বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-৫২

0
1806

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#Part: 52 & last part…..

🖤…………

অন্ধকারের মধ্যে মোম জ্বালিয়ে শাওয়ার নিল তুর। ওর মনে হচ্ছে তীব্র ওকে জব্দ করার জন্য এসব করছে। যাই হোক, শাওয়ার নিয়ে পিং টাওয়ালে নিজেকে আবৃত করে চুল ঝারতে ঝারতে বাইরে আসে । কিন্তু বেড়িয়ে তীব্রকে বেডে বসে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরে।

“ আপনি…”

তীব্র বিছানায় বসে, হাতে থাকা কিছু একটা দেখছিল। তুরের আওয়াজে পিছনে তাকাতেই, মোমের আবছা আলোয় পুতুলের ন্যায় জ্বলন্ত এক মুখ ওর সামনে আসে। অদ্ভুত এক মোহনীয়তা গ্রাস করে তীব্রকে। এ যেন এক ভিন্ন নেশা। তীব্র নিজের স্থান ছেড়ে তুরের কাছে গিয়ে ওর চিবুক স্পর্শ করে। তুর হঠাৎ তীব্রের এহেন আচরণের বেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পরে। তুরের মুখটা নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে কাছে টানতেই তুর ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দেয়।

ও কিছু বলার আগেই তুর বলল, “ আমি সকালেই আপনাকে যা বলার বলেছি তীব্র। তাই দয়া করে আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না যাতে আপনার খারাপ লাগে।”

তুরের এহেন আচরনে হুশ ফেরে তীব্রের। নিজেকে সামলে তুরের দিকে তাকায়। তুর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তুরকে দেখে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হচ্ছে৷

তাই তুরের কথার প্রতুত্তর না করে বেড়িয়ে যেতে নেয় তীব্র। তখনি তুর ডাকে।

“ তা.তাই…তাইয়্যান কোথায়? আর আপনি এখনো শাওয়ার নেননি?” ওর ডাকে দাঁড়িয়ে গেলে তুর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আবার বলে, ” না মানে এখনো চেঞ্জ করেননি তাই … ”

“ তাইয়্যানকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়েছি। ও খাবার টেবিলে। অন্ধকার তাই আমি তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম। “ গম্ভীর কন্ঠে বলে বেড়িয়ে যায় তীব্র। তুর ডাকতে গিয়েও থেমে যায়।

কিছুক্ষনপর, তুর তৈরি হয়ে খাবার টেবিলে যায়। অনেকটা জার্নি করেছে। ক্লান্তিতে তাইয়্যান ঘুমে পরে যাচ্ছে। তাই তীব্র ওকে কোলে নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে। তাইয়্যানকে খাওয়ানো শেষ করে তুরের দিকে চোখ পরতেই দেখে তুর কিছু না খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে চুপচাপ না খেয়ে উঠে যায় তীব্র। তাইয়্যানকে কোলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়। তাই তুরের পেটেও কিছু গেল না।

রুমে গিয়ে দেখে তাইয়্যানকে বিছানায় শুইয়ে তীব্র চলে গেছে৷ ও গিয়ে তাইয়্যানের পাশে শুয়ে পরে। তাইয়্যানকে জড়িয়ে ভাবতে থাকে, তখনের কাজটা ঠিক কিনা? বিয়ের পর এই প্রথম তীব্র ওর কাছে এসেছে। আর ও… পরক্ষনেই আবার ভাবল যা করেছ ঠিক করেছে। যা বলার তীব্রকে আগেই বলেছে তাহলে কেন নিজেকে দোষী ভাবছে? দোষটা তীব্রের ছিল।

ক্লান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় নিজেও জানে না।

,
.
,
,
,
.
,
🖤…………
হঠাৎ করেই ঘুমের মাঝেই নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করে তুর। মাটিতে ভর নেই। শূন্যে ভাসছে। হালকা লাগছে নিজেকে। ঘুম চোখে একটু-আঁধটু চোখ খোলার চেষ্টা করে। চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে আছে। খুলতে ইচ্ছে করছে না। অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে৷ ভালোলাগা নাকি খারাপ লাগা তা হয়ত বলে বোঝাতে পারবে না।

কিছুক্ষনবাদে, মনে হলো তুরের, থেমে গেছে পৃথিবী। এতক্ষন উড়লেও এখন ও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে শূন্যে ভাসছে। অস্বস্তি হচ্ছে। আর পারল না বন্ধ চোখে। এমন অনুভুতির কারন জানতে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তুর।

চোখ নিজের আবরণ উপরে তুলতেই আবিষ্কার করে ভয়ংকর নেশায় আছন্ন দু’টো দৃষ্টি । সচকিত হয় তুর! এতক্ষনে অনুভুতির স্বর্গ থেকে মাটিতে পদার্পন হয়। ও তীব্রের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শূন্যে ভাসছে। তুর নিজের আশ-পাশটা দেখে নিল। কোথায় আছে ? ও তো তাইয়্যানের পাশে শুয়ে ছিল। আবছা অন্ধকারে বুঝতে পারছে তীব্র সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। তখনি মেঘ ডাকার বিকট শব্দের সাথে ক্ষনে ক্ষনে রুপোলি আলোর সুক্ষ রেখায় আলোকিত হচ্ছে তীব্রের মুখ। তীব্রের দৃষ্টিতে দৃষ্টি পরতেই বুক কেঁপে উঠে । কেমন এক গভীর মোহনীয় ঘোড়েল চাহনি! যা আগে দেখেনি… তীব্রের মাঝে।

” তীব্র আপনি… ” তুরের গলা শুকিয়ে আসছে তীব্রের এমন চাহনিতে। মুখগহ্বরের যেন বিন্দুমাত্র তরল অবশিষ্ট নেই কণ্ঠনালী ভেজানোর জন্য। শুষ্ক গলা ভেজাতেও পারছে না। দু-একটা ব্যার্থ ঢোক গেলার চেষ্টার শব্দ পেতেই তীব্র ওর মুখটা এগিয়ে এনে ভিজিয়ে দেয় তুরের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া। পরম আবেশ ছোঁয়ায় তাতে। এই অনুভুতির ব্যাক্ষা তুরের কাছে নেই। ক্রমশ নেশায় মাতাল হয়ে যাচ্ছে। সেই নেশা কাটিয়ে উঠতে চাইলেও মন, মতিষ্ক, শরীর কোনটাই আজ সায় দিচ্ছে না। সবটাই ওর বিপক্ষে।

