সুখ নীড় পর্ব-১৭

0
299

#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৭

জয়ীতা চোখ খুলে চারপাশে তাকিয়ে দেখল সে একটা অচেনা রুমে শুয়ে আছে। এটা কোনো হাসপাতালের বেড না এটা শিওর। খুব সাজানো গোছানো পরিপাটি রুম। ঠিক তার বেডরুমের মতোই। মাথায় নাড়াতেই টের পেল মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে। মাথা ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা। ডান হাতটাও ব্যান্ডেজ পেঁচানো। প্রচণ্ড রকমের ব্যাথা অনুভব হলো একটু ঘুরতে গিয়েই তার। শরীরটা টেনে ওঠাতে যেয়ে বুঝতে পারল এটা তার জন্য ভীষণ রকমের অসাধ্য প্রায়। পুরো শরীর বিষের মতো ব্যথা। ধীরেধীরে মনে করতে চেষ্টা করছে সে এখন কোথায়!

কিছুই বুঝতে না পারলেও রাবু খালার সাহায্য নিয়ে যে সে পালিয়েছিল এটা মনে পড়ল। সে নামতে যেয়ে হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিল ব্যস এটুকুই মনে আছে। তাহলে এখানে কী করে এলো সে? তাকে কি তার শাশুড়ি আবার ধরে ফেলেছে? ভয়ে বুকের মাঝে ঢিপঢিপ বাড়তেই থাকে তার। পরক্ষণেই আবার মনে হয়, হয়ত সে তার শাশুড়ির হাতে ধরা পড়েনি। তার শাশুড়ি তাকে পেলে আস্ত কবরে পুতে ফেলত এতক্ষণে । এমন করে আদর করে চিকিৎসা করে শুইয়ে রাখত না। তাহলে কে তাকে চিকিৎসা করেছে? পল্লব? বুকের মাঝে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠে তার। পল্লব ছাড়া আর আছেই বা কে !
কিন্তু পল্লব কোথায়? রুমটা যেহেতু তার অচেনা তার মানে পল্লব হয়ত তাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। আশেপাশে ঘুরে তাকাতেও পারছে না। যতটুকু সম্ভব এদিক ওদিক তাকাল পল্লবকে খুঁজতে।

কিছুতেই এ পাশ ওপাশ ঘুরতে পারছে না জয়ী। বুঝতে পারল দোতলা থেকে নামার সময় ওপর থেকে পড়ে যেয়ে যা অঘটন ঘটার ঘটেছে। হাত আর মাথায় হয়তো বেশি আঘাত পেয়েছে তাই পল্লব ডাক্তার ডেকে ব্যাণ্ডেজ় করেছে। মনে মনে পল্লবকে খুঁজেই যাচ্ছে সে।

হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ায় তুহিন। তুহিনকে দেখে তো জয়ীর চোখ ছানাবড়া।

এ কাকে দেখছে সে? তুহিন? এ তো সেই ছেলে যার ভাস্তিকে সে বিয়ের আগে পড়াত। সেই বেয়াদব ছাত্রী নেহার চাচ্চু। নেহাকে সে যখন পড়াত তখন কয়েকবার দেখা হয়েছিল তুহিনের সাথে তার। তুহিন তখন বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়ত। তার থেকে দুই ব্যাচ জুনিয়র তুহিন।
প্রায় তিন বছর পর তুহিনকে দেখলেও জয়ীর তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না। সে প্রচণ্ড অবাক হয় তুহিনকে দেখে। এই মুহূর্তে কী বলবে সে বুঝতে পারছে না। তুহিনকে দেখে শরীরের ব্যথাকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে উঠে বসতে গেল সে।

– আহা! করছেন কী! ব্যস্ত হবেন না! আপনার এখন রেস্ট প্রয়োজন। প্লিজ, শুয়ে থাকুন।

কোনোমতে একটু আধাশোয়া অবস্থায় উঠে বসল জয়ী।

– আপনি… না মানে আমার ভুল না হয়ে থাকলে আপনি নেহার চাচ্চু, তাই না?

