বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-৪৬

0
724

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#Part: 46…..

🖤
তীব্র ওর দিকে না তাকিয়েই বিয়ার খেতে খেতে বলে,” যতটুকু নিতে পারবে ততটুকুই নেও। আমাকে দেখানোর জন্য কিছু করোনা। নাহলে তোমাকেই পস্তাতে হবে। ”

রাগ লাগল তুরের। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছে নেশা হয়ে যাচ্ছে ওর। কিন্তু আজ হয়ত ভয় নেই নেশা নিয়ে। কারন আজ ও দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ নিরাপদ স্থানে আছে। তাই ও নিজের মত কাজ করে যাচ্ছে।তীব্রও তাই । তুরের দিকে খেয়াল না দিয়েই বিয়ার খেয়ে যাচ্ছে।

এভাবে কেঁটে গেল ১ ঘন্টা…

বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমলেও আবার ধীরে ধীরে তা বেড়েই চলেছে। বাতাসের প্রবাহ ধীরে ধীরে আরো বাড়ছে। তুর এখন সম্পূর্ন নেশায়। তবুও বোতলে একটু-আঁধটু চুমুক ‍দিচ্ছে। তীব্র ওখানেই মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে।

হঠাৎ করেই তুর তীব্রের বুকে ধপ করে মাথা রাখে। অনাকাঙ্ক্ষিত এমন কাজের জন্য প্রস্তুর ছিল না তীব্র। ব্যাথাও পেয়েছে বেশ। কিন্তু কোন রিয়েক্ট করল না। তীব্রের মনে হলো তুর ওর বুকে কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু মন মত কিছুই পাচ্ছে না ওর বুকে। তাই ও উঠে তীব্রের গায়ে থাকা পাতলা টি-শার্ট টেনে ধরে ওকে উঠাতে চায়। তীব্রকে উঠাতে না পারলেও ওর গায়ের টি-শার্ট ঠিকি ছিড়ে ফেলবে। তাই তীব্র নিজেই উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বিরক্তি নিয়ে বলে, ” কী হয়েছে? যা চাই দিয়েছি তো। আর কী? ”

” জবার… জবাব চাই আমার.. ” দুলতে দুলতে। এটা শুনে আলত হাসে তীব্র।

” বলো কী জবাব চাও..? ”

তুর ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর বলে,” আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাহলে ফিরে এলেন কেন? আপনি তো আমাকে ডির্বোস দিয়েছিলেন তাহলে? ”

” ভালোই তো করেছি তুমি তো তাই চাইতে। ”

কথাটা শুনেই তুর প্রচন্ড জোরে তীব্রের বুকে একটা কিল মারে। এতটাই জোরে তীব্রের মনে হচ্ছে সেই জায়গার হাড্ডি ভেঙে যাবে। ও আলত করে সেখানে হাত দেওয়ার আগেই তুর ওর হাত ধরে আবার মারে। তাই আর কিছু করে না তীব্র।তাহলে তুর আবার একই কাজ করবে।

তীব্রকে কিছু বলতে না দিয়েই তুর চোখ মুখ শক্ত করে নেয় । ওর টি-শার্ট দু’হাতে আঁকড়ে বলে,” আপনি জানেন? আপনি কত বড় একটা ফ্রড, ধোকাবাজ, খারাপ লোক। আমার থেকে আমার সব কিছু কেঁড়ে নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। এত বড় পাপ কিভাবে করলেন আপনি? আমি তো ভেবেছি আমার তীব্র আর যাই করুক আমাকে ছেড়ে যাবে না। কিন্তু আপনি চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে। কেন তীব্র? আমি তো ইচ্ছে করে কিছু করিনি তাহলে কেন? ”

নিশ্চুপ তীব্র। কিছু বলতে গিয়েও পারল না। কী বলবে? এটাই তীব্র ওকে ছেড়ে যেতে চায়নি। কিন্তু ওকে সুস্থ করার জন্য যেতে বাধ্য হয়েছে। নাকি এটা বলবে ওর ফ্যামিলির অনুরোধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। আর বলে আদো কী সত্যি কোন লাভ আছে? না নেই। উপযুক্ত সময় হারিয়ে গেলে সব কথাই অর্থহীন।এখন এসব কথার কোন মানে হয় না। তাতে লাভ তো হবেই না। বরং তুরের মনে আরো কিছু খারাপ ধারনা জন্ম নিবে নিজের কাছের মানুষদের নিয়ে। তাতে শুধু হতাশাই বাড়বে। তার চেয়ে যতদূর তুর জানে ততটুকুই জানুক। ক্ষুদ্র পরিসরকে আর বড় করতে চায় না তীব্র। তুর নিজের মনে শুধু তীব্রের জন্য ক্ষোভ পুষে রেখেছে। একজনের প্রতি তৈরি হওয়া এই ক্ষোভ দূর করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কিন্তু একাধিক মানুষের জন্য যদি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে তা দূর করা অবশ্যই দূর্ভেদ্য। এতে আরো বিষিয়ে যাবে ওর মন। কী দরকার? তুর যখন সব দোষী ওকে করেছে তবে তাই হোক। ভালোবাসার মানুষের চোখে নিজেকে ছাড়া অন্যকে অপরাধী করাও একটা অপরাধ।