তবুও তীব্রের উষ্ণ ছোঁয়া থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টায় । কিন্তু তীব্রের শার্ট আকঁড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নাকি সামলানোর; অজানা তুরের। নেশায় কাতর হয়ে যখন হয়রান তুর। তীব্র কোমলভাবে সরে আসে ওর অধর থেকে। ছেড়ে দিতেই আরো জোরে শার্ট আকঁড়ে বন্ধ চোখে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে তুর। তীব্র সিগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তুরের বন্ধ চোখের দিকে। পরন্তু তুরের সে অবস্থা নেই।তা দেখে বাঁকা হাসি ফুটল তীব্রের ঠোঁটে…

তুর জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে উঠল, ” ছাড়ুন আমাকে তীব্র… ”

তুর আর কিছু বলার আগেই তীব্র নিজের হাত আলগা করে। পরে যাওয়ার ভয়ে তৎক্ষনাৎ চিৎকার করে গলা জড়িয়ে ধরে তীব্রের।

তীব্র ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে আলত ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, ” তুমি যখনি তীব্র নামে ডাক। কিছু করতে নিষেধ করো। পাগল হয়ে যাই আমি। তা করার জন্য। তাই বেটার এটাই তীব্র ডেকে কিছু নিষেধ করো না। নিষিদ্ধ কিছুই বেশি চিনতে, জানতে, চাইতে ইচ্ছে করে…”

তীব্রের কণ্ঠে অদ্ভুত এক নেশা। তুরকে তা যেন আরও বেশি নেশায় জড়িয়ে দিচ্ছে। আর কথা বাড়ায় না তীব্র। ঠিক একইভাবে ওকে জড়িয়ে ধীর পা সামনে বাড়ায়।

তুর দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে আছে ওর সিগ্ধ চেহারার দিকে। তীব্রের দৃষ্টি সামনে।

তুরের মনে একটা-ই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তীব্র ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে? কিছুটা পথ অতিক্রম করে থেমে যায় তীব্র। তুর এতক্ষন নিরব চাহনিতে থাকলেও থেমে যাওয়া তীব্রের দৃষ্টি অনুসরন করে সামনের দিকে তাকায়, মূহুর্তেই সে চাহনি প্রশ্নসূচক হয়ে দাঁড়ায়। তীব্র ওকে সুইমিং পুলে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন? তাও এত রাতে? ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তীব্রের দিকে। এত রাতে এখানে কেন? যেকোন সময় বৃষ্টি নামবে। আকাশের যা অবস্থা। তারউপর তাইয়্যান তো রুমে একা।

তুরের ঠোঁটটা কিছু বলার জন্য কেঁপে উঠলেই তীব্র ওর মুখ টেনে এনে বলে, ” বলেছি না ‘ না ’ শুনতে চাইনা। “ তীব্রের নিশ্বাস বারি খাচ্ছে তুরের মুখে।

ওর এহেন কথায় প্রশ্নমাখা তুরের মুখে উদগ্রীবতা প্রকাশ পাচ্ছে। যে প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে না করে তীব্র।

পরক্ষনেই, তীব্রের ঠোঁটে রহস্যময় হাসির রেখা দেখতে পায় তুর। কারন উদ্ধারের আগেই চিৎকার করে উঠে ৷ কারন তীব্র সুইমিং পুলের জলে ছুঁড়ে মেরেছে ওকে।

তুর পানিতে বাঁচার জন্য ছটফট করছে। তীব্র জানে ও সাঁতার জানে না। তবুও এই কাজ কেন করল? তাহলে কী ওকে মারতে চায়? কিন্তু কেন?

তুরের এই অবস্থা দেখে তীব্র ঠোঁটের রহস্যময় হাসি বজায় রেখেই নিজের শার্টের বাটনে হাত দেয়… বা হাতে এক এক করে খুলে নেয় বাটনগুলো…

ওদিকে বাঁচার জন্য ছটফট করতে থাকা তুরের শ্বাস শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আর পারছে না। নিজের শক্তি হারিয়ে সলিল সমাধি স্বীকার করা তুর পরক্ষনেই আভাস পায় পানির উপর ভাসছে ।

না… পানি থেকে উঠেনি কিছুর উপর ভর দিয়ে শুধুমাত্র পানির উপর মাথা উঠিয়ে আছে। প্রান ফিরে পায় দেহে। জীবন বাঁচানো বস্তুটিকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে শ্বাসের গতি স্বাভাবিক করতে চায়।

বেশ কিছুক্ষন এভাবে জড়িয়ে থাকার পর তুর মুখ তোলে। যা দেখে তাতে অবাক হয়! রেগেও যায় প্রচন্ড। রাগে ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পরছে পানি।

তীব্রের বুকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে চায় নিজেকে। কিন্তু ওকে টেনে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে তুরের গলায় ঠোঁট ছোঁয়ায় তীব্র। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকে তুরকে। তুর ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলে আরো বেশি উন্মাদ হয়ে যায় তীব্র।

ওর এহেন আচরণে তুরের রাগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে তীব্রের কাঁধে। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রু-ক্ষেপ নেই তীব্রের। তুর বেশি পাগলামি শুরু করলে , তীব্র নেশা থেকে বেড়িয়ে নিজের কাঁধ দেখে। ধারালো নখের আঘাতে রক্ত মিলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। ও আরো কাছে টেনে নেয় তুরকে। তুরের এই রুপটাই যেন দেখতে চেয়েছিল ।

তুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তীব্র বলে উঠে, ” নিজের আশ-পাশটা দেখে নেও। আমাকে ছেড়ে গেলে তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবে না। ”

কথাটা শুনে শান্ত হয় ও। তীব্র সুইমিং পুলে মরার কথা বলে অন্য কিছু ইঙ্গিত করছে। তুর যে তীব্রকে ছেড়ে থাকতে পারবে না সেই ইঙ্গিত।

পুলের পানি তুরের মুখ পর্যন্ত হলেও তীব্রের বুক পর্যন্ত। ও তীব্রের গলা জড়িয়ে ওর মুখোমুখী। তুর আস্তে আস্তে তীব্রকে ছেড়ে দিলে, তীব্র ওর পিঠ জড়িয়ে উঁচু করে নেয় তুরকে।