– জি, ঠিকই বলেছেন। আমি তুহিন, নেহার চাচ্চু।

– কিন্তু আমি এখানে কোথায়.. মানে… আসলে…

– আপনি শান্ত হোন, প্লিজ! আমি বলছি। এটা আমার বাসা। আপনি আমার রুমেই আছে।

জয়ী অবাক হয়ে বলল, মানে? এখানে আমি? পল্লব কোথায়?

– আপনাকে আমি নিয়ে এসেছি। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন আপনার বাড়ির পেছনে। সেখান থেকে আমার এক বিশ্বস্ত লোক আপনাকে নিয়ে এসেছে। সেখান থেকে এনে ডাক্তারও দেখিয়েছি আপনাকে। আপনি বেহুশ ছিলেন তাই কিছুই মনে নেই আপনার।

জয়ী আরো অবাক হয়। সে তুহিনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তার মুখ দেখে তুহিন বুঝতে পারে ব্যাপারটা।

– আপনি বেশি প্রেসার নিবেন না, প্লিজ। আমি শুরু থেকে সবকিছু খুলে বলি। না হলে কিছুই বুঝতে পারবেন না।

আমি নেহার চাচ্চু এটা ঠিক। তবে আমার আরেকটা পরিচয়ও আছে। আমি আপনার হাজবেন্ড পল্লবের বড় খালার ছোট ছেলে। মানে আপনার নানা শ্বশুর আমার নানা ছিলেন। আমাদের সাথে আপনাদের পরিবারের বন্ডিং ভালো না বলেই হয়ত আপনার সাথে আমাদের পরিচয় নেই। আমি শাহীন তালুকদার এর ছোট ভাই তুহিন তালুকদার।

জয়ীতা এবার যেন সব আরো এলোমেলো করে ফেলল। একেই বলে পৃথিবী গোল। ঘুরেফিরে আবার সেই এক জায়গা।

জয়ীতার ফেইস দেখে তুহিন বুঝতে পারে যে ব্যাপারটা এখনো ক্লিয়ার না জয়ীতার কাছে। তাই সে সবকিছু খুলে বলার জন্য চেয়ারটা টেনে নিয়ে জয়ীর বিছানার পাশে বসল।

– দেখুন, আপনি যে পল্লব ভাইয়ের ওয়াইফ এটা আমি জেনেছি গত পরশু নিউজপেপারে আপনার নিখোঁজ সংবাদ দেখে। আমি তো প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। পরে নেহাকে দেখাই। ও দেখেই আপনাকে চিনে ফেলেছে। যাই হোক মূল কাহিনীতে আসি।
আপনি যে কিডন্যাপ হয়েছেন এটা আমার আর ভাইজানের কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি। ভাইয়া এবার আমাদের এলাকা থেকে নমিনেশন পাচ্ছে এমপি ইলেকশানে। ওদিকে অপজিশন থেকে পাচ্ছে ছোট খালামণি। ভাগ্যের কী পরিহাস দেখেন! রক্তের সাথে রক্তের লড়াই হচ্ছে। যাক, সেটা আমাদের নিয়তি! আমি জন্মের পর থেকেই এটা দেখে বড় হয়েছি। নানার সম্পত্তির অধিকার নিয়ে খালামণি আর ভাইজানের তুলকালাম লড়াই চলছে তো চলছেই। কেউ কাউকে এক চুল ছাড় দিতে রাজী নয়। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখতে দেখতে আমি ভীষণ ক্লান্ত!

জয়ী বুঝতে পারছে না এসব গল্প তাকে কেন শোনাচ্ছে? এসবের সাথে তার কী সম্পর্ক?

