-‘এলোকেশী কন্যা’-
[২৫]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
রোদের বলতে দেরী কিন্তু আলোর ছুটে পালাতে দেরী হয় নি।
ওর পক্ষে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ানোও সম্ভব না। লজ্জায় নয়! বরং সে এসব থেকে নিজেকে বিরত রাখার পণ করেছে। ভয়
পায় সে, প্রচন্ড ভয়! বিশেষ করে মুনের পরিণতি দেখার পর। ওর মস্তিষ্কে এখন একটা কথায় ঘুরপাক খায়, ভালোবাসার মানুষের কাছে যদি নিরাপদই না থাকে। তাহলে এ কেমন ভালোবাসা? এই ভালোবাসা দিয়ে কী হবে? কাকে বিশ্বাস করবে? বিশ্বাস ছাড়া কী সম্পর্ক টিকে? উহুম, মোটেও না! কারণ প্রতিটা সম্পর্কে বিশ্বাস খুঁটিস্বরুপ। আর সেই খুঁটি নড়বড়ে হলে ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষ দু’টোই ঠুনকো। সেদিন রোদ আলোর চোখে ভালোবাসার প্রতি ঘৃণার দেখেছে। সেও খুব ভালো করে জানে, মুনের জন্য আলোর মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। আর ওর ঘৃণার তীব্রতা বেশ প্রখর। তবে আলো এটা ভাবছে না, একটা মুদ্রার দু’টো পিঠ থাকে। একটা সাদৃশ্য হলে অন্যটা নিচে চাপা পড়ে থাকে৷ আর দু’টো পিঠ দেখতে হলে মুদ্রাটা তুলে স্বচক্ষে পরখ করতে হয়। তবেই না সত্যটা জানা যায়। অথচ বোকা মেয়েটা জেদ করে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে। ব্যাপারটা এমন ভালোবাসবোও না আর বাসতেও দিবো না। তবে রোদ জেনে বুঝে আলোকে সময় দিচ্ছে। দেখা যাক, কী হয়!
রাতের আঁধার কাটিয়ে পরেরদিন রৌদ্রজ্জ্বল একটা দিনের সূচনা হলো। রোজকার রুটিন মাফিক মেঘ গেল স্কুলে, আর আলো কলেজে। আর রোদ আজ বাসাতেই আছে। সুজনের বাবার সঙ্গে রোদের কাল বেশ ঝামেলা হয়েছে। টাকা সময় মতো ফেরত না দেওয়াতে পুলিশ সুজনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তিনদিন পর রোদের টাকা ফেরত দেওয়ার পর পুলিশ ওকে ছেড়েছে। রোদের এমন কাজে সুজনের বাবা মা খুব রেগে আছে। মামাতো ভাই বলে কী একটু ছাড় দেওয়া যেতো না? মাত্র দশ লাখ টাকায় তো! রোদের তো কম নেই, তাহলে? মূখ্য কথা রোদ একবারও উনাদের সন্মানের কথা ভাবল না।
যদিও এসব শুনেও রোদের কোনো হেলদোল নেই। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর যারা ওদের খোঁজ করেনি। একবার এসে দেখেও নি ওরা কেমন আছে? কী করছে, কী খাচ্ছে? ছোট্ট মেঘকে সে একা কীভাবে সামলাচ্ছে? তাহলে আজ সে কেন ভাববে? তবুও সে মামার কথায় সুজনকে অফিসে রেখেছিল। কিন্তু সুজন!
সে যাই হোক, এমন সুবিধাবাদীদের জন্য ওর মনে আত্মীয়তা আসে না। কারণ এরা যে প্লেটে খায়, সে প্লেটে থুথু ফেলতেও দ্বিধা করে না!