তুর আবার বলল,” আচ্ছা তীব্র আমাদের কী আর বেবি হত না? আপনি কী এইজন্য চলে গিয়েছিলেন যে আমার বেবি আমার জন্য মারা গেছে। ”

এটা শোনা মাত্রই তীব্র বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকায়। কিসব বলছে তুর এসব? বেবি মারা গেছে মানে। তুর কাঁদো কাঁদো মুখ করে তীব্রের বুকে মাথা রাখে। তীব্র পাথর হয়ে আছে। তুর ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,” আমি জানিনা কিভাবে আমাদের বেবি মারা গেল। মনে নেই আমার। যখন সুস্থ হয়েছি তখন সবাইকে আমি বেবির কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমি তো প্রেগনেট ছিলাম তাই না তীব্র। কিন্তু ওনারা বলেছে ও নাকি… ( আর বলতে পারল না তুর অঝোরে কান্না করে দেয়। ) আমি জানি তীব্র আপনি এইজন্য আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন । আমি আমার বেবিকে বাঁচাতে পারিনি। যে যাই বলুক আমি জানি। আমি মেরেছি আমার বেবিকে। নাহলে আপনি কখনো ছেঁড়ে যেতেন না আমাকে। ”

তীব্রকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে তুর। তীব্র ওকে চেয়েও ধরতে পারছে না। ও ভেবেছিল তুরের বেবির কথা মনে নেই বলে হয়ত তাইয়্যানের কথা কেউ ওকে জানায়নি। কিন্তু ওনারা…

” আপনি জানেন তীব্র। আপনি যাওয়ার পর আমার আশে-পাশের মানুষগুলো নানা কথা বলত। আমি নাকি ভালো নই অপয়া, খারাপ মেয়ে। আর এই জন্য আমার বর আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। সবকিছু শুনেও বাবা-মায়ের মুখ দেখে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু… ”

তীব্র এবার শক্ত করে তুরকে জড়িয়ে ধরেছে। তুর যেন পারছে না ওর ভিতরে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে।যেন প্রচন্ড ভয় গ্রাস করেছে ওকে।

” তীব্র আপনি জানেন। আপনি জানেন তীব্র… ( চিৎকার করে বুক ফাটা আর্তনাদ বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না তুর। আটকে যাচ্ছে। ) আমাকে আব্বু যখন ভার্রসিটিতে ভর্তি করালো আমি ভেবেছিলাম সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করব। কিন্তু ( ডুকরে কেঁদে উঠে তুর ) ওখানের কয়েকটা ছেলে আমাকে ক্রমশ জ্বালাত। ভার্রসিটিতে গেলেই বাজে কথা বলত। তাদের মধ্যে একটা ছেলে আমাকে খারাপ প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছিল। আমি শুনিনি। প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে যখন ভার্রসিটিতে গিয়েছিলাম তখন সবার কাছে বলে বেড়িয়েছে আমি নাকি ওকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছি। এটা বলে সবার সামনে আমাকে অপমান করেছে। আমাকে ডিবোর্সি, খারাপ মেয়ে আর…” ( আর বলতে পারল না তুর। )

তীব্রের চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে। এমন কিছু শোনার ইচ্ছে বা প্রস্তুতি কোনটাই ওর ছিল না।

” সেদিন আমার কথা কেউ শোনেনি তীব্র। কেউ না। সবাই ওই ছেলের কথাই বিশ্বাস করেছে। সবার মুখে একই কথা ছিল, তুর মেয়েটা খারাপ। তাই ওর হাজবেন্ড ওকে ছেড়ে দিয়েছে। এজন্য আমি ওই ছেলেটাকে খারাপ প্রস্ত.….. ” আর পারল না তুর।

