#গোজামিল
পর্ব-২
#tani_tass_ritt
রপশা চিৎকার দিবে তখনি সে সাহেরের আওয়াজ শুনতে পেলো।
“এই মেয়ে চুপ।কি একদম চেচাবে না। বাসার মানুষজন উঠে গেলে বুঝতেছো কি হবে? বিয়ে হওয়ার আগেই ভেঙে যাবে।”
রুপশা নিজেকে সাহের থেকে ছাড়িয়ে জলদি করে যেয়ে লাইট জ্বালালো।আর রুমের দরজায় ছিটকিনি দিলো।এখন কেউ দেখলে সর্বনাশ হিয়ে যাবে।দেখা যাবে এখনি ঘাড় ধরে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
রুপশা দরজা লাগিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো সাহের তার বিছানায় বেশ আরাম করে শুয়ে পরেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এটা তার ই বিছানা বরং রুপশাই জোড় করে তার রুমে ঢুকে পরেছে।
রুপশার মেজাজ প্রচন্ড বিগ্রে গেলো।
“এই ছেলে এখানে এভাবে শুয়ে আছো কেনো? আর এতো রাতে আমার রুমে কি করছো? আর তুমি আসলেই বা কি করে?”
“ওমা ভুলে গেছিস বুঝি! আগে যেভাবে আসতাম ঐ যে বারান্দার পাইপ বেয়ে। আর নিজের বউয়ের রুমে আসবোনা তো কোথায় আসবো শুনি?”
সাহেরের এমন আদিক্ষেতা মারকা কথা শুনে রুপশা এখন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
“এই ছেলে আমি তোমার বউ কবে হলাম? কি উলটাপালটা বলছো এগুলো? এখনি আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাও।”
সাহের এবার উঠে বসলো। রুপশাকে এক টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো। সাহেরের এমন কর্মকান্ডে রুপশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। রুপশা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত।কিন্তু লাভ হলো না।সাহেরের সাথে সে পেরে উঠবে না।
সাহের রুপশার চুলে মুখ গুজলো। সাথে সাথে রুপশার পুরো শরীর কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। কেনো যেনো তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা।মনে হচ্ছে এখানেই সময়টা থেমে যাক।
সাহেরও যেনো রুপশাতে ডুবে গিয়েছে। কতগুলা বছর সে অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য। সে জানেনা রুপশার মধ্যে এই পরিবর্তন কেনো এসেছে।কিন্ত সে হাল ছাড়বেনা। সে নিজের ভালোবাসা দিয়ে আবার রুপশাকে নিজের করেই ছাড়বে। ভাবতে ভাবতে সাহের আরো শক্ত করে রুপশাকে জড়িয়ে ধরলো।
এবার রুপশাও সাহেরের হাত চেপে ধরলো। তখনি রুপশার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের আওয়াজে দুজনই হুশে আসলো। রুপশা কোনো রকমে সাহেরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো। যেই ফোন রিসিভ করবে তখনি সাহের তার হাত থেকে কেড়ে ফোনটা নিয়ে নিলো। ফোনের স্ক্রিনে মাহাদি নাম টা ভেসে উঠেছে। সাহের ফোনটা কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিলো।
“মাহাদি কে?” সাহের জিজ্ঞেস করলো।
রুপশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু বলছে না। তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
রাগে সাহেরের হাত পা কাঁপছে। সে কিছুটা চিৎকার করে বললো,”তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না? আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি?”
“মাহাদি আমার বিয়ফ্রেন্ড।আমাদের এক বছরের রিলেশন।”
এক নিঃশেষে বলে ফেললো রুপশা।
সাহের নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে দু হাত দিয়ে রুপশাকে চেপে ধরে বললো,
” রিলেশন মানে? কিসের রিলেশন?”
