#চলো_রোদ্দুরে,20,21
#ফাতেমা_তুজ
#part_20
ঘুম থেকে উঠতেই নুহাশ এর মুখোমুখি হতে হলো ভোর কে। চোখে মুখে আতঙ্ক। নুহাশ যেন ভোর কে দেখে খুশি তে বাক শক্তি হারিয়েছে। একটু এগিয়ে এসে মেয়েটার বাহু তে স্পর্শ করলো। সঙ্গে সঙ্গে দু হাত পিছিয়ে গেল ওহ। ভ্রু টা বাঁকিয়ে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো।
_তুমি এখানে?
_আপনি এখানে কি করছেন?
_আমার কথা বাদ দাও। রিসোর্ট টা তো বুক করা হয়েছে। ওয়েট ওয়েট তুমি কোন পক্ষ?
ছেলেটার প্রশ্নে আগ্রহ খুঁজে পেলো না ওহ। তবে ভেতর থেকে ভয় কাজ করছে। শুকনো ঢোক গিলে ছুটে চলে আসলো।মাথার এলোমেলো চুল গুলো হাতিয়ে হাঁটা লাগালো নুহাশ। মাথা টা এখনো ঝিম মেরে আছে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভোর কে লক্ষ্য করে যাচ্ছে সুপ্তি। মেয়েটা বার বার পায়চারি করে যাচ্ছে। যেন কেউ ওর কলিজা খুবলে নিয়েছে। সুপ্তির ঠোঁট টা সামান্য ফাঁক হয়ে গেল। কিছু বলতে গিয়ে ও পারছে না বলতে। সাইট টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢক ঢক করে পান করলো। সুপ্তি কিছু বলবে তখনি বেরিয়ে গেলো মেয়েটা। বেড থেকে উঠে আনমনেই সুপ্তি বলল
‘ আজব তো! ‘
_সুপ্তি শোন না অনেক গুলো কাজ করতে হবে। ডেকোরেশন টায় একটু গড়মিল হয়ে গেছে।
_সে কি।
রুম থেকে বেরিয়ে কথা টা বললো সুপ্তি। রাদ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। হাত উঁচিয়ে থামতে বললো। মিনিট খানেক অপেক্ষা করলো সুপ্তি। কথা শেষ হতেই বলল রাদ
_ পুরো রুম টা আবারো ক্লিন করতে হবে। ভুল করে ওরা অর্কিড এর জায়গায় টিউলিপ লাগিয়েছে।
_হোয়াট এতো বার বলার পর ও ভুল করলো?
_হ্যাঁ একটু দেখ না। আমি রনিত কে কল করে যাচ্ছি। শালার নাম্বার টা বন্ধ। এদিকে আসলে পুরো বিয়ে ভেস্তে যাবে।
সুপ্তি কঠোর ভঙ্গিতে পথ আগালো। রাদ রনিতের নাম্বার ছেড়ে রূপ কে কল করলো। টিউলিপ এ এলার্জি রয়েছে রনিতের। দু হাত দূরে থাকলে ও শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।
আবারো ফিরে এসেছে সুপ্তি। কিছু টা রাগ নিয়ে রাদ বলল
_ফিরে এলি কেন? একটা সামান্য কাজ তারপর ও
ছেলে টা কথা শেষ করার ফুসরত পেলো না তাঁর আগেই সুপ্তি বলল
_ভোর কে চিন্তিত দেখাচ্ছিল। বোধ হয় তোকে খুঁজছে।
_কখন?
_একটু আগেই।
_আচ্ছা।
রাদ এর শীতল কন্ঠ শুনে সুপ্তির ঠোঁট প্রসারিত হলো। আনমনেই গুন গুন করে কয়েক টা গান শুরু করলো। তখনি নিজের ফোন টা বেজে উঠলো। ঠান্ডা সুরের গান ‘অনিকেত প্রান্তর’। নাহিদ কল করেছে, তা ও ভিডিও কল। মুখ বাকালো মেয়েটা। কল রিসিভ করতেই নাহিদ বলল
_কি রে রঙিলা দারুন ইনজয় করছিস বোধহয়?
