#সুখ_নীড়
#পর্ব_১৯
পল্লব সকালে ঘুম থেকে ওঠার কিছু পরেই কেউ একজন তাকে নিজের পরিচয় গোপণ করে ফোন করে। সে বলেছে সে নাকি তাকে জয়ীর খবর জানাতে পারবে। আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাই উত্তরাতে একটা ক্যাফেতে দেখা করতে বলেছে। তবে এটা কারো সাথে শেয়ার করা নিষেধ। শেয়ার করলে জয়ীর ক্ষতি হতে পারে।
পল্লবতো আনন্দে আটখানা। কেউ তার সাথে ফান করছে কি না সে এখনো নিশ্চিত না। তবুও কেউ তো তার জয়ীর খবর জানে বলে এই পর্যন্ত স্বীকার করল। খুব বেশি কথা বলতে পারেনি সে। মাত্র ৪৫ সেকেন্ড এর মাঝে কথা শেষ করে লাইন কেটে দিয়েছে। বারবার কল দিয়েও আর ওই নাম্বারে কানেক্ট হতে পারছে না সে! না পারে পারুক। একবার মনে হয় কোনো ফেইক কল। কেউ হয়তো তার ইমোশান নিয়ে খেলতে চাইছে।
কিন্তু ফেক কলও যদি হয় তবুও সে যাবে। যদি এর মাঝে একবিন্দু সত্য থাকে? সে কোনো রকমের কোনো ভুলচুক করতে রাজী না।
ফোন আসার পর থেকে পল্লবের একটা মুহূর্তও যেন অনন্তকালের সমান মনে হচ্ছে। কখন সন্ধ্যা হবে, কখন সাতটা বাজবে!
সে অনেক চিন্তাভাবনা করে পরে ধরেই নিয়েছে জয়ীকে যারা কিডন্যাপ করেছে তারাই কল দিয়েছে হয়তো তাদের ডিম্যান্ড জানাতে। কিন্তু কলদাতার কথাবার্তায় এতটা আন্তরিকতা ছিল যে আবার সেটাও মনে হলো না। এত অল্প সময়ের জন্য কথা হয়েছে বলে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগই পায়নি। তবুও সন্দেহ তো থেকেই যায়। তাই রিভলবারটা সাথে নিয়ে নিলো।
দুপুরের খাবার শেষ করেই পল্লব বেরিয়ে পড়ল। খাবার টেবিলে তার আম্মির সাথে আজ দেখা হলেও কোনো ধরণের কথা হলো না মা ছেলেতে। বেশ কিছুদিন ধরেই তাদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ। কারণ পল্লব কিছুতেই মানতে পারছে না তার মায়ের কথা। সে যতবারই বলুক সে জয়ীর খবর জানে না, কিন্তু পল্লবের কেনো যেনো মনে হয় তার আম্মিই জয়ীর সাথে কিছু করেছে।
জ্যামে পড়তে পারে ভেবে আগেভাগে রওয়ানা দিয়ে পাঁচটার মধ্যেই পল্লব পৌঁছে গেল নির্ধারিত জায়গায়। অপেক্ষার প্রহর যেনো কাটছেই না। অপেক্ষার এই সময়টুকুতে কত শত উল্টাপাল্টা চিন্তা এসে তার মাথা জুড়ে বসেছে। কিছুতেই সেগুলি ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। কী হতে পারে জয়ীর সাথে? জয়ী বেঁচে আছে তো? এতদিন বাদে কে এমন হতে পারে যে জয়ীর খবর জানে? নাকি সবই ভাওতাবাজী? তাকে কোনো ঝামেলায় ফেলতে চাইছে হয়তো কেউ! নাকি আসলেই জয়ীর খবর জানে?
