্তি দিয়ে ফেলতে পারবে। কিন্তু ও জানেনা দুনিয়াটা ওর ভাবনার মত সহজ নয়। এতে ওকে বোকা বলা চলে না। ওর বয়সে এসব বোঝার কথাও না। ম্যাচুরিটি এখনো আসেনি ওর মধ্যে। বড্ড বেশি সহজ সরল মেয়েটি। তাইত এত কিছুর পরও ওর ব্যাথায় কাদে।

তখনি মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। বুঝতে পারে ওকে চলে যেতে হবে। ভোরের আলো ফোটার আগেই থানায় যেতে হবে। কিন্তু তুর জেগে থাকা অবস্থায় যাওয়া যাবে না। ও তুরকে টেনে বুকের মাঝে নেয়। তারপর বলে,

– ” আমি খারাপ লোক। কিন্তু তুমি খারাপ মা নও। আর তা আমি হতেও দেব না। ”
–” আপনি.”
–” কয়েকটা দিন তুর তারপর তুমি আর আমার বেবি দুজনই আমার কাছে থাকবে। আমি নিজের থেকে দূরে রাখার রিক্স নেব না। ”

তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র ওর মুখে স্প্রে করে। মুহুর্তেই মাঝেই তুর ঘুমিয়ে পরে। তাই দেখে তীব্র ওর ডান কপালে চুমো একে ওকে ঠিকভাবে শুইয়ে দেয়।

-” উপায় থাকলে আদালতের দেয়া শাস্তি মাথা পেতে নিতাম। কিন্তু তুমি জান না তোমার কাছে কি আছে? এই বেবির মুল্য তোমার ধারনার বাইরে। আমি না থাকলে বেবিকে বাঁচানো তোমার পক্ষে সম্ভব না তুর। মানুষ নিজ স্বার্থে কতটা নিচে নামতে পারে তার ধারনা হয়নি তোমার। তুমি পারবে না এই বেবিকে বাঁচাতে মেরে ফেলবে ওকে। তাই আমি রিক্স নিব না। নিজের বেবি আর তোমার জন্য আমি নিরুপায়। ”

তারপর তীব্র বেড়িয়ে আসে বাড়ি থেকে। রিদ্ধ ওর অপেক্ষায় ঘুমিয়ে গেছে।

– ” রিদ্ধ… এই রিদ্ধ… ”
— ” কে..? কে?[ ধর ফর করে উঠে ] ও স্যার আপনি।” আবার ঘুম। তীব্র গাড়িতে উঠে গাট্টা মারতেই ও গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ তীব্র খেয়াল করল ও আমতা আমতা করছে।
-” কিছু বলবে? ”
–” স্যার আপনি যদি পালাতে চান তবে পারেন। তা না আপনি তুরের কাছে গেলেন বুঝলাম কিন্তু করলেন টা কি? প্রতিশোধ নেওয়া তো আপনার দ্বারা হবে না।”
-” আমাকে কি রোড সাইড রোমিও মনে হচ্ছে নাকি বাংলা মুভির নায়ক নায়িকার জন্য জেলে চলে যাব? ”
-” তাহলে? ”
-” সময় হলে জানতে পারবে। ”
-” আর জেনে কাজ নেই। আমার মনে হচ্ছে আমার গার্লফ্রেন্ড… ”
-” তোমার গার্লফ্রেন্ড সর্ম্পকে জানার ইচ্ছে এখন নেই আমার। চুপচাপ গাড়ি চালাও।”

★——————————★————————★

সকালে তোয়া রুমে আসলে দেখে তুর বিছানায় গুটিশুটি মেরে বসে আছে।
-” কিরে এভাবে বসে আছিস কেন? ”
– ” ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া না গেলে কি করতে হয়? ”
কথাটা শুনে থমকে যায় তোয়া। ও গিয়ে তুরের কাধে হাত রেখে বলে,
– ” এখনো তীব্রকে ভয় কেন পাচ্ছিস? ও তো জেলে। কাল শাস্তি হয়ে যাবে। বেঁচে যাবি তুই। ”

