সৎ মা,
লেখা: মাহাবুবা মিতু,
পর্ব: ১৯
বিয়ের বাকী আর সপ্তাহ খানিক, পুরো বাড়ি গমগম। আমি বংশের বড় ছেলে। সবাই সবার সেরা টুকু করার চেষ্টা করছে। ইভেন্ট প্ল্যানাররা বাড়ির ছাদ দেখে গেছে। ইভেন্ট প্ল্যানিংয়ের ভুত মায়ের মাথায় নিশ্চয়ই রাইসা ঢুকিয়ে দিয়েছে। একটা বিয়েতে দুইদিনের প্রোগ্রামের জন্য ইভেন্ট প্ল্যানারদের এতগুলো টাকা দিতে হবে তা আমি মানতেই পারছিলাম না।
মাকে আমি বললাম এসব না করার জন্য, মা বললেন তিন নাকি এডভান্সও করে দিয়েছেন। এখন এসব বলে লাভ নেই, আমি কথা আর বারালাম না। টাকার কষ্টে ভিতরটা পুড়তে লাগলো। মা মাঝে মাঝে বলেন আমি নাকি বাবার মতো স্বভাব পেয়েছি। আমি মনে করি পেলে ভালো, বেশ ভালো।
সব কি তাহলে লুটপাট করে খরচ করে ফেলবো নাকি, তাহলে কি ভালো হতো…
মা এসব নিয়ে বেশী মাতলেন না , চলে গেলেন।
এরমধ্যে টুকটাক কথা হয় প্রসূনের সাথে। মেয়েটা কম কথা বলে। কথাবার্তার উত্তর হুম, না, আচ্ছা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ওদের বাড়িতেও নাকি বিয়ের তোরজোর। সবাই ব্যাস্ত আমরা দুজন বাদে।
এরমধ্যে হঠাৎ আমার খেয়াল হলো বিয়ের আগে আরেক বার যাওয়া দরকার সীমান্তর বাসায়, একেবারে না আসুক অন্তত বিয়ের পর্যন্ত যেন এসে থাকে তা বলে আসতে।
ইদানিং প্রচুর কাজ অফিস বদল করার কারণে। একেবারেই সময় পাচ্ছিলাম না। এই বিয়ের এক পৃথিবী সমান কাজের মধ্যেই এসব বাড়তি ঝামেলা হওয়ার দরকার ছিলো৷ একেবারে ষোলকলা পূর্ণ ….! নিজেদের বাড়িতে থাকার কারনে বাসা বদলের প্যারার সাথে আমি একদমই পরিচিত নই। আমার অবস্থা একেবারে চিরে চ্যাপ্টা।
এরি মধ্যে সময় বের করে একদিন বিকেলে গিয়ে ওদের অনুরোধ করে আসলাম। ওরা বললো হলুদের দিন এসে পরবে। সেখান থেকে বের হতেই মা ফোন করে বললো এক্ষুনি আমি যেন বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের সামনে এসে তাকে কল দেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন…
কি হয়েছে, তিনি কোন উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দিলেন। এরপর দুইবার চেষ্টা করলাম, ফোনটা রিসিভ করলেন না তিনি। ভয়ে আমার রক্ত হিম হওয়ার অবস্থা। কোন বিপদ হলো না তো…
আমি দ্রুত বের হয়ে রওনা হলাম। আমার সাথে বাইক থাকায় আমি মিনিট সতেরোর মধ্যে পৌছে গেলাম অফিসার্স ক্লাবের সামনে।
পৌঁছে ফোন করার সাথে সাথে আমাদের গাড়িটা আমার সামনে দাড়ালো। মা গাড়ির দরজা খুলে বের হলেন।
এরপর আমি উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম
: মা আমি আপনাকে কয়েকবার ফোন করেছি আপনি রিসিভ ই করেন নি…
মা আমার উদ্বিগ্নতাকে এড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো-
: বাইক নিয়ে এসেছো
: হুম,
: শোন সামনের রোডে বায়ে মোড় নিলে তিন নং গলিতে যে কোয়াটার সেখানের ৫২/৩ নং বিল্ডিং এর ফ্ল্যাট ৩/বি তে তোমার মা থাকেন। আমি গাড়ি নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করবো তুমি কোয়াটারের ভিতরে একা যাবে।
: মা আপনারা কি মনে হয় না, আপনি একটু বাড়াবাড়ি করছেন…
: হুম, করছি…
আমি চাইনা আমার সন্তানের উপর কারো দীর্ঘশ্বাস পরুক। তুমি সেখানে যাবে তাকে জানাতে। তার দোয়া ও তোমার দরকার। এসব ব্যাপারে রাস্তায় দাড়িয়ে আমি ভাষণ দিতে চাই না। আমি যাচ্ছি, তুমি এসো….