নিশ্চুপ তীব্র। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে তুরকে।

” শুধু এগুলো করে শান্ত থাকেনি ছেলেটা। সেদিন ভার্রসিটির ওয়াসরুমে… নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। ওই জানোয়ারের বাচ্চাকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য আমাকে সজোরে থাপ্পাড় মেরেছিল। বেসিনের সাথে লেগে কপালের বেশ ক্ষানিকটা কেঁটেও যায়। শেষ পর্যন্ত নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে ভরা বালতি উঠিয়ে ওর মাথায় মেরেছি। কারন আমি বুঝতে পেরেছিলাম বন্ধ দরজার ভিতরে যা হয়েছে তা যদি আমি বাইরে কাউকে বলি তাহলে কেউ বিশ্বাস করবে না। বরং দোষটা আমাকেই দেবে। তাই আর কারো কাছে নিজের সাফাই দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি তীব্র।”

কিছুক্ষন চুপ থাকে তুর। ওর হাত আলগা হয়ে এলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয় ওকে।

” ঘটনাটা এমন ছিল কাউকে কিছু বলতে পারিনি। একলা ঘরে ডুকরে ডুকরে মরেছি। সবসময় মনে মনে শুধু এটাই কামনা করেছি আপনি আসবেন তীব্র। আপনি এসে আপনার তুরের সাথে যে এমন করেছে তাকে শাস্তি দেবেন। কিন্তু আপনি আসেননি। সবাই এটাই ভেবেছে আপনি যাওয়াতে আমি শান্ত হয়ে গেছি। কিন্তু কেউ জানতেও পারিনি কেন আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম? বাবা জিজ্ঞেস করলে এটা তাকে বলতেও পারতাম না। কেন আমি ভার্রসিটিতে যেতে চাই না? শেষ পর্যন্ত বাবার কথা রাখতে তার কিছুদিন পর আবার ভার্রসিটিতে যাই। ভেবেছি সবটা সামলে নিজের মত আসব যাব।কারো কোন কথা শুনব না। কানেই তুলব না। কিন্তু আমার সে ধারনা ভুল ছিল।সেদিনের ওই ছেলেটাকে মারার অপরাধে ভার্রসিটি থেকে বের হবার পর ওই ছেলেটা সমেত ওর বন্ধুরা রাস্তা থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায়… ”

” তারপর… ” তুরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে তীব্রের। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি গড়াতে থাকে।

” সেদিন…. ” কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে তুরের। ” সেদিন ওরা আমাকে… ”

” চুপ করো তুর। আর কিছু শুনতে চাইনা আমি। কিচ্ছু জানার নেই আমার। আমি শুধু জানি তুমি এই মূহুর্তে আমার সাথে আমার কাছে আছ। আর কিছু না। ” তুরকে আর কিছু বলতে দিবে না। তাই ওর মুখটা বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে আছে। তীব্র যে শুনতে পারছে না। ভাবতেও অবাক লাগছে, তুর এতটা সহ্য করেছে। ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে। কেন ও চলে গিয়েছিল? কেন ও ফিরে আসল না? কেন অভিমান করে দূরে সরে থেকেছে? আর কেনই বা ওই মানুষগুলোর কথা রাখতে দূরে চলে গেছে?

তুর জোর করে তীব্রের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ওর কাঁধে মাথা রাখল। অসহায় চাহনিতে বলল, ” কেন তীব্র? ঘৃনা হচ্ছে শুনতে। আপনার তুরকে কেউ বা কারা নোংরা করেছে বলে? সে কি এখন আপনার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়? ”

তীব্র চুপ…

তুর আবারও ডেকে উঠল, ” কী হলো তীব্র বলু…( আটকে যাচ্ছে৷) বলুন না? ” আবার কান্না করে দেয়?

তীব্রের এই উত্তর জানে না। কোন উত্তরে তুরকে শান্ত করবে তাও বুঝতে পারছে না। এটা দেখে তুর করুন গলায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠে, ” আপনার মনে আছে তীব্র আপনি বলেছিলেন কোনদিন আমাকে বিয়ে করবেন না। তবুও আমার সাথে…[ চুপ থাকে । তারপর আবার বলে ] তারপরের দিন যখন দু’টো লোক আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।আমি সেদিন ভয়ে আপনার কাছে থাকার জন্য আর্তনাদ করেছিলাম। সেটা শুধুমাত্র নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয়। বরং এই ভয়ে আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই। তাই আমাকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছেন। আমাকে নিজের থেকে দূর করতে চাইছেন। কিন্তু আমি তো যেতে চাইনি তীব্র। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা আপনি ছিলেন। ভালোবাসার প্রথম স্পর্শ আপনার ছিল। তা যেভাবেই পেয়েছি। ভালো তো বেসেছি তাইনা। আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল না তীব্র। রাগ ছিল, অভিমান ছিল কিন্তু আপনাকে ছাড়ার শক্তি ছিল না। ”