রুপশা এবার সাহেরকে ধাক্কা মারলো।
“তুমি বাংলা কথা বুঝো না? আমি মাহাদিকে ভালোবাসি।মাহাদিও আমাকে ভালোবাসে।”
সাহের দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে এমন কথা শুনতে কার ই বা ভালো লাগে।সাহেরের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।সে মাটিতে হাটু গেড়ে বসে রুপশার দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
“তুই কি বলছিস এগুলো? আমার থেকে বেশি তোকে কেউ ভালোবাসতে পারে বল? আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসি। তুই আমার সাথে মজা করছিস তাইনা বল।এখনো অভিমান করে থাকবি? এই দেখ আমি তো এসেছি তোকে নিজের করে নিতে। নিজের বউ বানাতে।”
রুপশা হাত ছাড়িয়ে নিলো।তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
“তোমার সাথে আবার কিসের অভিমান। মানঅভিমানের কোনো সম্পর্ক আমার তোমার সাথে আছে বলে আমার মনে হয়না। আর কি বললে তোমার থেকে আমাকে বেশি ভালো কেউ বাসবেনা। বিশ্বাস করো আমার দরকার ও নেই এমন ভালোবাসার। তোমার জন্য আমার মনে যা ছিলো ঐটাকে তুমি নিজেই শেষ করেছো।এখন এসেছো নাটক করতে?”
সাহের এই রুপশাকে চিনতে পারছেনা।যে মেয়ে কোনোদিন তার মুখের উপর কথা বলেনি।সেই মেয়ে এখন এগুলো বলছে। সাহেরের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
রুপশা ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন অন করতে করতে বললো,”আশা করি তোমার বুঝতে বাকি নেই আর কিছু।তুমি এখন আমার রুম থেকে যেতে পারো।মাহাদি ফোন দিচ্ছে আমি ওর সাথে কথা বলবো।”
“আর একটা কথা বারান্দা দিয়ে যাওয়া লাগবে না।এসময় কেউ উঠবেনা। আমি চাবি দিচ্ছি তুমি মেইন গেইট দিয়ে চলে যাও। ” বলেই সাহের কে চাবি ধরিয়ে দিলো।
তারপর রুমের ছিটকিনি খুলে দিলো। সাহের কিছুনা বলে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।রুপশা দরজা টা আটকিয়ে সেখানেই বসে পরলো। অঝোরে কাঁদতে লাগলো। তার সাথেই এমনটা কেন হয়?কেন তার লাইফে এতো #গোজামিল। কেনো কোনোকিছু সে সহজভাবে পায়না।
রুপশার ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মাহাদি,
“কি ব্যাপার ম্যাডাম? কই আপনি? বিয়ে কি করেই ফেলেছেন নাকি?”
রুপশা কিছু বললো না।
“বাহবা এখন দেখি কথাও বলছেন না। তো আমার সাথে কি ব্রেকাপ করার চিন্তায় আছে নাকি? ভুলেও এটা মাথায় আইনেন না। একদম মেরে তক্তা বানায় দিবো।”।
মাহাদির এমন কথা রুপশা হেসে ফেললো।
” তুমি একটা কিউট।”
“তুমি আর তোমার কিউট। ফোনের কি হয়েছিলো তোমার।অফ ছিলো যে।”
“ও কিছুনা।চার্য ছিলোনা।তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।”
“আচ্ছা তাই বলো। আমি আরো ভাবলাম বিয়ে সাদি করে এখন সাহেরে সাথে আছো নাকি।”
রুপশা বিরক্ত হয়ে বললো,”কি বলো না বলো তুমি। তুমি কি চাও আমি চলে যাই.?”
“একদম ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবো। আচ্ছা শুনো কাল চলো দেখা করি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। কাল মেরুন কালারের পাঞ্জাবি টা পড়বে। আর আমি মেরুন শাড়ি।অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাইনা।”
রুপশার কথা শুনেই মাহাদির মন ভালো হয়ে গেলো।রুপশাকে শাড়িতে দেখতে তার অনেক ভালো লাগে।
“যো হুকুম ম্যাডাম।তাহলে এখন ঘুমিয়ে পরেন।”
“আচ্ছা গুড নাইট।”
“লাভ ইউ। ”
রুপশা মুচকি হাসলো।
ফোনটা রেখে রুপশা বেলকনিতে যেয়ে দাঁড়ালো। হাল্কা ঠান্ডা বাতাস বইছে।শীতের আগের এই বাতাস তার খুব ভালো লাগে।
“তার জীবনটা কেনো যেনো বড্ড #গোজামেলে। কখনো কোনো কিছু সহজভাবে হয়না। সে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে কিন্তু কখনো সঠিক সময়ে না। তা না হলে সাহের কেনোই বা এখন তার জীবিনে ফিরে এসেছে! কষ্ট তো কম হয়নি তার এখান থেকে বের হতে।সেই এক অসহ্য যন্ত্রনা।”
মনে করতেই চোখ বেয়ে পানি পরলো তার।
তখনি ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো তার। ম্যাসেজ টা দেখে তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।
চলবে…….