উপন্যাস : #সৎ_মা
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু
পর্বঃ ১৫
জরুরী কাজ পরায় আমি শেষ পর্যন্ত মিরপুরে যেতে পারলাম না। মনে মনে অবশ্য খুশিই হয়েছি শেষে। মার সাথে শাড়ি দেখতে গেলে তার পিছুপিছু ঘোরাঘুরি করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারতাম না আমি৷
রাতে মা খাবারের টেবিলে বললেন –
তুমি তো এলে না আজ, আমার মাথাঘোরা অবস্থা, আমি কি এতসব বুঝি এ যুগের মেয়ে ওরা। তাই একটা কথা ভাবলাম, আমরা শাড়ি পছন্দ করে কিনবো, শেষে ওর যদি পছন্দ না হয় তাহলে ব্যাপারটা কেমন হলো না, আমি ওর মাকে বলেছি এ ব্যাপারে, যদি সম্ভব হয় তাহলে ও যেন ঢাকায় এসে শাড়ি গুলো পছন্দ করে যায়। আর শোনো বিয়েটা আগামী মাসের ২৭ তারিখ হচ্ছে। তুমি ঐ অনুযায়ী কার্ড তৈরী করো। কথাগুলো খুব দ্রত বললেন তিনি, তার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো তিনি খুবই উৎসাহী বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা লোক দেখানো না কি সত্যি তা আমি বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। তিনি এমন কেন, তাঁকে কেন আমি পড়তে পারছি না, এসব ভেবে রাগ হচ্ছিল। পরে বুঝলাম মা কথা বলছেন আর কাজ করছেন। আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। না তাকালেই মনে হয় পড়া যায় না মানুষকে।
রাতে আমি শুয়ে মুভি দেখছিলাম, সেটা শেষ হতে হতে রাত প্রায় আড়াইটা, আমি বাথরুমে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে এসেই শুয়ে পরবো। বারান্দায় দাঁড়াতেই মার বারান্দায় চোখ পরলো, মা আমাকে দেখে দ্রুত ঘরে চলে গেলেন। এর রাতে বারান্দায় কেন তা যদি জানি আমি তাই হয়তো চলে গেলেন দ্রুত পায়ে।
তার এমন করার কারনে আমার কেন যেন খটকা লাগলো, আমি মার রুমে গেলাম।
দড়জা নক করতেই মা দড়জা খুললেন। বাবা তখনো বাড়ি ফিরেন নি। তার এই এক স্বভাব, রাত দুইটা তিনটা বা হলে বাসায় ফিরে না। ব্যাবসার হাল আমাকে দেওয়ার পরই তার এই বেহাল দশা। বাসা থেকে বেরই হন রাত বারোটায়, তখন নাকি তার জন্য সন্ধ্যা।
দড়জা খুলে মা বললেন
– কি ব্যাপার, তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন..
– না, মানে…..
টিভি দেখছিলাম, দেখলাম আপনিও ঘুমান নি, তাই এলাম গল্প করতে।
– এত রাতে কেও গল্প করে…! যাও ঘুমাও গিয়ে, কাল সকালে আবার অফিসে যাবে
– মা আমার খুব গল্প করতে মন চাইছে
মা এরপর দড়জা ছেড়ে দাঁড়ালেন, আমি ভিতরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি বিছানার উপরে ফটো এলবাম, মা ছবি দেখছিলোন হয়তো,
তারপর আমি মার পাশে বসে তার চোখে তাকালাম, মা অবশ্য আমার দিকে তাকালেন না। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম
: মা আমি আপনাকে পড়তে না পারলেও, আপনি যে ঠিক নেই তা আমি ঠিক বুঝছি..
