চলো_রোদ্দুরে,22,23

0
442

#চলো_রোদ্দুরে,22,23
#ফাতেমা_তুজ
#part_22

নুহাশ কে দেখেই পা টা থমকে গেল ভোর এর। আশে পাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কেউ আছে কি না। উহুহ কেউ নেই। প্রচন্ড ভয় হচ্ছে মেয়েটার। আজ কোনো অঘটন ঘটবেই। আলগোছে সাইট ব্যাগ থেকে ছোট্ট নাইফ বের করলো। যদি নুহাশ কোনো ভাবে কাছে আসে তাহলেই পেট ফুঁটো করে দিবে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে দশ হাত দূরে থেকেই বলল নুহাশ
_আপু স্যরি। আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি জানতাম না আপনি রাদ ভাইয়ার রিলেটিভ।

কিছু টা বিক্ষিপ্ত হয় ভোর। নুহাশ নামক ছেলেটি নিসন্দেহে ফাজিল। সেই ছেলে ওকে আপু বলে সম্বোধন করছে? তা ও আপনি আপনি বলে।
বিষয় টা কি মজা করে করছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা টা নিচু করে ফেলে নুহাশ। যথা সম্ভব শীতল কন্ঠে বলে
_এতো দিনে আপনার সাথে মজা করা টা আমার অন্যায় হয়েছে। পারলে আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না। কলেজে কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। আমি যথা সম্ভব সলভ করে দিবো।

কথা টা শীতল কন্ঠে বললে ও স্থান প্রস্থান ছিলো ঝড়ের মতো। ভোরের ছোট্ট মাথা টা এতো টা স্ট্রেস নিতে পারে নি। তাই হয়তো মাথা টা ঘুরিয়ে গেল।

মিনিট বিশেক পর চোখ খুলে ভোর। দু চোখের পাতা তে সাদা ধবধবে দেয়াল পরিলক্ষিত হয়। ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে ওহ। কোথা থেকে যেন ছুটে আসে রাদ। হালকা হাতে জড়িয়ে বলে
_রিলাক্স। কিচ্ছু হয় নি। আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।

_আমি তো গার্ডেন এ ছিলাম।

_হ্যাঁ।সকাল সকাল না খেয়ে বাইরে গেছো। কাল রাতে ও খাও নি কিছু।তাঁর উপর কালকের জার্নি।
দুর্বলতা থেকে মাথা ঘুরে গিয়েছিলো। ভাগ্যিস দারোয়ান দেখেছিলো, না হলে তোমায় কতোক্ষন ঐ ভাবে পরে থাকতে হতো কে জানে।

আশে পাশে চোখ বুলায় ভোর। বুঝতে পারে না জায়গা টা কোথায়। ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে বলল রাদ
_ রিলাক্স এটা কাঁচের তৈরি রুম। বাড়ির ডান পাশে লেকের ধারে এই রুম টা করা। তিন বছর আগে আমার বাসার ডিজাইন দেখে করেছিলো রনিত। কপি করতে পছন্দ করে রাসকেল টা।

_ওহহ আমি তাহলে রনিত ভাইয়ার বাসাতেই?

_হ্যাঁ। ভাবলাম এখানেই নিয়ে আসি। ভেতরে গেলে নানান জন নানান কথা বলবে।

মৃদু হাওয়া গাঁয়ে এসে লাগছে। দক্ষিন পাশে তাকাতেই পর্দা উড়তে দেখতে পেলো। ঐ দিকটায় বোধহয় ব্যলকনি রয়েছে। তাছাড়া রাদ ও ঐ দিক থেকেই এসেছিলো। প্রচন্ড আগ্রহ থেকে উঠে দাঁড়ায় ভোর। রাদ বলে
_কোথায় যাচ্ছো। একটু রেস্ট নাও, নাস্তা করে বাসায় যাবে।

_উহুহ ঠিক আছি আমি । ঐ দিকটায় ব্যলকনি?

