অদ্ভুত_প্রেমবিলাস পর্ব-৮

0
767

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-০৮|

চুপ করে ঘরের এক কোণে বসে আছে ধারা। চোখ দু’টো ছল ছল করছে। যেন যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে এমন অবস্থা। খুব তীব্রভাবে ধারা সেই বৃষ্টিতে আটকে রেখেছে। ধারা চায় না এই বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মাটিতে আছড়ে পড়ুক। বিকেলবেলা ধারা ওর ভাবির সাথে হাঁটতে-হাঁটতে বাড়ির সামনের রাস্তায় গেছিল। সেখানে দেখা হয়েছিল ওদের ক্লাসের একটা মেয়ের সাথে। মিনু বলল, ওদের ক্লাসে অনেকগুলো নোট ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে গেছে। ধারা যদি চায় তাহলে ওর থেকে সেগুলো সংগ্রহ করতে পারে। তাছাড়া পরীক্ষার তো আর বেশি দিন বাকি নেই। মিনুর কথা শুনে ধারা মনে মনে একটু স্বস্তি পায়। বিয়ে নামক উটকো ঝামেলার জন্য অনেক দিন সে পড়ার টেবিলে ধারে-কাছে যেতে পারেনি। এবার তো তাকে পড়তে হবে। তার জন্য নোটগুলো তার প্রয়োজন। ধারাদের বাড়ির দুই বাড়ি পরে মিনু দের বাড়ি। ধারা সময় নষ্ট না করে সন্ধ্যার পরে ওর আম্মা কে বলে মিনু দের বাড়িতে চলে যায়। মিনু দের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে মিনু কে ডাকার আগেই নিচু স্বরে চেঁচামেচি শব্দ পায় ধারা। দুই পা এগিয়ে বাড়ির দিকে গেলে শুনতে পায়। মিনু মা মিনু কে গালমন্দ করেছে। শব্দগুলো ঠিক এমন ভেসে আসছিল,

‘ তুই ঐ অপরা মাইয়াডার লগে রাস্তায় খারাই কিসের কথা কইছো?’

মিনু উত্তরে ছোট করে বলল,

‘ স্কুলের পড়ার বিষয় কথা কইছি।’

মিনুর মা তেতে উঠে বলল,

‘ পড়া নিয়ে কথা কইছি। খবরদার তোরে যেন আর ওই মাইয়ার লগে না দেই। তাইলে তোর একদিন কি আমার একদিন। মনে রাখিস কথাখান।’

এইটুকু শুনে ধারা ধীর পায়ে হেঁটে মিনু দের বাড়ির বাইরে চলে আসে। বুকে তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে ধারা। বাড়ির লোকজনের আড়ালে ধারা নিজের ঘরে চলে আসে। তখন থেকে চুপ করে বসে আছে ধারা। ধারা তো মনে মনে আন্দাজ করেছিল ওকে ভবিষ্যতে এমন হাজারো পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। তাহলে এত কষ্ট হচ্ছে কেন ওর? ওর অবস্থা অনেকটা বিনা দোষে দোষী হবার মত। কি সুন্দর আমাদের সমাজ ব্যবস্থা! কার দোষ সেটা পরখ করে না দেখে আঙ্গুল তুলতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারো আসার শব্দ ধারা সোজা হয়ে বসে। জোনাকি ভাবি এসেছে। জোনাকি ভাবি দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,

‘ তুই কখন বাড়ি ফিরেছিস? আমরা তো কেউ টেরই পেলাম না! ওদিকে আম্মা তোর জন্য চিন্তা করছে।’

ধারা হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘ আমি যখন বাড়ি ফিরেছি তখন তোমরা কেউ উঠানে ছিলে না। তাই আমাকে দেখতে পাওনি।’

জোনাকি ধারার চোখমুখের অবস্থান দেখে সন্দেহের গলায় বলল,

‘ মিনুর থেকে নোটগুলো এনেছিস? আর তোর চোখ মুখের অবস্থা এমন কেন? কিছু হয়েছে তোর?’

ধারা মৃদু হেসে বলল,

‘ না গো ভাবি নোটগুলো আনতে যায় নি। মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে এসেছি।’

জোনাকি চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘ কেনো? মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে এলি কেন?’

ধারা মাথা নিচু করে বলল,

‘ মাথাটা খুব ব্যাথা করছিল তাই।’

জোনাকি মৃদু চিৎকার করে বলল,

‘ আর সেটা তুই আমাকে এখন বলছিস? চুপ করে শুয়ে থাক, আমি এক্ষুনি তেল নিয়ে আসছি। তোর মাথায় মালিশ করে দেবো, আরাম পাবি।’

এইটুকু বলে জোনাকি হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ধারা ওর ভাবির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে, ভাবির কথামত বিছানায় শুয়ে পড়ে।

ইভান ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরের ঘুমিয়ে পড়েছিল। ইদানিং খুব ধকল যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে। আর মাত্র দুই মাস বাকি পরীক্ষার। সব মিলিয়ে দম ফেলার সময় পায়না ইভান। দুই-তিনবার ফোনের রিংটোনের শব্দ ইভান ঘুম ঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। ছোট ভাইয়া হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছে। ইভান ঘুমন্ত অবস্থায় ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

‘ হ্যালো।’

লাবিদ মৃদু স্বরে বলল,

‘ হাই ইভান কেমন আছিস তুই?’