আমি জানি বিয়ের ব্যাপারটা আপনি মন থেকে মানতে পারছেন না।
যে মেয়েকে, মেয়ের পরিবারকে অপমান করেছেন তাদেরই কাছে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন কাজ, কাজটা আপনি হুজুগে করেছেন, এখন তার ভার সামলাতে টালমাটাল আপনি, আমি কি ঠিক বলেছি মা…
: ………
: মা আমি কিন্তু আসলেই ওকে ভালোবাসতাম না, একটা মেয়ের সম্মান, পড়াশুনা, তাছাড়া এ ব্যাপারটাতে আমারও তো সম্মান জড়ানো, তাই না…
: তোমার ভাবনা মিথ্যে না, তবে আমি টালমাটাল নই, যা করেছি সব ভেবে চিন্তেই করেছি।
সীমান্ত তোমার অগোচরে একটা কথা বলতো জানো- আমি নাকি ওর থেকে তোমাকে বেশী ভালোবাসি। কথাটা সত্যি ও না মিথ্যা ও না। মাঝামাঝি একটা অবস্থা। মার কাছে তার সব সন্তানই এক।
তবে সত্যটা হচ্ছে, কেও যাতে না বলতে পারে আজ আপন মা হলে এমন করতে পারতো না…! শুধু এই কথাটার ভয়ে তোমাকে বেশী ভালোবাসার চেষ্টা করতে করতে তোমাকে আমি সত্যিই বেশী ভালোবেসে ফেলেছি। নিজের ছেলে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, আমি একবারও তাকে ফিরিয়ে আনতে যাই নি, কারন ওর শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে, পৃথিবীটা কতো কঠিন তা বুঝুক ও। কিন্তু আমি তোমাকে হারাতে চাই না বাবা…
বলেই মা অঝোরে কেঁদে দিলো…
: মা আপনি এমন কথা ভাবলেন কিভাবে…!
আমি যে আপনাকে কত ভালোবাসি তা আপনি জানেনই না..
: ভুল বললে, আমি জানি…
জানি বলেই এই ভালোবাসা হারানোর ভয় হয়, সন্তান বড় হলে তাদের মনের খবর/আবদার রাখতে হয়, আমি তাই ই করেছি।
: আপনার মন খারাপ কেন তাহলে…
: সীমান্তর কথা ভেবে, এমন কেন হলো ও, বলতে পারো…
: মা আমি একটা কথা বলি শুনবেন
: কি বলবে…
: আপনি ওকে ফিরিয়ে আনতে যাবেন কাল, ওর শিক্ষা ঠিকই হয়েছে, তবে লজ্জায় এখন ফিরতে পারছে না।
: না, আমি যাবো না…
: মা আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, কাল আপনি ওকে আনতে যাবেন, আর বিয়ের যা কিছু হবে সব জোড়ায় জোড়ায় হবে, দুই ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান একসাথে, ব্যাপারটা ভালেই হবে, তাই না….
: না, ভালো হবে না। সবাইকে সবার কর্ম ফল ভোগ করতে হয়, তা না হলে ভুলের ঘোড়াটার লাগাম ছাড়া হয়ে যায়।
: মা আপনি এত কঠোর কেন, মাঝে মাঝে আপনাকে আমি চিনতে পারি না একদম।
মা চোখ বাঁকা করে আমার দিকে তাকালেন, আমি মাকে আর ঘাটলাম না। কারন তিনি যখন না বলেছেন, নিশ্চই ভেবেই বলেছেন। তবুও ভাইটার জন্য মনটা খারাপ হচ্ছিল। যত যাই হোক মা আলাদা হলেও দুজনের শরীরে রক্তের ধারাটা তো একই…
রুমে ফিরে আমি বিছানায় শুয়ে কথাগুলো রিভিউ করলাম। মনকে বললাম প্রসূন ঢাকায় আসলে আমি তখন চলে যাবো ঢাকার বাহিরে। কত বড় ফাজিল, আমার ফোন কেটে দেয়, আমাকে কড়া কড়া কথা শোনায়, বিয়েটা হোক আগে, এরপর দেখা যাবে কার জিদ কত…
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে….
চলবে…
Previous :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/911669129294279/
next :
https://www.facebook.com/659404701187391/posts/914689362325589/