_হ্যাঁ।

এগিয়ে যায় ভোর। রাদ বুঝতে পারে ব্যলকনি তে যাচ্ছে মেয়েটা। চাঁপা শ্বাস টা লুকিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। দারোয়ান কে দিয়ে খাবার আনিয়ে নেয়। রুমে এসে দেখে ভোর এখনো ব্যলকনি তে। খাবার টা রেখে সেই পথেই গমন করে রাদ। ছেলেটার পদধ্বনি শুনতে পেয়ে বিরক্ত হয় ভোর। ঠোঁটের কাছে আঙুল নিয়ে বলে
_হুসস।

অবাক হয় রাদ। ঐ স্থানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা অনুভব করছে ভোর। সময় খুব বেশি নয় সাড়ে সাত টা হবে। ঘন্টা খানেক পূর্বেই ভোর হয়েছে। শীতের সকাল হওয়াতে এখন কাক ভোর বলাই চলে। রাদ ও চোখ টা বন্ধ করলো। শুনতে পায় পাখির কিচির মিচির আওয়াজ। সাথে হালকা হালকা পানির আওয়াজ। মৃদু শব্দে বেজে উঠে আরেক টি মারাত্মক শব্দ
‘ ডাক্তার সাহেব। ‘

চোখ মেলে তাকায় রাদ। ভোর অনুভব করছে শুভ্র সকাল। হঠাৎ ই গলায় পানি শূন্যতা অনুভব হয়। স্থান পরিত্যাগ করতে চাইলেই কেউ একজন হাত ধরে ফেলে। অনুনয়ের স্বরে বলে
_আশে পাশে কোথাও ঝর্না রয়েছে। আমি যাবো, প্লিজ। আমায় নিয়ে যাবেন তো ডাক্তার সাহেব?
.
পাহাড়ি এলাকা। শহর থেকে বেশ কিছু টা দূরেই রনিতের পারিবারিক বাড়ি। অবশ্য শহরে বেশ কয়েক টা দামি এপার্মেন্ট ও রয়েছে। তাঁর ই একটা তে থাকে ওরা। তবে রিসিপশন এর অনুষ্ঠান টা পারিবারিক বাড়িতেই করেছে।

সরু রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে চলেছে দুই তরুন তরুনী। বিকেল হওয়া তে কুয়াশা জমেছে অনেক টা। ভারী জামাকাপড় পরেই চলে এসেছে ভোর। কোনো মতে
রিশিপন টা শেষ করেছে। রাদ এর পা কিছু টা ব্যথা করছে। তবে ভোর পুরো দমে উপরে উঠে চলেছে। যেন ঝর্না দেখার জন্য মন টা উথাল হয়ে রয়েছে। পেছনে তাকায় মেয়েটা। রাদ কে পিছু পরে থাকতে দেখে শুধায়
_একি ডাক্তার সাহেব আপনি এতো পিছু কেন? আসুন। এখনো অনেক টা পথ।

_ একটু অপেক্ষা করো ভোর।

_লেট হচ্ছে তো। আমার তো ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে।

হাঁপাতে হাঁপাতে মেয়েটার কাছে আসে রাদ। কয়েক বার দম নেয়। ভোরের মুখ টা কেমন ভঙ্গিমা করে নিয়েছে। রাদ বলে
_এতো এনার্জি পেলে কোথায়? সকালে তো মাথা ঘুরিয়ে গার্ডেনে পরে ছিলে।

_যে মেডিসিন আর খাবার খাইয়েছেন মনে হচ্ছে আগামি তিন মাস না খেয়ে থাকতে পারবো।

হো হো করে হেসে উঠে রাদ। মাথা টা ঘুরিয়ে তাকায় ভোর। ঝর্নার কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মেয়েটা আর দমে থাকতে পারে না। ভারী লেহেঙ্গা টা দু হাতে একটু উঁচু করে ছুটতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় রাদ। যেভাবে ছুটে চলেছে যখন তখন পা উল্টিয়ে পাহাড়ের বুকে পরবে মেয়েটা। অনেক টা এগিয়ে গেছে ভোর। চেঁচিয়ে বলল রাদ
_ সাবধানে ভোর, সাবধানে, এভাবে ছুটো না। উল্টিয়ে পরবে তুমি।

পা যেন থামছেই না। ভোর ছুটতে থাকে আগের গতিতেই। পাহাড়ি এলাকায় এই একটা সমস্যা। একবার ছুটতে থাকলে প্রায় সময় গতি হারাতে হয়। কয়েক টা দম নিয়ে রাদ ও দৌড়াতে থাকে। বেশ কিছু ক্ষন পর ভোরের নাগাল পায়। চেপে ধরে মেয়েটার হাত। হাঁপাতে হাঁপাতে ধমকের সুরে বলল
_থামছিলে না কেন? জানো কতো টা বিপদ হতে পারতো?