সাবা আর মিনা নামক দুইজন সার্ভেন্ট ছুটি শেষ করে আজ ফিরেছে। গতকাল রিমি রোদকে জানিয়েছিল, তার নাকি দুইজন সার্ভেন্ট দরকার। এখন ব্যস্ততা বেড়েছে, বাসায় রান্না করে খাওয়ার সময় পাচ্ছে না। রোদ ওকে বলেছিল, এখানে চলে আসতে। রিমি শোনে নি। বরং দ্রুত সার্ভেন্টের ব্যবস্থা করে দিতে বলেছে। এজন্য রোদ সাবা আর মিনাকে রিমির বাসায় যেতে বলল। আজ থেকে ওরা ওখানে থাকবে। সাথে
এটাও আশ্বস্ত করল, ওখানে ওদের কোনো সমস্যা হবে না। রিমি যথেষ্ট বিনয়ী! সাবা আর মিনা রোদের কথায় সম্মতি জানিয়ে বিদায় নিলো। এখন রাকা, সাগর আর রবি থাকল রোদের বাসায়। খানিকক্ষণ পর, সাবিনা খালা এসে রোদকে ড্রয়িংরুমে দেখে বিশ্বজয় করা হাসি হাসলেন। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কিছু একটা ভেবেও নিলেন। হুম, এটাই মোক্ষম সুযোগ! সেই সাথে টাকা হাতানোরও। এমন কিছুর অপেক্ষায় ছিলেন উনি। খালা যেসব বাসায় কাজ করেন, ওই সাহেব’রা উনাকে গোপনে আরো একটা কাজ দিতে বলেন। কাজটা হলো, সাহেবদের বউয়ের খবর সাহেবদের কানে পৌঁছানো। যেমন, বাসার কখন কে আসল, পুরুষ নাকি মাহিলা, মেডাম ফোনে কার সঙ্গে কথা বলল, কথা বলার ভঙ্গি কেমন ছিল, দিনে কতবার বাইরে গেল এসব। আর এসব কাজ উনি বেশ ভালোই করেন। তবে খালা সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশাতেও ভুল করেন না। সত্য আর মিথ্যার সংমিশ্রণ বানোয়াট তথ্য নিয়ে সাহেবদের কানে দিয়ে টাকা হাতায়। সাহেবরাও বিশ্বাস করে উনাকে ভালোই মজুরি দেয়, সাথে মেডামের প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। আর আলোকে উনার প্রথমদিন থেকে অপছন্দ।
কারণ সুন্দরী মেয়েদের অহংকার বেশি। অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না এদের। আর আলো সহজ সরল ব্যাপারটা সহজে ধরতে পারবে না। এই সুযোগ রোদের মনে বিষ ঢাললেই, ব্যস কেল্লাফতে! সাবিনা খালা মুখটা মলিন করে রোদের সামনে গিয়ে বললেন,
“ছ্যার, মেডামের উপ্রে একটু নজর রাইখেন। ইয়ে আইজকাল মেডামের মতিগতি ভালা মুনে হইতাছে না।”
একথা শুনে রোদ লেপটপ থেকে চোখ সরিয়ে খালার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল। ওর তাকানোর মানে বুঝে খালা কন্ঠ নিচে নামিয়ে বললেন,
“মেডাম ওই সাফির লগে কতি কতি জানি যায়। ছাদেও দেহি রোজ হাসাহাসি করে।”
একথা শুনে রোদ উঠে দাঁড়িয়ে একটা নোটবুক নিয়ে আসল।এখানে বাসার কাজের লোকদের বেতন সংক্রান্ত সব নোট করা থাকে। রোদ সেটাতে একবার চোখ বুলিয়ে ওয়ালেট থেকে চকচকে দশ হাজার নিয়ে খালাকে দিলো। টাকাগুলো খালা খপ করে নিয়ে সুন্দর করে হাসলেন। মাত্র দু’টো খবরে দশ হাজার টাকা, বাপ্রে! উনি মনে মনে ভাবলেন এবার থেকে রোদকে রোজ এমন খবর দিবেন। আহা! রোজ দশ হাজার টাকা! উনার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রোদ মুচকি হেসে শান্ত কন্ঠে বলল,
“কালকে থেকে আপনার আর আসার প্রয়োজন নেই। ভালো থাকবেন।”
