রঙিন_দূত – ২২,২৩

0
317

#রঙিন_দূত – ২২,২৩
লাবিবা ওয়াহিদ
২২
—————————-
নিস্তব্ধ, শব্দহীন রজনী। যান্ত্রিক শহর বর্তমানে ঘুমে কাত। শোঁ শোঁ শব্দে হিম বাতাস বইছে। প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে আবৃত। নিশাচর পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ ব্যতীত দ্রুত গতিতে চালনা করা প্রাইভেট কার গুলো শোঁ শোঁ শব্দে দেখা দিয়ে পুণরায় মিলিয়ে যাচ্ছে আবছা কুয়াশার অন্তরালে। পথ-ঘাট সটান হয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ানো ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোয় ঝলমল করছে। গগণে মেঘেদের আনাগোণা দেখাচ্ছে স্বল্প। না জানি আজ ধরনীর বুকে বর্ষণের স্রোত নামলে কী রকম শীত অনুভূত হয়!? তবে শহরে শীতের অনুভূতি পাওয়া যায় না। শীতের অনুভূতি যে বর্তমানে গ্রামেই পাওয়া যায়। হৃধি এই শীতল পরিবেশে বেলকনিতে বসে ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আহ! মাঝরাতে এর চাইতে অনুভূতিময় আর কী আছে? কাঁপুনিতে আবৃত হওয়ার পূর্বেই হৃধি নিজেকে মোটা শালে আবৃত করেছে। বাম হাতে চায়ের কাপ ধরলেও ডান হাতে তার ফোন। ফোনে একটি মেসেজ-ই ওপেন করা। যেটি মাহিন পাঠিয়েছে গত দু’দিন পূর্বে। ফোনটা অসাবধানবশত পানিতে পরে যায় তার। যার ফলে হৃধির ফোন দু’দিন ছিলো আধমরা। এর মাঝে করিম উল্লাহ ফিরে আসে৷ হৃধিকে ফোনের জন্যে মন খারাপ করে থাকতে দেখে তিনি নিজ দায়িত্বে-ই আজ ফোন ঠিক করে আনলেন।

–“কী স্বাধ দিলেন আপনি হৃধি! আমার প্রিয় খাবারকে আপনি যে আরও তৃপ্তিময় করে দিয়ে গেলেন। একবার পিছে ফিরে যদি দেখতেন আমার চাহনি, তাহলে বুঝতেন আমি মাহিনের অবস্থা কতটা অসহনীয় ছিলো অতিরিক্ত খুশিতে। খাদ্যের ভাষাতে আলু পরোটাকে নিয়ে আমার যতটা অনুভূতি, তার চেয়েও দীর্ঘ, প্রগাঢ় অনুভূতি আপনাকে ঘিরে হৃধি। আপনি আমার আশেপাশে উপস্থিত থাকলে মনে হয়, আমি এই ধরনীর বুকে সবচেয়ে সুখী মানুষ। কবে আপনায় একবারের জন্যে আমার কাছে নিয়ে আসবো বলুন তো?”

এরকম বার্তায় হৃধি ছিলো সম্পূর্ণ স্তব্ধ, কিংকর্তব্যবিমুঢ়! মাহিনের শেষোক্ত বাক্যটি বারংবার তার হৃদয়কে কম্পিত করেছে। দু’দিন মাহিনকে হৃধি দেখেনি, তবে তার খবর ঠিকই কানে এসেছে। যে ঘরে রিনার মতো কাজের মেয়ে থাকে সেই ঘরে প্রয়োজন পরে না নিজ থেকে কারো খবর নেয়ার। রিনা নিজের আপাদমস্তক সংবাদ চ্যানেল। এই সেক্টরের প্রতিটি দেয়ালের খবর পর্যন্ত তার জানা। রিনাকে “কী জানো” জিজ্ঞেস করার চাইতে “কী জানো না” সেটা জিজ্ঞেস করাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে হৃধি।
হৃধি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোলে থাকা দু’টো ডেইরি সিল্ক এ নজর দিলো। এগুলো মাহিন দিয়েছে, শাফীনের মাধ্যমে। শাফীনের ভাষ্যমতে, মাহিনের জন্য রান্না করার জন্যে তার পক্ষ থেকে রিওয়ার্ড। হৃধি নিতে না চাইলে শাফীন জোর করে তাকে দিয়ে দেয়। হৃধি এখনো এই দুটো চকলেট খাওয়ার পরিকল্পনা করেনি। কেন যেন তার অশান্ত দৃষ্টি এগুলো এক নজর দেখেই যায়। চকলেট হৃধির আহামরি পছন্দ না। দু’মাসে এক বা দু’বার চকলেট কিনে খায় সে। তবে চকলেট তার নিয়মিত রুটিনে পরে না।
হৃধি পুণরায় মেসেজটি চেক করে চায়ের অবশিষ্ট চা এক টানে গিলে নিলো। অতঃপর মুঠো ফোনের পাওয়ার বন্ধ করে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তায় তাকালো। একি! মাহিন এই মাঝরাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন?