সবকিছু সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে হাজারো প্রশ্নকে মাথায় নিয়ে অপেক্ষার প্রহর যেনো কাটছেই না তার।
পল্লব এক কাপ ব্লাক কফির অর্ডার দিয়ে বারাবার ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়াল করছে।
ঠিক সাতটার সময় তার সামনে এসে বসল তুহিন।
তুহিনকে দেখে পল্লবের তো চোখ ছানাবড়া। তুহিন তার ফার্স্ট কাজিন হওয়া স্বত্তেও তার সাথে শেষ কবে ভালো মুখ করে কথা বলেছে বা দেখা করেছে তার মনে পড়ছে না। তার নানার স্মরণে একবার এক বিশাল ভোজসভা হয়েছিল তাদের এলাকায়। তখন তুহিনকে সে অল্প সময়ের জন্য দেখেছিল। সম্পর্ক তখনও ভালো না থাকলেও টুকটাক কথা হয়েছিল তুহিনের সাথে। তুহিন তখন হয়ত মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল।
তুহিনকে দেখে পল্লব উঠে দাঁড়াল।
– তুই? তুই এখানে কেনো?
– শান্ত হও পল্লব ভাই। আমিই তোমাকে এখানে আসার জন্য কল দিয়েছিলাম।
পল্লবের তো এ কথা শুনে চোখ কপালে।
– হোয়াট? তুই? তুই কেন কল দিয়েছিস আমাকে? আর তখন কেনো পরিচয় না দিয়ে চোরের মতো কল কেটে দিয়েছিস? ওহ মাই গড! তার মানে আম্মিই ঠিক বলেছে। তুই আর তোর ভাইই আমার জয়ীকে কিডন্যাপ করেছিস। উত্তেজিত হয়ে কথাগুলি বলা শেষ করতে না করতেই সে তুহিনের কলার চেপে ধরল।
তুহিন একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু সে কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না নিজেকে। ব্যর্থ হয়ে বলল,
– প্লিজ, পল্লব ভাই! সিনক্রিয়েট করো না। আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আমাকে বিশ্বাস করো। জয়ী আমার কাছে আছে। আমাকে ছেড়ে দাও। মানুষ দেখছে। জয়ীর সাথে দেখা করতে চাও না তুমি?
জয়ীর নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই সে তুহিনের কলার ছেড়ে দিয়ে বলল, বল, কী চাস? কী দিতে হবে? বল, আমার জয়ীকে কই রেখেছিস? আমার জয়ীর যদি কোনো একটু ক্ষতি করিস তবে কী হবে কল্পনাও করিসনি।।
তুহিন এবার রেগে গিয়ে বলল, এটাই তোমাদের সমস্যা। কোনো কথা ঠিকঠাক শুনবে তো না! আন্দাজেই চেচামেচি করে লোক হাসাবে। তুমি তো ভালো করেই জান আমি তোমাদের মতো নোংরা রাজনীতির ধারেকাছেও নেই। ভাইজানের সাথে আমাকে মেলানোর চেষ্টা করবেন না। আমি যা বলছি চুপচাপ শুনতে পারলে আমি বলছি আর না পারলে আমি চললাম।
– ঠিক আছে, বলো। কী চাই?
– উফ! কী চাই, কী চাই! আমি কি সওদা করতে আসছি। রেগে যেয়ে বলল, তুহিন।
– স্যরি!
– মিস জয়ী… স্যরি… ভাবী আমার হেফাজতে আছে। আমি তাকে বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করে আমার কাছেই রেখেছি। এটা খুবই গোপণ। আমার ভাইজান বা ফ্যামিলির অন্য কেউই জানে না। তাই আমি চাই না ব্যাপারটা জানাজানি হোক। বিশেষ করে তোমার আম্মি বা আমার ভাইজান এরা জানলে ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় নিবে। তাছাড়া জানাজানি হলে জয়ীর আই মিন ভাবীরই ক্ষতি। তুমি আগামীকাল সকালে মুন্সিগঞ্জ সদরে চলে আসবে। ওখানেই একসাথে হবো আমরা। তারপর জয়ীর কাছে নিয়ে যাব।
পল্লবের কাছে সবকিছুই যেনো গল্প মনে হচ্ছে। কী হচ্ছে এসব? এই তুহিন তাকে কোনো বিপদে ফেলতে চাইছে না তো! সে কিছুটা কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই যে আমাকে কোনো বিপদে ফেলবি না তার গ্যারান্টি কী?
