প্রেম_তুমি,পর্ব-২২,২৩,২৪

0
221

#প্রেম_তুমি,পর্ব-২২,২৩,২৪
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২২

দর্শন এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে বন্ধুদের পাশ কাটিয়ে অর্ষাকে খুঁজতে চলে গেল। ওর বন্ধুরা ওকে দেখে ভীষণ অবাক হচ্ছে। এই দর্শনকে ওরা চিনেই না। দর্শন যেখানে কোন দিন কোন তর্কে জড়ায়নি সে আজ হাতাহাতি করছে। ওরা ভীষণ ভয়ে আছে। প্রিন্সিপাল পর্যন্ত ঘটনা চলে গেলে জল অনেক দূর গড়াবে। দর্শনের ইমেজ খারাপ হবে।
দর্শন, অর্ষাকে ওর ক্লাসের সামনে দেখতে পেল। ও প্রিয়ার সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। ওকে ভীষণ চিন্তিত লাগছে। মনে হচ্ছে কোন সমস্যায় আছে। অর্ষা ঠোঁট কামড়ে ধরে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। প্রিয়া যা বলছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। এ-সব দর্শন কেয়ার না করে ওর সামনে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করল,
“অর্ষা, তুমি জুবায়েরের সাথে ড্যান্স করছো?”

অর্ষা দর্শনের দিকে চেয়ে কিছুটা আঁতকে উঠে। ওকে দেখে অস্থির লাগছে। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। মুখটাও কেমন লাগছে।

অর্ষার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে দর্শন খুব রেগে গেল। শক্ত গলায় বলল,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। এন্সার মি।”

অর্ষা বুঝতে পারছে না কি উত্তর দেবে। কারণ ও নিজেও জানে না কি করবে। কিছুক্ষণ আগেই জেনেছে জুবায়েরের সাথে ড্যান্স করবে। মেমের সাথে কথা বলেও লাভ হয়নি। এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কি করবে। এখন দর্শনকে কি বলবে। দর্শন নিশ্চয়ই কোথাও থেকে জেনে এসেছে।

অর্ষা আমতা-আমতা করে বলল,
“কিছুক্ষণ আগেই জেনেছি ওর সাথে আমাকে পারফরম্যান্স করতে হবে।”

দর্শন উত্তর পাওয়ার সাথে সাথে বলল,
“করবে না। ওর সাথে তুমি কোন পারফরম্যান্স করবে না। তুমি জানো না ওকে? জেনেও কী করে এখনো বলিষ্ঠ কন্ঠে বলতে পারছো না যে ড্যান্স করবে না? আমতাআমতা করছো?”

“আমি মেমের সাথে কথা বলেছি কিন্তু তিনি জানালেন এখন কিছুই সম্ভব না। তাই ভাবছি কি করব।”

দর্শনের কপালের রগ ফুটে ওঠেছে।
“কী করবে মানে? ওর সাথে তুমি ড্যান্স করবে না। নাম কেটে দিয়ে আসবে।”

“নাম কেটে দিয়ে আসব মানে কী? জুবায়েরের সাথে তোমার কী সমস্যা? ড্যান্স করতে হলে একজন পার্টনার লাগবেই। তোমার ওকে পছন্দ না হলে তুমি আসো। তুমি পারফরম্যান্স করো আমার সাথে।”

এত কিছুর মাঝেও দর্শন ওর কথা শুনে শান্ত হয়ে গেল। দমে গেল কিঞ্চিৎ। বিরবির করে বলল,
“আমি নাচের ‘ন’ ও জানি না।”

কিন্তু হারলে তো চলবে না। তাই ওকে শুনিয়ে বলল,
“তুমি জানো না সামনে আমার পরীক্ষা? আমার এসব ফালতু কাজে সময় নেই।”

অর্ষা অটল থেকে বলল,
“পারলে তো? আমি যার সাথে ইচ্ছে নাচ করব। তুমি আসবে না এর মধ্যে। আমি তোমার কথা শুনতে বাধ্য নই।”

দর্শন আবারও রেগে গেল। একটু আগে জুবায়ের যা ইঙ্গিত দিয়েছে তাতে অর্ষাকে ওর হাতে কিছুতেই ছাড়া যাবে না।
দর্শন শুধু বলল,
“তাহলে শুনে রাখো তুমি যদি ওর সাথে পারফরম্যান্স করো তবে আমি তোমার সাথে ব্রেক আপ করব।”
দর্শন আর একটা কথাও বলল না। ঘুরে সোজা হাঁটা ধরল।

অর্ষা ওর কথা গায়ে মাখল না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে পেছনে থেকে চিৎকার করে বলল,
“ব্রেক আপ করবে? ঠিক আছে আমিও দেখে নিব। করো ব্রেক আপ।”