হৃধি চট করে দাঁড়িয়ে গেলো। ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাহিনকে। হৃধিদের বাড়ির ঠিক সামনের রাস্তাতেই পায়চারি করছে। গাড়ির কোনো চিহ্ন না পাওয়ায় মাহিন রাস্তার মাঝামাঝিতেই হেঁটে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে হৃধির বারান্দায় তাকাতেও ভুলছে না। হৃধি চট করে অন্ধকারে চলে এলো, মূল কারণ একটা-ই মাহিন যেন তাকে না দেখে। কিন্তু মাহিনের ঈগল দৃষ্টি হতে হৃধির পালানো মুশকিল। পরপর মেসেজের শব্দ শ্রবণ হয় হৃধির। হৃধি আরামদায়ক চেয়ার হতে ফোনটা হাতে নেয়।
–“আমার থেকে পালানোর বৃথা চেষ্টা কেন করেন বলুন তো? কেন অলটাইম ভুলে যান, আমি মাহিন! কোনো গর্ধব নই!”

হৃধি পুণরায় নিশ্চুপ হয়ে বার্তাটি পড়লো। কেন যেন মাহিনের প্রতিউত্তরে কিছু বলতে পারে না সে। হাত দুটো যেন অবশ হয়ে থাকে তার। হৃধির কোনো সাড়া না পেয়ে মাহিন কল করলো। হৃধি সাথে সাথে রিসিভ না করলেও বেশ সময় নিয়ে রিসিভ করলো৷ অতঃপর বেশ থমথম গলায় বললো,
–“হ্যালো!”
–“রিপ্লাই কেন করেন না হৃধি? টাইপিং করতে খুব কষ্ট হয়?”

মাহিনের কন্ঠ কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে আগের থেকে। হৃধি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলে,
–“কী জন্য কল করেছেন?”
–“আলু পরোটা খাইয়ে কী আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলো? আপনার এই অবচেতন প্রেমিক যে কতটা তৃষ্ণার্ত আপনাকে দেখার জন্যে, সেই খবর কী রাখেন?”

হৃধি পুণরায় নিরুত্তর। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে আটকে গলায় বললো,
–“আমার মুঠোফোন নষ্ট হয়ে গেছিলো!”
–“জানি আমি। আলোতে আসুন!”
–“কে..কেন?”
–“আপনাকে দেখবো!”

মাহিনের এমন শীতল স্বীকারোক্তি হৃধিকে কম্পিত করে তুললো। এমন সম্মোহনী কন্ঠের অধিকারী হতে কে বলেছে তাকে? সে জানে না, হৃধি কতটা দূর্বল এই মোহনীয় কন্ঠের ধ্বনিতে? হয়তো জানে না। জানলে যে মাহিন কবেই হৃধিকে নিজের সাথে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেললো। হৃধি দু’একবার লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর নিজেকে সামলে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো।
–“আপনি এই রাত-বিরেতে ভূতের মতো ঘুরছেন কেন বাহিরে? আরও অসুস্থতা বাড়াতে চান?”
–“আমার অভ্যেস আছে রাতে বাহিরে হাঁটার। আর অসুস্থতা যদি আপনাকে কাছে আনতে সক্ষম হয় তাহলে আমি বারংবার অসুস্থ হতে রাজি। এখন দেখি, আসুন এই কৃত্রিম আলোতে। আপনাকে দেখে ফ্যাকাসে মনটাকে সতেজ করি।”

হৃধি নিচের পাতলা অধর কামড়ে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে রয়। পরে জোরপূর্বক পা চালিয়ে অন্ধকার হতে আলোয় এসে দাঁড়ায়। আসার পূর্বে মাথা ওড়নায় আবৃত করতে ভুলেনি সে। মাহিন তাকে দেখতে পাচ্ছে কি না হৃধি জানে না। তবে মুঠোফোনের অপরপাশ হতে মাহিনের ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শ্রবণে এলো। মাহিনের হঠাৎ এরূপ কর্মে হৃধি অপ্রস্তুত হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর শ্রবণে এলো মাহিনের মাদকতায় ভেঁজা ভারী কন্ঠস্বর।
–“আহ! প্রাণ ফিরে পেলাম যেন। এখন ভেতরে যান হৃধি, ঠান্ডা লেগে যাবে নয়তো!”

