প্রেম_তুমি (দ্বিতীয় খণ্ড),পর্ব-২৯,৩০

0
425

#প্রেম_তুমি (দ্বিতীয় খণ্ড),পর্ব-২৯,৩০
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২৯

🥀🥀
সাত বছর পর।
ঝিরিঝিরি বাতাসে ঝড়ে পড়ছে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি গুচ্ছ। পাপড়িতে রাঙা পথ যেন লাল গালিচা। হাওয়ায় এক অদ্ভুত সুভাস ছড়ায়। রাস্তার দুপাশে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত পথযাত্রীদের।
প্রিয়া শপিং শেষে ঘর্মাক্ত শরীরে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শপিংমলের এসির হাওয়া ছেড়ে হঠাৎ বাইরে আসতেই শরীর ঘেমে গেছে। গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার কোথায় চলে গেছে জানা নেই। ওর মেজাজ তুঙ্গে। কল করার পর বারবার একটি কথাই বলছে এই তো মেম এসে পড়েছি। আর আসার নাম নেই। প্রিয়ার মেজাজ বিগড়ে আছে। ও আবারও শপিংমলের ভেতরে গেল। ব্যাগগুলো রেখে একটা বোকা কোলা কিনল। ছিপি খুলে মুখে দিতে গিয়ে থমকে গেল। টেবিলের উপরে বোতল রেখে কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে গেল।
“আপনি রুশান ভাইয়া না?”

বিল পে করারত এক ছেলে বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকাল। চোখের সানগ্লাস খুলে হা করে ওকে দেখতে লাগল। তারপর মৃদু হেসে বলল,
“তুমি প্রিয়া?”

প্রিয়া ওর প্রশ্নে কনফার্ম হলো। প্রিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,
“হ্যা, আমি প্রিয়া। কেমন আছেন? দিনকাল কেমন চলছে?”

রুশান ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে বলল,
“চলছে বিন্দাস।”

“আপনি তো সব সময় বিন্দাসই ছিলেন।”

রুশান আলতো হাসল। বিল মিটিয়ে ওরা সামনের দিকে এগিয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে প্রিয়া বলল,
“আজও মনে পড়ে সেই দিনগুলি। আহ! কত সুন্দর ছিল। আপনাদের গ্যাংটা পড়াশোনার পাশাপাশি হাসি-আনন্দে মেতে থাকত। কত মজা করতেন আপনারা। তারপর একেকজন একেক দিকে। অর্পা আপুর সাথে আমার মাঝেমধ্যে কথা হয়।”

“তাই? কেমন আছে ও? কি করে আজকাল?”

প্রিয়া উনার প্রশ্নে বেশ অবাক হলো। রুশানের দিকে তাকাল। ওর মুখে আগের মতোই হাসি তবে এই হাসির মধ্যে কিছু একটা আছে। প্রিয়া সামান্য থেমে বলল,
“আপনার সাথে যোগাযোগ নেই?”

রুশান আবারও হাসল। দূরে তাকাল। দু-হাত পকেটে গুজে স্বাভাবিক স্বরেই বলল,
“এইচএসসির পর সব বদলে গেছে। দর্শন ইউএসএ, তামিম আর রাতুল বুয়েটে আর আমি আমার স্বপ্নের ঢাকা ভার্সিটির কেমিস্ট্রি সাবজেক্ট বাট অর্পা দুর্ভাগ্যবশত মেডিকেল, পাবলিক ভার্সিটি কোথাও চান্স পেল না। অনেক ভাবে চেষ্টা করেও লাভ হলো না। ভেঙে পড়েছিল মেয়েটা। বাবামায়ের একমাত্র মেয়ে। তাদের স্বপ্ন ছিল তাদের মেয়ে ডাক্তারি পড়বে। কিন্তু ওর কোথাও চান্স হয়নি। প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়া ছাড়া উপায় নেই। অথবা এক বছর গ্যাপ দিতে হবে। ও গ্যাপ দিতে রাজি হলো। আর এরই মধ্যে ওর বাবা ঠিক করে ফেলল মেয়েকে বিদেশে ডাক্তারি পড়াবে। চলে গেল সিঙ্গাপুর। এক বছর ভালোই চলছিল। তারপর দুজনের মধ্যে বনাবনি হচ্ছিল না। এভাবে চলার চেয়ে ব্রেক আপ করাই ব্যাটার। এতে দু’জনেরই সম্মতি ছিল।”

প্রিয়া সব শুনে নীরব। অর্পার সাথে ওর কথা হয় প্রায়। শেষ মাসখানেক আগে কথা হয়েছে। কিন্তু এত বছরেও জানতে পারেনি এই সত্যিটা। প্রিয়ার অনেক খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে ভালোবাসা জিনিসটাই স্থানী নয়। নয়তো অর্ষা, ওর মতো মেয়ে যে কি-না দর্শনকে এত ভালোবাসত তাদের জুটিটা ভেঙে গেল। রুশান আর অর্পার জুটিটা সবার পছন্দের ছিল সেটাও না-কি নেই। প্রিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
রুশান পরিস্থিতি পাল্টাতে বলল,
“তুমি কী করছো আজকাল?”