_অবশ্যই করছি।তোর কোনো সমস্যা?
_উহহু তা কেন হবে। আমি না থাকলে তোর ভালোই হয়।
_হায় মেয়েবাজ অনুষ্ঠানে না থাকলে এতো দারুন ফিলিং হয় জানা ছিলো না।
_সুপ্তি।
নাহিদ এর ধমকে মুখ বাকায় মেয়েটা। তারপর ই বলে
_আমাকে কল করেছিস কেন?
_শখ করে করি নি। রাদ এর ফোন বিজি, আর বাকি দের ফোন সুইচ অফ। উপায় না পেয়ে রঙিলা কেই কল করতে হলো।
_একদম রঙিলা বলবি না।
_একশ বার বলবো।
_নাহিদ।
_ধ্যাত তোর সাথে কথাই বলবো না।
কল টা কেঁটে দিলো নাহিদ। সুপ্তি রাগে গজগজ করছে। একে তো নাহিদ কল করেছে তাঁর উপর কল কেঁটে অপমান? আজ এর হেস্ত নেস্ত করবেই। কয়েক পা এগিয়ে মুখ টা শুকনো হয়ে গেল। নাহিদ তো জাপান চলে গেছে। নিজ মন খারাপে রেগে গেল সুপ্তি। মাথা চেপে ধরে বলল
‘ এই রাসকেল টা থাকলে ও ভেজাল না থাকলে ও ভেজাল। আশ্চর্য! ‘
.
_আমি হোস্টলে ফিরে যাবো ডাক্তার সাহেব।
_এমন কেন বলছো? কাল অব্দি ছুটি নিয়ে এসেছি আমি।
_ভালো লাগছে না।
_কেউ কিছু বলেছে?
_উহহু।
_তাহলে?
_জানি না।
মেয়েটার চোখ ছলছল করছে। রাদ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ভোর চিন্তিত। চোখে লাগানো কাজল লেপ্টে যাচ্ছে। এগিয়ে আসে রাদ। মেয়েটার থুতনি উঁচু করে চোখের নিচে লেগে থাকা কাজল টুকু বুড়ো আঙুলের সাহায্য মুছে দেয়। আবারো ভরে উঠে দু চোখ। এবার রাদ চিন্তিত হয়। শীর শীর বাতাসে চুল গুলো উড়ছে। কয়েক টা অগোছালো চুল ছেলেটার মুখে এসে লাগছে।
_তুমি এমন চাঁপা কেন মেয়ে? বলেছি তো সমস্ত টা আমায় বলবে।
_ঐ ছেলেটা।
_কোন ছেলে?
_কলেজের।
রাদের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। আবার বিরক্ত করেছে ভোর কে? কিন্তু ভোর তো রিসোর্ট এই ছিলো।
_কি করেছে ওহ?
_কিছু করে নি। তবে আজ সকালে রিসোর্ট এ দেখেছি আমি।
মুহুর্তেই রাদের রাগ চিন্তায় পরিনত হয়।ছেলেটা কে দেখার আগ্রহ জাগে। ভোর বলল
_আমার ভয় করছে। আমি চলে যাবো। আমি চাই না আমার জন্য আর কোনো সমস্যা সৃষ্টি হোক।
_থামো তুমি। নিজেকে দোষ দিতে পারলেই মহান হয়ে যাও?
_আমি তো
_কাঁদবে না। তুমি না সাহসী? আইন নিয়ে পড়া শোনা করবে। তাহলে এমন মানসিকতা কেন?
