অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৪৬

0
977

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৪৬|

এলোমেলো ভাবে কোন‌ মতে এসে বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ায় ধারা। বাড়ির সামনে উঠানে তো কেউ নেই! তাহলে উনি মিথ্যে কথা বলেছেন? উনি তো বলেছিলেন বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ধারা ব্যস্ত পায় উঠোন পেরিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তার দিকে যায়। চাঁদের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। ধারা বাড়ির গেটের দরজা খুব সাবধানে খুলে রাস্তায় নামে। গেটের দরজার সামনে বড় একটি গাড়ি রাখা। গাড়িতে হেলান দিয়ে এ দিকে তাকিয়ে উনি। মানুষটাকে আজ কতদিন পরে সামনে থেকে দেখছে ধারা। আগের থেকেও আরো বেশি দেখতে সুন্দর হয়েছে মানুষটা। চাঁদের আলো পড়ে ঝলমল করছে তার চেহারা। ধারার ভাবনার সমাপ্তি ঘটে, হঠাৎ করে ওকে কেউ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরায়। ধারার বুঝতে অসুবিধে হয়নি মানুষটার কেউ নয় তারই বর। ধারা নিঃশ্বাস ফেলে ইভানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। বড্ড শান্তি লাগছে এখন ধারার। শান্তিতে চোখ জোড়া বুজে আসছে ধারার। বেশিক্ষণ চোখ বুজে থাকতে পারেনি ধারা, ইভান ধারা কে বুক থেকে সরিয়ে নিয়ে সারা মুখে চুমু খেতে শুরু করে। ধারা বিষ্ময় নিয়ে ইভান কে দেখছে। ইভান ধারার কোমর জড়িয়ে শূন্যে তুলে ধারা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ধারা আর কিছু না ভেবে হাত দিয়ে ইভানের গলা পেঁচিয়ে ধরে। অতিরিক্ত খুশির কারণ কিছুই বলতে পারছেনা ইভান। ইভান ধারার চুলে মুখ গুজে ধীর গলায় বলল,

‘ শরীরের কী অবস্থা করেছে? চোখ মুখের অবস্থা এমন কেন? দুইদিন আগে পর্যন্ত তো সবকিছু ঠিকই ছিল? তাহলে? আজ তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?’

ধারা অভিমানী গলায় বলল,

‘ আপনি জানেন না আমার এমন অবস্থা কেন?’

ইভান ধারা কে মাটিতে নামিয়ে ওর মুখের দিকে তাকায়। চাঁদের আলোতে চোখের পানিগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইভান মৃদু হেসে ধারার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,

‘ এই অশ্রু ধারা কী এই অধমের জন্য?’

ধারা ইভানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,

‘ আপনি এখন এখানে কিভাবে? আপনার না এখন ইতালিতে থাকার কথা! তাছাড়া আপনি এই দশ বারো দিন আমার সঙ্গে ঠিক করে কথা বলেননি কেন? লাস্ট দুইদিন তো আপনার ফোন ই বন্ধ ছিল।’

ইভান হেসে ধারার চুলগুলো কানের নিচে গুজে দিয়ে বলল,

‘ বাব্বা একসাথে কতগুলো প্রশ্ন? আমি একা একা সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। প্রথম প্রশ্ন আমি এখানে এখন কী করছি? আমি এখন এখানে আমার বউকে আদর করছি। দ্বিতীয় প্রশ্ন আমার এখন ইতালিতে থাকার কথা ছিল, কিন্তু আমি এখন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তৃতীয় প্রশ্ন আমি এ কয়দিন আমার ব্যস্ততার কারণে তোমার সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতে পারিনি। তার জন্য সরি বিল্লু রানী। লাস্ট প্রশ্ন এই দুইদিন আমার ফোন বন্ধ ছিল কেন? আমি ফ্লাইটে ছিলাম তার জন্য আমার ফোন বন্ধ ছিল।’

ধারা মন খারাপের গলায় বলল,

‘ আপনি আমাকে আগে কেন জানাননি আপনি যে দেশে আসছেন? আগে আমাকে জানালে এমন কী ক্ষতি হতো আপনার?’