_আমি থামতে পারছিলাম না।

মাথা টা নিচু করে ফেলে ভোর। যেন এখনি কেঁদে দিবে। প্রিয় মানুষরা বকা দিলে কান্না পায়। এমনি প্রচলিত কিছু কথা শুনেছিলো রাদ। অবশ্য প্রমান ও পেয়েছে। তবে ভোর কেন কাঁদছে? রাদ কি ওর প্রিয় মানুষ?

সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ। ভোর কিছুতেই যাবে না। এই পাহাড়েই বসে থাকবে আজ। ঘাসের উপর পা মেলে বসে আছে মেয়েটা। কখনো বা চোখ বন্ধ করে শুনে নিচ্ছে ঝর্নার আওয়াজ। কিছু কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে দুই পাখা ছড়িয়ে। ছোট বেলার মতো এখন আবারো দুর্ভেদ্য সেই ইচ্ছে হচ্ছে পাখি হয়ে উড়ে যেতে। চোখ বন্ধ করে হাসছে ভোর বিষয় টা পরিলক্ষিত হতেই কানের কাছে মুখ নিয়ে রাদ বলল
_কি ভাবছো?

চমকে তাকায় মেয়েটা। যাঁর ফলে ছেলেটার ঠোঁট স্পর্শ করে ওর গাল। দুজনেই বিব্রত বোধ করে তবে মুহূর্তেই সামলে নেয়। লাজুক রঙা গাল নিয়ে ভোর বলল
_ভাবছিলাম, যদি পাখি হতাম তবে উড়ে যেতাম বহু দূর। কতো রঙিন হতো জীবন?

_কেন এখন রঙিন নয়?

না করতে গিয়ে না করতে পারলো না ভোর। ঝটপট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলো। বলল
_রঙিন নয় তবে রোদ্দুরের ছায়া রয়েছে। জীবন সুন্দর।

মৃদু হাসে রাদ। ভোরের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া টা আগেই আঁচ করেছিলো ওহ। ওহ জানে না কতো টা ভালো রাখতে পেরেছে ভোর কে। তবে চেষ্টার কোনো খামতি কি আছে?
দায়িত্ব বোধের কোনো অবহেলা করেছে ওহ? দায়িত্ব শব্দ টা মাথায় আসতেই ভয়ার্ত চোখে মেয়েটা দিকে তাকায় ওহ। দায়িত্ব! সত্যিই তো একটি বিশেষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছে ওহ। শুকনো ঢোক গিলে ভোরের থেকে কিছু টা দূরে অবস্থান করে। এতো সব কাহিনী তে ভুলেই গিয়েছেলো মেয়েটা পরিপূর্ন ভাবে ওর স্ত্রী।

চলবে

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_23

‘ শুভ জন্মদিন ভোর ‘

ম্যাসেজ টা দেখে প্রফুল্লতা ছড়িয়ে পরলো অন্তকর্নে। ঠিক রাত বারো টায় জীবনে প্রথম কেউ উইস করলো। বিষয় টা তে অন্য রকম প্রাপ্তি মিলে। হাসতে হাসতে ব্যলকনিতে চলে এলো মেয়েটা। তখনি পেছন থেকে কেউ কাঁধে স্পর্শ করলো। না চাইতে ও শরীর টা কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। ভয় পেয়েছে খুব। হাঁটু তে হাত দিয়ে হেসে চলেছে রাদ। নিশুতি রাতে সেই হাসির শব্দ বহু দূর অব্দি শোনা যাচ্ছে বোধহয়।তবে ছেলেটার কোনো ধ্যান নেই। মেয়েটা অনধিক চিন্তায় পরে গেল। এতে কোনো সন্দেহ নেই রাদ চতুর ছেলে। তবে মানুষ অতি আনন্দে হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে এটাও সত্য। যেহেতু রাত দশ টার পর হোস্টেল এ নট এলাউ নামক একটি ঘন্টা লাগানো। তাই যতো চিন্তা। হাসি থামাতে পারছে না ছেলেটা। মৃদু স্বরে মেয়েটা বলল
_এতো জোড়ে হাসবেন না। কেউ শুনে নিলে বদনাম হবে।

_কিচ্ছু হবে না।

_কেন?

