#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 29…….
পরের দিন শুনানিতে তীব্রকে কোর্টে হাজির করা হয়। তিব্রের বলা ভিডিও ক্লিপ আর তুরের সাক্ষ্যে তীব্র অপরাধী প্রমান করতে চাইলেও রিদ্ধর ঠিক করা উকিল কেসের মাত্রা ঘুরানোর জন্য তুরের দিকে ও আঙুল তুলতে চায় কিন্তু পারে না। কারন তার আগেই ভরা আদালতে তীব্র নিজের মুখেই স্বীকার করে যে, ওর তুরকে আটকে রেখেছিল এবং তুর যা যা বলছে সব সত্যি।
এর পর আর কারো কিছু বলার থাকে না। তীব্র নিজ হাতে নিজের বাচার রাস্তা শেষ করে দেয়। ওকে নিজের সাপেক্ষে কিছু বলতে বলা হলে ও শুধু এটাই বলে, তুরের প্রতি দুর্বলতা আর পরিস্তিতি ওকে এটা করতে বাধ্য করেছে। উভয় পক্ষের রায় শুনে আদালত ৩ দিন পরের ডেট দেয় রায় শোনানোর জন্য।
আদালত থেকে বেড়িয়ে পুলিশ যখন তীব্রকে নিয়ে যেতে চায় ঠিক তখনি তুর তীব্রের সামনে এসে দাড়ায়। ওকে দেখে একটা জোর পুর্বক হাসি দিল তীব্র। আর তুর বলে উঠল,
——” শাস্তি যখন পাবেন তখন বুঝবেন আমি কেন অস্থির ছিলাম? ”
——- ” তাতে তুমি খুশি হলেই হবে। ”
তুর কিছু বলতে চেয়েও পারল না। ও নিজের পথে হাটা দিতেই থমকে গেল। মাথায় হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরল। তুর থমকে যাওয়াতে তীব্র দাঁড়িয়ে গেল। হঠাৎ করেই তুরের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে এলো। ও অস্ফুটস্বরে শুধু “তীব্র ” নামটা বলে উঠল। তুর নিচে পরে যেতে ধরলেই তীব্র পুলিশের হাত থেকে কোন রকম ছুটে এসে তুরকে মাটি থেকে পরা আটকালো। তুর জ্ঞান হারিয়েছে। তোয়া সহ ওর বাবা তুরের জন্য অস্থির হয়ে পরল। তীব্র ওর নার্ভ চেক করে ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই থমকে গেল।
তোয়া সহ বাকিরা জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তীব্র তখনো স্থীর ওর কি করা উচিত নিজেও জানে। তোয়া খুব উদগ্রীব হয়েই তীব্রকে জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে? ”
কিন্তু তীব্র কোন কথা বলতে পারল না। তোয়া তীব্রের চোখে মুখে যেমন একটা খুশির ঝলক দেখতে পাচ্ছে তেমনি দুঃচিন্তাও। ও আবার জিজ্ঞেস করতেই তীব্র অপরাধীর দৃষ্টিতে খুশির ঝলক আড়াল করেই জবাব দিল,
—— ” তুর প্রেগন্যান্ট। ”
কথাটা শোনা মাত্রই সেখানে সবাই যার যার মুখ চাওয়া চাওয়ী করল। তীব্র ভালোভাবেই বুঝতে পারছে ব্যাপার টা এখানে কারো জন্যই সুখকর নয়। একমাত্র তীব্র ছাড়া। কিন্তু আফসোস সেই খুশিটা এখন চাইলেও প্রকাশ করতে পারবে না।
এর মধ্যে তুরকে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হল। কিন্তু তুর সবাইকে চিন্তিত দেখে বলল,
——- ” আমার কিছু হয়নি। একটু মাথা ঘুরে গিয়েছিল গরমের কারনে। এত চিন্তা করনা। ”
তখনি খেয়াল করে তুর তীব্রের বুকের মাঝে। ও দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর বাবা হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। সাথে তোয়া আর বাকিরাও চলে যায়। তীব্রকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
,
,
,
,,
,
,
তুর সবার আচরনে বেশ অবাক হয়। ওর বাবা সারা রাস্তায় গম্ভীর ভাবে বসে ছিল। আর তোয়াও একদম চুপচাপ। তুর বার বার তোয়াকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ?ওরা এরকম বিহেভ কেন করছে ?কিন্তু কোন উত্তর পায়নি।
বাসায় ফিরলে তুরের চাচা বলে উঠল,
—— ” মান সন্মানের আর ছিটে ফোটাও বাকি রইল না। যেখানে ছেলেটা এত কান্ড করেও বিয়ে করতে চাইলো আর তোমরা বিয়ে না দিয়ে নিজেদের মান ইজ্জত নিজেরাই ডুবালে। ”
কথাটা শুনে তুরের বাবা তুরকে ভিতরে যেতে বলল। তুর বুঝল এখন কিছু বলা ঠিক হবে না তাই চলে গেল। তুরের বাবা কি করবে বুঝতে পারল না। সানি আর তায়ান ও এখানে আছে। সবাইকে চুপচাপ দেখে ওর চাচা জিজ্ঞেস করল,
—— ” কি হল? তোমরা চুপ হয়ে গেছ কেন? কেসের কি হয়েছে?”