প্রিয়া মৃদু হেসে বলল,
“আমি প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছি। স্যালারি ভালোই। ভালোই কাটছে দিনকাল। তবে বিয়ে নিয়ে প্রচুর প্যারা খাচ্ছি।”

“প্যারার কী আছে? বিয়ে করে নেও। বয়স তো কম হয়নি।”

“মাত্র চব্বিশ। যেভাবে বলছেন যেন চল্লিশ।”

“তুমি যেভাবে বলছো যেন নাবালিক। বাল্যবিবাহ দেওয়ার জন্য সবাই উঠেপড়ে লেগেছে।”

প্রিয়া হেসে দিল। রুশান সেই আগের মতোই আছে। হাস্যরসিক।
“মাত্র জব করছি। কিছুদিন যাক। লাইফটা এঞ্জয় করি। তারপর বিয়ে করে নেব। করতে তো হবেই তাই না?”

“হুম। অর্ষার কী খবর?”

প্রিয়া এতক্ষণ ধরে এই প্রশ্নের অপেক্ষাই করেছে। রুশান শেষ অব্দি তাহলে জিজ্ঞেস করল ওর কথা।
“জানি না। এইচএসসি শেষে একদিন একটা নাম্বার থেকে কল করেছিল। মাত্র চার মিনিট তেইশ সেকেন্ড কথা হয়েছে ওর সাথে। এর মধ্যে একটা প্রশ্ন করতে পারিনি। ও সুযোগ দেয়নি আমাকে। শুধু নিজেই বলে গেছে। ওর কন্ঠে হতাশা আর নিশ্বাসে দীর্ঘশ্বাস শুনেছিলাম সেদিন। বলেছিল জীবনটা শূন্য হয়ে গেছে। একদম শূন্য। পূর্ণতার খুঁজে দেশ ছাড়ছে। যদি কখনও পূর্ণ হতে পারে তবে ফিরবে। আমি যেন সব সময় ভালো থাকি। নিজের যত্ন নেই আর ঠিকমতো পড়াশোনা করি। বাবামায়ের সাথে বেয়াদবি না করি। একদিন এসে চমকে দেবে। এইটুকু বলেই কল কেটে দেয়। আমি ওই নাম্বারে অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু আর ওপেন পাইনি। এত বছর কেটে গেল চমকে আর দিল না। হয়তো পূর্ণতা পায়নি। শূন্যতা ওকে গ্রাস করে ফেলেছে। কিন্তু কীসের শূন্যতা জানা নেই।”

রুশান সব শুনে বলল,
“জানো তো একটা ব্যাপার ভাবি। অর্ষা চলে গিয়ে ভালোই করেছে। বিচ্ছেদ সব সময় যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠে না। মাঝেমধ্যে বিচ্ছেদ আমাদেরকে আমাদের জীবনের মানে বুঝিয়ে দেয়। এনে দেয় চূড়ান্ত সফলতা। অর্ষা যখন দর্শনের জীবনে ছিল দর্শন তখন ওর জীবন থেকে, লক্ষ্য থেকে ছুটে গিয়েছিল। অর্ষা যখন চলে গেল ওর জীবনের ছন্দ ফিরে এল। এখন ও ইউএসএ থাকে। ভালো মার্ক নিয়ে ডাক্তারি পাশ করেছে। স্বপ্ন ছুয়েছে, সফলতা অর্জন করেছে। কিছুদিন পরেই দেশে ফিরবে। ডাক্তারি করবে, ভালো নাম করবে।”

নিজের বান্ধবীর সম্পর্কে কটুকথা শুনে ভালো না লাগলেও কিছুই করার নেই। অর্ষা সবাইকে ধোঁকা দিয়েছে। সবাইকে হার্ট করেছে। দর্শন দেশে ফিরবে কিছুদিন পরে অর্পাও ফিরবে। হয়তো তখন আবারও অর্পা আর রুশান এক হবে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা ওদের আরেকটা সুযোগ দিবে। কিন্তু দর্শন আর অর্ষা? ভাবতেই প্রিয়ার বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