প্রিয়া ওর কথা শুনে অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে রইল। ডান বাহু চেপে ধরে বলল,
“পাগল হয়েছিস তুই? দর্শন ফাজলামো করছে না, ওকে সিরিয়াস লাগছে। মনে হচ্ছে কোথাও গণ্ডগোল পাকিয়ে এসেছে। ব্রেক আপ বুঝিস? যে ছেলের জন্য দিনরাত কেঁদে ভাসিয়েছিস আজ তার সাথে ব্রেক আপ শব্দটা এত সহজে জুড়ে দিচ্ছিস? আমার কথা শোন দর্শন যা বলে তাই কর।”

“দূর! লেকচার দিস না তো। দর্শন ভালোবাসার দাবিতে যা বলবে আমি তাই করব। ওর ভালোবাসার জন্য সব ছাড়তে পারি।”

প্রিয়া যে বহুরূপী অর্ষাকে দেখছে। ওর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
“তাহলে এ-সব কী ছিল?”

অর্ষা আলতো হাসল। তারপর বলল,
“ও যখন অধিকার দেখায় তখন আমার ভীষণ ভালো লাগে। আর ওকে জ্বালাতে তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে।”

প্রিয়ার মাথায় হাত।
“হায় আল্লাহ! তোকে বুঝতে পারি না।”

“তোর বুঝে কাজ নেই। শুধু এটুকু বুঝে রাখ গুরুত্ব পেতে ভালোবাসি, অবহেলা পেতে নয়। কারো লাইফে সেকেন্ড অপশন কখনোই হতে চাই না।”

……

“তোমার কাছ থেকে এমনটা একদমই আশা করিনি। তুমি কারো গায়ে হাত তুলেছো? হাও দিস পসিবল? এর পেছনে কী কারণ রয়েছে দর্শন?”
প্রিন্সিপাল স্যার দর্শনকে প্রশ্ন করল।

দর্শন একবার জুবায়েরের দিকে তাকাল। তারপর স্যারের দিকে চেয়ে বলল,
“স্যার, আপনি আমাকে ভালো করে চিনেন। আমি কখনো কোন কলহ-বিবাদ, মারামারিতে জড়াইনি। কিন্তু ও আমাকে বাধ্য করেছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।”

“কী এমন হয়েছে যে তুমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারোনি?”

দর্শন আমতাআমতা করছে। কী করে বলবে বুঝতে পারছে না। প্রিন্সিপাল ওর নীরবতা আর কাচুমাচু মুখ দেখে বিরক্ত হলো।
“চুপ করে আছো কেন দর্শন? জুবায়ের
তুমি বলো ঘটনা কী? ওকে কী বলেছো?”

“আমি এমন কিছুই বলিনি স্যার যাতে ও আমার গায়ে হাত তুলবে।”

দর্শন ওর অকপটে বলা মিথ্যা শুনে ভীষণ ক্ষেপে গেল। হিতাহিতবোধ হারিয়ে বলল,
“তুই কিছু বলিসনি? অর্ষাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলিসনি? বাজে ইঙ্গিত দিসনি?”
এ-সব বলার পরেই দর্শনের হুশ হলো। রাগের মাথায় অর্ষাকে এই ঘটনায় জড়িয়ে ফেলল। ওর নামটা এখানে না জড়ানোই উচিত ছিল।

জুবায়েরের মুখ থমথমে। প্রিন্সিপাল স্যার জিজ্ঞেস করলেন,
“অর্ষা কে?”

দর্শনের এখন আর চুপ থাকার উপায় নেই। তাই পরিচয় দিল অর্ষার।
“অন্বেষা হাসান।”

“ফার্স্ট ইয়ারের অর্ষা?”

“জি স্যার।”

“ওকে নিয়ে কী সমস্যা তোমাদের মধ্যে?”

দর্শন আর জুবায়ের দুজনেই চুপ। কেউ উত্তর দিচ্ছে না। কি উত্তর দিবে?

প্রিন্সিপাল স্যার ওদের চুপ দেখে জুবায়েরকে প্রশ্ন করল,
“ও সত্যি বলছে? অর্ষাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেছো?”

“জি না স্যার। আমি অর্ষাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলিনি।”

দর্শনের ইচ্ছে করছে ওর নাকে একটা ঘুষি মারতে। কিন্তু নিরুপায়। স্যারের সামনে একদমই সম্ভব না।
“স্যার, ও মিথ্যা বলছে। ও অর্ষাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে বিধায় ওর গায়ে হাত তুলেছি। নয়তো কেন তুলব?”

