অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৪৭

0
680

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৪৭|

ঘুমে বিভোর হয়ে আছে ধারা। গাড়িতে ওঠার পরপরই সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ জামাই বাড়িতে আসবে বলে ধারার আব্বাজান আয়জনের কোন কমতি রাখিনি। ইভান খাওয়া-দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ধারা কে নিয়ে। ইভানের মনে মনে ঠিক করে রেখেছে ভোরের আগেই ধারা কে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছাবে। না হলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ঘাটে জ্যাম বাড়বে। তখন আবার আর এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তার চেয়ে ভালো রাতের বেলা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে দ্রুত যেতে পারবে। ইভান সে গাড়ি ড্রাইভ করার মাঝে মাঝে ধারার দিকে তাকিয়ে দেখছে। সিটের সঙ্গে গা এলিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা। কী অপরূপ দেখতে লাগছে মেয়েটা কে এই মুহূর্তে। এর জন্যই তো কত কাঠ-খড় পুড়িয়ে দেশে ফিরেছে ইভান। এইসব ভেবে আনমনে হাসে ইভান। ভোরের আলো ফোটার আগেই ইভান রা ঢাকায় পৌঁছে যায়। ইভান মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল বাড়িতে যাওয়ার আগে ধারা কে নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টে থেকে সকালের ব্রেকফাস্ট করে তারপরে বাড়িতে যাবে। কিন্তু এখন তো দেখছে এত সকালে কোন রেস্টুরেন্ট খোলা নেই। তার উপরে তার বিল্লু রানী এখনো ঘুমিয়ে আছে। বিল্লু রানী হাব ভাব দেখে মনে হয় না বেলা আটটার আগে সে আর ঘুম থেকে উঠবে। এই দুইটা কারণে ইভান তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। বাড়ি পৌঁছে আর কলিং বেল বাজিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে তুলতে হয়নি ইভান কে। বাড়ির সদর দরজা খোলাই ছিল। সালমা আন্টি সকাল বেলা নামাজ পড়ে আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বাগানে এসে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ফুল গাছ দেখে সে। ইভানের গাড়ি বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে সালমা আন্টি দ্রুত পায় সে দিকে যায়। ইভান গাড়ি থেকে নেমে সালমা আন্টি কে দেখে মৃদু হাসে। সালমা আন্টি ইভানের দিকে তাকিয়ে খুশি মনে বলল,

‘ আমাদের বৌমা কোথায় বাবু? তাকে দেখছি না যে?’

ইভান হেসে বলল,

‘ তোমাদের আদরের বৌমা সে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।’

ইভানের কথা শুনে সালমা আন্টি হালকা হাসে। ইভান আবার বলল,

‘ ভালো হয়েছে তোমাকে এখানে পেয়েছি। এতদুর গাড়ি ড্রাইভ করে এসে আমি বড্ড ক্লান্ত আন্টি। আমি এখন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বো। বাড়ির কাউকে এখন ঘুম থেকে তুলে বিরক্ত করার দরকার নেই। ধারা সে নিজেও এখনো ঘুমিয়ে আছে। সে ঘুম থেকে উঠলে তারপরে না হয় তোমরা সবাই একে একে তাকে উইশ করো। আমি বরং এখন ধারা কে নিয়ে রুমে যাই।’

সালমা আন্টি ইভানের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল,

‘ ঠিক আছে বাবু তুমি বৌমাকে নিয়ে রুমে যাও। সবাই ঘুম থেকে উঠলে আমি সবাইকে জানিয়ে দেবো তোমাদের আসার খবর।’

ইভান আর কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে ধারা কে পাঁজাকোলে করে কোলে তুলে নেয়। ধীর পায়ে হেঁটে ধারা কে নিয়ে ধারা কে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

