সৎ_মা লেখা : #মাহাবুবা_মিতু পর্ব: ১৪

0
314

উপন্যাস : #সৎ_মা
লেখা : #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ১৪

রাতে খাওয়ার সময় আমি একদম স্বাভাবিক থেকেছি, কিছুটা সংকোচে কিছুটা লজ্জায়, মা কিভাবে ব্যাপারটা তুলে সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম আমি।

পুরো খাওয়ার সময়টাতে মা ও একদম স্বাভাবিক ছিলেন। খাওয়া শেষে যখন বেসিনের কাছে গেলাম হাত ধোয়ার জন্য, মা আমাকে বললো, একটু ঘরে এসো তো, কথা আছে তোমার সাথে….

এ কথা শুনে আমার হৃদপিণ্ড এমনভাবে লাফানো শুরু করলো মনে হচ্ছিলো বেরই হয়ে যাবে ভেতর হতে। আমার ঘাম শুরু হলো, দু’তিন বারের মাতে লম্বা শ্বাস নিলাম, স্থির থাকার জন্য। কাজ হলো কি না বুঝলাম না।

আমি যখন মায়ের রুমে গেলাম মা তখন আলমারির কাপড় ভাঁজ করছে, গোছানো কাপড় গুলো বের করে আবার ভাঁজ করছে, এগুলো তিনি নিজেকে ব্যাস্ত দেখানোর জন্য যে করছেন তা আমি ঠিকই বুঝেছি, মনের অস্থিরতা লুকানোর চেষ্টা। আমার দিকে না তাকিয়ে তিনি কথা শুরু করলেন।

: তোমার বিয়ে ঠিক করে এসেছি আজকে, আমি আর তোমার মামী গিয়েছিলাম। তোমার দাদীর এখন তখন অবস্থা। যত দ্রুত তোমার বিয়েটা দিতে পারি ততোই ভালো, তা না হলে উনি মরে গিয়েও শান্তি পাবেন না।

আমি চুপ করে তাকে দেখছিলাম, সত্যি বলতে পড়ার চেষ্টা করছিলাম তাকে, তিনি যা বলছেন তার চেহারাও কি তা বলছে কিনা। অনভিজ্ঞ আমি কিছুই বুঝলাম না, তবে একটু বুঝলাম মা আমার দিকে একবার ও তাকায় নি।

এরপর তিনি বললেন…
: জানতে চাইলে না মেয়ে কে…!
: ………
: আদিলের চাচাতো বোন প্রসূন…
আমি একটু অবাক হওয়ার চেষ্টা করলাম, জানিনা পেরেছিলাম কি না…
: প্রসূন…!
: হুম, তুমি মুখে যতই পছন্দ কর না বলো, আমি তোমার মনের খবর ঠিকই রাখি…
: কি খবর রাখেন আপনি…!
: কেও যদি কাওকে পছন্দ না করে,
ভালো না বাসে তাহলে তাকে সরি বলতে সূদুর রাজশাহীতে যায় না….
: রাজশাহী…!
: হুম, তুমি গত সপ্তহে ইন্ডিয়ে থেকে ফিরে রাজশাহী গিয়েছিলে…
: কে বলেছে আপনাকে এসব…!
বজলু…!
: বজলু বলতে যাবে কেন…
: তাহলে…!
মা আপনি কি আমার পেছনে লোক লাগিয়েছেন…!
: শোন এসব বুঝতে লোক লাগানো লাগে না, গোয়েন্দাও হতে হয় না। চোখ কান খোলা রাখলেই হয়।
: মানে…!

: তুমি যে আমার জন্য নীল রঙের সিল্কের শাড়ি এনেছো। সেটার ব্যাগ, বক্স তুমি ফেলে দিয়েছ ঠিকই, কিন্তু শাড়ির ভিতরে যে ট্যাগ ছিলো তা হয়তো তুমি জানো না, তাই খুলে ফেলোনি। ট্যাগে দোকানের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর সবই ছিলো। ঐ শাড়ির দোকানে আমি ফোন করেছিলাম, জানতে শাড়িটা কবে কেনা হয়েছিল তা জানতে। তাদের বললাম চেন্জিং ইস্যু তারা কোড নং চাইলো, আমি দিলাম, বললো এক সপ্তাহের মধ্যে চেন্জ করা যাবে, তখনই আমি বুঝলাম এটা তুমি রাজশাহী থেকে কিনেছ।

রাজশাহীতে তোমার ব্যাবাবসায়িক কোন কাজ নেই, কোন আত্মীয় ও থাকে না ওখানে, তুমি কেন যাবে সেখানে…!
তাই না…!
অংকটা সহজই…

মা এরপর আমার কাছে বসে বললেন-
: শোন আমি মা তো, তুমি মুখে না বললেও মনে কি চাও তা আমি বুঝি, শত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোমার দিকে চেয়ে আমি আজ ওখানে গিয়েছি, কেন জানো…

ভালোবাসা ছাড়া এ জীবণে তোমাকে কিছুই দিতে পারি নি, তুমি অনেক দিয়েছ আমাকে। ভালোবাসা ছাড়াও আরে অনেক কিছু, এই সংসারটা যখন বানের জলে ভাসতে লাগলো, তুমি এটাকে আগলে রেখেছো নিজে ডুবে গিয়ে। সেসব কথা আমি ভুলিনি। তবে আমি যা করেছিলাম আমার জায়গাতে অন্য কেও থাকলে তিনিও তাই করতেন…