কথাটা বলে রোদ উঠে লেপটেপ নিয়ে রুমে চলে গেল। নিজে না কিছু বলল আর না বলার সুযোগ দিলো। সাবিনা খালার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এটা কী সর্বনাশ হলো? যদিও রোদ উনার সব কার্যক্রম সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিল। কথায় আছ, ‘ অভাবে স্বভাব নষ্ট।’ তো উনার হয়েছে এই দশা। রান্নাঘর থেকে চাল, ডাল, তেল, চুরি করাও উনার অভ্যাস। রাকা ,মিনা, উনাকে বার বার নিষেধ করলেও শোনেন নি। গরীব মানুষ বলে রোদ এতদিন সব জেনেও চুপ ছিল। তাছাড়াও উনি মেঘকে আদর করার নামে গাল চটকে লাল করে দেয়, অকারণে খ্যাচম্যাচ করে, মেঘ যেন না বলে তাই চকলেট দিয়ে আদর করেও দিতেন। মেঘ চকলেট পেয়ে গলে যেতো। এই অবধি সব ঠিকই ছিল। কিন্তু উনি আলোকে গতদিনে ছোটলোক, ফকিন্নি, এবং অহংকারী বলে গালাগাল করেছে। এজন্য সেদিন সন্ধ্যায় আলো কেঁদেছিল। এই বড় বাসাটা শুধু সার্ভেন্টের ভরসায় ফেলে রাখা যায় না। তাহলে দু’দিনে নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় বসতে হবে। আর এজন্যই বাসার ভেতরে আনাচে- কানাচে দু’চারটা সিসি ক্যামেরা আছে। এটা রোদ ছাড়া কেউ জানে না। সেখানকার ফুটেজ থেকেই রোদ মূলত এসব দেখেছে। খালা এতদিন এসব করেও থামেন নি। আজ আবার স্বশরীরে দাঁড়িয়ে আলোর নামে মিথ্যাও বলছে। যাতে বাসায় অকারণে অশান্তি সৃষ্টি হয়। অনেক হয়েছে আর না। তাই রোদ আজ একেবারেই ছাটাই করে দিলো। তাছাড়া
এসব মানুষ বাসায় থাকা আর খাল কেটে সাদরে কুমিরকে ডাকা, দু’টোই সমান! বেচারা খালা চোখের পানি মুছছে আর বার বার উপরে তাকাচ্ছে। এই বাসায় থেকে এটা ওটা নিয়ে গিয়ে বিক্রিও করতেন, আজ থেকে সব বন্ধ। উনি চোখ মুছে অভিশাপ দিতে দিতে বিদায় নিলেন। রাকা বাগান থেকে এসে এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। রোদ ওদের সবাইকে যথেষ্ট সাহায্য করে, তবুও খালা এমন করেন। রাকা, মিনা, এতদিন নিষেধ করলে, শুনেনই নি। বরং সংসারের অভাবের
কাহিনী শুনাতেন। বেশ হয়েছে! অতি লোভে তাঁতি নষ্ট। এবার মজা বুঝে!
–
আজকের দিনটা খুব খারাপ যাচ্ছে। মাতবরের ছোট ছেলে রবি পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেছে। পাঁচ বছরের বাচ্চাটা ব্যাথায় ছটফট করে কাঁদছে। হাকিম এসে দেখে জানালেন, এখনই শহরে নিয়ে যেতে হবে। বাম হাতের কব্জির হাড় ভেঙে বাইরে বেরিয়ে গেছে। উনার এই চিকিৎসা কাজে আসবে না। বরং ইনফেকশন হয়ে হাতে পঁচন ধরতে পারে। একথা শুনে মাতবর প্রচন্ড রেগে হাকিমকে স্বজোরে ধাক্কা দিলেন। হাকিম তাল সামলাতে না পেরে ছিঁটকে পড়ল আঁশবটির উপর। চিৎ হয়ে পড়ার কারণে উনার পিঠ কেটে রক্ত ঝরতে লাগল।তবুও উনি ভয়ে টু শব্দ করলেন না। বরং উঠে দাঁড়াতেই মাতবর উনাকে ঘুষি মেরে দিলেন। আজ পর্যন্ত গ্রামের কাউকেই উনি শহরের ডাক্তারের কাছে যেতে দেন নি, আর আজ ছেলেকে দিবে? গেলে কী সন্মান থাকবে? হাকিম এই অন্যায় প্রস্তাব কীভাবে দিলেন? উনার এত সাহস হলো কীভাবে? মাতবর হাকিমকে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
“মলে মলুক, তাও এই তিকিৎসায় কলতে হবে। আমি শুহুলে যাতে দিবো না।”
