#রঙিন_দূত – ৪০ [শেষাংশ]
লাবিবা ওয়াহিদ
—————————
ওদের বিয়ের আজ আট মাস চলছে। ইদানীং মাহিনের নতুন অরিজিনাল গানের কাজ এসেছে। সেটার মেইল ভোকাল মাহিনের। মাহিন সেদিন এতই খুশি হয়েছিলো যে বাসায় পাঁচ মিষ্টি সহ বাসার সবার জন্যে শপিং করেছে। মাহমুদ আলী এবং ফাতিমা বেগমও বেশ খুশি। মাহিন এখন হাতে গানের লিরিক্স নিয়ে সারাদিন প্র্যাক্টিস করে। ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে ডিরেক্টরের থেকে যে সুর দেয়া হয়েছিলো সেটাও ট্রাই করে। মাহিনের কোথাও ভুল হলে তারা শুধরিয়ে দেয় অবলীলায়। হৃধি সবটা চুপচাপ দেখে এবং উপভোগ করে। ছেলেটা কত পরিশ্রম করছে। হৃধি তো মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করে,
–“এক জিনিসে বিরক্ত হন না?”
–“তুমি আছো তো! তোমাকে দেখলেই আমার কনফিডেন্স হৈ হৈ করে বাড়ে!”
হৃধি প্রতিবার স্মিত হাসে। মাহিন এখন তুমি-ই সম্বোধন করে। হৃধি এখন মাহিনের তুমিতেই অভ্যস্ত।এখন মাহিনের অনেক কিছুই খাওয়া এবং করা বারণ! যেমন বৃষ্টিতে ভেঁজা যাবে না, ঠান্ডা কিছু খাওয়া যাবে না। মানে যেসব কিছু ঠান্ডা-সর্দি লাগাবে সেসব থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে। নাহলে কন্ঠ ভাঙ্গবে, গান কী করে করবে? মাঝেমধ্যে কনসার্টের জন্যেও বিভিন্ন জেলায় ছুটতে হয় মাহিনের।
আজ সিফাত, রাফিদ এবং সাব্বির একসাথে মাহিনের বাসাতে হাজির হয়েছে। সাব্বিরকে সচরাচর দেখে না হৃধি। তাই কিছুটা চমকালো হৃধি। সিফাত আর রাফিদ তো এসেই চিল্লা-ফাল্লা শুরু করে দিয়েছে।
–“বুঝছি আমরা বেকার মানুষ! তাই বলে এত খাটান খাটাবে ভাবী? বুঝলাম খাটাচ্ছে, তার জন্যে একটু রেসপেক্ট তো আমরা প্রাপ্য তাই না ভাবী? শা/ লার জন্যে রাতের ঘুম হারাম করি, মশার কামড় খাই আর এই হা’রা’মী আমাদের দু পয়সার দামও দেয় না? এগুলা ঠিক বলেন তো ভাবী?”
হৃধি হ্যাবলার মতো সিফাতের কথাগুলো শুনে গেলো। সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কথাগুলো বুঝতে তার মিনিমান কিছুটা সময় লাগলো৷ শাফীন দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। হাতে তার পটেটো চিপস। কলেজ থেকে ফেরার সময় এনেছিলো। মাঝেমধ্যে-ই চিপস কিনে খাওয়ার মারাত্মক সখ উঠে তার। তবে হৃধি ওদের কথা না বুঝলেও শাফীন ঠিকই ওদের মতলব বুঝলো। চিপস চিবুতে চিবুতেই বললো,
–“কী চাইছো সেটাই বলে দাও সিফাত ভাই। এত এক্সপ্লেইন তোমাদের কাছে কেউ চায়নি!”
মাহিন সোফাতে গালে হাত দিয়ে নিরবে ওদের পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিন যেন ভাবশূণ্য! সিফাতের একটা কথাও তার কানে ঢুকলো না যেমন। সিফাত এবার বললো,
–“যার জন্য এতকিছু করলাম সে তো একদিনও বললো না দোস্ত, সারাজীবন তো কামলার মতোন খাটলি, এবার নাহয় তোর ভাবীর হাতের রান্না খেয়ে যা। আমার বাসায় তোদের দাওয়াত? কিরে বাদশাহ! জীবনেও মুখে এই কথা তুলেছিস?”
এবার মাহিন মুখ খুললো,
–“তোদের বিষয়ে আমার আবার ফর্মালিটি কিসের? খেতে চাইলে আসবি। না তো করিনি কখনো!”
