দাম্পত্য সুখ (৬ষ্ঠ পর্ব)

0
186

#দাম্পত্য সুখ (৬ষ্ঠ পর্ব)
#লাকি রশীদ

ঘুম ভাঙ্গার পর বুঝতে পারছি না, কোথায় শুয়ে আছি। অনেকক্ষণ পর বুঝলাম, আমার রুমে শুয়ে আছি। কিন্তু বাজে কয়টা এখন? মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি,চারটা বাজে প্রায়। লাফ দিয়ে উঠে বসে বুঝি, কেন জায়গাটা চেনা যাচ্ছিল না। জানালার গ্লাস ও পর্দা দুটো ই টেনে দেয়া। হালকা অন্ধকার সবদিকে। তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু পড়ে, আগে যোহরের নামাজ আদায় করি। তারপর, বের হয়ে দেখি,মা বিশাল বড় একটা টিফিন ক্যারিয়ারে কি যেন ভরছে। বললাম,”মা ডাকলে না যে !!! ঠিক ৫ টায় শাহীন গাড়ি পাঠাবে
তো”। মা বলল,”দেখলি তোকে ৩ টার সময় তো ডাকতে চাচ্ছিলাম। তোর বাবার এক কথা”আমার
মেয়ে ইচ্ছে মতো ঘুমাক, খবরদার ডাকবে না”। একটু শব্দ হচ্ছে শুনলেও বকা দিচ্ছে আমাদের।

আনুর মা গরম ভাত প্লেটে দিয়ে, ভর্তার বড় প্লেট
সামনে রেখেছ। ৬ রকম ভর্তা দিয়ে প্লেট সাজানো। কেন যেন মনে হচ্ছিল, এতো তাড়াহুড়ো করে মজা করে ভর্তা খেতে পারবোনা। বললাম,”সব ভর্তা এক বক্সে দিয়ে দাও। আর কি রান্না আছে”? মা একদম কালাভুনার মতো মজার “মাটন কষা” রেঁধেছে। মায়ের এই আইটেম রান্না, এতো বেশি মজাদার হয়, শাহীন বলে” মাটন কষা মার মতো আর কেউ না কি রাঁধতে পারবে না”। মাঝারি বাটি
ভর্তি নারকেল দুধে রান্না মাটন কষা খাচ্ছি আর ভাবছি, ইস্ শাহীন থাকলে খুব এনজয় করে খেতো। চিকেন এর আইটেম আর নেই নি। পেট
ভরে গেছে,বাটির গোশত ছাড়াও মা বেছে বেছে
মাটনের হাড়ের পিস গুলো দিয়েছে। বাবা এসে প্লেটের কর্ণারে সালাদ দিয়ে বলছে,”মিশিয়ে খা।
মজা পাবি। এতো হুড়োহুড়ি করে খাচ্ছিস কেন?
গলায় ভাত আটকে যাবে তো”। আমি বলি,”সময়
নেই বাবা,৫ টার সময় গাড়ি আসার কথা”। ঠিক
তেমনি সময় জোহা এসে বলছে,”ছোটপা তোমার
গ্ৰেট বর তোমাকে নেবার জন্য,বাহন পাঠিয়ে দিয়েছেন”।

“টিফিন ক্যারিয়ার এ কি দিচ্ছ মা”? বলতেই মা লম্বা ফিরিস্তি দিচ্ছে। মাটন কষা, নুনের পিঠা, চালের রুটি,বীফ সমুসা আর তোর জন্য খাজুরি
পিঠা। ছেলেগুলোর সাথে তো পরীক্ষার আগে মনে হয়,আর দেখাই হবে না। নানুর হাতের একটু
খাবার অন্তত খাক”। বাবা কে বলি,”ঔষধ ঠিক মতো খাবে আর আমার ছেলেদের জন্য দোয়া করবে, পরীক্ষা টা যেন খুব ভালো হয়”। এসময় মা দেশের বিখ্যাত এক ব্র্যান্ডের শাড়ির,‌একটি
প্যাকেট আমার হাতে দিয়ে বলে,”ঝটপট পরে আয়তো মা, তোর বাবা গিয়ে কিনে এনেছে। দেখি
সবুজ রঙের জামদানি শাড়ি। রুমে গিয়ে পরলাম,
আসার সময় যে শাড়ি পরে এসেছিলাম তার রং
হালকা সবুজ ছিল। তাই, ব্লাউজ ম্যাচিং ই ছিল।

