সৎ_মা লেখা: #মাহাবুবা_মিতু পর্ব: ৩১

0
285

#সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৩১

এরপর টুকটুক করে চলছে আমাদের ব্যবসা। এরমধ্যে একদিন রাতে বাড়িতে অনেক হৈচৈ হলো। নিচে গিয়ে জানতে পারলাম নাঈফা আর সীমান্তর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। নাঈফার বাবা মা এসেছে মার কাছে। ঘটনা শুনে আমাদের পায়ের মাটি সরে যাওয়ার অবস্থা। সীমান্ত নাকি আবার বিয়ে করেছে। তাই নাঈফার বাবা মা এসেছে মাকে জানাতে। মা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন- এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। আপনারা যা ভালো বুঝেন তা করেন।

তারা নাঈফাকে নিয়ে চলে যান। সীমান্ত তখনও বুঝতে পারে নি কি বিপদ আসছে সামনে। পরদিন সকালে পুলিশ এসে সীমান্তকে ধরে নিয়ে যায়। নাঈফারা ওর নামে মামলা করেছে নারী নির্যাতন আইনে। বিপদের পর বিপদ,তারপরে আবার বিপদ, কেমন যেন অনুভূতিহীন লাগছিলো।

যত যাই হোক ভাইয়ের বিপদে তো দাঁড়াতে হয়, কিন্তু মা আমাকে বললো ওর পাশে তুমি অবশ্যই দাঁড়াবে তুমি ছাড়া ওর কেও নেই পাশে দাঁড়ানোর কিন্তু যাক কিছুদিন, একটু বুঝুক খারাপ কাজের ফল যে খারাপই হয়। আমি এমনিতে গিয়ে দেখা করে আসবো। তুমি ওর সামনে যাবে না।

আমি অবাক হয়ে ভাবি এই মানুষটা ছেলের বিপদে মাথা কিভাবে এত ঠান্ডা রাখেন। শুধু এই বিপদ না সকল বিপদেই তিনি সব সময় শান্ত থাকেন।

এরপর আমি আমাদের পরের শীপমেন্ট সময় মতোই দিলাম। ফাঁকে ফাঁকে উকিলের কাজ। সব কাজ করছি ঠিকই কিন্তু আমি ওর সামনে যাই না। এমন সময় অনেক টাকাপয়সার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আমি নাঈফার সাথে কথা বলে বুঝলাম- ও চায় সংসারটা টিকুক, ভালোবাসার বিয়ে, কিন্তু ওর বাবা মা রাগের মাথায় এই মামলাটা করেছেন।

দিন পনের ঝুটঝামেলার পর সীমান্তর বেইল হলো ওদের মধ্যে মিটমাট করে দেওয়া হলো, সেদিন আমি প্রথম ওর সামনে গিয়েছিলাম, শুকিয়ে কেমন হয়ে গেছে শরীর।
এরপর ওর ২য় বিয়ের ঝামেলাও মিটমাট করা হলো টাকা দিয়ে। এই কাজটা নাঈফার পরিবারই করেছেন।

এরপর আবার যে যার মতো, তবে ইদানীং মা অনেক চুপচাপ থাকেন। আমি কারন বোঝার চেষ্টা করি কিন্তু জিজ্ঞেস করার না পাই সাহস না পাই সময়, এত ব্যাস্ত থাকি। মাঝে মাঝে আবার ভাবি আমার এত স্ট্রং মেন্টালেটির মাকে আমি কি বোঝাবো। তিনিই তো কত মানুষকে বোঝান।

কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। মাঝে মাঝে দশজনকে বুঝ
দেয়া মানুষগুলোরও নিজের সাপোর্টের দরকার হয়। তাদেরও মন ভাঙে, তারাও ডুবে যায় বিষদের সাগরে। বড়ই দুঃখের বিষয়, কাছে বসেও আমরা আজকাল পাশের মানুষটির মনের খবরই রাখি না। আমার পাশেই গভীর বিষাদে ডুবে থাকা মাকে আমি বুঝতেই পারি নি। তারও কেও একজনকে দরকার মন খুলে বলবার জন্য।

মার জন্ম বেড়ে ওঠা নিন্মবিত্ত এক পরিবারে, বয়সের রঙে নিজেকে যখন রাঙানোর সময় ঠিক তখনই সব রঙ তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তার নিয়তি। বাবাকে বিয়ে করে এসেছিলেন আমাদের পরিবারে। এমন বয়সি একটা লোককে বিয়ে করে হুট করেই এক তরুণী মা আমার হয়ে গেলেন পাক্কা গৃহিণী। দেখতে সুন্দর লাগবে এমন কিছুই তাকে পরতে দেখতাম না। তিনি সব সময় এমন জিনিস পরতেন, বা ব্যাবহার করতেন যাতে তাকে একটু বয়সী দেখায়। নাকে বড় নাকফুল, কানে বড় দুল, আর হাতে চুড়ি, শাড়ি পরতেন প্যাচিয়ে,
কারন…

কারন হয়তো বাবার সাথে বয়সের পার্থক্যটা যাতে কম মনে হয় সমাজের চোখে। যে অতটাও ছোট নই আমি….
এমন একটা কিছু, বড় সাজার ব্যার্থ চেষ্টা। কিন্তু একটু সময় নিয়ে যদি কেও তখন তার দিকে তাকাতো তাহলে ঐ প্যাচ করে পরা শাড়ি, বড় দুল, হাতের চুড়ির মধ্যে খুঁজে পেতো কোমল এক মেয়েকে।

তার উপর কথার তীর দিয়ে নিয়ম করেই বিদ্ধ করতেন আমার ফুফু আর দাদীরা। ছোট ঘরের মেয়ে, জাদু টোনা করে বাবার গলায় ঝুলেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু কেও জানে না যে তিনি নিজেই এমন একজন লোক খুঁজেছেন যিনি জাদু করে তাকে এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতো পারবেন….

আর যাকে ঘিরে তার পৃথিবী তিনিই প্রতি রাতে বাড়ি ফিরতেন বেঘোর হয়ে। তারপর, তারপর যে কি হতো তা আমরা কেওই জানতাম না। তবে প্রায়ই দেখতাম আমার মার টুকটুকে ফর্সা হাতে ছোপ ছোপ পোড়া। জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরলে যেমন হয় তেমন। কখনোবা দেখতাম চোখর নিচে কালো দাগ।
অবুঝ আমি জিজ্ঞেস করলে কিছু একটা বলে বুঝিয়ে দিতেন। ছোট্ট বয়সে না বুঝলেও বড় হয়ে ঠিকই বুঝেছি এসবের উৎপত্তি কোত্থেকে…

চলবে…

previous :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=924708027990389&id=659404701187391
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/926104677850724/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here