সুখ নীড় পর্ব-১৬

0
280

#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৬

দু’দিন ধরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় এই অন্ধকার রুমটিতে মৃতপ্রায় অবস্থা হয়েছে জয়ীর। এখান থেকে বেঁচে ফেরার আশা সে ছেড়েই দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সে জানেই না তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, এখান থেকে কিভাবে বের হবে? কে তার এমন অবস্থা করেছে এটা সে চোখে দেখতে না পেলেও আন্দাজ করতে ভুল হয় না।
সেদিন সে তার শ্বাশুড়ির সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তার শাশুড়ির অতীত নিয়ে কথা তোলায় চরম ক্ষেপে যায় সাজেদা চৌধুরী। জয়ীও তার শাশুড়ির উল্টাপাল্টা কথাবার্তা শুনে রাগের বশে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার মুখে মুখে তর্ক করতে শুরু করে। জয়ীর এমন ব্যবহারে সাজেদা চৌধুরী দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলেন। একের পর এক উপর্যপুরি থাপ্পড়ে ধরাশায়ী করে ফেলেন জয়ীতাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জয়ীতা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপরে কি হয়েছে কিছুই মনে নেই তার। জ্ঞান ফেরার পরে দেখে এই অন্ধকার রুমে সে বন্দি। এই দুই দিনে মাত্র একবার খাবার মিলেছে। এখানে বসে রাত না দিন বোঝার উপায় নেই। টিম টিমে একটা লাইট জ্বলে সবসময়। তাতে কোনো রকম ছায়া ছায়া দেখা যায় সবকিছু। দিনে হয়তো একবেলা তার জন্য খাবার বরাদ্দ হয়েছে তাও যৎসামান্য। সে বুঝতে পারছে না তার সাথে কী হতে যাচ্ছে, তাকে কী এভাবে না খাইয়ে মেরে ফেলা হবে নাকি অন্য কোনো উপায়ে সেটা সে না জানলেও মৃত্যু যে তার খুব নিকটে এটা সে নিশ্চিত।
নিজের বোকামির জন্য খুব অনুশোচনা হচ্ছে। রাগের বশে ওসব কথা না বললেও পারত! পল্লবকে খুব মনে পড়ছে তার। মাত্রই একটা সুখ নীড়ের স্বপ্ন দেখেছে তারা দু’জন মিলে এর মাঝেই আবার সব এভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে সে কল্পনায়ও ভাবেনি। পল্লব হয়তো তাকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়তে থাকে জয়ীর।

এদিকে পল্লব জ্বরে আবোলতাবোল বলেই যাচ্ছে। জয়ী যে কী অবস্থায় আছে সে কথা ভুলেই বসে আছে। মাঝে পুলিশ এসেছিল একবার সিসি ফুটেজ নিয়ে কথা বলতে। কিন্তু সে এতই অসুস্থ যে জ্বর ১০২ ডিগ্রির নিচে কিছুতেই নামছে না। ঠাণ্ডার মাঝে রাতভর ছাদে বসে থাকতে থাকতে জ্বরের কবলে পড়েছে। তার উপর মনের অবস্থাও ভালো না। সাজেদা চৌধুরী বাসায় ডাক্তার ডেকে পল্লবের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। নিজেও এসে একটু পর পর ছেলের খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই।

