#প্রেম_তুমি,পর্ব-১,০২
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-১
“দোস্ত, দর্শন তো দিন দিন আরো সুদর্শন হয়ে যাচ্ছে। ফর্মাল লুকে কত কিউট লাগছে।”
সকাল ৯ টা ২২ মিনিট। মেঘলা আকাশ। না রোদ না বৃষ্টি। ঝিরঝিরে মৃদু বাতাস বইছে। এমন পরিবেশে অর্ষা আর প্রিয়া কলেজের দুতলা বিল্ডিংয়ের বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। অর্ষা অপলক দৃষ্টিতে দর্শনকে দেখছিল। ও পুরো মগ্ন ছিল দর্শনকে দেখায়। দর্শন কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছিল। ওর দৃষ্টি আর কোথাও আঁটকে ছিল না। হঠাৎ প্রিয়ার কথায় ওর টনক নড়ল। ওর দৃষ্টি ছিটকে দর্শনের দিক থেকে সরে প্রিয়ার দিকে গেল। মুখের লাজুক আর মুগ্ধ আভা মুহূর্তেই ক্ষুব্ধ রুপ নিল। প্রিয়ার হাসি হাসি মুখটা হঠাৎই মিলিয়ে গেল।
আমতা আমতা করে বলল,
“এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আমি কী বলেছি?”
অর্ষা কিছু না বলে ওর এক বিনুনি ধরে টান মারল। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল প্রিয়া।
অর্ষা কটমটে চোখে ওর দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“বেষ্টু বেষ্টুর মতো থাকবি। বান্ধবীর প্রেমিককে দেখে ক্রাশ কেন খাবি? এখুনি ওয়াশরুমে যাবি, যত ক্রাশ খেয়েছিস বমি করে ফেলে দিবি। নয়তো তোর সাথে ব্রেকাপ। যা এখুনি যা।”
তারপর ওর বিনুনি ছেড়ে দিল। বিনুনি ছেড়ে আবার নিচের দিকে তাকাল কিন্তু দর্শন ওর নজরের বাইরে।
প্রিয়া হতাশ হয়ে বলল,
“তুই দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস। মাথা যাচ্ছে পুরো।”
অর্ষা চোখমুখ কুঁচকে বলল,
“মাথা কিন্তু সত্যিই যাচ্ছে। একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলব। তাড়াতাড়ি যা।”
“উফফ! তোর জ্বালায় বাঁচি না। দর্শন তোর বফ কোনদিন হবে না। এই যে গ্রিল ধরে যেভাবে ওকে দেখে যাস তেমন দেখেই যাবি আজীবন। একদিন দূর দূরান্তে হারিয়ে যাবে। আর তুই বসে বসে আঙুল কামড়াবি। বিনুনি টানার জন্য এই বিনুনিটাও থাকবে না।”
অর্ষা ওকে কিছু বলার আগেই প্রিয়া স্থান ত্যাগ করল। অর্ষা আর প্রিয়া বেষ্ট ফ্রেন্ড। অর্ষা বরাবরই এমন। একটু পাগলামি করে। বিভিন্ন অদ্ভুত বায়না করে। এই কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর ওর পাগলামি আরো বেড়ে গেছে। ওকে ছোট থেকে সহ্য করে যাচ্ছে প্রিয়া। অর্ষার মা নেই। ছোট বেলায় মারা গেছে। ও বাবার খুব আদরের মেয়ে। বড্ড জেদি। তাই যা ইচ্ছে তাই করে। অর্ষা যেদিন দর্শনকে প্রথম দেখেছে সেদিন থেকে ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখনো দূর থেকেই দেখে যাচ্ছে। কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। কেউ যদি দর্শনকে দেখে উলটা পালটা বলে তাহলে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
দর্শন দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞানের ছাত্র। ছোট থেকেই পড়াশোনায় বেশ সিরিয়াস। এই নম্র-ভদ্র ছেলেটা সবার নজর কাটতে সক্ষম হচ্ছে। ওর আচার-আচরণ, কথা বলার ধরণ সবাইকে মুগ্ধ করে। ও খুব হাসিখুশি তাই সবাই ওকে খুব পছন্দ করে। ওর ইচ্ছে ডাক্তারি পড়ার। আর সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাকে। ক্লাসের ফাঁকে কোলাহল এড়াতে লাইব্রেরীতে গিয়ে নিরিবিলি পড়াশোনা করে। আর প্রতিদিন সেখানে অর্ষা পড়ার বাহানায় উল্টো পাশের টেবিলের এক কোনায় বই নিয়ে বসে থাকে। দর্শনের সামনে এসে ওকে ইম্প্রেশ করার চেষ্টা কখনোই করেনি। দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে মনে মনে ভালোবাসে। ওকে দেখলেই ওর হার্টবিট বেড়ে যায়। মনে অদ্ভুত অনূভুতি কাজ করে।