সাতটার দিকে ধারা ঘুম ভাঙ্গে। পিট পিটিয়ে করে চোখ খুলে তাকায় ধারা। হালকা মাথা তুলে ইভান কে দেখতে পায় সে। তার বুকে ঘুমিয়ে আছে সে। মুচকি হেসে ইভানের বুকে চিবুক রেখে এক দৃষ্টিতে তাকায় ইভানের দিকে। আজ কতগুলো দিন পরে মানুষটাকে কাছ থেকে দেখতে পারছে। মায়ার কমতি নেই এই ছেলের মুখে। হঠাৎ কাল রাতের কথা মনে করে মন খারাপ করে ধারা। কত ইচ্ছে ছিল সারা রাস্তা ইভানের সাথে গল্প করতে করতে আসবে কিন্তু ওর‌ এই মরার ঘুমের জন্য কিছুই সম্ভব হয়নি। ধারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলতো হাতে ইভানের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে। ইভান সে ঘুমের ঘোরে ধারা কে আরো শক্ত করে জাপটে জড়িয়ে ধরে।

ঘরোয়া আয়োজনে মধ্যে বেশ ভালোভাবে ধারার জন্মদিন পালন করে সবাই মিলে। জন্মদিনের উপহারের কমতি হয়নি ধারার। মিতা বেগম অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজের হাতে রান্না করে ধারার জন্য। কাল সন্ধ্যার পরে মিতা বেগমের অন্য দুই ছেলে এবং তাদের বউদের নিয়ে চলে আসে তার এ বাড়িতে। ইভান দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পরে ওর আম্মু কে বলে ধারা কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়। ইভানের আম্মু অবশ্য জানে ইভান এখন ধারা কে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে না। যাচ্ছে ধারা কে তারা জন্মদিনের উপহার হাতে তুলে দিতে।

ইভান গাড়ি থামায় এক সম্ভ্রান্ত এলাকায়। চারপাশের উচু উচু বিল্ডিং। কিছু কিছু বিল্ডিং এর ছাদে কিংবা বারান্দায় গাছের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। ধারা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশে দেখছে। ইভান কে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ইভান ধারার হাত ধরে ওদের সামনাসামনি থাকা বিল্ডিং এর দিকে নিয়ে যায়। লিফট এর সাহায্যে নয় তলায় উঠে দু’জনে। লিফটে বসে ধারা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে তারা এখানে কেন এসেছে? কিন্তু ইভান উত্তরে কিছু না বলে শুধু হেসেছে। ইভানের এমন আচরনে ধারা বিরক্ত হয়ে পড়ে আর ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। নয়তলা একটা ফ্লাটের সামনে এসে ইভান ধারার হাতে একটা চাবি দিয়ে দরজা খুলতে বলে। ধারা ইভানের দিকে এক নজরে তাকিয়ে পরে ফ্লাটের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। পুরো ফ্লাট জুড়ে ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো। ধারা অবাক চোখে সবকিছু দেখে ইভানের দিকে তাকায়। ধারা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইভান হাঁটু গেড়ে বসে ধারার সামনে একগুচ্ছ ফুল ধরে বলে, ধারার জন্য ইভান এই ফ্লাট টা কিনেছে। ইভানের পক্ষ থেকে ধারার জন্মদিনের জন্য সামান্য উপহার। ধারা ইভানের এমন পাগলামি ময় ভালোবাসা দেখে ইভান কে জাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিলো। অতিরিক্ত খুশির কারণ এ ধারা ইভান কে কিছু বলতে পারেনি। শুধু ইভানের বুকে মাথা রেখে কেঁদে গেছে ইভানের বিল্লু রানী।