এদিকে শুরু হয়েছে নতুন ঝামেলা। কিভাবে যেন জয়ীতার নিখোঁজ সংবাদ সাংবাদিকদের কানে পৌঁছে গিয়েছে। সকাল থেকে শুরু হয়েছে সেই ঝামেলা। সাংবাদিকের দল একদলের পর একদল আসতেই থাকছে। অবশ্য সাজেদা চৌধুরীও ঘাবড়ে যাবার মত বান্দা নন। এদেরকে কী করে হ্যান্ডেল করতে হয় সে কথা তার জানা আছে বেশ ভালো করেই। এমন করে তাদের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করছেন যেন সে নিজেও খুব উদ্বিগ্ন ছেলের বউ নিখোঁজ দেখে। জয়ীতার টেনশনে তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এটাও জানাতে ভুল করছেন না তাদেরকে । সে নিজেও মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। জয়ীতাকে নাকি সে মেয়ের মত আদর করত। তাই জয়ীতাকে সে যে-কোনো মূল্যে ফিরে পেতে চায়। পুলিশ সাংবাদিক সবার সাহায্য কামনা করছে । তার ছেলে বউকে যে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিবে তাকে তার চাহিদার সমান পুরস্কারও দিবেন, চোখ মুছতে মুছতে এ ঘোষণাও করে দিলেন মিডিয়ার সামনে। তার অপজিশনের কেউ হয়তো তার এ ধরনের ক্ষতি করেছে যাতে তাকে বিপদে ফেলা যায়। জয়ীতার এ বাড়িতে আসার সময়ে তার সাথের সম্পর্কটা সবারই জানা তাই জয়ীতাকে নিখোঁজ করতে পারলে সর্বপ্রথমে আঙ্গুলটা তার শ্বাশুড়ীর দিকেই যাবে এটাই চাচ্ছে তার অপজিশন প্রার্থীরা। কিন্তু তাদের রোষানলে পড়ে নিরীহ মেয়েটাকে যেন কোনোরকম কষ্ট দেওয়া না হয় এটা সে বিনীতভাবে অনুরোধ করে।

ভেজা চোখে সে সবার কাছে তার ছেলের বউয়ের নিরাপদ মুক্তি কামনা করছে। তার এমন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বলি যেন তার ছেলের বউ কিছুতেই না হয় এটা তার আকুল চাওয়া। প্রয়োজনে সে রাজনীতির মাঠ থেকে সরে যাবে তাও তার ছেলের বউকে সে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে চায়। এমন কথা শোনার পরে কী আর বলার থাকে সাংবাদিকদের।

তারা কথা বলতে চায় পল্লবের সাথে। পল্লবের অসুস্থতার দোহাই দিয়ে এই যাত্রায় বেঁচে গেলেন সাজেদা চৌধুরী। তবে পল্লবের সুস্থতা যে তার জন্য কতটা অনিরাপদ সেটা সে এখনই টের পাচ্ছে। তাই যে করেই হোক এই মুহূর্তে পল্লবের সুস্থতার থেকে পল্লবকে অসুস্থ করে রাখাটাই এখন তার প্রধান কাজ।

তাদের পারিবারিক ডাক্তারের সাথে কথা বলে পল্লবকে হসপিটালে এডমিট করার ব্যবস্থা করা হলো। কোথায় ভর্তি করা হয়েছে এটা সে এবং তার বড় ছেলে ছেলে ছাড়া আর কারোরই জানার সুযোগ সে রাখেনি। মোটামুটি একপ্রকার বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে পল্লবকে সেখানে তার চিকিৎসা চলবে আবার বন্দি করেও রাখা হবে। একের মধ্যে দুই আর কী! সে যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে নিরাপদ মনে না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পল্লবকে এভাবে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বন্দি রাখা হবে।

পরপর চার দিন কেটে গেছে। জয়ীতার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ জাতীয় দৈনিকগুলোতেও চলে এসেছে। কিন্তু তার সন্ধান মিলছে না কোনোভাবেই। জয়ীতার বাড়ি থেকে তার আত্মীয়স্বজন মা-বোনেরা এসেছে, খালেক সাহেব পর্যন্ত চলে এসেছেন কিন্তু কারোরই জানা নেই যে জয়ীতা কোথায় আছে? বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে! সাজেদা চৌধুরী সবাইকে স্বান্তনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন এই বলে আশ্বস্ত করে যে সে যেকোনো মূল্যে ছেলে বউকে উদ্ধার করবেন।