অর্ষা চেয়ারে হেলান দিয়ে হাতে বাংলা প্রথম পত্র বই খুলে বসে আছে। ওর প্রিয় সাবজেক্ট বাংলা প্রথম পত্র কিন্তু এখানে ও সেই ভালোলাগার খাতিরে নয় ভালোবাসার খাতিরে এসে বসেছে। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে ভালোবাসার নিগুঢ় অনুভূতি অনুভব করছে। দর্শন চোখে চশমা পরা, সাদা শার্ট ইন করে কালো রঙের প্যান্ট কলেজের ফর্মাল পোশাক পরে ফিজিক্স বই খুলে পড়ছে। ওর চশমা পরা চোখ আর অন্য কোন দিকে অন্য কোন মোহে আঁটকে নেই। দর্শনের কুঁকড়া চুলের দিকে চেয়ে ইষত হাসি দিল অর্ষা। দর্শনের গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের। কলেজে ফরেনারদের মতো সাদা চামড়ার শতাধিক স্টাইলিশ ছেলে থাকতেও সহজ, সাধারণ দর্শনকে অর্ষার পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ মনে হয়। দর্শনের আশেপাশে অনেক মেয়ে ঘুরঘুর করে, প্রেম করার জন্য কিংবা বন্ধুত্ব করার জন্য। এর একাধিক কারণ থাকতে পারে তবে ওর থেকে নোট নেওয়া কিংবা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার কৌশল আয়ত্ত করার জন্য অনেকেই ওর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দর্শন মোটেও ভোলা-ভালা, বোকাসোকা ছেলে নয়। সব সময় এডিটিউট বজায় রেখে চলে। যার তার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় না। ক্লাসের টপারদের সাথে ওর ওঠাবসা। এর বাইরে কারো সাথে মিশে না।
একটা মেয়ে এসে দর্শনের পাশের চেয়ারে বসে। দর্শন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করলেও অর্ষা ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকায়। দৃষ্টি সজাগ রেখে কান খাড়া করে। যদিও কান খাড়া বিন্দুমাত্র লাভ হবে না। কেননা লাইব্রেরীতে কেউ উচ্চস্বরে কথা বলে না, তাছাড়া অর্ষা অনেকটা দূরে। অর্ষা মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটার কার্যকলাপ দেখে বুঝতে চায় সে কী চায়।
মেয়েটা মিষ্টি হেসে দর্শনকে বলল,
“হ্যালো।”
দর্শন সেদিকে না চেয়েই বলল,
“হায়!”
মেয়েটা পাত্তা না পেয়ে নড়ে-চড়ে বসে। মনে মনে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। তারপর মুখটা হাসি হাসি করে বলল,
“আমি একটু কথা বলতে চাই তোমার সাথে।”
দর্শন হাত ঘড়ির দিকে তাকাল। কিন্তু কোন জবাব দিল না।
মেয়েটা বলল,
“আমি সেকেন্ড ইয়ার, বিজ্ঞান বিভাগ। নাম আলিশা। আমি তোমাকে অনেকদিন ধরে চিনি। কথা বলতে ইচ্ছুক থাকা স্বত্তেও কথা বলিনি।”
মেয়েটা কেমন করে তাকাচ্ছে। দর্শন কথা বলতে ইচ্ছুক না বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটার উদ্দেশ্য ভালো ঠেকছে না। তখনই ঘন্টা বেজে ওঠে। দর্শন বই হাতে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। আলিশার দিকে চেয়ে বলল,
“ঘন্টা বেজে গেছে। আমি ক্লাসে যাচ্ছি।”
দর্শন চলে গেল, আলিশা হতাশ আর রাগী মুখে দাঁড়িয়ে রইল। ওর এক বান্ধবী এসে বলল,
“ওকে পটানো সহজ না। ছেড়ে দে। চল ক্লাসে যাই।”
ওরা ক্লাসে চলে গেল। অর্ষা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। রাগে আঙুল কামড়াচ্ছে
ওর চোখ ছলছল করছে। ডায়েরি খুলে এক পাতায় ঘটঘট করে লিখল, “আমার খুব কান্না পাচ্ছে। কোন মেয়ে তোমার আশেপাশে ঘেঁষলে
আমার খুব কষ্ট হয়, ভয় হয়, যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি? তাহলে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলব।”
অর্ষা মন খারাপ করে বসে আছে। প্রিয়া ওর কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করছে।
“দোস্ত, জীবন তেজপাতা। এক্সামের প্যারা আর ভালো লাগে না।”
অর্ষা দুই চামচ বিরক্তি মিশিয়ে বলল,
“তেজপাতাটা দিয়ে দে, কড়া করে রঙ চা বানিয়ে খেয়ে ফেলি, মাথা ধরেছে ভীষণ।”
প্রিয়া অবাক হয়ে বলল,
“হঠাৎ মাথা ধরলো কেন?”
