এলোকেশী কন্যা’- [০৫]

0
555

-‘এলোকেশী কন্যা’-
[০৫]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলো ওর দাদীর কথা শুনে মুখ তুলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল।রোদের এদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে উতলা হয়ে মেঘের জ্ঞান ফিরাতে ব্যস্ত। বৃদ্ধ মহিলা রেগে আলোকে পুনরায় ধমকে কর্কশ কন্ঠে বললেন,
“এই ছেমড়ি আমার কথা কানে হুনতাছোচ না?”
“দাদীমা উনারা খুব বিপদে পড়েছে। আর ছোট বাচ্চাটার অবস্থা খুব একটা ভালো না।”
কথাটা বলে আলো কাঁথাটা এনে মেঘের শরীরে জড়িয়ে দিলো। দাদীমা প্রচন্ড রেগে ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছেন। আলোর শেষ কথাটা রোদের কানে পৌঁছাতেই সে উঠে দাঁড়িয়ে বিনয়ী সুরে বলল,”দাদীমা আমরা অতি শীঘ্রই চলে যাব। আমার ভাইটার অবস্থা খুব একটা ভালো না। দয়া করে একটু সময় দেন আমাদের।”
রোদের কথা শুনে দাদীমার নজর গেল খাটের উপরে মেঘের দিকে। ফুটফুটে একটা বাচ্চা শরীরে জখম নিয়ে অবচেতন হয়ে শুয়ে আছে। উনি দৃষ্টি সরিয়ে রোদকেও ভালো মতো খেয়াল করলেন। রোদের শার্টে রক্ত দেখে বুঝলেন, ওরা সত্যিই বিপদে পড়ে আশ্রয় চাচ্ছে। কেন জানি, ওদের অবস্থা আর মায়াবী মুখ দেখে উনার মনটা একটু নরম হলো। উনি আলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আলো যা, দৌড় দিয়া হাকিম রে ডাইকা আন। সে নাড়ি দেইখা বুঝুক বাচ্চাডার কিরাম অবস্থা।”
দাদীর কথা শুনে আলো দৌড়ে গেল পাশের বাড়ির হাকিমকে ডাকতে। হাকিম হচ্ছেন, এখানকার হাতুড়িয়া একজন ডাক্তার। উনি রোগের প্রতিশোধক হিসেবে গাছগাছড়া দিয়ে থাকেন। কখনো সেই প্রতিশোধক সীমিত সময়ে দ্রুত অসুখ সারে। আবার কখনো মারাত্নক ভাবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। তবুও এখানকার বিদ্যাহীন মানুষ গুলো অগাধ বিশ্বাস নিয়ে উনার চিকিৎসা গ্রহন করেন। তাছাড়া পাহাড়ি অঞ্চলে সুচিকিৎসার কেনো উপায় নেই।
রোদ এ ব্যাপারে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। সে মেঘের হাতে পায়ে তেল মালিশ করছে আর আদুরে সুরে ডাকছে। চঞ্চল বাচ্চাটা ভয়ে চুপসে গেছে। হঠাৎ মেঘের হাতের কাটা অংশ দেখে রোদের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। সে মেঘে হাতে অসংখ্য আদর দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল। মেঘ ওর বড্ড আদরের ভাই। সে ভুলেও কখনো ওর গায়ে হাত তুলেনি। অথচ আজ! মেঘের হাতের কাটা স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে আছে। দাদী দরজার পাশে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে ওদের দেখছে।
একটুপরে, আলোর সঙ্গে একজন মধ্য বয়সী পুরুষ রুমে প্রবেশ করলেন। উনি মেঘের নাড়ি দেখে সবুজ রঙ্গের তরল প্রতিশোধক দিলেন। এবং গাছগাছড়া বেটে ওর ক্ষত স্থানে লাগাতে বললেন। তখন দাদী চিন্তিত সুরে রোদকে দেখিয়ে বললেন,
“হাকিম এই পোলাডারেও ঔষধ পত্রর দাও। ওর অবস্থাও ভালা মনে হইতাছে না।”
“দিতাছি চাচি।”
হাকিম রোদকেও প্রতিশোধক দিয়ে বিদায় নিলেন। রোদ চুপ মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দাদী পানের পিক ফেলে ওদের বিশ্রাম নিতে বলে স্থান ত্যাগ করলেন। আলো খাবার এনে রোদের পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“ওকে খাইয়ে তাড়াতাড়ি ঔষধ খাইয়ে দেন।”
“এগুলোতে কোনো সমস্যা হবে না তো? না মানে ক্ষত স্থানে ইনফেকশন হয়ে গেলে?”