– কোনো গ্যারান্টি দিতে পারব না। নাও, কথা বলো। বলেই তুহিন তার ফোনটা পল্লবের হাতে দিলো।
পল্লব ফোনটা কানে চেপে ধরতেই ওপাশ থেকে হ্যালো বলার শব্দে সে কেঁপে উঠল। কার কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে ! বুকের মাঝে যেন একরাশ বসন্তের হাওয়া বইয়ে গেল তার।
– কাঁপা গলায় পল্লব বলল, জ….জয়ী!
– খানিকটা সময় চুপ থেকে ওপাশ থেকে ফুপিয়ে কান্নার মতো করে জয়ী শুধু বলল, হুম।
দু’জনের কারো মুখেই কথা নেই আর। দু’পাশে দু’জনেই অঝোরে কাঁদছে। চোখের পানিই যেনো কত কথা বলে যাচ্ছে। তুহিন দু’জনের মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করছে।
পল্লব ফোনটা কেটে দিয়েই তুহিনের হাতটা চেপে ধরে বলল, আমি এখনই যেতে চাই। কোথায় যেতে হবে বল।
– কী বলছ? এখন রাত ৮ টা বেজে গেছে। যে জ্যাম! পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাছাড়া বাসাতে চিন্তা করবে!
– আই ডোন্ট কেয়ার! আমি এখনই যাব। তোর সমস্যা থাকলে আমি একাই যাব। এড্রেস দে। আর জয়ীর নাম্বারটা দে৷
– তুহিন পল্লবের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, ওটা আমার ফ্রেন্ডের নাম্বার। তোমামে দেয়া যাবে না। চলো, রওয়ানা হই। আমি বাসাতে একটু কল করে জানাই যে আজ আর ফিরছি না। নয়তো চিন্তা করবে!
গাড়ি যত সামনে এগুচ্ছে ঠিক ততই অধৈর্য হয়ে পড়ছে পল্লব। পথ যেনো ফুরাচ্ছে না।
রাত বারোটার দিকে তারা পৌঁছাল তাদের গন্তব্যে। এতদিন ধরে যাকে খুঁজতে খুঁজতে ফিরে পাবার আশা ছেড়েই দিয়েছে পল্লব আজ সেই জয়ী তার চোখের সামনে। নিজের চোখকেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। জয়ী অপলক তাকিয়ে আছে। তুহিন আর মিতা দু’জনেই ওদের একা ছেড়ে দিলো।
আসার পথে তুহিনের কাছে সবই শুনেছে পল্লব। তার আম্মি জয়ীকে পছন্দ করে না এটা সে জানে কিন্তু তাকে জানে মেরে ফেলতে চায় এটা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না।
জয়ীর মুখ থেকে সবকিছু শুনে সে নিজেকে যেন স্থির করতে পারছে না। জয়ীকে বুকের মাঝে চেপে ধরেছে শরীরের সব শক্তি দিয়ে। কিছুতেই আর হারাতে চায় না তাকে। জয়ী ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে পল্লবের বুকে মাথা রেখে। আর কখনো এই বুকে মাথা রাখতে পারবে এটা সে কল্পনায়ও ভাবেনি। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে সে দেখে এসেছে।
তুহিনের সাহায্যের কথা শুনে পল্লব অবাক হয়ে যায়। সে কত খারাপ ভাবত খালাত ভাইদেরকে। অথচ তার খালাত ভাইয়ের কারণেই সে জয়ীকে আজ জীবিত ফিরে পেয়েছে। তুহিনকে বুকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়। সেই ছোটবেলা থেকে এদেরকে নিয়ে কত নেতিবাচক কথাই শুনিয়েছে তার আম্মি ।
