অদ্ভুত_প্রেমবিলাস পর্ব-৭

0
794

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-০৭|

ধারা ঘুম থেকে উঠে পুকুর পাড়ে আসে। এটা ধারার ভালো লাগার একটা জায়গা। মন খারাপ থাকুক কিংবা ভালো ওকে এখানে আসতেই হবে। এটা যেন ওর নিত্যদিনের নিয়ম। এই নিয়মের হেরফের কখনো হতে দেয় না ধারা। দিনে একবার অন্তত তার পুকুরপাড়ে আসা চাই। পুকুরপাড়ে বসার জন্য সিমেন্ট দিয়ে বেঞ্চ এর মত তৈরি করা আছে। এখানে বসে ও আর ওর বান্ধবী মিলে কত আড্ডা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে ওদের সঙ্গ দিতে জোনাকি ভাবি ও জোট বাঁধে। হঠাৎ ধারার চোখ যায় হাতের আঙ্গুলের দিকে মনে পড়ে যায় ওই দিনের কথা। ভরা সমাজে দাঁড়িয়ে কত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে ওর পরিবার কে। ধারা ওর দাদি আম্মার মুখে শুনেছে, মতিন নামের ছেলেটা ধারাকে রাস্তায় দেখে পছন্দ করে ফেলে। খোঁজ নেয় ধারা কোন বাড়ির মেয়ে তা জানার জন্য। পরে ঘটকের মাধ্যমে বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। এত তড়িঘড়ি করে কি হলো? সেই তো… না না ও আর এসব কিছু মনে করতে চায় না। এসব মনে করলে ওর যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ভেসে ওঠে চোখের সামনে ওকে নিয়ে করা উপহাস গুলো। আশেপাশের দুই একজন ছাড়া কেউ ওর সঙ্গে কথা বলতে চায় না। ওকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। ওর পিছনে ওকে নিয়ে কী বলে তা ওর অজানা নয়। এবার ওকে শক্ত হতে হবে, নিজের জন্য না হোক অন্তত পরিবারের জন্য। নিজেকে শক্ত হতে হবে! নিজেকে শক্ত হতে হবে! ধারা শেষের কথাগুলো বিড় বিড় করে বললেও ধারার পিছনে জোনাকি দাঁড়িয়ে সেগুলো স্পষ্ট ভাবে শুনেছে। একটু আগে ধারার বড় ভাইয়া বাড়িতে ফিরেছে। ধারার নতুন ফোনের মতো দেখতে আর একটা ফোন জোনাকির জন্য কিনে এনেছে। জোনাকি সেই ফোন হাতে নিয়ে ধারার ঘরে গেছিল সেখানে না পেয়ে পুকুর পাড়ে আসে জোনাকি। তখন শেষের কথাগুলো শুনে জোনাকি বলল,

‘ কাকে শক্ত হতে হবে? কি বলছিস এসব?’

ধারা চমকে ওঠে আরো কণ্ঠস্বর শুনে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখ জোনাকি ভাবি দাঁড়িয়ে আছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধারা বলল,

‘ ওহ তুমি! আমি ভাবলাম কে না কে?’

জোনাকি ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ বললি না তো কাকে শক্ত হতে হবে!’

ধারা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

‘ কই কিছু না তো। তুমি এখানে এই সময়ে? ভাইয়া না বাড়িতে এখন।’

জোনাকি ধারার পাশে বসে বলল,

‘ তোকে খুঁজছি তাই। কিন্তু তুই এখানে কী করছিস?’

ধারা ছোট করে বলল,

‘ ঘরে ভালো লাগছিলো না তাই এখানে এসেছি।’

জোনাকি ওর হাতে থাকা ফোনটা ধারার হাতে দিয়ে বলল,

‘ এই দেখ এটা তোর ভাইয়া এনেছে আমার জন্য।’

ধারা ঠোঁটে হাসি টেনে ফোন টা হাতে নিয়ে বলল,

‘ ভাবি এটা দেখতে তো অবিকল আমার ফোনটার মত।’

জোনাকি হাসি মুখে বলল,

‘ হ্যাঁ ননদ-ভাবির এক ফোন।’

জোনাকির কথা শুনে ধারা হেসে দেয়। শব্দ করে হেসে দেয়।

‘ ইভান, এই ইভান।’ কারো ডাক পিছন ফিরে তাকায় ইভান। বইয়ের পাতা ভাঁজ করে রেখে ইভান মৃদু স্বরে বলল,

‘ মিহু তুই তো জানিস আমি বই পড়ার সময় কোন প্রকার ডিস্টার্ব পছন্দ করিনা।’

মিহু ইভানের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,

‘ রাখ তো তোর বই পড়া। ওদিকে জেসি তোকে পুরো ইউনিভার্সিটি চিরুনি তল্লাশি করে খুঁজছে।’

ইভান মুখে বিরক্তভাব ফুটিয়ে তোলে। কিছু একটা বিড়বিড় করতে করতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ রাহুল, হেরি, রোজ ওরা কোথায়? ওরা কি এখনো ইউনিভার্সিটি তে এসে পৌঁছায়নি?’

