সৎ_মা লেখা: #মাহাবুবা_মিতু পর্ব: ৩৪

0
247

#সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৩৪

এক রাতে আমি পানি আনতে গিয়ে দেখি মায়ের ঘরে বাতি জ্বালানো। আমি উঁকি দিয়ে দেখি মা জায়নামাজে বসে কাঁদছেন। ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটা।

আমার কেন জানি না কষ্টে বুক ছেঁয়ে গেলো। মায়ের চোখের পানি হয়তো কোন সন্তানেরই সহ্য হওয়ার কথা না। আমি সে রাত দুই হাতে হাতরে পার করলাম। কখন সকাল হবে কখন আমি মাকে জিজ্ঞেস করবো তার কেন এতো দুঃখ। যদিও আমি কিছুটা জানি তার দুঃখের কারন। পরের ছেলেকে মানুষ করেছেন আর নিজের জন খোঁজ ও নেন না।

আমি যতই তার সব প্রয়োজন পূরণ করি না কেন নিজের সন্তানের কাছে ভালোবাসা প্রত্যাশা করা অন্যায় কিছু না। সেরাতে ঠিক করলাম নাঈফকে ডেকে বলবো সীমান্তকে ও যেন একটু বোঝায়, মার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। আবার ভাবলাম না…
এ কথার আবার কোন মানে দাঁড় করায় ওরা…
এমনিই সময় খারাপ আমাদের, এক কথা বললে আরেক মানে দাঁড় করিয়ে রাখবে। আমি কথার এতো মারপ্যাচ বুঝি না। শেষে দেখা যাবে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

ছোট্টবেলায় একবার স্কুলে থাকতে একবন্ধু আমার খাতা নিয়ে স্যার কে দেখালো, আমি বসেই রইলাম কি হলো তা বোঝার জন্য, ততক্ষনে স্যার বেঞ্চের কাছে এসে দেখতে লাগলো কে কে লেখা দেখায় নি, আমি বেআক্কল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম৷ একবার যদি বলতাম যে স্যার ও আমার খাতা নিয়ে আপনাকে দেখিয়েছে৷ তাহলেই কিন্তু স্যার চেক করে দেখতে পারতেন খাতাটা যে সত্যিই আমার এবং শাস্তি পাওয়া থেকে বেঁচে যেতাম, কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারলাম না। কেমন যেন নিচের চোয়াল ভয়ে আটকে গিয়েছিল। তারপর….
তারপর যা হওয়ার তাই হলো…

এসব ভাবতেই আযান পরলো ফজরের। ফজরের নামাজ পরে একটু ঘুমালাম। সকালে অফিস না থাকার কারনে উঠলাম একটু দেড়িতে, মায়ের ঘরে গিয়ে দেখি তিনি মাথায় তেল দিচ্ছেন।

আমার মা মাথায় একমুহূর্ত তেল ছাড়া থাকতে পারেন না। তার সাইড ব্যাগে চশমার বক্স, ওষুধের পট, রুমাল আর নারিকেল তেলের ছোট একটা বোতল সবসময়ই থাকে।

ব্যাপারটা আমি জেনেছিলাম বিয়ের আগে সবাই মিলে যখন একবার খাগড়াছড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন। পয়তাল্লিশ মিনিট পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে আমি তার তেল খুঁজে তাকে এনে দিয়েছিলাম।

সে কথা মা আজও ছোটদের গল্প বলেন যে –
একবার বিদ্যাসাগর খবর পেলেন মা অসুস্থ। মাকে দেখতে যাবেন। বড়কর্তার কাছে ছুটি চাইলেন। আবেদন নাকচ হলে চাকরি ছেড়ে দিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। মায়ের চেয়ে চাকরি বড় কথা নয়।

আকাশে ঘন অন্ধকার। দামোদর নদীর তীরে পৌঁছে দেখলেন এই দুর্যোগের রাতে খেয়ানৌকা বন্ধ হয়ে গেছে। তখন সাঁতরে পার হলেন অন্ধকার উত্তাল দামোদর নদী।

আর আমার ছেলে ওই পাহাড়ি জঙ্গল এলাকায় ওতো রাতে মাথায় দেওয়ার তেল খুঁজে এনেছেন। ওর ভালোবাসা আমার কাছে বিদ্যাসাগরের ভালোবাসার চেয়ে কোন অংশে কম নয়…

নাশতা খাওয়ার সময় মাকে এক ফাঁকে জানতে চাইলাম
– মা বলেন তো -কি হয়েছে আপনার, …,
– তিনি বললেন “কি হয়েছে মানে…!
– কিছু হয়নি আপনার…?
– কই নাতো…
– আমার দিকে তাকিয়ে বলেন তো
মা সত্যিই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন আমি একদম ঠিক আছি।
– কাল আপনি নিচে ওদের বাড়িতে কেন গিয়েছিলেন…
মা একদম চুপ….

কিছু দিন আগে একবার কি এক ইস্যুতে সীমান্ত মার সাথে রাগারাগি করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করিনি…
কি, কেন, কিভাবে…
আমি না জানার ভাব ধরে বসে ছিলাম।

এরপর আমি বললাম মা আপনি কেন আপনার চারদিকে এমন দেয়াল ঘিরে রেখেছেন, আমি আপনার সন্তান, আমাকে বলবেন না…

কি হয়েছে আপনার…?
বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে নিরবতা ভেঙে বললেন-
– সীমান্ত একটা ঝামেলায় পরে আমার কাছে কিছু টাকা চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম টাকা নেই আমার কাছে, তখন ও আমাকে বলেছিলো গহনা গুলে বন্ধক রেখে হলেও টাকাটা যাতে আমি ওকে জোগাড় করে দিই, ও সপ্তাহ খানিক পরই ফেরত দিবে৷ আমি ওর বাসায় গিয়েছিলাম ওকে সামনাসামনি বলতে -যে গহনা গুলো অলরেডি বন্ধক রাখা। এ কথা শুনে ও…..

– ও…, এই কথা…?
আপনি আমাকে বললে আমি একটা ব্যাবস্থা করে দিতাম। তখন তুমি নিজেই টাকার খোঁজে ছিলে নতুন কাজটার জন্য, সেখানে আমি কিভাবে তোমাকে এ কথা বলি বলো…!
– মা আপনি এমন কেন…,
এত কেন বুঝেন আপনি… এত বোঝা ভালো না মা…
এই বেশী বোঝাই আপনার জন্য কাল হবে একদিন…

চলবে….

Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/926977714430087/
next: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=928476007613591&id=659404701187391

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here