গোজামিল,পর্ব-৩

0
363

#গোজামিল
পর্ব-৩
#tani_tass_ritt

“তোমাকে আমি কাল ই বিয়ে করবো। বি রেডি।”

সাহেরের ম্যাসেজ পেয়ে রুপশা কিছুটা ভরকে গেলো। সাহেরকে সে খুব ভালো করে চিনে যখন সে কিছু ঠিক করে ঐটা করেই ছাড়ে। এই ব্যাপারে কাল ই তার মাহাদিকে জানাতে হবে।

সকাল ১০ টা বেজে ২০ মিনিট। মাহাদি ধান মনমনডি লেইকে পাইচারি করছে। বার বার হাতে থাকা ঘড়ি টার দিকে তাকাচ্ছে। সময় যেনো যাচ্ছেই নাই। কখন যে রুপশা আসবে আর সে রুপশাকে মন ভরে দেখবে। ভাবতে ভাবতেই তার রুপশা এসে হাজির। রুপশাকে দেখে যেনো সে চোখ মেলাতে পারছে না। কিভাবেই বা চোখ ফিরাবে মেরুন শাড়িতে রুপশাকে এক অপরূপ সুন্দরী লাগছে। খোলা চুল, হালকা মেকাপ এক কথায় অসাধারণ লাগছে।

মাহাদি রুপশাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।
“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ”
রুপশার কেন যেনো কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো। সে কোনোভাবে মাহাদি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
রুপশা চুল বাধতে বাধতে বললো, “চলো ওদিকটায় বসি।”
“যো হুকুম।”

তারা দুজন লেইক পাড়ে বসে আছে।মাহাদি রুপশাকে পলকহীন ভাবে দেখেই যাচ্ছে।যতই দেখে ততই যেনো মুগ্ধ হচ্ছে।মেয়েটার মধ্যে যে কি জাদু আছে! মাহাদি মনে হয় আবার নতুন করে রুপশার প্রেমে পড়ছে।
রুপশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,” সাহের কাল রাতে ম্যাসেজ দিয়েছিলো সে নাকি আজ ই আমাকে বিয়ে করবে।তোমার কথা শুনার পর থেকে পাগল হয়ে গিয়েছে।”

সাহেরের নাম শুনেই মাহাদির রাগ উঠে গেলো।সে নিজের রাগ কে সংযত করে বললো,” আচ্ছা তোমার পরিবার রাজি কিভাবে হলো আমাকে একটু বলবে? ”
“আমিও আসলে জানিনা কিভাবে কি হলো। তুমি তো জানোই সাহেরের বাবা আম্মুর কাজিন। কোনো একটা সময় তারা একজন আরেকজনকে পছন্দ করতো। কিন্তু পারিবারিক কিছু কারণে আম্মুর বাবার সাথে বিয়ে হয়।আর বাবা তখন সাহেরের আব্বুর ভালো বন্ধু ছিলেন।এই নিয়ে তাদের মধ্যে রেশারেশি লেগেই ছিলো। এখানে বাবা কিভবে রাজি হলো আমার আর সাহেরের বিয়েতে সেটাই তো বুঝতেছি না।”

মাহাদি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করলো,”আচ্ছা ধরো আমি এখন তোমার লাইফে না থাকতাম তুমি কি তাহলে সাহেরকে বিয়ে করতে? ”
রুপশা চুপ করে রইলো।কোনো উত্তর দিলোনা। মাহাদি নিজের উত্তরটা বুঝে নিলো। কেমন যেনো কষ্ট হচ্ছে তার। হয়তো প্রিয় মানুষকে হারাবার ভয়।

এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা হলো না তাদের। বিকেলের আগ দিয়ে রুপশাকে বাসায় পৌছে দিলো মাহাদি। রুপশা বাসায় ঢুকেই যেনো ৪৪০ ভোল্টের ঝাটকা খেলো।

রুপশার বাসা যেনো লাইটের লাইটে চমকাচ্ছে।তাকে দেখেই বেশ হুলস্থুল লেগে গেলো।রুপশার ছোট বোন নিম্মি একপ্রকার জোর করেই তাকে রুমে ঢুকালো।

“এই বোন এতো দেড়ি কেউ করে? সেই কখন থেকে তোর অপেক্ষায় আছি?”

রুপশা হাতে রাখা ব্যাগ টা ছুড়ে ফেললো বিছানায়। কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো,
“আরে বাবা হাত ছাড় তো।কি শুরু করলি হ্যা? আর বাসায় এতো কিসের আয়োজন হ্যা? মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি!”

নিম্মি ভেংচি কেটে বললো,”কথায় আছে না যার বিয়ে তার হুশ নেই। পাড়াপশির ঘুম নেই।তোর অবস্থা হয়েছে এমন।”

রুপশা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো নিম্মির দিকে।

“আরে বাবা তোর বিয়ে সাহের ভাইয়ার সাথে। সাহের ভাইয়া সকালে এসে বললো সে নাকি আজ ই বিয়ে করবে।আর তুই ও নাকি রাজি।তোকে সারপ্রাইজ দিতেই যত আয়োজন।”

নিম্মির কথা শুনে রুপশা যেনো আকাশ থেকে পড়লো।কি বলে এই মেয়ে। মাথা খারাপ নাকি!
“এই আমি আবার বিয়েতে কবে রাজি হলাম? কি বলিস না বলিস এগুলো? ”

“হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।যা ফ্রেশ হয়ে নে।একটু পর ই তোর হলুদ আর রাতে বিয়ে।”
বলেই নিম্মি রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

রুপশা কোনো উপায় না পেয়ে রিদিতাকে ফোন দিলো।রিদিতা তার বেস্ট ফ্রেন্ড।এই অব্দি কোনো কিছুই তার অজানা না।

“হ্যা বেস্টি বল কি খবর।”

“রাখ তোর খবর। আমার এইদিক দিয়ে ক্যালেংকারি হয়ে যাচ্ছে। বাসায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে সাথে।আজ রাতেই নাকি বিয়ে।”
রিদিতার বুক ধক করে উঠলো।সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, ” মাহাদি ভাইয়ার সাথে?”