কেটে গেছে অনেক গুলো দিন। পেরিয়ে গেছে দুই বছরের বেশি সময়। ধারা ইভানের ভালোবাসায় এক একটা দিন নতুন করে উপভোগ করেছে। ইভান এরমধ্যে চারবার দেশে এসেছিল। ধারা এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। ইভানের ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হতে আর কয়েক মাস মাত্র বাকি। ইভান আর ওর আম্মু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধারা এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেলে ধারা কে তার পাকাপাকি ভাবে এ বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবে। এরমধ্যে ইভানের বড় দুই ভাইয়ের ঘর আলো করে দুজন সন্তান জন্ম নিয়েছে। দুজনের ঘর আলো করে দুটি ছেলে সন্তান হয়েছে। দুজনে ছয় মাসের বড় ছোট। জুয়েলের ছেলের নাম রাখা হয়েছে লিওন আর লাবিদের ছেলের নাম রাখা হয়েছে রোহান। অল্প কিছুদিন হয়েছে ধারার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ধারার হাতের আঙ্গুলের সমস্যাটা ঠিক হয়ে গেছে আরো এক বছর আগে। এখন ধারার আঙ্গুল দেখে বোঝার উপায় নেই আগে যে ধারা আঙ্গুলে ওমন একটা সমস্যা ছিল। ধারার আঙ্গুল ঠিক হওয়ার পিছনের সকল কৃতিত্ব ধারা ইভান কেই দেয়। ধারার মতে ইভানের প্রচেষ্টায় ওর হাতের আঙ্গুল ঠিক হয়েছে। ধারার মধ্যে আগের মতো এখন আর সেই বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা নেই। ধারার আচার-আচরণে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু ইভানের সঙ্গে কথা বলার সময় ধারা সেই আগের মত বাচ্চাদের মত করে কথা বলে। এতকিছুর পরেও ধারা আজ পর্যন্ত ইভান কে ভালোবাসি কথাটা বলেনি। অবশ্যই ইভান বুঝতে পারে ধারা নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ইভান কে। এরমধ্যে নতুন একটা ঝামেলা দেখা দিয়েছে ধারার জীবনে। ঝামেলার নাম মতিন। সম্রাট ভাইয়ার মুখে শুনেছে এই মতির নামক ছেলেটা ইদানিং বেশি ওদের দোকানে যাতায়াত করে। ধারার আব্বাজানের কাছে কী সব কথা বলে চুপিচুপি। আব্বাজান ও মতিনের সঙ্গে কথা বলে কেমন গম্ভীর হয়ে যায়। সম্রাট ভাইয়া ধারা কে আরো বলেছিলো মতিনের বউ এখন আর মতিনের সঙ্গে থাকে না ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। মতিনের বউ এর ভাই দেশে ফিরেই ওদের ছাড়াছাড়ি করিয়ে তার বোনকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। শুনেছে সেখানে মেয়েটা অনেক সুখে আছে। মতিন ধারা কে রাস্তাঘাটে দেখলেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কিংবা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে। কিন্তু ধারা বরাবরই ওকে পাত্তা দেয় না, এড়িয়ে চলতে তাঁকে সব সময়। এসব মুখোশধারী শয়তান এর কথা ধারা এখন আর ভাবতে চায় না। এক সপ্তাহ পরে ইভান দেশে ফিরছে। এবার নাকি সে মাস দুয়েকের ছুটি নিয়ে আসবে। এবার ইভান এলেই ধারা ওর মনের কথা ইভান কে জানিয়ে দিবে। তখন ইভানের রিয়াকশন কেমন হবে? সব সময় তো পাগলামি করে ওকে নিয়ে। যখন ধারার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনবে তখন বোধহয় সত্যি সত্যি ও বোধহয় পাগল হয়ে যাবে। এসব ভেবে ধারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-স্পেশাল|