কিছুটা রেগে বলে, ” মরতে চাও নাকি? ”

” ভয় নেই। জানি মরতে দিবেন না। ”

স্পষ্ট উত্তর তুরের। তাতে হালকা হাসল তীব্র। তখনি আকাশ থেকে ঝুমঝুমিয়ে অঝোর বর্ষন শুরু হয়। একহাতে তুরকে জড়িয়ে নিজের মাথাটা ঝাড়া দিয়ে বলে, ” সেদিনের মতই প্রকৃতি আজ আবার চাইছে তুমি আমার সাথে ভেজ। আর সেদিনের মত আজ আমি চাইছি আমার ভালোবাসায় তোমাকে ভেজাতে। ”

তুরের মুখে বিস্ময়ের ছাপ৷ এতক্ষন পর তুরের খেয়াল হলো ও যেন ৬বছর আগে সময়ে আছে। পরিবেশ, পরিস্থিতি সবকিছুই একই রকম। কিন্তু কীভাবে? ও তো তখন বাংলাদেশে ছিল। আর এটা অস্ট্রেলিয়া। তাহলে কীভাবে সবকিছুর অনুভূতি একই রকম হয়? ”

ভাবনায় বিভোর তুরকে একহাতে জড়িয়ে আরেকহাতে ওর চুলের ঝুঁটি খুলে দেয় তীব্র। তুর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষনেই সিগ্ধ চোখে ওর দিকে চেয়ে পানিতে একটা ডুব দেয় তুরকে নিয়ে। পানিতে তুরের ধম বন্ধ হয়ে আসলে তীব্র পানি থেকে উঠে। তুর মাথা ঝারলেও চুল গুলো সম্পূর্ন লেপ্টে আছে মুখে। তীব্র গাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে সাঁতরে ওকে পাড়ে নিয়ে বসিয়ে দেয়।

তুর রেগে গজগজ করতে করতে বলে, ” আপনি জানেন আপনি কত বড় একটা নির্লজ্জ, বেহায়া। আমি আপনাকে বলেছি আমার কাছে আসবেন না । আর আপনি? ”

তুরের কথা শুনে হেসে উঠে তীব্র। তা দেখে তুর কিংকর্তব্যবিমুঢ়! ও হাসির কিছু বলেছে? তীব্র পানিতে দাঁড়িয়ে কনুইয়ের ভর মাটিতে দিয়ে গালে হাত দেয়।

ভাবান্তিত কণ্ঠে বলে, ” তুমি তো সৌহার্দ্যকে না তীব্রকে চেয়েছিলে। আর তীব্র কবে তোমার কথা শুনেছে। সে বরাবরের মত নির্লজ্জ। বরাবরের মতই আজকেও তোমায় বাধ্য করবে ভালোবাসতে। ”

” এইজন্যই আপনি নির্লজ্জ। ”

হেসে উঠে তীব্র, ” আগেই বলেছি লজ্জা মেয়েদের ভূষন। আর লজ্জা পেলে নিজেরি ক্ষতি। তীব্র কখনো নিজের ক্ষতি করে না। ”

এর পেক্ষিতে তুর কিছু বলল না। তা দেখে তীব্র বলে বসল, ” আমার নির্লজ্জতা যদি তোমার মুখের প্রসন্নতা দিয়ে যায় তবে আমি এমন নির্লজ্জ, বেহায়া হাজারবার হব। কারন তোমার প্রসন্নতায় আমি তুষ্ট তুর। ”

আর কিছু না বলে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে সাঁতার কাঁটতে যায়।

তুর সাঁতার কাটতে থাকা তীব্রের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাবছে কী চায় তীব্র? কেন এমন করে? এতদিনেও মানুষটা বরাবরের মত অচেনা । পরক্ষনেই ভাবে, কিছু মানুষের স্বভাব নিজেকে লুকিয়ে রাখা। তাঁরা চায় কেউ তাকে খুঁজে বের করুক।

কিন্তু, তাঁরা সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিজেরা না চাইলে তাদের খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। কারন তাঁরা আকাশ সমান উঁচু সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। জানার জন্য তাদের অগ্নি গহ্বরের গভীরে প্রবেশ করা মানে নিজেকে জ্বালানো। যাদের শীতল লাভা রুপটা মূল্যবান ধাতব সৃষ্টি করলেও সুপ্ত লাভা শুধুই বিনাশের কারন।”

তীব্র তাদের একজন। এই লোকটাকে বুঝতে চাওয়া অন্যায়। তাই তুর কিছু না ভেবে দীর্ঘশ্বাস টেনে সেখান থেকে উঠতে যায়। কিন্তু অসাবধানতায় পা পিছলে যায় তুরের। “ তীব্র “ বলে চিৎকার করে আবার সেই জলে…

তুরের চিৎকারে তীব্র দ্রুত এসে ওকে জড়িয়ে নেয়।

“ আমার সঙ্গ চাও বললেই তো হয়। ভাব দেখাতে গিয়ে এমন বোকামি করার কী আছে? “

তুর কিছু বলতে গিয়েও বলল না। বলে লাভ নেই। তীব্রকে কিছু বোঝানো যাবে না। ভাববে ও ইচ্ছে করে পানিতে পড়েছে। সত্যিটা বললেও মিথ্যে মনে হবে। তাই সত্যি বলে নিজেকে হাসির পাত্র না বানিয়ে, নিরব থেকে তীব্রের অপবাদ স্বীকার করাই উত্তম।

কিন্তু পরক্ষনেই বুঝল বোকামি করেছে ও। তীব্র ইচ্ছে করে ওর পরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।

” কী ভাবছ বোকা পাখি? ”

তীব্রের ডাকে ঘোর ভাঙে তুরের। ” কিছুনা যেতে দিন। আমি…. ”

” চুপ…. ” আঙুল রাখে তুরের ঠোঁটে। তুর আবার ওর চোখের মায়ায় পড়ে যাচ্ছে। তীব্র করুন কণ্ঠে বলল, ” তুর… আমি এতগুলো বছর তোমাকে ছেঁড়ে দিলাম। তাতে কষ্ট কী শুধু আমার হয়েছে? তোমার হয়নি? ”

নিশ্চুপ তুর।

” জানি হয়েছে। আমার চেয়েও বেশি তোমার কষ্ট হয়েছে। আমার কাছে তো তাও তাইয়্যান ছিল। কিন্তু তোমার? ”