“একটা মেয়ে!”
“ওহ! বুঝেছি। একটা মেয়ে দর্শনের সাথে কথা বলেছে?”
“হ্যাঁ, শয়তান মেয়ে। ওকে কিছু একটা না করে শান্তি পাব না।”
“অর্ষা, এখন বিরক্ত লাগছে। তুই নিজেও ওর পাশে ঘেঁষবি না আবার কাউকে ঘেঁষতেও দিবি না। এ কেমন কথা? তুই যা, ওর সাথে কথা বল। এভাবে আর চলতে পারে না। রাগ লাগে আমার। তোকে অনেক আশকারা দিয়েছি আর না।”
অর্ষা চুপ করে আছে। প্রিয়া রেগে যাচ্ছে। ওর কথাও ঠিক। এভাবে অনেক দিন নষ্ট হয়েছে। অর্ষার চোখ লাল হয়ে গেছে। প্রিয়া অর্ষার দিকে তাকাল। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। প্রিয়ার খারাপ লাগতে শুরু করল।
“অর্ষা!”
অর্ষা যেন এটুকুর অপেক্ষায় ছিল। অর্ষা কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে মুখ চেপে ধরল প্রিয়া কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেছে। হঠাৎ অর্ষা এমন ভাবে কেঁদে দিবে বুঝতে পারেনি।
“অর্ষা, কাঁদছিস কেন? কান্না থামা প্লিজ।”
অর্ষা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলছে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
“কী করব আমি? আমি এতটা ভীতু নই যে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারব না। কিন্তু আমার ভয় হয়। ও যদি আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করে, যদি ভাবে আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রেম নিবেদন করছি। আমি সহ্য করতে পারব না। ওকে আমি খুব ভালোবাসি। তুই তো জানিস।”
প্রিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিয়ে বলল,
“দেখিস ও তোকে একদিন খুব ভালোবাসবে। কান্না ধামা। তোর মতো কিউট মেয়েকে না ভালোবেসে কই যাবে?”
অর্ষার মন কিছুটা ভালো হয়েছে। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চুইংগাম চিবাতে চিবাতে হাঁটছে। সাথে প্রিয়া। অর্ষা হাত দিয়ে মুখ থেকে চাবানো চুইংগাম
বের করে ঘাড় আঁকাবাঁকা করে আস্তে করে সেটা আলিশার চুলে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। প্রিয়া দেখে চোখ বড়বড় করে ফেলল। কিন্তু ওকে আঁটকাতে পারল না। কেননা এতক্ষণে ওর চুলে চুইংগাম দেওয়া শেষ। সেটা দেখে মনে হচ্ছে প্রিয়ার চোখগুলো কোঠা থেকে বের হয়ে যাবে। প্রিয়া আতংকিত হয়ে অর্ষার হাত ধরে দ্রুত সরে এল।
অর্ষা তখনও নির্ভীক মনোভাব পোষণ করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন কিছুই হয়নি।
“অর্ষা, ভয়-ডর বলতে তোর ভেতর কিছু নেই? ও আমাদের সিনিয়র। একটু তো ভয় পা।”
“এই, তুই জানিস না ভয়-ডর কিচ্ছু নেই আমার। এতদিন আমার সাথে থাকার পরেও এই প্রশ্ন করলে তোর লজ্জা করে না? ও দর্শনের পেছনে লাইন মারছিল কেন? যে লাইন মারবে তার সাথে আমি এটাই করব।”
প্রিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ওকে বুঝিয়ে লাভ নেই।
***
অর্ষা ব্যাগ, পড়ার টেবিল, বুকসেল্ফ, আলমারি পুরো ঘর তোলপাড় করে ফেলছে। কোথাও ওর ডায়েরি খুঁজে পাচ্ছে না। ছলছলে চোখ, দুরুদুরু বুক আর বিষন্ন মুখে ডায়েরি খুঁজছে। ওর ডায়েরি হারানো গিয়েছে সেখানে দর্শনকে নিয়ে অনুভব করা প্রতিটি মুহূর্ত, অনুভূতি অক্ষরে প্রাণ ধারণ করেছিল। কাঁপা কাঁপা হাতে প্রিয়াকে কল করে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।
