সুদর্শন শঙ্খচিল’ [২৩]

0
358

‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[২৩]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

প্রত্যয়ের গান শুয়ে তুয়া অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
বাসের সেই বাচ্চাটা এই গানটাই বার বার শুনছিল যার ফলে প্রত্যয়েরও মুখস্থ হয়ে গেছে। আর সেই গানের চার লাইন প্রত্যয় তুয়াকে শোনাল। তুয়াকে হাসতে দেখে প্রত্যয় তুয়াকে ওর পাশে বসিয়ে বুঝিয়ে ওর স্যারের কথাটা জানাল।প্রত্যয়ের পুরো কথা শুনে তুয়ার অভিমান নিমিষেই দূরে হয়ে গেল। তুয়া মুচকি হেসে প্রত্যয়ের হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ডুবিয়ে বলল, “দুরে গেলে সত্যিই কি আমার কথা মনে পড়ে?”

প্রত্যয় তুয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল, “ভুললে তো মনে পড়বে।” কথাটা শুনে তুয়া উঠে প্রত্যয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তুয়ার এমন কাজে প্রত্যয় মুচকি হেসে তুয়াকে ওর বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল। তুয়ার এখন প্রবল আকাঙ্খা প্রত্যয়ের বুকের প্রশান্তিটুকু লুফে নেওয়া। প্রত্যয়ের শরীরের সেই চিরচেনা গন্ধটুকু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শুষে নিয়ে মনটাকে শান্ত করা। কিন্তু প্রত্যয় তুয়ার আকাঙ্খায় ইতি টেনে তুয়ার খুব কাছে এসে শান্ত কন্ঠে বলল, “খুব ভালবাসি আমার মিষ্টি বউটাকে।” কথাটা শুনে তুয়া,”আমিও জনাব” বলে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে প্রত্যয়ের বুকে মুখ লুকাল। তুয়ার লজ্জারত কন্ঠ শুনে প্রত্যয় দুষ্টু হেসে তুয়াকে নিয়ে পাড়ি জমাল ভালবাসাময় এক সুখরাজ্যে।

প্রত্যয়ের আম্মু রাতেই উনাদের নিকট আত্মীয়দের নিমন্ত্রণের কাজ সমাপ্ত করলেন। পরেরদিন খুব সকালে প্রত্যয় ওর আব্বুর সঙ্গে বাইরে গিয়েছে, এখনও ফিরেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একে একে সব আত্মীয়রা আসা শুরু করেছেন। প্রত্যয়ের আম্মু চাঁদ তুয়াকে শাড়ি গয়না পরিয়ে সোফায় বসালেন। উপস্থিত আত্মীয়রা নতুন বউ দেখে দোয়া করে যাচ্ছেন। তুয়াদের ঠিক সামনে সম্পর্কে নানী খালারা উনাদের আমলের কাহিনী তুলে ধরেছেন। একে একে আত্মীয়দের সংখ্যা বাড়তে লাগল আর ওরা দু’জন মুখে হাসি ঝুলিয়ে চুপটি করে বসে রইল।

প্রিয়ম সকালে থেকে বাসায় নেই। তবে ফোন করে জানিয়েছে বাসার আশেপাশেই আছে। সম্পর্কে ভাবিরা তুয়াদের নিয়ে ঠাট্টা করে উনারাই হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ের উপরে পড়ছে। একটুপরে, প্রত্যয় আর ওর আব্বুর কিনে আনা জিনিসপত্র বাবুর্চিকে বুঝিয়ে দিলেন। উনাদের কথামতো বাবুর্চি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে রান্নার কাজে লেগে গেলেন। প্রত্যয়কে ড্রয়িংরুমে ঢুকতে দেখে এক ভাবি বললেন, “কি গো বরের ভাই আমাদের দেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছো নাকি?

