অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৩৪

0
702

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৩৪|

ধারা ইভানের এমন লাগামহীন কথা শুনে নিজেকে বকতে বকতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আরো কী নাকি কী বলতো লোকটা। তবে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় ওই লোকটার উচ্চস্বরে হাসির শব্দ শুনেছে। হয়তো ধারা কে জব্দ করতে পেরে খুশির উল্লাসে মেতেছে। ধারা উঠানে পা দিতে না দিতেই তার সামনে এসে দাঁড়ায় কায়েস। ধারা ভুরু খানি কুঁচকে তাকায় কায়সারের দেখে। এই সাতসকালে এই ছেলে ওদের বাড়িতে কী করছে? ধারা কিছু বলবে তার আগে কায়েস দাঁতের বত্রিশ পাটি বের করে হেসে বলল,

‘ আসসালামু আলাইকুম, আপু থুক্কু ভাবি কেমন আছো?’

ধারা কোমরে এক হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

‘ কানের নিচে এমন একটা থাব্রা দেবো না। তখন বুঝবি আমি তোর কে? তোর ভাবি কখন হলাম আমি?’

কায়েসের ডান হাতে একটা প্যাকেট আছে। মিতা বেগম কায়েসের হাত দিয়ে ইভানের কিছু জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে। এই প্যাকেট টা ইভান কে দিতেই কায়েস এদিকে আসছিল। ধারা তার বড় ভাইয়ের বউ সেই হিসেবে দু-একটা কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু ধারার এমন চন্ডালি মার্কা কথা শুনে কায়েসের বাম হাত অটোমেটিক তার গায়ে চলে যায়। এই মেয়েটিকে কায়েস মোটেও বিশ্বাস করে না। ধারা আর তার বান্ধবী মিলে তাকে একদিন কী নাকানিচোবানি না খাইয়ে ছিল। এসব কথা মনে করে ধারার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। কায়েস মনে করেছিলো ধারা আজ নতুন বউ মত লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবে। কিন্তু কোথায় কী? এ তো সেই আগের মতো দেবী চৌধুরানী হয়ে বসে আছে। কায়েসের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে ধারার ধমক শুনে। ধারা ক্ষীণ গলায় বলল,

‘ ঐ কথা বলছিস না কেনো? বোবা হয়ে গেলি না কী?’

কায়েস শুকনো গলায় ঢোক গিলে বলল,

‘ না মানে তুমি তো এখন আমাদের ইভান ভাইয়ার বউ। সেই হিসাব মতে তুমি আমাদের ভাবি।’

ধারা কায়েসের কথা বুঝতে পেরে বলল,

‘ ওহ, কিন্তু…

ধারার আর সম্পূর্ণ কথা বলা হয় না। ওদের কথার মাঝে রুমি চলে আসে। সে কায়েস কে দেখে বলল,

‘ আরে কায়েস তুমি চলে এসেছো। আম্মু আমাকে ফোন করে তোমার আসার কথা জানিয়ে দিয়েছে। তুমি তোমার ধারা ভাবির ঘর টা চিনো না? ওখানে তোমার ইভান ভাইয়া আছে। তুমি একটু কষ্ট করে ওই ঘরে গিয়ে তোমার ভাইয়ার কাছে প্যাকেট টা দিয়ে আসো। আমি নিয়ে যেতাম প্যাকেট টা কিন্তু আমার একটু কাজ আছে এখন।’

রুমির কথা শুনে কায়েস মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘ সমস্যা নেই ভাবি আমি নিয়ে যাচ্ছি।’

কায়েস দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে যায়। রুমি ধারার দিকে তাকায়। ধারার হাত ধরে বলল,

‘ মাশাল্লাহ, আমার ছোট জা কে তো খুব সুন্দর লাগছে। শাড়ি পড়তে জানো? না কেউ পড়িয়ে দিয়েছে?’

ধারা উত্তরে ছোট করে বলল,

‘ একা একা শাড়ি পড়তে পারি না, তবে কেউ যদি কুচি টা ধরিয়ে দিলে তাহলে পড়তে পারি। আজকে আমাকে ভাবি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।’

রুমি দুষ্টুমির সুরে বলল,

‘ সকাল সকাল দেখি গোসল করেছো, ঘটনা কী গো?’