_বিকজ তুমি

পরবর্তী শব্দ টা উচ্চারন করলো না ওহ। জানার প্রবণতা বেড়ে চলেছে তবে রাদ সে শব্দ টি উচ্চারন করছেই না। বরং মেয়ে টা কে ডিঙিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালালো। পথিমধ্যে বাঁধা দিলো ভোর। প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলল
_বিকজ আমি কি? পুরো টা শেষ করলেন না কেন?

_তেমন কিছু না। জাস্ট মজা করছিলাম, আসো কেক কাঁটবে।

_আচ্ছা।

কেক কাঁটা শেষে মেয়েটির হাতে ছোট্ট একটি বক্স তুলে দেয় রাদ। ভ্রু টা সংকুচিত করে ভোর শুধালো
_এটা কি?

_গিফ্ট।

_কি গিফ্ট?

_গিফ্ট তো খুলে দেখতে হয়। কখনো বলে?

মেয়েটি দুর্ভেদ্য হাসলো। রাদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বলল
_আমি মানুষ টা ব্যতীত সমস্ত কিছুই আপনার দেওয়া। সেখানে গিফ্ট এর কি প্রয়োজন ছিলো? সব কিছুই তো আপনি দিয়েছেন।

_গিফ্ট আর সাধারন কিছু দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

_আচ্ছা। তো খোলা যাক ডাক্তার সাহেব এর দেওয়া গিফ্ট।

_হায় ডাক্তার সাহেব বলে সম্বোধন তো করছো। তবে ডাক্তার হতে পারলাম নাকি তা নিয়ে সন্দেহ।

_কেন?

_দুপুরে লাইসেন্স দেওয়া হবে। যতোক্ষন অব্দি হাতে না পাবো শান্তি নেই মেয়ে।

কথা টা বলতে বলতে বেডে গাঁ এলিয়ে দিলো রাদ। প্রতি টা মানুষের একটি বিশেষ লক্ষ্য থাকে।আর সেই লক্ষ্য টা পূরন হওয়ার কিছু ক্ষন আগের মুহূর্ত টা হয় সব থেকে বেশি যন্ত্রনা দায়ক। এই দম বন্ধ করা অনুভূতির কথা প্রকাশ করা যাবে না। চরম অস্বস্তি ময় একটি সময় পার করতে হয়। রাদ ও সেই অস্বস্তি ময় সময় টি পার করে চলেছে।
.
লাইসেন্স টা হাতে নেওয়ার সময় হাত টা কাঁপছিলো রাদের। যা কারো দৃষ্টির অগোচর হতে পারে নি। ছেলেটার এমন অবস্থা দেখে হোস্ট প্রশ্ন করলেন
_ডক্টর ইফতিহার রাদ। নিজের নামের সাথে ডক্টর ট্যাগ টার বৈধ্যতা গ্রহনে সবার মন প্রফুল্ল থাকে আপনার হাত কাঁপছে কেন?