মাথা টা নিচু করে ফেলে ভোর। ধীর কন্ঠে বলে
_দুঃখিত।
_নো ফরমালিটিস। এখন আমরা বর যাত্রী যাবো। দেখি তো
মেয়েটার মাথায় ঘোমটা টেনে দেয় রাদ। ভোর কে বউ বউ লাগছে। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে ওর। ঘোমটা তুলতে চাইলে রাদ বাঁধা দেয়। মেয়ে টা ও আর কিছু বলে না। রাদ এর শুট এর হাতা চেপে ধরে হাঁটতে থাকে।
আধ ঘন্টা যাবত একটি উপন্যাস পড়ে চলেছে ভোর। গাড়ি তে বসে উপন্যাস পড়ার আইডিয়া রাদ এর। যেহেতু ইনায়ার বাসা এক ঘন্টার পথ তাই এই সময় টুকু উপন্যাস পড়লে কাজে লাগবে। তাছাড়া উপন্যাস টি একটি মেয়ের নারী হওয়ার গল্প। সমরেশ মজুমদার এর সাতকাহন। ভোর কে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে।
জ্যাম এ আটকে গেলো গাড়ি টা। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে অপেক্ষা করছে রাদ। ভোর এর পূর্ন মনোযোগ উপন্যাসে। মানুষ ক্লাসের বই পড়ে না অথচ গল্প উপন্যাস থেকে চোখ সরে না।
_ভোর।
কোনো উত্তর নেই। রাদ অবাক হলো না। কারন এই বিষয় টা ওহ নিজে অনেক বার উপলব্ধি করেছে। মেয়েটার বাহু তে হালকা হাতে ধাক্কা দিতেই চমকে উঠলো। তুতলিয়ে বলল
_জিইই
_ভয় পাচ্ছো কেন?
_না মানে হঠাৎ।
_আচ্ছা বাদ দাও।
_হুম।
কিছুক্ষণ নিরবতা চললো। জ্যাম ছাড়তে গাড়ি চলতে শুরু করলো। আবারো উপন্যাসে মজেছে মেয়েটা। আনমনেই হেসে উঠলো রাদ। কি অদ্ভুত, এই চব্বিশ বছরের জীবনে একটি মেয়ে কে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে সে। অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বয়সের প্রয়োজন পরে না। বরং প্রয়োজন হয় মানসিকতার। একজন শক্ত মন ধারী, পূর্ন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ হওয়া জরুরি।
‘ ক্ষনিকের জীবনে কিছু এমন কাজ করতে হয় যাতে করে হাজার না হোক অন্তত এক দিনের জন্য ও সেই কাজের জন্য কেউ মন থেকে প্রার্থনা করবে।’
ইনায়া কে বউ সাজে একদম ই সুন্দর লাগছে না। এমন টাই ধারনা ইনায়ার। সারাক্ষন সাঁঝ গোঁজ করা মেয়েটা আয়না তে নিজেকে দেখতে চাচ্ছে না। এই নিয়ে চলছে সোরগোল।
এতো বার বোঝানোর পর ও কারো কথা শুনছে না। কথা টা রাদের কানে যেতেই হাঁটু তে হাত রেখে হাসতে লাগলো ওহ। রনিতের রাগ হয়। দশ টা পাঁচ টা না একটা মাত্র বউ ওর। তাঁর একটি কাজে হাসবে সকলে? উহু কখনোই সম্ভব নয়।
_উচিত হচ্ছে না রাদ।
_কেন হবে না?
_আমার বউ হয় ওহ।
_আগে বিয়ে হোক।
_কি বলতে চাচ্ছিস?
_তোর মতো শশুর ভীত প্রানী কে কি বলবো?