________

কুমিল্লা শহর থেকে গ্রামের দিকে একটা কালো গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়ায় পুরো শহর ঢাকা। কৃষ্ণচূড়ায় ছড়িয়ে আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। গ্রামের পথে সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রাজত্ব করছে। গাড়ির কাচ খুলে হাত বের করে দিল একটা মেয়ে। উম্মাদ হাওয়া ছুয়ে ছুয়ে দেখছে। বাতাসের তীব্রতায় তার চুলগুলো উড়ছে।
তার ঠোঁট নড়ছে,
“কৃষ্ণচূড়া আমার ভীষণ প্রিয় কারণ এই রঙে আমি তোমাকে খুঁজে পাই। এক গুচ্ছ কৃষ্ণচূড়ার রাঙিয়ে দিও আমার মন কথা দিচ্ছি ফিরিয়ে দেব না তোমায়।”
গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নামার উপায় নেই। ধান ক্ষেতের সামনে গিয়ে গাড়িটা থামল। কালো রঙের জামা পরে একটা মেয়ে গাড়ি থেকে নামল। সামনে বিস্তৃত ধানক্ষেত। ডানপাশে একটা পুকুর। পেছনের দিকে অনেকগুলো কাঁচাপাকা বাড়ি। অর্ষা ধানক্ষেতের আল ধরে হাঁটছে। ছুয়ে দেখছে শীষগুলো। এখানেও হাওয়ার উম্মাদনা চলছে। এলোমেলো করে দিচ্ছে চুলগুলো। অর্ষা ওড়না উড়িয়ে হাঁটছে। ওর ঠোঁটের কোনে তৃপ্তি। ছ’বছর পর আজ দেশে ফিরেছে। দেশে ফিরে প্রথমে নিজের গ্রাম দেখতে এসেছে। দাদা বাড়িতে যাবে। সেখানে এক পরিবার বসবাস করে। বাড়ি ফাঁকা না দেখে দেখভালের জন্য একটা পরিবারকে থাকতে দিয়েছে। দাদাবাড়ীর সামনের বড় পুকুর। পুকুর ঘেঁষে সরু রাস্তায় সুপারি গাছ। দেখার জন্য চোখদুটো অগ্রিব হয়ে আছে। দাদাবাড়ী থেকে আজই ঢাকায় ফিরবে।

অর্ষা কুমিল্লা থেকে ঢাকা ফিরেছে। ওর গাড়ি এখন ওর পুরনো কলেজের সামনে। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কত স্মৃতি এই কলেজ আর বৃষ্টিকে ঘিরে। কলেজ বলতে প্রাণ ছিল। সাদা ড্রেস পরে কতগুলো ছেলে দলবেঁধে বৃষ্টিতে হৈহৈ করছে। কতগুলো মেয়ে ছাতা নিয়েও বৃষ্টিতে ভিজছে। অর্ষার মনে পড়ল সেইসব দিনের কথা। দর্শনের সাথে বৃষ্টিতে ভেজা সেই দিন। অর্ষা চোখ বন্ধ করল। জানালার কাচ খুলে বাইরে হাত রাখল। বৃষ্টির ছোয়ায় চমকে উঠে। শরীরে কেমন একটা শিহরণ বয়ে যায়। অর্ষা হাত ভেতরে ঢুকিয়ে জানালা বন্ধ করে দিয়ে চুপ করে বসে রইল।

প্রিয়া কলিং বেলের শব্দে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে শকড। বাইরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভরাট মুখমণ্ডল। লম্বা পাতলা ফর্সা শরীর। খুব পরিচিত সে মুখখানা। প্রিয়া নিজেকে সামলাতে পারছে না। দরজা শক্ত করে ধরল। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বের হয়ে এল,
“অর্ষা!”