তোয়া জবাব দিল,
—– ” ড. রায়হান নিজেই সব স্বীকার করে নিয়েছে। ”
—– ” তাহলে তো ভালোই তোমার মেয়ের ঘাড় থেকে দোষ নামাল। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীদের কথা এখন ভেবে কি লাভ? ”
—– ” ব্যাপার টা আসলে তা নয়।” [ তুরের বাবা বেশ চিন্তিত হয়েই উত্তর টা দিলেন। ]
—– ” তাহলে? ”
কথাটা বলতে বেশ ইতস্তত করলেন তুরের বাবা। তাই দেখে তোয়াই বলল,
—– ” বাবা তুর প্রেগন্যান্ট। ”
কথাটা বলা মাত্রই চারদিকে নিরাবতা বিরাজ করল। তোয়ার মা মুখে কাপর গুজল। আর তুরের মা কথাটা শুনেই পরে যেতে নিলেন। তোয়ার মা ওনাকে সামলিয়ে নিলেন। এইটা শুনে তোয়ার বাবা বেশ গম্ভীর ভাবে বললেন,
——– ” এখন কি করবে কিছু ভেবেছ? যা টুকু বাকি ছিল তাও এবার শেষ। তখন যদি ছেলেটার প্রস্তাবে রাজি হতে তাহলে অন্তত……. ”
কারও মুখে কোন কথা নেই। তায়ান কিছু বলতে চেয়েও পারলনা। এখন যদি তীব্রের হয়ে কিছু বলে তাহলে সেটাকে নিজের বন্ধুর হয়ে ওকালতি দেখাবে। আর সানিও এমন কিছু আশা করে নি। না চাইতেও অদ্ভুত ভাবে ও জড়িয়ে গেছে এই ফ্যামিলির সাথে।
,
তুরের বাবা প্রায় কান্না কন্ঠে বলে উঠল,
_—- ” জানিনা কি পাপ করেছিলাম? যার কারনে আমার মেয়েটার সাথে এগুলো দেখতে হলো। ও যখন জানতে পারবে তখন?”
তুরের মা অঝোরে কাঁদছে। ব্যাপারটা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়েছে কারো কাছে করার তেমন কিছুই নেই। তোয়া কিছুক্ষন পর বলল,
—— ” ড. রায়হান এর সাথে এ নিয়ে কথা বলবে ছোট আব্বু? ”
—— ” কি বলব বলতে পারিস? ”
—— ” ওনি তো তুরকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। ইনফ্যাক্ট এখনো চায়। নিজেকে কোন রকম বাঁচানোর চেষ্টা না করেই আদালতে সবটা স্বীকার করেছেন। আর তাছাড়া ওনি যদি সবটা সত্যি না বলতেন তাহলে আমরা এসব জানতেও পারতাম না। যেহেতু ওনি ওনার অন্যায় বুঝতে পেরে নিজেই কোন রকম বাঁচার চেষ্টা না করে শাস্তির জন্য প্রস্তুত। তোমাদের মনে হয় না ওনাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। আর তাছাড়া ওনি বললেন যা করেছে তুরের জন্যই করেছে। ”
তুরের বাবা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। পরিস্থিতি আজ এমন জায়গায় সে না চাইতেও নিজের মেয়েকে একটা ক্রিমিনালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
—— ” আমি জানি ব্যাপারটা তোর জন্য সহজ নয়। কিন্তু এখন আবেগী হওয়ার সময় নয়। তুই ভেবে দেখ যা হয়েছে তার পরেও তুই তুরের জন্য ভালো কোন ছেলে পাবি। আর পরের কথা বাদ দে বিয়ের আগেই তোর মেয়ে মা হতে চলেছে এইটা যখন সবাই জানতে পারবে তখন। তুরের কোন দোষ নেই সমাজের মানুষ এটা মানবে না।তুরকে দোষী সাবস্ত করে যা নয় তাই বলবে। তোদের তো ছি ছি করবেই সাথে আমাদের মুখেও থুথু দেবে। এটাই নির্মম বাস্তবতা। — কথা গুলো তোয়ার বাবা গম্ভীর ভাবেই বললেন।
তায়ান এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার বলল,
—— ” আমি জানি। আমি যেটাই বলি না কেন সেটা আপনারা তীব্রের হয়ে বলছি মনে করবেন। তবে এটাই বলব আমি ছোট বেলা থেকে ওকে চিনি। আর আমি চাইতাম যাতে তুরের সাথে ওর বিয়ে দিতে। কিন্তু তার মাঝে এরকম একটা বিশ্রি কান্ড হয়ে যাবে ভাবিনি। তবে এটাই বলব আপনারা যতটা খারাপ ভাবছেন ততটা খারাপ ও নয়। আর তুর নিজেই বলেছে ওকে বিয়ে করে আপনাদের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কিন্তু তার আগেই তুর পালিয়েছে। আর তারপরেও আপনাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে কিন্তু আপনারাই ওকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর আজ আদালতে উকিল যখন ওর দিকে আঙুল তুলেছিল তার আগেই ও নিজের অন্যায় স্বীকার করেছে যাতে তুরকে কিছু শুনতে না হয়। ওর একটা অন্যায়ের জন্য আপনারা যদি এখন ভাবেন ও তুরকে খুশি রাখতে পারবে না। তাহলে আমার কিছু বলার নেই। ওর ভুলটা সামান্য না কিন্তু যখন সহজ উপায়ে যখন সেটা শুধরে নেওয়া যায় তখন সেটা করা উত্তম। বাকিটা আপনারা ভেবে দেখুন। আমার আর কিছু বলার নেই। ”
তুরের বাবা কি বলবে ভেবে পেল না। তোয়ার বাবা বেশ কঠোর কন্ঠেই বলল,
——- ” এখন দুইটা উপায় আছে এই সমস্যার হয় তুই তুরের বেবিকে এবোড কর নাহয় তুরকেই মেরে ফেল। তাহলে সমস্যাই শেষ হয়ে যাবে। আর যদি চাস মেয়েকে কোন রকম কলঙ্ক ছাড়া বাঁচতে দিতে তাহলে ড. রায়হানের সাথে বিয়ে দে। ”
——- ” ছোট আব্বু আপনার একবার হলেও ব্যাপারটা ভেবে দেখা উচিত। তুর যখন জানতে পারবে ও প্রেগন্যান্ট তখন কি হবে? ”
——- ” আপু…….?”