প্রিন্সিপাল স্যার পড়েছেন বিপাকে। কার কথা বিশ্বাস করবে। তবে দর্শন মিথ্যা বলার ছেলে নয় এটুকু বিশ্বাস ওনার আছে। অর্ষাকে নিয়ে ওর মনে একটা সফট কর্ণার আছে সেটা বুঝতেও বাকি নেই।
“জুবায়ের আর দর্শন তোমরা একে অপরের কাছ থেকে দূরে থাকবে। যদি পরবর্তীতে তোমাদের নামে কোন কমপ্লেইন আসে তবে ভালো হবে না। একবারের মতো ছেড়ে দিলাম পরের বার দেব না।”

জুবায়ের আর দর্শন একে অপরের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিল। তারপর জি স্যার বলে চলে গেল।

…….

দর্শন রাগ করে পুরো দিন অর্ষার সাথে কথা বলেনি। অর্ষাকে এত করে বলল তারপরও ওর কথার মূল্য দিল না। যে মেয়ে ওর জন্য পাগল ছিল। প্রপোজাল পেয়ে কেঁদে কেটে ভাসিয়েছে সে এখন ওর কথার বিন্দুমাত্র রেস্পেক্ট করে না। পেয়ে গেলে কি সত্যিই মূল্য হারায়? অর্ষার কাছে কি ওর কোন মূল্য নেই? অর্ষাকে জোর করে পড়ায়, না পড়লে রাগ করে এইজন্য কি অর্ষা ওর উপর বিরক্ত? সাত দিন পর টেস্ট পরীক্ষা শুরু কিছুই পড়তে পারছে না ওর জন্য। মনই বসছে না। এক মন এক সাথে কত দিকে বসতে পারে?
অর্ষা কল করল ওকে। দর্শন রিসিভ করল না। ওর কল দেখে নাক ফুলিয়ে বসে রইল। অর্ষা বারবার কল করছে। কিছুক্ষণ আগেই দর্শন আর জুবায়েরের ঘটনা জানতে পেরেছে। দর্শন এত সাংঘাতিক ঘটনা ঘটিয়েছে আর ও এতক্ষণে জানল?

বারবার কল করায় কল রিসিভ করল দর্শন।
“হ্যালো! কী দরকার?”

“তুমি না-কি জুবায়েরের সাথে আজ মারামারি করেছো?”

“হ্যাঁ করেছি। তো?”

অর্ষার কেন জানি আনন্দ লাগছে খুব। ওর বয়ফ্রেন্ড ওর জন্য একটা ছেলেকে মেরেছে। উফফ!
তবুও ভাব মেরে বলল,
“তো মানে কী? মারামারি কেন করছো?”

“আমি মারামারি কেন করছি তা জানার দরকার নাই। তুমি গিয়ে ওর সাথে নাচো।”

অর্ষা কঠিন গলায় বলল,
“কী বলছো এ-সব? এভাবে কেন বলছো?”

“কেন বলছি? তুই তো আমাকে দুই টাকার দাম দিস না। তুই জানিস ও আজকে তোকে নিয়ে কত আজেবাজে কথা বলেছে? কত বাজে ইঙ্গিত দিয়েছে? যা গিয়ে নাচ ওর সাথে। নাচতে গেলেই বুঝবি। ও একটা লোফার। ওর কোন ক্যারেক্টার আছে? আমার কথার দাম তো দিবি না। যা নাচ গিয়ে। বয়ফ্রেন্ড হিসেবে আগলে রাখতে চেয়েছি কিন্তু তুই তো আগলে আগলে থাকবি না।”

অর্ষা ওর কথা শুনে গোপনে ঢোক গিলে নিচু কন্ঠে বলল,
“রাগ করছো কেন? আমি তো ক্যান্সেল করে দিয়েছি। তোমাকে দাম দেই না কে বলল? আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না তারপর তোমার কথায় ক্যান্সেল করে এসেছি।”

“তাহলে তখন কেন বলছিলে তুমি নাচ করবে? ব্রেক আপের ব্যাপারটাও সহজ ভাবে নিলে।”

“আমি তোমাকে ইচ্ছে করে জ্বালাচ্ছিলাম।”

“এভাবে না জ্বালিয়ে কেরোসিন গায়ে ঢেলে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দে। এখুনি ভিডিও কল দে। আজ সারারাত তুই পড়বি। আমি কড়া নজরে রাখব তোকে। এটাই তোর শাস্তি।”

অর্ষা ঢোক গিলল ভয়ে। আধাঘন্টা পড়লেই হাঁপিয়ে যায় সেখানে সারারাত?
দর্শন ধমকে উঠে,
“কানে শুনিস না না-কি? ভিডিও কল দে। ফার্স্ট!”