ধারা সে সরল মনে বলল,

‘ ভাবি বলেছে সকাল সকাল গোসল করে নিতে। একটু পরে বাড়িতে মেহমান এর আনাগোনা শুরু হবে। পরে যদি সময় না পাই তাই ভাবি সকাল গোসল করে নিতে বলেছে।’

রুমি হাসে ধারার কথা শুনে। রুমি ধারার দুই গাল টেনে দিয়ে বলল,

‘ তুমি এত কিউট কেন গো? একদম পিচ্চি বাচ্চাদের মত।’

ধারা গাল ফুলিয়ে বলল,

‘ আমাকে একদম পিচ্চি বলবে না। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি।’

রুমি আবারো হেসে বলল,

‘ ওহ, আচ্ছা। কিন্তু তোমাকে পিচ্চি বলাতে তোমার গাল এমন ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?’

ধারা ওর গালটা আরো ফুলিয়ে বলল,

‘ কে আবার বলবে, ওই যে লোকটা আছে না। উনি কি সব কঠিন কঠিন কথা বলেছেন, আমি ওসব কথা না বোঝায় উনি বললেন আমি নাকি পিচ্চি এখনো। তুমি বলো আমি কি এখনো পিচ্চি?’

রুমি ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ কার কথা বলছো তুমি? ইভান? ইভান বলছে তোমাকে এই কথা?’

ধারা উপর-নীচ মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল, রুমি মৃদু হাসে ধারার কথা শুনে। কিছু বলবে তার আগেই লাবিদের গলার স্বর শুনতে পায়। রুমি গলার স্বর অনুসরণ করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাকছে তাকে। একটু আগে না দেখে এসেছিল মানুষটা ঘুমিয়ে আছে, তাহলে এখন এইভাবে জরুরি তলবে ডাকছে কেনো? রুমি ধারা কে কিছু বলার আগে ধারা বলল,

‘ ভাবি আমি এখন যাই। পরে তোমার সঙ্গে কথা বলবো। দাদি আম্মা আমাকে ডেকেছিল অনেকক্ষণ আগে। এখন তার কাছে না গেলে বকাবকি করবে।’

এইটুকু বলে ধারা বড় বড় পা ফেলে উঠান পেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। রুমি চোখ সরিয়ে লাবিদের দিকে তাকায়। আর এইভাবে বারবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছে কেন? রুমি চিন্তা করতে করতে লাবিদের সামনে গিয়ে বলল,

‘ তুমি না একটু আগে বললে, তুমি আরও আধা ঘন্টা পরে ঘুম থেকে উঠবে। আর ফোনের দিকে বারবার কী দেখছো?’

লাবিদ আহত গলায় বলল,

‘ আর ঘুম। তোমার সাধের দেওর করেছে কী তুমি জানো? ওরে দৌলতে ভাইয়ার কপালে কী যে আছে তার একমাত্র উপর আল্লাহই জানে।’

রুমি চোখ ছোট ছোট করে বলল,

‘ কী বলছো তুমি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কী করেছে ইভান? আর তার জন্য ভাইয়ার ই বা কী হবে?’

লাবিদ তার হাতের ফোন টা রুমির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘ এটা দেখো, তাহলে আমার কথার মানে বুঝবে।’

রুমি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। মুখ হা করে লাবিদের দিকে তাকায়। ইভান যে এমন ভয়ানক কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে, তা কেউ ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। গতকাল রাতে ইভান তার মিউজিক্যাল ভিডিওর একাউন্টে একটা নতুন ভিডিও আপলোড করেছে। ইভানের বুকের উপর একটা মেয়ে শুয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে তার মুখ ঢেকে আছে। ইভান ধীরে ধীরে মেয়েটার চুলগুলো নিয়ে খেলা করছে। ভিডিওর মাঝে ইভান মেয়েটার খোলা এলোমেলো চুলে চুমু দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। ব্যাস, ভিডিও শেষ। নিচে গোটা গোটা অক্ষরে ট্যাগ করে লেখা আছে মাই লাইফ লাইন। ভিডিওতে মেয়েটার মুখে স্পষ্ট নয়। রুমি বা লাবিদের বুঝতে দেরি নেই যে ভিডিওর মেয়েটি হলো তাদের ধারা। রুমি, লাবিদের মুখে চিন্তার ছাপ। এই ভিডিওটা যদি তাদের বড় ভাইয়ার বউ মানে ভাবি কিংবা ভাবির পরিবারের কেউ দেখে তাহলে ওদের বড় ভাইয়ার কী হবে তা ভেবে দুজনের শুকনো গলায় ঢোক গিলে। রুমি জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