হৃধি বেকুবের মতো মাথা নাড়িয়ে কাপটি নিয়ে ভেতরে চলে এলো। ফোনের সাথেই ডেইরি সিল্ক দুটি জায়গা দখল করে ছিলো।

—————————
শাফীন সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে রিনাকে দেখতে পেলো। শাফীনকে দেখে রিনা এক গাল হাসলো। অতঃপর হাসি-মুখেই বললো,
–“আরে ছোট ভাই যে!”

শাফীনের অধরে এঁটে থাকা হাসিটা মুহূর্তেই হারিয়ে গেলো। শাফীন গোমড়া মুখ করে আওড়ায়,
–“আমি মোটেও তোমার ছোট নই, তোমার বড় আমি ওকে!?”
–“কে কইলো আপনে বড়ো? দেখতে তো লাগে হাঁটুর সমান!”

শাফীন এবার কিড়মিড় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রিনার দিকে। তাকে কোন আক্কেলে রিনার হাঁটুর বয়সী লাগে? উচ্চতায়, বয়সে শাফীন বড় আর এই রিনা ছোট। তা না বুঝেই মেয়েটা গতকাল থেকে তাকে উল্টো পাল্টা লজিক দেখাচ্ছে। শাফীন ভারী কন্ঠে বললো,
–“মুখ সামলে কথা বলো, আমি মোটেও তোমার ওই পিঁপড়া সমান হাঁটুর সমান না। তুমি তো আমার কাঁধেরও নিচে!”
–“আসলে হইছে কী, তালগাছ আর মানুষের মইধ্যে পার্থক্য আছে। তালগাছ আকাশ ছুঁইলেও মানুষের যোগ্যতার কিছুই না।”
–“শাট আপ রিনা! আমার বয়স ১৯ এবং তোমার থেকে লম্বা বলে আমি মোটেও তালগাছ নই! সাহস থাকলে নিজের বয়স বলো! আমিও দেখি তুমি কোন মহিলা!”

রিনাকেও রাগতে দেখা গেলো। সে কোমড়ে দু’হাত দিলো অবলীলায়। রআগে ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে তেঁজী কন্ঠে বললো,
–“পোলাগো বেতন আর মেয়েগো বয়স! কোনোডাই জিজ্ঞেস করতে নাই জানেন না!?”
–“এই নিয়ম নিশ্চয়ই তুমি বের করেছো?”
–“আরে, আরে! এখানে কী লাগিয়েছো তোমরা?”

হৃধির কন্ঠস্বরে উভয়েই হৃধির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। হৃধি তখন কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।
–“দ্যাখেন না আপা এই ই’ত’র ছেড়ার কর্মকান্ড! আমার বয়স জিগায়, কতো সাহস!”
–“আর রিনা যে আমায় তালগাছ, ছোট ভাই আরও যা-তা বলছে? আমি একাই নন্দো ঘোষ! আমী শিওর ও আমার থেকে ছোট!”
–“আপা, এরে কিছু কন! নয়তো আমি সত্যি সত্যি কোনো ঘটনা ঘটায় ফেলমু!”
–“আরে ঠান্ডা হও। শাফীন! রিনা বাচ্চা মানুষ! ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। আর রিনা তুমি চুপ করো। ভুলে যাও কিছুক্ষণ আগের ঘটনা!”

রিনা চোখ বুজে লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো৷ অতঃপর চোখ মেলে ফিচেল হাসলো। দাঁত কপাটি বের করে বললো,
–“ভুলে গেছি!”
–“তোমার জন্য আমিও এসব ভুলে গেলাম ভা.. সরি আপু!”

হৃধি মুচকি হেসে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। রিনা তখন শাফীনের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বলে,
–“ভা মানে কী ভ্যান বুঝাইলা ছোট ভাই?”