এভাবে কেটে গেল আরো সাত সাতটা দিন। চব্বিশ ঘন্টায় একবার খাবার মিলে জয়ীতার তাও খুব সামান্য। কেউ একজন এসে জয়িতাকে খাইয়ে দিয়ে যায়। খাবার খেতে দেওয়ার আগ মুহূর্তে পেছন থেকে এসে জয়ীতার চোখ দুটো বেঁধে দেওয়া হয়। যাতে সে কাউকে দেখতে না পায়। জয়ীতা অনুমান করতে পারে এখানে একজন মানুষই আসে প্রতিদিন । জয়ীতা প্রতিদিনই হাউমাউ করে কেঁদে তার কাছে তার মুক্তির ফরিয়াদ জানায় কিন্তু পাথরের মন যেন গলে না। সে পল্লব এর কথা জানতে চায়। পল্লব কেমন আছে কোথায় আছে সেটাও জানতে চায়। কিন্তু কোনো উত্তর পায় না একদিনও।

এ ক’দিনে জয়িতা আন্দাজ লাগিয়ে ফেলেছে, যে এখানে কে আসে প্রতিদিন তাকে খাওয়াতে। এই মানুষটাকে সে খুব পছন্দ করে। এ বাড়িতে আসার পরে একমাত্র এই মানুষটিকেই সে খুব আপন করে ভাবত।

আজ খাওয়া যখন শেষ হয় তখন হঠাৎ করে জয়িতা বলে উঠল,

– রাবু খালা, আপনাকে তো আমি মায়ের মতো ভালোবাসি আপনি আমার সাথে এভাবে করতে পারছেন কীভাবে? আমাকে বাঁচান রাবু খালা।

রাবু খালা কেঁপে ওঠেন। জয়ীতা তাকে চিনল কী করে? সে জয়ীতার কথার কোন উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি তার কাজ শেষ করে চলে যেতে চান।

– আমি জানি আপনি কোন কথা বলবেন না কারণ আপনি তো আপনার মালিকের হুকুমের দাস। আপনি কোন কথা না বললেও আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি ঠিক। আপনার গায়ের গন্ধ আমার কাছে অচেনা নয়। থাক, কিছু চাইবার নেই আর আপনার কাছে। একটা দীর্ঘসাস ছেড়ে বলল, জয়ীতা।

আবার একটু থেমে সে বলল, খালা শুধু একটা কথাই জানতে মন চাইছে আমাকে এভাবে আর কত দিন বাঁচিয়ে রাখবেন আমিতো মরে যাচ্ছি। একবারে মেরে ফেলুন না। হয় আমাকে মুক্তি দিন নইলে গলাটা চেপে ধরে এখনই মেরে ফেলুন। তিলেতিলে মারার প্লান করেছেন কী আপনারা? আমাকে একটু দয়া করুন। আপনি তো আমার মায়ের মতো! এই যে পরম মমতায় প্রতিদিন খাবারের লোকমা মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন সেই মমতার দোহাই! আমাকে গলা চেপে মেরে ফেলুন। আমি এভাবে আর পারছি না।

রাবু খালা খেয়াল করলেন জয়ীতার চোখের পানিতে
চোখের ওপরের কাপড়টা ভিজে যাচ্ছে। তার নিজের চোখও সিক্ত। জয়ীতা না দেখলেও যেনো বুঝতে পারছে সেটা।

আসলে রাবু খালার জর্দার ঘ্রাণটা জয়ীতার ভীষণ পছন্দের। সে নিজেও কয়েকবার তাকে এই জর্দা এনে দিয়েছে। রাবু খালা তার মালিকের খুবই আজ্ঞাবহ আর অনুগত। এটা জয়ীতা নিজেও জানে। তবে মানুষটা খুব ভালো মনের মানুষ।

রাবু জয়ীর পেছন দিক থেকে ফিরেই যাচ্ছিল চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে তখনই হঠাৎ কীসব ভেবে জয়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়। এত কষ্টের মাঝেও জয়ীতার বুকের মাঝে আনন্দের ঢেউ খেলে যায় রাবু খালাকে দেখতে পেয়ে। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাবু খালা তার হাত পায়ের সব বাঁধন খুলে দিলো। সে ইশারায় জয়ীতাকে বোঝাল এখান থেকে পালিয়ে যেতে। এবং কোনোদিনই এদিকে না আসতে! কারণ তার শাশুড়ির হাতে পড়লে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত।

জয়ী রাবু খালাকে জিজ্ঞেস করল সে এখন কোথায় আছে?