হাকিম উনার কথায় সম্মতি জানিয়ে চিৎকার শুরু করলেন। তবে উনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন সঠিক চিকিৎসা করার। রবি দেখতে বেশ মায়াবী। বড্ড মায়া লাগছে বাচ্চাটার কষ্ট দেখে। হাকিম আর বসে না থেকে উনার মতো করে চিকিৎসা শুরু করলেন। মাতবরের আজ শালিশ আছে; বিধায় উনি চলে গেলেন। কালকে রাতে একজোড়া ছেলে-মেয়েকে ধরা হয়েছে। তারা নাকি ঝোঁপের ঝাড়ে লুকিয়ে কথা বলছিল। হাকিমের রাগ উনি ওই ছেলে মেয়ের উপরে তুলবে ভাবলেন। এমন শাস্তি দিবেন, যাতে ভয়ে সবার শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। যথারীতি শালিশের কার্য শুরু করা হলো। ছেলে-মেয়ে দু’টো পাহাড়ি আদিবাসী। ছেলেটা সাবেদ আর মেয়েটা পূর্ণি। তারা একে অপরকে পছন্দ করে। সাবেদ নাকি গত দুইদিন খুব অসুস্থ ছিল। তাই কিছুটা সুস্থ হয়ে আজ পুর্ণিকে জানাতে এসেছিল। এসে দাঁড়াতেই কয়েকজন দেখে ওদের ফেলেছে।
পালাতে যাতে না পারে তাই গাছের সঙ্গেও বেঁধে রেখেছিল।
এই গ্রামে প্রেম-ভালোবাসার নিয়ম নেই। এজন্য কঠোর শাস্তি
পাবে দু’জন। পূর্ণির কলিজায় সাহস বেশি তাই এতরাতে বের হয়েছিল। ভয় ডর থাকলে সে এমন করতো না। তাই মাতবর অনেক ভেবে চিন্তে ঘোষণা করলেন,
”এই বেডির আজ লাইতেই পুনেলোজন (পনেরো) জুয়ান বেডার লগে সহুবাছ (সহবাস) করতে হবে।”
মাতবরের রায় শুনে সাবেদ হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। তার আবেগের শাস্তি এখন প্রিয় মানুষটাকে পেতে হচ্ছে। আর এই রায়ের সর্বশেষ পরিণতি পূর্ণির নির্মম মৃত্যু! কারণ পনেরো জন যুবকের অত্যাচার চৌদ্দ বছরের পূর্ণি সহ্য করতে পারবে না। আর পূর্ণির মৃত্যু সাবেদের মেনে নেওয়া অসম্ভব প্রায়। সে পারবে না মানতে, কিছুতেই না! এদিকে রায় শুনেও পূর্ণির কোনো হেলদোল নেই। সে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে ওর প্রাণপ্রিয় মানুষটার কান্না দেখছে। ভালোবাসার মানুষটাকে ওর জন্য কাঁদতে দেখে ছলছল চোখেও পূর্ণি মুচকি হাসল। সে তাহলে ভুল মানুষকে ভালোবাসে নি। আজকের পরিস্থিতিতে সেটা প্রমান পেয়ে গেল। পূর্ণির খুব বলতে ইচ্ছে করছে,
”কাইন্দো না সাবেদ। আমি আজ বাঁচলেও তুমাল না বাঁচলেও তুমাল।”
কথাটা ওর বলা হলো না গলাতেই জটলা বেঁধে রইল। তবে এই রায়ে একদল যুবক ততক্ষণে হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে। তারা খুব খুশি! আজ রাতে তাহলে কেউ কিছু বলতে পারবে না। পূর্ণি আর সাবেদ মাতবরের থেকে একটু দূরে মাথা কত বসে আছে। সাবেদ আর পূর্ণির বাবা-মাকে বিচারে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় নি। উনারা বাড়িতে বসে অশ্রু ঝরাচ্ছেন।
