গোজামিল পর্ব-৪(শেষ)

0
326

#গোজামিল
পর্ব-৪(শেষ)
#tani_tass_ritt

মাহাদি কেক না নিয়ে গাড়িতে উঠলো। ডুব দিলো তার অতীতে। কেনোনা আজ এতোদিন পর আবার সে অতীতের মুখোমুখি হবে। সে এখনো ভেবে পায়না তার জীবনটা কি করে এতো #গোজামিলে ভরে গেলো।

★★★★★★
মাহাদি উড়াধুড়া গাড়ি চালাচ্ছে।কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মাহাদি রুপশাকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু নাহ রুপশার ফোন বন্ধ পাচ্ছে।যত দ্রুত সম্ভব তাকে রিদিতার সাথে দেখা করতেই হবে। প্রায় ৩০ মিনিট পর সে পৌছাল রুপশার বাসার সামনে। বাহিরে বেশ লাইটিং হয়েছে। মাহাদি গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো রিদিতা দাঁড়িয়ে আছে।বেশ সেজেগুজে আছে।দেখে মনে হচ্ছে তার ই বিয়ে।
রিদিতা মাহাদিকে দেখে দৌড়ে আসলো।

মাহাদি রিদিতাকে দেখেই বললো,”জলদি আমাকে উপড়ে নিয়ে যাও।রুপশার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।ও কিভাবে সাহের কে বিয়ে করতে পারে?নাহ ও আমাকে ঠকাতে পারে না।” বলেই মাহাদি যেতে নিলেই রিদিতা তাকে হাত ধরে থামিয়ে ফেললো।

“কি করছেন ভাইয়া? আপনি ওখানে গেলে এখন গন্ডোগোল হয়ে যাবে। আমি আপনাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু আপনি প্লিজ কোনো কাহিনি কইরেন না। আপনি তো চান রুপশা খুশি থাকুক। তাহলে আজ ওর খুশিতে কেনো বাধা দিচ্ছেন? আপনি জানেন না ৬ টা বছর ধরে ও সাহের ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করেছে। তাহলে আজ ওর ভালোবাসা ও পাচ্ছে আপনি কেন এতে বাধা দিবেন?”

মাহাদির ইচ্ছে হচ্ছে রিদিতাকে কষিয়ে এক থাপ্পর মারতে।
“তোমার মাথা খারাপ হয়েছে।কি যা তা বলছো হ্যা? রুপশা শুধু আমাকে ভালোবাসে।আর কাউকে না।”

রিদিতা হেসে বললো,”ভাইয়া সত্য শুনতে কারোই ভালোলাগনা। আপনার বিশ্বাস না হলে চলুন আমার সাথে। কিন্তু ভাইয়া আমার অনুরোধ প্লিজ কোনো সিন ক্রিয়েট করবেন না। দূর থেকে দেখবেন।রুপশা হয়তো আপনাকে সরাসরি বলতে পারবে না।তাই আমাকে দিয়েই বলাচ্ছে।

রিদিতার তার ব্যাগ থেকে একটা মাস্ক বের করে মাহাদিকে দিলো।মাহাদি ও তা পড়ে নিলো। রিদিতা মাহাদিকে নিয়ে রুপশার হলুদ অনুষ্ঠানে গেলো। সেখানে গিয়ে রুপশা আর সাহের কে দেখে যেনো মাহাদি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। দিব্বি বসে আছে সাহেরের হাত ধরে।সবাই ছবি তুলছে। কি সুন্দর লাগছে তার রুপশাকে। কিন্তু আফসোস সে ওখানে নেই আজ। মাহাদি আর এক মূহুর্ত ও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা। সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো। রিদিতাও তার পিছু পিছু চলে এলো।

মাহাদি গাড়িতে উঠতেই রিদিতা তার পিছু পিছু গাড়িতে উঠে পড়লো। মাহাদির গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। তার ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।রুপশা তাকে কি করে ঠকালো।কি করে তার ভালোবাসাকে অস্বীকার করলো। একবার মুখ ফুটে বলতো।সে নিজেই অনেক দূরে চলে যেতো।