রনিতের কি হলো জানা নেই। তবে আজ সবাই কে চমকে দিয়ে স্ট্রেজ থেকে নেমে গেলো সে। সোজা ইনায়ার কাছে, সবাই বাঁধা প্রদান করছে। চেঁচামেচির শব্দ শুনে ইনায়া মাথা টা ঘুরাবে তখনি মেয়েটা কে চেপে ধরলো ভোর। বলল
_আপু একদম নয়। বিয়ের আগে মুখ দেখতে দিবো না। ভাইয়া কে পেমেন্ট দিতে হবে।
মেয়েটার চঞ্চলতা দেখে সবাই অবাক হলো। সব থেকে বেশি অবাক হলো রাদ। কারন ভোর সাধারনত এতো টা ফ্রেন্ডলি কথা বলে নি অন্য কারো সাথে। স্বস্তি ময় একটা শ্বাস ওকে যেন আঁকড়ে নিলো। নিজ কার্যের সফলতার কিছু মুহুর্ত অনুভব করলো ছেলেটা।
চলবে
#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_21
একটু আগেই বিয়ে সম্পূর্ন হয়েছে। নব দম্পতির মাঝে চাঁপা লজ্জা কাজ করছে। কি একটা অবস্থা প্রেমের বিয়ে তাও লজ্জা। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যায় ভোর। ওর বিয়ে টা এমন রাজকীয় ভাবে হয় নি। তবে ধর্ম মতে পুরো বিশ লক্ষ টাকা মোহরানা সমেত বিয়ে হয়েছে। রাদ কে কি বলবে ওর জানা নেই। মানুষ টা এতো টা করেছে আর করে চলেছে সত্যি বলতে এমন মানুষ ভোর এর চোখে পরে নি। এতোই বিভোর যে রাদ ওর পাশে দাঁড়িয়েছে ধ্যান ই নেই। একটু সরে আসতেই ছেলেটার বুকের সাথে ধাক্কা লাগে ওর। আনমনেই বলে উঠে ‘ স্যরি। ‘
_ রিলাক্স। বউ দেখে বউ সাজার ইচ্ছে হয়েছে?
_উহুহ।
_দেখি মাথায় ঘোমটা তুলো তো।
কথা টা ভোর কে মুখে বললে ও কাজে করে ফেলে রাদ। খলবিলিয়ে হেসে বলল
_বউ বউ ই লাগছে। একটু বাঙালি সাজ গোঁজ থাকলে বাঙালি বউ ই লাগতো।
লজ্জা পায় মেয়েটা। রাদ এর মুখ থেকে বউ শব্দ টা কেমন বুকের ভেতর টেউ তুলে দেয়। মেয়েটা অনুভব করে এক নতুন দুনিয়া। যেখানে কোনো আঁধার নেই। আছে শুধু রোদ্দুর আর রোদ্দুর।
বিদায় বেলায় এসে ইনায়া এভাবে কাঁদবে কেউ কল্পনা ও করতে পারে নি। হাউ মাউ করে কাঁদছে মেয়েটা। অথচ বিয়ের জন্য কতো টা পরিশ্রম করতে হয়েছে ওকে। সব থেকে আশ্চর্য মেয়েটার চোখের পানি দেখে রনিতের চোখে পানি চলে এসেছে। বড্ড বেশি ভালোবাসে কি না। লাজ লজ্জা ভুলে রনিত কে জড়িয়ে ধরে ইনায়া। কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে
_ আমি কোথাও যাবো না রনিত , কোথাও যাবো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।মম ড্যাড কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। প্লিজ রনিত
ছেলেটা ভাষাহীন। ঘর থেকে আরিফার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। মেয়েটা কে এতো ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে আজ তাঁকে বিদায় দিতে হচ্ছে। শক্ত মন ধারী ইমরোজ আজ কেঁদে ফেললেন। স্টুডেন্ট দের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেই দিলেন। রনিতের হাত ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় বললেন
_আমার মেয়ে টা কে দেখে রাখিস বাবা। এই রাগি স্যার এর উপর অভিমান করে ওকে কষ্ট দিছ না।
তিনি আর এক মুহুর্ত থাকতে পারলেন নাহ চলে গেলেন। ভোরের বুকের ভেতর অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছে। ওর বাবা মা ওকে এমন করে ভালোবাসলো না কেন? যখন রাদ এর সাথে বেরিয়ে আসছিলো তখন একটি বারের জন্য কেন আটকালো না ওকে? উল্টো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো। কেন এমন নিষ্ঠুর নিয়তি ওর? এতো টাই বোঝা ওহ।
গার্ডেন এ এসে চোখের পানি ফেলেছিলো মেয়েটা। রাদ বুঝতে পেরেছে ভোর এর মন ভালো নয়। মেয়েটা অনেকক্ষন ধরে পাশ ফিরে রয়েছে। কাছে আসতেই বুক টা ধক করে উঠলো। নিচু হয়ে কাঁদছে ভোর।
_এই মেয়ে কাঁদছো কেন তুমি? এই সামান্য কারনে কাঁদে কেউ?