তীব্রের কথা ওর বুক চিঁড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। না চাইতেই ফুঁপিয়ে উঠছে। তা দেখে তীব্র ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের নিচে চুমো দেয়। তুর নিজেও জড়িয়ে ধরে ওকে। তীব্র আবার বলে উঠে,

” আমি জানি তুর। সেদিন রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সবটা স্বীকার করেছ তুমি। নিজের অজান্তেই আমাকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে। তাহলে আজ কেন দূরে… ”

তুর শব্দ করেই কেঁদে উঠে, ” আপনি নিজেই কাছে টেনে নেননি। দূরে থেকেছিলেন।”

” তাতে কী? আমি তোমার অধিকার তুর। তুমি চাইলে কী দূরে থাকতে পারতাম। একবার নিজের কাছে ডেকে দেখতে। ”

” কেন? আমি… ” তুরের কান্নাটা বেড়ে গেল। তীব্রের বুক থেকে নিজেকে ছাড়াতে পানির মধ্যে ইচ্ছেমত আঘাত করছে ওর বুকে।

” আপনি খুব খারাপ তীব্র। সবসময় নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। আমি কেন আপনার কাছে যাব? আমাকে জোর করে কে আটকে রেখেছে? জোর করে কে এসেছিল আমার কাছে?কে বিয়ে করতে চেয়েছিল? কে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে? এত অপমান, শাস্তি, অবহেলা এত কিছু সহ্য করার পর কেন চলে যায়নি? ”

আবার কাঁদতে লাগল তীব্রকে জড়িয়ে।

” তোয়া আপু আমাকে বলেছে, আমার মানসিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পর, সবাই আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। এমনকি আমিও…. তারপরেও কেন ফিরে এলেন? সেদিন বিয়ে থেকে পালিয়ে যেতে কেন দিলেন? কেন আটকে রাখতে পারলেন না? আজ তাহলে এত গুলো বছর আমাকে এত কিছু সহ্য করতে হত না। আর যখন আপনাকে নিজের করে পেয়েছি তখন বলছেন, আমি কেন আপনাকে ভালোবাসতে বলিনি? ”

ওর কথায় হাসি ফুটে উঠে তীব্রের মুখে। তুরের মুখটা তুলে ভেজা শীতল চোখে ঠোঁট ছুইয়ে বলে, ” এখন আফসোস করছ কেন? সেদিন পালানোর সময় মনে ছিল না। ”

করুন চোখে ওর দিকে তাকায় তুর। ” তখন কী জানতাম? খারাপ লোকদের হতে কিনে আনা একটা মেয়েকে পবিত্র করেই গ্রহন করেছিলেন? আমি তো ভেবেছি, আমার প্রতি আনন্দের মোহটাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিয়ে নামক বন্ধনের নাম দিচ্ছেন। আমি চলে গেলে আমাকে খুঁজবেন না আপনি। বরং নতুন কাউকে… এইজন্য পালিয়ে গিয়েছিলাম। ”

এইটা শুনে তীব্র ওকে আবার সুইমিংপুলের পাড়ে বসায়। তুর অনবরত কাঁদছে। ওর তুরের দু’হাত নিজের হাতের ভাজে নেয়। চুমো খায় তাতে। তারপর বলে, ” তারপর কী দেখেছিলে? তীব্র তোমার থেকে সবকিছু নিয়ে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে? নাকি তুমি পালিয়ে যাওয়ার পর খোঁজ করেনি? ”

তীব্রের এমন কথায় তুর কিছুক্ষন নিরব চাহনিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে তীব্র জিঙ্গেস করে,

” কী ভাবছ? ” তুর ওর দিকে চেয়ে আনমনেই বলে উঠল, ” আপনি সেদিন হোটেল থেকে আমাকে না নিয়ে আসলে কী হত আমার? আচ্ছা তীব্র আমি আজও বুঝলাম না। আপনি যদি আমাকে কিনেই নিয়ে আসেন তাহলে কেন এনেছিলেন? আর কীভাবে বিশ্বাস করব আমি আপনার জীবনের প্রথম মেয়ে। যাকে আপনি ভালোবেসেছিলেন… ওরকম স্থান থেকে কেউ ভালোবাসার মানুষ আনে? ”

ওর কথায় তীব্র কিছুক্ষন চুপ থাকে। তারপর শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ” আজ তোমাকে কিছু সত্যি কথা বলি তুর। “ একটা লম্বা শ্বাস নেয় তীব্র। তারপর বলে, “ আমি ভালোবাসার জন্য তোমাকে আনিনি । যদি বলি তুমি আমার কাছে জাস্ট একটা ভুল ছিলে। তাহলে…”

জিজ্ঞাসুর দৃষ্টিতে তাকায় তুর।

” হ্যাঁ, তুর। এটাই সত্যি। আমার সারাজীবনে একটা মাত্র ভুল হয়েছিল। আর সেদিন সেই ভুলের মাশুল দিতে আমি ওই হোটেলে যাই। আর সেখানে স্টেজে তোমাকে দেখে দ্বিতীয় ভুলটা করি। মায়ায় জড়ানোর ভুল। এই ভুলটা চাইলেও ভোলার না। তাই সেটাকে নিজের প্রাপ্তি করে নিয়ে এসেছিলাম নিজের সাথে। আমার #বন্ধ_দরজার_তুমি🖤 করে। ”

” তাহলে কেন আমাকে কোনদিন স্পর্শ করেনি? ”

“ ওই যে বললাম। তুমি আমার এমন ভুল ছিলে যা ভোলা সম্ভব না। আর না ছেড়ে দেওয়া। তোমাকে ছেড়ে দিলে তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যেতে। কারন তুমি তখনো আমাকে ভালোবাসনি। তাই তোমাকে #বন্ধ_দরজার_বন্দিনী🖤 করতে বাধ্য হয়েছিলাম।”

” কেন তখনই কী ভালোবেসে ফেলেছিলেন? তাহলে আমার সাথে ওমন রুঢ় ব্যবহার কেন করতেন?”