তুরের গলার আওয়াজে সবাই পিছিনের দিকে তাকিয়ে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তুর তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় সবাই।
—— ” তুর তুই। ” তোয়া সামনের দিকে এক পা এগোতেই তুর পিছিয়ে হাত দিয়ে ওকে থামতে বলল।
—— ” আমি প্রে…. ”
আর কিছু বলার আগেই তুর কেঁদে দিল। তোয়া সামনের দিকে এগোতেই ও পিছন দিকে দৌড় দিল। তোয়া পিছন থেকে “তুর তুর ” বলে ডাকতে লাগল কিন্তু তুর শুনল না। ও ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
এইটা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। সবাল অনেক ডাকাডাকির পর ও তুর দরজা খুলল না। তাই বাধ্য হয়েই তায়ান আর সানি মিলে দরজা ভাঙল। আর যা দেখল তাতে তো সবাই হতবাক। তুর ফ্যানের সাথে ওড়না বাধছে। এটা দেখে সানি গিয়েই ওকে নামিয়ে খুব জোরেই একটা থাপ্পড় মারে।
——- ” কি করতে যাচ্ছিস তুই? পাগল হয়ে গেছিস? ”
—— ” হ্যা হ্যা পাগল হয়ে গেছি। কোন অন্যায় না করেও আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে তাতে সত্যি পাগল হয়ে গেছি আমি। ”
সানি কি বলবে বুঝতে পারল না। তুর আস্তে আস্তে সানিকে ধরেই কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ল। তুরের বাবা গিয়ে তুরকে জড়িয়ে ধরল।
——- ” পাগল হয়ে গেছিস। তুই মরলে আমাদের কি হবে আমরা তো তোর জন্যই বেঁচে আছি। ”
——- ” আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের অনেক কথা শুনতে হবে বাবা। সবাই ছি ছি করবে। আমার মরে যাওয়াই ভালো। ”
-_—- ” তাহলে আমাকে আর তোর মাকেও মরতে বল। ”
তুর আর কিছু বলতে পারল না। নিজের বাবাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল। তুরের বাবা মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
——- ” তোকে কিছু ভাবতে হবে না। কেউ তোকে কিচ্ছু বলবে না। তুই যা চাইবি তাই হবে।”
তারপর ওকে বিছানায় শুইয়ে ওনারা বেড়িয়ে আসেন তুরের মা ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে। আর তোয়া ওর পাশে বসে রয়েছে। তুরের বাবা বাইরে এসে শুধু একটা কথাই বললেন,
_—– ” যা হয়েছে তাতে আমার মেয়ের কোন দোষ নেই । তাই ও যা বলবে তাই হবে। অন্যের পাপের দায় আমার মেয়েকে দিয়ে ওর ছোট মনকে আর বিষিয়ে দিতে চাই না।
তোয়ার বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবার ওনি বলে উঠল ,
—— ‘‘ এ নিয়ে আমি আর কোন কথা বলতে চাই না। তাই আমাকে কারো কিছু বোঝানোর থাকতে পারে না। “
তারপর কারো কথা শোনার প্রয়োজন মনে না করেই বেড়িয়ে যায়। ওদিকে বিছানায় শুয়ে নিরবে কাঁদতে থাকে তুর। পেটে হাত দিতেই কান্নার বেগটা বেড়ে যায় । কি করবে বুঝতে পারছে না পেটে যে আছে সে তীব্রের অংশ ভাবতেই সবটা কেমন বিষিয়ে উঠছে। কি করবে ও? আচ্ছা তীব্র কি এটা ইচ্ছে করে করল ।
দিন তুরের চোখের জল মুছতে মুছতেই চলে যায়। কেউ কোন কথা বলার বা বোঝানোর সাহস পায়নি ওকে। আর কি বা বোঝাবে? সান্ত্বনা দেওয়ার মত কারো কাছে কিছু নেই।
রাতের দিকে তুরের কান্না বন্ধ হয়ে যায়। ওর ঘরে শুধু তোয়া আর ওর মা আছে। ও শুকিয়ে যাওয়া চোখের পানি গুলো ধুতে ওয়াসরুমে যায়। ওর এমন স্বাভাবিক ব্যবহার দেখে ওরা বেশ ভয় পায়। কারন তুর একবার নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে যদি আবার সেই চেষ্টা করে তবে…?
