উপন্যাস : #সৎ_মা,
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ১০
জুতা পায়ে দিয়ে আমি ঘর থেকে বের হয়ে ছাঁদের দড়জার সামনে গেলাম, দেখি একজন ঘুরে দাড়িয়ে গেইট খোলার চেষ্টা করছে।
আমি গিয়ে বললাম –
: চেষ্টা করে লাভ নাই, আমি বাইরে দিয়ে লক করে দিয়েছি ,
: বাইরে দিয়ে….!
শুধু এইটুকু বলেই থেমে বসে পরে দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রাখলেন, দুনিয়ার সব লজ্জা যেন ওর চোখ দুটিতেই।
এরপর আমি বললাম
: সমস্যা কি তোমার, এমন লুকোচুরি কেন করো,
: নো এন্সার
: তুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে…..
: এবারও নো এন্সার
: তুমি তো বোবা না, তাহলে কথা বলছো না কেন…
এবার সে তাকালো আমার দিকে। চোখদুটিতে তখন ধরা পরার ভয় ছিলো না, ছিলো লজ্জা….
: কথা না বললে ছাঁদের গেইট খুলবো না আমি,
এ কথায় মেয়েটি মাথা তুলো অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে, আমি তখন দেখছিলাম একজোড়া বিষাদ ভরা অসহায় চোখ। একজন মানুষের চোখ যে এত রকম হয়, আমি তখনি প্রথম খেয়াল করেছিলাম।
: কি বলবে না তো কথা…
আচ্ছা থাকো তাহলে ছাদে, বাসার সবাই যখন মাইক নিয়ে খুঁজতে বের হবে তখন বুঝবে,
বলে আমি উঠে দাড়িয়ে হেটে রেলিং এর কাছে গিয়ে বাউন্ডারির উপর হাত রেখে দাড়ালাম।
কিছুক্ষণ পর না তাকিয়েই বুঝলাম মেয়েটা আমার পিছনে দাড়ানো। আমি ঘুরতেই বললো,
: গেইটা খুলে দিন, আমি আর কখনো এমন করবো না…
: এটা তো সবেমাত্র একটার উত্তর, বাকী প্রশ্নের উত্তর..
: প্লিজ গেইটটা খুলে দিন, আমার ভয় হচ্ছে….
: ভয়..! ভয় কেন হচ্ছে…!
আমি কি বাঘ না ভাল্লুক
: গেইটা খুলে দিন,
আশাহত আমি কোন কথা না বলে রুমের দড়জা দিয়ে গিয়ে ছাদের গেইট খুলে দাঁড়ালাম,
মেয়েটা বের হয়ে নিচে নামতেই পাঁচতলার আন্টি পাপোশ ঝাড়ার জন্য দড়জা খুললেন, মহিলা কি বুঝলেন আল্লাই জানে ঐ মেয়েটাকে দেখে কেমন চোখে যেন তাকালেন। এরপর একবার আমাকে দেখে একবার ওকে দেখে। আমি রুমে চলে গেলাম। মেয়েটাও ওদের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।
এরপর ঐ মেয়েটাকে আমি দেখি নি আর। তবে গভীর রাতে হঠাৎ করেই আৎকে উঠতাম প্রায়ই, মনে হতো ও হয়তো আমাকে লুকিয়ে দেখছে, যদিও এত রাতে আসা ওর অসম্ভব,এতদিনের অভ্যস্থতাকে মিস করতাম।
মা ইদানীং বিয়ের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। এবার মনে হয় আর পার পাওয়া যাবে না। আমিও লক্ষ্মী ছেলের মতো মার আঁচল ধরে ধরে মেয়ে দেখতে যাই, আমি মাকে অনেকবার বলেছি, আমার যেতে হবে না। আপনারাই দেখেন, তবে মেয়ে লম্বা আর বুদ্ধিমতি হতে হবে, সৌন্দর্য কোন বিষয় না। মা আমার এ কথা শুনে আড় চোখে আমার দিকে তাকায়। তাই বাধ্য হয়ে যেতাম। এখন প্রায় রুটিনই হয়ে গেছে শুক্রবার মানে মেয়ে দেখার পালা। আমি কেমন যেন বিরক্ত হয়ে উঠছিলাম এসব থেকে।
এরি মধ্যে একদিন বিকেলে ছাঁদে ওর কাজিনকে দেখে কথা বললাম। হঠাৎ কথার এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার আপুর পড়াশোনার কি খবর, ছেলেটা বললো
: আপু তো চলে গেছে বাড়িতে,
: চলে গেছে…
: হুম
: কেন…
: একটা পঁচা কাজ করেছে তাই মা কঠিন শাস্তি দিয়েছে।
: কঠিন শাস্তি….!
: হ্যাঁ, মা আমাকে যেমন কঠিন শাস্তি দেয়, তেমন..
: কেমন কঠিন শাস্তি…
: আমি যখন কোন খারাপ কাজ করি তখন মা আমার সাথে কোন কথাই বলে না, বাবা আসলে তার কাছে বিচার দেয়, তখন বাবা আমাকে বকা দেয়… তেমনি..
: ও আচ্ছা
অজানা কারণে মনটা ভারী হয়ে গেলো। মনে হচ্ছিলো বুকের উপর ভারী কিছু আছরে পরেছে। কিন্তু….
রাতের বেলায় খেয়াল হলে আমি মেয়েটার নাম পর্যন্ত জানি না। পিচ্চি একটা মেয়ে, দাঁড়ালে আমার বুকের সমান হবে, তার উপর কথা বলাও হয়নি, তাহলে তার জন্য এমন অনুভবের কারন কি। প্রায়ই মনে হতো কেও আমাকে দেখছে। কাজের বাইরের সময় গুলোতে আমার কেমন যেন অস্থির লাগতে শুরু করলো।
এরপর বেশ কয়েকদিন পর ঐ মেয়েটার বড় কাজিনকে সিঁড়িতে দেখে ডাকলাম, ছেলেটা আমাকে কেমন যেন এড়িয়ে চলে গেলো। যেই ছেলে আমার গিটার বাজানোর এত ভক্ত তার এমন ব্যবহার হজম করতে কষ্ট হলো।
আমাদের ফ্ল্যাট ঠিক হওয়ায় আমি আমার তল্পিতল্পা সহ নেমে পরলাম। কেন যেন মনে হতে কিছু রেখে যাচ্ছি ছাদে। নিচে নামার পরও প্রায়ই রাতে ছাঁদে উঠতাম চাঁদ দেখতে।
এর কিছুদিন পর উড়োউড়ো কিছু কথা আমার কানে আসতে লাগলো, ব্যাপারগুলো হচ্ছে – আমি, ছাদ, মেয়ে মানুষ…
কথাগুলো শুনে আমার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার মতো অবস্থা। সুযোগ মতো আমি কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি…
তিনি আমতা আমতা করতে লাগলো…
আমি বললাম মামা ঝেড়ে কাশুন,
তারপর তিনি যা বললেন শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গলো।
চলবে…
previous :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=907199603074565&id=659404701187391
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/909459919515200/