আলত হাসে তীব্র। ” তখনো তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসা অনেক পরের ব্যাপার ছিল। তবে রুঢ় ব্যবহার করতাম তোমার থেকে দূরে থাকার জন্য। কারন আমি বুঝে গিয়েছিলাম। যে কারনে তোমাকে আটকে রেখেছিলাম তুমি তার উর্ধ্বে চলে যাচ্ছিল আমার জন্য। তাই নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতাম। ”

” আমাকে যে কারনে আটকে রেখেছিলেন মানে? কেন? ” কিছুটা ভ্রু-কুঁচকায় তুর।

দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তীব্র। ” বললাম তো। একটা ভুল শুধরাতে হোটেলে যাই। আর মজার ব্যাপার, তোমাকে ওই অবস্থা দেখে মায়া নামক বন্ধনে জড়িয়ে সেই ভুলের মাশুল দি। আর আমাকে মায়ায় জড়ানোর শাস্তি স্বরুপ তোমাকে আটকে রাখি। মানে ভুল শুধরানোই আটকে রাখার কারন ছিল। “

“ আমি আপনার কথা বুঝলাম না। “

“ তাহলে এটা ভাব তোমাকে আটকে রাখার কারন নিজের একাকিত্ব দূর করা। তুমি আমার জীবনে আসার আগে আমি কাজের মাঝে ডুবে থাকতাম। যাতে একাকিত্ব আমাকে গ্রাস না করতে পারে। কিন্তু তুমি আসার পর আমি কাজের বাইরে একটু একাকিত্বকে চাইতাম। যাতে সেই সময়টা তোমায় নিয়ে কাঁটাতে পারি। ”

” তাহলে ভালোবাসলেন কবে? ”

আবার হাসল তীব্র, ” জানোত তুর, তুমি প্রথম মেয়ে ছিলে যাকে দেখার জন্য আমি একটু সময় খুঁজতাম। তোমার রুমে তোমাকে নজরে রাখার জন্য সিসিটিভি লাগায়নি। তোমাকে দেখার জন্য লাগিয়েছিলাম। আর জানো তো কাজের ফাকে যখনি একটু বেশি সময় বের করতে পারতাম তখনি হাজার মাইল পেড়িয়ে তোমার কাছে ছুটে আসতাম। যদিও তোমার সাথে রুঢ় আচরণ করতাম। শুধুমাত্র তোমার থেকে দূরে থাকার জন্য। যাতে তোমার কোন ক্ষতি না হয়? ”

” আমার উত্তর এটা নয় তীব্র। আপনি কবে আমাকে ভালোবাসলেন?”

” সত্যি বলতে তোমাকে ভালোবাসি এটা বুঝতে পেরেছি তুমি আমার থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর। ”

অবাক হয় তুর! ” তাহলে বিয়ে কেন করেছিলেন।”

” কারন তুমি আমাকে ভালোবেসে ছিলে। মনে পরে তুর। ”

নিশ্চুপ তুর।

” সত্যি বলছি আজ। ততদিনে আমি জেনে গিয়েছিলাম তুমি তোয়ার সেই বোন। ”

” এখানে তোয়া আপু আসল কোথা থেকে? ”

” আসলে আমি জানতাম তায়ান আমার জন্য ওর গার্লফ্রেন্ড তোয়ার বোনকে চুছ করেছে। আর তায়ানের কোন কথা আমি কোনদিন ফেলেনি। আর তোয়া যখন আমাকে তোমাকে খোঁজার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র দেয় তখনি আমি জানতে পারি তায়ান আমার জন্য যে মেয়েটাকে পছন্দ করেছে সে আর কেউ নয় তুমি। এটা ছিল প্রথম রিজন। ভালোবাসা নিয়ে উদাসীন থাকার কারনে বুঝতে চাইনি। কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছিলাম আমি তোমার প্রতি দূর্বল। এটা ছিল ২য় কারন। আর ৩য় কারনটা হল, আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা। ব্যস আর কী চাই? ”

” মানে? ”

” মানে আবার কী? ভুলে গেছ তুমি আমাকে বুড়ো বলেছিলে। মেয়ে জুটবে না বলে তোমাকে আটকে রেখেছি।”

মুখ ফুলিয়ে সম্মতি জানায় তুর।

” তোমার কথা শুনে টনক নড়ে আমার। আসলেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। ২৮ পার হয়ে যাচ্ছিল। আর বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। কিছু চাওয়া-পাওয়া সবার মত আমারো ছিল। বুঝোই তো বেসিক কিছু নিড সবার থাকে। তখন আর কী? নিজের প্রয়োজন আর ওই ৩টা রিজন মিলিয়ে দেখলাম আমার জন্য তুমি পার্ফেক্ট।আর সবকিছুই যখন রেডি তাহলে আর দেরি করে কী হবে? করে নিলাম বিয়ে। তাছাড়া আমারো তো বাবা হওয়া দরকার ছিল নাকি? না মানে, হসপিটালে বেবি হলে আমারো ইচ্ছে হত একটা বেবির।”

কিছুক্ষন চুপ থেকে তুর বলল, ” বিয়েই যখন করেছিলেন কেন বললেন না আমাকে? কেন নিজেকে অপরাধী ভাবতে বাধ্য করলেন? ”

তীব্র নির্বাক। এর প্রকৃত উত্তর তীব্র দিতে পারবে না। কিন্তু মনের উত্তর…

” ক্ষমা চাইছি। ভেবে নেও এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তবে বিশ্বাস করো, তোমার ১৮ বছর হওয়ার আগে কোনদিন খারাপ দৃষ্টিতে দেখিনি। “

” আমি জানি তীব্র। আর এইজন্যই আমি জন্মদিনে আপনার কথা শুনে অবাক হয়েছিলাম। আর যেদিন আপনি কোন সম্পর্ক ছাড়া…“

তুরের ঠোঁটে আঙ্গুল রাখে তীব্র। ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে করুন কণ্ঠে বলে, ” মনে আছে আমার, প্রথম যে রাতে তোমাকে নিজের অস্তিত্বে স্থান দিয়েছিলাম তার কথা। কিন্তু তোমার মনে আছে , আমাকে তোমার কাছে আসতে দেখে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলে তুমি…”

মাথা নাড়ায় তুর।

“ তুমি হয়ত ভেবেছ, সে রাতে তুমি একাই কষ্ট পেয়েছ আমি পাইনি। ভুল ছিলে। সেদিন আমিও সমান কষ্টের ভাগীদার ছিলাম। প্রচন্ড অপরাধ বোধ কাজ করছিল। চোখ বন্ধ রাখার কারনে তুমি বুঝতে পারনি। কিন্তু সেদিন ? নিজেকে খুব অপরাধী লাগছিল তোমাকে ছুঁতে। কিন্তু পরক্ষনেই ভেবেছি আমি আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করছি। কোন পাপ করছি না। তবে তোমাকে না বলে আমি আরো বড় পাপ করেছি। ”