ওদের আরো অবাক করে দিয়ে তুর ফ্রেশ হয়ে বলে,
—— “ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তোয়া আপু তুমি আজ অন্য রুমে ঘুমাও । আমি আজ একা ঘুমাবো । আর তাড়াতাড়ি করো আমার সত্যি খুব ঘুম পেয়েছে । “
ওর এমন স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে বেশ ভয় পেলেন ওনারা। আর পাবে নাই বা কেন যে মেয়ে কিছুক্ষন আগেও মরতে গিয়েছিল সে এখন ঘুমাবে। তোয়া ভয়ার্ত কন্ঠেই বলল ,
—— “ আচ্ছা মামুনি তুমি যাও তুরের সাথে আমি থাকছি। “
এটা শুনে তুর বেশ গম্ভীর কন্ঠেই বলে উঠল,
—— ” কারো থাকার দরকার নেই। বললাম তো আমি একা ঘুমাবো। ”
এটা শুনে তোয়া আর তুরের মা নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ী করলেন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তোয়া বলে উঠল,
—— ” আমি থাকলে কোন সমস্যা হবে নাকি তোর। আমি প্রতিদিন তো সাথেই….. ”
কথাটা শুনের তুর হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়ল। যেন তোয়া কোন বড় সড় জোক মেরেছে। যাতে তুর নিজের হাসি থামাতে পারছে না। অন্য সময় হলে পাগলের মত হাসার জন্য বকত কিন্তু আজ যেন তা ভয়ংকর মনে হচ্ছে। ওদিকে নিজের হাসি থামাতেই পারছে না। তাই দেখে তোয়া বলে উঠল,
—— “এভাবে পাগলের মত হাসছিস কেন? ”
_—- ” হাসব না? তোমরা কথা টা বললেই এমন। মনে হচ্ছে একা থাকলে আমি আত্নহত্যা করতে চাইব। ”
কথাটা শুনেই তোয়া আর ওর মা আঁতকে উঠল,
——- ” মা..ম…মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?”
এবার তুর বেশ শান্ত গলায় জবাব দেয়,
——- “ভয় নেই আপু। এক ভুল বারবার করব না। এক ভুল বার বার করব না। শেষ করলে পাপ শেষ করব নিজেকে কেন? ”
——- ” মানে? ”
তুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
——- ” এত মানে মানে করতে হবে না। এবার তোমরা যাও৷ আমার ঘুম পেয়েছে। ”
তারপর ওদের জোর করেই তুর বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর লাইট নিভিয়ে এসে শুয়ে পড়ল। যেন কত জন্মের ঘুম ও আজকে ঘুমাতে চলেছে।
★———————–★———————–★
পরের দিন সকালে সবাই টেনশন করছে কিন্তু কেউ তুরের দরজা ধাক্কানোর সাহস পেল না। সকাল হয়ে গেছে অথচ তুর দরজা খুলল না। তুরের মা দরজার কাছে গিয়ে ধাক্কা দিবে সেই মুহূর্তে তুর মাথা মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এলো। দরজার সামনে ওদের দেখে কোন রিয়েক্ট করল না। গিয়ে খাবার টেবিলে বসল। ওর কাজের আগা মাথা কিছু বুঝল না। ও নিজের মত নাস্তা নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে শুরু করল। খাওয়ার সময় ওর বাবা বলল,
——- ” তুর। ”
——- ” হ্যা। বাবা বল। ”
——- ” কালকে যা হয়েছে….. ”
—— ” যা হয়েছে, হয়েছে। তা নিয়ে এখন আর কোন কথা বলতে চাই না। আমার একটু কাজ আছে একটু পর বাইরে যাব। ”
—— ” কোথায়? ”
—— ” এসে বলব। ”
আর কিছু না বলেই চলে গেল। তারপর আবার রুমে গিয়ে দরজা দিল। একদম দুপুরের পর দরজা খুলে বাইরে বের হলো। তারপর একটা বড় শ্বাস নিয়ে সিএনজি নিল। সেখান থেকে হাসপাতালে গেল। গিয়ে দেখে সানি এসে গেছে। ওকে দেখে সানি জিজ্ঞেস করল…..