আসলে চিলেকোঠার ওখানে যে স্টোর রুমটা আছে ওটা একদম বরাবর নিচতলা পর্যন্তই রয়েছে। কিন্তু সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। জয়ীর নানা শ্বশুরের সময় থেকেই এটা নানা ধরণের গোপণ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়েছে। তিনতলা থেকেই এখানে নামার একটা সিঁড়ি আছে। কিছু পুরানো আসবাবের পেছনে সিঁড়িটা রয়েছে। এ বাড়িতে এই গোপণ কুঠুরির কথা সাজেদা চৌধুরী আর রাবু ছাড়া আর কেউ জানে না। দোতলার অংশে রাখা হয়েছে জয়ীতাকে। এর পাশেই সাজেদা চৌধুরীর বেড রুম।

ইশারায় সব বুঝিয়ে দিলো রাবু খালা। জয়ীতা তো ভীষণ অবাক এসব শুনে। সে এই এক বছর ধরে এ বাড়িতে থাকলেও এখানে এমন কুঠুরি রয়েছে কিছুই আঁচ করতে পারেনি।

জয়ীতার কাছে সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সে মুক্তি পাচ্ছে এখান থেকে। আনন্দের আতিশয্যে রাবু খালাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করল। হঠাৎ তার মনে হল সে যদি এখান থেকে পালিয়ে যায় তাহলে এই মানুষটিকে বিপদে পড়তে হবে। যে তার প্রাণ ভিক্ষা দিলো তাকে কী করে বিপদে ফেলবে? রাবু খালাকে বলে সে তাকে বিপদে ফেলে এখান থেকে যেতে পারবে না। এমনিতেই যাবেই বা কোথায়? পল্লবের জীবনে যদি ফিরতেই না পারে তবে বেঁচে থাকা আর মরে যাবার মাঝেই বা কী তফাৎ!

রাবু খালা পাগলামি করতে নিষেধ করে ইশারায় বুঝিয়ে বলেন, এখানে থাকলে জয়ীকে হয়তো আর দু’একদিন বাদেই মেরে ফেলা হবে। চারপাশের অবস্থা একটু স্বাভাবিক হওয়ার আশায় উনি এখনো তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বেঁচে থাকলে পল্লবকে সে একদিন নিশ্চয়ই পাবে! কিন্তু মরে গেলে তো শেষবারের মতোও আর দেখা হবে না পল্লবের সাথে। তাই এই মুহূর্তে তার নিজেকে বাঁচানো উচিৎ।

রুমের এক কর্ণারে অক্সিজেন আসার জন্য উপরের দিকে একটা ছোট জানালার মতো আছে। রাবু চেক করে দেখল জানালার গ্রীলটাতে বেশ মরিচা পড়েছে। বহুবছর কোনো রিপেয়ার করা হয় না। সে দ্রুত তিনতলাতে ফিরে যেয়ে পুরানো আসবাবের ভেতর থেকে একটা ছোটো শাবল নিয়ে আসে। শাবল দিয়ে কিছু সময় প্রেসার দিতেই গ্রীল বাঁকা হয়ে গেল।

জয়ীতাও একটু হাত লাগাল। সে জয়ীতাকে বুঝিয়ে দিলো কীভাবে বের হতে হবে। নিজের পরনের শাড়িটা এ পাশের একটা পিলারের সাথে বেঁধে নেয়। একটা ড্রাম টেনে জয়ীতাকে বলে তার উপর উঠে ওই শাড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে। জয়ীতার খুব ভয় হয়। শরীর ভীষণ দুর্বল তার। এই অবস্থায় এক পা ফেলাই তার জন্য মুশকিল সেখানে শাড়ি বেয়ে নিচে নামা তো অনেক দূরের কথা। রাবু খালা তাকে সাহস দেয়। জয়ীতা ভাবে একবার চেষ্টা করে দেখতে কী দোষ! এমনিতেই তো মরতে হবে! না হয় একটু বাঁচার চেষ্টা করে দেখুক শেষ বারের মতো। কিন্তু বেশি চিন্তা হচ্ছে এই মানুষটির জন্য। তাকে বাঁচাতে যেয়ে নিজেই না কোনো বিপদে পড়ে। তার শাশুড়ি যে পরিমাণ জল্লাদ।