তুর শান্তভাবে ওর দিকে তাকিয়ে গলায় পেচানো উড়নাটা সরিয়ে দিতেই থমকে যায় তোয়া। গলায় একটা জায়গায় সদ্য বাইটের দাগ স্পষ্ট।

-” এর পরেও তোর মনে হয় আপু ওনার থেকে আমি মুক্ত?”
— ” মানে ”
— ” তীব্রের বন্দীনীর চিহ্ন। এতকিছুর পরও নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না। ওনার বন্দীনী হয়েই রইলাম। ওনার #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হয়ে।”

কাল কোর্টের রায় দেওয়া হবে। কারো কোন ধারনা নেই কি হতে পারে। এই পর্যন্ত যা হয়েছে তা হলে তীব্রকে শাস্তি পেতে হবে। তবে যদি সবটা ঠিক থাকে তো.
★—————————-★————————–★

পরের দিন সবাই রায় শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। তীব্রকে কাঠগড়ায় আনা হয়েছে। তুর নিচে বসে। তুরের চোখে চোখ পরতেই তুর চোখ নামিয়ে নেয়। কেন তা জানে না। তীব্র হালকা হাসল।

সব কিছু দেখে জর্জ রায় ঘোষনা করতে যাবে ঠিক তখনি তীব্র নিচের দিকে তাকিয়ে ডান হাত উচু করে কাঁঠগড়ায় দাড়িয়ে বলল,
— ” 1 মিনিট ইয়োর ওনার, আমি কিছু বলতে চাই। ”
জর্জ ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
— ” কেসের এই শেষ মুহুর্তে কি বলতে চান আপনি?”
-” ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার কার্যকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমার শুধু একটাই প্রশ্ন এই আদালতে মানুষ কেন আসে? ”
– ” সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য। ”
– ” রাইট। বিভিন্ন তথ্য প্রমানের ভিক্তিতে সত্যতা যাচাই করে সঠিক বিচার পাওয়ার অন্য। কিন্তু এখানে সঠিক বিচার হচ্ছে না। আমার উপর অন্যায় করা হচ্ছে। ”

এটা শুনে ওখানকার সবাই বেশ অবাক হয়। জর্জ বেশ গম্ভীর কন্ঠেই জিজ্ঞেস করে,
— ” কি বলতে চাইছেন আপনি? ”
— ” এটাই যে সঠিক বিচার তখনি সম্ভব, যখন উভয় পক্ষের প্রতিটি তথ্য প্রমান অতি সুক্ষ্ণভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। এখানে শুধু ভিক্টিমের মতামত আর আমার স্বীকারোক্তি পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। কিন্তু আমার অপরাধের কারন কেউ জানতে চায়নি। ”

তখনি তুরের পক্ষের উকিল বলে উঠে,
_ ” মাই লড, ড. রায়হান নিজেকে বাঁচানোর জন্য কেসের মোড় অন্যদিকে ঘুরাতে চাইছে। ”

— ” নো ইয়োর ওনার, আমি কেসের মোড় ঘুরাতে চাইছি না বা নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতেও চাইছি না। আমি শুধু কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সবার সামনে উন্মোচন করতে চাই যা ছাড়া এই কেসের ন্যায় বিচার নির্ধারণ করা কখনোই সম্ভব না। ”
— ” আপনি..”

বিপক্ষের উকিল কিছু বলতে গেলে জর্জ তাকে থামিয়ে বলে,
– ” আদালতের কাজ হচ্ছে ন্যায় বিচার করা।আর আপনি যদি মনে করেন এই বিচারে আপনার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে তার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু আপনার এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন ছিল শুরুতেই কেসের সাথে জড়িত সমস্ত তথ্য আপনার আদালতে পেশ করা উচিত । ”
-” আমি খুব দুঃখিত তার জন্য। আমাকে আগে থেকেই সব তথ্য দেওয়া উচিত ছিল। সে যাই হোক। আমি দেরি করে বলার জন্য সবার কাছে ক্ষমা পার্থী।”

— ” বলুন নিজের পক্ষে কি বলার আছে আপনার? ”
-” নিজের পক্ষে কিছু বলার আগে আমি এই কেসের ভিক্টিম মানে যাকে আটকে রাখা & অত্যাচারের দায়ে দোষী সেই মিস তুরকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।”

কথাটা শুনে তুরের বুকে মোচর মেরে উঠে। কি করতে চাইছে তীব্র?

