#চলো_রোদ্দুরে,24,25
#ফাতেমা_তুজ
#part_24
প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করছে রাদ। গত ছয় মাসে গুনে গুনে মাত্র আট বার দেখা করেছে ভোরের সাথে। অবশ্য ভোর নিজে ও খুব ব্যস্ত। পড়াশোনা কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে ধরে নিয়েছে। তবে দুজনের মাঝে নিয়মিত কথা হয়। ফোনে কিংবা ভিডিও কল এ।
সময় মতো রাদ ফোন করবেই।যদি ও এদিক থেকে কিছু টা পিছিয়ে আছে ভোর। যেমন টা হলো একটু আগে। ছেলেটা কয়েক বার ফোন করলো। তবে ফোন রিসিভ হলো না। ভোর এর সাথে একটা টাইম সেট করা। সকাল ছয় টায় ঘুম থেকে উঠে রাদ কে যেন কল করে। তবে আজ কল করে নি সেই কারনেই ভোর কে কল করেছে ওহ। ফোন রিসিভ হচ্ছে না দেখে সামান্য চিন্তিত হলো। এদিকে অফিস টাইম ও কাছাকাছি, দুপুরে মেডিকেলে যেতে হবে। মাঝে আধ ঘন্টার মতো সময়। তাই শুট নিয়ে বেরিয়ে আসলো। ছেলেকে বের হতে দেখে রামিসা বললেন
_কি হলো রাদ। আজ এতো সকালে কেন বের হচ্ছো? অফিস তো আট টা থেকে এতো আগে কেন যাচ্ছো।
কোনো মিটিং রয়েছে?
_একটু কাজ আছে মম।
_আচ্ছা। বসো , নাস্তা করে যাও।
_উহহু তাহলে অফিস এর লেট হবে।
_কোনো লেট হবে না। আমি জুস আর ব্রেড দিচ্ছি। বাটার মাখিয়ে খেয়ে যাও।
_মম প্লিজ।
_কথা বাড়াবে না রাদ। লাঞ্চ করার জন্য ও তোমাকে পাই না। ফিরো রাত নয়টায়।
রামিসার ব্যথা টা অনুভব করলো রাদ। তাই কথা না বাড়িয়ে টেবিলে বসে পরলো। ছেলে কে যত্ন সহকারে খাবার পরিবেশন করলেন তিনি। পত্রিকা হাতে নিয়ে ডাইনিং এ আসলেন ইফতিহার। ছেলে কে দেখে কিছু টা অবাক হলেন তবে প্রশ্ন করলেন না। রাদ বলল
_গুড মর্নিং ড্যাড।
_গুড মর্নিং বেটা।
খাবারে মনোযোগী হলো রাদ। যতো দ্রুত খেয়ে বেরোনো যায় ততোই মঙ্গল। রামিসা কে কিছু একটা ইশারা করলেন ইফতিহার। রামিসা সম্মতি জানিয়ে রুমে চলে আসলো। ইফতিফার বললেন
_এডুকেশন এর বিদেশে এপ্লাই করবে রাদ। ডিগ্রি নিয়েই ফিরতে হবে।
_কতো সময়ের কোর্স?
_দু বছর। বাট আমি চাচ্ছি দুটো ডিগ্রি নিয়েই আসো তুমি।
_ আম নট
কথা টা পুরো শেষ করতে পারলো না রাদ। তাঁর পূর্বেই বাঁধা প্রদান করলেন ইফতিহার। ছেলের মাথায় হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললেন
_আমরা তোমাকে ভালোবাসি বেটা। তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আমাদের। তবে এই কষ্টের জন্য ভালো কিছু ফেলে রাখা উচিত নয়।পড়াশোনা অন্তত জরুরি। আমি জানি দুটো ডিগ্রি নিয়েই দেশে ফিরবে তুমি। যদি ভাবো বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাবে। তবে বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে চাও। তবু ও যেতেই হবে।
_তোমার ড্যাড ঠিক ই বলছেন। তুমি চাইলে মেয়ে দেখবো আমরা।
রাদ আর কিছু বললো না। শুধু মাত্র একটু হাসলো। ছেলের হাতে ফর্ম দিয়ে দিলেন রামিসা। ইফতিহার আর তিনি উঠে গেলেন। আপাততো রাদ কে একা থাকতে দেওয়াই মঙ্গল।
রকিং চেয়ারে বসে ছিলেন ইফতিহার। দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ করলো রাদ। মুখে বলল
_আসবো ড্যাড?