“আরে না। মাহাদির সাথে হলে কি ক্যালেংকারি বলতাম নাকি।সাহেরের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।তুই তো সাহেরকে চিনিস। ও পাগল হয়ে গিয়েছে মাহাদির কথা জানার পর থেকে।”

রিদিতা কিছু একটা ভেবে রুপশাকে বললো,”তো করে ফেল বিয়ে।”

“কি বললি তুই?”

” দেখ বি লজিকাল রুপশা। তুই সাহের ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।আর তুই ও তাকে পছন্দ করিস।তুই কি বলতে পারবি যে তুই সাহের ভাইয়াকে পছন্দ করিস না?”

“কি যা তা বলছিস তুই? তোর মাথা কি ঠিক আছে? তুই মাহাদির কথা ভুলে যাচ্ছিস কেনো?”

রিদিতা কিছু বলতে যেয়েও চুপ করে রইলো।

“এখন কথা না বাড়িয়ে কিভাবে কি করবো সেটা বল। মাহাদিকেই বা কিভাবে কি বলবো? ওকে কল দিবো?”

“এই না না তোর মাহাদি ভাইয়াকে কোনো ফোন দিতে হবেনা। বেচারা পরে আরেক কাহিনি বাধিয়ে ফেলবে।আমি বলি কি।বিয়ে তো রাতে। তুই এখন চুপ থাক।বাসার সবাই যা করে তাই কর।হলুদ লাগা।আমি মাহাদি ভাইয়ার সাথে কথা বলছি।”

“তুই শিওর?”
“হ্যা বাবা। আমি মাহাদি ভাইয়াকে বলে তোর বিয়ে আটকানোর ব্যাবস্থা করছি।তুই একটু সবুর কর।”

রুপশা ফোনটা রেখে দিলো। তার কোনো কিছুই ভালো লাগছেনা। কি রেখে কি কিরবে বুঝে উঠতে পারছে না সে।আর সাহের ই বা এমন টা কেনো করছে।যখন আমি পাগলের মতো বলেছি তখন তো ঠিকই ফিরিয়ে দিয়েছে। তাহলে কেনো এতোদিন পর থেকে আমার গোছানো জীবনটাকে এমন #গোজামিল করে ফেলছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে রুপশার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি পড়লো।আর কত কাঁদতে তাকে হবে কে জানে।

এতোক্ষনে নিম্মি রুমে ঢুকে পড়েছে। এসেই রুপশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।

“এই কি করছিস ফোন দে আমায়।”

“উফ আপু এখন ফোন ফোন করোনা তো।তুমি এখোনো রেডি হওনি।দেখো সাহের ভাইয়ার বাসা থেকে তোমার জন্য কি সুন্দর হলুদ শাড়ি পাঠিয়েছে।এই শাড়িটা পড়ে তোমাকে হলুদিয়া পাখি লাগবে।”

নিম্মির কথায় রুপশা খেয়াল করলো নিম্মির হাতে খুব সুন্দর একটা হলুদ শাড়ি। কিন্তু এই শাড়ি টা এখন তার গায়ে কাটার মতো লাগবে।

নিম্মি রুপশাকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠালো।তারপর রুপশার ফোনটা অফ করে দিলো।
“আজকে থেকেই তোর নতুন জীবনের শুরু হবে।আমি তো জানি তুই সেই কবে থেকে সাহের ভাইয়াকে ভালোবাসিস। তোর কোনো কষ্ট থাকবেনা রে আপি।” ভাবতেই নিম্মির মন খুশিতে ভরে উঠলো।

বিকালে ৫ টা বেজে ৪৫ মিনিট।

রুপশা সোফায় বসে আছে। একে একে সবাই তাকে হলুদ লাগিয়ে যাচ্ছে।পাশে সাহের বসে আছে। কেমন করে যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। বাসার সবাই খুব খুশি।কিন্তু সে কোনোভাবেই খুশি হতে পারছেনা।রিদিতাকে একটা কল দিতে পারলে শান্তি পেতো। না জানি মাহাদির কি অবস্থা! নাহ আর ভাবতে পারছেনা সে।মাথা ঝিম ধরে আছে।

★★★★★
সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ২০ মিনিট।
মাহাদি বসে বসে ফোনে তার আর রুপশার আজকের দিনের ছবি দেখছিলো।কত সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে নিজের ই নজর লেগে যাবে। সে ভেবে পায়না কেনো তার মা রুপশাকে পছন্দ করেনা। কোনো কমতি তো নেই তার মধ্যে।
এইসব ভাবতে ভাবতে তার ফোনে কিছু ছবি আর ম্যাসেজ এলো। মাহাদি যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে দ্রুত বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

★★★★★★★

তিন বছর পর,
মাহাদি তড়িঘড়ি করে বাসায় যাচ্ছে।আজ তার একমাত্র মেয়ের জন্মদিন। আজকের দিনেই তার একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং ছিলো।তার বাচ্চা মেয়েটা শিওর গাল ফুলিয়ে বসে আছে। মাহাদি জলদি করে কেকশপে ঢুকলো।

“কেকটা হয়েছে?”
“জি স্যার। কিন্তু কেকের উপরের কি লিখবো যদি কাইন্ডলি একটু লিখে দিতেন। ”
মাহাদি কাগজ কলম হাতে নিয়ে লিখলো,” its Dipsha’s day.”

…….

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here