বলেই মা হাতে কার্ড দিয়ে গাড়িতে বসে চলে গেলেন।
আমি বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে কার্ডটাকে দেখলাম। সেখানে লেখা ছিলো –
মিসেস লুৎফুন্নাহার….
পরিবার বর্গ
৫২/৩ বেইলি রোড
ফ্ল্যাট ৩বি
এই ঠিকানা মা কোথায় পেলেন তা ভেবেই আমার সারা শরীরে অদ্ভুত রকমের একটা ঝাঁকুনি লাগলো৷ তাকে কেমন যেন রহস্যময়ী মনে হতে লাগলো, তার দ্বারা সব সম্ভব। আর কোন কোন দিক এখনো আমি জানি না তা ভাবতে লাগলাম। আর কতো অবাক হওয়ার বাকী তাও…..
ঠোট বেঁকে একটা মৃদু হাসি আসলো।
কার্ডটা দেখে হঠাৎ ভেতরটা কষ্টে ছেয়ে গেলো, মা যদি আমাদের সাথে থাকতেন তাহলে কি এমনটা হতো, এইদিনে তারই তো হান্য হয়ে কার্ড বিলি করার কথা। আর ভাগ্যের কি পরিহাস….
আমার মা আমার সাথে কার্ড নিয়ে এমনটা না করলেও পারতেন। আমি এরপর আমার মায়ের কথা মতো সেই কোয়াটারে পৌছালাম। সেখানকার ঢুকবার পথেই দেখতে পেলাম আমাদের কালো গাড়িটা ঠিক রাস্তার অপজিটে দাঁড় করানো।
আমি নিচে গাড়ি রাখতেই এক লোক কেচি গেইটের ভিতর থেকে বেরিয়ে বললো
: এইহানে গাড়ি পার্কিং নিষেধ, ঐ যে দ্যাখেন সাইনবোর্ড।
: আমি এখনি চলে যাবো, মিনিট দশের মধ্যে।
: যাইবেন কোথায়
: ফ্ল্যাট ৩ বি তে…
: আপনার পরিচয়…
এ প্রশ্নের উত্তরে আমি যেন সাগরে পরলাম। কি উত্তর দিব এই দুই শব্দের প্রশ্নের …
দিশেহারা আমি মুখে হাসি দিয়ে বললাম
: আরে ভাই বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছি,
আমি উনাদের আত্মীয়, আমাকে উনি চিনেন না, চিনেন আমার বাবাকে।
: ও…নাম ফোন নম্বর এন্ট্রি কইরা যান,
নাম ফোন নম্বর এন্ট্রি করে বললাম
: গাড়ির দিকে খেয়াল রাখবেন মামা,
বলে তার পকেটে একশ টাকার একটা নোট পকেটে দিয়ে আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম….
মনে মনে বলছিলাম যার জন্য যাচ্ছি সে যেন বাসায় না থাকেন..। সিঁড়ি বেয়ে আমি যখন ফ্ল্যাট ৩ বি এর সামনে আমার কেমন যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। কলিং বেলে চাপ দেওয়াকে মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর একটি…যেই আমার কাজ ছিলো অন্যের বাড়ির কলিংবেল চেপে দৌড় দেয়া।
অনেক সাহস সঞ্চয় করে শেষমেষ আমি বেলে চাপ দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর…..
চলবে…
previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/915402522254273/
Next :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=916957155432143&id=659404701187391