-” আর হ্যা অবশ্যই কয়েকটা ডকুমেন্টস পেশ করতে চাই। ”

রিদ্ধ গিয়ে কিছু ডকুমেন্টস আর ছবি দেয়৷ যা সে জর্জের কাছে দেয়। সেগুলো দেখে ওনার চোখ কপালে। বিস্ময় কাটিয়ে উঠার আগেই তীব্র বলে,

–” আমি মিস তুরকে কিছু জিজ্ঞেস করার পার্রমিশন পেতে পারি। ”

— ” পার্রমিশন গ্যারান্টেড। ”

তুরকে কাঠগড়ায় ডাকা হলো। তুর ভয়ে ভয়ে কারগড়ার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর কয়েকটা ঢোগ গিলে তীব্রের দিকে তাকাল। কিন্তু তীব্রের চোখে চোখ পরতেই চোখ নামিয়ে নিল। তীব্র দুহাত গুজে তুরের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বলল,
– ” সো মিস. তুর, আপনার কথা অনুযায়ী আমি আপনাকে আটকে রেখেছি ৩ মাস, তারপর আপনার সাথে জোর পূর্বক…. ( বলতে গিয়েও থেমে গেল ) সে যাই হোক। এরপর আপনাকে বিয়ের জন্য ফোর্স করেছি। আর এখানের সবাই জানে আপনাকে বিয়ে করার শর্ত স্বরুপ আমি আমার দোষ স্বীকার করেছি তাইত….

মাথা নাড়ায় তুর।

— আপনার মনে হয় না ব্যাপার গুলো হাস্যকর। মানে যেই মেয়েটাকে আমি কোন রকম ক্ষতি ছাড়া ৩ মাস আটকে রাখলাম। কোন রকম খারাপ আচরন করলাম না কেন, তার তখনো ১৮ বছর পুরন হয়নি। যখন তার ১৮ বছর পুরন হল তখন তার সাথে জোর পুর্বক ফিজিক্যালি ইনভলভ হয়ে তারপর তাকে বিয়ের জন্য ফোর্স করতে চাইলাম। আর তখন কি হল সে নিজেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল বিয়ে করবে না বলে। তার বাড়িতে আমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম তারা না করে দিল। আর বিয়ের শর্ত মোতাবেক নিজের দোষ স্বীকার করলাম। কাহিনী এরকম কিছু ছিল না তুর।

চোখে পানি এসে গেল তুরের। কি প্রমান করতে চাইছে তীব্র। ও যা বলছে সবই তো এরকম। কিন্তু এইটা শুনে আশেপাশের মানুষের মধ্যে কানাকানি শুরু হয়ে গেল।

— ” সাইলেন্স প্লিজ। আর ড. রায়হান এসব বলে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন? ”
— ” এটাই যে ব্যাপার গুলো আসলেই অবাস্তব আর হাস্যকর নয়কি? যদি সত্যি আমার খারাপ মুটিভ থাকত তাহলে আমি ওকে বিয়ে করার জন্য এত পাগল কেন হতাম? এমন তো নয় আমি কোন মেয়ে পাব না?”

