#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৫৬

0
513

#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৫৬

#মিদহাদ_আহমদ

টিচারের কথা শুনে তানিয়া হাইপার হয়ে উঠলো। ঝটপট করে বললো,

‘মানে কী? একজন স্টুডেন্ট, যার কিনা দুইদিন পর পরেই এক্সিবিশন আর তার মেন্টরিং এ আমার মেয়েটা, তিনিই কিনা আজ নেই! এইটা তো মানা যায় না। এইটা কেমন কথা।’

তানিয়ার এমন কথা শুনে টিচার বললেন,

‘আসলে উনার একটা সমস্যা পড়ে গিয়েছে তাই,’

‘না এসব সমস্যা তো আমার দেখার বিষয় না। আমি এক্ষুণি স্যারকে কল দিচ্ছি।’

তানিয়া ফারুক স্যারের নাম্বারে কল দিলো। ক্লাসের ভেতরে গল্প আর্টে মন দিয়েছে। অন্য স্যার ম্যাডামরা আছেন। স্যারের মোবাইলে কয়েকবার রিং হলেও কল ধরলেন না তিনি। তানিয়া আবারও কল দিলো। এবার স্যার কল রিসিভ করতেই তানিয়া জিজ্ঞেস করলো,

‘আমি গল্পের মা বলছি। আপনি কি আজ আর আসবেন না?’

‘ইয়ে মানে, আই এম সরি। গল্পকে শেষ মুহূর্তের জন্য প্রিপেয়ারড করতে পারলাম না। তবে নুকুল স্যার আর প্রিয়সী ম্যামকে আমি বলে দিচ্ছি। আপনি কোন টেনশন…’

‘টেনশন মানে? আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে এভাবে সরে যেতে পারেন না। দায়িত্ব মানেই দায়িত্ব। কখনো দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আপনার আজ শিডিউল ছিলো, মানে ছিলো। আপনি আজ যদি না আসার হতো, তাহলে আমাকে আগে বলতেন। আমি গল্পকে এক্সিবিশনের জন্য অন্য কোথাও তৈরি করতাম। তার পরও কী হলো? এই তীরে এসে তরী ডুবলো?’

ওপাশ থেকে ফারুক স্যার বললেন,

‘না মানে আপনি আমার কথা…’

‘কী আপনার কথা? এসব শোনার সময় আমার নাই।’

কথাগুলো বলেই তানিয়া কল কেটে দিলো৷ প্রিয়সী ম্যাডাম উঠে এলেন। তানিয়াকে বললেন,

‘আপনি এই কাজটা ঠিক করেননি। স্যারের মেয়ে অসুস্থ আপনাকে বলেছিও।’

তানিয়া শুনেও না শুনার বাহানা করলো।

এদিকে আসিফ সকাল সকাল নাস্তা খেয়ে বের হয়ে গিয়েছে তার সেই চিরচেনা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে। আমি লাগেজ খুলে শ্বশুরের জন্য আনা সিরিয়াল, কর্ণফ্লাক্স, পিনাট বাটার, চিজ এসব এনে দিলাম। শ্বশুর এসব দেখে শাশুড়িকে ইশারায় বললেন,

‘খেতে দিবা না কেমন করে এবার দেখবো।’

শাশুড়ি কাপড় গুছানোয় ছিলেন। উঠে এসে বললেন,

‘গল্প চিংড়ি পছন্দ করে। আমি চিংড়ি এনে রেখেছি। তুমি ওর জন্য চিংড়ি রান্না করতে পারো নুপুর। গল্প অনেক ভালোবেসে খাবে।’

‘আচ্ছা মা। ঠিক আছে। ‘

আমি উঠে গেলাম। রুম থেকে বের হয়ে যাবার সময় শুনলাম পেছন থেকে শ্বশুর শাশুড়িকে বলছেন,

‘এভাবে মেয়েটাকে এখন লাইনে আনতে হবে আসিফের মা। তোমার সাহায্য ছাড়া এইটা সম্ভব না কোনভাবেই।’

আমার মন প্রাণ খুশি হয়ে গেলো। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম আমার মা আগে থেকেই রান্নাঘরে আছেন। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কেন এসেছি রান্নাঘরে৷ বললাম, চিংড়ি রান্না করবো৷ মা কিছুটা বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন,

‘চিংড়ি? গল্পের জন্য?’