রাত একটা। অর্ষা দর্শনের সাথে ভিডিও কলে থেকে পড়ছে। ভিডিও কলে থাকতে ভালো লাগল যদি মন ভরে দর্শনকে দেখতে পেত। আড়চোখে দর্শনের দিকে তাকালেই দর্শন দেয় ধমক। তাছাড়া পড়ায় ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। দর্শন ওর পড়া নিচ্ছে ফাঁকে ফাঁকে। কান্না পাচ্ছে খুব। কিন্তু সেটা করেও লাভ হবে না আজ দর্শন ক্ষেপেছে খুব। অর্ষার মন পড়ে আছে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, লাইকি আর টিকটকে। মনটা আকুপাকু করছে। অসহায় ফেস করে দর্শনের দিকে তাকালেও ওর মন গলছে না। কত নিষ্ঠুর প্রেমিক! একটু মজা করার এই শাস্তি?

চলবে……!

#প্রেম_তুমি
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২৩

অর্ষার মনের আকাশে মেঘ জমেছে। আকস্মিক যেকোনো মুহূর্তে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়বে। এর কারণ চারটা দিন দর্শনের সাথে দেখা হবে না। চার দিনের জন্য বাবার সাথে থাইল্যান্ড যাচ্ছে। দর্শনকে এখনো জানানো হয়নি। জানলে কি রিয়েকশন দেবে সেটাও জানা নেই। পাঁচদিন পরে ওর পরীক্ষা। পড়াশোনা নিয়ে বেশ ব্যস্ত আছে।
তবে জানাতে তো হবেই। না জানিয়ে তো যেতে পারবে না। আর বাড়িতেও ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। লাগেজ গোছাতে হবে।

“হেই!”
দর্শন ওর পাশে এসে বসল। অর্ষা ওর দিকে শুকনো মুখে তাকাল। দর্শন ওর শুকনো মুখ আর রেসপন্স না পেয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে ওর দিকে তাকাল।
“কিছু হয়েছে অর্ষা? মন খারাপ?”

অর্ষা ম্লান হাসল। তারপর দর্শনের ওই চিন্তিত চোখের দিকে তাকাল। কত যত্ন সে চোখে। অর্ষা দৃষ্টি নত করে বলল,
“মন খারাপ।”

দর্শন বিচলিত হয়ে বলল,
“কেন? কী হয়েছে?”

অর্ষা ওর দিকে না চেয়েই বলল,
“আগামীকাল বাবার সাথে থাইল্যান্ড যাচ্ছি। চারদিন কলেজে আসব না।”

দর্শন কিছুটা হতভম্ব হয়ে বসে রইল। চোখে মুখে বিস্ময় ফুটিয়ে বলল,
“কেন? হঠাৎ থাইল্যান্ড কেন?”

অর্ষা দর্শনের দিকে তাকাল। তারপর মলিন মুখে বলল,
“বাবা অফিসের কাজে যাচ্ছে। সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে। অফিসের কাজের জন্য তিনদিন আর একদিন আমাকে নিয়ে ঘুরবে।”

“আশ্চর্য! তোমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছে?”

“সব সময়ই আমাকে নিয়ে যায়। আমাকে রেখে কোথাও যায় না। আমি বাসায় একাই থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবা বলেছে এখন তো আমি বড় হয়েছি, একা বাসায় রেখে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া উপর তলার ছেলে আমাকে বিরক্ত করত এটা জানার পর তো অসম্ভব।”

“কোন রিলেটিভের বাসায় থাকবে।”

অর্ষা দর্শনের দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হাসল।
তারপর বলল,
“রিলেটিভ থাকলে তো? দাদা-দাদি মারা গেছেন, বড় চাচ্চু, মেঝ চাচ্চু কানাডা থাকেন। সো কোন রিলেটিভ নেই।”

দর্শন আশ্চর্য হলো। তারপর বলল,
“নানাবাড়ি?”
অর্ষা নিঃসংকোচে বলল,
“নেই। আমার নানাবাড়ি নেই। আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। আগে গিয়ে মেমের সাথে কথা বলে আসি। আমি প্রোগ্রামে থাকতে পারছি না সেটা জানাতে হবে।”

