অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৩৬

0
716

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৩৬|

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল। মেহমানের টইটুম্বুর করছে বাড়িতে। ধারার নানার বাড়ীর লোকজন চলে এসেছে সকাল সকাল। জোনাকির বাপের বাড়ির ও কিছু লোক এসেছে। গ্রামের আশেপাশের পাড়া-প্রতিবেশী গণ্যমান্য ব্যক্তি সব মিলিয়ে বাড়ির উঠান পরিপূর্ণ। ধারার শাশুড়ি মানে মিতা বেগম এসে পৌছেছে কিছুক্ষণ আগে। এখানে সবার সঙ্গে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাবেন তারা। মিতা বেগম এসেই কিছু গয়নার বক্স ধরিয়ে দেয় ধারার দাদি আম্মার হাতে, ধারা কে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য। জুয়েল কে দিয়ে অল্প কিছু গয়না কিনে এনেছেন তিনি। মিতা বেগম সে বাড়িতে এসেছে পর থেকে একটা জিনিস খুব ভালো করে খেয়াল করছে, ধারা সে শাড়ি পড়ে ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না। মিতা বেগমের সামনেই দুই তিন বার হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে চেয়েছিল। একহাতে শাড়ি উঁচু করে ধরে অন্য হাতে বাড়ির টুকটাক কাজ করছে ধারা। মিতা বেগম ধারা কে ডাকে। ধারা এসে মিতা বেগমের পাশে এসে দাঁড়ায়। মিতা বেগম ধারার হাত ধরে তার পাশে বসিয়ে বলল,

‘ শাড়ি পড়ে এমন দৌড়া দৌড়ি করছো কেন? পড়ে গিয়ে তো হাতে পায়ে ব্যথা পাবে।’

ধারা মুখ ফুলিয়ে বলল,

‘ আমার দৌড়া দৌড়ি করার অভ্যাস আছে। কিন্তু শাড়ি পড়ে একদম না। শাড়ি পড়ে তো ঠিক ভাবে হাঁটতেই পারি না। তার উপরে বাড়িতে এত মেহমান। সবার হাতে হাতে একটু টুকটাক কাজ না করলে যে বড় মুশকিলে পড়বে সবাই।’

মিতা বেগম মৃদু হেসে বলল,

‘ এই দুইদিন একটু কষ্ট করে শাড়ি পড়ো। তারপরে আর কেউ তোমাকে জোর করবে না শাড়ি পরার জন্য। দুদিন পরে তুমি আবার আগের মতো সেলোয়ার-কামিজ পড়তে পারবে।’

ধারা ঠোঁটে মুহূর্তেই হাসি ফুটে ওঠে। সে এক ফালি হেসে বলল,

‘ সত্যি!’

মিতা বেগম ধারার গাল একটু টেনে দিয়ে হেসে বলল,

‘ একদম সত্যি। তোমার হাতে এখন কোন কাজ আছে? না কী এখন আমার কাছে কিছুক্ষণ বসবে। বসে গল্প করবে?’

ধারা দ্রুত বলল,

‘ আছে তো, আম্মা আর ভাবি আমাকে দুপুরে খাবার জন্য চাটনি বানাতে বলেছে। একটু পরে রান্না ঘর ফাঁকা হবে। সেই ফাঁকে আমি চাটনি টা তৈরি করে ফেলব। চাটনি বানানোর পরে না হয় আপনার সাথে বসে গল্প করব।’

মিতা বেগম হেসে বলল,

‘ ঠিক আছে। তুমি তোমার হাতের কাজ শেষ করে এসো।’

ধারা মিতা বেগমের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বসা থেকে উঠে চলে যায়।