জীবনে এই প্রথম এতো পরিমানে নার্ভাস ফিল হলো ছেলেটার। ঠোঁট টা শুকিয়ে কাঠ প্রায়। জ্বিভের আগা দিয়ে ঠোঁট টা জীবন্ত করলো। মাইক্রোফোন টা হাতে তুলে নিয়ে সামনে তাকালো। অডিটোরিয়ামে অবস্থিত রয়েছে দেশের গন্য মান্য ব্যক্তি জন।
ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ টা বোধহয় সবাই শুনতে পেলো। পুরো অডিটোরিয়াম স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। এখানে থাকা প্রতি টি মানুষ রাদ কে চিনে। কনফারেন্স মিটিং কিংবা প্রোগাম সেটিং সর্ব ক্ষেত্রেই বক্তব্য প্রদান করেছে ছেলেটা। ছোট থেকেই বেশ পারদর্শী। তবে আজ এমন অবস্থা কেন?
ক্লান্তি ময় একটি নিশ্বাস ফেলে রাদ বলল
_ ধন্যবাদ আমাকে কিছু বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। এই মুহুর্তে আমি আমার জীবনের সব থেকে এলোমেলো বক্তব্য প্রদান করছি। আমি প্রচন্ড নার্ভাস। আমি বিশ্বাস করতে পারতেছি না এই সত্য কে। এতো গুলো বছর এই একটি প্রাপ্তির জন্য পরিশ্রম করেছি। পড়াশোনা করেছি একটা মৃত লক্ষ্য নিয়ে। যে লক্ষ্য টি আজ জীবন্ত হয়েছে। আমার কাছে পৃথিবী টা কে রহস্য ময় কোনো গুহা মনে হচ্ছে। কতো টা সময় পেরিয়ে নিয়েছি, তবে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে এই তো গুটি গুটি পায়ে স্কুলে গিয়েছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি ব্যতীত কোনো কিছুই সম্ভব নয়। ধন্যবাদ সকল কে, আমি আমার প্রাপ্তি টুকু নিজের কাজের মাধ্যমে সকলের মাঝে বন্টন করে দিবো ইনশাআল্লাহ।

কড়তালি তে ভরে উঠলো পুরো অডিটোরিয়াম। রামিসার দু চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পরে যাচ্ছে। সত্যিই ছেলেটা কতো বড় হয়ে গেল।

একদম ই শেষ প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ভোর। বহু কষ্টে এই স্থান টা খুঁজে পেয়েছে। রাদ এর সাফাল্যের একটি মাধ্যম দেখতে পেয়ে যেন নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হলো। সাহসিকতার পরিচয় টুকু যেন এক বিশাল প্রাপ্তি।

সবার সাথে ফটো সেশন শুরু হয়েছে। যে কোনো অনুষ্ঠানের আকর্ষন হলো ফটো সেশন। কতো শতো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে একটি ফটো তোলার জন্য। যেন এই ফটো তুলে নিজেকে ধন্য করবে তাঁরা। প্রথম প্রথম কিছু টা মুশকিলের মধ্য পরলে ও ছেলেটা এখন উপলব্ধি করতে পারে ফটো সেশন হলো একটি স্বপ্ন। গুনি ব্যক্তির সাথে একটি ছবি বাঁধাই করা যেন গর্ব বোধের কারন। তাই নির্দ্বিধায় সকলের সাথে ছবি তুললো ছেলেটি।

রামিসা আর ইফতিহার কে সালাম করলো ছেলেটা। সব সময় ছেলে কে বুকে জড়িয়ে ধরলে ও আজ বুকে জড়িয়ে ধরলেন না ইফতিহার। বরং ছেলের কপালে কয়েক টা গভীর চুমু দিলেন। চোখ থেকে পানি মুছে জড়িয়ে নিলেন আদুরে মায়ায়। সামান্য ভাঙা গলায় বললেন
_আমার ব্রেভ বেটা। জীবনে অনেক বড় হও।

_আই লাভ ইউ ড্যাড আই লাভ ইউ মোর এন্ড মোর।

রামিসা কে জড়িয়ে ছেলে টা কেঁদেই দিলো। ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে বাহবা দিলেন রামিসা। বললেন
_সফলার মুখ দেখে কাঁদতে নেই বেটা। নিজের কর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকো।

_আই ট্রাই মাই বেস্ট মম। শুধু তোমরা পাশে থেকো।

সামনে তাকাতেই ঝটকা খেলো ছেলেটি।প্রগাঢ় দৃষ্টি মেলে সন্তান আর বাবা মায়ের ভালোবাসা দেখে চলেছে ভোর। দূর থেকে ও বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি কাঁদছে। কোনো মতে রামিসার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সে দিকে প্রস্থান করলো। তবে তাঁর আগেই সরে গেল ভোর।