—— ” কিরে আমাকে এখানে কেন আসতে বললি? আর হাসপাতাল কেন? ”
তুর কিছুক্ষন সানির দিকে স্থির দৃষ্টি দিল। তারপর বলল,
——- ” অনেক জ্বালিয়েছি তোমায়। শেষ বারের মত আমার একটা উপকার করবে? ”
সানি বেশ ইতস্তত হলো। তুর কি করতে বলছে বুঝল না।
——- ” আচ্ছা বল। ”
ওর কথায় তুরের ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। কিছু না বলেই সানিকে নিয়ে হাসপাতালে ডুকল।
,,
,
,
,★———————–★———————–★
,
,
,
,
,
হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে আসতেই সানির মুখে একরাশ বিরক্তি ফুটে উঠেছে। কিন্তু তুরকে কিছু বলল না। তুর ও কিছু বলল না। সানি বেশ বিরক্তি নিয়েই মনে মনে বলল,
——- ” সালা কোন জন্মে যে পাপ করছিলাম যার জন্য আমার এই পাগলের পাল্লায় পরতে হইল। সালা ওই ডাক্তাত হালারে আমার সাইকো মনে হইছে। কিন্তু এইটাও যে পাগল হয়ে গেছে সেটা আজ জানলাম। ”
তুর বুঝল সানি বেশ বিরক্ত। সানি নিজের বিরক্তি কাটিয়ে বলল,
—— ” আপনি এইবার কই যাইবেন? ”
—— ” থানায়। তীব্রের কাছে। ”
—— ” সালার সবার কাছে হুনি ড. রায়হান আর তুই পাগলি যার মুখে শুনি ওইটার নাম তীব্র। হে রে তুই এই নাম পাইলি কোথা থেকে? ”
—– ” তীব্র না ড. রায়হান নাকি Sr কি আসে যায় মানুষটা তো এক। ”
সানির আর সহ্য হল না। তুরের ক্ষেত্রে ও যতটা ধৈর্য দেখিয়েছে অন্য কোন সময় এতটা ধৈর্য ছিল কিনা জানা নেই। না চাইতেও তুরের সবকথা শুনে যাচ্ছে। অন্য কেউ হলে বলত, ” ক্ষেমা দে মা। মরলে মর এই অধমরে আর জালাইস না। ” আর কি বা করবে বেচারি এমনি মরা তাই এইটুকু ধৈর্য ও সয়েই নিল।
তারপর আর কি নিজের সাথে বাইক নিয়ে এসেছিল সেই বাইকে করে রওনা দিল থানায়। থানায় পৌঁছাতে শাওন তুরকে দেখে বেশ অবাক হলো। তারপর বলল,
——- ” তুমি এখানে? আর সানি তুই ওকে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন?”
—— ” দায় ঠেইকা মরছি না। এইজন্য নিয়া আইছি। আমার বিয়া করা বউ। তাই আবদার করছে ফেলাইতে পারি নাই। ”
অনেকটা রেগে ব্যঙ্গ করে বলল। সানির এমন কথায় শাওন পরিচিত তাই কিছু বলল না। তাই তুরকেই জিজ্ঞেস করল। তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই সানি বলল,
——- ” হো কর কর, ভালো কইরা জিগা হঠাৎ কইরা লাল কাপর দেখাইয়া ষাড়ের গুতা খাওয়ার শখ কেন জাগছে? যা খাইছিল তা কম হইছে নাকি? আরে ও যদি আমার কেউ হইত সত্যি গলা চাইপা মাইরা লাইতাম। সালা মাইয়া মানুষ বলতেই ঝামেলার গোঁড়া।”
——- ” ওনার কথা ছাড়ুন শাওন ভাইয়া। আমি তীব্রের না মানে ওনার সাথে দেখা করতে চাই।”
——- ” এই দেখ দেখ কি মাইয়া। আমার কথা ছাড়তে বলছে। কত ভালো চেনে আমাকে। আমার গার্লফ্রেন্ড গুলাও এত প্যারা দেয় নাই আর এই ছেমরি। ”
শাওন খুব ভালই বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে নাহলে এই অবস্থায় সানি তুরের উপর এতটা ক্ষেপত না।
——- ” তুর তুমি বার বার কেন ওই লোকটার সাথে দেখা করতে চাও। ”
——-” দরকার আছে। প্লিজ ভাইয়া। ”
—— ” হুমম। ওকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে। তবে তুমি সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে। ”
—— “জি। ধন্যবাদ। ”
তারপর ও সানিকে ওর সাথে যেতে বলে কিন্তু সানি কোন গুরুত্ব না দিয়ে নক কামরাতে থাকে। তাই তুর জোর ওর হাত ধরে জোর করে নিজের সাথে নিয়ে যায়। এটা দেখে শাওন বেশ অবাক হয়। কারন ও সানিকে চেনে ও যা বলবে তাই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তুরের কথায় না চাইতেও সব করছে।
সেলের চারদিক অন্ধকার। তীব্রকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে দেখে তীব্র উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। পায়ের আওয়াজে তীব্র সামনের দিকে তুরকে দেখতে পেয়ে নিজের শরীরের ভালভাবে ঢেকে নেয়। যাতে ওর শরীরের আঘাত তুর না দেখে।ওকে এখন এসব দেখাতে চায় না তীব্র। ওকে দেখে এক ঝলক খুশি নিয়ে সেলের শিকের কাছে আসে শিক ধরে। কিন্তু চাওয়া সত্ত্বেও বাইরে বেড়িয়ে তুরকে ধরতে পারে না। তুরকে দেখে খুশির ঝলক ফিরে পেলেও সেটা মুহুর্তেই রাগে পরিনত হয় কারন তুর সানির হাত ধরে আছে। তীব্রের মুখ দেখে ব্যাপারটা বুঝল তুর। ও নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তা ছেড়ে দিল। তারপর ধীর পায়ে তীব্রের কাছে গেল। তুর সেলের শিকে হাত রাখতেই। তীব্র সেই হাতটা নিজের মুষ্টিতে আবদ্ধ করতে ওর ধরা হাতেই হাত রাখল। তুর শান্ত চাওনিতে বলে উঠল,
——- ” এটাই চেয়েছিলেন না আপনি? আমি আপনার কাছে ছুটে আসি। বাধ্য হই আপনার কাছে ফিরতে দেখুন আমি এসেছি। ”
তীব্র যা শুনতে চেয়েছে তাই বলছে তুর। কিন্তু ওর কথাগুলো যেন তীব্রের কেমন লাগল?