–“ইয়েস! ঠিক এজন্যই চলে আসছি। তুই তো কোনদিন বলবি না। তোর বলার অপেক্ষায় থাকলে বুড়ো হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটবো। ভাবী! আপনি অন্তত দয়া-মায়া করেন!”
রাফিদের কথার মানে বুঝলো হৃধি। তবে এই ধরণের কথা-বার্তায় হৃধি ভিষণ লজ্জিত। রাগও হলো বটে। তবে সেটা মাহিনের উপর। কেমন ফ্রেন্ড সে? বন্ধুরা এত খাটলো অথচ বাসায় দাওয়াত করে খাওয়াতে পারলো না? হৃধি মাহিনকে চোখ রাঙিয়ে বেরিয়ে গেলো। মাহিন বুঝলো হৃধির দৃষ্টির ভাষা। হৃধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো,
–“এই যাহ্! দিলি তো বাঘিনীকে রাগিয়ে? তোদের কে বলেছে ওর কানের সামনে এসব খ্যাচখ্যাচ করতে? সুখে থাকতে ভূতে কিলায় তোদের?”
–“তোরে কিলাতো। আমরা জাস্ট মেডিসিন দিলাম। হুররে! এখন ভাবীর হাতের রান্না খাবো!”
সিফাতের কন্ঠে আনন্দের স্বর। মাহিন মুখ বাঁকিয়ে শাফীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“মা ফিরেছে?”
–“সবে বাজে বারোটা! আধঘন্টার মাঝেই ফিরবে।”
হৃধি রান্নাঘরে এসে বুয়ার সাহায্য নিয়ে পোলাও এবং মাংস রাঁধতে শুরু করলো। আগে সে পারতো না, তবে ফাতিমা বেগমের থেকে দেখে দেখে শিখে নিয়েছে। এছাড়া বুয়াও অনেক ভালো। হৃধি কিছু না পারলে তাকে সাহায্য করে। শুনেছে উনি নাকি শাফীন ছোট থাকতেই এসেছে। তার মানে অনেক বছর ধরে এখানে আছেন। বুয়ার কোনো পরিবার নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পরে এখানেই তার ঠাই হয়েছে।
হৃধি মাহিনকে মিনমিন বকতে বকতে রান্না করছে। এর মাঝে মাহিন এসে হাজির হয়। বুয়া তখন সরবত বানাচ্ছিলো। খালার উদ্দেশ্যে মাহিন বলে ওঠে,
–“খালা, সরবত দ্রুত দিয়ে আসুন, ওরা অপেক্ষা করছে।”
খালা দ্রুত করে সরবত গুলো ট্রেতে সাজিয়ে চলে গেলো। রান্নাঘরে এখন তারা দু’জনই অবস্থান করছে। মাহিন সেই সুযোগে ব্যবহার করে হৃধিকে পেছন হতে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা আক্রমণে হৃধি কেঁপে উঠলো। কাঁপতে কাঁপতে অস্ফুট স্বরে বলে,
–“ছা..ছাড়ুন! ক..কী করছেন?”
–“রাগ করেছো হৃধি? আমি তো চেয়েছিলাম ওদের দাওয়াত করে খাওয়াতে। এছাড়া কিছুদিন আগে রিসিপশন গেলো, কম তো খাওয়াইনি ওদের। তাহলে আমার কী দোষ বলো তো?”
–“এত কিপ্টামি কিসের আপনার? রিসিপশনে খেয়েছে বলে কী বাসায় দাওয়াত দিয়ে এনে খাওয়ানো যাবে না?”
–“তোমার মনে হচ্ছে না ইদানীং তুমি একটু বেশি-ই খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছো? এছাড়া খাওয়া-দাওয়াও তো ঠিকমতো করছো না!”
হৃধি চুপসে যায়। ইদানীং তার কী হয়েছে সে নিজেও জানে না। হুটহাট রেগে যাচ্ছে, খাবারে অনীহা, কিছু খেলেও তা বমি করে ফেলে দিচ্ছে। হৃধির জানা নেই এসবের কারণ। হৃধি কিছু বলছে না দেখে মাহিন বললো,
–“আমি মাকে বলবো আজ বিকালে যেন তোমায় ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়। আমি আজ রেকর্ডিং স্টোডিও তে যাবো। নয়তো আমি-ই তোমায় নিয়ে যেতাম!”