_হ্যাঁ আসো বেটা।
_আমি চাচ্ছিলাম আজ অফিস করবো না।
কিছু টা অবাক চোখে তাকালেন তিনি। পরে বুঝতে পারলেন ছেলের মন ভালো নেই। স্মিত হাসলেন। বললেন
_জীবন টা অনেক বড় হয় বেটা। তাই আমাদের আচারনে কষ্ট পেও না। আমরা চাই তুমি অনেক বড় হও। সামান্য কিছু মায়ার জন্য পিছিয়ে যেও না।
_তোমার আমার কাছে সামান্য নয় ড্যাড। একটু ও সামান্য নয়।
ছেলে কে বুকে চেপে ধরলেন ইফতিহার। উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য বিদেশে যাওয়া খুব বেশিই জরুরি। না হলে কিসের অভাব ওনার? যে এক মাত্র ছেলে কে বিদেশ পাঠাতে হবে।
.
নিজের কষ্টের দাঁড়ি পাল্লায় পরে ভোরের কথা বেমালুম ভুলে গেছে রাদ। হঠাৎ মনে পরায় একে বারে থমকে গেল। চুল গুলো খামচে ধরে শ্বাস ফেললো। মোটে ও উচিত হয় নি এটা। ঝিলের পাড় থেকে চলে আসলো হোস্টেলে।
পরে পরে ঘুমোচ্ছে ভোর। দরজায় নক করে সাড়া না পাওয়ায় চাবি দিয়ে ডোর খুললো। মেয়েটা এতো ঘুমোচ্ছে কেন কে জানে। ফোন টা দেখে বুঝলো সাইলেন্ট করা। হালকা হাতে ভোর কে স্পর্শ করে বলল
_এই মেয়ে এতো ঘুমোচ্ছে কেন?
দু বার ডাকার পর ও সাড়া দিলো না মেয়েটি। পানির গ্লাস থেকে কিছু টা পানি নিয়ে মুখে ছিটিয়ে দিতেই ধরমরিয়ে উঠলো। বলল
_ডাক্তার সাহেব আপনি! কখন এলেন?
_অনেক ক্ষন হয়েছে। দশ টা বাজে এখন। ঘুম থেকে উঠো নি কেন? তিন্নি এসে কয়েক বার ডেকেছে অথচ নাস্তা করবে না বলেছো। শরীর খারাপ?
_না মানে কাল রাতে একদম ই ঘুম হচ্ছিলো না। তাই দুটো স্লিপিং ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছি।
_দুটো খেয়েছো কেন?
_ঘুম আসছিলো না যে।
_বড্ড ভুল করলে। আর খাবে না। তাছাড়া ঘুম না আসলে ও এভাবে স্লিপিং ট্যাবলেট খাবে না।
_আচ্ছা।
_ফ্রেস হয়ে আসো। আমি এখানেই আছি।
মাথা টা ঝাঁকিয়ে চলে গেল ভোর। ফ্রেস হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিলো। রাদ তাকাতেই দেখতে পেলো মেয়েটার মুখে কিছু একটা ভর করেছে। চোখের স্থিরতার সাথে রয়েছে এক পশলা কাতরতা। বুক টা হু হু করে উঠলো। ছুটে গেল মেয়েটির কাছে। ব্যস্ত হয়ে বলল
_এমন কেন দেখাচ্ছে তোমায়।
_কেমন?
_বিধ্বস্ত আর ভঙ্গুর।
মাথা টা নিচু করে ফেললো ভোর।ছেলেটার কপালের চামড়ায় ভাঁজের সৃষ্টি হয়েছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় ওহ। মেয়েটার মুখ উঁচু করতেই দেখে নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে গেছে। আকুতি করে রাদ বলল
_বলো কি হয়েছে তোমার?