দর্শনের ভালো লাগছে না। কেমন অশান্তি লাগছে মনের ভেতর। অর্ষাকে চারদিন দেখবে না। ভাবতেই বুকের ভেতর দলা পাকিয়ে আসছে। অর্ষার দিকে তাকাল। ওর কি কষ্ট লাগছে না? বুকের ভেতর ব্যথা হচ্ছে না। অর্ষা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে যাওয়ার জন্য।
দর্শন আচমকা ওর হাত ধরে। অর্ষা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছিল, এখান থেকে পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর সম্ভব হবে না।
অর্ষা ছলছল চোখে ওর দিকে তাকাল। দর্শন চোখ নামিয়ে নিল। অর্ষার ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। চোখে জল ছলাৎ ছলাৎ করে উপচে পড়ছে।
দর্শন বিষন্ন স্বরে বলল,
“বোকা মেয়ে মন খারাপ করছো কেন? দেখতে দেখতে কেটে যাবে। তাছাড়া আমার পরীক্ষা। পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকব সময় পেরিয়ে যাবে। আর ভিডিও কলে তো কথা হবেই।”
অর্ষা মৃদু হাসল। দর্শন যে ওকে স্বান্তনা দিল সেটা তো অজানা নয়।

দর্শন ওকে গেট অবধি এগিয়ে দিয়ে নিজেও বাড়িতে চলে গেল। ওদের ক্লাস নেই। প্রোগ্রামের জন্য কিছু কিছু স্টুডেন্ট আসছে যাচ্ছে। অর্ষার জন্য দর্শন এসেছিল। এখন তো ও আর থাকছে না তাই কলেজে আসার কিংবা থাকার কোনো মানেই নেই। নিজেও বাসায় চলে গেল।

….
চারটা দুর্বিষহ দিন কেটেছে দর্শনের। অস্থিরতা, আক্ষেপ আর পাগলাটে দিন কেটেছে। চারটা দিন বারবার মনে হয়েছে বুকের ভেতরটা ফাঁকা। একদম ফাঁকা। চারদিকে সবাই থাকলেও কি যেন নেই নেই মনে হত। অর্ষা অনেক দূরে চলে গেছে। ধরা ছোয়ার বাইরে, চোখের আড়ালে। পড়তে বসলে মন বসত না। বারবার মনে হত একটা কল করা যাক। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা। অর্ষাও বিরক্তিকর দিন পার করছিল। সারাদিন হোটেল রুমে শুয়ে-বসে থাকা অথবা লনে, ক্যাফেতে বসে থাকা। এভাবে কথা বলতে বলতে পড়াটা আর হয়ে উঠত না।
আজ দুপুরে অর্ষা এসেছে। খবর পেয়ে বিকেল বেলায় ছুটে এসেছে দর্শন৷ তখন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সূর্যের মুখ সারাদিন দেখা যায়নি। এমনই মেঘাচ্ছন্ন দিনে দর্শন অর্ষার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। থেমে থেমে বাতাস বইছে। অর্ষা বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে কেবল শুয়েছে। মাথাটা ভীষণ ধরেছে। একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু দর্শনের কল পেয়ে লাফিয়ে উঠতে হয়। ওর আসার খবর শুনে দর্শন চলে এসেছে ওকে দেখার জন্য। এমন পাগলামি ভালোই লাগে। অর্ষা বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। নিচের দিকে তাকাল কিন্তু দর্শনকে দেখা যাচ্ছে না। বাইরে বাতাস বইছে, সাথে শহরের ধুলো। অর্ষা যতদূর চোখ যায় খুঁজল দর্শনকে। কিন্তু দেখা গেল না। অর্ষার ইচ্ছে করছে উড়াল দিয়ে নিচে নেমে যেতে কিন্তু সেটা যে সম্ভব না। উড়াল দিতে গেলে একদম উপরে যেতে হবে নিচে নয়। অর্ষা বারান্দা থেকে দৌড়ে রুমে গেল। আয়নায় নিজেকে দেখল। জামা চেঞ্জ করে, মুখে স্নো দিয়ে, চুলটা আঁচড়ে নিল ভালো করে। হাতে ওর দেওয়া ব্রেসলেটটা পরে নিল, পায়ে পায়েলটা তো আছেই। ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়ে নিজেকে কয়েক সেকেন্ড দেখে জুতা পরে দৌড়ে ঘর থেকে বের হলো। লিফট দিয়ে নিচে নেমে দর্শনকে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখল একটা বেঞ্চে। বাইরে বাতাসের তীব্র ঝাপটায় হয়তো দাঁড়ানো যাচ্ছিল না তাই ভেতরে এসে বসেছে। অর্ষা কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইল। অনুভূতিটা এমন যে কত বছর পরে দেখল। দর্শন তখনও ওকে দেখেনি। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ-ই লিফটের দিকে অর্ষাকে দেখে। ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে। ঘায়েল করা সে হাসি। বুকের মাঝে হৃদপিন্ড সেখানে অস্থির অস্থির করছে ঠিক সেখানে গিয়ে লাগে।
দর্শন বসা থেকে দাঁড়াল। অর্ষা দৌড়ে ওর সামনে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। শরীরের কাঁপন বেড়েই চলেছে। দর্শন ওকে দু’হাতে আগলে ধরে বলল,
“প্রচন্ড মিস করেছি তোমাকে। দেখো বুকের কম্পন তোমার ছোয়ায় বেড়ে চলেছে।”
অর্ষা হালকা লজ্জা পেল। ওর লজ্জার সাথে আকাশ থেকে ঝড়ে পড়ছে ভারী বর্ষণ। দর্শন ওকে বুক থেকে সরিয়ে আকাশ পানে চায়। তাল মিলিয়ে বড় বড় ফোঁটা ছন্দ সৃষ্টি করছে। দর্শন অর্ষার দিকে চেয়ে মুচকি হাসল। অর্ষা ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। কিছু বোঝার আগেই ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল গেটের বাইরে। অর্ষা বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে।