হৃধি নিচু স্বরে বলে,
–“এসবের প্রয়োজন নেই। সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে!”
–“আমি কিছুই শুনছি না হৃধি। তোমার হেলথের ব্যাপারে আমি অলওয়েজ সিরিয়াস। তাই কোনো রকম ভণিতা করবেন না। খারাপ লাগলে খালাকে দিন, উনি রেঁধে দিবেন!”
–“না, না! আমি ঠিকাছি। আপনি প্লিজ ছাড়ুন, আমার গরম লাগছে!”
মাহিন হৃধিকে ছেড়ে দিয়ে বিরক্তির স্বরে বলে,
–“বুঝি না! কিচেনে কেন ফ্যান লাগানো হয় না? ফ্যান লাগালে কী হয়, আজব?”
–“সবাই আপনার মতো পাগল না বা মেন্টাল না! তাই কিচেনে ফ্যান লাগায় না। কোন জায়গায় শুনেছেন কিচেনে মানুষ ফ্যান লাগায়?”
–“আমি লাগিয়ে ইতিহাস গড়ে দেই?”
–“রাখেন তো আপনার আবিজাবি কথাবার্তা। বিরক্ত না করে ওদিকে যান!”
বলেই হৃধি রান্নায় মনোযোগ দেয়। মাহিনও আর হৃধিকে বিরক্ত না করে চলে যায়। কারণ, যেকোনো মুহূর্তে খালা এসে যাবে। তখন মান-সম্মান আর থাকবে না। অবশেষে হৃধি সিফাতদের সকল অভিযোগ ঘুচালো। তিন বন্ধুই তৃপ্তি নিয়ে খেলো। সিফাত আঙুল চেটেপুটে খেতে খেতে বলে,
–“মাহিন ঠিকই বলেছিলো। ভাবীর রান্না সেরা!”
হৃধি উত্তরে শুধু স্মিত হাসে। খাওয়ার পর্ব সেরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ওরা চলে যায়। ওরা যেতেই হৃধি এবং ফাতিমা বেগম খেতে বসে। মাহিনও বসেছে, হৃধির খাওয়া কতটুকু তা দেখতে! হৃধি চেয়েছিলো সে আজ খেয়ে দেখাবে। কিন্তু তা আর হলো কই? দুই লোকমা মুখে পুরতেই ভেতর থেকে সব বেরিয়ে আসার উপক্রম। হৃধি মুখে হাত চেপে দ্রুত বেসিনের দিকে ছুটলো। মাহিন হৃধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফাতিমা বেগমের উদ্দেশ্যে চিন্তিত সুরে বলে,
–“দেখেছো মা! কিছু খেতেই পারছে না। কী হয়েছে বলো তো? প্লিজ আজ ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেও। আমি একজন ভালো ডক্টরকে বলে রেখেছি।”
–“আহা! উত্তেজিত হতে হবে না। আচ্ছা আমি যাবো ওকে নিয়ে। তুই একটু নিশ্চিন্তে থাক!”
হৃধি খেতে না পেরে রুমে চলে গেলো। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তার। বিছানায় শুতেই রাজ্যের ঘুম তার আঁখিতে নেমে আসলো। হৃধি কোথায় তা দেখতে মাহিন ঘরে এসেছিলো। এসে দেখে তার প্রিয় বউ পরে পরে ঘুমোচ্ছে। মাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপনমনে আওড়ায়,
–“কিছু তো আপনার নিশ্চয়ই হয়েছে হৃধি!”
সন্ধ্যার দিকে হৃধির ঘুম ভাঙলো। মাহিন ততক্ষণে স্টোডিও তে চলে গেছে। তা মাহিনের ছোট্ট চিরকুটের মাধ্যমে হৃধি বুঝতে পেরেছে। ফ্রেশ হয়ে আসতেই ফাতিমা বেগমকে বিছানায় বসে থাকতে দেখলেন। অমায়িক হেসে হৃধির উদ্দেশ্যে বলে,
–“এসেছো? দ্রুত রেডি হয়ে নাও। আমি হসপিটাল যাচ্ছি!”
–“মা আমি সত্যি ঠিক আছি। আপনার ছেলেকে বুঝান না একটু। এত পেরাশানির মানে হয়?”
–“আমার কিচ্ছু বুঝতে হবে না। তুমি রেডি হবে ব্যাস! মাহিন নাহয় বাসায় তুফান তৈরি করবে৷ এছাড়া ডক্টর দেখাতেই বা ক্ষতি কী?”
