#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-১৩|
একটা আলিশান গাড়ি থেকে একজন সুন্দরী মহিলা বেরিয়ে সামনের বাড়িতে হনহনিয়ে ঢুকে যায়। বাড়ির ড্রইং রুমে একজন ভদ্রমহিলা বসে আছে, তার দিকে তাকিয়ে সুন্দরী মহিলা বলল,
‘ আম্মু তোমার ছোট মেয়ে কোথায়? কখন থেকে ফোন করছি ফোন ধরছো না কেন?’
ভদ্রমহিলা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কোথায় আবার? সে তো তার রুমের বিছানায় আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। আর তুই তো জানিস তোর ছোট বোন দশটার আগে ঘুম থেকে উঠে না, এখন তো সবে আটটা বাজে। আর দুই ঘণ্টা অপেক্ষা কর তারপর তার দেখা মিলবে।’
মেয়েটা ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আম্মু তুমি তোমার ছোট মেয়েকে কিছু বলো না কেনো? কয়েক ঘণ্টা পর ইভানের ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। আর তোমার মেয়ের কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। এখনো সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।’
ভদ্রমহিলা মৃদু স্বরে বলল,
‘ লিমা একদম তোর মত হয়েছে। বিয়ের আগে তুই তো এমন ছিলি। হাজার ডেকেও তোকে সকালবেলা ঘুম থেকে তোলা যেত না। তাহলে আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেন? যা তোর বোনকে গিয়ে তুই ডেকে তোল।’
মেয়েটা রাগী গলায় বলল,
‘ যত জ্বালা সব হয়েছে আমার। ওদিকে আমার শাশুড়ি রাজি হচ্ছে না আমার বোনের সঙ্গে দেওরের বিয়ে দিতে। আর এদিকে আমার বোন এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।’
ভদ্রমহিলা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার সাথে তুই রাগ দেখাচ্ছিস কেন লামিয়া? যেখানে তোর শাশুড়ি এই সম্পর্কের মত নেই সেখানে তুই এত মাতামাতি করছিস কেন? এমন তো নয় যে পৃথিবীতে আর কোন ছেলে নেই।’
লামিয়া কর্কশ গলায় বলল,
‘ হ্যাঁ পৃথিবীতে ছেলের অভাব নেই। পৃথিবীতে আরও হাজারো ছেলে আছে কিন্তু ইভান এর মত নয়। ও ভবিষ্যৎ একজন ইঞ্জিনিয়ার। ভবিষ্যতেও কত টাকা ইনকাম করবে তোমার কোন ধারনা আছে? ভবিষ্যতের কথা বাদ দিলাম বর্তমানে ও যে পার্ট টাইম জব করে যে টাকা উপার্জন করে তার কোনো ধারনা আছে তোমার? আমি এতকিছু কি আমার নিজের জন্য করছি? সবকিছু লিমার ভালোর জন্য করছি। ও যেন ভবিষ্যতে ভালো থাকে। ও যেমন বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পছন্দ করে কেমন যেন ও ওর জীবন কাটাতে পারে। ও যেন কিছুদিন পর পর এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়াতে পারে।’
লামিয়ার মা মৃদু স্বরে বলল,
‘ সব কিছু টাকা দিয়ে বিচার করতে নেই একথা আমি তাদের হাজার বার বুঝিয়েছি।’
লামিয়া রেগে গিয়ে বলল,
‘ ধুর তোমার সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করার চেয়ে আমি গিয়ে লিমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।’
লামিয়া ওর মায়ের আর কোন কথা না শুনে ওখান থেকে চলে যায়। লামিয়া মা লামিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে। তিনি আজ হারে হারে টের পাচ্ছেন তিনি তার বড় মেয়ে কে মানুষ করতে পারেননি। ছোটবেলায় তো তার মেয়ে এমন ছিল না।আর এখন হিংসে লোভ বাসা বেঁধেছে তার মেয়ের মনে। যে মেয়ে তার তার সাথে কখনো গলা উঁচু করে কথা বলেনি আর এখন সে তার সাথে রাগারাগী করে। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে সেই ছোট্ট মেয়েটা তার। এখন তার কথা শুনতেও বিরক্ত লাগে ওর। এসব ভেবে লামিয়ার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