“দর্শন, কী করছো? ভিজে যাচ্ছি তো।”

বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
“আজ তোমার সাথে ভিজতে চাই।”

“পরশু তোমার পরীক্ষা, অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

দর্শন ওর কথা শুনছেই না। ওকে টেনে ওর বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে গেল। তারপর দু’জন হাতে হাত রেখে ভিজতে লাগল প্রেমের স্রোতে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে মৃদু বাতাস। হাতে হাত রেখে দুজন বাচ্চাদের মতো দৌড়াচ্ছে। রাস্তার দু’ধারে কয়েকজন ছাতা মাথায় হাঁটছে। কেউ কেউ আবার ভিজে একাকার। অনেকেই ওদের পাগলামি দেখছে। দুজন প্রেমিক যুগল বৃষ্টি বিলাশ করছে।

….

দর্শনের আজ প্রথম পরীক্ষা। গায়ে হালকা জ্বর। সেদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর মাঝরাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে ওর। পরের দিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে সারাদিন। মেডিসিন নিয়ে আগের চেয়ে সুস্থ হলেও হালকা জ্বর থেকে যায় গায়ে। সেই জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে আজ। মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। দুদিন ধরে কিছু মুখে তুলতে পারেনি। অর্ষা তাই ওকে বকাবকি করছে।
“কতবার বলেছিলাম তোমাকে? হ্যা? আমার কথা তো শুনবে না। এবার জ্বর নিয়ে বসে থাকো। বললাম ভেজার দরকার নেই তোমার পরীক্ষা আছে৷ এখন ভালো করে প্রিপারেশন নিতে পারছো? পরীক্ষা ভালো হবে?”

“আরেহ, তুমি তো বকেই যাচ্ছো। একটু শুভকামনা তো জানাবে?”

অর্ষা রেগেমেগে বলল,
“আর শুভকামনা! তোমার চেহারা দেখেছো?”

দর্শন ওর কথা শুনে কিঞ্চিৎ হাসল।
তারপর বলল,
“কেন চেহারা দেখে প্রেম পাচ্ছে না?”
তারপর ফিক করে হাসল। ওর হাসি দেখে অর্ষা আর রাগ করে থাকতে পারল না। ও নিজেও হেসে ফেলল। দর্শনকে কিছুক্ষণ দেখে বলল,
“ভালো করে পরীক্ষা দিও। পরীক্ষা শেষে দেখা করে যেও।”

দর্শন ওর গাল টেনে ধরে বলল,
“আচ্ছা। এখন আমি যাই?”

অর্ষা স্মিত হেসে বলল,
“আচ্ছা।”

দর্শন কিছুদূর গিয়ে আবারও ঘুরে অর্ষাকে দেখল। অর্ষা মিষ্টি হাসল।
সবটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলিশা দেখছিল। ওদের প্রেমালাপ ওর কাছে আদিখ্যেতা লাগছিল। মনে মনে রাগে ফুসফুস করছে।
“তোমাদের এই আদিখ্যেতা আমার আর সহ্য হচ্ছে না। খুব শীঘ্রই একটা ব্যবস্থা করব।”