গেটের কাছে এসে খপ করে হাত ধরে ফেললো রাদ। হেঁচকা টান পরতেই কিছু টা কাছে এসে পরে মেয়েটা। মাফলার দিয়ে ঢেকে রাখা মুখ। এক টানে মাফলার খুলে ফেললো রাদ । দুজনের দৃষ্টি দুজনের চোখে যেন লেপ্টে রয়েছে। রাদ বলল
_কি ভেবেছো মেয়ে সামান্য মাফলার তোমাকে আড়াল করতে পারবে? আমি তোমাকে চিনতে পারবো না।
.

ওয়াইন এর গ্লাস টা নড়াচড়া করছে নীলাশা। স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে রেড ওয়াইন যেন র/ক্ত সমেত। ধীর পায়ে ট্রেরেস এর দিকে আগায় মেয়েটা। সূর্যোদয়ের জন্য বিখ্যাত দেশ জাপান। বেশ ভালো একটা রিসোর্ট এটা। মিনিস্টার এর মেয়ে বলে কথা।

ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে আসেন একজন সার্ভেন্ট। সামান্য মাথা নিচু করে বললেন
_ম্যাম ফাংশন শুরু হয়ে গেছে।

_আই হেভ নো ইন্টারেস্ট।

_ বাট

_আউট। আই সেইড গো আউট।

শেষোক্ত কথায় মেয়েটি ভয় পেয়ে গেল। দ্রুত বেগে স্থান ত্যাগ করলো। রেড ওয়াইন টা এক নিঃশ্বাসে পান করে গ্লাস টা ছুঁড়ে ফেললো মেঝে তে। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল গ্লাস টি। নতুন নয় এটা। রোজ এমন টা করে ওহ। এক গ্লাসে দ্বিতীয় বার ওয়াইন পান করে না মেয়েটি।

” ভাগ্য কে দোষ দেওয়া বড় বোকামি রোজিনা। তোমার মেয়ে যেটা করছে সেটা তোমার ভাগ্যের দোষ নয় বরং নীলাশার নিজের তৈরি করা কিছু অনৈতিক ইচ্ছা। ”

কথা টা বলে গভীর শ্বাস ফেললেন কাইসার। রোজিনা কেঁদে যাচ্ছেন। মেয়েটির এই অবস্থা, ছেলেটা ও কাছে থাকে না । দুটো সন্তান থেকে ও যেন তিনি নিঃসন্তান।

_কেঁদে কি হবে?

_আমার ভাগ্য টাই খারাপ।

_আবার এক কথা কেন বলছো? দেখো রোজিনা আমি সাফ সাফ বলেছি রাদ কে তোমার মেয়ে ভালোবাসে, তবে এটা যেন ভুলে না যায় ঐ ফ্যামিলির সাথে আমার শত্রুতা রয়েছে। ভুলে যেও না চার টা বছর জেলে পঁচে মরতে হয়েছিলো ওদের জন্য।

_কিন্তু

_বিরক্তিকর তুমি। ন্যায় অন্যায় শিখাতে আসবে না আমায়। এই শহরে কেউ সাধু নয়। আমি জ্বাল টাকার ব্যবসা করেছি প্রফিট এর জন্য। এই এতো শত বিলাসিতা পেয়েছো আমার জন্য। আর শোনো এইসব কান্না কাঁটি বন্ধ করো। আমি আমার দুই সন্তান কেই ভালোবাসি। তবে এটা ও মনে রাখতে হবে এক সন্তানের জন্য আরেক সন্তান কে পানি তে ফেলতে পারি না আমি।

_ আমরা কি করতে পারি আর? দু ভাই বোন ই হয়েছে চরম জেদ সম্পূর্ন। বোনের জন্য নিজের জান টা বাজি রেখেছো ছেলে টা। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

রোজিনা চলে গেলেন। কাইসারের মনের ভেতর চরম প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। নীলাশা রাদ কে ভালো না বাসলে এই ফ্যামিলি কে বহু দিন পূর্বেই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেন তিনি। কিন্তু আফসোস এখন চোরের মতো থাকতে হচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here