পরের দিন দর্শনের বেঞ্চের উপরে ওর বন্ধু রুশান একটা নীল মলাটের ডায়েরি রাখল। দর্শন ভ্রু কুঁচকে সেদিকে দেখে বলল,
“কার ডায়েরি? ”
রুশান মুচকি হেসে বলল,
“ভাই এটা ডায়েরি নয়, উপন্যাস। কেউ একজন তোকে নিয়ে ডায়েরিতে পুরো উপন্যাস লিখে ফেলেছে।”
তারপর রহস্যময় হাসি দিল।
দর্শন আলতো হেসে বলল,
“কীহ!”
“হ্যাঁ, লাইব্রেরীতে পেয়েছি। সারারাত ডায়েরি পড়েছি। মনে হচ্ছে ফার্স্ট ইয়ার। কত ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে তোর জন্য।”
তারপর ফিক করে আবারও হেসে দিল। তাচ্ছিল্য হাসিতে দর্শন কিছুটা বিরক্ত হলো। তারপর বলল,
“অনুমতি ছাড়া কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয়। জানিস না?”
“আরে রাখ তোর উচিত অনুচিত। সময় পেলে ডায়েরিটা পড়ে দেখিস।”
বলেই রুশান সেকেন্ড বেঞ্চে গিয়ে বসে। দর্শন কি মনে করে ডায়েরিটা ওর ব্যাগে রাখল।
রাতের বেলায় পড়ার জন্য ব্যাগ থেকে বই বের করার সময় ডায়েরিটা দর্শনের চোখে পড়ল। তারপর কী মনে করে হাতে নিল। কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কেউ ওর জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করেছে ডায়েরিতে ভেবেই আলতো হাসল। কারো পারমিশন ছাড়া তার জিনিসে হাত দিতে নেই। কিন্তু এই নিষিদ্ধ জিনিসটা ওকে খিঁচে নিয়ে যাচ্ছে। আসক্তি বাড়াচ্ছে৷ না চাইতেও কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়েরির প্রথম পাতাটা খুলল।
তাতে গোটাগোটা হাতের লেখা,
“তুমি আমাকে না ভালোবাসলে সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসবে না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। অনুরোধটা রাখবে কিন্তু। ওকে?”
না চাইতেও দর্শন ফিক করে হেসে ফেলে। নিজের চুলগুলো এলোমেলো করে। চোখগুলো নাড়াচাড়া করে মাথা নাড়াচ্ছে বারবার আর হাসছে। মেয়েটা কে জানতে ইচ্ছে করছে দেখতে ইচ্ছে করছে সে কতটা বাচ্চামি করে। কলেজে গিয়ে মেয়েটাকে খুঁজে বের করবে ভেবে নিল।
#চলবে
#প্রেম_তুমি
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২
সাদা রঙের ট্রের উপর চারটে কফি মগ সাজিয়ে ব্লাক কফি ঢালছে দর্শনের মা। কফির মগ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। পুরো পরিবার ব্লাক কফিতে আসক্ত। দর্শনের বাবা পত্রিকা খুলে ডাইনিং এর চেয়ারে বসে আছেন। তার গায়ে হাসপাতালের পোশাক। তিনি নাস্তা করে হাসপাতালে যাবেন। দর্শন ব্যাগ কাঁধে, হাতে চশমা নিয়ে রুম থেকে বের হলো। ওকে দেখে ওর মা দেয়ালের বড় ঘড়ির দিকে তাকাল। তিনি এখন দর্শনের রুমে কফি নিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই দর্শন রুম থেকে বের হলো। দর্শন টাইম টেবিল মেইনটেইন করে চলে। কলেজে যেতে দশ মিনিট লাগে। সাড়ে ন’টায় ক্লাস। দর্শন সময় দেখে ন’টায় ঘর থেকে বের হয়ে নাস্তা করে ন’টা দশ মিনিটে বের হবে। ঠিক দশ মিনিট পূর্বে কলেজে প্রবেশ করবে৷ অন্য ছাত্রছাত্রীদের মতো আগে গিয়ে আড্ডা গল্প করার অভ্যাস ওর নেই। আজ আটটা পঞ্চাশে বের হতে দেখে বেশ অবাক হয়।
ওর মা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“কিরে বাবা, আজ তাড়াতাড়ি বের হলি যে?”