ধারার আব্বাজান আর চাচা জান বাড়ি ফিরেছে অল্প কিছুক্ষণ হলো। কিন্তু সম্রাট আর ইভান এখনো বাড়িতে ফিরেনি। ধারা তার আম্মার মুখে শুনেছে সম্রাট ভাইয়ার বন্ধুরা ধারার বরকে দেখতে চেয়েছে। তাই সম্রাট ভাইয়া বাজার থেকে ফেরার পথে তাদের সঙ্গে ইভান কে সাথে নিয়ে দেখা করতে গেছে। ধারা তার আম্মার মুখে এসব কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক কিছুক্ষণের জন্য কারেন্টের খাম্বার থেকে দূরে থাকা যাবে। না হলে তো ওকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। না জানি আবার কখন সকালের মতো জাপটে ধরে চুমু খাবে। ইশ! কী লজ্জা! কী লজ্জা! ঐ অবস্থায় যদি ওদের কেউ দেখে ফেলত তাহলে তো লজ্জায় মাথা কাটা যেত ধারার। কাউকে আর এ মুখ দেখাতে পারতো কী না তা নিয়ে বেশ সংশয় আছে ধারার মনে। যাক আপাতত তো কারেন্টের খাবার থেকে দূরে থাকা যাবে। এটাই কম কিসের! এসব ভেবে ধারা একা একা মুচকি হাসে।

বাড়ির অধিকাংশ মেহমানদের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে। তারা বসে আছে এখন জামাই দেখবে বলে। কিন্তু কোথায় জামাই? তার তো কোন খবরই নেই। না সম্রাট এখনো বাড়ি ফিরছে, আর না ইভান। জোনাকির সম্রাট কে ফোন করেছিল বার কয়েক। আসছি আসছি বলে সে ফোন কেটে দেয়। অভি আর হাবিব সবে গোসল করে বাড়ি ফিরেছে তারা। দুই ভাই মিলে পুকুরে এতক্ষণ গোসল করেছে। এখন তারা উঠানে চেয়ার বসে জিরিয়ে নিচ্ছে। কাজের শেষ নেই তাদের খাওয়া-দাওয়ার পরে আবার লাগে পড়তে হবে কাজে। বাড়ির বড়রা খাবারের দিকে তদারকি করছে। চেয়ারে বসে অভি আর হাবিব কিছু নিয়ে কথা বলছিল তখন বাড়ির সামনের গেটের ওদের সম্রাট ভাইয়া আর ইভান আসছে। কিছু একটা নিয়ে তারা হাসাহাসি করছে। হাবিব ওদের দিকে তাকিয়ে গলায় স্বর উঁচু করে বলল,

‘ বাড়ির সবাই তোমাদের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে বেলা গড়িয়ে ফেলেছে।‌ আর এই বুঝি তোমাদের আসার সময় হলো?’

সম্রাট মৃদু স্বরে বলল,

‘ আর বলিস না, ইভান কে পেয়ে ওরা তো ছাড়তেই চাইছিল না। অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে নিয়ে এলাম ওকে।’

সম্রাটের কথা শেষ হওয়ার আগে ধারার চাচি জান ওখান এসে দাঁড়ায়। সম্রাটের কথা শেষ হলে তিনি খানিকটা রাগি গলায় বলল,

‘ হে রে সম্রাট তোর কী কোনো কান্ড জ্ঞান নেই না কী? এই দুপুর বেলা কোন আক্কেলে নতুন জামাইকে সাথে নিয়ে পাড়া বেরোতে বের হোস। আর তোর বন্ধুদের বলিহারি বাপু, নতুন জামাই দেখার যখন এতোই শখ তাহলে বাড়িতে এসে দেখে যাক না। কে বারন করেছে। আহারে, জামাইয়ের মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। আর যাবে না ই বা কেনো? সেই সাতসকালে দুটো কিছু মুখে দিয়েছিলো। বাবা যাও তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো। বাড়ির সবাই বসে আছে তোমার জন্য, একসাথে খাবে বলে। আমি তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি।’

ইভান ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,

‘ চাচি জান আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন। আমার এখন তেমন একটা খিদে পায়নি। তাছাড়া দোকানে যাওয়ার পরে ভাইয়া আমাকে অনেক কিছু খাইয়েছে। আর আপনারা এখনো না খেয়ে আমার জন্য বসে আছেন কেনো?’