মাথা টা উঁচু করে ভোর। রাদ এর চিন্তিত মুখ দেখে চোখ মুছে। বেহায়া দু চোখ আবারো ডুবে যায় অশ্রু তে। ছেলেটার বুকের শার্ট টা খামচে ধরে চিৎকার করে বলে উঠে
_মা বাবা কে মনে পরছে ডাক্তার সাহেব। আমি সবাই কে খুব ভালোবাসি। আমি ওদের সাথে দেখা করতে চাই ডাক্তার সাহেব। দেখা করতে চাই। তাফিন টা আমাকে খুব ভালোবাসে। কতো দিন ধরে আমি ওকে জড়িয়ে ঘুমাই না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ডাক্তার সাহেব।
কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা ঘাসে বসে পরলো। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। পরিবার কে ছাড়া বেঁচে থাকা সত্যিই খুব কষ্টসাধ্য।
.
_ ভাই একটু, একটু দরকার আমার।
_কাজের সময় এমন কথা কেন বলিস রূপ?
_আজকে সকাল থেকে কাজ করছি। বিয়ে টা অব্দি দেখি নি। ভাই এখন একটু প্লিজ।
_উফফ রূপ।
রাদের সাথে কথা বলছে আর উঁকি ঝুঁকি মারছে রূপ। ছেলেটার দৃষ্টি কাউ কে দেখছে। যেন চোখের আড়াল হয়ে যাবে এখনি। রাদের ভ্রু যুগল কেমন নড়ে উঠে। ছেলেটার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকায়। এখানে তো তেমন কেউ নেই।
_এই রূপ।
_হ্যাঁ ভাই।
_কি দেখছিলি?
_চলে গেল।
_কে চলে গেল।
_না মানে দ্রুত বলো কি কাজ।
_ধ্যাত তোকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। যাহ তুই আমি গেস্ট দের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
রাদের হাত টা মুঠো বন্দী করে ছেলেটা। হাসি মাখা মুখে উচ্চারন করে
_থ্যাংকস ভাই।
মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে যায় রূপ। অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে রাদ। এতো টা চঞ্চল কেন এই ছেলেটা?
সেলফি তুলছিলো সুপ্তি। এদিকে বাসর সাজাতে ব্যস্ত সকলে। কাউ কেই পাওয়া যাচ্ছে না। বাসরে ডুকতেই সকলে বাঁধা দেয়। ছেলে ও ছেলের বন্ধুদের যেতে দেওয়া হবে না। আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাদ। সুপ্তির নজর পরতেই ইশারা করে ছেলেটা। লেহেঙ্গা ধরে ধরে সবাই কে ঠেলে বাহিরে আসে সুপ্তি। হাঁপিয়ে গেছে একদম। রাদের চিন্তিত মুখ দেখে বলল
_এই মুখ টা এমন লাগছে কেন?
_ আরে শোন না। এখানে ভোর আছে?
_ভোর না তো। অনেক ক্ষন ধরে আমার সাথে নেই ওহ।
কপালে হাত রাখে রাদ। প্রায় তিন ঘন্টা যাবত মেয়ে টা কে দেখে নি ওহ। বিয়ে বাড়ির এতো এতো কাজ সব যেন জাপটে নিয়েছে। প্রচন্ড ভয় হয়। কলেজের সেই ছেলেটা রিসোর্ট এ এসেছিলো। সেই কারনে মেয়েটা ভীত গ্রস্ত। এবার রাদ এর ই ভয় হচ্ছে। মেয়ে টার কোনো ক্ষতি হবে না তো?
_রাদ আমার কথা শোন, কোথায় যাচ্ছিস?