শাফীন পুণরায় রিনার দিকে তাকালে রিনা ভেঙ্গিয়ে দ্রুত কেটে পরলো।

————————–
হৃধি গলির মোড় হতে বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলো। ঠিক তৎক্ষণাৎ বড় গাছের নিচে মাহিনের অবস্থান লক্ষ্য করলো। হৃধির বিরক্তিতে কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো। এই ছেলের কী পড়াশোনা নেই? ভার্সিটি ছেড়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কী? হৃধি মাহিনকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পায় মাহিনের গায়ে ভার্সিটির কোড শার্ট এবং প্যান্ট। আইডি কার্ডটি বক্ষঃস্থলের বা পাশের পকেটে পুরে রাখা। হৃধি তপ্তশ্বাস ফেলে দ্রুত মাহিনকে অতিক্রম করতে চাইলো। কিন্তু মাহিন তা করতে দিলে তো। মাহিন মাঝপথেই তাকে ডেকে থামিয়ে দিলো৷ হৃধি আড়চোখে মাহিনের দিকে তাকালো। ইদানীং মাহিনের দেখা খুব একটা পায় না হৃধি। কে জানে কোন কাজে এই ব্যক্তি ব্যস্ত! হৃধি সেভাবেই সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। মাহিন থমথমে সুরে বলে ওঠে,
–“এদিকে আসুন হৃধি!”

হৃধি বাধ্য মেয়ের মতো মাহিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হৃধি আসতেই তার সামনে এক নিকষ কৃষ্ণ নিকাব বাড়িয়ে দেয়। এবং আওড়ায়,
–“এটা পরে সবসময় বাসা থেকে বের হবেন৷ নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে না। একটা পরলে আপনার সাথে আমায় কেউ দেখলেও চিনতে পারবে না। এটা নিন হৃধি!”

হৃধি নিলো না। অদ্ভুত জড়তা তাকে ঘিরে ধরেছে। ছেলেটা পারেও! তার সাথে চলাচলের জন্যে নিকাব পর্যন্ত ধরিয়ে দিবে? কিছুদিন পর দেখা যাবে হৃধিকে লাগেজে ভরে ঘুরবে সে। হৃধি নিচ্ছে না দেখে পাশ থেকে রাফিদ বলে ওঠে,
–“আরে ভাবী, লজ্জা পাচ্ছেন নাকি? নিন, একটা আপনাকে প্রটেক্ট করতেও সাহায্য করবে এবং আমাদের মাহিনেরও দুশ্চিন্তা কমবে। বেচারা তো সারাদিন ভয়ে থাকে, কবে কে আপনাকে না জানি ডাকাতি করে নিয়ে যায়!”

শেষোক্ত বাক্যে মাহিনের বাকি বন্ধুরা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। মাহিন তড়িৎ রাফিদের দিকে এমব ভাবে তাকালো যেন এখানেই পুঁতে ফেলবে রাফিদকে। রাফিদ মাহিনকে আরও ক্ষেপাতে চোখ টিপ দিলো। তখনই মাহিনের তরফ থেকে রাফিদের পিঠে এক ঘা পরলো। হৃধি কোনো দিকে না তাকিয়ে তড়িৎ নিকাবটা নিয়ে নিলো। অতঃপর তাড়া দিয়ে বললো,
–“আ..আসছি আমি!”

হৃধি দ্রুত পা চালিয়ে প্রস্থান করলো। এদিকে হৃধি এবং মাহিনের কর্মকান্ড ভালোভাবেই লক্ষ্য করলেন মজিদ সাহেব। পান চিবুতে চিবুতে মোছে হাত বুলালেন কয়েকবার। অধরের কোণে অদ্ভুত হাসি ফুটে ওঠেছে তার!