দর্শন তাড়া দেখিয়ে বলল,
“মা, আমাকে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। ক্লাসের আগে কিছু টপিকের নোটস কালেক্ট করতে হবে। আমি আজ নাস্তা করব না। কফিটা দেও আর ড্রাইভারকে বলো গাড়ি রেডি করতে।”
দর্শনের বাবা পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে দর্শনের দিকে তাকাল। ছেলেকে অস্থির লাগছে। তাড়াহুড়োর মধ্যে আছে তাই হয়তো।
“তাই বলে নাস্তা করবে না? দুপুর দুইটা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারবে?”
দর্শন মৃদু হেসে বলল,
“বাবা, তোমার মতো বড় ডাক্তার হতে হলে পরিশ্রমের পাশাপাশি সেক্রিফাইজ করতেই হবে।”
দর্শনের বাবা ছেলের কথায় খুব খুশি হলেন। মৃদু হেসে সায় দিলেন। ছেলে ডাক্তার হওয়ার জন্য এতটা পরিশ্রম করছে ভেবেই পুলকিত হয়ে যান। গর্বও হয় ছেলের জন্য। তার বিশ্বাস ছেলে একদিন তাকে ছাড়িয়ে বড় ডাক্তার হবে, অনেক নাম করবে। দর্শন কফিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে বের হয়ে গেল।
অর্ষার মন খারাপ। আনমনে হাঁটছে লাইব্রেরীর দিকে। দুরন্ত স্বভাবের মেয়েটা কেমন শান্ত হয়ে গেছে। একা একাই হাঁটছে। গতকাল লাইব্রেরীতে এসে কত খুঁজেছে ডায়েরিটা। কিন্তু পায়নি। কেউ হয়তো নিয়ে গেছে। কিন্তু এই ডায়েরি নিয়ে কার কী লাভ হবে। লিখে রেখেছিল তো কিছু আবল তাবল অনুভূতি। ডায়েরিতে নিজের নামটাও লিখেনি। কিন্তু ভীষণ প্রিয় ছিল ডায়েরিটা। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। বন্ধুরা সবাই মিলে খুঁজেছে সেটা। সবাই জানে ডায়েরিতে গুরুত্বপূর্ণ নোট ছিল। শুধুমাত্র প্রিয়া জানে ডায়েরির গোপন বিষয়টা।
দর্শন বুক শেলফে কি যেন খুঁজছে মনোযোগ দিয়ে। পুরো লাইব্রেরী ফাঁকা। একদম জনমানবশূন্য। এত সকালে কোন বিদ্যাসাগর আসবে লাইব্রেরীতে। দর্শনের নেহাত প্রয়োজন তাই এসেছে। দর্শনের কপালে বিরক্তি আর ক্লান্তি কাজ করছে। ও খুঁজে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত বইটা। কি যে বিরক্ত লাগছে। হঠাৎ করে কারো পায়ের শব্দে দৃষ্টি পাল্টালো। চোখ গেল সামনের দিকে। একটা মেয়ে আসছে। হাঁটছে অগোছালো ভাবে। মনে হচ্ছে কোনো ঘোরে ঘোরতরভাবে হারিয়ে গেছে। দর্শন মেয়েটাকে ভালো করে দেখল। লম্বা, পাতলা, ফর্সা গায়ের রঙ মেয়েটার। পাতলা বলতে খুবই রোগা। পিঠ পর্যন্ত সিল্কি ছোট চুলগুলো ঝুঁটি করা। কলেজের ড্রেসের সাথে পায়ে কলেজের সাদা সু। হাতে একটা ঘড়ি। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে কিছু বই। চোখের ডার্ক সার্কেল বিমর্ষ চেহারাটাকে আরো বিমর্ষ করে তুলেছে। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না। হয়তো রাত জেগে পড়াশোনা করে। মেয়েটা নিজের দুনিয়ায় বিচরণ করছে। আশেপাশে কিছু খেয়াল নেই। মাঝেমধ্যে নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। মেয়েটা টেবিলের উপরে ব্যাগ রেখে ধপ করে বসে পড়ল। দু’হাতে কপাল চেপে ধরে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে রাখল। দর্শন বেশ অবাক হলো। লাইব্রেরিতে এসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। দর্শনের ইচ্ছে করছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে,
“এই মেয়ে, তোমার কী হয়েছে? মন খারাপ? পরীক্ষায় নাম্বার কম পেয়েছো? না-কি পড়া মাথায় ঢুকছে না?”