– ভাবছেন এসবের মাঝে আপনার কী সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, মিস। আপনি হলেন এদের দু’জনের মাঝে বলির পাঠা। আমি যতদূর জানি আপনার শাশুড়ি মানে আমার খালামণি আপনাকে এমনিতেই নাকি পছন্দ করেন না। করার কথাও না। সে যে হাই ক্লাস মেইনটেইন করে চলে সেখানে আপনাকে মেনে নেওয়া ওনার জন্য আসলেই খুব বেশি বেমানান। অর্থ প্রাচুর্যের অহংকার ছাড়া আর কিছুও চিনেন না। যদি ভালোই হতো তবে তার নিজের সংসারটা অনন্ত ঠিকঠাক করতে পারত!
আমার খালামণি নিজেই আপনাকে কিডন্যাপ করেছে যাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারে। একদিকে আপনাকে তার ছেলের লাইফ থেকে সরিয়ে দেয়া অন্যদিকে আমার ভাইজানকে আপনার কিডন্যাপের দায়ে ফাসিয়ে দেওয়া। সে অলরেডি এভাবে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেও।

আমার আর ভাইজানের বিশ্বাস ছিল আপনি ওই বাড়িতেই আছেন। ও বাসার সিসি ফুটেজ গায়েব হলেও আপনার নিখোঁজ হবার দিনের আগ হতে শুরু করে পরের দু’দিন পর্যন্ত আপনাদের বাসার সামনের পেছনের রাস্তার ফুটেজ আমরা তন্নতন্ন করে দেখেছি। কোথাও আপনার নাম নিশানা দেখিনি। তখনই শিওর হয়েছি আপনি ও বাড়িতেই আছেন। তাই ভাইজানের নির্দেশে আমাদের লোক ছদ্মবেশে ও বাড়ির চারপাশে কড়া পাহাড়ায় ছিল। আমাদের ধারণাই সত্যি হয়েছে। আপনাকে আমরা সময়মত উদ্ধার না করলে আপনার শাশুড়ি না জানি এতক্ষণে কী করে ফেলত! সবই আল্লাহর রহমত!

আপনি দোতলা থেকে নামার সময় পড়ে গিয়ে বেশ কয়েক জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন। মাথা আর হাতে অনেকটা থেতলে গেছে। তাই আমি ডাক্তার ডেকে আপনার চিকিৎসা শুরু করেছি। আপনি এই বিশ/ একুশ ঘণ্টা ধরে এখানেই আছেন।

জয়ীর তো মাথা ঘুরছে এসব শুনে! এতকিছু চলছে তাকে নিয়ে! কিন্তু এতকিছুর মাঝে পল্লব কোথায়?

-আমতা আমতা করে সে বলল, আচ্ছা, পল্লব কি জানে কিছু? সে কোথায় ?

– পল্লব ভাইয়ের কোনো খোঁজ সঠিক জানিনা তবে যতটুকু শুনেছি সে অসুস্থ। জ্বরের কারণে হসপিটালে এডমট করতে হয়েছে। মিডিয়ার লোকজনও তাকে খুঁজছে। কিন্তু সে নাকি হসপিটালে। ভয় নেই খালামণির তত্ত্বাবধানেই আছে।

– পল্লবের অসুস্থতার কথা শুনে খুব খারাপ লাগল জয়ীর! খারাপ লাগাটাকে চেপে রেখে সে আস্তে করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলল, কিন্তু আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?

– কোথায় নিয়ে যাব বলুন! আপনাকে চোরের মত করে চুরি করে নিয়ে এসেছি। বস্তায় ভরে নিয়ে আসতে হয়েছে। না হলে কেউ যদি কোনোভাবে টের পেত তাহলে সব শেষ!

জয়ী এবার বুঝল তার সারা শরীর এত ব্যথা হওয়ার কারণ! বস্তায় ভরে আলু পটলের মতো টানতে টানতে তাকে নিয়ে এসেছে। তাও যাই হোক, প্রাণে তো বেঁচেছে। তুহিনকে বিশ্বাস করা যায়। সে তেমনই ছেলে। এ বাড়িতে এই একজন মানুষকেই তার মানুষ মনে হতো। খুবই পরোপকারী আর নেক মনের মানুষ।

– জয়ীতা সাহস করে বলল, আমাকে এখন কী করবেন? মানে আমি আপনার ভাইয়ার জন্য কী কাজে আসব? কোনো স্বার্থ ছাড়া তো আর আমাকে আনেন নি!