প্রত্যয় সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে মুচকি হেসে বলল,”ভাবি, পালিয়ে বেড়াচ্ছিনা আব্বুর সঙ্গে বাইরে গিয়েছিলাম।”

প্রত্যয়ের আম্মু এসে তুয়াকে বললেন প্রত্যয়কে খেতে দিতে। তুয়া উঠে প্রত্যয়কে খেতে দিলে প্রত্যয় সবাই খেয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করল। তুয়া গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জানাল প্রিয়ম বাদে সবাই খেয়েছে।

তুয়াকে গাঢ় গোলাপি শাড়ি পরিহিত দেখে প্রত্যয় আস্তে করে বলল, “তোমাকে দেখতে কিন্তু বেশ লাগছে তবে সাবধানে পড়ে যেও না যেনও।”

কথাটা বলে প্রত্যয় খেয়ে উঠে বাইরে চলে গেল। সাদা কালো টি_শার্টের সঙ্গে কালো জিন্সে প্রত্যয়কে বেশ মানিয়েছে। এই কথাটা তুয়া না মুখ ফুটে বলতে পারল আর না দু’চোখ ভরে দেখতে পারল। এতগুলো মানুষের সামনে ওর দিকে তাকিয়ে থাকাটাও বেমানান দেখাত। প্রত্যয় প্রিয়মকে ফোন করে বাসায় ফিরতে বলে কল কাটতেই, হসপিটাল থেকে কল আসল। জমিলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রত্যয় সামনে দিকে এগিয়ে গেল।

একটুপরে, ভাবিরা চাঁদ আর প্রিয়মের গায়ে হলুদ ছুঁইয়ে গোসল করাবেন বলে ঠিক করলেন। পুনরায় বিয়ে যখন হচ্ছেই টুকটাক নিয়ম গুলোও পালন করুক। প্রত্যয় কথা বলে ঘুরতেই একজন ভাবি প্রত্যয়কে হলুদ দেওয়ার কথাটা বললেন। উনার কথা শুনে প্রত্যয় মুচকি হেসে বলল, “ভাবি, প্রিয়ম মনে হয় এসব পছন্দ করবেনা। আর আমিও ঠিক জানিনা হলুদের ছোঁয়াতে আর কি কি লাগে?”

ভাবি দাতঁ বের করে হেসে বলল, “থাক তোমাকে আর এসব জানা লাগবেনা। তুমি শুধু আমাদেরকে দ্রুত চাচিমা হওয়ার ব্যবস্থাটা করিয়ে দিও, তাহলেই হবে।”

কথাটা শুনে ওখানকার অনেকেই হাসিতে ফেটে পড়লেন। প্রত্যয়ের আম্মু সামনে থাকায় প্রত্যয় লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে স্থান ত্যাগ করল। প্রত্যয়ের আম্মু হাসতে হাসতে বললেন, “একথাটা প্রিয়মকে বললে তোমাদেরকে বাঁশ দিত, প্রত্যয় বলে বেঁচে গেলে।”

**!!

রনিত বাসায় একজন বুয়া রেখেছে। উনিই রান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কাজ করে দিয়ে যাবেন। রনিত পলককে নিয়ে ডাক্তারে কাছে গিয়েছিল এবং ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চলবে বলে ঠিক করে। অপরিপক্ব বয়সে গর্ভধারণ খুব ঝুঁকিপূর্ন, তাই সে এখন থেকেই পলকের যত্নের কোনো ত্রুটি রাখছেনা।

সকাল বেলায় সারাদিনের পর্যাপ্ত পানি, ফল, খাবার, সবটা গুছিয়ে দিয়ে তারপর সে অফিসে যায়। আর শর্ত দেয় বাসায় ফিরে যেন এগুলো আর না দেখে, যদি একটা কিছুও পড়ে থাকে তাহলে পলকের খবর আছে। পলক রনিতের এসব কাজে রাগ দেখালেও মনে মনে খুব খুশি হয়। ইচ্ছের আম্মু আর ইচ্ছে এসে পলকের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটায়। আজকে ইচ্ছের আম্মু ইচ্ছেকে পলকের কাছে রেখে একটা কাজে বাইরে গিয়েছে। পলক ইচ্ছেকে ওর পাশে বসিয়ে মুচকি হেসে বলল,” ইচ্ছে বলো তো আমার কি বাবু হবে?”

ইচ্ছে চানাচুর খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, “তোমার তো এত্ত বলো(বড়) পেত নেই? তাহলে বাবু হবে কেনু?”

পলক ইচ্ছের গাল দু’টো চটকে দিয়ে বলল, “আমার পেটে তোমার মতো কিউট একটা বাবু আছে। সে এখন অনেক ছোট আস্তে আস্তে বড় হবে, এখন বুঝলেন পাকা বুড়ি?”