চাচি জান উত্তরে বলল,

‘ বা রে তুমি আমাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ের জামাই। বলতে গেলে আজ প্রথম তুমি তোমার শ্বশুরবাড়িতে পাত পেড়ে খাবে। তোমার জন্য বসে থাকবো না তো আর কার জন্য বসে থাকবো? কাল রাতে তো ভালো করে আয়োজন করতে পারিনি। তাই আজ সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করেছি আমরা। এবার গিয়ে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে এসো।’

চাচি জানের কথা শুনে ইভান শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

খাবার টেবিলে রকমারি খাবার। আজ নতুন জামাই খাবে বলে কথা। ধারার দাদি আম্মা অভি কে দিয়ে সকালে তাদের পুকুরে জাল ফেলেছে। মাছের বড় মাথাটা ইভানের পাতে দিয়েছে। ইভানের এসব কিছুই তার মন নেই। তার মন পড়ে আছে তার ধারা রানির উপর। বাড়িতে এসেছে পড় থেকে মেয়েটার দেখে নেই। কী নিষ্ঠুর মেয়েটা। একবার এসে দেখে গেলে কী এমন ক্ষতি হতো? অথচ তার দেখা পাওয়ার জন্য ইভান যে কাতর হয়ে আছে। তার এক নজর দেখা পেলে যে সে দিশাহারা হয়ে যাবো। ইভানের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে ধারার আম্মার কথায়। তিনি ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কী হলো বাবা খাচ্ছো না কেনো? রান্না কী ভালো হয়নি?’

ইভান হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘ আরে না না আম্মা, রান্না ভালো হয়েছে। আসলে….

ইভানের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে রুমি দুষ্টুমির সুরে বলল,

‘ আসলে আন্টি আপনার জামাই এখন আপনার মেয়েকে খুঁজছে। দেখছে না আড়চোখে কেমন আশেপাশে তাকাচ্ছে। এরমধ্যেই আপনার জামাই চোখে হারাচ্ছে আপনার মেয়েকে।’

রুমির কথা শুনে ঘর ভর্তি মানুষ শব্দ করে হাসতে শুরু করে। ধারার আম্মা মাথার কাপড় টা একটু টেনে দিয়ে ওখান থেকে দ্রুত সরে পড়ে।

শীতের বেলা বিছানায় বসে থাকলেও যে কেউ ঘুমে ঢলে পড়বে। তার উপরে তো ধারা ঘুম কাতুরে। বসে থাকতে থাকতে কখন যে ওর দাদি আম্মার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরও পাইনি নিজে। এদিকে জোনাকি তাকে খুঁজতে খুঁজতে দাদি আম্মার ঘরে হাজির। গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। জোনাকি কোমরে এক হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে ধারা দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এই মেয়েটা কবে যে সবকিছু বুঝতে শিখবে কে জানে? ইভানের একে নিয়ে কপালে অনেক দুর্ভোগ আছে। কোথায় নিজের বর, শাশুড়ি, ভাসুররা, জা তারা খেতে বসেছে, তাদের দাঁড়িয়ে থেকে খাবার পরিবেশন করব। কিন্তু এই মেয়ে তো এখানে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। জোনাকি ধীর পায়ে গিয়ে ধারার পাশে বসে। আজ সকাল বেলা সবাই মিলে একসঙ্গে কী মজাটাই না করলো ওর সাথে। তাদের সঙ্গে তো জোনাকি নিজেও ছিলো। বাসর রাতে উপহার স্বরূপ ইভান যে ওর হাতে আংটি পরিয়ে দিয়েছে। তা সে বলতেই পারবে না। ঘুমের মধ্যে যদি এই মেয়েকে কেউ তুলে নিয়ে যায় তাও এ মেয়ে বলতে পারবে না। জোনাকি খানিকটা হেসে ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

‘ এই ধারা ওঠ ঘুম থেকে, এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিস কেন? এই ওঠ না ঘুম থেকে।’

ধারা ঘুমের মধ্যে একটু নড়েচড়ে আবার আরাম করে ঘুমিয়ে ছোট করে বলল,

‘ উম্ম।’

জোনাকি এবার ধারা কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘ এই উম্ম পরে করিস, আগে ওঠ ঘুম থেকে। তুই উঠবি ঘুম থেকে না কি আমি গিয়ে আম্মা কে ডেকে আনবো!’

