#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-৩৭|
এমন বেহায়া মানুষ ধারা তার জীবনে দুটো দেখেনি। কিভাবে বলল সে কথাটা একঘর লোকের সামনে ধারা তাকে কিভাবে খাইয়ে দিবে। ধারা অনেকবার জোনাকি দিকে তাকিয়েছিল, কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অন্য দুনিয়ায় চলে গেছে। ধারা নামক যে কেউ যে এখানে আছে তাই হয়তো সে ভুলে গেছে। সে নিজের মত হেলেদুলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। ধারা আবার ইভানের দিকে তাকায়। সে মায়াভরা চোখে ধারার দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা সে মায়া উপেক্ষা করে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ কী হলো, হাতটা ছাড়ুন না।’
ইভান সে এখনো এক দৃষ্টিতে ধারার দিকে তাকিয়ে আছে। ধারার কথা শুনে টেবিলের ওপাশ থেকে রুমি ভাবি ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,
‘ কী ভাবছো ধারা তুমি? খাইয়ে দাও না তোমার ই তো বর।’
ধারা আমতা আমতা করে বলল,
‘ কিন্তু ভাবি এইভাবে…
কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে রুমি ভাবি বলল,
‘ কিন্তু পারান্ত কিছু নেই। নেও খাইয়ে দেও এবার ইভান কে।’
ধারা রুমি ভাবির কথা শুনে ইভানের দিকে আবার তাকায়। রুমি ভাবির কথা শুনে ঠোঁটে কেমন মিষ্টি হাসি লেগে আছে। ধারা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় ইভানের কাছে। ইভান এখনো ধারার হাতটা ধরে আছে। রুমি ইভানের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলল,
‘ আরে ভাই এবার তো বেচারীর হাতটা ছাড় না হলে তোকে খাইয়ে দেবে কিভাবে?’
রুমির কথা শুনে ইভান জলদি ধারার হাতটা ছেড়ে দিয়ে মাথা চুলকে লাজুক হাসে। ধারা হাত ছাড়া পেয়ে বিব্রত চোখে আশেপাশে তাকায়। কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে নেই। যে যার মতো ব্যস্ত। যেন ওদের দিকে তাকানোর সময়ই নেই। ধারা ইতস্তত করে ইভানের প্লেটে হাত দেয়। প্লেট থেকে অল্প কিছু মাছ নিয়ে ইভানের মুখের সামনে ধরে। ইভান তার ঠোটে বিজয়ীর হাসি বজায় রেখে ধারার হাত থেকে খেতে শুরু করে। ধারা মুহূর্তেই চমকে ওঠে। ইভান ওর হাত থেকে মাছ খাওয়ার সময় দুই ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে ধারার হাতের আঙ্গুল গুলো। ধারা তাড়াতাড়ি আঙ্গুল গুলো ওখান থেকে সরিয়ে আনার সময় ইভান সবার চোখের আড়ালে ধারার আঙ্গুল গুলো তে ঠোঁট ছুঁইয়ে ছোট করে একটা চুমু দেয়। কেঁপে ওঠে ধারা। পুরো শরীর জুড়ে কাঁপা কাঁপি করছে ধারা। হাঁটু ভয়ংকরভাবে কাঁপছে। বুক তীব্রভাবে ধুক ধুক করছে। সাহস হচ্ছে না ইভানের দিকে আড়চোখে তাকানোর। তবে এটুকু বুঝতে পারছে ইভান নামক ছেলেটা তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ই যেনো ধারার নেতিয়ে পড়া জন্য যথেষ্ট। বড় বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে কিছু বলবে তার আগেই ইভান ধীর গলায় বলল,
‘ আমার মুখের খাবার গুলো তো শেষ, তাহলে খাইয়ে দিচ্ছে না কেন? নেও নেও খাইয়ে দাও এবার।’