নদী তো নামেই নদী, মনে চোখে তো পদ্মার চরের মতো খটখটে শুকনো। শুধু বুকটার ভেতরে ই ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। শাড়ি পরে বের হয়ে বাবা কে
ছোট বেলার মতো বলি,”দেখোতো বাবা আমাকে
সবুজ পরী লাগছে কি না”? বাবা হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমায় বুকে টেনে নিয়ে কাঁদছে আর বলছে,”সবচেয়ে সুন্দর সবুজ পরীটা আজ তো আমার ঘরে এসেছিল”। মায়ের কান্না হলো, খুব নিঃশব্দ কান্না। চুলে, মাথায় চুমু দিয়ে বলছে,
“ধৈর্য্যের ফল সবসময় খুব মিষ্টি হয়রে মা। বুদ্ধি করে চলিস্”। আনুর মা বুয়া ঠোঁটে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছে। ওকে ৫০০/ টাকা দিয়ে, বাইরে বের হলাম। জোহা গাড়ির পেছনের সিটে ঠিক করে, টিফিন ক্যারিয়ার রাখলো আর ভ্যানে ছুলে দেয়া
নারকেল ও বেশ কয়েকটি ডাব তুলে দিল। আদর দিয়ে গাড়িতে উঠার সময় শার্টের পকেটে ১০০০/ টাকা দিয়ে বলি,”কিছু কিনে খাস ভাই”। হৃদয়ের,
দেহের শিরায় উপশিরায়,রক্তের প্রতিটি ফোঁটায়
যে বাড়ির স্মৃতি জড়ানো,আস্তে আস্তে পেছনে ফেলে, সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। ৫ টার জায়গায় ৬ টা বাজে। শাড়ি পরার জন্য, আরেকটু দেরি হলো। রাস্তায় বেশ জ্যাম এখন। এতো কিছুর পরেও, মনে হচ্ছে অনেক এনার্জি নিয়ে আজ যাচ্ছি। বাবার বাড়িতে গল্প, ঘুম আর খাওয়া দাওয়ার অনেক গুন ই বলতে হবে।

ছুটা বুয়া আমাদের পাড়া থেকে সামান্য দূরের বস্তিতে থাকে। ফোন দিলাম ওকে। ৮ টার দিকে আসতে পারবে কি না জিজ্ঞেস করতেই বলল পারবে। বললাম,এটার টাকা তোমাকে আজকেই যাবার সময় দিয়ে দিবো। সারা দিনে কি অবস্থা করে রেখেছে এরা….. আল্লাহ ই জানে। আপা শ্রীমঙ্গল থাকে, ওর হাজব্যান্ড গার্ডেন ম্যানেজার।
আপা বাবার বাসায় এলে, আমিও যদি যেতে পারতাম, তবে অনেক ভালো হতো। মনে মনে কি
ভেবে হাসছি, সারা দিন কাটিয়ে লোভ বেড়ে গেছে নদী তোমার।

গাড়ি থামতেই টিফিন ক্যারিয়ার হাতে নিয়ে বাকি
সবকিছু ড্রাইভার কে ঘরে দিয়ে যেতে বলি। কলিং বেল টিপতে ই বন্যা দরজা খুলে, মা বলে জড়িয়ে
ধরেছে। ওর চিৎকার শুনে রাফি ও রাহি চলে এসেছে। রাফি জিজ্ঞেস করল,”কেমন কাটলো তোমার হলিডে মা”? আমি বলি,”খুব ভালো কেটেছে। তোদের কেমন কাটলো”? আমার গলা বন্যা জড়িয়ে ধরেছে, দুই ছেলে দুই হাতের নিচে।
শাহীন চেয়ারে বসে বললো,”খুব ই খারাপ কেটেছে। বন্যা কি চা দিয়েছে একদম টলটলে পানি, মাথা ব্যথা সারবে কি, উল্টো ধরে আছে”।আমি এবার বলি,”ঠিক ই তো আছে। তোমরাই তো ওকে কোনো কিছু শিখতে দিতে নারাজ”। এ
সময় আমার শাশুড়ি রুম থেকে বের হয়ে বাচ্চা
দের দিকে তাকিয়ে বলছেন,”দেখো এতো বড় বড়
বাচ্চাদের কি আদিখ্যেতা !!! মনে হচ্ছে এরা কতো বছর পর মা কে পেয়েছে”।