~চলবে, ইনশাল্লাহ।

#রঙিন_দূত – ২৩
লাবিবা ওয়াহিদ

————————–
হিম হাওয়ায় নিমজ্জিত অপরাহ্ন। অপরাহ্নে সূর্য যেন তার তাপ ছড়াতে ক্লান্ত হয়ে পরে। তাইতো তার উত্তাপের তীব্রতা এই অপরাহ্নে কমে আসে। মানুষ’রাও এই অপরাহ্নে শান্তিতে নিজ বাসস্থান হতে বেরিয়ে এদিক ওদিক একটু ঘুরতে বের হয়। কেউ-বা নিজ ছাদে বসে প্রকৃতি বিলাসে মগ্ন হয় আবার কেউ-বা এই অপরাহ্নে হেসে খেলে বেড়ায়। ছাদ জিনিসটা হৃধির বরাবরই প্রিয়। ছাদে বসলে যেন অনুভব হয় সে হাওয়ায় ভেলার ন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছে। সাত তলা ছাদে দাঁড়িয়ে পথে চলাচল করা মানুষদের পিঁপড়ের ন্যায় লাগে। তাদের চলন দেখতে খুব একটা মন্দ লাগে না। তবে তার থেকেও বেশি ভালো লাগে সেই নীল গগণের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে। পাখি’রা উড়ে বেড়ায়! খন্ড খন্ড তুলো রাশির মেঘকুঞ্জ গগণে বুকে খুবই ধীর এবং অলস ভঙ্গিতে বিচরণ করে। সৃষ্টিকর্তা কতো মাধুর্য দিয়ে-ই না এই আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন। প্রাকৃতিক সুন্দর সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রতে গেলে মনে হয় তার সৃষ্টি এতো সুন্দর হলে না জানি তিনি কতো সুন্দর, কতো অপরূপ! কিন্তু হৃধির এদিক দিয়ে ভাগ্য খারাপ। এই কয়েকটা শহর ব্যতীত সে আর কোথাও যেতে পারেনি। অবশ্য কিছু চিনেও না। বেশিরভাগ সময়-ই চার দেয়ালের মাঝে তার ঠাই হয়েছিলো। ওই মাঝেমধ্যে টিভিতে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র দেখা হয় আর কী!

হৃধি ছাদের এক পাশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াতেই আরেকজনের উপস্থিতি টের পেলো। হৃধি বিষয়টি তোয়াক্কা করলো না৷ ছাদ তো তার নিজের নয়। যখন তখন যে কেউ আসতে পারে। এসব নিশ্চয়ই হৃধির দেখার কর্ম নয়। হৃধি ব্যস্ত আঁখিপল্লব বুজে উত্তরের হিম হাওয়া অনুভব করায়।
–“আরে, তুমি ওই হলুদের সুন্দরী না?”

হৃধি এই সুখের সময়ে কোনো পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে তড়িৎ পিছে ঘুরে তাকালো। হৃধির দৃষ্টিতে বিচরণ করছে ভয়, জড়তা এবং অপ্রস্তুতি। সোহান নামক ছেলেটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে। হৃধি সটান মেরে দাঁড়িয়ে রয় এবং আরও নিবিড়ভাবে মাথায় আবৃত ওড়নাটা জড়িয়ে নিলো। হৃধির এসব কান্ডে ছেলেটা ফিক করে হেসে ফেলে এবং বলে,
–“যাক, এবার তাহলে সুন্দরীর দেখা পেলাম। সেদিন তো নাম বললা না! ওপস সরি বলেছিলে, কী যেন নাম? রিয়া নাকি ধিয়া..”

হৃধি একইভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। গলা বারংবার শুকিয়ে আসছে তার। সোহানকে তার মোটেও সুবিধার লাগছে না। চেহারাতেই কেমন বাটপার, চিটার ভাব ফুটে উঠেছে। হৃধির উত্তর না পেয়ে সোহান পুণরায় বলে ওঠে,
–“তুমি কী সবসময় চুপ করে থাকো নাকি বোবা তুমি?”
–“ওয় বোবা হলে তোর বয়ড়া হতে মিনিটও লাগবে না!”

সোহান চমকে পিছে ফিরে তাকালো। সোহানের থেকে কিছুটা দূরত্বেই দাঁড়িয়ে আছে মাহিন। চোখ-মুখ তার অসম্ভব লাল। হৃধি প্রথমে হতবুদ্ধি হারিয়ে চমকালেও পরমুহূর্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। স্বস্তির সাথে-ই পেছনে থাকা রেলিং-এ পিঠ লেপ্টে দাঁড়ালো। সোহান থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে আওড়ায়,
–“আরে বড়ো ভাই যে? কোনো সমস্যা?”
–“বর্তমানে আমার সমস্যা হচ্ছে তুই! তোর সাহস হয় কী করে হৃধির সাথে এভাবে কথা বলার?”

সোহান অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ঘাড় বাঁকিয়ে হৃধির দিকে নজর দিলো। সোহান হৃধিকে ভালোভাবে দেখার পূর্বেই মাহিন ধপাধপ পা ফেলে সোহানের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং সোহানের গাল দুটো সজোরে চাপ দিয়ে মাথা মাহিনের সোজাসুজি করলো। অতঃপর সোহানের চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে আওড়ায়,
–“সব জায়গায় ফ্লার্ট খাটে না লিটল ব্রাদার! ওদিকে তাকালে তোর চোখে কখন স্টাপ্লার পরে যায় কে জানে? সময় থাকতে শুধরে যা, ওর ত্রিসীমানায়ও যেন তোর ছায়া না পরে! স্টে এওয়ে ফ্রম ফার! নাও লিভ!”