” প্রশ্ন এখনো সেখানে তীব্র? কেন বলেনি আমাকে বিয়ের কথা? ”

আবার তীব্র কথা ঘুড়িয়ে নেওয়ার জন্য বলে, “ আচ্ছা, তুমি রাগ কী রাগ করেছ? তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি বলে। ”

তুর কেঁদে উঠে তীব্রকে জড়িয়ে। ” নাহহ্, তীব্র। আমি এইজন্যই এত কিছুর পরও আপনাকে ভালোবেসেছি, কারন আপনি আমাকে ওই নোংরা লোকগুলোর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। তবে বিয়ের কথা না জানানোর জন্য আমি… তবুও যখন জেনেছি আমি আপনার স্ত্রী। রাগ করলেও ভালোবাসা শেষ করতে পারিনি। কীভাবে পারতাম? যেখানে আমার ধারনা ভুল ছিল। আপনি আমার সন্মান নষ্ট করেনি। বরং আমাকে স্ত্রী হিসেবে চেয়েছিলেন।

কথাটা শুনেই তীব্র নিজের হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে নেয়। তারপর নিজের মনে বলে, ” ক্ষমা করে দেও তুর। আমি আজ তোমাকে সব সত্যি বললাম। কিন্তু তা অন্যভাবে। যা মনের মাঝে চাপা দিয়েছি সেটা মনেই থাক। কিছু কিছু কথা গোপন থাকাই শ্রেয় সম্পর্কের প্রয়োজনে। ”

“ তীব্র আপনি কিন্তু এখনো বললেন না , বিয়ের কথা কেন বললেন না?” বলে উঠল তুর।

ওর ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে তীব্র। বুঝতে পারে , কেন বিয়ে করেছে উত্তর না দিলে তুর ছাড়বে না। তাই আলত হেসে তুরের কপালে চুমো দিয়ে বলে, “ মনের স্বার্থপরতার জন্য “

“ মানে…? “ তীব্রের উত্তরে সন্দিহান তুর।

তা বুঝতে পেরে তীব্র বলে, “ দেখতে চেয়েছি তুমি আমাকে কতটুকু সহ্য করার ক্ষমতা রাখ। হয়ত দেখতে চেয়েছি, আমি তোমার মোহ ছিলাম নাকি ভালোবাসা। ”

কথাটা শুনেই তুর হেসে দেয়।

” মানেটা কী? আপনি আমার মোহ? যাই হোক, তা কী বুঝলেন? ”

” দীর্ঘ ১ মাস তোমার সাথে থেকে আমি তোমার প্রতি আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই তোমার মন রাখতে ধর্ম মতে বিয়ে করতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি কী করলে ভালোবাসি বলে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে চলে গেলে। মানে তোমার আনন্দ কেঁটে গিয়েছিল আমার থেকে। সো আমি তোমার মোহ ছিলাম। সিমপাল লজিক…”

রেগে যায় তুর। ” লজ্জা করে না এটা বলতে? আমি আপনাকে…, ছি ছি ছি… লজ্জা করে না। ”

” তুমি আমাকে ব্যবহার করে , প্রয়োজন মিটিয়ে ছেড়ে চলে গেলে। পুলিশে কমপ্লেন করলে। অপমান করলে। সেটা অবশ্যই মোহ। আবার বলছ আমাকে ভালোবাসতে। কখনো না। আমি জাস্ট তোমার মোহ…. ভালো তো আমি বেসেছি তাই বার বার তোমার কাছে ছুটে গিয়েছি। ”

কথাটা শুনে পানিতে থাকা তীব্রের গলা চেপে ধরে তুর। প্রচন্ড রেগে উত্তেজিত হয়ে গড়গড় করে বলতে শুরু করে, ” একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনাকে এখনো বুঝতে হবে আমি কতটা ভালোবাসি? না পাগলের মত ভালোবাসি। শুধু আপনাকেই ভালোবাসি… আপনার চেয়েই হাজারগুন বেশি। ”

” বাঁকা হাসে তীব্র। ” তাহলে স্বীকার করলে তুমি আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাস। আমার চেয়েও বেশি। ”

তীব্রের কথায় বোকা বনে গেল। মানে তীব্র ওকে ভালোবাসি বলানোর জন্য…

” আপনার মত খারাপ লোক আমি জীবনে দেখিনি। কতবার বলতে হবে ভালোবাসি? আমার না উচিত ছিল যখন আপনি ছিলেন না তখন কাউকে বিয়ে করে নেওয়া।”

বলেই উঠে যেতে নেয়। কিন্তু তীব্র ওকে টেনে পানিতে তীব্রের বুকের উপর ফেলে দেয়। এতক্ষনের হাস্যজ্বল চেহারা ভয়ংকর হয়ে এসেছে। তুরকে এত জোরে চেপে ধরেছে যেন হাড়গোড় আস্তা থাকবে না।

তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ” জানো তো তুর তুমি যখন অসুস্থ ছিলে তখন তোমার বন্ধু সানিয়াদকে আমি ওর মায়ের সাথে চাকরির ‍সুবাদে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ও চলে যাবার কয়েকমাস পর আমি দেশ ছেড়েছি। যাতে তুমি বা তোমার পরিবার তোমাকে নিয়ে অন্য কারো উপর ডিপেন্ড হতে না পারে৷ আর আমি যতদিন ছিলাম তাতে তোমার পাশে অন্য কেউ.… তাই এই কথা এটাই যেন শেষবারের মত হয়। তুমি শুধু তীব্রের। তীব্র যেমন তুর ছাড়া অন্য কারো নাম মুখে আনতে পারে না। তোমাকেও তাই। আমি ছাড়া অন্যকারো কথা মনেও এনো না। ”

” তীব্র ছাড়ুন আমায় লাগছে… আমি জাস্ট এমনি… ”

আর কিছু বলার আগেই তীব্র ওকে চুপ করিয়ে দেয়। পরক্ষনেই কোলে তুলে পানি থেকে বেড়িয়ে আসে। তুর বুঝতেই পারছে তীব্র রেগে গেছে কিন্তু সামান্য কারনে এতটা রাগ… ও ভয়ে ভয়ে তীব্রের চোখের দিকে তাকায়। কিছুটা ভয়ার্ত কণ্ঠেই জিজ্ঞেস করে, ” তীব্র কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? ”