রাফি মুখ খুললো,”তোমার তাতে সমস্যা কি দাদু?
তুমি চাইলে তুমিও আসতে পারো”? রাহি বলছে,
“মামস এই শাড়িতে তোমাকে ভীষণ মানিয়েছে।কে দিয়েছে এটা, তোমার বাবা মা”? আমি হেসে বলি,”হ্যা আমার বাবা এনে দিয়েছে”। শাহীন অনেকক্ষণ ধরে উশখুশ করে এবার বলেই ফেলে,
“পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা, মাথায় ব্যথা… তুমি কি কষ্ট করে এককাপ চা দিবে আমাকে”? দেড় যুগেরও
বেশি দিন ধরে সংসার করছি, শাহীন কে এতো কাতর কন্ঠে কখনো কিছু চাইতে দেখি নি। আমি মৃদু হেসে, টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে কিচেনে ঢুকি।

চালের রুটি তাওয়ায় গরমে দিয়ে, মাটন কষা কাঁচের বাটিতে নিয়ে মাইক্রোওয়েভে ঢুকাই।ঢাকা
দেয়া ছিল বলে, শাহীন দেখেনি কি ঢুকিয়েছি। চালের রুটি গরম হয়ে যাওয়ায়,নুনের পিঠা কয়েক টি তাওয়ায় দিয়ে শাহীন কে চালের রুটি ও মাটন কষা দিতেই, খুব খুশি হয়ে বলল,”ওহ্ !!!
মা তো দেখি ঠিক ই আমার জন্য মাটন কষা পাঠিয়েছেন”। আমি স্পষ্ট স্বরে বলি,”মা তো সুযোগ পেলেই পাঠায়। তুমি তো সারা বছরের মধ্যে, একবার গিয়ে তাদের দেখো না। ঈদের সময় আমার দুলাভাই শ্রীমঙ্গল থেকে এসে, সালাম করে।আর তুমি ঢাকায় বসেও যাও না”।

সে কিছু বলার আগেই আমার শাশুড়ি বলছেন,
“তা তোমার মা কি জামাইকে দু কথা শুনিয়ে, তার
পরে মাটন কষা খাওয়াতে বলেছেন”? আমি এবার বলি,”তা কেন হবে? আমার মা তো আর ছোট লোক নয়। আমার মনে হলো,তাই বললাম”।
আমার হিসেব ঠিক ই আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘরে বানানো নাস্তা খেতে অভ্যস্ত শাহীন আজ খিদের চোটে অস্থির। এখন সে এসব কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।

বাচ্চারা পড়তে বসে গিয়েছিল, ওদের কে ডাক
দিয়ে নাস্তা খেতে বলি। আমার শাশুড়ি কে বলতেই “খাবো না” বললেন। আমিও আর জোরাজুরি করিনি। বন্যা মাটনকষার হাড় খেতে ভালবাসে। খুঁজে খুঁজে ৪/৫ টুকরো দিলাম। রাফি বলছে,”নানুকে শুধু এই রান্নার জন্য বড় বড় হোটেল,শেফ হিসেবে নিতে চাইতো”। রাহি হেসে বলে,”এদের হাত সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়া উচিত”। আমি বলি,”সোনা দিয়ে হাত বাঁধিয়ে দিলে, রাঁধবে কিভাবে আর খাবি কিভাবে”? সবাই
হা হা করে হাসছে।

শাহীন একটা প্লেট বাড়িয়ে দিয়ে শাশুড়ি কে বলে,
“মা সবাই খাচ্ছি, শুধু তুমি ই খাচ্ছো না। প্লিজ,
একটু খেয়ে দেখো”। দেখি মুখটা আঁধার করে, উনি যেন খুব অনিচ্ছায় খেতে বসেছেন। ফাজিল রাফি আবার কি বলতে যাচ্ছিল, চোখের ইশারায় থামাই। বয়স্ক মানুষ,খাচ্ছেন খেয়ে নিন। আরো কয়েকটা চালের রুটি তাওয়ায় ছিল, ওগুলো এনে দিলাম। আমার বাচ্চারা মাশাআল্লাহ ফুডি। চালের রুটি দিয়ে খেতে খেতে এখন নুনের পিঠা দিয়ে মাটন কষা খাচ্ছে। বললাম,কে কে চা খেতে চাও”? এখন দেখি সবাই খাবে বলছে।