ধারা ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

‘ ভাবি একটু ঘুমাতে দেও না।’

জোনাকি ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ ইভান ফিরেছে বাড়িতে। ডাকছে সে তোকে।’

মুহুর্তেই লাফ দিয়ে উঠে বসে বিছানায় ধারা। লোকটার নাম শোনা মাত্র ঘুম চোখ থেকে পালিয়ে গেছে ধারার। আহত চোখে তাকায় জোনাকির দিকে। ওই লোকটা আবার তাকে কেন ডাকছে? ওই লোকটা তাকে যখনই কাছে পায় তখনই জাপটে ধরে অন্যথায় চুমু খায়। সর্বনেশে লোকটা এখন আবার তাকে ডাকছে কেন? নিশ্চয়ই সকালের মতো এখন আবার তাকে…. না না সে কিছুতেই আর ওই লোকটার সামনে যাবে না। ধারা জোনাকির দিকে তাকিয়ে করুন গলায় বলল,

‘ সে এখন আমাকে ডাকছে কেন? আমি তো কিছু করিনি।’

জোনাকি বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ তোকে আদর করবে, তাই তোকে ডাকছে চল এখন।’

ধারা শুকনো গলায় ঢুকে গেলে বলল,

‘ না না আমি ঐ লোকটার কাছে যাব না। ভারী নির্লজ্জ লোক।’

জোনাকি দুষ্টুমির সুরে নিজের ভুরু নাচিয়ে বলল,

‘ ইভান তো খুব ভালো ছেলে। বাড়ির সবাই তো ইভান বলতে পাগল। তার মতো ছেলে হয় না। কী সুন্দর ব্যবহার তার। আর তুই কী না সেই ছেলেকে নির্লজ্জ বলছিস। কেন কী করেছে সে?’

ধারা জোনাকির দিকে বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে একটু উত্তেজিত সুরে বলল,

‘ ভালো না ছাই জানা আছে আমার। তার মত অসভ্য নির্লজ্জ ছেলে আমি আমার জীবনে আর একটাও দেখিনি। জানো সে কী করে? যখনই আমি তার কাছে থাকি হয় জাপটে জড়িয়ে ধরবে না হয় চুমু….

জোনাকি ধারার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে একহাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে বলল,

‘ গাঁধী কোথাকার, এসব কথা কী জনে জনে বলে বেড়াতে হয়। তোর স্বামী তোকে আদর করে ভালোবাসে ভালো কথা তাই বলে কী তুই এসব কথা সবাইকে বলে বেড়াবি। তোদের মধ্যে যা কিছু হবে তা দুজনের মধ্যে রাখবি। অন্য কাউকে এসব বলার দরকার নেই। খবরদার বলছি এসব কথা আমাকে বলেছিস বলেছিস কিন্তু অন্য কাউকে বলেছিস তো তোর আর হাড়গোড় আমি আর একটা আস্ত রাখবো না।’

জোনাকি ধারার মুখের উপর থেকে হাত সরালে, ধারা ভিতু গলায় বলল,

‘ ঠিক আছে, আর কাউকে বলবো না।’

জোনাকি মৃদু স্বরে বলল,

‘ চল এখন আমার সাথে ইভানের কাছে।’

ধারা ভদ্র মেয়ের মত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধারা জানে এখন যদি সে ভুলেও কিছু বলে তাহলে তার আর রক্ষে থাকবে না। ধারা ভদ্র মেয়ের মত জোনাকির পেছনে গুটি গুটি পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পা জোড়া গিয়ে থামায় রান্নাঘর এ খাবার টেবিলের পাশে। বাড়ির ছোটরা টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। আসার সময় দরজায় ফাঁক দিয়ে দেখে এসেছে ধারার আব্বাজানের ঘরে বাড়ির বড়রা সবাই খেতে বসেছে। ধারার শাশুড়ি বড় ভাসুর তারাও ও ঘরে খেতে বসেছে। জোনাকি ধারা কে রান্না ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা গিয়ে সবার প্লেটের মাছ বেড়ে দে।’