_গ্রামের কথা মনে পরছে ডাক্তার সাহেব। একটি বারের জন্য যাবো আমি। প্লিজ একটি বার।
নাকের ডগা টা লাল হয়ে উঠলো। ভোরের উপর সামান্য ক্ষিপ্ত হলো রাদ। চাঁপা রাগের সাথে বিরক্তি নিয়ে রোষ কন্ঠে বলল
_বলেছি তো, যে প্রতিজ্ঞা আমি করেছি তা ফুলফিল না করে গ্রামে নিয়ে যাবো না।
_কিন্তু।
_কোনো কথা বলবে না আর। ফ্রেস হয়েছো নাস্তা দিলে। নাস্তা খেয়ে নিবে। আর হ্যাঁ পড়াশোনা তে মনোযোগী হও। জবাব দেওয়ার এবিলিটি না হলে গ্রামে যাবে না আর এটাই ফাইনাল।
ধপ ধপ শব্দ করে চলে গেল রাদ। ভোর কাঁদছে, খুব কাঁদছে। পরিবারের কথা মনে হলে, ওহ ই বা কি করবে?মানুষ তো। পরিবার কে ভালোবাসে এ সত্য কেমন করে ভুলবে?
.
আজ মন টা ভীষন ভাবে বিক্ষিপ্ত। নিজের সাথে নিজের লড়াই করে যাচ্ছে রাদ। মেয়েটা কে কিছু তেই বোঝাতে পারে না এই সময়ে গ্রামে গেলে নানান জনে নানান কথা বলবে। তাছাড়া গ্রাম থেকে আসার সময় রাদ বলেছিলো সকলের আদর্শ হয়ে ফিরবে ভোর। অন্ধকার কে পিষে ফেলে রোদ্দুর নামাবে ভোর। এখন গেলে সমস্ত কথা মিথ্যে হয়ে যাবে। আর সেটা কিছু তেই হতে দিবে না রাদ।
পাশেই বসে আছে রনিত। জীবনের সমস্ত কথা জানে ছেলেটা। তবে ভোর এর বিষয়ে তেমন কিছু বলা হয় নি। কেন যেন আজ ইচ্ছে হচ্ছে।তাই রনিতের হাত টা ধরে বলল
_দোস্ত কিছু সত্য জানাবো তোকে। আমি আশা করছি তুই এই সত্যের মর্যাদা দিবি।
_কি হয়েছে তোর? এমন লাগছে কেন।
_বলবো। আগে কথা দে এই কথা যেন কেউ না জানে।
_আচ্ছা দিলাম কথা। এখন বল কি বলবি।
আকাশের দিকে মুখ করে রাদ। দু চোখ কেমন জ্বলছে। ভেতর টা ও পুরছে। কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। একটা অজানা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে দুজনে।এ সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভাবতে ও পারে না। রনিত কে সমস্ত টা খুলে বলতেই রনিত বলল
_আমার মনে হয় আপাততো এগুলো নিয়ে না ভাবাই ভালো। তুই তো বলিস ভবিষ্যত কল্পনা করে বর্তমান নষ্ট না করতে।
_হ্যাঁ সেটাই।
_আর শোন মেয়ে টার কোনো দোষ নেই। পরিবারের কথা মনে হতেই পারে। এর জন্য শুধু রাগ দেখানো উচিত হয় নি। তোর মতো শান্ত মস্তিষ্কের মানুষ কি করে এই ভুল করে?
_আই নো, আই নো। বাট তখন কেন যেন রাগ হলো আমার। এদিকে মম ড্যাড ওহ দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
_দেখ রাদ আঙ্কেল আন্টি চায় তুই আরো বড় হ। তোর রেজাল্ট ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট। আর তুই খুব সহজেই পারবি। যেহেতু অতীতে কিছু টা অগোছালো হয়ে আছে তাই তোর উচিত বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে পরে সব কিছু সামাল দেওয়া। আপাততো পড়াশোনা তে ফোকস কর। পরে না হয় অতীতের কথা ভেবে সমাধান করা যাবে। দুজনের ই সময় প্রয়োজন।
আর আছি তো আমি। ভোর কে দেখার দায়িত্ব আমার। বোন বলে সম্বোধন করেছি না? আমার উপর বিশ্বাস আছে তো?