আজ সন্ধ্যার পরে ফ্লাইটে ইভান দেশে ফিরবে। দুইদিন আগে কথা হয়েছে ইভানের সঙ্গে ধারার ফ্লাইটে ওঠার আগে। আজকের রাতটা বিশ্রাম নিয়ে কালকে সকালে রওনা দিবে ধারা কে ঐ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইভান এইবারে খুব এক্সাইটেড হয়ে আছে। দুই সপ্তাহ পরে ধারার শাশুড়ি আম্মুর জন্মদিন তার জন্য তার তিন ছেলে ঘরোয়া ভাবে তাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। ইভান প্রধানত সেই উপলক্ষে দেশে ফিরছে। ধারা আনমনে বসে এসব চিন্তা করতে করতে ওর জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ ফোনের তীব্র শব্দের ধারার ভাবনা ছেদ হয়। ধারা উঠে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের উপর নামটা দেখে চিন্তায় ভুরু কুঁচকায়। ওর শাশুড়ি আম্মু তো কখনো কে এই সময় ফোন করে না। উনি তো সব সময় নিয়ম ধরা টাইমে রাত নটার পরে ফোন করে। ওদিকে আবার কিছু হলো না তো। এসব ভেবে ধারা দ্রুত ফোন রিসিভ করে। মৃদু স্বরে বলল,

‘ আসসালামু আলাইকুম আম্মু। কেমন আছেন আপনি?’

মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,

‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ মা আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?’

ধারা চিন্তিত গলায় বলল,

‘ ভালো আম্মু। আপনি হঠাৎ আমাকে এই সময় ফোন দিলেন যে ওদিকে সবকিছু ঠিক আছে তো আম্মু?’

মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,

‘ চিন্তা করো না, এদিকের সব কিছু ঠিক আছে। কাল কিন্তু সময় মত চলে এসো মা। শোনা মা আমি এখন তোমাকে কিছু কথা বলতে ফোন দিয়েছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। আল্লাহ চাইলে হয়তো কিছুক্ষণ পর ও ভালো মন্দ কিছু হয়ে যেতে পারে আমার। আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার ছোট ছেলেটাকে তুমি দেখে রাখবে কিন্তু। আমার বাবু কেমন তা তো তুমি এত দিনে বুঝতে পেরেছো। আমার ছেলে বলে বলছি না এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাবু এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি ভালোবাসে দুজনকে প্রথম জন হলাম আমি আর দ্বিতীয় জন হলে তুমি। আমার ভালো-মন্দ কিছু হয়ে গেলে আমার বাবুকে তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে। আমার জন্য পাগলামি করলে তুমি ওকে বুঝবে ওর মনে সাহস যোগাবে। আমি আমাদের লইয়ারের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত কাগজপত্র ঠিক করে নিয়েছি। প্রপার্টি আমি সমানভাবে সবাইকে ভাগ করে দিয়েছি। আমার আমার, শাশুড়ি মা এবং আমাদের বংশের যত গয়না আছে তা আমি সমানভাবে তিন ভাগে ভাগ করে রেখেছি আমার তিন বৌমার জন্য। হসপিটালের জায়গাসহ আরো কয়েকটা জায়গা বাবুর দাদাভাই বাবুকে অনেক আগেই লিখে দিয়ে গেছে। এসব কথা ওর বড় দুই ভাই জানে, এসব নিয়ে ওদের মাঝে কোন সমস্যা হবে না তা আমি জানি। তুমি…

মিতা বেগমের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ধারা কান্নাজড়িত গলায় বলল,

‘ আম্মু আপনার কী হয়েছে বলুন তো আমাকে? তখন থেকে কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলে যাচ্ছেন! আমি এখন বড় ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি সে আপনাকে সে ডাক্তারের কাছে নিয়ে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন আম্মু।’

মিতা বেগম ধারার কথা শুনে হেসে বলল,

‘ জানো বৌমা আমার তিন বৌমার মধ্যে আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে তোমাকে। আর আমার তো কিছু হয়নি তুমি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছ কেন? জানো কয়েকদিন ধরে তোমার শ্বশুর মশাই আমার স্বপ্নে আসছে। কী অভিমান তার। কত শত অভিযোগ। আমি কী করে এত বছর তাকে ছাড়া আছি। আমার কী একটুও কষ্ট হয়নি তাকে ছাড়া থাকতে? জানো গতকাল রাতে স্বপ্ন এসে তোমার শ্বশুর মশাই আমাকে কি বলেছে? আজ রাতে সে আমাকে নিতে আসবে। সে আর আমাকে ছাড়া একা থাকতে পারছে না। এবার আমাকে তার চাই।’

