#সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্ব : ৯
কেও যখন কাওকে লুকিয়ে দেখে ব্যাপারটা কিন্তু বোঝা যায়। কোন কিছু না ভেবেই আমার মনে হলো বৃষ্টির দিনের সেই মেয়েটা। আমার হাইপোথিসিস ভালো না তবে কেন যেন আমি নিশ্চিত ছিলাম ঐ মেয়েটাই…
বাচ্চা একটা মেয়ে, তবুও আমার কেমন অস্বস্তি লাগতে লগলো। আমি ভাবলাম একদিন বলবো এমন যেন না করে। কিছু বলার থাকলে বলুক, কিন্তু লুকিয়ে দেখার কি আছে।
প্রায়ই ঘটতো এমন, রুটিন করে হয় দুপুরে কিংবা সন্ধ্যায়।
আমি ঠিক বুঝতাম, কিন্তু রুম থেকে বের হলেই কাওকে দেখতাম না, মুহূর্তেই ভ্যানিশ হয়ে যেতো।
কয়েকদিন আমি ওত পেতে থাকলাম, কে এমন করছে তা জানা দরকার। কিন্তু সেদিন বৃষ্টি হওয়ায় কেওই এলো না ছাদে।
হাত ঠিক হওয়ার পর অফিসে যাওয়া শুরু করলাম। বেমালুম ভুলে গেলাম লুকিয়ে দেখার ব্যাপারটা। বেশ কিছুদিন পর একদিন দুপুরে হঠাৎ বাড়িতে আসলাম দরকারী কাগজের জন্য, এসেই দেখি একটা মেয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। ভেজা চুল শুকাতে এসেছে হয়তো। চুল নিংরানো ফোটা ফোট পানিই বলে দিচ্ছিলো মাত্রই হয়তো গোসল করে এসেছে, হালকা রঙের লং ফতুয়া পরেছে, গাঢ় রঙের ফ্লোরাল ছাপার ঢিলেঢালা সেলোয়ারের সাথে, এই বস্তুটার নাম যে প্লাজো তা তখন আমি জানতাম না। আমার আসার সাথে সাথে মেয়েটা কেমন যেন ভুত দেখার মাতো চমকে গেলো, আমি খেয়াল করলাম সেদিনের ঐ মেয়েটাই। প্রসাধনীহীন মুখটা যেন স্নিগ্ধতার এক সাগর। তবে চোখ দুটো কেমন যেন গভীর। যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মতো।
এরপর মেয়েটা খুব দ্রুত পিঠের সব চুল কাধের একপাশে এনে তারাহুরো করে চলে যেতে লাগলো, আমি দাঁড়াতে বলবো কি বলবো না ভাবতে ভাবতেই মেয়েটা চলে গেলো। মেয়েটাকে ঐ দিন অন্ধকারে যতটা ছোট ভেবেছিলাম, মেয়েটা ততোটা ছোট না, মধ্যম গড়নের তাই ছোট লেগেছিলো হয়তো।
কেন যেন অপরাধবোধ হতে লাগলো, আমি এসে মেয়েটার রৌদ্র বিলাস নষ্ট করে দিলাম। এরপর কাগজটা নিয়ে আবার অফিসে ফিরে যাই। ফিরবার পথে কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞেস করলাম খাটো করে, লম্বাচুলের পিচ্চি ঐ মেয়েটা থাকে কোন ফ্ল্যাটে,
এই শ্রেণীর লোকেরা সোজা কথা বলতেই পারে না। একটা শব্দে যা বলা যায় তার উত্তরে তারা গল্প শুরু করে দেয়, অন্য সময় হলে বিরক্ত হতাম। তবে আজ হইনি,
তিনি বললেন-
: আরে মামা পিচ্চি কন কারে আপনে,
আপনের কথা হুইন্না মনে হয় আপনার জন্ম একাত্তর সালে। , ঐ মাইয়া আই এ পাশ কইরা চাচার বাড়ি আইছে ভার্সিটি ভর্তি হইতে, আই এ পাশ মাইয়্য পিচ্চি হয় কোন দিক দিয়া, আমাগো সময় এই বয়সের মাইয়াগো চাইর পাঁচটা পোলাপান থাকতো। হ্যা হ্যা…
আমি কোনমতে কথা থামিয়ে বের হয়ে গেলাম। যদিও আরো কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছা ছিলো, তার বকবকানি শুনে ইচ্ছেটা মরে গেলো। তাছাড়া এদের কে বেশী পশ্রয় দিতে নেই, তাহলে এরা তিল কে তাল বানিয়ে ফেলে।
আমাদের ফ্ল্যাটের কাজ চলছে পুরোদমে। পুরো ফ্ল্যাটের কাজই ধরেছেন বাবা। আমার বিয়ে দিবে সামনে তাই। ইন্টেরিওর প্ল্যানার এনেছেন পুরো লুকই বদলে দিতে। আমার কৃপণ বাবার এমন খরচের হাত দেখে অনভ্যস্ত আমরা একটু ভড়কে গিয়েছিলাম।
ব্যাবসাটাকে সীমান্ত ও দেখাশোনা শুরু করেছে বিয়ের পর, তাছাড়া বাবাও এখন থাকে প্রায় সময়। সীমান্ত আর বাবার জন্য এখন তেমন বেগ পেতে হয় না আগের মতো। তাই প্রায়ই সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসি আমি। এমনি এক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরি। শরীরটা ভালো লাগছিলো না বলে। এসে ফ্রেশ হয়ে আধ-শোয়া ভাবে টিভি দেখছিলাম। এমন সময় চোখ গেলো জানালায়। কি আর ঐ আগের ঘটনা। লুকিয়ে লুকিয়ে দুটি চোখ দেখছে আমাকে। আমি তাকাতে তাকাতে মুখ সরে গেছে কিন্তু চুল খোলা থাকায় চুলগুলো চোখে পরে আমার।
আমি আস্তে করে উঠে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ছাদের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলাম। যেই থাকুক বের হতে পারবে না ছাদ থেকে। আজ ওর একদিন কি আমার….
চলবে…
previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/906403153154210/
Next:
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/908755916252267/