এলোকেশী কন্যা’- [০২]

0
619

-‘এলোকেশী কন্যা’-
[০২]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ মুচকি হেসে বলল,”মুগুরকে নয়। কথাটা হবে, ‘কুকুরকে মুগুর দিতে হয়।’
কথাটা ভুল বলেছে বুঝে মেঘ জিহ্বায় কামড় বসিয়ে হাসল। রোদও হেসে মেঘের মুখ মুছিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর আরো কিছু শুকনো খাবার কিনে বিল মিটিয়ে বাসে উঠে বসল। মেহরীন বাসে নেই। হয়তো লজ্জায় চলে গেছে নয়তো এটাই তার গন্তব্যস্থল ছিল। সব যাত্রীরা আসলে পুনরায় বাস চলতে শুরু করল। ওদের নীল সাদা রং মিশ্রিত বাসটা দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে রাঙ্গামাটির পথে। মেঘ রোদের বুকে মাথা রেখে চুপটি করে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে। কিন্তু জানালার কাঁচ ভেদ করে প্রকৃতি দেখে তৃপ্তি পাচ্ছে না। তাই সে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে জানালা খুলে দিলো। তখন ভুরি ভুরি অবাধ্য বাতাস ঢুকে ওর চুল গুলোকে এলোমেলো করো দিলো। বাতাসের জন্য সে ঠিক মতো তাকাতে পারছে না। তাই বুদ্ধি করে চোখে সানগ্লাস পরে নিলো। এখন আর চোখে বাতাস লাগছে না দেখে মেঘ মুখ টিপে হাসল। অর্থাৎ বাতাসকে সে পরাজিত করেছে। রোদ সিটে মাথা ঠেকিয়ে মেঘের কান্ড দেখে নিঃশব্দে হাসল। তখন বাস কন্ডাক্টর এসে বললেন,
“বাবু জানালা আটকাও এসি চলছে।”
“আঙ্কেল আর এই একটু!”
মেঘ ওর শাহাদত আঙ্গুলের চিমটি পরিমাণ দেখিয়ে কথাটা বলল। ওর কথা বলার ভঙ্গি দেখে উনি হেসে চলে গেলেন। জোর দেখিয়ে আটকাতে বললে বাচ্চাটার মন খারাপ হয়ে যেতো। ব্যাপারটা উনার কাছেও খারাপ লাগত। মেঘ খুশি হয়ে উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জানালার বাইরে দৃষ্টি রাখল।
তখন পেছনের সিটের একজন যাত্রী বাসের মধ্যে হরহর করে বমি করে দিলেন। উনার এসি বাস সহ্য হয় না। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে এসি বাসে যাচ্ছেন। তাছাড়া উনি কিছুক্ষণ আগে পেট পুরো মাছ ভাত খেয়েছেন। সাথে মিষ্টি, মালাই চা, এবং পানটাও বাদ রাখেন নি। ভরপেট খেয়ে বাসের ঝাঁকুনিতে অবশেষে যা হওয়ার তাই হলো। মেঘ সেদিকে ঘুরতে গেলে রোদ ওকে নিষেধ করে কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মেঘ কান থেকে ইয়ারফোন খুলে বলল,
“জানো দাভাই? কুকুর রা খুব মজা করে বমি খায়। আমি পরশুদিন কোচিং থেকে ফেরার পথে দেখেছি।”
“ঘুমাও।”
রোদ ছোট থেকেই কারো বমি দেখতে পারে না। কেউ বমি করলে সে দশ হাত দূরে থাকে। নয়তো কাল ক্ষণ ভুলে সেও বমি করে দেয়। কিন্তু মেঘ হয়েছে তার বিপরীত। কারো বমি দেখলে ওর কিচ্ছু হয় না। বরং সে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করে, কেন বমি করছে? বমি করতে কষ্ট হচ্ছে নাকি? নিজের শরীরে বমি করছে, নাকি অন্যের শরীরে? এজন্য রোদ মেঘকে থামাতে ঘুমাতে বলল। নাহলে সে এখন বমি নিয়ে গবেষণা করা শুরু করত। ওই মহিলা বমি করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবার বমি করলেন। বাসের কন্ডাক্টর বিরক্ত হয়ে সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন। এখন এসব আবার পরিষ্কার করাতে হবে। সিটের সামনে পলিব্যাগ রাখা সত্ত্বেও বাসের মধ্যেই কাজটা সারলেন। কেউ আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে যে যার মতো বসে রইল।