তীব্র ওর বাহু দিয়ে তুরকে আবৃত করে নেয়। হালকা ঠোঁট ছোঁয়ায় ওর কপালে। তুর শান্ত চাহনিতে ওর কাঁধে মাথা দিয়ে তীব্রকে দেখছে। তারপর আলত হেসে নরম কন্ঠে বলে, ” আমাকে ছুঁতে বাঁধছে না আপনার। “

“ আমার তুর আমার কাছে এখনো ততটাই পবিত্র যতটা আগে ছিল। শরীরে ময়লা লাগলেই তা পঁচে যায় না। আর না তা লেগে থাকে। “

তীব্রের এমন কথায় তৃপ্তির হাসি হাসে তুর। চোখ বন্ধ করে একহাতে গলা পেচিয়ে ধরে ওর। “ আমি জানতাম তীব্র । আপনি এটাই বলবেন। কিন্তু কী জানেন? আমার বেঁধেছিল । যখন আপনি নামহীন সম্পর্ক দিয়ে আমাকে ছুঁয়েছিলেন। কারন ওদের স্পর্শ আর আপনার দু’টোই এক ছিল। পার্থক্য এতটুকুই আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসতাম। আর ওদের ঘৃনা করতাম। ”

কথাটা শোনা মাত্রই তীব্রের হাত আগলা হয়ে আসে। এই ভেবে ও ওই ছেলেগুলোর উপর কীভাবে রাগ করতে পারে? যেখানে ও নিজেই একই দোষের দোষী। আর তুর কত সহজেই তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। তীব্রের নির্বা‍ক চাহনির মানে বুঝতে পারে তুর। হালকা হাসে ও। তারপর বলে, “ আমাকে একটু শক্ত করে ধরুন না তীব্র। মনে হচ্ছে আবার হারিয়ে ফেল…”

কথা শেষ করার আগেই তীব্র শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। এটা দেখে তুর ওর ঠোঁটে হাত রাখে। তারপর বলে, “ আপনার কী মনে হয় তীব্র। আপনার তুর অন্য কারো ছোঁয়া নিয়ে বেঁচে থাকতে পারত? “

বিস্মিত চোখে তাকায় তীব্র। রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে তুরের মুখে।

“ না তীব্র পারত না। সেদিন ওরা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল ঠিকি কিন্তু কোন ক্ষতি করতে পারেনি। ওরা আমাকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে সেদিন সাম আর ওর ফ্রেন্ডরাও গিয়েছিল। আর ওখানে ওরাই আমাকে বাঁচায়।আমাকে নিয়ে আসে ওদের সাথে। ওরা ঘুরতে গিয়েছিল। অনেকগুলো মেয়ে ছিল ওদের সাথে। অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন।তা দেখে সুমি নামের একটা মেয়ে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় মেরেছিল। আর বলেছিল আমাদের মত মেয়েরা সবকিছু সয়ে এভাবে কাঁদে বলেই ওসব জানোয়ার আমাদের পিছে পরে থাকে। শিয়াল কখনো শিয়ালের মাংস খায় না। লোহা কখনো লোহাকে কাঁটতে পারে না তাই আমাকে এই খারাপ লোকগুলোর হাত থেকে বাঁচতে হলে ওদের মত চলতে হবে। কারন হিসেবে কী বলেছিল জানেন?”

তীব্র চুপ।

“ খারাপকে কেউ খারাপ বানাতে চায় না। কিন্তু কোন ভালো কিছু দেখলে তাকে খারাপ করার চেষ্টায় সমাজের মানুষ উঠে পরে লাগে। কেউ নিজেকে বড় করার জন্য, তো কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য, আবার কিছু মানুষ আছে তো যারা অন্যকে খারাপ বানিয়ে নিজেদের বিনোদনের খোঁড়াক যোগায়। তাদের কাজ হচ্ছে তিলকে তাল বানিয়ে খবর ছড়ানো। “