ধারা মাথা দুলিয়ে গুটি গুটি পায়ে এসে সবার প্লেটে মাছ বেড়ে দিতে শুরু করে। প্রথমে লাবিদ ভাইয়া, রুমি ভাবিকে বেড়ে দিয়ে, ইভানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। উপস্থিত সবার দৃষ্টি তাদের উপরে। ধারা মাছ বেড়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলে ইভান মৃদু স্বরে বলল,

‘ মাছ তো দিলে কিন্তু ঝোল দিবে না?’

ইভানের কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসে। ইভান ইচ্ছে করে এমন করছে ধারা কে তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য। ধারা কিছু না বলে ইভানের প্লেটে মাছের ঝোল দেয়। ধারা আবারো চলে যেতে চাইলে ইভান তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,

‘ ঝোল ও তো দিলে কিন্তু আমি যে মাছ বেছে খেতে পারি না তার কী হবে?’

ইভানের কথা শুনে ধারার ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজের বাড়ি মারতে। আড়চোখে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখে হাত দিয়ে সবাই মুচকি হাসছে। এরমধ্যে লাবিদ তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে উঠে বলল,

‘ আমার খাওয়া দাওয়া শেষ আমি উঠোনের দিকে গেলাম।’

এক নজর ইভানের দিকে তাকিয়ে লাবিদ আবারও হেসে বলল,

‘ ভাই তুই তোর মাছের ঝোল, মাছের কাঁটা বেছে খেয়ে তারপরে আসিস কিন্তু।’

লাবিদের কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। ইভান সেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রেখেছে বোঝা যাচ্ছে না সে হাসছে কী না। ধারা আরো একনজরে সবার দিকে তাকায়। জোনাকি মুচকি হেসে বলল,

‘ ধারা তুই ইভানকে মাছ টা বেছে দে, বেচারা তো মাছ বেছে খেতে পারে না।’

ধারা করুন চোখে জোনাকির দিকে তাকায়। সে তার নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। ধারা কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। না তাও তার ভাবির মন গলাতে পারলো না। ইভানের দিকে তাকায়। কী সুন্দর অবুঝ বাচ্চাদের মত করে বসে আছে। আর উপায় না পেয়ে ধারা ইভানের একদম কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ইভানের প্লেটে হাত দিয়ে মাছ বাছতে শুরু করে। ধারা ঠিকই অনুভব করতে পারছে তার দিকে এই ইভান নামক ছেলেটা তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো সে তার চোখের পলকও ফেলতে না। ধারা নিঃশ্বাস বন্ধ করে কোনোমতে মাছ বেছে দিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে চাইলে ইভান তার বাম হাতে ধারার ডান হাত ধরে ফেলে। হঠাৎ করে এমন হওয়াই ধারা চমকে উঠে। কী ভয়ানক কান্ড। এত মানুষের সামনে এই ছেলেটা তার হাত ধরে আছে। কী সর্বনেশে লোক। ধারা কাঁদো-কাঁদো চোখে অন্য সবার দিকে তাকায়। এরা তো যে যার মত খাওয়া-দাওয়া করছে, যেনো এদিকে তাদের কোনো খেয়ালই নেই। জোনাকি ভাবি সে তো রুমি ভাবির প্লেটে তরকারি বেড়ে দিচ্ছে। না এদের আশায় আর বসে থাকা যাবে না এবার নিজেকে কিছু করতে হবে। ধারা ইভানের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

‘ হাতটা ছাড়ুন।’

ইভান ধীর গলায় বলল,

‘ মাছ তো বেছে দিলে, এবার খাইয়ে দিবে না?’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here