কিচেনে সব বাসন চারদিকে ছড়ানো। চুলায় চা
এর পানি ফুটতে দিয়ে বললাম,”আসার সাথে সাথে ই তোমরা আমাকে কাজে লাগিয়ে দিলে। নতুন শাড়িটা পর্যন্ত বদলাইনি। আমার বাবা আজ অসুস্থ শরীর নিয়ে, আমার জন্য শাড়িটা কিনে এনেছেন”। রাফির মুখ আর আটকানো সম্ভব নয়,
“তাহলে বাবা মোটকথা কি দেখা গেল, মায়ের ১০
ঘন্টা অনুপস্থিতিতে, বাসায় চরম অনিয়ম, খাওয়া দাওয়ার সমস্যা, সবকিছু গুবলেট হয়ে যাওয়া….
তাই তো? তাহলে,আজ থেকে মাকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করো”। শাহীন কোন কিছু না বলে মৃদু হেসে বেসিনে হাত ধুতে গেল ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”যদি মনে করো শাড়িতে মশলার গন্ধ করছে, কালকে আমার সাথে দিও। আমি না হয়
লন্ড্রীতে ড্রাই ওয়াশ করাতে দিয়ে দিবো”। তাকিয়ে দেখি আমার শাশুড়ি কে,কেউ যেন এই মুহূর্তে জোর করে করলার রস পান করিয়েছে। ৩ বিচ্ছু
বাচ্চা আমার, সেজন্য নিঃশব্দে হাসাহাসি করছে।

সবার কাপ নিয়ে কিচেনে ঢুকলাম। আমার শাশুড়ির চা চিনি ছাড়া,তাই উনার টা ঢেলে, বাকি
সবার চায়ের জন্য দুধ চিনি মেশালাম। চায়ের পানি বেশিই বসিয়েছি, বুয়া ও ড্রাইভার কে দিতে হবে বলে। তাছাড়া, আমি নিশ্চিত শাহীন দুই কাপের বায়না করবে। চা ঢালছি আর শাহীন যে বললো, শাড়ি ড্রাইওয়াশে দিবে…. সেটা ভেবে হাসছি। পুরুষেরা যদি বুঝতো, ওদের কতো কম
এফোর্টে আমরা ভালবাসার সমুদ্রে গড়াগড়ি খাই !!! তাহলে, তো পৃথিবীটা ই বদলে যেতো মনে হয়।

সবাই চা নিচ্ছে, এরমধ্যে কলিং বেল বাজল। বন্যা খুলে দিলে,বুয়া ঢুকলো। আমার শাশুড়ি হাত
ধোয়া বন্ধ রেখে বলছেন,”তুই আবার এইরাত্রে এসেছিস কেন”? আমি জবাব দিলাম,”আমি ওকে
আসার সময় ফোন দিয়েছিলাম মা”। তারপর, উনার সাথে কথা না বাড়িয়ে বলি,”এই তোমাদের জন্য দুইটা বাসন আনো তো”। দুইটাতে ই চালের
রুটি ও মাটন কষা দিয়ে বলি,”ড্রাইভার কে একপ্লেট দিয়ে আসো, এসে তুমি একপ্লেট নিয়ে খাও। চাও দুই কাপ বানানো আছে, দুজনে খেয়ে নাও”। খেয়ে ঝটপট বাসনগুলো ধুয়ে, সিঙ্ক চুলা
পরিস্কার করে নাও। আমি গোসল করে আসছি”।