ধারা এবার কেঁদে দিয়ে বলল,

‘ আম্মু আপনি প্লিজ চুপ করুন।’

ধারার কান্না শুরু মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,

‘ ধুর বোকা মেয়ে, কান্না করছো কেনো? একদম কান্না করবে না। তোমার কান্না আমার বাবু একদম সহ্য করতে পারে না। আমার শেষ একটা অনুরোধ বৌমা তোমার কাছে, আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাবুটাকে তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখো। বলো বৌমা তুমি আমার বাবুকে আগলে রাখবে?’

ধারা কেঁদে ফুঁপিয়ে উঠে বলল,

‘ হ্যাঁ, আম্মু আমি আপনার সব কথা রাখবো।’

মিতা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তোমার কথা শুনে মনে বড্ড শান্তি পেলাম বৌমা। কান্না করো না বৌমা, আমি ঠিক আছি। এখন রাখছি বৌমা। আমার হাতে কয়েকটা কাজ আছে সেগুলো করতে হবে আমাকে।’

ধারা মৃদু স্বরে বলল,

‘ সাবধানে থাকবেন আম্মু আর নিজের খেয়াল রাখবেন।’

ধারা কথা শুনে মিতা বেগম হেসে ফোন কাটে। কিন্তু ধারা মিতা বেগমের কথা শুনে অস্থির হয়ে পড়ে। আর কিছু না ভেবে রুমি ভাবি কে ফোন দেয় ধারা। রুমি ভাবি তার ছেলে পৃথিবীতে আসার আগে থেকে মিতা বেগমের সাথে থাকতে শুরু করেছে। ধারা রুমি ভাবির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে ওর শাশুড়ি আম্মু একদম সুস্থ আছে। তাহলে হঠাৎ ওকে এসব কথা বলার মানে কী? কিছুই বুঝতে পারছে না ধারা। এদিকে ইভান দেশে ফিরছে পর থেকে ওকে একটা ফোন ও করেনি ওকে। কিন্তু ইভান তো দেশে ফিরেই ওকে আগে ফোন দেয়। ধারা নিজে ওকে দুইবার ফোন করেছিলো, কিন্তু ইভানের ফোন বন্ধ বলেছে। আজ আবার কী হলো লোকটার? অস্থিরতায় হাজারো চিন্তার মাঝে ধারা আর রাতের খাবার ঠিক ভাবে খেতে পারেনি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে ধারা খেয়াল নেই ওর।

ঘুমের মধ্যে দরজায় তীব্রভাবে কড়া নাড়ার শব্দে ধারা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। গায়ে ওড়না জড়িয়ে, ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দরজা খুলে ধারা। জোনাকি ভাবি দাঁড়িয়ে আছে। ভাবি এখন এত রাতে ওর ঘরের সামনে কী করছে? ভাবির চোখেমুখে তো আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ধারা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ভাবি তাড়াতাড়ি করে বলল,

‘ জলদি রেডি হয়ে নে, আমরা এখনি বের হবো।’

ধারা জোনাকি ভাবির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,

‘ এত রাতে কোথায় যাব ভাবি? আর তোমার চোখ মুখের অবস্থা এমন দেখাচ্ছে কেন?’

জোনাকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তোর শাশুড়ি আম্মু আর বেঁচে নেই। কিছুক্ষণ আগে তিনি আমাদের সবাইকে ফেলে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। মিনিট দশেক আগে তোর বড় ভাসুর ফোন করে আব্বাজান কে কথাটা জানায়। ইভান কে না কী সামলানো যাচ্ছে না।’

ধারার যেন পৃথিবী থমকে গেছে। কয়েক ঘণ্টা আগেই তো মানুষটার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছে ধারা। আর এর মধ্যেই মানুষ টা তাদের সবাইকে ফেলে চলে গেছে। না জানি ওদিকে মা পাগল ছেলেটার কী অবস্থা।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here