এর মধ্যেই পূর্ণি একটা অভাবনীয় কাজ করে বসল। যেটা ছিল সবার কল্পনাতীত। সে একলোকের হাত থেকে করাত কেড়ে মাতবরের দিকে ছুঁড়ে মারল। ভাগ্যক্রমের নিঁশানাও সঠিক জায়গায় লেগে গেল। ধারালো করাত’টা ক্যাত করে মাতবরের বাহুতে গেঁথে গেছে। অকস্মাৎ এই ঘটনায় উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পরপরই হৈচৈ শুরু করে দিলো। গাঢ় রক্ত দেখে সবাই দৌড়ে গিয়ে মাতবরকে ঘিরে ধরল। আজ মতি এবং তার দলবল কেউ’ই এখানে নেই। এই সুযোগে সাবেদ পূর্ণির হাতটা আঁকড়ে ধরে বিপরীত পথের দিকে প্রাণপণে দৌড়াতে লাগল। বাঁচাতে হবে! প্রিয় মানুষটাকে যেভাবেই হোক ওর’ই বাঁচাতে হবে। সাবেদ তার সকল ভয়কে দূরে ছুড়ে পূর্ণিকে নিয়ে ছুটে চলল অনিদির্ষ্ট এক পথের দিকে। গভীর জঙ্গলে দাঁড়িয়ে একটু দম নিয়ে আবার দৌড়াতে লাগল। ওরা
জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তায় উঠতেই দেখল, বনভোজনে আসা একটা বাস সামনে দাঁড়ানো। বাসটা যাবে রাঙামাটির দিকে।
মূলত কয়েকজন ছেলে ব্যাক্তিগত কাজ সারতে বাস থামাতে বলেছিল। সাবেদ আর কিছু না ভেবে পূর্ণিকে নিয়ে বাসের ছাদে উঠে দ্রুত শুয়ে পড়ল। যাতে ওরা কারো নজরে না পড়ে। পূর্ণি পুরো শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে। শীত নয় প্রচন্ড ভয়ে! সাবেদ পূর্ণিকে ওর বাহুডোরে বন্দী করে কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিলো। এই শেষ মুহূর্তে এসে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে ওরা ভাবতেও পারে নি। দুই মিনিটের মধ্যেই বাসটা চলতে শুরু করল। আর সাবেদ শক্ত করে পূর্ণিকে জড়িয়ে ধরে রাখল। ওইদিকে মাতবরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অনেকেরই পূর্ণিদের খেয়াল করে নি। উনাদের মস্তিষ্কে তখন ধরে নি ওরা পালিয়ে যেতে পারে। ভেবেছিল, আগে মাতবরকে দেখুন পরে ওদের ব্যবস্থা হবে। তবে যারা ওদের পালাতে দেখেছে, তারা কেন জানি আজ চুপ থেকেছে। যেতে দিয়ে উনারা ওদের কাজে নিরবে সম্মতি জানিয়েছে। অনেক তো হলো, আর কত!
–
রোজ মেঘ স্কুল থেকে বাসায় চলে আসে। অথচ আজ আসে নি। আলো কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মেঘের অপেক্ষায় আছে। রোদ নাকি মেঘকে অফিসে যেতে বলেছে। কিছুক্ষণ আগে রবি এসে আলোকে জানাল। অনেকক্ষণ বসে থেকে মেঘ না আসাতে আলো রোদকে কল দিলো। সে গত কয়েক দিনে ফোনের ব্যবহার আয়ত্ত করতে পেরেছে। রোদ ওকে সুন্দর একটা ফোনও দিয়েছে। দুই বারের বেলায় রোদ কল রিসিভ করলে আলো বলল,
“হ্যালো, শুনছেন? আ আমি আলো।”
“বলো?”
আলো বার দু’য়েক ঢোক গিলে বলল,” ম মে মেঘ আসছে না কেন? আমি অনেকক্ষণ থেকে বসে আছি।”
“এবার থেকে মেঘের স্কুল ছুটির পর সরাসরি অফিসে চলে আসবে। পূর্বে মতো সারাদিন এখানেই থাকবে। আর সন্ধ্যায় একেবারে আমার সাথে ফিরবে। তোমাকে ওকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। তুমি তোমার কাজগুলোই সঠিকভাবে করো, রাখছি।”
কথাটা বলে রোদ নির্দয়ের মতো কল কেটে দিলো। আর আলো ফোনের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। মেঘ না থাকলে সে একা বাসায় থাকবে কীভাবে? আর ওর সময়টুকু বা কাটবে কী করে? এসব ভেবে আলো চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু গড়িয়ে গেল। রোদ মেঘকে ওর থেকে দূরে সরাতে চাচ্ছে, কিন্তু কেন?
To be continue……!!