★★★★★★★★
ড্রাইভারের ডাকে অতীতের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো মাহাদি। কখন বাসায় এসে পড়েছে খেয়াল ই করেনি।

কলিংবেইল দিলেই রিদিতা দৌড়ে আসলো দরজা খুলতে।তার সাথে দিপশাও এলো। আজকে তার এক বছরের জন্মদিন।বিশাল খুশি দিপশা। দিপশা টুপ করে মাহাদির কোলে উঠে পড়লো।প্রচন্ড বাপ পাগল হয়েছে মেয়েটা। মাহাদি দিপশাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো।

কেক কাটার জন্য সবাই প্রস্তুত। তখনি কলিংবেইল বেজে উঠলো। রিদিতার বুক টা ধক করে উঠলো। মাহাদি দরজা খুলতেই দেখতে পেলো রুপশা দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে সাদা রঙ এর একটা জামদানি। খোলা চুল। হাত ভর্তি কাচের সাদা রেশমি চুরি। আজও হয়তো মাহাদি চাইলেও রুপশা থেকে চোখ সরাতে পারছেনা। এই মেয়েটার মুখে এতো মায়া। তাহলে কেন সে এমন করলো মাহাদির সাথে।

রুপশা মিষ্টি হেসে বলল্প,”কি ব্যাপার ঘরে ঢুকতে বলবে না? নাকি বাহিরেই দাড় করিয়ে রাখবে?”

“হ্যা হ্যা প্লিজ আসো। এখনি কেক কাটবো।”

রুপশা ভেতরে ঢুকলো। আতে থাকা গিফট টা দিপশাকে দিলো।এতো বড় পুতুল দেখে দিপশার খুশি দেখে কে!
রুপশা নিজ থেকে যেয়েই রিদিতাকে জড়িয়ে ধরলো। রিদিতা হাসার চেষ্টা করেও লাভ হলো না।

কেক কাটা শেষ হলো।সবাই খেতে বসেছে। এর মাঝে রুপশার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছে। বাসায় এতো মানুষ।সে একটা রুমের বলকনিতে চলে গেলো। কথা বলা শেষ হলে পিছে ফিরেই দেখলো রিদিতা দাঁড়িয়ে আছে।

রিদিতা রুপশাকে দেখে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রিদিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুপশা বলো,”আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেলি বুঝি! ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এতোদিন যখন বলিনি আজও বলবোনা। বলেই বা কি লাভ।বললে তো আর সব আগের মতো হয়ে যাবেনা। জানিস আজও আমি চাইনে মাহাদির সামনে আসতে। কিন্তু কি করবো বল তোদের মেয়েকে দেখার যে বড্ড ইচ্ছে ছিলো। তাই যখন মাহাদি বললো আর না করতে পারলাম না। ” এতটুকু বলেই থেমে গেলো রুপশা।
দুজনেই চুপ কারো মুখে কোনো কথা নেই।রুপশা আবারো বলতে শুরু করলো,” তুই কি অনেক ভালো আছিস? আমার ভালোবাসাকে নিজের করে নিয়ে খুব সুখে আছিস? সেদিন এতোবড় গেইম টা খেললেই পারতি রে। শুধুশুধুই আমার জীবনটা এমন #গোজামিল বানিয়ে দিলি।”

রিদিতা এবার রুপশাকে ধরে কেদে ফেললো।
“আমাকে মাফ করে দে বোন। আমি সেদিন মাহাদিকে পাওয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। মাহাদিকে আমি অনেক আগ থেকেই ভালোবাসতাম।কিন্তু মাহাদি তোকে ভালোবাসতো। তাই কোনোদিন বলার সাহস পাইনি। কিন্তু সেদিন যখন দেখলাম সাহের ভাইয়া আবার তোর জীবনে ব্যাক করতে চেয়েছে আমি ভেবেছিলাম এবার তুই মাহাদিকে ছেড়ে দিবি।কিন্তু না তুই মাহাদিকেই চুজ করলি।আমিও যে মাহাদিলে বড্ড ভালোবাসি।”