চলবে……

#প্রেম_তুমি
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২৪

বিরস আর ফ্যাকাসে মুখে হল থেকে দর্শন বের হচ্ছে। গায়ে কলেজের ড্রেস। হাতে সাদা রঙের একটা ফাইল। ফাইলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। আজ সপ্তম পরীক্ষা পদার্থ বিজ্ঞান শেষ হলো। পরীক্ষা খুবই জঘন্য হয়েছে। এতটা জঘন্য পরীক্ষা পুরো ছাত্রজীবনে দেয়নি। যদি সবার পরীক্ষা খারাপ হত তাহলে মানা যেত বিষয়টা। প্রশ্নপত্র হার্ড হয়েছে ভেবে নিজেকে স্বান্তনা দিতে পারত কিন্তু এখন কি বলে নিজেকে স্বান্তনা দিবে। কি করে নিজেকে বুঝাবে বুঝে উঠতে পারছে না। খুব বিশ্রী ফিলিং হচ্ছে। এমন একটা সময়ে এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে শুধু টপ করতে হবে। কিন্তু সাতটা পরীক্ষায় তিনটা সাবজেক্ট খারাপ হয়েছে। সামনে এইচএসসি। ফুল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন সব পরীক্ষা ইজিলি দেওয়ার কথা। দর্শনের এইচএসসি পরীক্ষা চোখের সামনে ভাসছে। এমন যদি এইচএসসিতে হয় ভাবতেই পিলে চমকে উঠছে। নিজেকে ধাতস্থ করে মুখের এক্সপ্রেশন পাল্টিয়ে অর্ষার সাথে দেখা করতে গেল।

অর্ষা ওকে দেখা মাত্রই হাসোজ্জল মুখে জিজ্ঞেস করল,
“পরীক্ষা কেমন হয়েছে?”

দর্শনের বুকটা ধুক করে উঠল। মনে পড়ে গেল জঘন্য পরীক্ষার কথা। তবুও নিজেকে সামলে নিল। ফ্যাকাসে মুখটা যথাসম্ভব হাসি হাসি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মনে হচ্ছে ব্যর্থ হচ্ছে। অর্ষার মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল।
উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভালো হয়নি?”

দর্শন অর্ষার দিকে চেয়ে বলল,
“আমার পরীক্ষা আবার খারাপ হয়? আমি কে ভুলে গেছো?”

“না, তোমার মুখটা কেমন দেখাচ্ছে।”

দর্শন কপালের ঘাম মুছে আকাশের তেজস্বী সূর্যের দিকে চেয়ে বলল,
“কত গরম দেখেছো? তাই ক্লান্ত লাগছে। একটু পানি খাওয়া দরকার।”

অর্ষা ওর কথা শুনে ব্যাগ থেকে দ্রুত পানির বোতল বের করে ছিপি খোলে বোতল বাড়িয়ে দিল। দর্শন ঢকঢক করে পুরো বোতল সাবাড় করল। পানি খাওয়ার সময় ঠোঁট বেয়ে পানি পড়েছে। অর্ষা একটা টিসু বের করে দিল ব্যাগ থেকে। আলিশা বাসায় যাওয়ার জন্য ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের সামনে দিয়ে যেতেই ওদের দু’জনকে দেখল। আজকাল ওদের এক সাথে দেখলে গায়ে আগুন জ্বলে যায়। এখনো তেমন লাগছে। শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
দর্শন মুখ মুছে অর্ষার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল,
“ধন্যবাদ! তুমি থাকো, আমি যাই। আগামীকাল পরীক্ষা আছে। পড়তে হবে।”

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। দর্শন হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগল আজ গিয়ে খুব ভালো করে প্রিপারেশন নিতে হবে। আগামীকালের পরীক্ষা ফার্স্ট ক্লাস হওয়া চাই। ও নিজের বেস্টটা দিবে। আর কোন পরীক্ষা খারাপ হওয়া যাবে না। বাবা-মা কত আশা,স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে। তাদের নিরাশ করা যাবে না।

……

অর্ষা দর্শনের জন্য অপেক্ষা করছে। মাত্র তো আর কয়েকটা দিন তারপর দর্শন আর কলেজে আসবে না। আগের মতো দেখা হবে না। নতুন কোন ইন্সটিটিউটে জয়েন করবে। সেখানে কত বন্ধু হবে। দর্শন এখানে আর আসার সময় পাবে না। ওদের দেখা হবে কোন রেস্টুরেন্ট অথবা পার্কে। তখনই আলিশা ওর সামনে এল। আলিশাকে দেখে অর্ষা চমকে যাওয়ার পাশাপাশি ভ্রু কুঁচকে তাকাল। হঠাৎ কেন ওর কাছে এসেছে? আর কি বলতে এল?
অর্ষার ভাবনায় ছেদ ধরিয়ে বলল,
“তুমি কী জানো, তোমার জন্য দর্শনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে?”