” আমরা এই চিকিৎসা নিয়েই এখনো বেঁচে আছি। এখানে বড় কোনো ডাক্তারের হদিস পাবেন না। পাহাড়ি অঞ্চলের মেয়ে আমি, তাই প্রয়োজনে আমারও টুকটাক কিছু জানা আছে। আপনি চিন্তা করবেন না, আল্লাহ ভরসা।”
রোদ আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে আলোর কথায় মেনে নিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর, মেঘের জ্ঞান ফিরল। সে গুটিশুটি হয়ে রোদের বুকে হেলান দিয়ে বসে আলোকে দেখছে। আলো মেঘকে তাকাতে দেখে ওর মাথায় বুলিয়ে বলল,
“বাবু খুব কষ্ট হচ্ছে?”
মেঘ উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে ভাঙ্গা কন্ঠে বলল,”আ আমার নাম বাবু না। আমার নাম মেঘ মেহবুব।”
বাচ্চাটার কথা শুনে আলো মুচকি হেসে রোদের দিকে তাকাল। রোদ নিশ্চুপ হয়ে মেঘকে বুকে আগলে ধরে বসে আছে। মেঘ খুব চঞ্চল প্রকৃতির বাচ্চা বুঝে আলো মৃদু হেসে বলল,”আমি তোমাকে মেঘ বাবু ডাকি? এই নামে ডাকলে তুমি রাগ করবে?”
মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের দিকে একবার তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়াল। অর্থাৎ সে রাগ করবে না। তারপর আলোর কথার ছলে রোদ মেঘকে খাবার খাইয়ে, ঔষধ খাইয়ে দিলো। আলো মেঘের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলে, মেঘ আলোকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেল। আলো ব্যাপারটা খেয়াল করেও কিছু বলল না। আজ অনেক দিন পর, মেঘ দাভাই ছাড়া ওর মাথায় অন্য কারো হাতের স্পর্শ পেল। আর এই স্পর্শে মা মা একটা আদুরে ব্যাপার আছে। রোদ মেঘের এভাবে তাকানোর মানে বুঝে চুপ ছিল। তবে আলোর সরল
ব্যবহারে মেঘ বেশ সন্তুষ্ট। তাই হয়তো ওর মনে খুব সহজে আলোর জন্য একটা টান সৃষ্টি হলো। মেঘকে ঘুমাতে দেখে রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“আমরা রিমঝিম রিসোর্টে উঠেছি। আমাকে ওই রিসোর্টের যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিলে খুব উপকৃত হতাম।”
আলো মেঘের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মন খারাপের সুরে বলল,”আচ্ছা চলুন।”
দাদীকে বলে ওরা বের হতেই ঝমঝম করে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। যেতে না পেরে অগত্য ওই রুমে গিয়েই বসতে হলো। আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ অনবদ্য এক সুর তুলেছে। টেউ টেউ টিন থেকে শব্দ করে গড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারা। রোদ ঘুমন্ত মেঘকে আবার শুইয়ে দিয়ে রুমের ছোট জানালার পাশে বসল। দূর প্রান্তরে সবুজ গাছ গুলো দেখে মনে হচ্ছে কুশায়াতে ঢাকা। মৃদু বাতাসে বৃষ্টি কয়েকটা ফোঁটা ছিঁটকে এসে রোদের শরীরে পড়ল। রোদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূরে প্রান্তরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সে কল্পনাও করেনি। রোদকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে আলো নিঃশব্দে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল।
ওকে দুপুরের রান্নার ব্যবস্থা করতে হবে। আর আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না, আজ বৃষ্টি থামবে। দাদীমা উনার রুমের দরজার সামনে বসে সুপারি কাটছেন। আলো খুদের ভাত উনুনে বসিয়ে কলার মোচা কাটতে বসল। গতকাল বিকালে সে দু’টো কলার মোচা এনে, একটা রেঁধেছিল। আর একটা অবশিষ্ট ছিল। এখন সেটাই রান্না করবে। সেই সাথে করবে শুঁটকি মাছের ভর্তা আর হলুদ ভর্তা। তাছাড়া এই মুহূর্তে বাড়িতে রান্নার মতো কোনো আনাজ নেই। দাদীর পাশের রুমের দিকে একবার তাকিয়ে নিচু স্বরে আলোকে বললেন,
“শুনছিস? হেরা মনে হয় মেলা বড়লোক। আমাগোর গরীবের খাওন কি হেরা খাইতে পারব?”