কোনো উত্তর না করেই ছুটতে থাকে রাদ। এতো বড় বাসা, সাথে দুটো প্লে গ্রাউন্ড। সর্বত্র জমকালো আয়োজন। এই মুহূর্তে মেয়েটাকে কোথায় খুঁজবে ওহ?
পুরো বাসা তছনছ করে খুঁজে ও ভোর এর দেখা মিলে নি। এবার ছেলেটার বুক ধুকপুক শুরু হয়েছে। মেয়েটা কে অজানায় এভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয় নি। নিজ দায়িত্ব বোধের প্রতি লজ্জিত ওহ। সর্ব শক্তি দিয়ে গাছে বাকলে ঘুষি মারে রাদ। তখনি কানে আসে মৃদু চেঁচামেচি। হাতে কিছু টা ব্যথা পেয়েছে। বা হাতে ডান হাত টা কে শক্ত করে চেপে ধরে। ছনের ঘরের পাশ থেকে আওয়াজ টা আসছে। এক সেকেন্ড দেরি করে না ওহ। চলে যায় সেই দিকে। লাইট আর আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো ঘর টা। কিছু শব্দ কানে আসে। থমকে যায় রাদ। মৃদু স্বরে উচ্চারন করে ‘ ভোর ‘।
মেয়েটা কখন ওর বুকে এসে পরেছে খেয়াল ই নি। ওর চোখ দু খানা সামনে নিমজ্জিত। অদ্ভুত ভাবে দেখছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি কে। মেয়েটার উপস্থিতি অনুভব করে হালকা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
_ কিচ্ছু হয় নি। কাঁদবে না একদম।
হেঁচকি তুলে কাঁদছে মেয়েটা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসে সেই মানুষ টি। ভ্রু কুটি করে তাকায় রাদ এর দিকে। ছেলেটা কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না তাঁর আগেই হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় রাদ। ইশারায় চলে যেতে বলে। ওর মস্তিষ্ক যাহ বোঝার বুঝে গেছে। কতোক্ষন মেয়েটা কাঁদবে কে জানে।
কালো কুচকুচে আঁধারে পূর্ণিমার দেখা মিলেছে। চাঁদ টা ডুবে আছে আকাশের বুকে। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে চলেছে ভোর আর ওকে দেখছে রাদ। মেয়েটা বড্ড বেশি কাঁদে। অবশ্য অকারনে নয়। তবে ভীত গ্রস্ত হয়েই কাঁদে। এই বিষয় টি একদম ই মানতে পারছে না রাদ। মৌনতা ভেঙে কথার ছন্দ তুলে রাদ
_কান্নার প্রতিযোগিতা হলে নিঃসেন্দহে সেরা হতে তুমি।
কথা টা কানে প্রবেশ হতেই মেয়েটার নাকের ডগা লাল হয়ে উঠে। অভিমানে নাকি রাগে ঠিক ঠাওর হলো না। তবে সে সব কে সাইটে ফেলে এক পশলা প্রফুল্লতা নিয়ে এগিয়ে আসে রাদ। কোথায় যেন দেখেছিলো ভীত গ্রস্ত কাউ কে সান্ত্বনা বা সাহস দেওয়ার জন্য হাঁটু মুরে বসতে হয়। কথা টার কোনো যুক্তিকতা না থাকলে ও উক্ত কাজ টি করলো রাদ। মেয়েটার ভয়ঙ্কর রূপের পেছনে লুকিয়ে আছে এক আকাশ সমান অভিমান তা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি রাদ। মুহূর্তেই বিজলির মতো জ্বলে উঠে ওহ। বেঞ্চ থেকে উঠে যায়। আর সিনেমা স্টাইলে মেয়েটার হাত ধরতে গিয়ে, অসফলতায় ঘাসের উপর শুইয়ে পরে রাদ। এবার যেন মেয়েটা খুশি হয়। কোমরে হাত গুঁজে দিয়ে গগন বিহারী হাসি তে মেতে উঠে। বলে
_আমার সাথে মজা করা তাই না? একদম ঠিক হয়েছে এবার। ডাক্তার সাহেব লুজার।
চলবে