‘হ্যাঁ মা। শাশুড়ি মা বলে দিয়েছেন।’

‘দেখছিস মা, সবাই কেমন তোকে হেল্প করছে! দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ চাইলে তোর আর কোন অভিযোগ থাকবে না৷ দেখতে দেখতে দেখবি, গল্প তোর হয়ে যাবে৷ কোন বাধা এখানে কাজ করবে না আর।’

আমি রান্না শেষ করতে না করতেই তানিয়া আপা আর গল্প বাসায় চলে এলো। আমি এগিয়ে গিয়ে গল্পকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘আজ ক্লাস কেমন হয়েছে মা?’

‘খুব ভালো। জানো, জানো, আজ আমি আউট লাইন খুব ভালোভাবে করেছি। প্রিয়সী ম্যাম আমাকে অনেক গুলো স্টার দিয়েছেন৷’

‘ওরে বাবারে। আর আমিও তোমার জন্য অনেকগুলো স্টার জমিয়ে রেখেছি।’

‘স্টার? আমার জন্য?’

‘হ্যাঁ মামুণি। তোমার জন্য।’

‘দেখি দেখি’

আমি এগিয়ে গিয়ে গল্পের হাতে ধরলাম। বললাম,

‘আসো রুমে আসো। আমার রুমে রাখা আছে।’

ননাস বলে বসলো,

‘না না নুপুর। ওকে আগে চেইঞ্জ করিয়ে আনি।’

শাশুড়ি মা ননাসকে থামিয়ে গল্পের দিকে চেয়ে হেসে হেসে বললেন,

‘যাও নুপুর। আমার দাদুভাইকে আগে স্টার দিয়ে দাও। তারপর সে চেইঞ্জ করবে ‘

আমি একবার তাকালাম ননাসের চোখে। তার চোখ যেনো কথা বলছে। মুখে কিছু বলছে না। গল্পকে নি আমি রুমে গেলাম। গল্পকে বিছানায় বসিয়ে লাগেজ থেকে স্টার জেলি চকোলেট আর কিটকাটের দুইটা বক্স বের করে এনে গল্পের হাতে দিলাম। গল্প বললো,

‘ওত্তগুলো আমার জন্য বুঝি?’

‘হ্যাঁ মামুণি। তোমার জন্য। আরও লাগবে?’

‘কেভিটি! কেভিটি! এত্তগুলো খেলে যে কেভিটি হবে।’

‘একসাথে খাবা না। আস্তে আস্তে খাবা।’

গল্প কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বললো,

‘আমি স্কুলে নিয়ে, সবাইকে একটা একটা করে দিবো৷ সবাইকে দিবো।’

বলতে বলতে দুই বক্স কিটকাট আর এক বক্স স্টার জেলি চকোলেট নিয়ে গল্প রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। বের হওয়ার আগে পেছন ফিরে গল্প বললো,

‘থ্যাঙ্কিউ’

আমি হেসে হেসে বললাম

‘শুধু থ্যাঙ্কিউ? আর কিছু না?’

ফ্যালফ্যাল চোখে মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। আমি হেসে হেসে তার কাছে গিয়ে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে বললাম,

‘একটা আদর দিবা না?’

গল্প আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিলো। তারপর হেলেদুলে চলে গেলো ননাসের রুমে।

দুপুরে খাবার টেবিলে শাশুড়ি সবকিছু সাজিয়ে আমাদের ডাক দিলেন। আসিফও বাসায় এসেছে। সবাই একসাথে খেতে বসলাম। শাশুড়ি রান্নাঘর থেকে বাটিতে করে চিংড়ি নিয়ে এসে গল্পকে বললেন,

‘দাদুভাই আজ আরেকটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।’

‘কী দাদুভাই?’

‘এই দেখো।’

‘চিংড়ি’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ চিংড়ি। কে রান্না করেছে জানো?’