জয়ীতা রাবু খালাকে জিজ্ঞেস করে, তাকে এখান থেকে বের করে দিয়ে সে নিজেকে কি করে বাঁচাবে তার শাশুড়ি হাত থেকে?
রাবু খালা তাকে তার জন্য চিন্তা করতে নিষেধ করেন। কীভাবে নিজেকে বাঁচাতে হবে সেটা তার জানা আছে। দ্রুত জয়িতাকে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন।

কোনোরকম করে ওই চিপা জায়গা থেকে নিজেকে বের করে শাড়িটা ধরে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে থাকে জয়িতা। বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে তার। একদিকে তো শরীরে চার আণার শক্তি নেই অন্যদিকে চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাড়ির এই পাশটায় কিছু ঝোপঝাড় থাকার কারণে মানুষের আনাগোনা ও খুব কম।
হঠাৎ জয়ীর মনে হলো তার চার পাশটা বনবন করে ঘুরছে। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল অমনি হাত ফসকে গেল এরপর কিছু মনে নেই তার।

রাবু খালাকে দেখে সাজেদা চৌধুরীর চোখ চড়কগাছ। ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, একটা বাজে।
রাবু খালার পরণে ছেঁড়া একটা পেটিকোট আর ব্লাউজ। শাড়ি নেই। মাথা দিয়ে জবজব করে রক্ত পড়ছে।

সাজেদা চৌধুরী দাঁড়িয়ে গেলেন। দ্রুতপায়ে দরজা লক করে দিলেন।

– কী হয়েছে? তোর এ অবস্থা কেনো?

ইশারায় রাবু তাকে যা বোঝাল তাতে তার জ্ঞানশূন্য হবার উপায়।
রাগে বিড়বিড় করতে করতে রাবুর দুই গালে সজোরে দুই থাপ্পড় মারলেন সাজেদা চৌধুরী।

– এটা কীভাবে হলো? একবারও ভেবেছিস ওই মেয়ে মিডিয়ার সামনে গেলে আমার কী অবস্থা হবে? আমার পুরো জীবনের সঞ্চিত মান সম্মান এখন ওর হাতে।

আবারও মারতে উদ্যত হলে রাবু খালা তার পা জড়িয়ে ধরেন। সাজেদা চৌধুরী তাকে লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে ওই রুমে যাবার জন্য চিলেকোঠার রুমের দিকে রওয়ানা দেন।

রুমের ভেতরে যেয়ে দেখেন ভেতরে ভীষণ খারাপ অবস্থা। রাবুর সাথে যে অনেক ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে চারপাশে দেখলেই বোঝা যায়। রাবুর পরনের কাপড় খুলে উপরে বাঁধা হয়েছে। এই মেয়েকে দিনে যে একবেলা খাবার দেয়া হতো সেটাও বন্ধ রাখা উচিত ছিল। পানি খেয়েই বাঁচলে বাঁচত না হলে মরে যেত। রাবুর পীড়াপীড়িতেই একবেলা খাবার এলাউ করেছিল সে। এখন বুঝতে পারছে কতবড় ভুল সে করেছে।
বুকের মাঝে ঢিপঢিপ বেড়েই চলছে। জয়ীতা যদি মিডিয়ার সামনে তার এই কিডন্যাপের রহস্য বলে দেয় তাহলে কী হবে তার ভেবেই শিউরে ওঠে। তার চেয়ে বড় কথা পল্লবের জন্মের ইতিহাস এই মেয়ে জানে।

আগামীকাল তার নমিনেশন এর ব্যাপার ফাইনাল হবে। এরমাঝে এসব টেনশান আর সে নিতে পারছে না।

দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে রাবুকে সাথে নিয়ে বাড়ির পেছনে যায় । যে করে হোক এই মেয়েকে তার পেতেই হবে। টেনশনে হার্টবিট বেড়েই যাচ্ছে।

চলবে……

পর্ব- ১৫

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/470026251446716/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here