পরক্ষণেই ভাবল এ-সব কি ভাবছে। অচেনা একটা মেয়ের সাথে সেধে গিয়ে কথা বলবে? মেয়েটা নিশ্চিত ছ্যাচড়া ভাববে কিন্তু ও তো ছ্যাচড়া না। তাই সিদ্ধান্ত নিল ওকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না।
অর্ষা কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখ মেলল। মাথা নাড়ায় ধীরে ধীরে। তাতে ওর চুলের ঝুঁটি মৃদু দুলে ওঠে। হাত দিয়ে ঠোঁট আর নাকের উপর হালকা ঘামগুলো মুছে নিল। এক আঙুল দিয়ে গাল চুলকে বাম পাশে থেকে ডান পাশে তাকাল। ডান পাশে চেয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। একজোড়া মায়াবী চোখ ওর দিকে চেয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই চোখজোড়া দৃষ্টি সরিয়ে নিল। অর্ষা গভীর অনুভূতিতে তলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আবিষ্কার করল গভীর অনুভূতির কারণ। এই চোখজোড়া সেই মানুষটার যাকে প্রাণ দিয়ে চায় ও।
অর্ষাও দর্শনের সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর আবারও দর্শনের দিকে তাকায়। দর্শন শেলফ থেকে একটা বই সযত্নে বের করে নিচ্ছে। লাইব্রেরীতে আর কেউ নেই। অর্ষার বুক কাঁপছে। ওর বুকের সাথে ওর শরীরটাও কাঁপছে। এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না। দর্শন এতক্ষণ ধরে ওকে দেখে যাচ্ছিল ভেবেই মন নাড়া দিয়ে ওঠে। দর্শনের দিকে আবারও তাকাল। দর্শন বই নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। অর্ষা টেবিলের উপর থেকে কাঁধে ব্যাগ আর হাতে বই তুলে নিয়ে দ্রুত পা চালাল। দর্শনকে ওভারটেক করে নিজেই আগে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। দর্শন অবাক হয়ে দরজার দিকে চেয়ে রইল। মেয়েটা এভাবে হনহন করে বের হয়ে গেল কেন? তাও ওর আগে? মেয়েটা কি ভয় পেয়েছে? ওকে খারাপ বখাটে ছেলে ভেবেছে? কিন্তু ও তো কিছু করেনি, বলেও নি। শুধু ওর দিকে একবার চেয়েছিল আর কিছু না। ওর দিকে চাওয়ার একটা যৌক্তিক কারণ আছে। এসব ভাবতে ভাবতে দর্শন বাইরে বের হলো। মেয়েটা মাঠ দিয়েও দ্রুত হাঁটছে। ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস যে বিল্ডিংয়ে হয় সেখানে যাচ্ছে। নিশ্চিয় মেয়েটা ফার্স্ট ইয়ার। দর্শন এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালো না।
দর্শন ক্লাসে গেল। বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সাথে যোগ দিল। ওদের আড্ডা হয় পড়াশোনা নিয়েই। মাঝেমধ্যে শুধু টপিক চেঞ্জ হয়ে অন্যদিকে যায়। এগুলো ব্যাপার না। দর্শন ক্লাস শেষ করে ব্যাগ নিয়েই বের হয়ে গেল। ক্যাম্পাসে বসে ডায়েরিটা আবারও খুলে পাতাগুলো নেড়ে দেখছে।
“তুমি আমার বিচ্ছেদহীন ভালোবাসা।”
দর্শন ডায়েরিটা বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিল। তারপর সেটা ব্যাগে রেখে চারদিকে চোখ বুলাল। রুশানকে খুঁজছে। রুশান আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে। দর্শন ওর কাঁধে কয়েকবার টাপট মেরে চোখের ইশারায় ওর সাথে আসতে বলল।
“হ্যা, বল।”
দর্শন ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে মুখে সিরিয়াস ভাব এনে বলল,
“ডায়েরিটা ফেরত দেওতা উচিত। হেল্প মি।”
রুশান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল,