_প্রচন্ড।
রনিত কে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটি। বুক থেকে যেন পাথর নেমে গেল।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে
#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_25
শিশির ভেজা সকালে এক ঝাঁক রোদ এসে স্পর্শ করে গেল ভোর কে। ঘুম থেকে উঠেই দোয়া পাঠ করলো মেয়েটি। বেশ কিছু দিন যাবত নামাজ মিস হচ্ছে ওর। বিষয় টা যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো। চিন্তা আর মন খারাপের জন্য সৃষ্টিকর্তার থেকে দূরে সরে এসেছিলো। ভাবতেই কেমন গাঁ কাঁপুনি দিয়ে উঠে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নামাজের পাটি তে সেজদায় লুটিয়ে পরলো। আজ মন খুলে আল্লাহর কাছে চাইবে মেয়েটি।
নামাজ শেষে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। হাত পাঁয়ে সামান্য ব্যথা অনুভব হলো। বোধ হয় শোয়ার দোষে এমন হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে জানান দিলো ছয় টা বাজে। এ সময় টা তে রাদ কে কল করার কথা। যদি ও রাদ রেগে আছে তবু ও কল করা প্রয়োজন বলে মনে হলো। ছেলেটি কে কল করতেই সেকেন্ডে রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ব্যথিত শ্বাস শোনা যাচ্ছে। কাঁপা কন্ঠে মেয়েটি বলল
_কালকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমি। আসলে আমি একটু বেশিই বলেছিলাম।
_তোমার আবদার টা অনুচিত ছিলো না ভোর। অনুচিত ছিলো তোমার প্রতি আমার রাগ করা টা। আমি তোমাকে ঠিক করে বোঝাতে পারি নি।
_আমি আবারো বলছি আমি দুঃখিত।
_আচ্ছা ছাড়ো। কল করেছো খুশি হয়েছি। ভাবলাম কল করবে না তাই মনে মনে কল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। নাস্তার জন্য ডাক পরেছে?
_উহুহ।
ক্ষনকাল নীরবতা বিরাজমান। কেউ যেন কথা খুঁজে পাচ্ছে না রাদ বলল
_আজ কলেজ আছে তোমার?
_উহহু যাবো না।
_ কেন যাবে না। পরীক্ষার কথা মাথায় আছে তো?
_এইচ এচ সি পরীক্ষার এখনো বেশ অনেক গুলো মাস বাকি। এই তো কিছু দিন পূর্বে সেমিস্টার এক্সাম দিলাম।
_অনেক গুলো দিন পার হয়ে গেল তাই না?
_অনেক গুলো দিন নয় বরং মাস পেরিয়েছে। পুরো চৌদ্দ মাস।
কিছু টা হাসলো ছেলেটি। ভোরের স্বাভাবিক ব্যবহার ওর মনে স্বস্তি প্রদান করলো। তবে বিদেশে যাওয়ার কথা মনে হতেই ছেলেটির বুকে পাথর এসে দাঁড়ালো। ধীর কন্ঠে বলল
_আজ কে দেখা করবো আমরা। কিছুক্ষন আলাদা সময় পার করবো কেমন?
_আচ্ছা।
_একটা কথা বলবো?
_হ্যাঁ বলুন।
_যদি আমি না থাকি তুমি কি করবে?
_বুঝি নি।
কথা ঘোরাতে রাদ বলল
_আচ্ছা বাদ দাও। এখন শোনো আজ বিকালে এক সঙ্গে বের হচ্ছি আমরা। ডিনার শেষে হোস্টেলে ফিরবে।
_আচ্ছা।
ছেলেটি কল কেঁটে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। ভেতর থেকে চাঁপা গোঙানি এসে আষ্ঠে পৃষ্ঠে নিচ্ছে ওকে। জীবন বড় অদ্ভুত। শান্তি নামক অনুভূতি যেন হারাম হয়ে গেছে। সব কিছু পেয়ে ও যেন কিছুই নেই।
কড়া রোদ্দুরে খোলা মাঠে, এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বসে আছে রাদ। ছেলে টার মনে বার বার একি প্রশ্ন উঁকি দেয় মানুষ কেন সিগারেট খায়? এতো ক্ষন সময় পার হওয়ার পর ও ছেলেটা সিগারেট খেতে পারলো না। প্যাকেট টা ছুঁড়ে ফেললো ডোবা তে। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে পার্কিং এ এলো। মাথা নিচু করে ছিলো রূপ। রাদ কে দেখেই কাছে আসলো। ছেলেটার চোখে লেগে আছে বিষন্নতা। রূপ বলল
_ভাই ভোর
ছেলেটির কথা পূর্ন হওয়ার পূর্বেই রাদ বলল
_পছন্দ করিস?