রুপশা হাসতে লাগলো।
“তাই মাহাদিকে ভুল বুঝিয়ে আমার হলুদের দিন ই ওকে বিয়ে করে নিলি।আর আমি বোকার মতো বিয়ের আসর থেকে পালালাম। তোকে ফোন দিলাম।মাহাদিকে ফোন দিলাম সবার ফোন বন্ধ। মাহাদির বাসায় গেলাম। সেখানেও তালা।
তারপর বাসায় ফেরার পথে একদল ছেলের কাছে রেইপড হলাম। দেখ কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার জীবনটা কেমন তছনছ হয়ে গেলো।”

রিদিতা কেঁদেই যাচ্ছে। রুপশার আর রিদিতার এই কান্না ভালো লাগছে না। সে সেখান থেকে বেড় হবে তখনি দেখলো মাহাদি দাঁড়িয়ে আছে।আবছা আলোয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মাহাদির চোখে পানি।হয়তো আজ সে সবটা জেনে গিয়েছে। মাহাদি কিছু বলবে তখনি রুপশা বললো,”ভুল একা রিদিতার ছিলোনা।তুমি কখনো আমাকে ভালোইবাসনি। তা না হলে এতোটুকু বিশ্বাস তুমি আমার উপর করতে। যাইহোক পুরোনো কথা তুলে লাভ নেই। দিপশাকে আমার আদর দিও।আর আমার পছন্দ করা নাম টা রাখার জন্য ধন্যবাদ। ”
রুপশা আর এক মূহুর্ত ও দেড়ি করলোনা। সেখান থেকে চলে গেলো।

মাহাদি বেলকনিতে যেতেই রিদিতা তাকে ধরে হাউমাউ করে কান্না করছে। মাহাদি পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সত্য কখনো জানতে নেই। কেনোনা তখন পুরো জীবনটাকেই #গোজামিল মনে হয়।

রুপশা বেড় হতেই দেখলো সাহের দাঁড়িয়ে আছে৷ সেদিনের ঘটনার প্রায় দুবছর কেটে গেলো।কিন্তু সাহের চেঞ্জ হয়নি।আজও সে রুপশাকে আগের মতোই ভালোবাসে। কিন্তু রুপশা চায় না সাহেরের সাথে নিজের এই গোজামিল জীবনকে জড়াতে।তার কাছে তো সাহেরকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। সবাই জানে তার অতীতের কথা।বড় বড় নিউজে এসেছে। সে কেনোই বা সাহেরের জীবন নষ্ট করবে।

সাহের রুপশাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না।আজও কত সুন্দর লাগছে রুপশাকে। সাহের রুপশার কাছে এসে দাড়ালো।

” আজকের তারিখ টা দেখেছো? আমাদের এই #গোজামিল মারকা ভালোবাসার ১০ বছর হলো।”
বলেই সাহের রুপশাকে একটা ছোট পান্ডা টেডি দিলো। রুপশা কিছু না বলেই পান্ডাটা নিয়ে নিলো।পান্ডা তার আজ ও খুব পছন্দের।
“চলো না আজ বিয়ে করি।আজকের দিনেই তো আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো।আজকের দিনে আমাদের বিয়ের যাত্রাটাও শুরু করি।”

রুপশা কপাল কুচকে বললো,”ভিমরতি ধরেছে নাকি তোমার? কি বলছো এগুলা? একদম আমাকে বলবে না এইসব।আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা।”

সাহেরের কিছু না বলেই রুপশার হাত ধরে হাটা শুরু করলো। রুপশাও হাটছে। হয়তো তার #গোজামিল জীবন টা আজ কোনো মিল খুঁজে পাবে। অথবা সে এক নতুন #গোজামিল জীবনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে।

সমাপ্তি।

(কেমন হয়েছে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here