“সারারাত ডায়েরি পড়েও মেয়েটার প্রেমে পড়িস নি? আমি তো প্রেমে পড়ে ডুবে মরে যাচ্ছি। আহা! কেউ যদি আমাকে এভাবে ভালোবাসত আর সেই ডায়েরিটা আমার হাতে এসে পড়ত আমি জ্ঞান হারাতাম।”
দর্শন সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“ফাজলামি রাখ। কাজের কাজ কিছু কর। কেউ প্রেম নিবেদন করলে গা ভাসিয়ে দিতে হবে, জ্ঞান হারাতে হবে, মরে যেতে হবে এমন নয়।”
“যেদিন প্রেমে পড়বে সেদিন বুঝবি শা*লা।”
“দেখা যাবে। এখন কী করা যায় তাই বল। কারো পার্সোনাল ডায়েরি রাখতে ইচ্ছে করছে না। এটা মাথা খারাপের ওষুধ না হোক।”
“আমি দেখছি কী করা যায়।”
রুশান ভরসা দিয়ে চলে গেল।
পুরো লাইব্রেরীতে পিনপতন নীরবতা। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। কেউ কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে সেটা শুধু পাশের জনের কান পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম। তাই লাইব্রেরী পড়ার উপযোগীই আছে। সেকেন্ড ইয়ারের একটা মেয়ে লাইব্রেরীতে একটা ডায়েরি হাতে ঢুকল। তারপর স্থির দাঁড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে বলল,
“এটেনশন প্লিজ। ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখীত। কিন্তু সবার এটেনশন চাচ্ছি প্লিজ। গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলার ছিল।”
সবাই ওর দিকে এটেনশন দিল। মেয়েটা একটা ডায়েরি উঁচু করে বলল,
“ডায়েরিটা লাইব্রেরীতে পাওয়া গেছে কিন্তু ওর মালিককে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথাও তার নাম লেখা নেই। সম্ভবত ডায়েরিটা একটা মেয়ের হবে। এটা কার?”
লাইব্রেরী জুড়ে পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে গেল কিন্তু কেউ বলতে পারল না ডায়েরিটা কার। মেয়েটা হতাশ হয়ে বুক শেলফে ডায়েরিটা রেখে বলল,
“মালিককে পাওয়া গেলে ডায়েরির অবস্থান জানিয়ে দিও। ধন্যবাদ।”
মেয়েটি চলে গেল। মেয়েটা দর্শন আর রুশানের ক্লাসমেট। দর্শন কিংবা রুশান যদি যেত তাহলে ধরা পড়ার ভয়ে, লজ্জায় ডায়েরির মালিক সামনে আসত না সে সংশয়ে ওকে দিয়ে বলিয়েছে। যাতে মেয়েটা ভয় না পেয়ে ডায়েরি নিয়ে যায়। যেহেতু লাইব্রেরীটা কলেজ লেভেলের আর ওরা সেকেন্ড ইয়ার তাই সিনিয়র হিসেবে কিছুটা ক্ষমতার ব্যবহার করেছে।
দর্শন হতাশ হয়ে বন্ধুদের আড্ডায় বসে আছে। ভেবেছিল সেই অপরিচিতার দেখা মিলবে। দেখা মিলবে সেই মানবীর যে তাকে এতটা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। ডায়েরি নিতে কেউ আসেনি শুনেই মন খারাপ হয়ে গেছে। রাতুল দর্শনের মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করল,
“কিরে দোস্ত, কী হয়েছে? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি মুড অফ। রিজন কী?”
রুশান হাস্যরসের মাধ্যমে বলল,
“আরে, ওকে কেউ প্রেমপত্র দিয়েছে। কিন্তু কে দিয়েছে তাকে পাচ্ছে না। ব্যাক করার চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ আসছে না৷ মোটকথা সে আর পাত্তা দিচ্ছে না। বেচারা বন্ধু আমার মনে হয় প্রেমে পড়ে গেছে।”
বলেই রুশান হাসতে লাগল। রাতুল সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
“দর্শন বন্ধু আমার সত্যি নাকি? তুই প্রেমে পড়েছিস? কাউকে হন্য হয়ে খুঁজছিস?”