তারপর ওরা যথাসময়ে রাঙ্গামাটি পৌঁছে রোদের বুক করা রিসোর্টে উঠল। রিসোর্টের বাহ্যিক দিকটা বেশ সুন্দর। ভেতরটাতে হরেক রকম লাইটের ঝলকানিতে অন্য রকম এক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। আর দেখতেও দারুণ লাগছে।
রোদ দো’তলার একটা রুমে প্রবেশ করে চারিদিকে চোখ বুলালো। রুমটা সুনিপুণ ভাবে সাজানো গুছানো। কাঠের মেঝে দেখে মেঘ লাফিয়ে পরখ করে দেখল, ভাঙ্গে নাকি? কিন্তু না কিছুই হলো না! তাই সে দৌড়ে গেল জানালার কাছে। একটু দূরে অন্ধকারে আবছা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড় দেখে মেঘের আর তর সইছে না। রাত না হলে এখনই সে দৌড়ে গিয়ে পাহাড় ছুঁয়ে আসত। অনেক দিন পর আজ লং জার্নি করে দু’জনেই বেশ ক্লান্ত। তাই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দু’জনেই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেল।
পরেরদিন সকালে ওরা রিসোর্ট ছেড়ে সাজেকের পথে রওনা দিলো। সেখানেও রোদ আরেকটা রিসোর্টের ব্যবস্থা করে রেখেছে। মেঘ পাহাড়, আকাশ, আর প্রকৃতির সৌন্দর্য ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এর আগে সে স্বচক্ষে পাহাড় দেখেনি। তাই ওর কাছে সবকিছু বিষ্ময়কর লাগছে। সাজেক পৌঁছাতে ওদের দেরী হয়ে গেছে। তাই রোদ দূরে কোথাও না গিয়ে মেঘকে আশ-পাশটা সব ঘুরে দেখাল। পাহাড়িদের দোকান থেকে মেঘের পছন্দে টুকিটাকি জিনিস কিনল। তারপর দুপুরে খেয়ে ওরা একটু ঘুমিয়ে বিকালে বের হলো। রোদ মেঘকে সূর্যাস্ত দেখা নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চির সবুজের মাঝে লাল আভা ছড়ানো সূর্যের অপরুপ সৌন্দর্য্য। কিন্ত মেঘের বায়না সে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সূর্যাস্ত দেখবে। রোদ বোঝাল, সন্ধ্যার পর পাহাড়ির এলাকা খুব বিপদজনক। তাছাড়া এখন পাহাড়ে উঠলে নামার আগেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে যাবে। তবুও মেঘ শুনল না। সে জেদ করে মাটিতে বসে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগল। রোদ বিরক্ত হয়ে একটা পাহাড়ে মেঘকে নিয়ে সাবধানে উঠল। ওদের উঠতে উঠতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। যারা আগে পাহাড়ে উঠেছিল, তারা একে একে সবাই নেমে যাচ্ছে। একজন যুবক রোদকে ডেকে বলল,”ভাই নেমে যান। সন্ধ্যার পর জায়গাটা খুব বিপদজনক। আর পাহাড়ে তো জন্তু জানোয়ারের অভাব নেই। ”
“জ্বি।”
কথাটা বলে রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে মেঘের দিকে তাকাল। মেঘ হাঁটু মুড়ে বসে দুই গালে হাত রেখে পাহাড় দেখছে। আহা! কি সুন্দর সবুজ সবুজ পাহাড়। যদিও পাহাড় সবুজ নয়।গাছগুলো দেখে এটা ওর অবুজ মনের ভাবনা আর কি। হঠাৎ মেঘ ভ্রু কুঁচকে রোদকে জিজ্ঞাসা করল,
“দাভাই, পাহাড় কী সিগারেট খায়?”