ধারা অভিযোগ শুনে ইভান হেসে ওর হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা ইভান ধারার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,

‘ হ্যাপি বার্থডে বিল্লু রানী।’

ধারা চমকে উঠে। বিষ্ময় চোখে ইভানের দিকে তাকায়। সে ইভানের গাল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এখনো ইভান ঠোঁট ছুঁয়ে আছে ধারার কপালে। আজ তার জন্মদিন তা এই লোকটা কীভাবে জানলো? ওর ই মনে নেই ওর জন্মদিনের কথা। ইভান ধারার কাছে থেকে সরে আসলে ধারা অবাক গলায় বলল,

‘ আমার ই তো মনে নেই আমার জন্মদিনের কথা। আপনি জানলেন কিভাবে আজ যে আমার জন্মদিন!’

ইভান ধারার কথার উত্তর না দিয়ে বলল,

‘ তোমার বার্থডে গিফট আমি এখন তোমাকে দিব না। কিন্তু কালকের মধ্যে তুমি তোমার বার্থডে গিফট পেয়ে যাবে। এখন চলো বাড়ির ভিতরে চলো, বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।’

ধারা ভেঙ্গিয়ে বলল,

‘ সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ জেগে নেই আপনার জন্য। সবাই নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণে।’

ইভান হেসে ধারার হাত ধরে বলল,

‘ তা দেখা যাবে তুমি চলো এবার আমার সঙ্গে।’

ইভান ধারা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। ধারা চোখ বড় বড় করে বাড়ির দিকে তাকায়। এতক্ষণ তো বাড়ি পুরো অন্ধকার হয়ে ছিল আর এখন অন্ধকারের বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। এরমধ্যে ধারার আব্বাজান, চাচা জান, ভাইয়া সবাই এদিকে আসছে। তাদের দেখে ইভান ধারার হাত ছেড়ে দেয়। ইভান তাদের সালাম দিয়ে ভালো মন্দ কথা জিজ্ঞেস করছে। ধারা এতক্ষণে ওদের কথা শুনে বেশ বুঝতে পারছে বাড়ির সবাই জানত আজ ইভান এখানে আসবে। আর তারা কেউ তাকে কিছুই বলেনি। দুই দিনের এই ছেলেটা তাদের সবার কাছে এত আপন হয়ে গেল, অসহ্যকর। ধারা রেগে ওখান থেকে বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। ইভান এক নজর তা দেখে আবার ধারার আব্বাজানের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে।

ধারা রেগে গাল ফুলিয়ে আছে। কারো সঙ্গে কথা বলবে না ধারা। সবাই খারাপ। ভীষণ রকম খারাপ। তাকে একবার জানালে কী এমন হতো যে ঐ অসভ্য লোকটা আজ দেশে ফিরেছে এমনকি তাদের বাড়িতে আসবে। কেন জানালো না তাকে সবাই? ধারা তার ভাবনার মাঝে হঠাৎ তার কাছে কারো অস্তিত্ব টের পায়, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে জোনাকি ভাবি ওর পাশে বসে আছে। ঠোঁটে দুষ্টামির হাসি বিদ্যমান। ধারা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয় জোনাকি ভাবির থেকে। এই মানুষটাও প্রথম থেকে সব কিছু জানত তাও ওকে কিছু জানায়নি। কেন? একবার জানালে কি এমন ক্ষতি হতো? হঠাৎ করে জোনাকি ভাবি মৃদু স্বরে বলল,