চলবে……

#প্রেম_তুমি(দ্বিতীয় খণ্ড)
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-৩০

অর্ষা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুপ করে সোফায় বসে রইল। প্রিয়া অবাক হয়ে ওকে দেখতে লাগল। কত স্ট্রং মেয়েটা। ওর জীবনে এতকিছু হয়ে গেছে অথচ কেউ জানে না। কাউকে জানায়নি। এতক্ষণ ধরে অর্ষা নিজের জীবনের ঘটনা বলছিল প্রিয়াকে। এক্সিডেন্টের পর ওর জীবনটা কিভাবে পালটে যায় তার নিখুঁত বর্ণনা দিচ্ছিল। সব শুনে প্রিয়া বাকরুদ্ধ। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অর্ষা স্বাভাবিকভাবে বসে আছে। প্রিয়া ওর চোখের দিকে তাকাল। “যখন মুখ দেখে কারো ভেতরে কি চলছে বুঝা না যায় তখন তার চোখের দিকে তাকাতে হয়। চোখ সবকিছু বলে দেয়। যদি তা বোঝার ক্ষমতা থাকে।”
অর্ষার ব্যথিত চোখ ভেতরের ব্যথা জানান দিচ্ছে। প্রিয়া ভালো করে অর্ষাকে দেখল। দেই লম্বা পাতলা শরীর , মেয়েটা মনে হচ্ছে আগের মতোই আছে। উহু, মুখশ্রী হালকা বদলেছে, ম্যাচুরিটি এসেছে মুখে। ছোট চুলগুলো বড় হয়েছে। তবে কালো কেশী কন্যা নয়। লালচে চুল। মেক আপ আর ড্রেস আপ সেন্স চেঞ্জ হয়েছে। পায়ে হাই হিল। পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।

“কিন্তু তোকে তো সবাই ভুল বুঝেছিল। এখনো হয়তো ভেবে বসে আছে।”

অর্ষা প্রিয়ার দিকে চেয়ে মৃদু হাসল।
“তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কারো ভাবনা আমাকে খুশি দেবে না। যদি দিত তবে কেয়ার করতাম। আমাকে ভালো রাখবে আমার চিন্তা-ভাবনা, আমার কাজ। আর আমি ভালো থাকতে চাই।”

“অর্পা আপুর সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয়। কিছুদিন আগে শপে রুশান ভাইয়ার সাথে দেখা হয়। জানিস উনি আগের মতোই আছে হাসোজ্জল সেই মুখ, সেই কথা বলার ভঙ্গি। তবে শুনে খারাপ লাগল যে অর্পা আপু আর রুশান ভাইয়ার ব্রেক আপ হয়ে গেছে।”

“কোন কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়।”

“তোর একা লাগে না?” প্রিয়া উত্তরের আশায় ওর দিকে অতি আগ্রহের সাথে চেয়ে রইল।

অর্ষা প্রিয়ার আগ্রহ বুঝতে পারল। মৃদু হেসে উত্তর দিল,
“উহু, যখন তুই একাকীত্বকে উপভোগ্য করে তুলতে পারবি, নিজের আয়ত্তে আনতে পারবি তখন তোর কাছে একাকীত্বের চেয়ে মধুর আর কিছুই লাগবে না।”

প্রিয়া অবাক হয়ে ওকে দেখছে। এই মেয়েটা ছোটখাটো ব্যাপারে কেঁদেকেটে ভাসাত সে এখন কত শক্তপোক্ত কথা বলে। কতটা বদলে গেছে। ওর সাথে প্রাণখুলে কথা বলতে পারছে না প্রিয়া। কেমন সংকোচ লাগছে। মনে হচ্ছে এ যেন অন্য কেউ।
“দর্শন ভাইয়াকে মনে পড়ে না?”

অর্ষা একটু থমকে গেল। প্রিয়ার চোখের দিকে তাকাল। তারপর বলল,
“এই সাত বছরে কতকিছু হয়েছে সব কি মনে রেখেছি? কতজন লাইফে এসেছে কতজন গিয়েছে ক’জনকে মনে পড়বে?”

এর উত্তরে কি বলা উচিত জানা নেই প্রিয়ার। তাই অর্ষাকে আর কোন প্রশ্ন করল না। অর্ষার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে। তবে সেগুলো প্রিয়ার কাছে স্বাভাবিক না। কেন জানি মনে হচ্ছে অর্ষা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না বরং প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে।

অর্ষা প্রসঙ্গ পালটে বলল,
“তো কী করিস আজকাল?”

“একটা প্রাইভেট ফার্মে জব করছি তিন-চার মাস।”

অর্ষা বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
“ওহ ভালো। মন দিয়ে কাজ করিস। আজ আমি আসি।”

প্রিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।
“কোথায় যাবি এখন?”