সোহান যা বোঝার বুঝে নিলো। শুকনো করে ঢোঁক গিললো। মাহিন সোহানকে ছেড়ে দাঁড়াতেই সুঁড়সুঁড় করে সোহান প্রস্থান করলো। হৃধি এতক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সবটা দেখে গেছে। মাহিনের শান্ত কন্ঠের হুমকি এখনো তার কানে পিয়ানোর মতো বাজছে। হৃধি মাহিনকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো৷ বেগুনি এবং সাদার কম্বিনেশনে একটা টি-শার্ট পরে আছে। বাম হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি, কালো জিন্স। চুলগুলো মুক্ত বাতাসে অবাধ্যের ন্যায় উড়ছে। ছাদে আসলে মাহিনের এই অবাধ্য চুলগুলো যেন আরও অবাধ্য হয়ে পরে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এই মৃদু ঠান্ডার মাঝে হাফ হাতার উপরে কে টি-শার্ট পরে? আবার দেখা যাচ্ছে ঘেমেছেও কিছুটা। দৌড়-ঝাপ করেছে নাকি?

হৃধির ভাবনায় ছেদ ঘটালো মাহিনের শাসনে ভরা কন্ঠস্বর!
–“আমার বেলায় তো কথার খই ফুটে! এই রা’স্কে’ল গুলোর সামনে আপনার কথা পাখি’রা কই পালায় শুনি?”

হৃধি থতমত খেয়ে যায়। পরমুহূর্তে আবার রাগের ছাপও ফুটিয়ে তোলে চোখে-মুখে!
–“যেখানে ইচ্ছে যাক! আপনার কী?”
–“আমার-ই সব! থ্যাংকস টু আল্লাহ, যে আমি টাইমলি পৌঁছাতে পারি! আমার কী ইচ্ছে করে জানেন? ওড়না দিয়ে আপনার চোখ-মুখে পুরোটা প্যাকেট করে ফেলি৷ তাহলে-ই যেন আমি স্বস্তি পাবো! আজকাল আমার সম্পত্তি যেই হারে কু-নজর পরছে!!”
–“প্যাকেট করলে আমি শ্বাস নিবো কেমনে? আর দেখবো-ই বা কেমনে?”
–“সেটাই তো সমস্যা! নিঃশ্বাস ফেলতে না পারলে আমার বউ হবেন কী করে? এটা তো আর ঊনিশ শতকের বাংলা সিনেমা নয় যে আমার মাধ্যমে আপনি নিঃশ্বাস গ্রহণ/ত্যাগ করবেন!”

মাহিনের এমন বাচ্চামো কথায় হৃধির চটা রাগ কোথায় যেন উবে গেলো। মুহূর্তে-ই অট্টহাসিতে ফেটে পরতে চাইলো যেন। কিন্তু হৃধি হাসি আটকাতে পারছে না, একদমই পারছে না। উফফ এই বে’য়া’দ’ব হাসি! হাসির আর সময় নেই? হাসি কী বুঝতে চাইছে না, হৃধির অধর-জুড়ে এখন হাসির উপস্থিতি বারণ? কিন্তু অবাধ্য হাসি থামলে তো! হৃধি হেসে দিলো। গম্ভীরতাকে বজায় রাখতে পারলো না হৃধি।

হৃধির হাসিতে মাহিনের কুচকানো ভ্রু স্বাভাবিক হয়ে এলো৷ সাথে তার রাগও ভস্ম হয়ে এলো। হৃদস্পন্দন যেন মুহূর্তে-ই তীব্র গতিতে ছুটতে আরম্ভ করলো। মাহিন হলফ করে বলতে পারবে এই হাসি তার নেশা ধরানোর সতেজ মাদক। এই হাসি তার গভীর ক্ষতের ওষুধ, এই হাসি তার সুখের ওষুধ, এই হাসিতে তার মৃত্যু নিশ্চিত। মাহিন তার বোকারাণীর হাসিতে বিভোর হয়ে এক.. দু’কদম এগিয়ে গেলো। হৃধির কিছুটা কাছেই তার পায়ের ধাপ থামলো। পলকহীন দৃষ্টিতে নেশালো সুরে গানের দু’লাইন আওড়ালো,
–“মনটা জুড়ে, তুমি~ই সবুজ প্রান্তর!
বাঁচতে আমায়
স্বাধ জাগায়, হাজার বছর!”