‘ রাগ করে আছিস আমার উপরে? রাগ করিস না, তোর বর আমাদের সবাইকে অনেক করে অনুরোধ করেছিল তার আসার খবর আমরা যেন তোকে না জানাই। তোর বর তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। জানিস তোর পাগলা বর কী কী করেছে? সাতদিন পরে তার একটা বড় পরীক্ষা আছে অথচ তোর জন্মদিনের দিন তোকে সবার আগে উইশ করবে বলে সেই সুদূর ইতালি থেকে চলে এসেছে। কালকের দিন টা শুধু ছেলেটা দেশে আছে। পরশুদিন সকালের ফ্লাইটে আবার চলে যাচ্ছে ছেলেটা। তুই খুব ভাগ্য করে এমন বর পেয়েছিস রে ধারা। আমার মাঝে মধ্যে তোকে দেখে খুব হিংসে হয়। তোর বর টা তোকে কতো ভালোবাসে, আবার তুই ভাবিস না তোর ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না তোর ভাইয়া ও আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। তুই তো আমার ছোট বোনের মত তাই তো তোকে হিংসা করতে পারি না। কিন্তু আমার মনে হয় ইভান তোকে সাংঘাতিক ভালোবাসে। যাইহোক এখন যা বলি তা মন দিয়ে শোন, ছেলেটার সঙ্গে এখন রাগারাগি করিস না। বেচারা আজ সকালে দেশে ফিরেছে, সারা দিন বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছে আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। শুধুমাত্র তোকে সবার আগে জন্মদিনের উইশ করবে বলে। বাড়ির সবাই কথা আগে থেকেই জানতো। ইভান খাওয়া-দাওয়া করে তোকে নিয়ে আবার রওনা হবে শহরের উদ্দেশ্যে। তোর শাশুড়ি তোকে যেতে বলেছে। ইভানের কী লাগে না লাগে খেয়াল রাখিস, আমি যাই ওদিকে আমার কিছু কাজ আছে। যা বলেছি মনে রাখিস কিন্তু।’

ইভান ওর জন্য দেশে ফিরেছে শুনে মনে ভালোলাগার বাতাস বইতে শুরু করে ধারার। আবার একদিন পরে ছেলেটা ওকে ছেড়ে চলে যাবে ভেবে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বর্তমানকে নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। তাই ইভানের সঙ্গে যে সময়টুকু কাটাতে পারবে তা ধারা খুব ভালোভাবে উপভোগ করবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটুও মন খারাপ করবে না ধারা। এখন ওর ইভানের কাছে যাওয়া প্রয়োজন ওর। ধারা ধীর পায়ে হেঁটে ঘর থেকে বের হয়। উঠোনে চেহারা পেতে বাড়ির বড়দের সঙ্গে কথা বলছে ইভান।

ইভান কথা বলার মাঝে ধারা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু স্বরে বলল,

‘ তুমি এখনো রেডি হয়নি? জলদি করে রেডি হয়ে নাও আমরা এক ঘণ্টার মধ্যে বের হবো। হাতে খুব বেশি সময় নেই কিন্তু।’

জোনাকি এসে ধারার পাশে দাঁড়িয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তুমি চিন্তা করো না ইভান, আমি ওকে রেডি করে দিচ্ছি। এই ধারা চল।’

এইটুকু বলে জোনাকি ধারা কে নিয়ে ধারার ঘরে চলে যায়। এরমধ্যে ধারার আম্মা এসে মাথায় কাপড় দিয়ে বলল,

‘ অনেক রাত হয়ে গেছে জামাই খেতে এসো। সম্রাট তুই গিয়ে জামাইয়ের হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে আয়।’

ইভান লাজুক হেসে বলল,

‘ আম্মা ও রেডি হয়ে আসুক তার পরে না হয় আমরা একসঙ্গে খাবো।’

ইভানের কথা শুনে উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

চলবে…

ঈদের ব্যস্ততা গল্প দিতে পারিনি দুইদিন। আত্মীয়-স্বজনের এখনো বাড়ি পরিপূর্ণ। অনেকেই ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল পর্ব দেওয়ার জন্য বলেছেন। শত ব্যস্ততার তা হয়ে উঠেনি। তাই সবার কথা চিন্তা করে কাল স্পেশাল পর্ব দেওয়া হবে ইনশাল্লাহ। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here