এটা শুনে আদালতে হাসির রোল পরে যায়। জর্জ আবারো সবাইকে সাইলেন্ট হতে বলে। তীব্রের কথায় কেসের মোড় ঘুরে গেছে।

— ” যাই হোক আমি মিস. তুরকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই আশা করি তার অনুমতি আমি পাব।”
——- ” পার্রমিশন গ্যারান্টেড। ”
——- ” ধন্যবাদ। ( জর্জকে সন্মান প্রর্দশন করে তুরের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসল।) সো মিস তুর আমার প্রথম প্রশ্ন,
১। আপনার সাথে আমার কিভাবে দেখা হলো? পুলিশ রেকর্ডে আপনার বিএফ এর সাথে পালিয়ে যাওয়ার যে ইনফরমেশন আছে সেই বিএফ কে? ”

য়ুর কি বলবে বুঝতে পারছে না। কারন যদি তীব্রের সাথে প্রথম দেখার কথা বলে তাহলে হোটেলের কথা বলতে হবে। যা ওর জন্য চরম অপমান। ওর বাবা এটা জানতে পারলে কি হবে জানেনা। তাই ও চুপ করে রইল। এটা দেখে তীব্র আবার বলে,

—- ” ২য় প্রশ্ন, আমি আপনাকে আদো কোনদিন মেরেছিলাম কিনা কারন ছাড়া? ”

তুর চুপ। কারন তুরকে মেরেছিল যখন ও আত্নহত্যা করতে গিয়েছিল। এছাড়া তীব্র ওর গায়ে কখনো হাত তোলেনি।

—– ” ৩য় প্রশ্ন, আমি আপনার সাথে জোর পূর্বক কোন সম্পর্কে গিয়েছিলাম নাকি দুজনের অনুমতিতে। আর আপনার ১৮বছর হওয়ার আগে কি আমি আপনার কাছাকাছি গিয়েছিলাম মানে পাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে।”

এবার ও তুর চুপ।

—— ” ৪থ & শেষ প্রশ্ন, এতকিছুর পর আপনাকে যখন আমি ধর্মীয় মতে বিয়ে করতে চাইলাম তখন আপনি পালিয়ে কেন গিয়েছিলেন? আর আমাকেই বা এটা বলে ধোকা কেন দিয়েছিলেন যে আপনার পরিবারের সবার সামনে আমি আপনাকে আটকে রাখার দোষ স্বীকার করলে আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেন। কিন্তু তা না করে আমাকে পুলিশে দেওয়ার মানে কি? ”

তীব্রের কথা শুনে সবার মাথায় হাত। তুরের কাছে কোন জবাব নেই।

——” কিহল বলছেন না যে মিস তুর।”

তুর কি বলবে জানে না। কারন কাহিনির সব অংশ ওর জানা নেই। তীব্র যতটুকু ওকে জানিয়েছে ও ততটুকুই বলেছে। আর তা সবার কাছে বাচ্চার এগোছালো কিছু কথা ছাড়া কিছু না।

—— ” আচ্ছা আমি বলছি। ১ম প্রেশ্নের উওর তুরের সেই বিএফ আমি। আর তার প্রমান আমার আর তুরের ছবি যা আদালতে পেশ করা হয়েছে। {তুরের সাথে বিভিন্ন সময় তোলা হাস্যজ্বল ছবি। যা ওই ১ মাসে তুলেছিল ) আর তাই বলা চলে ওনি সেচ্ছায় বাড়ি থেকে পালিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। এবার ২য় প্রশ্নের উওর, আমার কাছে আসার পর সে নিজের বাড়ি ফেরার জন্য পাগল হয়ে যায় যার কারনে আমি তাকে আটকে রাখতে বাধ্য হই। কারন এটা যদি পাবলিকের কাছে যেত যে দেশের সেরা বিজন্যাস ম্যানের গার্লফ্রেন্ড নিজের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট তাও নাবালিকা একটা মেয়ে । আর সে নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে তার কাছে উঠেছে সেটা খুব খারাপ দেখাত। আর আমার পক্ষে তাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। কারন ও তখনো ১৮ বছরে পা রাখেনি। আর ওকে নিজের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়াও সম্ভব ছিল না। কারন আমি তখন কয়েকবারের জন্য বিদেশ গিয়েছিলাম। যার ডিটেইলস আদালতে পেশ করা হয়েছে। তাছাড়া নানা রকম ঝামেলায় তা হয়নি। আর একা আমি ওকে ছাড়তে পারতাম না কারন তাহলে ওর পরিবারে এটা মেনে নিত না। তাই বাধ্য হয়ে নিজের কাছে জোর পূর্বক আটকে রেখেছিলাম। ”