ইভান ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ আলহামদুলিল্লাহ আমি একদম ভালো আছি ভাইয়া। তোমরা সবাই কেমন আছো? ভাবী কেমন আছে? ভাবী কোথায়?’

লাবিদ চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘ আমাকে তো কখনো এমন ভাবে জিজ্ঞেস করিস না? আমি কেমন আছি? কোথায় আছি? কিন্তু ভাবির বেলায় তো সবকিছু পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট জিজ্ঞেস করিস? সত্যি করে বলতো তুই কি আমার ভাই নাকি রুমির?’

লাবিদের কথা শুনে ইভান হেসে দেয়। শব্দ করে হেসে দেয়। লাবিদের কথা শুনে মিতা বেগম আর রুমি দু’জনেই মৃদু হাসে। ইভান কোনমতে হাসি থামিয়ে বলল,

‘ হা হা হা হা। ভাইয়া তুই একটু থাম আমি একটু হেসে নেই।’

লাবিদ অবাক হওয়ার অভিনয় করে বলল,

‘ আমি আবার কী করলাম?’

ইভান হাসতে হাসতে বলল,

‘ না না তুই তো কিছুই বলতে পারছি না।’

লাবিদ শয়তানি হেসে বলল,

‘ আচ্ছা শোন তোর সাথে আমার একটা ইমপর্টেন্ট কথা আছে।’

ইভান মৃদু স্বরে বলল,

‘ বল না কী বলবি?’

লাবিদ বলল,

‘ এক মিনিট অপেক্ষা কর বলছি।’

লাবিদ রুমি কে চোখের ইশারায় ফোন ওর হাতে নিতে বলে। লাবিদ গিয়ে ওর আম্মুর পাশে বসে রুমি ফোনের ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেয়। ইভান ফোনে ওদের কে একসাথে দেখে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলল,

‘ তোরা বাড়িতে আমাকে আগে বললি না কেনো?‌ ওই তুই আমার আম্মুর কাছে বসেছিস কেন? আম্মু তুমি ওকে সরাও তোমার পাশ দিয়ে। এই তুই ওঠ আম্মুর পাশ থেকে।’

ইভানের কথা কানে না দিয়ে লাবিদ ওর আম্মু কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আই লাভ ইউ আম্মু, তোমার তিন ছেলের মধ্যে আমি তোমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ আম্মু।’

ইভান চেঁচিয়ে বলল,

‘ এই তুই একদম মিথ্যা কথা বলবি না? তোরা সবাই জানিস আমি আম্মুকে কতটা ভালোবাসি? তারপরও তোরা বার বার এতো ড্রামা করিস কেন? আমি তোর সাথে এত কথা বলছি কেন? তুই আমার আম্মুর কাছ থেকে সরে যা। তোর কত বড় সাহস তুই আমার সামনে আমার আম্মুকে জড়িয়ে ধরেছিস!’

লাবিদ এবারো ইভানের কথা না শুনে বলল,

‘ আম্মু তুমি আমাকে কতদিন আদর করো না? আজ কিন্তু তুমি আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবে! না হলে কিন্তু আমি খাব না! তাছাড়া আমি জানি তো আমার আম্মু কখনো আমার কথা ফেলতেই পারে না। আই লাভ ইউ আম্মু।’

এইটুকু বলে লাবিদ ওর আম্মুর গালে শব্দ করে চুমু দেয়। ইভান এইবার রেগে চিৎকার করে বলল,

‘ আম্মু তুমি ওকে তোমার কাছ থেকে যেতে বলবে? না আমি সবকিছু ভেঙে ফেলব।’

মিতা বেগম ইভানের রেগে যাওয়া দেখে লাবিদ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুমির হাত থেকে ফোন নিয়ে বলল,

‘ তুই এত হিংসুটে কেন বলবি আমায়? সেই ছোটবেলা থেকে আমার ভাগ কাউকে দিতে চাস না। আমার সব আদর তোর জন্য, ছোটবেলায় তো তুই তোর বাবাকে পর্যন্ত আমার কাছে আসতে দিতি না। এই বাবু তুই এমন কেন বলবি আমায়?’

মায়ের কথা শুনে ইভান মুখ ফুলিয়ে বলল,

‘ আমি এমনই! তুমি তো জানোই তাহলে বারবার জিজ্ঞেস করো কেন? আমি আমার ভালোলাগার জিনিসগুলো কিংবা ভালোবাসার মানুষ গুলোকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারিনা! আমার ভালোবাসার ধরন অন্যরকম! একদম সবার থেকে আলাদা!’

মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,

‘ আমিতো জানি পাগল ছেলে ভালোবাসার ধরন অন্যরকম। যাইহোক শোন তোর ছোট ভাইয়া এতক্ষণ তোকে খ্যাপানোর জন্য এমন করছিল। অনেক রাগারাগি হয়েছে, যা হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নে।’

ইভান ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,

‘ ঠিক আছে আম্মু। নিজের খেয়াল রেখো। আই লাভ ইউ সো মাচ।’

মিতা বেগম মুচকি হেসে বলল,

‘ আই লাভ ইউ টু বাবু।’

এইটুকু শুনে ইভান ফোন রেখে দেয়। ইভানের এমন পাগলামি দেখে মিতা বেগম, রুমি আর লাবিদ শব্দ করে হেসে দেয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here