“হঠাৎ একথা কেন?”
মেঘ আঙ্গুল দিয়ে অদূরে পাহাড়ের মাথায় ধোঁয়া দেখিয়ে সুর টেনে বলল,
“ওই যে পাহাড়ের মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।”
“ওগুলো ধোঁয়া না কুয়াশা।”
“ওহ আচ্ছা।”
মেঘ এবার মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসল। আকাশটা পরিষ্কার পানির মতো ঝকঝক করছে। ওর মনে প্রশ্ন জাগল,’আকাশ কি পরিষ্কার পানি খায়?’ পানি না খেলে আকাশটা এত ঝকঝক করছে কেন?’ মেঘ প্রশ্নটা করার আগে রোদ বলল, ”চলো এবার যেতে হবে।”
এত সুন্দর আকাশ! এত সুন্দর পাহাড় রেখে ওর যেতে ইচ্ছে করছে না। তাই সে শক্ত হয়ে সেভাবেই বসে রইল। রোদ মেঘের হাত ধরে টানছে কিন্তু মেঘ কিছুতেই উঠছে না। তার একই কথা সে যাবে না। রোদ টানার ফলে মেঘ মাটিতে ছেঁচড়ে যাচ্ছে তবুও উঠতে চাচ্ছে না। এই জায়গাটা ওর বেশ পছন্দ হয়েছে। ওর খুব করে ইচ্ছে করছে, এখানে একটা ঘর বানিয়ে সারাজীবন থেকে যেতে। তাহলে রোজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্কুল কোচিংয়ে যেতে হবে না। পড়াশোনার ঝামেলা পোহাতে হবে না। আহা! পড়াশোনা না থাকলে কতই না ভালো হতো। এদিকে সবাই একে একে পাহাড় থেকে নেমে গেছে। এখন শুধু ওরা দু’জনই আছে। রোদ আশে পাশে তাকিয়ে মেঘকে বোঝাতে আদর দিয়ে বলল,
“ভাই আমরা আবার কালকে আসব। সন্ধ্যার পর এখানে গরিলা আসে।”
“না, না, তুমি শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাচ্ছ। আমি সব বুঝি দাভাই।”
“মেঘ আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। সব সময় জেদ ভালো লাগে না।”
রোদ বকছে দেখে মেঘ ছলছল করে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। ততক্ষণে ধীরে ধীরে চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। ঘন জঙ্গলের কারণে পাহাড়ের বুকে খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নামে। অদূরে বুনো বাদুড়ের দল চ্যা চ্যা শব্দ করে গাছের ডালে উল্টো করে ঝুলছে। পাশের জঙ্গল থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে। দিনের আলো বিদায় নিয়ে রাতের আঁধারের খেলা শুরু। পাহাড়ের সবুজ সবুজ গাছ গুলো ধীরে ধীরে ঘন আঁধারে ডুবে যাচ্ছে।
রোদ ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিল! তবুও সে সাহস করে মেঘকে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। অন্ধকার দেখে মেঘও গুটি গুটি পায়ে রোদের সাথে হাঁটতে লাগল। রোদকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ হাঁটতে হাঁটতে করুণ সুরে বলল,”সরি দাভাই, আমি আর জেদ করব না। তুমি আর রাগ করো না প্লিজ। তুমি কথা না বললে আমি কষ্ট পাচ্ছি।”
“আমি রাগ করিনি সোনা। চলো আর একটু দ্রুত পা চালাও।”
কথাটা বলে রোদ চিন্তিত হয়ে মেঘকে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তায় খুব দ্রুত হাঁটাও যাচ্ছে না।