ক্ষণিকের মধ্যেই হৃধির হাসি পুরোপুরি থেমে গেলো মাহিনের গানের সুরে। ছেলেটার কন্ঠে গান শোনার ভাগ্য যদি বারংবার আসতো তাহলে? অব্যক্ত এক বুলি মুখ দ্বারা প্রকাশ হতে চাইলো যেন। কিন্তু পরমুহূর্তেই হৃধি নিজেকে সামলে নেয়। হৃধি দু’কদম পিছে ফিরে দূরত্বে দাঁড়ালো। অন্তর তার অসম্ভব কাঁপছে। ঘনঘন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে কম্পন বিলুপ্ত করার আপ্রাণ চেষ্টায় মত্ত সে। অদ্ভুত ভাবে মাহিনের কাছাকাছি থাকাটা বড্ড এলোমেলো করে দেয় তাকে। মাহিন ফিচেল হেসে রেলিং-এ দু’হাত দিয়ে অদূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। হৃধির খুব বলতে ইচ্ছে করছে, “আপনার মুখে গান শুনতে চাই!” কিন্তু অবাধ্য মনকে সবসময় মাথায় উঠাতে নেই। আর লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে হৃধি কখনোই এ কথা উচ্চারণ করবে না।

দু’জনের মাঝে চললো প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা। রাস্তার মানুষদের কোলাহলের শব্দ এবং শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ ব্যতীত কিছু-ই উপলব্ধি হচ্ছে না। নিস্তব্ধতা তাদের বিবর্ণ করার পূবেই মাহিন হৃধির উদ্দেশ্যে বলে ওঠে এক চমৎকার কথা।
–“একটা গান শোনাই হৃধি? শুনবেন?”

হৃধির এক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো মাহিন তার মনের অব্যক্ত কথাগুলো পড়ে নিয়েছে। হৃধি বিষ্ময়ের সাথে ঘাড় বাঁকিয়ে মাহিনের দিকে তাকালো। মাহিন তখন অদূরে কিছু দেখতে ব্যস্ত। হৃধি নিশ্চুপ দেখে মাহিন আর চট করে হৃধির দিকে তাকালো। মুহূর্তে-ই দৃষ্টি আদান-প্রদান হয় দুটি আঁখি জোড়ার, দু’টি ব্যাকুল মনের। হৃধি লজ্জা পেয়ে দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। মাহিন হেসে খালি কন্ঠে গান ধরলো,
–“তুমি না ডাকলে, আস-বো-না।
কাছে না এসে ভালোবাসবো~না..
দূরত্ব কী ভালো বাসা বাড়ায়?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো,
ডুবে ডুবে ভালোবাসি..
তুমি না বাসলেও আমি বাসি!(২)”

হৃধি সবার্ঙ্গে শিহরণ খেলো গেলো। এই মাধুর্যময় বিকালে এই আসমান এবং হিম হাওয়াকে সাক্ষী রেখে মাহিন তাকে প্রপোজ করলো? তাও গানের দ্বারা? দীর্ঘ পাঁচ মাস হাজারো পাগলামী, প্রতিক্ষার পর প্রপোজাল দিলো? মাহিন তার পাগলামি অব্যাহত রাখলেও কখনো “ভালোবাসি” শব্দটা উচ্চারণ করেনি। তাই হয়তো হৃধি সবসময় তাকে এড়িয়ে গেছে। হয়তো প্রতিক্ষায় ছিলো, মাহিনের মুখে এই মাধুর্যযুক্ত শব্দটি একবার শোনার জন্যে। আচ্ছা হৃধির এই প্রতিক্ষা কী তবে স্বার্থক হলো?