——-” তুর আমি…. ”
——-” হুসস। আপনি কিছু বলবেন না। আমি বলতে এসেছি আজ। আর এটাই বলতে এসেছি আপনি জিতে গেছেন। আমি এসেছি আপনার কাছে। ”
——- ” তুর তুমি?”
——- ” আমি কি? কি আমি? এটাই তো আপনার প্লান ছিল। যাতে আমি কোনদিন আপনাকে ছেড়ে যেতে না পারি। আচ্ছা বলুন তো কি পেয়েছেন আপনি আমার মাঝে যার কারনে এতকিছুর পর ও আপনি আমাকে ছাড়তে পারলেন না। বরং আরো নোংরা হতে লাগলেন। ”
—– ” তুর। ”
—– ” আপনার কি মনে হয় আপনার এই চালে আমি আপনাকে সফল হতে দিব? কখনো না। ”
—– ” কী বলছ তুমি? ” সংশয়ের দৃষ্টিতে।
তখনি একটা কাগজ তীব্রের সামনে ধরল। তীব্র কাপা কাপা হাতে কাগজ টা খুলল। খুলতেই কাগজটা পরে গেল। আর তীব্র প্রচন্ড রেগে গেল।
—– ” এসবের মানে কী তুর? ”
—– ” আপনার কি মনে হয় আপনার পাপের ফসল আমি নিজের মধ্যে লালন করব?”
—– ” তুর….? ” প্রচন্ড রেগে চিতকার করে।
পেপারটা বেবি এবোশন করার জন্য ছিল। কবে করা হবে তার ডেট দেওয়া হয়েছে। তীব্র প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলে,
—— ” দেখ তুর আমি তোমার সব কথা শুনেছি। তোমার দেওয়া সব শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি। তাই তুমি…..?
—— ” তাই। তাই কী তীব্র? ( চিতকার করে ) আপনি আপনার কর্ম ফলের শাস্তি পাচ্ছেন। আমাকে কিসের শাস্তি পেতে বলছেন? ”
—— ” আমি যা করেছি তাতে এই বাচ্চার কোন দোষ নেই। ”
—— ” আমারো তো কোন দোষ ছিল না তীব্র। ”
—— ” তুর… ( নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে তীব্র। নিজের ঠোঁট কামরে রাগটাকে কন্ট্রোল আনতে চাইছে। ) তুর… বাচ্চাটা নির্দোষ। বিশ্বাস করো আমি খুব করে চাই ওকে। তুমি জান না ও কতটা ইমপোর্টেন্ট আমার জন্য। আমি কতটা খুশি তুমি জান না। তুমি যা বলবে….. ”
——- ” আমি খুশি নই তীব্র। খুশি নই আমি। আমি পারব না। আমি পারব না আপনার অস্তিত্বকে নিজের মধ্যে ধারন করতে। ”
—— ” তুর ও শুধু আমার নয় তোমার ও…. ”
—— ” তাহলে আমার ইচ্ছে শেষ তাই না। ওকে রাখব নাকি…..”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই তীব্র ওর গলা চেপে ধরল। মুহুর্তেই তুরের কাশি উঠে গেল। সানি এসে তুরকে ছাড়াতে চাইল কিন্তু পারল না। চেচামেচি শুনে শাওন আসতেই ওর মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো, “Oh my God.” তীব্রের ছাড়ার নাম নেই।
——- ” অনেক হয়েছে তুর। অনেক শুনেছি আর না ব্যস। এবার সহ্যের বাঁধ ভেঙেছিস তুই। এই বাচ্চার যদি কিছু হয় তাহলে আমি তোকে কি করব তা আমি নিজেও জানিনা।
শাওন সেলের দরজা খুলে ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। তুরের চোখ বন্ধ হয়ে আসতেই তীব্র ওকে ছেড়ে দেয়। আর ইন্সপেক্টর শাওন ওকে ওভাবেই মারা শুরু করে। কিন্তু তীব্র তখনো তুরের দিকে রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
তুর কাশতে কাশতে হাপিয়ে গেছে। কোন রকম জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে তুর বলতে লাগল,
—— ” দেখিয়ে দিলেন না নিজের আসল রুপ। আপনার অংশকে তো রাখবই না। আর এটাও বলে রাখি আমি সানিকে বিয়ে করব। আর আপনি কিচ্ছু করতে পারবেন না। ”
কথাটা শুনেই সানির হাত আলগা হয়ে এলো। ও এতক্ষন তুরকে ধরে রাখলেও এই কথা শুনে হাতটা ছুটে যেতেই ও আবার তুরকে ধরল। এটা শুনে যেন তীব্র আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠল। কয়েকজন মিলেও তীব্র কে ধরে রাখতে পারল না। তীব্র চিতকার করে বলতে লাগল,
—— ” এই বেবির যদি কিছু হয় খোদার কসম কেটে বলছি তুর৷ তুমি তোমার ফ্যামিলির চিহ্ন আমি মুছে ফেলব। আমার এই বাচ্চাটা চাই। আর সাথে এখন তোমাকেও”