দুপুরের পরপরই ধারা আর জোনাকি চলে এসেছে ধারার নানার বাড়িতে। ধারা কে দেখে তাদের খুশির অন্ত নেই। ধারার দুই মামা আর এক খালা মনি। খালামণি তার শ্বশুর বাড়ি ঢাকাতে থাকে। ধারার বড় মামার তিন সন্তান। বড় মেয়ে মিনু তারপর ছেলে মিজান তারপর ছোট মেয়ে মনি। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মামার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে লতা এবং ছোট মেয়ে পাতা। এই নিয়ে সংসার তাদের।
ধারা ওর ভাই বোনদের সঙ্গে বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধারা কে পেয়ে যেন ওদের কথা শেষ হচ্ছে না। ঘুরতে ঘুরতে ধারার ছোট মামার ছোট মেয়ে পাতা বলল,
‘ আপু আজকে নৌকা করে ঘুরবে। অনেকদিন হয়েছে আমরা কেউ নৌকো করে ঘুরি না। চলনা আপু তুমি সঙ্গে খেলে দাদা ভাই আমাদের কাউকে কিছু বলবে না।’
ধারার বড় মামার ছোট মেয়ে মনি বলল,
‘ হ্যাঁ ধারা চল না তুই আমাদের সঙ্গে গেলে দাদা ভাই আমাদের কাউকে কিছু বলবে না।’
ধারা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আজ ঘুরা ঘুরি করতে ইচ্ছে করছে না। কাল নয় বিকেলে সবাই একসঙ্গে ঘুরতে যাব। আজ না হয় আমরা বাড়িতে বসে মজা করি। কি বলিস তোরা?’
ধারার কথায় সবাই রাজি হয়। কিছুক্ষণ আশপাশে ঘুরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে সবাই। দুপুরের রান্না করছে দুই মামি মিলে একসঙ্গে। সাথে অবশ্য জোনাকি ভাবিও আছে। জোনাকি ভাবি এসেই সবার কাজে হাত লাগানো শুরু করে দিয়েছে। জোনাকি ভাবিকে এ বাড়ির সবাই খুব পছন্দ করে। আর পছন্দ করবেই না কেন? এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে পছন্দ না করে কি থাকতে পারে কেউ!
দুপুরের গোসল করবে, কিন্তু এই নিয়ে দুই দলের মধ্যে ঝগড়া চলছে। মনি আর লতা বলছে পুকুরে গোসল করবে কিন্তু মিজান আর পাতা বলছে নদীতে যাবে। এই নিয়ে দুই দলের মধ্যে প্রচন্ড ঝগড়া। ধারা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে ওদের মাঝখানে। যাদের পক্ষ নিবে তাতেই সে বিপদে পড়বে। ওদের ঝগড়ার মাঝে বড় মামী এসে ধমক দিয়ে বলল,
‘ এই তোরা কি শুরু করেছিস? গোসল করবি তো এক জায়গায় গিয়ে করলেই তো হয় এই নিয়ে এত চিল্লাপাল্লা করলে করার কী আছে?’
বড় মামী ধমক শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। ধারা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আজ আমরা পুকুরে গোসল করি, কাল না হয় আমরা নদীতে গোসল করবো।’
পাতা চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,
‘ আমি পুকুরে তো সব সময় গোসল করি আজ চল না নদীতে। দেখো খুব মজা হবে।’
ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ তা হবে কিন্তু….
ধারার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বড় মামী বলল,
‘ ধারা তো বলছে কাল যাবে তোদের সঙ্গে নদীতে গোসল করতে। তাহলে এমন করছিস কেন মেয়েটা সঙ্গে। মেয়েটা সবে আজ আমাদের বাড়িতে এসেছে, আর আজকেই মেয়েটার সঙ্গে এমন শুরু করলি!’
পাতা মন খারাপ করে বলল,
‘ ঠিক আছে আজ না হয় পুকুরে গোসল করে নিব। কিন্তু কাল যদি আপু আমাদের সঙ্গে নদীতে না যায় তাহলে দেখে নিও আমি কি করি?’
পাতা এইটুকু বলে হনহনিয়ে পুকুরপাড়ের দিকে চলে যায়। পাতার এমন রাগ দেখে সবাই হেসে দেয়।
চলবে….
ঈদ মোবারক। ঈদের তিন দিন গল্প দিতে পারব না। ধন্যবাদ।