—————————–
আজ শুক্রবার! সপ্তাহিক ছুটির দিন। আছরের আযানের পূর্বেই কোনো এক কারণে হৃধিকে তাঁরার বাসায় যাওয়া লেগেছে। তাঁরা আপু কোথায় নাকি যাবে, তার জন্যে তাঁরার শাড়ির কুচি ঠিক করার জন্য ডেকেছে। তাঁরার মাও নানান কাজে ব্যস্ত, তাই সেই মুহূর্তে হৃধিকেই তাঁরার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো। হৃধি তাঁরার ফোন পেয়ে বিনা-বাক্যে তাঁরার বাসায় চলে যায়। তাঁরাকে হেল্প করে আর দেরী করে না কারণ, করিম উল্লাহ অর্থাৎ হৃধির বাবা আজ বাড়িতে। তিনি বাড়ি থাকাকালীন মেয়েকে বাড়ির বাহিরে দেখা একদম পছন্দ করেন না। এখন ঘড়ির কাঁটা তিনটা পঁচিশ। শীতকাল বিধায় দিন ছোট। মাথায় আবৃত ওড়না ঠিক করতে করতে ফ্ল্যাটে ফিরতেই দেখলো মজিদ সাহেব লিভিংরুমের সোফায় বসে আছে। মুখে তার পৈশাচিক হাসি। তার অপজিটেই আসন গ্রহণ করে বসেছে করিম উল্লাহ। তার চোখ-মুখ অসম্ভব গম্ভীর। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি চরম রেগে। হৃধি বুঝলো না তার বাবার হঠাৎ এরূপ রেগে যাওয়ার কারণ। মজিদ সাহেবের হৃধির দিকে নজর যেতে হেসে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন,
–“আজ তাহলে উঠি! মেয়ের গুণ বলে গেলাম এখন আপনি তাকে কী করবেন আপনি-ই ঠিক করেন। আমি নাহয় এসবে না জড়াই!”

করিম উল্লাহ তখনই মেয়ের উপস্থিতি টের পেলেন এবং সেদিকে নজর দিলেন। হৃধি মজিদ সাহেবের এসব উক্তির আগা-মাথা কিছু-ই বুঝলেন না! কী বোঝাতে চাইলেন এই মজিদ? মজিদ কিছু না বলে হৃধির পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলো। করিম উল্লাহ বেশ সময় নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর এক পা এক পা করে হৃধির সামনে এগিয়ে আসে।

হৃধি হতবিহ্বল হয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পূর্বেই তার ডান গালে সজোরে এক চড় পরলো! হৃধি তৎক্ষনাৎ ছিটকে পরলো পেছনে অবস্থিত দেয়ালে। অদ্ভুত শব্দ পেতেই রাবেয়া খাতুন এবং রিনা ছুটে আসলো রান্নাঘর থেকে। এসে করিম উল্লাহ’র এই ভয়ংকর রূপ দেখে দুজনেই চমকে উঠলেন। রাবেয়া খাতুন তো হাতের খুন্তিটা রিনার হাতে ধরিয়ে আতঙ্কের সাথে মেয়ের কাছে ছুটে গেলেন। মেয়ের দু’বাহু ধরে নিজের দিকে ফেরাতেই দেখলো কপালের এক পাশ দেয়ালের সাথে লেগে ফেটেছে। এই দৃশ্য দেখে রাবেয়া খাতুনের চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে এলো এবং করিম উল্লাহ’র উদ্দেশ্যে ভেঁচিয়ে উঠলো,
–“পাগল হয়েছেন? মেয়ের গায়ে হাত তুললেন কেন? কী করেছে আমার মেয়ে?
–“তোমার এই মেয়ে ভদ্র হলে তো হাত ওঠানোর প্রশ্নই ওঠে না। সে কী করেনি সেটা বলো! এলাকার মধ্যে ছেলেদের সাথে অভদ্র ভাবে ঘুরে বেড়ায়, মেলামেশা করে। ওকে একা ছেড়েছি কী অন্যের মুখে এসব শোনার জন্যে? ওই মজিদ ভাই নিজের চোখে দেখেছে এসব। ওরে পড়ালেখা না করিয়ে যদি ঘরে পা ভেঙ্গে বসিয়ে রাখতাম, তাহলে অন্তত অন্যের মুখে ছিঃ, ছিঃ শোনা লাগতো না আমার! সামান্য লজ্জা করলো না এসব করার? এই তুই আমার মেয়ে?”

হৃধি করুণ, নির্বোধ চাহনি নিক্ষেপ করে রইলো তার বাবার পানে। ডান গালে এখনো তার কম্পিত হাতটি অবস্থান করছে। গাল ততক্ষণে নোনাজলে আবৃত। তার বাবার মুখে এরকম কথাবার্তা কখনোই আশা করেনি সে। করিম উল্লাহ’র প্রতিটি কথা তার বুকে ছুঁরি দ্বারা গভীর ক্ষত তৈরি করছে। কতটা অবিশ্বাস থাকলে একজন পিতা তার মেয়েকে এসব বলতে পারে?

~চলবে, ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here