—— ” সানি নিয়ে যা ওকে। ও বাইরে বেড়লে আটকে রাখা যাবে না।”
সানি এতক্ষন একটা ঘোরে ছিল। শাওনের কথায় হুশ ফেরে। তুর ঘাড় ত্যারার মত ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। সানি কোন মতে ওকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়েছে। আর তীব্রে আরো বেশি ভয়ানক হয়ে উঠেছে। ওকে থামাতে না পেরে শাওন আবার ওকে মেরেছ। ওর মুখে তখনো একটা কথাই ছিল আমার বেবিকে আর তোমাকে চাই তুর।
★———————–★———————–★
তুরকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসেই সানি খুব জোরেই তুরকে একটা থাপ্পড় মারে। তুর গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে সানি ওকে ঝাকিয়ে বলে,
——- ” ভিতরে এসব কি ছিল তুর? ”
——- ” সরি সানি। আমি তোমার নামটা ইউজ করলাম। ”
কথাটা শুনে আরেকটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে ওর। কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে বলল,
——- ” আমি ওই কথায় তোকে মারিনি। আমি এই জন্য মেরেছি তীব্রকে মিথ্যে স্লিপ দেখালি কেন? যদি সত্যি হত তাহলে কিছু বলতাম না। কিন্তু বেবি এবোডের মিথ্যে কথা বলে তীব্রকে কেন ক্ষেপালি। ”
নিশ্চুপ তুর……
——- ” আহত বাঘকে ক্ষেপিয়েছিস তুই তুর। তীব্র এতদিন চুপ থাকলেও এবার চুপ থাকবে না। ”
তুর কিছু বলতে পারল না। ওখানে বসে কেদে দিল।
——-” আমি জানিনা। যাহহহ মনে হয়েছে তাই করেছি। ”
ওখানে এতক্ষনে অনেক মানুষ জমা হয়ে গেছে। এটা দেখে সানি ওকে ওখান থেকে উঠতে বলল। কিন্তু তুরের সায় পেল না। তাই জোর করেই তুরকে উঠিয়ে বাইকে বসিয়ে দিল। তারপর ওকে নিয়ে চলে গেল।
ওদিকে তীব্রকে থামাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বেধে রেখেছে।
নদীর পাড়ে পাথরের উপর বসে আছে সানি আর তুর। সানির হাতে একটা ক্যান আর তুর শান্ত চোখে সমুদ্র দেখছে। আর গলায় ঠান্ডা ক্যান ছোয়াচ্ছে। ও খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে আজকের কাজের ভয়ানক মাসুল ওকে দিতে হবে। ও এটাই দেখতে চেয়েছিল এই বাচ্চাটা নিয়ে তীব্রের ফিলিংস। কিন্তু যা দেখেছে তাতে ওর পশম দাঁড়িয়ে যাবার উপক্রম। তুরকে এভাবে ভাবতে দেখে সানি ক্যানে চুমুক দিয়ে বলল,
——- ” হ্যারে ওনাকে যে বললি আমাকে বিয়ে করবি কথাটা কি সত্য। ”
এইটা শুনে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকায় তুর। তারপর এক প্রকার হেসেই বলে,
—— ” তোমাকে কে বিয়ে করবে? তুমি যে ছেলে। ”
মজা নিয়ে বলল তুর। এইটা শুনে সানি একটু থেমে গেল। তারপর বলল,
—— ” এই ঝামেলা পোহানোর চেয়ে আমার মনে হয় তোকে বিয়ে কইরা তীব্রকে গিয়ে বলতে ভাই দেখ তোর জুলিয়েটরে আমি বিয়ে করে ফেলছি তুই এবার ওরে ছাড়। আমাগো সংসার করতে দে। ”
এইটা শুনে তুর না হেসে পারলই না।
—— ” সেইটা যদি হয় আল্লাহ জানে ওই মিডনাইট ম্যান কি করে? এইসব মজা ভুল করেও কইরো না। ভয় লাগে। ”
এইটা শুনে সানি কিছুটা অপ্রস্তুত হয় তারপর বলে,
—— ” আমি কিন্তু মজা করছি না সিরিয়াসলি বলছি। তোকে বিয়ে করে নিলে কেমন হয়? ”
কথাটা শুনেই তুর দাঁড়িয়ে যায়।
—— ” এমনটা মুখেও এনোনা সানি। যে লোক এত কিছুর পর ও আমাকে ছাড়েনি। এমনকি আমার কথা রাখতে জেলে চলে গেছে। সে আমাকে এত ইজিলি ছাড়বে ভেবেছ। কখনো না।এটা আমি বুঝে গেছি আমাকে মেরে ফেলতে হাত কাপপে না কিন্তু আমাকে ছাড়বে না।”
——- ” তুই কি ছাড়বি ওনাকে? ”
——- ” মানে? ”
——- ” কিছুনা। ( মিথ্যে বলে লাভ নেই। আমি খুব ভালো করেই জানি তুই চাইলেও তীব্রকে ভুলতে পারবি না। এত কিছুর পর যে তুই ওই লোকটাকে ভুলতে পারবি না আমি জানি। অন্যায় করলেও তোর ভালোবাসার প্রথম ছোয়া সেই রে তুর। কিভাবে ভুলবি?)”