গল্প এদিক ওদিক তাকালো শুধু। শাশুড়ি মা আমার দিকে তাক করে বললেন,

‘এইযে, এই লক্ষ্মী মেয়েটা, আমার লক্ষ্মী দাদুভাইয়ের ফেভারিট চিংড়ি রান্না করেছে।’

গল্পের চোখেমুখে আমি খুশি দেখতে পেলাম। উঠে গিয়ে গল্পের প্লেইটে চিংড়ি তুলে দিলাম। গল্প আমার সামনে এই প্রথম তৃপ্তিভরে খেলো। আশেপাশে ভাতগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। আমি এই ছড়ানো ছিটানো ভাতগুলো কুড়িয়ে নিজের প্লেইটে নিলাম৷ বাচ্চার এটো ভাত আর ছড়ানো ভাতের স্বাদ কেমন হয়, এইটা আমি জানি না। এই স্বাদ নেয়ার জন্য কতদিন আমি অপেক্ষা করে এসেছি!

খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই ননাস উঠে গেলো। মোবাইলে ড্রাইভারকে কল করে গাড়ি বের করতে বললো। শ্বশুর জিজ্ঞেস করলেন,

‘কী হলো? এখন এই অসময়ে কোথায় যাবি?’

ননাস বললো,

‘কাজ আছে৷ আমি এসে বলছি।’

মুহূর্তেই উপরে উঠে গেলো ননাস। ড্রেস চেইঞ্জ করে নেমে এলো। গল্প জিজ্ঞেস করলো,

‘কোথায় যাচ্ছো মামুণি?’

‘আমি যাচ্ছি আর আসছি। তোমার জন্য কেটবেরি নিয়ে আসবোনে কেমন?’

তারপর ননাস আমার দিকে চেয়ে বললো,

‘নুপুর তুমি একটু ওর ড্রইংটা দেখো। এক্সিবিশন ডেইট আজ দিয়ে দিবে। একটু সিরিয়াসলি দেখতে হবে। আমি আসছি তাড়াতাড়ি। ‘

‘কোথায় যাচ্ছিস বলে তো যা?’

শাশুড়ি মায়ের কথা শুনেও না শোনার বাহানা ধরে ননাস চলে গেলো বের হয়ে।

তানিয়া ড্রাইভারকে বললো

‘নর্থ ইস্ট মেডিকেলে আমাকে নিয়ে চলো।’

গাড়িতে বসেই প্রেয়সী ম্যাডামকে কল করে জিজ্ঞেস করলো,

‘বেড নাম্বার কত? আপনি কি যাবেন আমার সাথে?’

‘জি আমি বুঝতে পারিনি।’

‘ফারুক স্যারের মেয়ে অসুস্থ না? আমি দেখতে যাবো বাচ্চাটাকে। আপনি আসবেন?’

‘কোথায় আছেন আপনি এখন?’

‘মিরাবাজার।’

‘আপনি জিন্দাবাজার হয়ে যাবেন?’

‘আপনি গেলে বলেন। আমি আসছি এদিকেই।’

‘ওকে। আমার আসতে দশ মিনিট সময় লাগবে।’

দশ মিনিটের মাথায় প্রেয়সী ম্যাডামকে গাড়িতে তুলে, তানিয়া ছুটলো ফারুক স্যারের মেয়েকে দেখতে। ভেতরে ভেতরে তার অনুশোচনা হচ্ছে। অসুস্থ একটা মেয়ের বাবাকে সে কথা শুনাতে কম শুনায়নি!

আসসালামুয়ালাইকুম। আমি বেশ অসুস্থ। দোয়া করবেন। তবে অসুস্থ হলেও দায়িত্ব কমেনি। আগামীকাল বন্যাদুর্গত একটা এতিমখানায় এক সপ্তাহের খাবার নিয়ে যাবো৷ তারা সবাই এক সপ্তাহ আরাম করে খেতে পারবে, এমন সব সামগ্রী সরবরাহ করবো ইনশাআল্লাহ। সব আপডেট আপনারা এই গ্রুপেই পেয়ে যাবেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আরেকটা প্রজেক্ট করার ইচ্ছা আছে। মাদ্রাসায় যাওয়ার ইচ্ছা আছে। যদি কেউ এখনও ডোনেশন করতে চান জানাবেন। অংকের পরিমাণ সামান্য হোক, তবুও করতে চাইলে করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সবার ডোনেশন কবুল করুন। আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই। ডোনেশন পাঠাতে চাইলে বিকাশ নাম্বারঃ 01762095729(personal)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here