– দেখুন, ভুল বুঝবেন না, প্লিজ! এটা ঠিক যে ভাইজান আপনাকে তার হাতিয়ার হিসেবে ইউজ করতে চাইছে। কিন্তু আমি তেমনটা নই! ভাইজানের রেগুলার চেকআপের জন্য ভাবী ভাইজান গত পরশু ইন্ডিয়াতে গেছে। সাথে নেহাও গেছে কীসব শপিং করার জন্য। তাই তারা কেউই আপনার ব্যাপারে কিছুই জানে না। আমি কিছুই জানাইনি। জানাতেও চাই না। আপনাকে এখানে যে নিয়ে এসেছে ও আমার খুব ক্লোজ লোক । ওকে নিষেধ করেছি কাউকে কিছু বলতে।

– কেনো নিষেধ করেছেন? জয়ী কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

– আমি চাই না আপনি কোনো নোংরা রাজনীতির শিকার হন। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এসব ভীষণ ঘৃণা করি। ভাইজান হয়ত দু’ একদিনে চলে আসবেন। সে ফেরার আগে এখান থেকে আপনাকে কোথাও নিরাপদে রেখে আসতে চাই। বাসার কোনো সার্ভেন্টও আপনার এখানে আসার খবর জানে না। তাই কেউ কিছু টের পাবার আগে এখান থেকে বের হতে হবে। ভাইজানের কানে গেলে আমার কিছু করার থাকবে না আর। ভাইজানের হাতে পড়লে উনি আপনার থেকে সব সত্যি বের করে ছাড়বেন। বুঝতেই তো পারছেন। আপনাকে ব্যবহার করে নিজের অপজিশনকে উইক করতে চাইবেন। ভাইজান আর ছোট খালামণি প্রায় কাছাকাছি বয়সের। এদের বুদ্ধির মাত্রাও কারো থেকে কারো খাটো নয়।

জয়ীর মাথা বনবন করছে এসব শুনে। এক বিপদের মুখ থেকে বেঁচে এ আবার নতুন কোন বিপদে জড়াতে যাচ্ছে সে। তুহিনকেই বা সে বিশ্বাস করবে কেনো? সেও তো ওদেরই রক্ত। অবশ্য তুহিনকে সে যতটুকু চিনে অবিশ্বাস করার মতো ছেলে সে না। তবুও বলা তো যায় না। সে কী করবে বুঝতে না পেরে বলল,

– আমি পল্লবের কাছে ফিরতে চাই, প্লিজ। আর কোথাও যেতে চাই না।

– আর ইউ ক্রেজি? এই মুহূর্তে পল্লবের কাছে ফেরা মানে আবার নিজেকে বিপদে ফেলা। তাছাড়া পল্লব কোথায় আছে সেটা আমি নিজেই জানি না। এই মুহূর্তে আপনি নিখোঁজ সবার কাছে। নিজেকে বাঁচাতে চাইলে আপনাকে নিখোঁজই থাকতে হবে। শুধু পল্লবই কেনো এ সময়ে আপনার কোনো আপনজনের কাছেও যাওয়া যাবে না।

– জয়ী কী করবে না করবে কনফিউজড। তাছাড়া পল্লবের জন্যও চিন্তা হচ্ছে খুব।

– জয়ীকে কনফিউজড দেখে তুহিন বলল, আর আপনার যদি আমাকে বিশ্বাস না হয় সেক্ষেত্রে পুলিশের কাছে হেল্প চাইতে পারেন। তবে আমার দৃষ্টিতে সেটা হবে চরম বোকামি। পুলিশ কাস্টডিতে গেলেই আপনাকে আবার আপনার শাশুড়ির হ্যান্ডওভার করা হবে। আর ঘুরে ফিরে আদতে ঘটনা সেই একই হবে। আমার সীমিত জ্ঞানে যতটুকু বুঝি আপনি নিশ্চয়ই আপনার শাশুড়ির বিরুদ্ধে থানায় মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারবেন না। কারণ দিনশেষে তার ঘরেই আপনাকে ফিরতে হবে। পারলে অনেক আগেই পারতেন। তাছাড়া পল্লব ভাইয়ের সন্ধান না জানা পর্যন্ত কিছুই করতে পারবেন না আপনি।

জয়ীতা অনেকক্ষণ ভেবে বুঝল সে আসলেই ঠিক বলেছে। এই মুহূর্তে তুহিনকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যে বিপদের হাত থেকে সে বেঁচে ফিরেছে এর থেকে বড় আর কিইবা হতে পারে?