‘ তুমি এক্ষুনি ভাইয়া কে ফোন দিয়ে ইভানের এই কীর্তির কথা জানাও। ভাইয়া কে সাবধান করে দাও। এরমধ্যে ভাবি যদি হঠাৎ করে ভাইয়া কে ফোন দিয়ে বসে তাহলে আর কেলেংকারীর শেষ থাকবে না।’

লাবিদ ঘাড় নাড়িয়ে রুমির কথায় সম্মতি জানিয়ে এক এক বিড়বিড় করতে করতে ঘরের দিকে যায়। রুমি ছোট নিঃশ্বাস ফেলে সেও লাবিদের পিছন পিছন যায়।

ধারা কে খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ধারার আম্মা ধারা কে ডাক দিয়ে বলল,

‘ এই এখন এখানে কী করছিস? জামাই কোথায়?’

ধারা মিন মিন করে বলল,

‘ সে তো অনেকক্ষণ আগে গোসল করবে বলে কলপাড়ে যাবে বলেছিলো। এখন কোথায় তা জানি না।’

ধারার আম্মা ধমকের সুরে বলল,

‘ জামাই একা একা কলপাড়ে কল চেপে গোসল করছে আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস। যা এখনই যা জামাইয়ের কাছে। গিয়ে দেখ কী লাগে না লাগে।’

ধারা মুখ গোমড়া করে ছোট করে বলল,

‘ ওখানে আমি গিয়ে কী করবো? ভাবি তো গরম পানি করে গোসল খানায় রেখে এসেছে। আর যা দরকার তা তো গোসল খানায়ই আছে। আমি শুধু শুধু ওখানে গিয়ে কী করবো।’

ধারার আম্মার চোখ রাঙিয়ে বলল,

‘ তোকে আমি যা বলেছি তা কর গিয়ে। দরকার পড়লে ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। না হলে গিয়ে কল চেপে দিবি জামাইকে। কিন্তু তুই এখন জামাইয়ের কাছে যাবি। জামাইয়ের কী লাগে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখবি। এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা জামাইয়ের কাছে যা।’

ধারা গাল ফুলিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হতে হতে বলল,

‘ আমাকে নাকি এখন তারা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে! আমার কি খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই নাকি। আম্মা কেও বলিহারি বাপু। দুনিয়ায় কী লোকের অভাব পরেছে যে আমাকে তার কাছে পাঠাতে হবে? লোকটার দেখতে তো মাশাল্লাহ। আর স্বভাব চরিত্র একদম নির্লজ্জের মত। ইশ! ভাবতেও আমার লজ্জা লাগছে কিভাবে একটা অচেনা মেয়েকে সকালবেলা অমন জাপটে ধরে চুমু খেলো। লোকটার মনে হয় ক্যারেক্টারে সমস্যা আছে।’

ধারা একা একা বিড়বিড় করতে করতে গোসলখানার দিকে আসে। ধারা মাথা নিচু করে আসছিল। হঠাৎ করে কিছু একটা সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে শুরু করলে ধারা ভয় পেয়ে কিছু একটা জাপটে ধরে। ভয় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে থাকে। মুখের উপর গরম কিছু অনুভব করে। ধারা চোখ খুলে তাকানোর আগে কেউ একজন ফিসফিস করে ধারার আর কানে বলল,

‘ কে গো ফুলটুসি! উড়ে উড়ে কোথায় যাচ্ছিলে?’

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here