কিন্তু তীব্র কোন কথা বলল না। ওকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ডুকল। তুর শুধু ওর দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ তীব্র ওকে নিয়ে অন্ধকার রুমের ভিতর ডুকল। ব্যাপারটা কেমন যেন লাগল তুরের। কারন তীব্র ক্রমাগত অন্ধকারের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একসময় থামল তীব্র। তুর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। তখনি রুমে হালকা আলোর রেশ ফুটে উঠে। আর তীব্র ওকে নামিয়ে দেয়। চারদিকে তাকিয়ে যা দেখতে পায় তাতে রুহ্ কেঁপে উঠে তুরের। তুর ৬বছর আগে যে রুমে বন্দিনী হিসেবে ছিল এটা সেই রুমের মত সাজানো। না অবিকল সেই রুমের মত। ও বিস্মিত চোখে তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্রের ঠোঁটের হাসি জানান দিচ্ছে ও ভুল। এটা সেই রুমের মত দেখতে নয় সেই রুমটাই। মাটিতে পাতা সেই বিছানা, দেয়াল, আলমারি সব কিছু একদম সেইম। তুরের ভুল হতেই পারে না। কারন ওর নখ দিয়ে আঁকা চিহ্ন দেয়ালে স্পষ্ট। তাছাড়া চাইলেও এই রুমের কিছু ভোলা সম্ভব না। এই রুমেই তীব্রের সাথে কাটানো ভালোলাগা, খারাপ লাগার মূহুর্ত জড়িয়ে আছে।

এসব দেখে ও আবছা কণ্ঠে বলে, ” তারমানে আমি অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। নিশ্চয় ওই লোকগুলো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিল আর আপনি… । তাহলে বিয়ের কথায় বাংলাদেশে কেন গেলেন?” তুর তখন নেশায় ছিল বলে পুরোপুরি সবটা মনে নেই।

নিজের অপরাধবোধ লুকিয়ে তীব্র মুখে প্রশান্তির আভা ফুটিয়ে বলল, ” ৩ মাসে তোমাকে বন্দী রেখে যে কষ্ট আমি দিয়েছিলাম। তার কিছুটা লাঘব করতে আমি তোমাকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর যেহেতু তোয়া তোমাকে খোঁজার কথা বলেছিল তাই তোমার সব নাম, ঠিকানা আমি পেয়ে যাই। ভেবেছিলাম বিয়ে করে তোমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেব কিন্তু তুমি… ”

তুর চুপ।

” আমি এখানেই তোমাকে আটকে রেখেছিলাম। এখানেই আমি আপন করে পেয়েছিলাম। তাই আমাদের আগামী দিনের পথ চলা এখান থেকেই শুরু করতে চাই। আর এর জন্যই এতদিন তোমার থেকে দূরে ছিলাম।”

” কিন্তু তীব্র.. ”

” আমার বন্দীনি চাই। ” কথাটা বলেই তীব্র ওকে নিয়ে সেই মাটিতে পাতা নরম বিছানায় শুইয়ে দেয়। ঘোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হালকাভাবে তুরের গাল স্পর্শ করতেই তুর ওর হাত ধরে ফেলে। তীব্রে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। তুর খুব করুন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, ” তীব্র আপনি কী আমাকে সত্যি ভালোবাসেন?, ”

তীব্র কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে বলে, ” আমার মুখের কথায় কী বিশ্বাস করা উচিত হবে তুর? ”

মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায়।

“ তাহলে আর জানতে হবে না তুর। আমৃত্যু পর্যন্ত আমাকে তোমার পাশে পাবে। তখন নাহয় নিজেই বুঝে নিও আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম কিনা? ”

নিশ্চুপ তুর।

তা দেখে তীব্র আবার বলে, “ আমি তো তোমার কাছে অভিশাপের ন্যায় ছিলাম। অভিশাপের কাছে যখন এসেছ, অভিশাপকে ভালোবেসেছ। তাই অভিশপ্ত করতে চেয়েছি তোমাকে। ”

তুর তীব্রের গালে হাত দিয়ে করুন কণ্ঠে বলল, ” সত্যি কী অভিশাপ আপনি? ”

” আমি জানি তুর তুমি আমাকে যতটা ভালোবাস ততটাই ঘৃনা কর। ”

” হয়ত তো বা তীব্র। ”

তুর ওর কথার আর কোন প্রতুত্তর করতে পারে না। ওর দিকে তাকিয়ে শুধু একটাই ভাবনার বিচরণ ঘটে তুরের মনে, ” আপনি এমন একজন মানুষ যে হাজারটা ঘৃনার বিপরীতে ভালোবাসার একটা কারন দিয়েছেন। ভালোবাসার সেই একটা কারন হাজারটা ঘৃনার কারনের চেয়েও অনেক উর্ধ্বে। ঘৃনা করতে চাইলে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। দূরে যেতে চাইলে কাছে আসতে। আপনার দেনা-পাওনাও অদ্ভুত। ভালোবাসা চাইলে কষ্ট দেন। কষ্ট চাইলে হাসি। হাসি চাইলে বেদনা। বেদনা চাইলে ঘৃনা। আর ঘৃনা চাইলে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন। কী দিতে চান আমাকে? আপনাকে না চোখের জল বানাতে পারি। আর না ঠোঁটের হাসি। আপনি না কল্যাণ আর না অভিশাপ। কী আপনি?”