অর্ষা নাক কুঁচকে বলল,
“তাতে তোমার কী? তোমার ভবিষ্যৎ তো ঠিক আছে। কোটিপতির মেয়ে। কোটিপতি বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে যাবে।”

“শাট আপ! সব বিষয় ফানি লাগে তোমার? তোমার মতো ফালতু একটা মেয়ের চক্করে পরে সব শেষ করছে।”

“আমার চক্করে? আমি কোন চক্কর চালাই না। ভালোবাসি। দুজন দুজনকে ভালোবাসি।”

“এটা ভালোবাসা? এসব তোমার নাটক। চক্কর চালাচ্ছো।”

“তাহলে তুমিও চক্কর চালাও। চক্কর চালিয়ে দর্শনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে দেও। অসভ্য মেয়ে। দর্শনের থেকে চোখই সরছে না তোমার।”

“না সরছে না। কারণ আমি ওর উপযুক্ত তুমি নও। তোমার কী যোগ্যতা আছে? রুপে-গুনে, অর্থ-বিত্ত, নাম-খ্যাতিতে আমার নখের যোগ্যও না তুমি।”

“তোমার তো বেশ যোগ্যতা আছে। রুপ বেয়ে বেয়ে পড়ছে। একদম ডানাকাটা পরী। তাহলে তোমার কপালে কেউ জুটছে না কেন? আমার বয়ফ্রেন্ডের পেছনে পড়ে আছো কেন?”

“কারণ ও আমার। ও শুধুই আমার। তোমার চোখের সামনে ওর হাত ধরে ঘুরব, ডেটে যাব, চুমু খাব, ফেসবুকে পিক আপলোড দেব। তখন চেয়ে চেয়ে শুধু দেখবি। দর্শনের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছিস, তোর জন্য ওর পড়াশোনায় ক্ষতি হয়েছে। তোর জন্য ওর পরীক্ষা বাজে হচ্ছে। তুই গার্লফ্রেন্ড হিসেবে অযোগ্য ও ব্যর্থ।”

অর্ষার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। দর্শনকে নিয়ে এসব বলছে? সহ্য হচ্ছে না ওর। হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ঠাটিয়ে দিল একটা চড়। আলিশা হতবাক হয়ে চেয়ে রইল। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে মারবে ভাবতেও পারেনি।
রাগে ফুসফুস করতে করতে বলল,
“তোর চোখ আমি গেলে দেব। নির্লজ্জ, বেহায়া। দর্শনকে চুমু খাবি? তোকে আমি বিষ খাওয়াব।”

আলিশা গালে হাত দিয়ে চারদিকে তাকাল। দু-এক জন চেয়ে আছে ওর দিকে। অপমানে, ক্ষোভে চোখ লাল হয়ে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হাও ডেয়ার ইউ? আমাকে থাপ্পড় মারলি? এর ফল কি হতে পারে জানিস?”

অর্ষা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“যা খুশি কর। তোকে আমি ভয় পাই?”

আলিশার গাল বেয়ে এক ফোঁটা উষ্ণ পানি পড়ল।
“এইবার পাবি। দেখ, আমি তোর কি হাল করি। তুই এসে আমার পায়ে পড়বি।”

….

আজ কেমিস্ট্রি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। আজও পরীক্ষা ভালো হয়নি। দর্শনের মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল। আটটা পরীক্ষার মধ্যে চারটাই খারাপ হলো। মুড অফ করে বারান্দায় বসে আছে। অর্ষার সাথে দেখা করতে যায়নি। কেন জানি মনে হচ্ছে এই প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধ্বংস হয়ে গেল। কিছুই ভালো লাগছে না। রুশান আর অর্পা ওর দিকে দৌড়ে আসছে। দর্শন ওদের দেখে কোন রিয়েক্ট করল না।
রুশান হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“দোস্ত, অর্ষা তো ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছে।”

এমনি পরীক্ষা ভালো হয়নি। এর মধ্যে অর্ষা আবার কি করল।
দর্শন বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
“কী করেছে ও?”

“আলিশাকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে। ও তো কেঁদে-কেটে বাবাকে কল দিয়েছে। সবাইকে বলছে অর্ষাকে কলেজ থেকে বিদায় না করে, ওর লাইফ হেল না করে ছাড়বে না। ওর পড়াশোনা নষ্ট করে দেবে।”
দর্শনের বেশ রাগ লাগছে। যাই হয়ে থাক না কেন, বয়সে বড় একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলে কী করে? এখন প্রিন্সিপাল ডাকবে, গার্জিয়ান আসবে, পানিশমেন্ট দেবে জঘন্য ব্যাপার স্যাপার। এখন যদি ওকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে? তাহলে ওর স্টাডি ক্যারিয়ার শেষ। দর্শন রেগেমেগে অর্ষার কাছে যাচ্ছে। এ মেয়ে আর কত জ্বালাবে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here