ফোনের আলোয় পথ দেখে যতটুকু যাওয়া সম্ভব, ওরা যেভাবেই এগোচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে একপর্যায়ে ওরা অজান্তেই পথ হারিয়ে ফেলল। অদ্ভুত সব শব্দ ভেসে আসছে জঙ্গলের ভেতর থেকে। মেঘ আর পা চালাতে না পেরে মুখ থুবকে পড়ে গেল। শক্ত গাছের শেখরে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়ে সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। রোদ মেঘকে দ্রুত তুলে দেখল মেঘের হাঁটু ছিলে রক্ত বের হচ্ছে। রোদ মেঘের ক্ষত স্থানে রুমাল বেঁধে কোলে তুলে নিলো। মেঘ ভয়ে গুটিশুটি হয়ে রোদের বুকে মুখ লুকিয়েছে। অজানা ভয়ে রোদের বুকটাও দুরুদুরু কাঁপছে। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর আচানক রোদের ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। মেঘ আরো শক্ত করে রোদকে আঁকড়ে ধরল। রোদ অনেক চেষ্টা করেও ফোনটা আর অন করতে পারল না। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর এক পা ফেলারও বুদ্ধি নেই। কালো মেঘের আড়ালে আকাশটাও মুখ লুকিয়েছে। ঘন অন্ধকার আর আকাশ দেখে মনে হচ্ছে আজ ঘোর অমাবস্যা। অন্ধকার যেন চাঁদের সবটুকু আলো গোগ্রাসে গিলে ফেলেছে। রোদ আর দিশা না পেয়ে মেঘকে নিয়ে ওখানেই বসে পড়ল। মেঘ রোদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আছে। ওর অন্ধকারে থাকার অভ্যাস নেই। রোদ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে মেঘকে স্বাভাবিক রাখার। কিন্তু এই মূহুর্তে রোদ কথা খুঁজেও পাচ্ছে না। মেঘ তখন হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“দাভাই, আমরা কি এখন মরে যাব? আমি খুব ভয় পাচ্ছি দাভাই।”
“না সোনা, আল্লাহ ভরসা আমাদের কিচ্ছু হবে না। এই তো আমি আছি তোমার সাথে। তুমি ভয় পেও সোনাপাখিটা।”
কথাটা বলে রোদ আরো শক্ত করে মেঘকে বুকে জড়িয়ে নিলো। মেঘ ভয়ে মৃদু ভাবে কাঁপছে। এই পরিস্থিতিতে রোদের নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এখন কিভাবে কী করবে? সেও ভেবে পাচ্ছে না।
তখন বেশ কয়েকজনের পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। রোদ মৃদু স্বরে মেঘকে শব্দ করতে নিষেধ করে চুপ থাকল। কিন্তু
দূর্ভাগ্যবশত মশালের আলোয় কেউ একজন ওদের দেখে নিলো। সে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করে ওর অন্য সঙ্গীদের ডেকে নিলো। মেঘ রোদের র্শাট খামছে ধরে চোখ বন্ধ করে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। রোদ মেঘকে বার বার বলছে,”আমি আছি সোনা ভয় পেও না। দাভাই তোমার কিচ্ছু হতে দিবে না।”
রোদ কম্পতি কন্ঠে এসব বলছে ঠিকই। কিন্তু টেনশনে ওর মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ততক্ষণে অনেকজন মিলে ওদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। ওদের দেখে পাহাড়ের বসবাসরত বন্য জঙ্গি মনে হচ্ছে। রোদ কিছু বলার আগে ওরা মেঘকে জোর করে কেড়ে নিলো। মেঘ ভয়ে রোদের দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে দাভাই! দাভাই! করে কাঁদছে। রোদ ওদের অনুরোধের সুরে বলল,
“আ আমরা আপনাদের সঙ্গে যাচ্ছি। তবুও ওকে আমার কাছে দেন। বাচ্চাটা ভয় পাচ্ছে, প্লিজ!”
ওরা কেউ রোদের কথা শুনল না। বরং একে অপরের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগল। একজন মেঘকে কোলে নিয়ে উপরে ছুঁড়ে আবার ক্যাচ ধরল। বেশ কয়েকবার এমন করাতে মেঘ ভয়ে উচ্চশব্দে কাঁদতে লাগল। আর ওর চিৎকারে জঙ্গিদের উল্লাসটা যেন দ্বিগুন হারে বেড়ে গেল।

To be continue…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here