#সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব: ৩৩
আমি তার ব্যাপারে সব বললাম, তিনি একগাল হেসে
বললেন
– তার আগে যদি আমার মরণ হয় তবে তার যা যা লাগে তুমি তাকে সব দিয়ে দিয়ো আমার থেকে….
আমি স্তম্ভিত,
আমি চিৎকার করে বললাম- কি বলছেন এসব আপনি…
আপনাকে কেন মরতে হবে তাঁকে বাঁচাতে….?
টাকা থাকলে সব পাওয়া যায়, তারাও পেয়ে যাবেন…
আরেকটা কথা আমার মা আগে আপনি…
তারপর অন্য কেও…..
বলে আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম…..
দুইদিন রাগে কোন কথা বললাম না তাঁর সাথে, সবসময় এমন ভারী ভারী কথা তাঁরই কেন বলতে হবে….?
দিন চললো তার নিজস্ব গতিতে, আমিও ব্যাস্ত নিজের কাজে। এরিমধ্যে আমাদের কোম্পানি অনেক বড় একটা অর্ডার পেলো। খবরটা মাকে জানাতে অভিমান ভুলে তার সাথে কথা বললাম। তিনি ভীষণ খুশি হলেন, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন যাক আল্লাহ তাহলে মুখ তুলে তাকালেন।
মায়েদের স্পর্শে কেমন যেন জাদু থাকে। যেই স্পর্শর জাদু বিদ্যুৎতের গতিতে ছড়িয়ে যায় সারা শরীর ও মনে। আমার মনটা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ কথা হলো তার সাথে। তার চেহারাটা মলিন দেখালেও কথা বলাতে কোন জড়তা ছিলো না, একেবারে সাবলীল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম দিন দিন কেন এমন ভেঙে পরছেন। তিনি হাসলেন, বললেন আর কত…
দুদিন পর নাতনি বিয়ে দিবো….
এরপর ভীষণ ব্যাস্ত হয়ে গেলাম নতুন কাজটা নিয়ে। মালামাল কিনতে গেলাম ইন্ডিয়া খরচা বাঁচাতে। মা প্রসূনকেও দিয়ে দিলেন সাথে। প্রসূন না না করলেও তিনি শুনলেন না। নিজ হাতে ব্যাগেজ গুছিয়ে দিলেন। এক সাথে দুই কাজ। বিজনেস আর ফ্যামেলি ট্যুর।
প্রসূনকে আমি হাসতে হাসতে বললাম শপিং করার কিন্তু সময় পাবো না একদম। মালামাল কিনবো, একটু ঘুরবো-ঘারবো একদিন তারপর ব্যাক করবো। প্রসূন হেসে বললো ঠিক আছে জনাব, ঠিক আছে….
তারপর আমার রওনা দিলাম বাই রোড। মালামাল কিনলাম দেড় দিনে। ঘুরবার সময় দেড় দিন। অনেক ভালো সময় কাটলো আমাদের। প্রসূন এর আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে কলকাতা,তাই ঘুরবার প্ল্যান ওই করলো।
শেষদিন আমরা গেলাম নিউমার্কেটে। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভাঙে আর মেয়েদেরা নাকে কানে বোঝানোর পরও যদি শপিংয়ের গন্ধ পায় তারা তা না করা পর্যন্ত ক্ষ্যান্ত হন না।
আমি হেসে বললাম টাকা নেই কিন্তু আমার কাছে, যা ছিলো টিকিট কেটে ফেলেছি। ও বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো মা আসার সময় আমাকে কিছু টাকা দিয়েছেন। আমি নিতে চাই নি অবশ্য, জোড় করেই দিয়ে দিয়েছেন।
পরে আমরা সবার জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। ডিনার করলাম ও খানকার রোড ভিউ রেস্টুরেন্টে। জায়গাটা ভিষণ পছন্দ হলো আমার। পরদিন সকালের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরলাম আমরা।
বাসায় এসে সবার জন্য আনা উপহার সবাইকে দিলাম। এখন আমাদের সাবাই এর লিস্ট টা ভীষণ ছোট। দুঃসময় হলে যা হয় আরকি।
আস্তে আস্তে ঘুরতো লাগলো আমাদের ব্যাবসাটা। এইবারের অর্ডারটা একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিলো আমাদের ব্যাবসার জন্য।
এদিকে আমার বড় মার অবস্থা বেশ নাজুক। আমি দেখা করতে গেলাম তার সাথে। রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ হওয়ায় ডোনার পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি তাকে ভরসা দিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না আপনি। মা আমাকে বললেন তোমার মাকে নিয়ে এসে এরপরের বার। তাকে কাছ থেকে দেখার ভীষণ ইচ্ছে আমার। কখন কি হয়, তার কাছে দাবি ছাড়ানোর একটা ব্যাপারও আছে। আমার ছেলেকে আমিও হয়তো এতো ভালো করে মানুষ করতে পারতাম না। আমি কেন জানি না ভীষণ প্রাউড ফিল করলাম। নিজের মায়ের কেও প্রশংসা করলে যেমন তেমনি…
বাড়ি ফিরে আমি মাকে বললাম কথাটা, মা বললেন ঠিকাছে যাবো একদিন…..
চলবে…
previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/926104677850724/
next :
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=927865364341322&id=659404701187391