বুয়া ড্রাইভার কে ডাকতে যেতেই, শাহীন আরেক কাপ চা চাইতেই বলি,”আমি জানতাম তুমি আরেক কাপ চাইবে। তাই, বানিয়ে রেখেছি”। এনে দিতেই আমার শাশুড়ি দেখি গজগজ করছেন,
“ওকে যে এখন আসতে বললে বৌমা, এরজন্য কি আলাদা টাকা পয়সা দিতে হবে “? আমি বুঝতে পারছি উনি এখন শাহীন কে উস্কাতে চেষ্টা করবেন। তাই সরাসরি বললাম,”অবশ্যই দিতে হবে। এটা তো ওর অতিরিক্ত কাজ, না দিলে করবে কেন”? এবার মনে হয় মেজাজ বশে রাখা,
তার পক্ষে আর সম্ভব হলো না। চেঁচিয়ে বলছেন,
“তুমি কি শুরু করেছো এসব? চারটা মাছ কুটতে ওকে ডাকো, চারটা বাসন জমলে ওর ডাক পড়ে।
কাজের মেয়েদের মোবাইল হয়েছে আরেক ঢং,
শিক্ষিত হয়েছেন উনারা। সপ্তাহে ৫ টা দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, আমার ছেলেটা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে পয়সা আনছে,আর তুমি শুধু উড়াচ্ছো। আমাকেও জিজ্ঞেস করো না, কেন
ধরাকে সরা জ্ঞান করছো না কি”?

চিৎকার শুনে বাচ্চারা চলে এসেছে। আমি সবাই
কে শুনিয়ে বলি,”শুনেন মা কিচেনে গিয়ে দয়া করে দেখুন প্লিজ, সারা দিনের সব বাসন কোসন জমানো। আমারো এখন আস্তে আস্তে বয়স বাড়ছে। আমি এখন এতো বাসন ধুতে পারবোনা। আপনার ছেলের অনেক টাকা এই ১৮ বছরে সেইভ করে দিয়েছি। আমি সাশ্রয়ী নই…. এটা আমার শত্রুও বলতে পারবে না। তারপরও এতো
কমপ্লেইন আমার বিরুদ্ধে আপনাদের, আমার সত্যি আর কিছু করার নেই”।

এ পর্যায়ে আজ পর্যন্ত এখানে কখনো যা করে না
রাহি, এবার তাই করলো। শান্ত কিন্তু স্পষ্ট স্বরে বললো,”বাসন তো জমবেই মামস, আমরা ৩ জন
ঠিক করেছিলাম,যে যেটাতে খাবো সাথে সাথে ই ধুয়ে নিবো। আর নানুর টা মামা ধুয়ে নিবে। সবাই
মানছে, শুধু নানু মানে নাই। নানুর এক কথা, কিচ্ছু ধুতে হবে না, জমিয়ে রেখে দাও। এজন্যই তো, কিচেনে বাসনের পাহাড় জমেছে”। মানুষের
ভালো মানুষির মুখোশ তখন টান দিয়ে, মুখের উপর খুলে ফেলা হয়, তখন মানুষ কি করবে ভেবে পায় না।

আমার শাশুড়ির হয়েছে সেই দশা, হতবুদ্ধি হয়ে রাহি কে ধুম বকা দিচ্ছেন,”বেয়াদব কোথাকার !!! আমি বৌকে বকা দিচ্ছি, তুই এতে নাকি গলানোর কে রে? মামসের বেশি আহ্লাদি হয়ে গেছো না? কথায় আছে,”অতি বাড় বেড়ো না কো,ঝরে পড়ে যাবে” তোমার দিন দিন দেখছি সেই দশা ই
হয়েছে। এমনি এমনি কি আর,সৎমা দেখতে পারে
না। নিজের মা টাকেও খেলে, এখন এ সংসারে এসে, মামীর আহ্লাদি হয়েছো”। আমি বলি,”যা বলার আমাকে বলুন মা। এই বাচ্চাটা কে এসব বলছেন কেন? কি হলো শাহীন, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না এসব”?

শাহীন কিছু বলার আগেই, রাহি আরেকটু এগিয়ে
আমার শাশুড়ির পাশে এসে বলে,”ভুল বললে নানু, মাকে কেউ কখনো খায় না, খেতে পারে না।হায়াত যখন শেষ হয়ে যায়, তখন আল্লাহ সবাই
কে ই তূলে নিবেন। আর সৎমা দেখতে পারে না, কারণ এ পৃথিবীটা দুষ্টু নারী দিয়ে ভরা। কিছু কিছু
নারী কে আল্লাহ্ মামসের মতো বানিয়েছেন,যাতে
আমার মতো এতিম রা রাস্তায় রাস্তায় পাগল হয়ে না ঘুরে। তুমি মানো আর নাই মানো,এটাই সত্যি কথা”।

আমার শাশুড়ি ও শাহীন হতবাক হয়ে বসে আছেন।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here