“খালা মনির বাসায়।”

“সে তো সিলেটে থাকে।”

“কিন্তু তার বাসা তো ঢাকাতেই ছিল। খালুর চাকরিসূত্রে সিলেটে থাকত। খালু এখন অবসরপ্রাপ্ত। খালাতো ভাইবোনেরা বড় হয়েছে। তারা জব করছে। এখন তারা ঢাকায়ই থাকেন। এখন তাদের বাসায়ই উঠব। একা কোথাও থাকতে ইচ্ছে করে না। কানাডাতেও চাচা চাচির সাথে থেকেছি।”

“হুম। কানাডা যাওয়ার আগে তাদের কাছে ছিলি নিশ্চয়ই ভালো বুঝাপড়া আছে। আগে তো নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও থাকতে পারতি না।”

“এখন পারি। বড় হয়েছি না?”

“হ্যা, অনেক বড় হয়ে গেছিস। এতটা বড় হয়ে যাবি কল্পনাও করিনি। যাইহোক এখন কী করার প্ল্যান?”

“উমম,, পরিচিত কয়েকটা কোম্পানি আছে সেখানে কথা বলে দেখব। অলরেডি কয়েক জায়গা থেকে অফার পেয়েছি। আগে দেখি কোনটা পছন্দ হয়। কাজের সাথে আপোষ করব না। পছন্দসই জায়গায় পছন্দমতো কাজ করব।”

প্রিয়ার মনে পড়ল অর্ষা কোন সাবজেক্টে পড়েছে সেটাই জানে না। জানলে হেল্প করতে পারত।
“কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়েছিস অর্ষা?”

“আমি ইঞ্জিনিয়ার। আর্কিটেক্ট।”

প্রিয়া চোখ বড়বড় করে ওর দিকে তাকাল।
“ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিস তুই?”

“হ্যা।”

“মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ।”
প্রিয়া উৎফুল্ল হয়ে বলল।

“আজ তাহলে যাই। আবার দেখা হবে। কল করব তোকে।”

“নাম্বার পাবি কই?”

“আছে তোর নাম্বার। সমস্যা নাই।”

…….

অর্ষা ওর খালার বাসায় যেতেই সবাই ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এত দেরি কেন হলো? ও ল্যান্ড করেছে সকালে আর এসেছে এই ভর সন্ধ্যায়। এতক্ষণ কই ছিল এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অর্ষা ক্লান্ত। বড় খালার এক ছেলে এক মেয়ে। দু’জনই ওর বড়। খালাতো বোন বিবাহিত আর খালাতো ভাই জব করছে। আজ ওর আসার খবর শুনে খালাতো বোন আয়েশা ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে এসেছে। বাচ্চা দুটো অর্ষাকে পাগল করে ফেলছে। অর্ষা হাঁপিয়ে গিয়ে বলল,
“আপু এই ক্যাসেট দুটো কী করে সামলাও?”

“সেটা বুঝতে হলে তোকে বিয়ে করতে হবে। শুধু বিয়ে করলেই হবে না। দুটো বাচ্চা পয়দা কর‍তে হবে তাহলেই বুঝতে পারবি কি করে সামলাই।”

“ওহ নো! আমার বোঝার দরকার নেই।”

তখনই আয়াশ অফিস থেকে ফিরেছে। সোফায় বসে অর্ষাকে গল্প করতে দেখে অপলক চেয়ে আছে।
“হেই! অর্ষা! কেমন আছো?”

অর্ষা আয়াশকে দেখে মৃদু হেসে উত্তর দিল,
“আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? আহারে! অফিস করে কি হাল! ঘেমে নেয়ে একাকার।”

আয়াশ অর্ষার ওড়না দিয়ে ঘাম মুছে বলল,
“ঘাম মোছার জন্য তুমি আছো না? চলে এসেছো আর কীসের টেনশন!”

“ওয়াক! খালা মনি তোমার ছেলেকে কিছু বলো। আমার ওড়না নষ্ট করে ফেলল। ছি! কি গন্ধ! ওয়াক!”

ওর খালা মনি তেড়ে এল ছেলের দিকে।
“তুই সব সময় এমন করিস মেয়েটার সাথে। আসতে না আসতেই জ্বালাতে শুরু করেছিস।”

“মাত্র তো শুরু করেছি আম্মু। আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া।”
আয়াশ দৌড়ে উপরে চলে গেল। আয়েশা হাসছে ওদের কাহিনি দেখে। অর্ষাও গাল ফুলিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। আয়েশা ফাঁক পেয়ে মা’কে বলল,
“দুটোকে এইবার এক করে দেও। হলো তো অনেক অপেক্ষা।”
“হ্যা, অপেক্ষার অবসান হয়েছে। আমার বোনের মেয়ের দায়িত্ব আমিই নেব।”

চলবে________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here