ইচ্ছে কি বুঝল কে জানে? সে চানাচুর তুলে পলকের পেটে ঠেকিয়ে বলল, “নাও বাবু কানাচুর খাও আল তালাতালি বলো (বড়) হও।”

ইচ্ছের কথা শুনে পলক হেসে ইচ্ছকে কাতুকুতু দিতে লাগল।
আর পলকের কাতুকুতুতে ইচ্ছে খিলখিল করে হাসতে লাগল।

**!!

প্রিয়ম বাসায় ফিরে ওর গায়ে হলুদ দিতে নিষেধ করে দিল। এসব আদিখ্যেতা তার মোটেও পছন্দ নয়। ভাবিরা জোর করেও প্রিয়মকে কিছুতেই রাজি করাতে পারলেন না। প্রত্যয়ের আম্মু এসব দেখে প্রত্যয়কে ডাকতে পাঠালেন কারন প্রত্যয়ের কাছেই প্রিয়ম কাবু।

একজন ভাবি গিয়ে প্রত্যয়কে ডেকে আনলেন। ভাবিদের জোরাজুরিতে প্রিয়ম বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে একই জেদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবিরা প্রিয়মকে ছাড়ছেও না আবার যেতেও দিচ্ছেনা। তাই প্রত্যয় নিজে এসে প্রিয়মের গালে হলুদ ছোঁয়াল। প্রিয়ম প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া প্লিজ।”

প্রত্যয় প্রিয়মের গালে হলুদ ছুঁইয়ে মুচকি হেসে বলল, “সামান্য একটু।”

প্রিয়ম প্রত্যয় ছাড়া আর কারো থেকে হলুদ নিল না। তাই প্রত্যয় সবাইকে সুন্দরভাবে নিষেধ করল প্রিয়মকে আর জোরাজুরি না করতে। হঠাৎ ভিড়ের মাঝে থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, “বিয়ের পরও ভাইয়ে ভাইয়ে এত মিল মহব্বত থাকলেই হয়।”

কথাটা শুনে প্রত্যয় প্রিয়মসহ উপস্থিত সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। পরিবেশটাও এক নিমিষেই গুমোট ধরে গেল। কিন্তু কে এই কথাটা বললেন তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। চাঁদ তুয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে প্রত্যয় প্রিয়মের দিকে তাকাল। প্রত্যয় প্রিয়ম দু’জনেই কথাটা যেন বুকে গিয়ে বিঁধেছে, ওরা দু’ভাই ই থম মেরে দাঁড়িয়ে গেছে।

প্রত্যয়ের আম্মু পরিবেশটাকে শান্ত করতে হেসে বললেন, “জানিনা কথাটা কে বললেন? তবে সবার উদ্দেশ্যেই আমি কিছু কথা বলছি। প্রিয়ম যখন আমার পেটে তখন প্রত্যয় একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আম্মু আমার ভাই হবে নাকি বোন?” আমি তখন প্রত্যয়কে বলেছিলাম, “তোমার ছোট্ট একটা ভাই হবে।” কথাটা শুনে প্রত্যয় খুশি হয়ে কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে বলেছিল,” আম্মু, ভাই বড় হয়ে কি আমাকে কষ্ট দিবে?”

আট বছরের প্রত্যয়ের মুখে একথা শুনে ওর বাবা বুঝিয়ে বলেছিলেন, “ভাইকে যদি ভালো মানুষ বানাতে পারো তাহলে সে কখনও তোমাকে কষ্ট দিবেনা।”

সেদিন প্রত্যয় প্রত্যুত্তরে বলেছিল, “আব্বু, ভাইকে আমি ভালো মানুষ বানাব আর অনেক ভালোও বাসব। তবুও ভাই আমাকে কষ্ট দিলে ভাববো আমি পঁচা ভাই।”