তার আম্মির কথা মনে পড়তেই জয়ীর প্রতি তার আচরণের কথা মনে পড়ে গেল। ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। নিজের কাছে নিজেই সে এবার প্রতিজ্ঞা করলো যে করেই হোক এর শেষ এবার দেখে ছাড়বে। না হলে তার মায়ের কুকীর্তি দিনের-পর-দিন সীমা ছাড়িয়ে যাবে এভাবেই। তার মায়ের নোংরা দিকগুলো যতটা তার সামনে চলে আসছে ঠিক ততটাই সে দূরে সরে যাচ্ছে তার থেকে। সাজেদা চৌধুরীকে নিজের মা ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে পল্লবের। সাজেদা চৌধুরী যদি তার আম্মি না হয়ে অন্য সম্পর্কের কেউ হতো হয়তো তাহলে আজ তার রক্ষে ছিল না। কিন্তু তাই বলে তাকে সে ছেড়ে কথা বলবে না। অনেক হয়েছে। সিদ্ধান্ত যা নেবার সে নিয়ে ফেলেছে অলরেডি।
কোন ভাষায় কার সাথে কথা বলতে হয় এটা পল্লব জানে। ওই মায়েরই তো সন্তান সে। কোথায় আঘাত করলে তার মায়ের আঘাত লাগবে এটা পল্লবের জানা আছে ।
জয়ীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তুহিন তোকে বোঝালো এই মুহূর্তে তাকে ঢাকায় না নিতে। জয়ী বেঁচে আছে এবং কোথায় আছে এসব খবর জানতে পারলে হয়তো সাজেদা চৌধুরী আবার বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে এটা বোঝাল পল্লবকে। কিন্তু পল্লব এখন সব বোঝানোর ঊর্ধ্বে।।
পরেরদিন মিতা আর তুহিনের কাছে বিদায় নিয়ে জয়ীকে নিয়ে সে বাড়িতে ফিরল।
সাজেদা চৌধুরী বাসাতেই ছিলেন। নাস্তার টেবিলে এসে যখন খবর শোনেন সারারাত পল্লব বাসায় ফেরেনি এটা জেনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন। দু’তিনবার পল্লবের ফোন বাজলেও কেউ রিসিভ না করায় আরো চিন্তিত হয়ে যান। পল্লব আসলে ইচ্ছে করেই কল রিসিভ করে নি।
সাজেদা চৌধুরী ড্রইংরুমে পায়চারি করছেন। পাশে কল্লোল আর চৈতীও আছে। এমন সময় পল্লব জয়ীর হাত ধরা অবস্থায় বাসার মধ্যে ঢুকে। সাজেদা চৌধুরী ছেলেকে দেখে যতটুকু খুশি হবেন তার থেকে দশ গুণ বেশি ভড়কে গেলেন জয়ীতাকে সাথে দেখে। জয়ীর চোখের দিকে তাকিয়ে তার আত্মারাম খাঁচাছাড়া।
এ সে কোন জয়ীকে দেখছে! ওর চোখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। সাজেদা চৌধুরীই মনে মনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল পল্লবকে। সবকিছু জানিয়ে দিলো না তো! সে তাকে কিডন্যাপ করেছিল এটা জানালে তার কোনো ভয় নেই কিন্তু তার অতীতের সম্পর্কে কোন কিছু পল্লবকে জানায়নি তো?
পল্লব জয়ীর হাত ধরে সাজেদা চৌধুরীর ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল। মা ছেলের মাঝে মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান। পল্লব তার মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল, কি, খুব বেশ অবাক হচ্ছ জয়ী জীবিত আছে দেখে? কি ভেবেছিলে এতদিনে মরে গিয়েছে? খুব আফসোস হচ্ছে তাই না!