“তাও ঠিক! ওরা এসব খায় কী না তাও তো জানি না।”
“মুনের মায়ের থেইকা তিনডা ডিম আইনা হেগোরে ভুনা কইরা দে।”
“আচ্ছা।”
কথাটা বলে আলো বৃষ্টির মধ্যেই ভিজে বাইরের দিকে হাঁটা ধরল। শ্যাওলাযুক্ত সবুজ উঠানে পা টিপে টিপে হেঁটেও, হঠাৎ পা পিছলে স্বজোরে আছড়ে পড়ল। মৃদু স্বরে ‘ওহ মা গো’ বলে বসে থাকা অবস্থায় আশে পাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। কোথায় কাউকে না দেখে মুখ কাচুমাচু করে একাই উঠে দাঁড়াল। আলোর পরনে থাকা কালো রংয়ের থামিতে কাঁদা লেপ্টে গেছে। সে ঘাড় ঘুরিয়ে বার দু’য়েক রোদের বসে থাকার জানার দিকে তাকাল। রোদকে না দেখে মুচকি হেসে সে মুনদের বাড়ির দিকে পা বাড়াল। ওই মানুষটা দেখলে সে খুব লজ্জা পেত। আলো যাওয়ার পর রোদ আড়াল থেকে বেরিয়ে আসল। সে আলোকে পড়তে দেখেই ওখান থেকে দ্রুত সরে গিয়েছিল। যাতে ওকে দেখে মেয়েটা লজ্জা না পায়। আর আচানক পড়ে গেলে সচরাচর সবাই আশে পাশে বুলিয়ে দেখে, কেউ দেখল নাকি? পড়ে ব্যাথা পাওয়ার থেকে মনে তখন লোক লজ্জার ভয়টাই এসে জেঁকে ধরে। মেয়েটা ওদের জন্য অনেক করেছে, শুধু শুধু তাকে লজ্জা দেওয়ারই বা কী দরকার? আলো মুনকে দেখে ওর পিঠে একটা কিল বসিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তোর বিচার পরে হবে। দাঁড়া তোরে আগে একা হাতের কাছে পায়।
” উফ! এভাবে মারচো ক্যান আলোবু? আমি তো কিচু করি নি।”
আলো কটমট করে মুনের দিকে তাকিয়ে মুনের মায়ের কাছে গেল। উনার থেকে তিনটা মুরগীর ডিম নিয়ে সে বাসায় ফিরে এলো। বৃষ্টি থামার নাম নেই! এখনো অঝরে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে।
রোদ মেঘের পাশে চোখ জোড়া বন্ধ করে শুয়ে আছে। প্রচন্ড ব্যাথায় ওর শরীরেও জ্বর চলে এসেছে। আলো ডিম ভেজে রুমে ঢুকে দেখল দুই ভাই শুয়ে আছে। আলো আমতা আমতা করে সামনে এগিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“শুনছেন! আপনিও ঔষধ লাগিয়ে নি.. ।”
কথাটা শেষ না হতেই রোদ চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে আলোর দিকে তাকাল। রোদের লালবর্ণ চোখ দেখে আলোর কথা বন্ধ হয়ে গেছে। ওর থমকে যাওয়া মুখ দেখে রোদ মৃদু হেসে বলল,”সমস্যা নেই, আমি ঠিক আছি।”
“উঠুন, রান্না হয়ে গেছে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নিন।”
রোদ উঠে দাঁড়াল, আলো নতুন গামছা আর পানি রোদকে এগিয়ে দিয়ে সেখান থেকে সরে আসল। সে খাবার নিয়ে রুমে গিয়ে ধীর কন্ঠে মেঘকে ডাকছে। মেঘ ঘুমের ঘোরে আলোর হাতটা জড়িয়ে ধরে বিরবির করে বলল,” আম্মু তোমার শরীরের মা মা গন্ধটা আমি খুব মিস করি। আমাকে রেখে আর যেও না আম্মু, প্লিজ যেও না।”
মেঘ বিরবির করে কয়েকবার কথাটা বলে আবার ঘুমিয়ে গেল। আলো হতবাক হয়ে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ শক্ত করে ওর বুকের সাথে আলোর হাতটা আঁকড়ে ধরে আছে। রোদ হাত মুখ ধুয়ে এসে আলোকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাতের গামছাটা মেলে দিয়ে সাবধানে আলোর হাতটা মেঘের থেকে ছুটিয়ে দিলো। রোদ আদুরে সুরে মেঘকে ঘুম থেকে তুলে উঠে বসাল। আলো যত্ন করে খাবার দিলো। রোদ একটা প্লেটে খাবার নিয়ে দুই ভাই একসঙ্গে খাচ্ছে । রান্না মজার হলেও
জ্বরে ওদের খাওয়ার কোনো রুচি নেই। যে মেঘ পছন্দের খাবার না পেলে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করে। সে মেঘ বিনাবাক্যে চুপ করে এগুলো খাচ্ছে। ওদের খেতে দিয়ে আলো গোসলে চলে গেছে। কিন্তু অজানা কারণে মেঘ উঁকিঝুঁকি মেরে আলোকে খুঁজছে। ততক্ষণে বৃষ্টিও থেমে গেছে। আলো গোসল সেরে মাথায় গামছা পেঁচিয়ে রুমে এসে দেখে ওদের খাওয়া হয়ে গেছে। আলো কিছু বলার আগে রোদের সঙ্গে ওর চোখাচোখি হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের তাকিয়ে দু’জনে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার রোদের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আলোর দিকে তাকাচ্ছে। আলোর অস্বস্তির কারণটা বুঝতে পেরে রোদ আগে বলল,
“বৃষ্টি থেমে গেছে। আমরা এখন গেলে কী অসুবিধা হবে?”