সেদিনের প্রত্যয়ের বলা কথাটা আজও আমার কানে বাজে। সেই ছোট প্রত্যয় কথাটা শুধু মুখেই বলেনি বরং তার ভাইকে মানুষের মতো মানুষ করে দেখিয়েছে। আমি জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে বা কি ঘটবে? তবে এতটুকু জোর দিয়ে বলব আমার ছেলেরা সহজে কেউ কারো সঙ্গ ছাড়বেনা। হ্যাঁ, ছেলেদের বিয়ে দিয়েছি তাদের সন্তান হবে একদিন সংসারও হয়তো আলাদা হবে। সংসার আলাদা হওয়াকে আমি সঙ্গছাড়া বলে না, বলে সম্পর্কের বিচ্ছেদটা হওয়াটাকে।

আর প্রতিটা মেয়ের চাওয়া ঝামেলাহীন সংসারে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে। আমি নিজেও এটা চেয়েছি, এখন চাঁদ তুয়া এটা চাইলে আমি ওদের দিকে আঙ্গুল তুলতে পারব না। আর বিয়ের পর ওদের দুই ভাইয়ের মিল থাকুক বা না থাকুক। ওরা সবাই যেন সবাই দুধে ভাতে থাকে, এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।”

প্রত্যয়ের আম্মু কথাটা বলতে বলতে কেঁদে দিলেন আর উনার সঙ্গে অনেকের চোখের অশ্রু ঝরে গেল। তুয়া আর চাঁদ প্রত্যয়ের আম্মুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। তুয়া প্রত্যয়ের আম্মুর হাতটা ধরে কান্নারত কন্ঠে বলল, “আম্মু কেঁদো না পরেরটা নাহয় পরেই দেখা যাবে। পরের বাড়ির মেয়েরা শুধু সংসার আলাদা করতে জানে তা কিন্তু নয়।”

চাঁদ প্রত্যয় প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল, ” শক্ত বাঁধনে বাঁধা সম্পর্কগুলো ভাঙ্গা এতোটা সহজ না।”

প্রত্যয়ের আব্বু পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করতে সবাইকে তাড়া দিতে লাগলেন। চাঁদ প্রিয়মকে রেডি করিয়ে যথাসময়ে ওদের বিয়ে সম্পূর্ণ করা হল। একটা কনের যাবতীয় জিনিসপত্র চাঁদকে দেওয়া হয়েছে, তবুও সে একটা লাল শাড়ি পড়ে সাজহীন ভাবে বসে আছে। প্রত্যয়ের আম্মু দুই ছেলের বউকে দু’টো ট্রলি দিয়েছে, সেখানে গয়না থেকে শুরু করে তাদের যাবতীয় সব জিনিস রয়েছে। তাড়াহুড়োর বিয়েতে পুত্রবধুদের কিছু দিতে পারেনি বলে এতোদিন মনে মনে খুব আফসোস করতেন। আজকে উনার সেই আফসোসের ইতি টানলেন।

হাসি ঠাট্টা খাওয়া দাওয়ার মাঝে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এল। সন্ধ্যার পর একে একে আত্মীয় স্বজনরা বিদায় নিলেন। আজকে থেকে চাঁদের ঠাঁই হবে প্রিয়মের রুমে। তবে প্রিয়মের বুকে আদৌ ওর ঠাঁই হবে কি না এটা চাঁদের অজানা। মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে, চাঁদও আবার নব্য স্বপ্নে বুনে ওর জীবনের নতুন অধ্যয়ে পা রাখল।

আত্নীয়রা চলে যাওয়াতে বাড়িটা এখন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ড্রয়িংরুমে চাঁদ তুয়া বসে ওদের মতো হাসাহাসি করছে। আজকে তুয়া চাঁদকে প্রিয়মকে নিয়ে খোঁচা মেরে খিলখিল করে হাসছে। আর চাঁদ চুপ করে তুয়া দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু উনাদের রুমে আর প্রত্যয় আর প্রিয়ম গেছে ছাদে। রাত এগারোটার দিকে
রাতের খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে, তুয়া চাঁদকে প্রিয়মের রুমের দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,” ভালবাসা মাখতে প্রস্তুত হও।”

কথাটা বলে তুয়া হাসতে হাসতে ওদের রুমে চলে গেল। আর চাঁদ কান্নারত কন্ঠে মুচকি হেসে মনে মনে বলল, “সে যে তোমাকে বড্ড ভালবাসে গো আপু। তার ভালবাসা মাখার সৌভাগ্যটুকুও যে আমার ভাগ্যেতে নেই।”

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here