তীব্র এবারো চুপ।

“ তাই আমিও তাই করেছি। নিজেকে দুনিয়ার সামনে খারাপ করেছি। যাতে খারাপ লোকগুলো আমার কাছে না আসে। দুনিয়া আমাকে কেমন ভাবে তা জানার দরকার নেই । আমি জানি আমি কেমন? তাই সবার সামনে নিজেকে খারাপ বানিয়ে নিজের কাছে ভালো থেকেছি। “

সেদিন যখন অসহায় হয়ে পড়ে ছিলাম তখন বুঝতে পেরেছিলাম আসলেই মেয়েরা দুর্বল হয়। তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য অন্য কারো সাহায্যের আশা করে। বাস্তব জীবনে যা কখনোই কাম্য নয় তীব্র। তাই সেদিন ঠিক করে নিয়েছিলাম নিজের নিরাপত্তা নিজেই করব। আর যে পশুগুলো আমার দিকে খারাপ নজর দিয়েছে, আমাকে দূর্বল ভেবে নিজেদের স্বীকার বানাতে চেয়েছে তাদের যোগ্য জবাব দেব। আর তাতে আমাকে হেল্প করেছিল রিদাম… কিন্তু তবুও সাহস জোগাড় করতে পারিনি। ”

কিছুক্ষন চুপ থাকে তুর। তারপর আবার বলে, ” তারপর শুনেছিলাম নেশা করলে নাকি ভয় থাকে না। নিজের অপূর্ন বাসনা না পাওয়ার কষ্ট ভুলে থাকা যায়। তাই ওরাই আমাকে নেশা করায়। ওই ছেলেটাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। আর তাতে সফল ও হই। উচিত শিক্ষা দিয়েছিলাম ওকে। তবে তারমাঝে জড়িয়ে গিয়েছিলাম নেশায়। ধীরে ধীরে নেশার মাঝে আমি আপনাকে খোঁজা শুরু করি। ”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরে তুর।

” আপনি ঠিক বলেছিলেন তীব্র আসলেই ভালোবাসা নেশার ফিলিংস দেয়। তখন আপনার ভালোবাসার নেশায় ছিলাম। আর সেটা যখন আপনি কেঁড়ে নিয়ে চলে গেছেন তখন মদের নেশায় কাটিয়েছি। শুধু পার্থক্য একটাই। এই নেশা আমাকে আপনাকে ভুলতে দেয়নি। কিন্তু আমি চাই তীব্র… আপনার নেশায় এই নেশাকে ভুলে যেতে।”

একরাশ মায়া নিয়ে তীব্রের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। তীব্র কিছু বলার ভাষা নেই। তুরের চাহনির গভীর অন্তরীক্ষে হারিয়ে গেছে। মুগ্ধ নয়নে দেখছে ওকে। নিজের প্রশ্নের প্রতুত্তর না পেয়ে তুর ডুকরে কেঁদে উঠে।

” আমি কাউকে সাফাই দেই না তীব্র। কিন্তু আজ আপনাকে নিজের সাফাই দিতে ইচ্ছে করছে তীব্র। বিশ্বাস করুন আপনি যাকে রেখে গিয়েছিলেন আমি সেই তুরই আছি। নিজেকে শুধু আপনার আমানত হিসেবে রেখেছি। তার প্রমান দেখবেন তীব্র। “

মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায় তীব্র। প্রমান দেখার প্রশ্ন তখন আসে যখন কোন কিছুতে সন্দেহ থাকে। কিন্তু তুরের কোন কিছু নিয়ে তীব্র কোনদিন সন্দিহান ছিল না। আর না আজ আছে…. তাই দরকার নেই কোন প্রমানের। কিন্তু তুর নাছোড়বান্দা। সাফাই তো ও দিবেই। তাই ও ওড়নাটা মুঠ করে গলার নিচে থেকে সরিয়ে তীব্রের দেওয়া সেই বাইটের স্থানটা দৃশ্যমান করে। সকালে চুল দিয়ে ঢেকে থাকার কারনে দেখেনি তীব্র। কিন্তু আবছা আলোয় জায়গাটা দেখে শিহরে উঠে তীব্র। চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু পরক্ষনেই আবার চোখ দেয় সেই জায়গায়। ভয়ংকর ক্ষত তাতে। আলত করে হাত বুলাতেই ব্যাথায় গুঙিয়ে উঠে তুর। বোঝাই যাচ্ছে। ধারালো ব্লেট বা ছুড়ি কারনে ক্ষতটা বছরের পর বছর ধরে তাজা ।