——- ” এই সানি কী ভাবছ?”
——- “ হ্যা । না কিছুনা চল এবার অনেক লেট হয়ে গেছে । একটু পর ঠান্ডা পরবে তোর জন্য ঠিক না। “
——- “ হুমম।”
★———————–★———————–★
ওদিকে তীব্র এক পুলিশের লোক দিয়ে রিদ্ধকে খবর পাঠায় যাতে ওর সাথে দেখা করতে আসে। রিদ্ধ কোর্ট অর্ডার নিয়েই আসে। রিদ্ধ সেলে তীব্রের অবস্থা দেখে প্রায় কেদেই দেয়……
—— ” স্যার আপনার এই অবস্থা!”
তীব্রের অবস্থা খুব খারাপ। ও ঠিক মত দাঁড়াতে পারছে না। ও কষ্ট করেই সেলের কাছে আসে। এই টুকু এসেই হাপিয়ে গেছে৷ চোখ বার বার বন্ধ হয়ে আসছে৷ মুখ দিয়ে লালার মত কিছু পরছে। অনেক কষ্টে দুলতে দুলতে বলে,
—— ” আমার শাস্তি শেষ আমি এখান থেকে সসন্মানে মুক্তি চাই।”
—— ” কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? আপনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন। তাছাড়া আমি যার কাছে গেছি সেই বলেছে আপনি যেহেতু নিজের দোষ নিজেই স্বীকার করেছেন তাই কারো কিছু করার নেই। ”
এইটা শুনে তীব্র সেলের শিকে হাত রাখে তার পিঠে মাথা রেখে বলে,
——– ” তাইত আমি তো নিজেই দোষ স্বীকার করেছি। তাইলে এখন কি হবে? ”
তীব্রের কথার আগা মাথা পেল না রিদ্ধ। ও বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল
——– ” মানে? ”
এইটা শুনে তীব্র একটা পৈশাচিক হাসি দেয়।এই হাসির শব্দে কেপে রিদ্ধ। তীব্র তখন কর্কশ গলায় বলে,
——- ” আমি যখন নিজের দোষ স্বীকার করেছি তাহলে নিজের নির্দোষ হওয়ার কথা বলতে পারব না। ”
——- ” কিন্তু স্যার…… ”
——- ” পুলিশ কমিশনারকে বলে আমাকে শাওনের জেল থেকে অন্য জেলে নেওয়ার ব্যবস্থা করো। বাকিটা আমি বুঝে নিব। ”
——- ” ওকে স্যার।”
——- ” রিদ্ধ শোন….”
তারপর রিদ্ধকে কিছু বলে।
—— ” স্যার সত্যি আপনি এটা করবেন?” হাসি ফুটিয়ে…..
—— ” হুমম। ”
রিদ্ধ বেশ খুশি হয়েই চলে যায়। তীব্র খুব শান্ত হয়েই সেলের শিকে হেলান দিয়ে বলে,
——- ” দ্যা গেইম ইজ স্টার্ট নাও। আমাকে রাগিয়ে একদম ভালো করোনি তুমি তুর। তুমি এবার দেখবে তীব্রের ক্ষমতা। তোমার কথায় যেমন সবকিছু মেনে নিয়েছি তেমনি সবকিছু মানিয়ে নিতেও দেখবে এবার। আদালতে যদি তোমাকে নিজের আপন করে নিতে না পারি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে তবে আমি তোমার তীব্র নই।’’
.
.
.
.
.
.
★———————–★———————–★
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
🙄🙄🙄🙄🙄 আমার সমস্যা নেই কালকে আপনাদের জন্য স্পেশাল কিছু ওয়েট করছে। দেখা যাক কি হয়🙁🙁 তবে আমি ভয়ে আছি। আল্লাহ মালুম কালকে কি হয়? 😣😣 কারন আমার নিজেরি টেনশন হচ্ছে। 😐😐 না না তুরকে নিয়ে না ওকে আমি খরচার খাতায় রাখছি। টেনশন আপিনাদের নিয়ে হচ্ছে।নেক্সট পার্ট পইরা আপনারা আমাকে না কচুর লতি দিয়ে পিটান😭😭 আচ্ছা যাই হোক।ওয়েট ফর নেক্সট। আমি মনকে বুঝাই রাখচি😷😷😷
★———————–★———————–★
[ বিঃদ্রঃ নাইস, নেক্স না লিখে গল্পের ভালো খারাপ দিক গুলো তুলে ধরুন। গল্পের কাহিনী, লেখা, ত্রুটি বা অসামঞ্জস্যতা, বাক্য বুঝতে বা লেখায় ভুল হলে এড়িয়ে না গিয়ে দয়া করে বলুন। এতে আশা করি আমার লেখার মান ভালো হবে & আপনাদের জন্য আরো ভাল কিছু রাখতে পারব।
★———————–★———————–★
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèrr