আধারে_তুমি,১৮,১৯

0
231

#আধারে_তুমি,১৮,১৯
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৮

শাহানাজ বেগম, নিলা শব্দ করে হেসে দিলো। শান গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। সবাই গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। কথা বলতে বলতে একসময় সোহার শানের দিকে চোখ পড়লো। এতোক্ষণে শানকে একবারও খেয়াল করেনি সোহা। সোহার সেদিনের কথা মনে পরে যায়। শানের স্পর্শের কথা এখনও ভুলতে পারেনি। সোহা হঠাৎ তামিমের হাত ধরলো কিন্তু ভ্রু কুঁচকে হাত ছেড়ে দিলো। আড়চোখে শানের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগে
” কোথায় ! তামিমকে ছুঁলে তো সেইদিনের মতো লাগলো না। তাহলে উনি হাত ছোঁয়ার পর সেদিন অদ্ভুত ফিলিংস কেনো হচ্ছিলো ?”
নিলা সোহাকে অন্যমনস্ক দেখে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে
” কি গো কোথায় হারিয়ে গেলে ?” সোহার হুশ আসতেই আলতো হেসে বলে
” তোমরা আমার সাথে থাকলে আমি আবার কোথায় হারিয়ে যাবো ?” ইতি সোহাকে ধাক্কা দিয়ে বলে
” কে কখন কোথায় হারিয়ে যায় বলা তো আর যায় না।” সোহা ভেংচি দিয়ে বললো
” এসব কথা তোর জন্যই খাটে আমার জন্য না।”
নিলা হাসতে হাসতে বলে উঠে
” যখন যার সময় হবে সেই হারিয়ে যাবে। তখন আর কেউ তাকে হাজার খুঁজলেও খুঁজে পাবে না। তাই সময় থাকতেই প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে নিতে হয়। ” সবাই কথাটা শুনে হেসে উড়িয়ে দিলেও শান পারলো না। কথাটা শুনে শানের টনক নড়ে উঠে। শাহানাজ বেগম চুপ করে বসে রয়েছে। বাচ্চা মেয়েদের সাথে এসব নিয়ে হাসাহাসি করলে দেখতে নিশ্চই বেমানান লাগবে ! তাই চুপ করেই ছিলো। এবার মুখ ফুটে বললো
” সোহা টেস্ট কবে দিচ্ছিস ?”
কথাটা শ্রবণ হতেই সোহা মুখ কালো করে নিলো। চোখ মুখ শুকিয়ে বলে
” আর টেস্ট ! কয়েকদিন পরেই তো টেস্ট দিতে হবে সব। প্রিপারেশন নিলেও কি ! ইশান ভাইয়াই তো বেড রেস্টে থাকতে বলেছে। টেস্ট দিতে পারবো কিনা সেটাই ভাবছি।” শাহানাজ বেগম আড়চোখে শানের দিকে তাকালো। শান চুপ করেই গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে। শাহানাজ বেমন সোহার গালে হাত রেখে বলে
” তুই প্রিপারেশন নে ভালো করে। ইশানের সাথে আমি কথা বলে দেখবো। আচ্ছা তোরা গল্প কর আমি বাইরে যাচ্ছি।” শাহানাজ বেগম উঠে বেরিয়ে গেলো। সিমি শাহানাজ বেগমের সাথে চলে গেলো। বাকিরা বসে গল্প করতে থাকে। আর শান বিরক্ত হতে থাকলো এখানে বসে বসে। সবার সামনে যে সোহার সাথে কথা বলবে বা সোহাকে দেখবে সেই উপায়ও নেই। শান হাজারো বিরক্তি উঠে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
অনেক্ষণ পর একে একে সবাই উপর থেকে নিচে নেমে আসে। শান বারবার তাকিয়েও সোহাকে দেখতে পেলো না। শাহানাজ বেগম শানের কাহিনী খেয়াল করলো। তিনি নিলাকে জিজ্ঞেস করলো
” সোহা কোথায় নিলা ? ” নিলা শাহানাজ বেগমের পাশে বসে বললো
” সোহা কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। ঘুম যেনো না ভাঙে তাই চলে আসলাম।” শাহানাজ বেগম বাহবা দিয়ে বলে
” খুব ভালো করেছো। কিন্তু নাইসা কোথায় ?”
তামিম বললো
” নাইসাকে দেখেছি আপুর রুমে পাশের রুমে চলে গিয়েছে।” ইতি উঠে কিছু বলার আগেই শান বলে উঠলো
” ভাবির রুমে গিয়েছে হয়তো আমি নিয়ে আসছি।” নিলা বললো গিয়ে নিয়ে আসতে। শান হাটতে হাটতে উপরে চলে গেলো। সোহার রুমে ঢুকে দেখে সোহা ব্ল্যাংকেট এর নিচে বা পাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। শান ধীর পায়ে সোহার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। সোহাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে একদম মায়াবিনীর মতো লাগছে। শানের ইচ্ছে করলো তার মায়াবিনীকে একটু ছুঁয়ে দিক কিন্তু নিজের ইচ্ছে দমিয়ে রাখে নিজের মাঝেই। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখলো সোহার ঘুমন্ত মুখশ্রীতে কিছু ছোট ছোট উড়ন্ত চুল এসে বসেছে। শান ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে নিলো। বেডে হাত রেখে কিছুটা ঝুকে আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় সরিয়ে দিলো চুল গুলো। সোহা ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলো। শান সাথে সাথে সোজা হয়ে যায়। চলে আসতে নিলেই হাতে টান পড়লো শানের। শান তাকিয়ে দেখে সোহা এক আঙুল দিয়ে শানের ঘড়িতে হাত পেঁচিয়ে রেখেছে। শান অবাক হলো এটা দেখে। শান খেয়ালই করেনি সোহা কখন ধরেছে। শান হাত ছাড়িয়ে নিতেই সোহা ঘুমের মাঝে বলে উঠে
” হুহ হুশ হুশ ! আমাকে চুড়ি করতে এসেছে, আম্মু ! হুহহ..” শান কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটা ঘুমের মাঝেই আবোলতাবোল বকছে আমার মা কেও ডাকছে। শান সোহার হাত ছাড়িয়ে নিলো মুচকি হেসে ঝুকে সোহার কপালে চুমু দিয়ে বললো
” চুড়ি করেছো তুমি ! আমার মন চুড়ি করে বসে আছো অথচ নিজেই জানো না।” শান মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।

শাহানাজ বেগম চোরের মতো নিচে নেমে এলো। নিলা শাহানাজ বেগমকে দেখে বলে
” মা কোথায় গিয়েছিলেন ? আন্টি খুঁজছিলো আপনাকে।”
শাহানাজ বেগম জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো। শানের কিছুক্ষণ পরই সবার চোখের আড়ালে উপরে গিয়েছিলো। সালমার সব ধারণা যে ক্ষণে ক্ষণে ঠিক সেটা বুঝে গেলো। মনে মনে খুশির বন্যা বইতে থাকে। এরমাঝে নিলা আবারও ডেকে উঠতেই শাহানাজ বেগম খুশি খুশিতে বললো
” হ্যা হ্যা যাচ্ছি। কতো বড় একটা খবর !” নিলা ভাবতে থাকে শাহানাজ বেগম কিসের খুশির কথা বলছে। কিন্তু অনেক ভেবে কোনো খুশির খবর আছে বলে মনে করতে পারলো না। ভাবা বন্ধ করে গল্পগুজবে মেতে উঠে। শান নাইসাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।
দুপুর হয়ে আসতেই বাড়ি ভর্তি হয়ে গেলো। ইমতিয়াজ রহমানও চলে আসে এরপর মুসফিক চৌধুরী, ইশান, সামির সবাই চলে আসলো। দুপুরের রমরমা পরিবেশ বাড়িতে। ইতি গিয়ে সোহাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নিচে নিয়ে আসে। সবাই সোহাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকে। দুপুরের খাবারও হাসিমজার মাঝে শেষ করলো। শান চুপচাপ থাকলেও এই পরিবেশটায় সবার সাথে মেতে উঠে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই সবার শলাপরামর্শ শুরু হয়। কথা হতে হতে শাহানাজ বেগম বললো
” ইশান! সোহার তো কয়েকদিন পর টেস্ট তখন কিভাবে কি হবে ?” সবাই বেশ চিন্তায় পরে যায়। ইশান কঠোর গলায় বললো
” আরে এই অবস্থায় বাইরে কোথাও যাওয়া ঠিক নয়।” মুসফিক চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বললো
” একদিনের জন্য জার্নি করলে বেশি কিছু হবে না।”
ইশান তার স্বর খাদে নামিয়ে নিয়ে বললো
” বাবা ! সোহার বেড রেস্ট চলছে সেখানে ছোট জার্নিও রিস্ক হতে পারে।” ইমতিয়াজ রহমান শান্ত ভাবেই বললো
” চিন্তা করবেন না আপনারা। টেস্ট দিতে হবে না এখন। আগে সুস্থ হোক তারপর সব দেখা যাবে।”
শাহানাজ বেগম আগ বাড়িয়ে বললো
” তা বললে কি করে হয় ভাইজান ! মেয়েটার ভবিষ্যৎ এর ব্যাপার। আরো অন্যান্য সুযোগ থাকলেও সোহা চাইছে যখন ওর পছন্দের ভার্সিটিতে পরতে তখন এটা চেষ্টা করা উচিত। আপনাদের আপত্তি না থাকলে শান নাহয় সোহাকে এডমিশন টেস্ট এর জন্য নিয়ে যাবে।”
মাঝপথে সামির বললো
” শান কেনো ? আমিও নিয়ে যেতে পারবো। বাবা আপনি নাহয় অনুমতি দিতেই দিন।”
শাহানাজ বেগম সামিরকে চোখ রাঙানি দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
” নাহ তোর বাবা বলেছে তাদের নাকি আবার কোনো ডিল এসেছে ! তুই তোর কাজ কর শানের সেদিন তো থানা বন্ধ থাকবে তাই শানই নাহয় যাবে।”
সামির বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। অফিসে নতুন ডিল কবে আসলো ? সামির মুসফিক চৌধুরীর পানে তাকালো। তিনি নিজেও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। দুজনের কেউই শাহানাজ বেগমের কাজকর্ম কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। ইশারায় ইশারায় কথা বলে ঠিক করলো বাড়িতে গিয়ে এটা নিয়ে কথা বলবে।
ইমতিয়াজ রহমান ভেবে বলে
” ঠিকাছে এতো করে যখন বলছেন তাহলে শানই নিয়ে যাবে।”
ভার্সিটির কথা রেখে এবার সবাই অন্য কথায় মন দিলো।

বাড়িতে ঢুকে একে একে সবাই সোফায় গা এলিয়ে বসে। সালমা নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমি ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতাছি।” নিলাও সালমার সাথে চলে গেলো। শান ঘাড় বাঁকাত বাঁকাতে উপরে চলে গেলো। সামির শাহানাজ বেগমকে বললো
” মা আমাদের অফিসে নতুন ডিল এসেছে কবে ? আমরাই তো জানি না।” ইশান ভ্রু কুঁচকে বলে
” ডিল না আসলে কি মা না জেনেই বলেছে ?”
সামিরকে বলতে না দিয়ে মুসফিক চৌধুরী বললো
” সেটাই তোর মাকে জিজ্ঞেস কর। আমাদের অফিসে খবর আমরাই জানি না আর উনি জেনে গেলো ! দুইদিন আগেই তো একটা ডিল পেলাম এখন আবার কোন ডিলের কাজ ?”
শাহানাজ বেগম আমতা আমতা করে বলে
” এমনি বলেছি। যাই হোক ডিল না আসলেও এসে পরবে চিন্তা করো না তো কেউ ! আর আমার ডিল আমাকে বুঝতে দাও।”
বাবা, ছেলে তিনজনই সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকায়। শাহানাজ বেগম ঢোক গিলে নাইসাকে কোলে তুলে নিজের রুমে চলে গেলো।

চলবে………..

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৯

বাবা, ছেলে তিনজনই সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকায়। শাহানাজ বেগম ঢোক গিলে নাইসাকে কোলে তুলে নিজের রুমে চলে গেলো।
কয়েকদিন দেখতে দেখতেই কেটে গেলো।
আজ সোহা আর ইতি এডমিশন টেস্ট দিতে যাচ্ছে। ইতি তার দরকারি জিনিসপত্র আনতে নিজের বাড়িতে গিয়েছে। ইতি সেখানে গিয়েই দেখা করবে বলেছে।
সোহা কিছুটা সুস্থ। সুস্থ বলতে গেলে একা একা মোটামুটি হাটাচলা করতে পারে। আগে ব্যাথায় সেটা করাও কিছুটা অসম্ভব ছিলো। শান যখন তখন চলে আসবে তাই ধীরেধীরে তৈরি হয়ে নিচ্ছে সোহা। সিমি হেল্প করছে তাকে।
এদিকে শান ঘুম থেকে উঠে হন্তদন্ত করে কোনোরকমে খেয়ে তৈরি হয়ে নিয়েছে। আজ ছুটির দিন তার তাই কাল রাতে থানা থেকে দেড়ি করেই ফিরেছে। প্রত্যেক সপ্তাহেই এমন হয় কিন্তু আজ ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গিয়েছে। তারও কারণ রয়েছে। কারণটা হলো সোহার সাথে থাকতে পারবে তাই খুব খুশি ছিলো। খুশির জন্য রাতে ভালো ঘুম হয়নি। ভোরের দিকেই চোখ লেগে এসেছিলো তাই দেড়ি হয়ে গিয়েছে।
শান পরিপাটি ভাবে তৈরি হয়ে নিচে নামলো। শাহানাজ বেগম ছেলের জন্যই বসে বসে অপেক্ষা করছিলো। শানকে নামতে দেখে কাছে এগিয়ে গেলো। বাহুতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
” কেয়ারফুল ভাবে ড্রাইভ করে সোহাকে ভালো করে নিয়ে যাবি। আর হ্যা ! মেয়েটার উপর শুধু শুধু রাগ দেখাবি না একদম। বুঝিয়ে কথা বলবি আর না শুনলে একটু বকা দিস।” শান আলতো হেসে বলে
” আমি কি বাচ্চা মা ! আমি জানি কখন কি করতে হয়। আমি ঠিক ভাবেই নিয়ে যাবো আর নিয়ে আসবো তুমি চিন্তা করো না।”
শাহানাজ বেগম হেসে বলে
” আমার ছেলেদের উপর আমার ভরসা আছে। মেয়েটা এখনও অসুস্থ চিন্তা তো হবেই। ঠিকাছে বেরিয়ে পর এখনই নাহলে দেড়ি হয়ে যাবে।”
শান মাথা নেড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে শাহানাজ বেগম শানের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। শান মুচকি হেসে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে বেরিয়ে গেলো। শাহানাজ বেগম প্রশান্তির হাসি দিলো। রোজকার দিন থেকে শানকে অনেক খুশি খুশি লাগছে আজকে। ছেলেকে খুশি দেখে মনটা শান্তি লাগছে। সোহাকে পেলে হয়তো আরো বেশি খুশি হবে। গম্ভীর রূপটা বদলে যাবে শানের। শাহানাজ বেগমের ভাবনার মাঝে সালমা এসে হাজির হলো। সালমা বললো
” খালাম্মা ভাই আর সোহা আপার বিয়ের কথা বলে কইবেন ?” শাহানাজ বেগম চোখ বড়বড় করে সালমার দিকে তাকালো। চোখ রাঙিয়ে বলে
” তোকে বলেছি না এসব কথা আমি না বলা পর্যন্ত তুলবি না ?”