_হ্যাঁ।
_সব কিছুর জন্য সময়ের প্রয়োজন রূপ। এমনি তেই এক টা কান্ড করে ফেললি। কতো টা ভয় পেয়েছিলো ভোর?
_ট্রাস মি আমার কোনো বাজে ইনটেনশন ছিলো না।আমি শুধু ওর হাত টা ধরে আড়ালে নিয়ে গিয়েছিলাম।
ক্লান্তির নিশ্বাস টা ফেললো রাদ। রূপের বাহু তে হাত রেখে বলল
_প্রচন্ড সরল মেয়েটি। ওর উপর কতো টা ঝড় গেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না। একটা সুন্দর ভবিষ্যতের অপেক্ষায় রয়েছে মেয়েটি। তুই ওর থেকে দূরে থাকিস।
_কিন্তু ভাই আমার সাথে কি ওর সুন্দর ভবিষ্যত হবে না?
_বিষয় টা আরো দেড় বছর পূর্বে হলে হতো। তবে এখন সম্ভব নয়।
_গত কয়েক মাস আমি অনেক ভেবেছি। আমি পারছি না।
মাথা টা নিচু করে ফেললো রূপ। ছেলেটার বাহু থেকে হাত সরিয়ে রাদ বলল
_ভোর কে ভুলে যাহ রূপ। মেয়েটা এখনো জানে না তুই ই রনিতের ভাই। আর রূপ ই নুহাশ। তাই আমি চাই না কোনো ঝামেলা হোক।
রূপের দু চোখ থেকে এক ফোঁটা শীতল পানি নেমে গেল। রাদের ভেতর টা ও জ্বলছে। কিন্তু কি করার?
.
পুরো সন্ধ্যা টা রাদের সাথে কাঁটালো ভোর। মেয়েটির সাথে তেমন কোনো কথাই হলো না। শুধু পাশাপাশি হাঁটা চলাই হলো। অবশ্য এ নিয়ে ভোরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। মেয়েটি হঠাৎ করেই হোঁচট খেল। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠতেই পেছনে তাকালো রাদ। ভোর কে বসে থাকতে দেখে ছুটে এলো। মেয়েটা আবারো পায়ে ব্যথা পেলো। রাদ বলল
_আমার হাতের সাহায্য উঠে দাঁড়াও।
রাদের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় ভোর। তবে হাঁটতে পারছে না। চোখে কিছু টা ঘোলা ঘোলা অনুভব হয়। রাদ বলল
_কি যে করো না তুমি।
_দুঃখিত।
_আমি না থাকলে তখন কি হবে?
_কোথায় যাবেন আপনি?
_হায়ার এডুকেশন এর জন্য ফরেন যাচ্ছি।
_ওহ।
মেয়েটির মুখের সহজ সাবলীল ভাষা হজম হলো না রাদের। ভোরের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটির কোনো ধ্যান ধারনা নেই। রাদ ও কিছু বলল না।
ফোনের রিং হতেই চমকে উঠলো রাদ। এতো টা সময় সামনের দিকে স্থির দৃষ্টি পাত করেছিলো ওহ। রনিতের কল দেখে রিসিভ করলো। বলল
_হ্যাঁ রনিত বল।
_রূপ ভোর কে পছন্দ করে আগে কেন বলিস নি?
_ওর কথা ছাড় তো। ছোট মানুষ, তাছাড়া এটা স্বাভাবিক।
_একটু ও স্বাভাবিক নয়। আমি চাই না ওর জন্য মেয়েটা বিপদের সম্মুখীন হোক। আমি ভাবছি বিজনেস এর জন্য ওকে ফরেন পাঠাবো।
_একদম নয় রনিত। এই সামান্য কারনে ওর জীবনের সুখ শান্তি কেন ঢাকা পরবে?