তুর তীব্রের কথায় অবাক হয়ে রইল। ও ঘটনাগুলো এমন ভাবে সাজালো যে তুরের ও কিছু বলার নেই।তুরের সত্যি সবার কাছে বাচ্চার বায়না মনে হবে।

——– ” এবার আসি ৩য় প্রশ্নের উওরে। হ্যা আমি তুরের সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভ হয়েছি। তাও ওনার সন্মতিতে। আর সেটা ওর ১৮ হওয়ার পর। মানে যে বয়সে একটা মেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করুন ওনাকে। কোন প্রকার ফোর্স করেছি কিনা? ”

তুরকে জিজ্ঞেস করা হলে ও বলতে যাবে তীব্র অজ্ঞান অবস্থায় ওর সাথে জড়িয়েছে তার আগেই তীব্র বেশ ঝাঝাল কন্ঠে বলে….
—— ” হ্যা কি নায়ে জবাব দেও। তোমার সজ্ঞানে জোর করেছি কিনা না? ”

তুর প্রচন্ড শকড। ভাবার মত অবস্থায় নেই ও।তুর মাথা নাড়িয়ে সন্মতি জানাল। এটা দেখে তীব্র স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তারপর আবার বলল,
–“আমার চতুর্থ প্রশ্নের উওর.”

তখনি বিপক্ষের উকিল বলে উঠল,
——- ” ও হয়ত ছোট ছিল তাই আবেগের বশে আপনার সাথে জড়িয়েছে, তাহলে আপনি কেন একজন দায়িত্ববান মানুষ হয়ে অবৈধ সম্পর্কে জড়ালেন?”

এইটা শুনে তীব্র কাঠগড়ার হাত রেখে উকিলের দিকে একটু ঝুকে বলে,
—— ” আপনি যাকে ছোট বলছেন সে আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও অবুঝ নয়। ১৮ বছরে একটা মেয়ে সবটাই বোঝে। আর কোন সম্পর্ককে অবৈধ সম্পর্ক বলছেন আপনি? ”

—” আপনি কি বলতে চাইছেন মেয়েটির সাথে কোন সম্পর্ক ছাড়া জড়ানোটা বৈধ সম্পর্ক।

— ” তাহলে বলতে হবে আপনার স্ত্রী সাথেও আপনার সম্পর্ক অবৈধ। ”

—— “কি বলতে চাইছেন? প্রচন্ড রেগে যায়।”

—— ” বলতে আর দিলেন কই। কাহিনির চমক তো এখনো বাকি। ইয়োর ওনার, আমি আগেই বলেছি তুর যখন আমার কাছে এসেছিল তখন ওর ১৮ বছর পুরন হয়নি। তাই আমি চাইলেও ওকে বিয়ে করতে পারতাম না। কিন্তু যখন ৩ মাস পর ওর ১৮ হয়ে গেল তখন আর সেই বাধা টা আমার ছিল না।”

–” মানে? ”

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সব জায়গায় পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে তখনি তীব্র বলে উঠে,
—— মিস. তুর মিস নয় মিসেস. তুর। কারন ওনার ১৮ তম জন্মদিনের কয়েকদিনের মধ্যেই ওনার সাথে আমার রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ হয়েছে। তার মুল কপি আপনার কাছে।

জর্জ কাগজটা দেখল। আর কথাটা শুনেই তুর মাটিতে বসে পড়ল। এবার তীব্রের কথার মানে বুঝল তীব্র পাহাড়ে কেন সব সময় ওকে কেন নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। বিয়ের কথায় সবসময় ধর্ম মতে বিয়ে করার কথা কেন বলত? আর কেনই বা সেদিন রাতে এসে বলেছিল তীব্র ওর। কারন ও বিয়ের রেজিষ্ট্রি করে রেখেছিল। কিন্তু কখন? আর কেনই বা তুরকে বললনা? তখনি তীব্র এমন কথা বলল যাতে সবাই আরো কেপে উঠল,

——-” তুর যে শুধু আমার বিয়ে করা বউ তা নয়। আমার মোট প্রপার্টির 25% শেয়ারের মালিক মিস তুর। যা ৩ মাস আগে বিয়ের সময় ওনার নামে করেছি আমি। এবার আপনারাই বলেন এসবের পর আপনাদের সিরিয়াসলি মনে হয় আমি তুরকে ব্যবহার করেছি। নিজে অন্যায় করেছি, নাকি বিয়ে করে বউয়ের সন্মতিতে নিজের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক পালানোর জন্য অপরাধ করেছি। অবশ্যই ২৫% শেয়ারের বিপরীতে বিয়ে করে স্ত্রী সন্মতিতে হক আদায় করে কোন অন্যায় আমি করিনি আমি।”

আদালতে কারও মুখে কোন কথা নেই। তুর কোন কিছু ভাবার পর্যায়ে নেই। পাথর হয়ে গেছে। তুরের বাবা, তায়ান, তোয়া কেউ যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না।

এবার বিপক্ষের উকিল সংশয় নিয়ে বলে উঠল,

—– ” সবই তো বুঝলাম ড. রায়হান। কিন্তু একটা জিনিস না। আপনাদের এই বর্তমান যুগের ডিজিটাল প্রেমকাথা এভাবে পাবলিক করার মানে কি? আপনার বিয়ে করা বউ বিয়ে করবে না বলে কেন পালিয়ে গেল? ”

এইটা শুনে তীব্র বেশ শব্দ করেই হাসল,
_—– ” অবুঝ বাচ্চার বায়না জানেন তো? আমি যত বড় বিজন্যাস বা ম্যাচুয়ড হই না কেন? আমার যে পার্রসোনাল লাইফ সেটা একটা পিচ্চি সাথে। মানে আনম্যাচুয়ড নাবালিকার সাথে। তার জেনারেশনের ছেলে মেয়েরা প্রেম ভালোবাসাকে লাইফ মনে করে। অনেক রকম এক্সপেকটেশন থাকে তাতে। এই ধরুন বিএফ প্রোপোজ করবে,ঘুরতে নিয়ে যাবে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করবে, রাত জেগে ফেইসবুকে প্রেম করবে, মোবাইলে গল্প করবে,তারপর ভালোবাসা দিবসে অবাস্তব কিছু কথা, আর প্রমিস করবে, বোকা বোকা কথা এসব আরকি। তুরের যে এই এক্সপেকটেশন আছে তা বলার দরকার নেই। কিন্তু আমি সম্পুর্ন বিজি একজন মানুষ। যার কারনে ওকে সময় দিতে পারতাম না। তাই ওকে বেশি ভাগ সময় দরজার আড়ালে থাকতে হতো। আপনারা বিশ্বাস করবেন না ও আমার সাথে যতদিন ছিল তার মধ্যে মাত্র ১দিন ওকে নিয়ে বেড়িয়েছিলাম। এখন এই অবস্থায় ওর মত আনম্যাচুয়েড মেয়ে সেই রুমে থাকাটা আটকে রাখাই বলবে। আর এ নিয়ে প্রচুর ঝগড়া হয় আমাদের মাঝে। মেয়েদের এমনি বুঝানো দায় আর তা যদি হয় এমন আনম্যাচুয়ড,,,,,,,,,, ”

——– ” আসলেই ভুল করে ফেলেছেন নাবালিকা মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে। গার্লফ্রেন্ড নিজের এইজের হলেই ভালো।”

মুচকি হাসল তীব্র,
—— ” ধন্যবাদ কষ্ট বোঝার জন্য। সে যাই হোক, এবার কথায় আসি, আমি যখন ধর্মীয় মতে বিয়ে করে ওকে ওর ফ্যামিলির কাছে নিয়ে যেতে চাই তখনি বাধে বিপত্তি। তুর বুঝে গেছে আমার লাইফে ওর জন্য কোন সময় ছিল না। আর তাই ও পালিয়ে যায়। কিন্তু আমার পক্ষে গার্লফ্রেন্ড ছাড়া সম্ভব হলেও বউ ছাড়া না। আফটার অল আমি আমার বউকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু তুরের গায়ে যাতে কোন দোষ না লাগে তাই আমি ওর বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই কিন্তু জানতে পারি আমার অবুঝ স্ত্রী তার ফ্রেন্ড সানিকে বিএফ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। যাতে ওর ফ্যামিলি আমার সাথে বিয়ে না দেয়। তারপর ওকে কারা যেন কি বলেছিল। আর সেই রাগে আমার কাছে কান্না করে বলে ওর ফ্যামিলির কাছে বলতে যাতে ওকে কেউ বকা মানে কড়া কথা না বলে। মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলে এটাই স্বাভাবিক। আমিও রাজি হয়ে যাই। তারপর আর কি? আমাকে বাংলা মুভির হিরোর মত জেলে পুরে দেয়। যাতে আমি জেল ভেঙে ওর কাছে যাই ভালোবাসার দাবি নিয়ে। আর এটাই আমার ৪র্থ প্রেশ্নের উত্তর ”

বিপক্ষের উকিল বলে উঠল,
—— ” ভালোবাসার দাবী। আমার আর কিছু বলার নেই। ”

—— ” এখানেই শেষ নয় ইয়োর ওনার, এখন আপনি মিসেস তুরকে জিজ্ঞেস করলে সে সবটাই অস্বীকার করবে। আমি হাপিয়ে গেছি ওকে বুঝাতে গিয়ে। প্লিজ আপনি দয়া করে ওকে বুঝান ( চোখ মুখ শক্ত করে ) ওকে আমার বন্দীনি হতে রাজি হয়ে যেতে। মানে ওকে আমি আর কখনো ভুলের সুযোগ দেব না। ”

আদালতে হাসির রোল পরে গেল। তীব্র এমন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করেছে সবাই এখন তীব্রের কথাই বলছে। রীতিমতো ওকে বিশ্বপ্রেমিক খেতাব দিয়ে দিয়েছে।

এটা দেখে জর্জ সবাইকে সাইলেন্ট হতে বললেন,
—–” এটা মুলত ভিত্তিহীন একটা কেস। আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য আপনার শাস্তি হতে পারে মিসেস তুর।”

—— ” প্লিজ এমনটা করবেন না। এতে ওনার শাস্তি না আমার শাস্তি হবে। বউয়ের মন রক্ষায় লকাবে থেকেছি। মাইর খেয়েছি আর না জানি কি কি করেছি। প্লিজ এবার এমন কিছু করবেন না যাতে আমার আবার ওকে ছেড়ে থাকতে হয়। মেয়েটা অবুঝ তবুও আমার বউ প্লিজ। ” মিনতি করে। ”

এটা দেখে জর্জ নিজেই হেসে দেয়।
——-” ড. রায়হান আপনার মিসেস এর চেয়েও আপনাকে অবুঝ লাগছে। আপনি এত বড় বিজন্যাস ম্যান হয়ে….. ”

——” বিজনেসম্যান হই আর যাই হই প্রেমিক তো…..”

তারপর তীব্র ভরা কোর্টে সবার সামনে তুরকে বলে উঠে,
——” তোমার জন্য জেলের ভাত,পুলিশের মার সব খেয়েছি এবার তো বায়না বন্ধ করে ফিরে আসো। ”

—— ” সাইলেন্ট প্লিজ। এমন কেস আমি আমার জীবনে প্রথম দেখলাম। যাই হোক এখানে আর কিছু বলার আছে মিসেস তুর আপনার। ”

তুর অনুভূতিশুন্য ভাবে মাথা নাড়িয়ে না জানাল। কারন এর পরে তুরের ছেলে ভোলানো কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। তাই আদালত তীব্রকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দিয়ে দিলো সাথে তুরকে কিছু বানী প্রদান করল যা তুরের কান পর্যন্ত এলো না।

তীব্র কাঠগড়া থেকে নেমে তুরের কাছে গেল। তারপর হাটু গেড়ে সবার সামনে চিৎকার করে বলল,
——– “তুর I love you. I love u তুর…..ভালোবাসি তোমাকে।”
——-” আমি এরজন্য ক্ষমা করব না আপনাকে।”

বলেই আদালত থেকে বের হয়ে গেল। তখন রিদ্ধ তীব্রের কাছে গিয়ে ওকে কংগ্রেস করল। তখন তীব্র বলল,
—— “সবটাই হলো বাকি আছে নিজের নির্দোষিতার কথা সবাইকে জানানো। রিদ্ধ…. ”
—— ” ইয়েস স্যার….. ”
—— ” বিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিজ Sr মানে ড. রায়হান নিজের নাবালিকা প্রেমিকা তথা ওনার বর্তমান ওয়াইফের আবদার পুরন করতে জেলে চলে গেছেন৷। এই নামে একটা নিউজে বেকিং নিউজ দিয়ে দেও। বাকিটা পাবলিক নিজেই করে দেবে আমাকে রোমিও বানিয়ে। এরপর কেউ সমালোচনা না প্রেমিক হিসেবে আলোচনা করবে আমার। আর এটাই হচ্ছে ভালোবাসার শক্তি মানে Power of love…… ”
——– ” You are great sir….. ”

তীব্র বাইরে যেতেই দেখে মিডিয়া আর মানুষ তুরকে ঘিরে ধরেছে। আর এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তুরের যে সেটা সহ্য হচ্ছেনা তা বুঝতে পারছে। তোয়া ওকে আড়াল করার চেষ্টা করছে কিন্তু কে শোনে কার কথা রিপোর্টার উৎসুক জনতা তুরকে পাগল করে তুলেছে বুঝল তুরের অবস্থা ভালো না। ভীড় ঠেলে তীব্র গিয়ে তুরকে সামলাতে না পেরে তুরকে জড়িয়ে ধরে। রিদ্ধ সবাইকে সরিয়ে নিলেই তীব্র সবার সামনে ওকে কোলে তুলে নেয়। তুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় বরাবরের মত ব্যর্থ। ওকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত চলে যায়।

,
,
,
,
,
,
,★—————————-★————————★

[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]
হুড্ডাই কেন পেচাইছি। এখন বুঝতে পারছেন কেন? যদি স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে হত তাহলে #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 সৃষ্টি হত না। এখন আপনাদের ২টি প্রশ্ন আসবে
১. তীব্র বিয়ে করেও না বলে কেন আবার বিয়ে করতে চাইল?
২. এখনো কিন্তু মুল কাহিনি অস্পষ্ট।

যাদের ধারনা আমি কাহিনি বড় করে গল্প টানছি তারা আমাকে শুধু এইটা দেখান বারতি কাহিনি কোনটা। পর্ব ২৮ এর রহস্য আপনারা পরে বুঝতে পারবেন।

গল্পকে যাই বলেন কিন্তু সিরিয়াল বলবেন না। সিরিয়াল শব্দটা দ্বারা গল্পের দোষ ত্রুটি না বরং রাইটারকে অপমান করা বুঝায়।সিরিয়াল শব্দটায় আমার এলার্জি…… এইটা বাদ দিয়ে যা ইচ্ছে বলতে পারেন।

আশা করি গল্পের কাহিনী অনুযায়ী মানসন্মত একটা ইন্ডিং দিব। যাতে মেইন কাহিনি আপনাদের ফাউল মনে না হয়।

বাই দ্যা রাস্তা…… এখন তীব্রের কাজে না তুরের কিছু বলার আছে না আপনাদের। 🤣🤣🤣 আমার কিছু মহান পাঠক আছে যারা তীব্রের সাথে আমাকে উগান্ডা পাঠায় তাদের বলছি এমনি এমনি তো সে হিরো না😷😷😷 আমি কিন্তু কিছু জানিনা সব তীব্রের প্লান যা বলার ওকে বলেন….😁😁😁

তীব্র আর তুরের বিয়ে হয়ে গেছে এতে ইন্টারেষ্টিং কিছু নাই।কারন কাহিনি হিসেবে এটা হতই।ফ্যাক্ট বিয়ে করে কেন আবার বিয়ে করতে চাইল….

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here