– জয়ীতা অনেকক্ষণ ভেবে পরে বলল, আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন এখন?

– আপাতত মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় রেখে আসব। ওখানে নিরাপদে থাকবেন। ওর নাম মিতা। আমরা ভার্সিটিতে একসাথে পড়েছি। ওর হাজবেন্ড বাইরে থাকে। একটা বাচ্চা নিয়ে শাশুড়ির সাথে থাকে। খুব ভালো মেয়ে। আমার সাথে ওর খুব ভালো রিলেশন। ওকে আপনার বিপদের কথা জানাতেই ও রাজী হয়ে গেছে। আমি ঢাকাতেই কোথাও আপনাকে রাখতে পারতাম। কিন্তু নিরাপদ মনে করছি না।

মেয়েদের নাম শুনে জয়ী কিছুটা ভরসা পেল।

– আজ রাতেই আমরা বের হবো।

– কিন্তু পল্লব?

– আমি আপনাকে রেখে এসে পল্লব ভাইয়ের সন্ধান করব। এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন সে যেখানেই থাক ভালো আছে। কারণ নিজের ছেলের কোনো ক্ষতি করবে না খালামণি। এতটা বোকা সে না। আপাতত নিজে সেফ থাকবেন কীভাবে সেটা বেশি জরুরী।

জয়ী অনেক ভেবে রাজি হলো।

তুহিন কিচেন থেকে নিজে খাবার নাম করে এক প্লেট খাবার নিয়ে আসে।

খাবার দেখে জয়ীতার মুখে পানি চলে এলো যেনো। কতদিন সে পেটপুরে খায় না। তুহিন প্লেট এগিয়ে দিয়ে খেতে বলতেই খুশির চোটে হাত বাড়িয়ে খাবার খেতে যেতেই সে অনুভব করল তার ডান হাতে এতটাই ব্যথা যে কিছুতেই সে খাবার খেতে হাত বাড়াতে পারছে না। তুহিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেই খাবার তুলে জয়ীতার মুখে তুলে দিতে গেল।

জয়ীতা ইততস্তবোধ করছে দেখে সে বলল, এছাড়া উপায় নেই। প্লিজ, না করবেন না। আমি অন্য কারো সাহায্য নিতে পারছি না। তাছাড়া আপনার হাতের যে সিচুয়েশন তাতে নিজে খেতেও পারবেন না। খেয়ে নিন,প্লিজ।

জয়ীতা অগত্যা কোনো উপায়ান্তর না দেখে কোনোভাবে খাবারটা খেয়ে নিলো।

খাওয়া শেষ হলে তুহিন তাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে বলল, একটু রেস্ট নিন। আমরা ঘণ্টা দুয়েক বাদেই বের হব। রাত আরো গভীর হোক। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেই আমরা বের হবো। আমি এখানেই আছি। আমিও একটু রেস্ট নেই। কিছু লাগলে জানাবেন।

তুহিন ঘুমিয়ে গেলেও জয়ীর ঘুম আসে না। সে তাকিয়ে দেখছে তুহিনকে। নিশ্চিন্তে সোফাতে ঘুমাচ্ছে। তুহিনকে অবিশ্বাস করার কোনো অপশন এই মুহূর্তে নেই তার হাতে। নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলো সে। দেখা যাক তার নিয়তি আর সময় তাকে কোথায় নিয়ে যায়?

নিজের জন্য খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেও পল্লবের কথা ভেবেই বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠল। পল্লব ভালো আছে তো? কবে দেখা হবে পল্লবের সাথে তার? আর কি আদৌ দেখা হবে পল্লবের সাথে?

ঝাপসা চোখজোড়া থেকে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছে অঝোর ধারায়। নিয়তিই তার এখন একমাত্র পুঁজি।

চলবে…..

পর্ব- ১৬
https://www.facebook.com/111576077291737/posts/475056137610394/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here