অগত্যা হৃধি হার মেনে রাজি হলো। ছেলেটা তাকে নির্ঘাত পাগল করে ফেলবে। এত জেদী কেন? এত জেদ কেন তার? জেদ ধরলেই সব হয়ে যায় নাকি?
———————-
–“আমি ভাবছি স্কুলের জবটা ছেড়ে দিবো!”
ফাতিমা বেগমের কথা শুনে হৃধি চমকে তার দিকে তাকায়। বর্তমানে হৃধি এবং ফাতিমা বেগম রিকশা করে বাড়ি ফিরছেন। হৃধি চমকে বলে,
–“কিন্তু কেন মা?”
–“তুমি নাকি অর্ধেক সময় বাসায় বোরিং কাটাও একা একা। তাই মাহিন বললো চাকরিটা ছেড়ে দিতে। এছাড়া বয়সও তো কম হয়নি। তাই এবার বিশ্রাম নিবো। আর যদি সুসংবাদ আসে তাহলে তো নাতি-পুতিকে নিয়েই দিন চলে যাবে!”
মুহূর্তে হৃধির গাল দু’টো লাল হতে শুরু করলো। হৃধি মাথা নুইয়ে ফেললো। লজ্জা করছে, কঠিন লজ্জা। হৃধির হাতে প্র্যাগনেন্সি কীটের দু’টো বক্স। সত্যি যদি পজিটিভ আসে? অস্বস্তি হচ্ছে, চরম অস্বস্তি! এছাড়া হসপিটালেও কিছু টেস্ট দিয়ে এসেছে। রিপোর্ট কাল দিবে।
অবশেষে দু’জন বাড়ি ফিরলো। হৃধি চেঞ্জ করে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ভিষণ আনইজি ফিল হচ্ছে তার। অদ্ভুত আতঙ্ক, ভালো লাগা সব একসাথে কাজ করছে। বুকের ভেতরটাও ঢিপঢিপ করছে। কী হবে রেজাল্ট?
হৃধি ঝাপসা চোখে কীটটার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন যেন টুপ করে জল গুলো গড়িয়ে পরে। হাঁটু কাঁপছে তার। পা যেন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না। অধর জোড়াও কম্পনরত। দুটো কীটেই একই রেজাল্ট। জ্বলজ্বল করছে দু’জোড়া লাল দাগ। হৃধি তার কাঁপা হাতটি পেটে রাখলো। এখানে একটি অস্তিত্ব বসতি গড়েছে। এখানে মাহিনের অংশ বেড়ে উঠছে। ভাবতেই হৃধি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। এ চোখের জল যে দুঃখের নয়, সুখের। মা হওয়ার আকাশচুম্বী সুখ। এই দিনটি প্রতিটি মেয়ের জন্যেই সুখের, অনেক সুখের।
হৃধি অনেকক্ষণ ওয়াশরুমে সময় কাটিয়ে বেরিয়ে আসলো। ফাতিমা বেগম সুখবরটা জানতেই আনন্দে হৃধিকে জড়িয়ে ধরলো। শাফীনও এই সুংসবাদ শুনে চেঁচিয়ে উঠে খুশিতে। চেঁচাতে চেঁচাতে বলে,
–“সত্যি আমি চাচ্চু হবো আম্মু?”
সকলের মুখেই সুখময় হাসির বিচরণ। হৃধি লাল হয়ে পেটে হাত দেয়। দিনটি খুশির, সুখের। শাফীন মাহিনকে খবর দিতেই মাহিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো। হৃধিকে দেখতেই মাহিনের চোখের কোণ ভিঁজে উঠে। ফাতিমা বেগম ছেলেকেই দেখে মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মাহিন কাঁপা পায়ে এগিয়ে এলো প্রিয়তমার দিকে। হৃধি তখন নিশ্চুপ হয়ে বসে। মাথা নুইয়ে আছে তার। মাহিন শব্দ করে হৃধির সামনে বসলো। মাহিন কাঁপা গলায় অস্ফুট স্বরে বললো,
–“স..সত্যি?”
হৃধি লজ্জায় যেন লাল হয়ে গেলো। হৃধিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে মাহিন আবারও আওড়ায়,
–“স..সত্যি আমি বাবা হবো হৃধি?”