যাক গে, এসব কথা বলে আমি তোমার সময় নষ্ট করতে চাই না, সময় খুব কম, বিয়ে-শাদিতে প্রচুর কাজ, তোমার বাবা আর আমি কালই দাওয়াতের লিস্ট তৈরী করবো, তুমি কার্ড পছন্দ করে তৈরী করতে দিয়ে এসো, এই নাও ওদের নামধাম আর ঠিকানা। তারিখ ওনারা কথা বলে কাল ফোনে আমাকে জানাবে। তারিখ নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই, আমি বলে এসেছি এ কথা, যত দ্রত হয় ততোই ভালো। আমার ভীষণ টায়ার্ড লাগছে, তুমি এখন যাও, আমি শুয়ে পরবো।

আমি তবুও বেশ কিছুক্ষণ বসেছিলাম মায়ের ঘরে। মাথাটা কাজ করছিলো না। কি বলবো, কি বলা উচিত এরকম পরিস্থিতিতে বুঝতে পারছিলাম না। এরপর কাগজটা নিয়ে চলে এলাম আমার ঘরে।

আমি আমার মায়ের কথা আর বুদ্ধি দেখে একেবারে তাজ্জব। তিনি আমাদের সবার কাছে অতি সাধারণ একজন। তবুও এমন টুকটাক বুদ্ধির পরিচয় তিনি বহুবার দিয়েছেন। তবে সেগুলো চোখে পরার মতো ছিলো না। যতটা আজ দেখলাম।

আমি লজ্জায় হেসে দিলাম। মা না জানি কি সব ভেবেছে আমার ব্যপারে। প্রসূনের সাথে বলা শেষ কথাটাও মাথায় ঘুরঘুর করছিলো- ” সবাই তোমার আর আমার ব্যাপারে যে মিথ্যা বলছে সেটাকে সত্য করতে চাই”

মেয়েটা নিশ্চয়ই আমাকে বেহায়া ভাবছে, তবুও ভিতরে কেমন যেন চাপা আনন্দ হচ্ছিল। অনুভূতিটা কেমন যেন। আমি ওর নম্বরটা সেভ করে রাখলাম। রাতটা পর করলাম এসব ভেবে ভেবেই…

পরদিন সকালে উঠেই বেরিয়ে গেলাম। মায়ের সামনে পরতে লজ্জা লাগছিলো তাই। মা ও হয়তো বুঝেছিলো, তাই আর ফোন করে রাগারাগি করেননি নাশতা না খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায়।

অফিসে গিয়ে আমি কল করলাম প্রসূনকে। ওর হাবভাব ও বোঝা দরকার। ফোনটা রিসিভ করলো একটা মেয়ে, গম্ভীর হয়ে বললো
: কে বলছেন…?
: প্রসূন আছে…!
: আপনি কে..
: তুমি কে…
: আমি আপুর ছোট বোন, আপনি কে…
: তোমার আপুকে ফোনটা দাও, ওকে দিলেই চিনবে আমি কে,

এরপর মেয়েটা দৌড়ে প্রসূনকে খুঁজতে গেলো, কেমন যেন হাসাহাসি শুনতে পেলাম, মেয়েটা বললো
– আপু একটা লোক তোমাকে চাচ্ছে… এই নাও ধরো,
ও হয়তো নম্বরটা দেখলো, ছোট বোনটাকে হয়তো বকা দিলো কিংবা থাপ্পড়, কেন ফোন রিসিভ করেছে তাই, তারপর কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো…

তখন আমার মনে হচ্ছিলো ও ফোন কাটেনি, আমার শরীর থেকে আলাদা করেছে হৃদপিণ্ডটাকে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো খুব। কেন এমন হচ্ছিল তা আমি জানি না। তবুও চাপা কষ্টগুলো শরীরে ছড়িয়ে পরছিলো খুব দ্রুত।

এরপর নিজেকে বকতে লাগলাম, কেন ফোন দিলাম আমি…
রাগে আমি নাম্বার মুছে ফেললাম ফোন থেকে।

এরিমধ্যে মা ফোন দিলো। বললো – যত কাজই থাকুক বারোটার মধ্যে মিরপুর থাকতে ৷ শাড়ি দেখতে যাবে আমাকে নিয়ে। আমি বললাম মা আমার অনেক কাজ আছে, আপনিই যান। তাছাড়া আমি এসব বুঝি না…
তবুও মা বললো বারোটার মধ্যে যেন অবশ্যই থাকি ওখানে। কি বিপদ, মিরপুর রোডে যেই জ্যাম এখন বের হলেও একটার আগে পৌছানো যাবে না। তাই আমি নাশতা খেয়েই বের হয়ে পরলাম মিরপুরের উদ্দেশ্যে। আর যাওয়া আগে নাম্বার মুছার কাজটা আনডু করে ফিরিয়ে নিলাম প্রসূনের ফোন নম্বরটা…..

চলবে….

Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/910886592705866/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/912488122545713/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here