“জ্বি না! একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি।”
কথাটা বলে আলো এঁটো প্লেটে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। চুল মুছে দাদীর সাথে খেয়ে গেল মুনদের বাড়ি। সে যতক্ষণ না ফিরবে মুনকে এখানেই থাকতে বলল। তারপর হাতের কাজ সেরে চুলে খোঁপা করে মাথায় ওড়না টেনে ওদের নিয়ে বের হলো। রোদ বিনয়ী সুরে দাদীর উপকারের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে ধীর পায়ে হাঁটছে। পাহাড়ের নিচে আলোর বাড়ি হওয়াতে আর পাহাড়ে উঠা লাগল না। তবে কাঁদা মধ্যে হেঁটে যেতে একটু কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে সন্ধ্যার পূর্বেই ওরা রিসোর্টে পৌঁছে গেল। তখন আবার অঝরে বৃষ্টি ঝরা শুরু হলো। রোদ আলোকে সঙ্গে নিয়ে ওদের বুকিং করা রুমে চলে গেল। আলো সোফায় বসে চোখ বুলিয়ে রুমটা দেখছে। রোদ মেঘকে শুইয়ে দিয়ে শার্ট বদলে নিচে চলে গেল। রিসোর্টের ব্যবস্থাপকের সাহায্য নিয়ে ওর অফিসের ম্যানাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করল। উনার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে রোদ কল কেটে বলল,
“এখানে জরুরী ভাবে কোনো ডাক্তার পাবে যাবে?”
”জ্বি স্যার আমি ব্যবস্থা করছি।”
কথাটা বলে উনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন। আর রোদ মৃদু পায়ে হেঁটে ওদের রুমে গেল। ততক্ষণে আলো মেঘের ড্রেস বদলে ফ্রেশ করিয়ে দিয়েছে। আধা ঘন্টার মধ্যে একজন ডাক্তার এসে রুমে উপস্থিত হলেন। উনি মেঘের হাতে, পায়ে, কপালে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল মেঘকে ইনজেকশন দেওয়া নিয়ে। সে কোনোভাবেই ইনজেকশন দিবে না। বরং ইনজেকশন দেখে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,
“দাভাই ইনজেকশন দিতে নিষেধ করো। নাহলে আমি কিন্তু উনাকে কামড়ে দিবো।”
রোদ মেঘকে বুকে জড়িয়ে ধরে ডাক্তারে ইশারা করে মেঘকে বলল,
“আমি পিঠে খুব ব্যাথা পেয়েছি। তুমি নড়লে আমি আরো বেশি ব্যাথা পাবো।”
রোদের কথা শুনে মেঘ নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো। ডাক্তার ইনজেকশনের সূচ ফুটাতেই মেঘ কেঁপে উঠে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। আলো রুমের এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে। রোদ ব্যাথা পাবে শুনে মেঘ ভয় পেলেও আর নড়ল না। কী অদ্ভুত টান! রোদ মেঘকে শুইয়ে দিয়ে আড়চোখে একবার আলোর দিকে তাকাল। ডাক্তার উঠে দাঁড়াতেই আলো মুখ কাচুমাচু করে রোদকে দেখিয়ে বলল,
“উনিও খুব ব্যাথা পেয়েছে। উনারও চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন।”
আলোর কথা শুনে উপস্থিত সবাই ওর দিকে তাকাল। ডাক্তার রোদের সমস্যার কথা শুনে শার্ট খুলে শুয়ে পড়তে বলল। রোদ তাই করল। রোদের পিঠের দিকে তিনজনেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এত গভীর জখম নিয়ে রোদ এতক্ষণ অবধি স্বাভাবিক ছিল। আর এখনো আছে। ডাক্তার বসে রোদের পিঠে ড্রেসিং করে লাগল। মেঘ ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রোদের চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“খুব কষ্ট হচ্ছে দাভাই?”
রোদ মেঘের হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে ছলছল চোখ তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“না সোনা আমি ঠিক আছি।”
ওদের কথা শুনে আলোর চোখ দিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

To be continue…………!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here