” কেনো মা ভুল কি বললো ? কতোদিন আর চেপে থাকবেন কথাটা ? এবার তো বলা উচিত।”
শাহানাজ বেগম আর সালমা চোর ধরা পড়ার মতো পেছনে ঘুরে তাকালো। উক্ত কথাটি নিলারই বলা কথা। নিলা এগিয়ে এসে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি তো কয়েকদিন ধরেই লক্ষ করছি আপনাদের। এখন বুঝতে পারলাম আসল কাহিনী।” শাহানাজ বেগম কোণা চোখে সালমার দিকে তাকালো। নিলা অভিমানী কন্ঠে বললো
” মা আমাকেও কি বলা যায়নি? আমি এতোটা পর হয়ে গেলাম ? আমি তো সোহাকে নিজের বোনের চোখে দেখি। আমাকে বললে কি ক্ষতি হতো ?” শাহানাজ বেগম মুখ ছোট করে বললো
” আসলে আমি চেয়েছিলাম সোহার পরীক্ষার পরই সবাইকে জানাবো তারপর সব ঠিক করবো।” নিলা হেসে বলে
” আরে মা মন খারাপ করছেন কেনো ? আমি তো এমনই বললাম। যাই হোক যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে। সোহা আসলে আরো ভালো হবে।” শাহানাজ বেগম মুচকি হাসলো।

শান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছুক্ষণ হবে। বাড়ির ভেতর যেতে বলছিলো শান কিছুক্ষণ বসে এসে পরেছে। শানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সোহা আসলো। সিমি নিয়ে আসছে তাকে। শান এগিয়ে গিয়ে সিমির হাত থেকে সোহার ফাইল নিলো। সিমি সোহাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। সিমি শানের সাথে কথা বলতে থাকে। সোহা শানকে পা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে নিলো। কালো জিন্স, হোয়াইট-ব্ল্যাক কালার মিক্সড সু, সাদা শার্ট, অগোছালো চুল, শার্টের সামনের বোতাম দুটো খোলা আর সানগ্লাস ঝোলানো। বরাবরের মতোই অসাধারণ লাগছে তবে আজকে পুলিশ পুলিশ ভাবটা নেই। সোহা মিটমিট করে হাসলো। শান তার কথা শেষ করে এসে গাড়িতে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে সোহার মিটমিটিয়ে হাসি শানের চোখে পড়লো। কিছু দূড় যেতেই জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে ম্যাম ? হাসছেন কেনো এতো ?” সোহা এবার জোড়েই খিলখিল করে হেসে দিলো। শান ভ্রু কুঁচকে নিলো। আজ এতো হাসছে কেনো মেয়েটা ? উক্ত কথাটির ভাবনার মাঝেই সোহা বলে উঠলো
” আজকে আপনাকে দেখতে পুলিশ পুলিশ লাগছে না তাই মজা লাগছে আমার।” শান নিঃশব্দে হেসে বলে
” কেনো আজকে আমাকে কেমন লাগছে ?” প্রশ্ন শুনে সোহার হাসি ধীরে ধীরে কমে আসলো। উপরের ওষ্ঠ ধারা নিজের ঠোঁট চেপে ধরে বললো
” বলবো কেনো ?” শান বাকা হেসে বলে
” তারমানে তো খুব সুন্দর লাগছে আমাকে।” সোহা চোখ ছোট ছোট করে বললো
” এটা কে বললো আপনাকে ?” শান ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে বলে
” যার বলার তার চাহনিই বলে দিয়েছে সব। আলাদা করে বলার কি আছে ?” সোহা অবুঝ গলায় বললো
” কার বলার কথা ?” শান ড্রাইভ করতে করতে বললো
” সেটা আপনাকে জানতে হবে না মিস। তবে আমাকে এটা বলো ! এক্সাম দিতে যাচ্ছো অথচ চোখে মুখে টেনশনের ছাপও নেই কেনো বলো তো ?” সোহা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে হেসে বলে
” আমি কখনই এক্সাম দিতে যাওয়ার সময় টেনশন করি না। টেনশন করলে সব ভুলে যায় তাই চিল মুডে থাকতে হয় এক্সাম টাইমে। পরে তো এসেছিই টেনশন করলে তো আর কাজ হবে না, উল্টো প্রবলেম হবে। টেনশনে ঠিক কাজও উলটপালট হয়ে যায়।” শান অবাক হয়ে বলে
” বাহহ ! এই ব্যাপারে দেখছি ভালোই বোঝ সব কিছু !”