উফ! এই ছেলেটা কী তাকে মারার পরিকল্পনা করেছে? এমন মায়া ভরা কন্ঠে কেউ যদি খাইয়ে দিতে বলে তাহলে কী ধারা খাইয়ে না দিয়ে থাকতে পারবে? কখনো না। আবার খাইয়ে দিতে গেলে এই ছেলেটা এমন নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে হবে। বুক কাঁপছে তার। ছোট ঢোক গিলো ধারা। নিঃশ্বাস বন্ধ করে সব মাছ টুকু একবারে হাতে নিয়ে ইভান কে খাইয়ে দিবে দ্রুত ওখান থেকে সরে যায় ধারা। না জানি আবার কখন কী নতুন আর্জি করে বসে। কিছুক্ষণ পরে হয়তো বলবে, ‘ খাইয়ে তো দিয়েছে এবার মুখ ধুইয়ে তোমার আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিবে না।’
খাওয়া দাওয়া করে সবাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছে। মিতা বেগম আর তার দুই ছেলে এবং বৌমাকে নিয়ে রওনা দিবে এখন। গ্ৰামের এদিকে গাড়ির নিয়ে আসার রাস্তা নেই। তাই বাজারের পাশে স্কুল মাঠে গাড়ি রেখে এসেছে লাবিদ। সেখান থেকেই তারা রওনা দিবে। মিতা বেগম ধারার আব্বাজান কে নিয়ন্ত্রন জানিয়েছে, কাল তার সপরিবারে মিতা বেগমর বাড়িতে যাবে। ধারার আব্বাজান ও কথা দিয়েছে তারা অবশ্যই যাবে। মিতা বেগম সবার সাথে কথা বলে ধারা আর ইভানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে। মৃদু স্বরে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ সাবধানে থেকো। কাল তো তুমি তোমার বাড়ি যাচ্ছো। ইভান কিছু বললে তোমাকে আমাকে বলবে তুমি।’
মিতা বেগমের কথা শুনে ধারা মৃদু হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। ইভানের দিকে তাকিয়ে একটু গম্ভীর গলায় বলল,
‘ শোন তুই কেমন দুষ্টু তা আমি ভালো করি, খবরদার বলছি আমার বৌমাকে একদম জ্বালাবি না। আমি যদি শুনেছি তুই বৌমাকে জ্বালাতন করেছিস তাহলে তোর একদিন কী আমার একদিন।’
ইভান বাচ্চাদের মত মুখ করে বলল,
‘ আম্মু তুমি এইভাবে আমাকে বলতে পারলে। আমি কী তোমার তেমন ছেলে।’
মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,
‘ তা আমি খুব ভালো করে জানি তুমি আমার কেমন ছেলে।’
মিতা বেগমের কথা শুনে ইভান মাথা চুলকে হেসে দেয়। মিতা বেগম ছোট করে বলল,
‘ আসছি আমরা। সাবধানে থাকিস তোরা।’
ইভান মৃদু স্বরে বলল,
‘ চলো তোমাদের বাজার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।’
ইভান ধারার দিকে এক পলক তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। ইভানের পিছনে পিছনে একে একেবারে থেকে সবাই বের হয়। শুধু বাড়িতে থাকে যায় বাড়ির মেয়েরা।
রাত নয়টার বেশি বাজে। গ্রামে রাত নয়টা মানে বলা যায় গভীর রাত। তার ওপরে শীতের আমেজ। অভি আর হাবিব অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছে। আজ সারাদিন খুব খাটাখাটনি গেছে এদের দুজনের উপর দিয়ে। ধারার আব্বাজান, চাচা জান, দাদি আম্মা আর অতিথিরা তারা অনেক আগেই শুয়ে পরেছে। জেগে আছে শুধু ধারা, ধারার আম্মা, জোনাকি ভাবি, চাচি জান। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি তারা, বাড়ির ছেলে, জামাই এখনো বাড়িতে ফেরেনি। ইভান আর সম্রাট সেই বিকেলে বের হয়েছে এখনো ফেরেনি বাড়িতে। সম্রাট ফোন করে জানিয়েছে তাদের ফিরতে একটু দেরি হবে। ধারার আম্মা দুই দিন ধরে এক পলকের জন্য ও সময় পাইনি যে তার আদরের মেয়েটা সঙ্গে দুটো কথা বলবে। এখনো সে ব্যস্ত। জামাই ছেলের জন্য রাতের খাবার গরম করছে। কাল যদি একটু সময় পায় মেয়েটার সাথে মন খুলে কথা বলার। এসব ভেবে আনমনে ছোট নিঃশ্বাস ফেলে ধারার আম্মা।
চলবে…