হৃধি আলতো ইতিবাচক মাথা নাড়ায়। হৃধির সম্মতি পেতেই মাহিন ঝাপটে ধরলো হৃধিকে। হৃধি আবেশে চোখ বুজে ফেলে! মাহিনের চোখের কোণ জ্বলজ্বল করছে অত্যাধিক খুশিতে।
–“থ্যাঙ্কিউ হৃধি! থ্যাঙ্কিউ সো~ মাচ! আমার জীবনে আসার জন্যে, আমায় পরিপূর্ণ করার জন্যে। আমি আপনাকে বোঝাতে পারবো না আপনি আমায় কতটা খুশি করেছেন। আপনি আমায় বাবা হওয়ার স্বাদ দিবেন হৃধি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখো শুকুরিয়া!”
———————-
–“এইযে শুনছেন?”
–“হুম, বলো!”
–“বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে!”
মাহিন ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে, “তো?”
–“আমি ভিঁজবো!”
হৃধিকে বেনারসিতে দেখে মাহিন চমকে উঠলো। দু’দিন আগেই এটা কিনে দিয়েছিলো সে। ভেবেছিলো হৃধিকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু হৃধি পেয়ে গেলো এটা? কিন্তু কোথায়?
–“শুনেননি আমার কথা? আমি বৃষ্টিতে ভিঁজবো! আপনিও ভিঁজবেন!”
–“মানে কী? রাত বাজে বারোটা। এই মাঝরাতে কোন মানুষ বৃষ্টিতে ভিঁজতে যায়? এছাড়া তোমার আর আমার বেবির ঠান্ডা লাগবে তো!”
হৃধির হাসি-খুশি মুখটা ঘুচে গেলো। পেটে হাত রেখে অভিযোগের সুরে বলে,
–“দেখেছিস তোর বাবা কত পচা। ভিঁজলে তার গানে যে সমস্যা হবে সেটা না বলে আমাদের মা-বেবির উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। তুই আর আমি মিলে তিনদিন কথা বলবো না, তোর বাবার সাথে। ঠিকাছে?”
মাহিন অসহায় চাহনি দিয়ে তাকালো হৃধির দিকে। কিছুদিন পর বাচ্চা জম্ম দিবে নাকি হৃধি জম্ম হবে সেটা ভেবেই কনফিউজড মাহিন। মেয়েটা এত বাচ্চামী করে কেন সেটাই মাহিন বুঝে না। অগত্যা, হৃধির জেদের কাছে হার মেনে বেরিয়ে গেলো। সিঁড়ির কাছে আসতেই হৃধি থেমে যায় এবং বলে ওঠে,
–“ওই রাতের মতো কোলে করে নিয়ে যাবেন আমাকে। সিঁড়ি দিয়ে উঠলে আমি আর বাবু কষ্ট পাবো তো!”
মাহিন হাসলো। নিঃশব্দে হেসে হৃধিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে ছাদে চলে গেলো। দু’জন প্রাণভরে ভিঁজলো। মাহিন হৃধিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“হৃধি, আপনি এবং আমাদের বাবু আমার জন্যে অমূল্য উপহার। আপনিতে-ই আমি মাহিনের ধ্বংস, আপনিতে-ই আমি মাহিনের নতুন করে জম্ম। ভালোবাসি হৃধি। ভালোবাসি আমার জীবনের রঙিন দূতকে। এইযে আমার বাবু, আপনাকেও আপনার মায়ের মতোই ভালোবাসি। দ্রুত আপনার উজ্জ্বল মুখখানা দেখতে চাই। আর হ্যাঁ! আপনার আম্মু কিন্তু মোটেও চঞ্চল নয়, খুবই ভদ্র। আপনাকেও কিন্তু আপনার মায়ের স্বভাব পেতে হবে। আপনি আমার স্বভাবের হলেও কোনো অভিযোগ নেই। শুধু দ্রুত কোলে চলে আসুন!”
হৃধি হাসলো। মাহিনের বলা বচনে। হৃধি বৃষ্টির পানে তাকিয়ে আপনমনে বিড়বিড়ায়,
–“শুনেছি বৃষ্টির সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাহলে আমি দোয়া করছি আমার পরিবারটা এমন-ই হাসি-খুশি, সুখের থাকে। আমার বাবুটা যেন কোনো কষ্ট ব্যতীত-ই পৃথিবীতে আসে!”
মাহিন ফিসফিস করে বললো, “আমিন!”
কেটে যায় কিছুক্ষণ। হৃধি মাহিনের কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
–“ভালোবাসি আপনাকে, মাহিন!”
~~সমাপ্ত!!!