_কিন্তু রাদ।
_পরে কথা বলছি। আপাততো তুই ওকে কিছু বলবি না।
ওপাশ থেকে ভারী নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো রাদ। কল টা কেঁটে পাশে তাকালো। ভোর পাশে নেই। চার পাশে হন্তদন্ত হয়ে খুঁজতে লাগলো ছেলেটি। তীব্র থেকে তীব্র ব্যথা অনুভব হলো। তবে কি নিজের ভুলের কারনে মেয়েটি কে হারিয়ে ফেললো ওহ?
উপায় না পেয়ে রনিত কে কল করলো রাদ। পাগল প্রায় অবস্থা ছেলেটির। রনিত বলল
_লোকেশন ম্যাসেজ কর আমি এখনি আসছি।
_হুম।
ম্যাসেজে লোকেশন পাঠিয়ে দিলো রাদ। মাথা টা কেমন ফাঁকা লাগছে। চোখ টা ও অদ্ভুত ভাবে বিচলিত। মিনিট দশেকের মধ্য এসে পরলো রনিত। রাদের অবস্থা উদভ্রান্তের মতো। রাদ বলল
_মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললাম আমি। ওকে রোদ্দুরে নেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে অন্ধকারে ফেলে দিলাম।
_শান্ত হ রাদ। আমাদের পুলিশের কাছে যেতে হবে।
ছেলেটার পা যেন থমকে আছে। হাত ধরে নিয়ে গেল রনিত। ড্রাইভ করার অবস্থা নেই ওর। রনিত ই ড্রাইভ করে কাছের পুলিশ স্টেশনে আসলো। নিয়ম অনুযায়ী চব্বিশ ঘন্টার পূর্বে মিসিং ডায়েরী লেখা হয় না। তবে ক্ষমতার জোড়ে তখনি সবাই কে খোঁজার জন্য ফোর্স করলো রাদ।
ঘর্মাক্ত মুখের রাগ দেখে রনিত নিজে ও ভ্যাবাচ্যাকা খেল। শান্ত শিষ্ট ছেলেটি আজ এতো টা বিচলিত?
রনিত কে রেখেই ছুটতে লাগলো রাদ। পাগল, উন্মাদ, লাগছে ছেলেটি কে। রনিত কোনো মতে নাগাল পেলো ছেলেটির। বাহু ঝাঁকিয়ে বলল
_পাগল হয়ে গেছিস তুই?
_ওকে খুঁজতে হবে রনিত। প্রচন্ড ভীতু ওহ।ওকে খুঁজতে হবে। নিশ্চয়ই মেয়ে টা ভয় পাচ্ছে এখন।
_শান্ত হ আগে। বস
রাদ কে টেনে বেঞ্চে বসিয়ে দিলো রনিত। পানি এগিয়ে দিলো তবে পানি খেলো না ওহ। রনিত বলল
_একটু মাথা টা ঠান্ডা কর।
_আমার সাথেই ছিলো ওহ।রনিত, মেয়েটা আমার সাথে ছিলো। হঠাৎ করেই কি করে উধাও হতে পারে?
আশে পাশে তাকিয়ে রনিত বুঝতে পারলো জায়গা টা সুবিধার নয়। রাদের প্রতি রাগ হচ্ছে খুব। এই অসময়ে এই স্থানে কেন এলো ওহ?
_রনিত।
হালকা আর্তনাদ করে উঠলো রাদ। ছেলেটির চোখে পানি তে টুই টুম্বর। তখনি ফোন করলো ইনায়া। ভোরের বিষয় টা জানতেই মেয়েটা আঁতকে উঠলো। রনিত চিন্তা করতে বারন করলো। রাদ এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে। আকাশে পূর্ন চাঁদ। চারদিকে আলো তে ঝলমল করছে।
এই পূর্নিমার রাত টা যেন হয়ে পরেছে সব থেকে বেশি অন্ধকার। ভোর আর রাদের জীবনের কালো অধ্যায়। রোদ্দুরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি যেন হয়ে উঠলো সেই নর্দমার পঁচা গলা ঘন কালো আঁধার।
চলবে