সোহা রেগে বললো
” আপনি কি বলতে চান! আমি অন্য কিছু বুঝি না ?” শান ভ্রু উঁচিয়ে বললো
” সেটা কখন বললাম আমি ? বলতে চাইছি আমার ধারণা ছিলো এক্সাম টাইমে মিস. বাদর টেনশনেই হার্ট এট্যাক করে বসে থাকবে কিন্তু আমার ধারণার পুরোই উল্টো রেজাল্ট বের হলো !” সোহা ভেংচি কাটলো। শান গান চালিয়ে দিলো। পুরো রাস্তায় আর দুজনের মাঝে কথা হলো না। উক্ত জায়গায় পৌঁছোলে শান নিজেই সোহাকে সাবধানে তার সিট খুঁজে বের করে বসিয়ে দিয়ে আসলো। ইতিকেও খুঁজে পেয়ে গেলো। শান সোহার দায়িত্ব ইতির কাধে দিয়ে দুজনকে শুভকামনা জানিয়ে বেরিয়ে আসে।
ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলো। সামনেই কফিশপ রয়েছে যেটাকে পেরিয়ে এসেছিলো তার সামনেই গাড়ি থামালো। ভেতরে ঢুকে কফি অর্ডার করে বসে থাকে।
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা কেটে যায়। সোহাদের পরীক্ষাও হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে ভেবে শান বেরিয়ে গেলো।
এদিকে সোহা আর ইতি পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়ে আসে। দুজনই বেরিয়ে এসে পরেছে। কিন্তু সেখানেই ঘটলো বিপত্তিকর ঘটনা। দুজনের হাটার মাঝেই একটা মেয়ে দৌঁড়ে পাশ কাটিয়ে গেলো আর যাওয়ার পথেই সোহার ধাক্কা লাগলো মেয়েটার সঙ্গে। সোহা টান সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়। আর সাথে সাথে ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠে। ইতি সোহাকে উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। আশপাশ থেকে দুই একটা ছেলেমেয়েও এগিয়ে আসে সোহাকে দেখে। শান দূড় থেকেই তা দেখে দৌঁড়ে সোহার কাছে আসলো। শান সোহার সামনে হাটু গেড়ে বসে অস্থির হয়ে বললো
” কি হয়েছে সোহা ? বেশি ব্যাথা পেয়েছো ?” সোহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। শানের প্রশ্নে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। শান কিছু না ভেবেই কোলে তুলে সোহাকে। সোহা শানের শার্টের কলার চেপে ধরে শক্ত করে আর ব্যাথায় ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। শান সোহাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। শান সোহার গালে হাত রেখে অস্থির গলায় বলে
” সোহা ! বেশি ব্যাথা করছে ?” সোহা কাঁদতে কাঁদতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আমার অনেক ব্যাথা করছে।” ইতি আঁতকে বলে উঠে
” ভাইয়া ? সোহার ব্যান্ডেজ রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে।” শান ঢোক গিলে ঠোঁট কামড়ে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসে। গাড়ি ঘুরিয়ে ইশানের হসপিটালের দিকে ঘুরালো। স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে কিছুক্ষণের মাঝে সেখানে পৌঁছোল। শান সোজা emergency কেবিনে নিয়ে গেলো। নার্স তা দেখেই ছুটে বেরিয়ে গেলো। সোহা কাতরাতে থাকে ব্যাথায়। শানের মনে হচ্ছে এখনই কলিজাটা হাতে চলে আসবে। কিছুক্ষণের মধ্যে ইশান দৌঁড়ে আসলো। সোহার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে বলে
” এসব কিভাবে হলো ?” শান অস্থির গলায় বলে
” ভাইয়া সেসব পরে জানবে আগে সোহাকে দেখো।” ইশান কথা না বাড়িয়ে সোহার ট্রিটমেন্ট করতে থাকে। স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে আসলেও কম সময় লাগেনি এখানে আসতে। ইশান তার কাজ শেষ করে গম্ভীর গলায় বললো
” এবার বলো এসব কিভাবে হয়েছে। তোমরা দুটো মানুষ থাকতেও এমন কি করে হয় ?” ইশানের ধমক শুনে দুজন মাথা নিচু করে নিয়েছে। ইতি মাথা নিচু করে সব বললো। সব শুনে ইশান শান্ত হলো। শান চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” ভাইয়া বেশি কিছু হয়নি তো ?” ইশান সোহার দিকে একবার তাকিয়ে বলে
” ব্লিডিং হয়েছে তাহলে কিভাবে ভাবছো বেশি কিছু হয়নি ? যাই হয়েছে এখন ঠিকাছে। ব্যাথা করবে এখন তাই ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি এখন আর ঘুম থেকে উঠবে না।” শান ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ইতি চলো তো আমার সাথে !” ইশান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কোথায় যাবি এখন ?” শান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” যার জন্য সোহা আবার ব্যাথা পেয়েছে তার সাথে একটু বোঝাপড়া করে আসবো।” ইশান শানকে আটকাতে চাইলেও শান কিছু না শুনেই বেরিয়ে গেলো। ইতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশান নিশ্বাস ফেলে বলে
” তুমিও যাও নাহলে শান পুরো ক্যাম্পাস মাথায় উঠিয়ে তারপর তাকে খুঁজে বের করে মারবে।”
ইতি ঢোক গিলে ছুটে গেলো।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here