দর্শন ওদের মশকরা সহ্য করতে পারছে না৷ ধৈর্য হারিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
“সব সময় তোদের এই ফাজলামো পছন্দ হয় না। একজন আমাকে নিয়ে কিছু লিখেছে বলেই কী প্রেমে তলিয়ে গেছি? আমি জাস্ট তার জিনিস তাকে ব্যাক করতে চাইছি। আর প্রেমে তলিয়ে গেলে তোএ সমস্যা কী? আমি কি কারো প্রেমে পড়তে পারি না? আমি কি কখনো বলেছি আমি কখনো কারো প্রেমে পড়ব না? হ্যা, আমি পড়াশোনায় বেশ সিরিয়াস কারণ আমার স্বপ্ন, আমার পরিবারের স্বপ্ন আমার ডাক্তার হওয়ার। তাই পরিশ্রম করি। তার মানে এই নয় আমার পার্সোনাল লাইফ বলে কিছু থাকবে না।”
তামিম ওদের ধমক দিয়ে বলল,
“সব সময় দর্শনকে নিয়ে মজা কেন করিস? ও কী রোবট? প্রেম ভালোবাসা কী ওর জীবনে আসতে পারে না? ও কী কখনো বিয়ে করবে না? ওর জীবনে প্রেম আসবে না? সব হবে তবে ও সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছে। আর তোরা মজা করিস।”
রাতুল আর রুশানের মুখ কালো হয়ে গেল। রুশান বলল,
“এমন ক্ষেপে গেলি কেন? সব দেখি সিরিয়াসলি নিচ্ছিস। আমরা তো মজা করছিলাম যা আর কখনো মজা করব না।”
রুশান রাগ করে উঠে চলে গেল। দর্শন বসেই রইল। ওর মনটা অশান্ত তার উপর বন্ধুদের সাথে মনোমালিন্য ধূর, এখন ওর বিরক্ত লাগছে।
তুলি দৌড়ে এল। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
“অর্ষা, তোর ডায়েরি পাওয়া গেছে। একটা মেয়ে নাকি লাইব্রেরীতে এসে একটা ডায়েরি হাতে মালিককে খুঁজছিল। না পেয়ে সেটা লাইব্রেরীতে রেখে চলে গেছে।”
অর্ষা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। ওর চোখ মুখ ঝলমল করছে। খুশি যেন উপচে পড়ছে।
“প্রিয়ু পেয়ে গেছি আমার প্রাণ পাখিটাকে। এই তুলি যা না ডায়েরিটা নিয়ে আয়।”
প্রিয়া থামিয়ে দিয়ে বলল,
“থাক! আমি যাচ্ছি। আমি গিয়ে নিয়ে আসি। তুলিকে যেতে হবে না।”
প্রিয়া অর্ষার দিকে একবার চেয়ে ডায়েরি আনতে চলে গেল। প্রিয়া চায়না ডায়েরি নিয়ে নতুন করে ঝামেলা হোক। তুলি যদি ডায়েরির ভেতরের কোজ কথা পড়ে ফেলে তারপর অর্ষার সামনে এসে সব গরগর করে বলবে আর অর্ষা ক্ষেপে যাবে উল্টো পালটা একটা ঘটনা ঘটে যাবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই ও নিজে যাচ্ছে।
প্রিয়া ডায়েরি হাতে নির্দ্বিধায় লাইব্রেরী থেকে বের হচ্ছে। দর্শন পেছনে থেকে ওকে দেখল। একটা মেয়ের হাতে ডায়েরি দেখে ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। কৌতূহল হয়ে ওর পেছন নিল। অবশেষে পাওয়া গেল তাকে। যাকে খুঁজছে এতক্ষণ ধরে। পুরো দিন শেষে তাকে পাওয়া গেল। দর্শনের বুক ধুকপুক করছে। প্রিয়ার পিছু নিল প্রিয়ার অজান্তে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার যা দেখল তাতে বিস্ময়ে ওর চোখ কপালে। ডায়েরি নিয়ে অন্য একটা মেয়ের হাতে দিল। তার হাতে ডায়েরি দিতেই ওকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। দর্শন ওর চেহারা দেখার জন্য আকুপাকু করছে। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখল ওই মেয়েটাকে।
চলবে…..