মিহু দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

‘ এসেছে তো সেই কখন, গেটে দাঁড়িয়ে আছে। জেসির জন্য এদিকে আসতে ভয় পাচ্ছে।’

ইভান কপাল কুঁচকে বলল,

‘ তুই এলি কীভাবে? তোকে দেখেনি না কী?’

মিহু মৃদু স্বরে বলল,

‘ তোর লাইলী তো আমাকে দেখতেই পারে না। আমাকে ইউনিভার্সিটি তে ঢুকতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে গেছে। আমি সেই সুযোগে তোর কাছে চলে এসেছি।’

ইভান বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ মিহু তুই ভালো করে জানিস আমি এসব পছন্দ করিনা। জেসি যত পাগলামি করুক না কেন আমি ওকে ভালোবাসি না। ইভেন কখনো ভালোবাসবো না। আর সব থেকে বড় কথা আমাদের দু’জনের ধর্ম ভিন্ন। কারো ফ্যামিলি আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। তাই প্লিজ তোর এই ননসেন্স এর মত কথা বন্ধ করে রাহুলদের ফোন করে এখানে আসতে বল। কোন সমস্যা হলে আমি দেখে নেব।’

মিহু খেপে গিয়ে বলল,

‘ এই, এই তুই ননসেন্স কাকে বললি? তুই দাঁড় ওদের আগে ফোন করে দেই। তারপর তোকে আমি দেখছি মজা।’

ইভান মিহুর কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার গাছের নিচে বসে বই পড়ার মন দেয়। মিহু একা একা বকবক করতে করতে রাহুলদের ফোন করে।

ইভান ক্লাস সিক্সে উঠার পর ইভানের বাবা ওকে ইতালি পাঠিয়ে দেয়। ইভান ইতালিতে আসার পর হেরি আর রোজের সাথে বন্ধুত্ব হয়। কলেজে ওঠার পরে বন্ধুত্ব হয় রাহুল আর মিহুর সাথে। রাহুল আর মিহু ইন্ডিয়ার নাগরিক। হেরি আর রোজ এখানে স্থায়ী বাসিন্দা। বেশ অনেক বছরের বন্ধুত্ব তাদের। এরা কেউ কাউকে ছাড়া কিছু বুঝে না। সারাদিন চিল্লাপাল্লা হইহুল্লোড় করে দিন পার করে। মিহু ফোন করে ডাকার পর ওরা সবাই চলে আসে ওখানে। ইভান জানে ওরা এখন ওকে খোঁচাবে। কিন্তু ইভান ওদের সুযোগ না দিয়ে বলল,

‘ ক্লাসে চল দেরী হয়ে যাচ্ছে।’

রাহুল বিড়বিড় করে বলল,

‘ এই শালা সবকিছুর আগে আগে বুঝে যায়। এখনো নিশ্চয়ই বুঝে গেছে, আমরা ওকে খোঁচাতে চেয়েছি।’

ইভান আড়চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার নামে নিন্দা হয়ে গেলে এবার ক্লাসে যাওয়া যাক।’

ইভান কারো উত্তরের অপেক্ষা না করে ক্লাসের দিকে হাঁটা শুরু করে।

রাত আটটা বাজে। মিতা বেগম তার ছেলে এবং ছেলের বউ সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সালমা গেছে রাতের খাবার তৈরি করতে। আড্ডার মাঝে হঠাৎ করে লাবিদ বলল,

‘ আম্মু আমি তোমাকে এখন কিছু বলবো তুমি কী তা করবে?’

মিতা বেগম সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ ঘটনা কী বলতো।’

লাবিদ দুষ্টুমি হেসে বলল,

‘ আরে দেখো ই না কী করি।’

লাবিদ ফোন বের করে কিছুক্ষণ পর বলল,

‘ হাই ইভান, কেমন আছিস তুই?’

ইভানের নাম শুনে মিতা বেগম আর রুমি চোখ বড় বড় করে লাবিদের দিকে তাকায়। এখন যে লাবিদ কী করতে চাচ্ছে তা খুব ভালো করে জানে মিতা বেগম আর রুমি। আজ হয়তো কুরুক্ষেত্র বাঁধবে এ বাড়িতে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here