তুর তীব্রের চোখে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। তা দেখে তীব্র বিছানায় শুয়ে থাকা তুরের দু‘পাশে হাত দিয়ে ওর মুখে হালকা ফুঁ দেয়। তুর নিজের চোখ বন্ধ করে নিলেই তীব্রের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে। তীব্র ওর কপালে চুমো দিয়ে বলে,

ভালোবাসা না,
ভালোলাগা বানাতে চাই তোকে।
এমন ভালোলাগা যা অনন্ত।
কোনদিন শেষ হবার না।
যা ক্রমশ মোহনীয় করে তুলবে তোকে,
আমার চোখে।
ভালোবাসা তো সময়ের সাথে ফিকে হয়ে যায়।
কিন্তু ভালোলাগা ওই পাগলামীর মত।
যা মাথায় চড়ালে আর নামে না।
যদিও সে ক্ষনিকের।
তবুও সেই ভালোলাগা বানাতে চাই তোকে।
প্রতিটি সময়ের, প্রতিটি ক্ষনের, প্রতিটি মূহুর্তের
ভালোলাগা করতে চাই তোকে।
আজীবন তোর মাঝে উন্মাদনা করার জন্য।

লক্ষ্য না,
রাস্তা তুই আমার।
লক্ষ্য তো একদিন পূরন হয়ে যাবে।
কিন্তু রাস্তা,
অফুরন্ত ।
কোনদিন শেষ হবার না।
পথিক যেমন, পথ শেষে, নতুন পথ খুঁজে নেয়।
নিজেই তৈরি করে, নিজের চলার পথ।
আমিও সেই দিশাহীন পথের, পথিক হতে চাই।
তোকে রাস্তা বানিয়ে, তোর মাঝে চলতে চাই।
তুই নামের রাস্তা শেষ হলে আবার যেন,
তোর মাঝে খোঁজ করতে পারি নতুন রাস্তার।
সেটা শুধু তোর মাঝেই।
বার বার নতুন করে বিচরন করতে পারি তোর মাঝে।
লক্ষ্যে পূরন হলেই জেদ চলে যায়।
তাই মুসাফির হয়ে তুই নামের রাস্তাতেই,
গড়তে চাই আমার বসতি।

আমার নেশা তুই ।
এমন ভয়ংকর নেশা,
যা কাঁটাতে কাঁটাতে যেন ধ্বংস হয়ে যাই।
সর্বনাশ ডেকে আনে আমার।
তবুও যেন ছাঁড়াতে না পারি সেই নেশা।
সেই নেশা চাই আমার।
যার মাদকতা আসক্ত করবে আমায়।
ডুবে থাকতে চাই।
নিঃস্ব হতে চাই
তুই নামের সেই নেশায়৷

পারবি কী ?
এমন নেশা হতে?
এমন রাস্তা হতে?
এমন ভালোলাগা হতে?

তুই না চাইলেও তোকে পারতে হবে।
হ্যাঁ…
তুই আমার ক্ষনিকের না।
অনন্ত কালের চাওয়া।
তাই তোর ছোঁয়ায় আমি সারাজীবন জীবন্ত থাকতে চাই।
তুই শুধু আমার।
তাই তো তোকে হতে হবে..
আমার….
#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤

“ হবে তুর আমার #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤। শুধু তোমার সম্মতি চাই আমার। “

বন্ধ চোখেও পারল না তুর তীব্রের কথার উত্তর দিতে। কিছু বলার জন্য ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠে ঠিকি। কিন্তু বলতে পারে না তুর….. তীব্র নামের এক রহস্যের মাঝে হারিয়ে যায়…
.
.
.
.
.
.
.
.
রহস্যকে খুজতে এসো না।
নিজেই রহস্যের জালে জড়িয়ে যাবে।
রহস্যকে রহস্যময় হয়ে রইতে দেও
প্রকৃতি রহস্য লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে।
তাই কিছু কিছু তাঁর মতই ছেঁড়ে দেও….
#মেহের🍁 ( আপনখেয়ালী )
.
.
.
.
.
.
.
.
সমাপ্ত…..🍁

শুধু ৫টি কথা….
১. কাহিনি নেগেটিভ ফাস্ট পর্বে বলেছিলাম। তবুও কোন অশোভনীয় কাহিনি আমি রাখিনি তারপরেও যদি কারো খারাপ লাগে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আমি। আর যতটুকুই ছিল তা কাহিনী স্বার্থে। কী ছিল জানিনা…

১. তীব্র-তুরকে বাদ দিয়ে প্রতিটি কাহিনি বাস্তব থেকে নেওয়া। বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। কাহিনী সিনেমাটিক উপস্থাপনের কারনে তাঁরাই বুঝবেন যারা শুধু মজার জন্য নয় বোঝার জন্য পরেছেন ।

২. যদিও সাসপেন্সিভ থ্রিলার টাইপ স্টোরি সবার পছন্দ নয় তবুও আমি ট্রাই করেছি যাতে আপনাদের ভালো লাগে। এটাই মূলত আমার এই টপিকে লেখা ফাস্ট স্টোরি। জানিনা কতটা ভালো করতে পেরেছি।

৪. এই স্টোরির সিজন-২ আসবে না।কোন কিছু সম্পর্কে ধারণা ছিল না বলে সাসপেন্সিভ ছিল।আর সিজন-২ দিলে সেটা সম্ভব না। যদি লিখতেই হয় তাহলে অন্য কাহিনীর উপর লিখব।

৫ আমার লেখা সবচেয়ে কষ্টসাধ্য গল্প এটা। যার প্রতিটা লাইন লিখতেও আমার ভাবতে হয়েছে। আর বাকি কথা বাদ দিলাম।

গল্পের কাহিনী, লেখা, ত্রুটি বা অসামঞ্জস্যতা, বাক্য বুঝতে বা লেখায় ইত্যাদি যেকোন গঠনমূলক সমালোচনা করে আমায় উপকৃত করুন। আমি শিখতে চাই।

আমি জানিনা আমার স্টোরিটা রিভিউ পাওয়ার যোগ্য কিনা। সেটা আপনারা বিচার করবেন। তবুও একজন রাইটার হিসেবে গল্প লেখার বিপরীতে আপনাদের কাছে ভালো-খারাপ উভয় দিকের রিভিউ চাচ্ছি। নাহলে কষ্ট করে গল্প লেখাই ব্যর্থ হয়ে যায়। বাকিটা আপনাদের উপর…

#মেহের🍁 ( আপনখেয়ালী )
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr
দেখুন আমি আপনাদের জানিয়ে দিয়েছিলাম স্টোরি সেদিন রাতে দিতে পারব না। যেহেতু কাহিনি বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার হয় তাই সব জায়গায় জানিয়ে দেওয়া সম্ভবনা। আর কাহিনি দেখে যদি বুঝতে না পারেন কেন লেট হয়েছে তাতে আমার কিছু বলার নেই।

ধন্যবাদ সবাইকে…..
এত কষ্ট করে আমার এই পেচিডা স্টোরি পরার জন্য।
মেহেরজান আপনাদের উত্তরের প্রতিক্ষায়…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here