তুর নিস্তেজ কণ্ঠে আলত হেসে বলে, ” আপনি বলেছিলেন না আপনার বন্দিনী যেন এই দাগ না মেটে। তাই আমিও মিটতে দেইনি তীব্র। খুব যত্নে রেখে দিয়েছি। এর জন্য যদি আপনি ফেরেন। আর দেখুন আপনি ঠিক ফিরেছেন।শুধু আপনার তুর আগের মত নেই। ”

” যা আমার ছিল তা চিরকালই আমার থাকবে। তা যা কিছু হোক না কেন? আমার তুর আগে যেমন আমায় ভালোবাসতো আজও তাই। তোমার কথা আমি কেন শুনব? তীব্র কারো কথা শোনেনা। শুধু নিজের কথা ছাড়া। ”

তুর ওকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। নেশার কারনে ঠিকমত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তবুও অব্যর্থ চেষ্টা। নেশাগ্রস্ত কন্ঠেই বলে উঠল, ” আপনি ছোঁবেন না আমাকে। আপনার জন্য যে তুর অপেক্ষায় ছিল সে মরে গেছে। আমার জীবনে যা ঘটেছে তার সম্পূর্ন দায় আপনার। আমি কখনো ক্ষমা করব না আপনাকে। ”

“ তুর… “ তীব্র নিজেও উঠে দাঁড়ায়। “ তুর আমার কথা শোনো। আমি.. “

তুরের কাছে যেতে চাইলেই তুর দূরে সরে যায়। মাথা নাড়িয়ে ওর কথা শুনবে না বলে অসম্মতি জানায়।

“ আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবেন না। আমি কোন পুতুল নই। আপনি যখন ইচ্ছে আমার কাছে আসবেন। আবার চলে যাবেন। এবার আর এমন কিছু হতে দেবনা আমি। না আপনাকে আমার কাছে আসতে দেব । আর না আপনাকে আমার থেকে দূরে থাকতে দেব। আমার সব কষ্ট আপনার জন্য পেয়েছি। আর কষ্ট পাব না আমি। এবার আর আমাকে ছেড়েও যেতে পারবেন না। “

বলেই তুর ধীরে ধীরে মাটিতে বসে পরে। তুরের কোন কথার মানেই তীব্রের কাছে স্পষ্ট নয়।

তীব্র ওর কাছে যেতে নিলেই তুর মাটি থেকে একটা ড্রিংসের বোতল তুলে শক্ত মেঝেতে বারি মারে। তীব্র ” তুর “ বলে ওর কাছে যেতে নিলেই তুর ভাঙ্গা বোতলের সুঁচালো অংশ তীব্রের বুকে বিধিয়ে নিচের দিকে টান দেয় করে। এটা দেখে তীব্র দ্রুত পিছন ফিরে যায়। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয় না। ওর বুকে সুতার মত আচ লেগে টি-শার্ট ছিড়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। তীব্র চোখ-মুখ শক্ত করে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নেয়। পরক্ষনেই আবার তুর ওকে মারতে যায়। কিন্তু এবার আর পারেনা। ওর হাত‘টা ধরে বাকিয়ে কাচের টুকরো‘টা ফেলে দেয়।

“ ছাড়ুন বলছি আমাকে । আজকে আপনাকে মেরে নিজের কষ্টের শেষ করব। না আমাকে কষ্ট দিতে পারবেন আর না আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারবেন। আপনাকে মেরেই আমার কাছে রাখব। “

তুর প্রচন্ড ভাইলেন্ট হয়ে গেছে। তীব্রর পক্ষে সামলানো দায় হয়ে উঠেছে। এদিকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে বুক থেকে। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। তীব্র জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে অগ্নিচোখে ওর দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তুরের হাত ঘুড়িয়ে ওর দু‘হাত পিছনে চেপে ওকে কোলে তুলে নেয়। তারপর রুমে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারে তুরকে। টেবিল লাইট অন করে দ্রুত ফাস্টএইড বক্স নিয়ে বিছানায় গিয়ে তুরের উঠা আটকায়। প্রচন্ড পাগলামী করছে। আজকে তীব্রকে না মেরে শান্ত হবে না ও। তাই তীব্র ওর পায়ের উপর চড়ে ওর নাড়াচাড়া রোধ করে। একহাতে ওর দু‘হাত ধরে আরেকহাতে ফাস্টেড বক্স খুলে কাঁটা জায়গা এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করে। ক্ষত যেহেতু গভীর ভাবে লাগেনি তাই তাতে প্লাস্টার লাগিয়ে নেয়।

নিজের কাজ শেষ করে তুরের দিকে তাকায়। তুর তখনো নিজের বুলি আওরে যাচ্ছে। তীব্র আজ না মেরে ক্ষান্ত হবে না। তীব্রে এবার হাফ ছেড়ে তুরের দু‘হাত আটকে রেখেই ওর পাশে শুয়ে পড়ে। আরেকহাতে ওর গাল ধরে বলে,

“ সরি তুর। তোমার কথায় মরা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। তবে মরতে পারি যদি কথা দিতে পারো আমার মৃত্যুর পর নিজের কোন ক্ষতি না করে তুমি বেঁচে থাকবে। যদি পার তাহলেই মারতে দেব। নাহলে না। তোমার ইচ্ছে পূরন করলে তুমি নিজেও বাঁচবে না। [ হালকা হাসি ফুটে উঠে তীব্রর। ] আমাকে কাছে রাখতে আমাকেই মারতে চাইছ। “
তুরকে বুকে টেনে নিতে চাইলে বাঁধা দেয় । আঘাতের মধ্যে হাত পরতেই তীব্র ওকে ছেড়ে “ আহহ “ করে উঠে। সেই ‍সুযোগে তুর বিছানা থেকে নেমে পরে। কিন্তু ও কিছু করার আগেই তীব্র ওকে আটকে জোর করে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই যেন পারছে না। এদিকে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে বুকে। তবুও তুরকে ছাড়ছে না।

বেশ কিছুক্ষন পর নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পরে।
তারপর শান্ত চোখে তীব্রের দিকে তাকায়।

” কেন ফিরে এসেছেন আবার আমার জীবনে? সবকিছু যখন ভুলে গিয়েছি তাহলে কেন? ” তুরের গলায় অভিমানী টান পাচ্ছে তীব্র। কিন্তু সেই অভিমানের কাছে আজ হারতে নারাজ। তুরকে যে কিছুতেই নিজের কাছ ছাড়া করতে পারবে না ও।

তুর এখনো নিজের উত্তরের আশায় তীব্রের দিকে করুণ চাহনীতে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টির ভাষা বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে না তীব্রের। কী জানতে চায়? কী শুনতে চায়? এটাই যা বলার অপেক্ষায় তীব্রের ৬ বছর কেটে গেছে। তীব্র নিজেও শান্ত চাহনীতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের দৃষ্টি একে-অপরের মাঝে আবদ্ধ। কেউ কারো থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না। কিন্তু তীব্রের নীরবতাও ওর কাম্য নয়। তাই তুর আবার জিজ্ঞেস করল, ” কিহল? বলছেন না যে কেন ফিরে এসেছেন? ”

” ভালোবাসতে.…. হ্যা, তুর ভালোবাসতে এসেছি। ” শান্ত চাহনীর স্থীর জবাব। কিন্তু তীব্রের এই স্থীর জবাবে তুর স্থীর থাকতে পারছে না। অদ্ভুত এক শিহরন অনুভুত হলো তুরের মাঝে। সেই শিহরনের রেশ কাঁটিয়ে উঠার আগেই তীব্র আবার বলল,

” ভালোবাসা চাই না তোমার। অনেকটা ভালোবাসা। যার উপর অধিকার শুধুমাত্র তোমার। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে নিজের অধিকার থেকেই বঞ্চিত তুমি। বঞ্চিত সেই ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিতে এসেছি তোমার কাছে। এতটাই ফিরিয়ে দিতে চাই যাতে কোনদিন তুমি সেই ভালোবাসার রেশ কাঁটিয়ে উঠতেই না পারো। ”

তীব্র ওর গাল শক্ত করে ধরে আছে। কিন্তু তুরের পক্ষে আর দাঁড়ানো সম্ভব না। হঠাৎ করেই তুর নিজের ভর ছেড়ে মাটিতে বসে পরে। তীব্র দ্রুত ওকে থামায়। পরে যাওয়া রোধ করে ওর। তুর নিজের সম্পূর্ন ভর তীব্রের উপর ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” প্লিজ ছাড়ুন। ” ভারী কন্ঠে।

” কেন? ” তীব্রের ভারী নিশ্বাসের প্রশ্ন।

“ নিজেকে নিতে পারছি না আমি। বড্ড কষ্ট হচ্ছে শুন্যে নিজেকে ধরে রাখতে। “

“ শুন্যে কোথায় আমি তো ধরে আছি। “

“ তবুও পারছি না। প্লিজ ছাড়ুন। “ মিনতি করে।

তীব্র কথা বাড়াল না। শুইয়ে দেয় তুরকে মেঝেতে। তীব্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এটা দেখে তুর ডান পাশ ফিরে দু‘হাতে মাথা দিয়ে বাচ্চাদের মত শোয়। তীব্র ওর মুখের পাশে মেঝেতে শুয়ে ওর দিকে তাকায়। তীব্রের নিশ্বাস ওর মুখে পরতেই ও চোখ খুলে তীব্রকে নিজের সামনে আবিষ্কার করে।

“ আপনি? [ অবাক হয়ে ] মেঝেতে আপনার কষ্ট হবে। “

“ তোমার হবে না? “

“ না… “

“ কেন? “

আলত হেসে বলে তুর, “ আপনি যাওয়ার পর নরম বিছানায় ঘুমাতে পারিনি। আপনি আপনার শক্ত বুকের বাজে অভ্যাস দিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। তাই মেঝেতে ঘুমাতাম। “

“ আজকে তো আমি আছি তাহলে… “

দুজনের মাঝে চাপা নিরবতা। তীব্রের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজেই ওর কাছে যায়।।ওর বাহুতে মাথা রেখে একহাত দিয়ে জড়িয়ে নেয় ওকে। তীব্র ওকে জড়িয়ে কপালে চুমো এঁকে দেয়। তুর মুখ তুলে তাকায়।

“ কিহল ঘুমাও? ”

শান্তভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে…

“ তুর…? “

“ একটু ভালোবাসুন না আমাকে? “ করুন চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে।

তুরের মুখে এই কথায় ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে তুরের। এখন যদি নেশায় না থাকত তাহলে..। নেশায় থেকেও কম জ্বালিয়েছে ওকে। দূরে যেতে যাতে না পারে। তাই মারতে চাচ্ছে। পাগল বোধ একেই বলে। একটু আগে মারার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। আর এখন ভালোবাসতে বলছে। হাসছে তীব্র ওর দিকে তাকিয়ে। এটা দেখে কিছুটা ঠোঁট উল্টায় তুর।

“ মজা লাগছে। ভালোবাসবেন না আমাকে? “ ঠোঁট বাঁকিয়ে।

“ যে একটু আগে আমাকে মারতে চেয়েছে তাকে কেন ভালোবাসব আমি? ” ঠোঁটে হাসির ছোঁয়া রেখে বলল তীব্র।

রেগে যায় তুর। “ কারো ভালোবাসা চাই না আমার। “

“ তাহলে আর কী? আমি চলে যাই। কে চাইব নিজের হত্যা পরিকল্পনাকারীর সাথে থাকতে। “

তীব্র ওকে ছেড়ে উঠে বসে। এটা দেখে তুর দ্রুত উঠে বসে বেশ ঝাঝাল কন্ঠে বলে, “ আপনি আবার আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছেন? আপনাকে বাঁচিয়ে রাখব না। “

“ তাহলে আমি থাকবই না। কে আবার মরতে চায়? যে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি আঘাত করেছে তাকে কেন ভালোবাসব?”

বলেই তীব্র উঠে যেতে নেয়। কিন্তু তুর ওর হাত ধরে করুন চোখে ওর ‍দিকে দেখে। টেনে তীব্রকে বসিয়ে দেয়।

তীব্র এবার বেশ বিরক্তি নিয়েই বলে, “ আবার কী? “

তুর ওর আরেকটু কাছে গিয়ে তীব্রের দু‘গাল ধরে। তুরের এহেন আচরনে অবাক তীব্র। ওকে আরো অবাক করে দিয়ে ওর মাথাটা
কিছুটা নিচে নামিয়ে তীব্রের কপালে গভীর চুমো দেয় তুর। তারপর তীব্রের সারা মুখে ছোট ছোট অনেকগুলো ভালোবাসার পরশ ছোঁয়ায়। বন্ধ চোখে আনমনেই হেসে উঠে তীব্র। আর তুর ওর বুকে বিড়াল ছানার মত গুটিয়ে মাথা রাখে। তীব্র জড়িয়ে নেয় ওকে।

“ এখন ভালোবাসতে বলছ । পরে তো দক্ষযজ্ঞ বাঁধাবা।”

মাথা নাড়িয়ে না করে তুর। আবারো হাসে তীব্র। কয়েকবছর প্রতিক্ষা আজ শেষ হলো ওর। তুরের রাগ কখনো শেষ হবে কিনা জানা নেই? কিন্তু ভালোবাসা… তা কীভাবে অস্বীকার করবে ও। তা যে রাগের চেয়েও বেশি। তাই তুরকেও শুধু মাত্র ভালোবাসবে আজ …

.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন🖤 ]
.
.
.
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here