সাজেদা চৌধুরী ভেতরে ভেতরে ঘাবড়ে গেলেও উপরে সেটা প্রকাশ করলেন না।
সে কোন কথা বলছে না দেখে পল্লব আবার তার চোখের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল, আর কত! আর কত নিচে নামবে তুমি? নিচে নামার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গেছো তুমি। তোমার থেকে আর ভালো কিছু আশাই বা করা যাবে কী? একটা মানুষ এত নষ্ট কী করে হয় আমার মাথায় আসে না। ছিঃ! আমি তোমার পেটে জন্ম নিয়েছি এটা ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে আমার।
সাজেদা চৌধুরী তার ছেলের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে এবার মুখ না খুলে পারলেন না।
– তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছ, ভুলে যেও না।
– অফকোর্স নট ।
– তুমি কিন্তু তোমার সীমা লংঘন করে যাচ্ছ? তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছ সেটাই তো বুঝতে পারছি না। ক্লিয়ার করে বলো কোথায় পেয়েছ তুমি এই মেয়েকে? এ কাল সাপটাকে ঘরে আনতে না আনতে তুমি আবার শুরু হয়ে গিয়েছ?
– মুখ সামলে কথা বলো, আম্মি।
– বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলতে শেখো, বলল কল্লোল।
পল্লব এবার তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোমার সাথে কথা বলছি না। অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যাসটা এবার বন্ধ করো। তুমি আর তোমার বউ এখানে না থাকলেই আমি খুশি হব। আমি কথা বলছি মিসেস সাজেদা চৌধুরীর সাথে, তোমার সাথে না।
এবার চৈতী নিজের স্বামীর এমন অপমান দেখে ভীষণ ক্ষেপে গেল। সে বলল, তোমার সাহস তো কম নয় তুমি আম্মির নাম ধরে কথা বলছ। নিজেকে কী মনে করো তুমি?
– নিজে কী সেটা নিয়ে আপাতত ভাবছি না। জানলে তোমাকে জানাব। কিন্তু এখন এখানে তুমি একটা কথাও বলবে না তুমি তোমার হাজবেন্ডকে নিয়ে উপরে যাও, প্লিইজ।
চৈতী রেগে গিয়ে বলল, যদি না যাই?
– তুমি যেতে বাধ্য কারণ আমি বলেছি।
চৈতী কিছু বলতে যাবে তখনই কল্লোল পল্লবের উপর চিৎকার করে ওঠে।
– আম্মি তোমাকে কিছু বলে না তার মানে এটা ভেবো না যে তুমি যা তা ব্যবহার করতে পারবে সবার সাথে। আর এটা ভদ্রলোকের বাড়ি। এখানে এসব চিৎকার-চেঁচামেচি শোভা পায় না।
– পল্লব রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে তার মায়ের পাশে গোল গোল করে ঘুরছে আর বলছে ভদ্রলোকের বাড়ি? এটা ভদ্রলোকের বাড়ি? ঠিকই বলেছ, ভাইয়া। এখানে এত বেশি ভদ্রলোক ভদ্র মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে যে এদের মুখোশ উন্মোচন করলে লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। কথাগুলো বলতে বলতেই পল্লব একদলা থুথু বেসিনের দিকে ছুঁড়ে মারল।
সাজেদা চৌধুরীর মনের মধ্যে ভয়টা এবার জেঁকে বসল। পল্লব কি তাহলে সবই জেনে গেল?
– পল্লব! কী সব আবোল তাবোল বলছ তুমি সেই কখন থেকে? শান্ত হয়ে ওখানে সোফায় বস। কী হয়েছে বলো। সবকিছু খুলে বলবে। জয়ীতাকে কোথায় পেলে, কোথায় লুকিয়ে ছিল এতদিন, কোথায় লুকিয়ে আমাদের এত বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলেছে সব জানতে চাই।
ওর কারণে এ ক’দিন আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে মিডিয়ার লোকজন নানান ধরনের মন্তব্য করেছে।
– আম্মি, এবার তো তোমার মিথ্যের ঝাপিটা বন্ধ করো প্লিইজ। আমি আর নিতে পারছি না।
চলবে….
পর্ব- ১৮
-https://www.facebook.com/111576077291737/posts/476975394085135/