এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_27 🍁🍁

0
969

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_27
🍁🍁

রোদ আবার ওর ঠোঁটের দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আলোর কোমর জড়িয়ে ধরে আলো কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে…!

এদিকে মেঘ দাভাই! দাভাই! করে চিৎকুর দিচ্ছে!রোদের সাড়াশব্দ না পেয়ে মেঘ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে দৌড়ে বাইরে আসে!তারপর আলোকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে এক দৌড়ে রুমের বাইরে চলে যায়!মেঘের কান্ড দেখে আলো মুচকি হাসে। রোদ সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়ছে আলোর কোলে!রোদের আম্মু আলোকে ডাকতে এসে দেখে আলোর কোলে রোদ ঘুমাচ্ছে! রোদের আম্মুকে দেখে আলো লজ্জায় কি করবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে বসে রইলো!আলো উঠতে গেলে রোদের আম্মু ফিসফিস করে বলে…!!

রোদের আম্মুঃ আমার ছেলেটার ঘুমটা নষ্ট করলে তোর খবর আছে!একদম নড়াচড়া করবি না বলে দিলাম।

আলোঃ এখন নিচে না গেলে সবাই কি ভাববে আম্মু?

রোদের আম্মুঃ আমি সেটা বুঝে নিবো!তুই চুপচাপ
বসে থাক!আমি দরজাটা হালকা করে লাগিয়ে যাচ্ছি।

আলোঃ আম্মু আব্বু কি এসেছে? আজকে তো আসার কথা ছিলো আব্বুর।

রোদের আম্মুঃ হুমম ভোরে এসেছে!এখন ঘুমাচ্ছে

রোদের আম্মুঃ তোর খাবারটা এখনই আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুই খেয়ে নে..!!

আলোঃ না না আম্মু! আমি পরে খাবো।

রোদের আম্মুঃ আচ্ছা..!!

রোদের আম্মু চলে গেল!আলো মুচকি হেসে রোদের চুলে হাত বুলাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে!রোদ একবার নড়ে উঠলো তারপর আরো শক্ত করে আলোকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো!এভাবে বসে থাকতে থাকতে আলোও ঘুমিয়ে পড়লো!প্রায় ২ ঘন্টা পর কোথা থেকে এসে মেঘ চিৎকার করে রোদের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো!রোদ হুড়োমুড়িয়ে উঠে বসলো!হঠাৎ করে বেডের উপর দুম করে পড়াতে আলোরও ঘুম ভেঙ্গে গেল।রোদ উঠে দাড়িয়ে মেঘের কান টেনে ধরলো…..!!

মেঘঃআহ্!আহ্! ওহ মা!উরি মা গো মা।আহ্ দাভাই আমি ব্যাথা পাচ্ছি..!!

রোদঃ আজকে আমি তোর কানটাই ছিঁড়ে দিবো!ফাজিল ছেলে একটা।সব সময় দুষ্টুমি..!!

আলোঃ ওর লাগছে তো কানে!ওকে ছেড়ে দিন(মেঘকে রোদের হাত থেকে উদ্ধার করে)

মেঘঃ হুমম বউমনি ঠিকই বলছে!আমি কানে ব্যাথা পাচ্ছি…!!

রোদঃ ঘুমন্ত মানুষের শরীরে কেউ এভাবে লাফ মারে!যদি আমি মারা যেতাম।

মেঘঃ যা বাবা! কেউ কারো গায়ে লাফ দিলে মারা যায়। এটা তো আমি আজকেই শুনলাম।(মাথা চুলকে)

আলোঃমেঘ কেউ ঘুমিয়ে থাকলে এমন দুষ্টুমি করতে হয় না!এমন দুষ্টুমির কারনে যাদের হার্ট দূর্বল তারা হার্ট এ্যাটাক করে মারা যেতেও পারে!

মেঘঃ আচ্ছা সরি দাভাই!আর এমন হবে।

মেঘ রোদের হাত টেনে জোর করে বেডের উপর বসালো!তারপর মেঘ রোদের কোলের উপর দুম করে বসে পড়লো!মেঘ যাতে পড়ে না যায় তাই রোদ ওর এক হাত দিয়ে মেঘকে ধরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো!মেঘ ওর দুই কান ধরে রোদকে সরি বললো…!!

মেঘঃ দাভাই!ওহহ দাভাই!সরি(কান ধরে)

রোদঃ….(অন্য দিকে তাকিয়ে)

মেঘঃ এতগুলো সরি দাভাই!আর এমন করবো প্রমিস

রোদঃ….

মেঘঃ বউমনি দাভাইকে বলো না আমি সত্যি সরি।

রোদঃ……

মেঘঃদাভাই তোমার নাক ছুঁয়ে বলছি আর করবো না।

রোদঃ…

মেঘ ওর কান ছেড়ে রোদের দুই গাল ধরে রোদের গালে এত এত আদর দিলো!তারপরেও রোদ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে!মেঘ মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলে! তারপর আলো মেঘকে ডাকে!আর আলো কি কি যেন বললো মেঘকে ! মেঘ রোদকে বেডে ধাক্কা দিলো আর রোদ বেডে শুয়ে পড়লো!মেঘ আলো হাত ধরে বেডের আরেক পাশে নিয়ে গেল!তারপর রোদের এক হাতের আঙ্গুল গুলো আরেক হাতের আঙ্গুলের মাঝে ঢুকিয়ে আলোকে কানে কানে বললো শক্ত করে ধরে রাখতে!আলো মেঘের কথা মত রোদের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো!রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই মেঘ রোদকে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো!আর রোদ হো হো হাসতে শুরু করলো!কারন রোদের প্রচুর কাতুকুতু…. একদিকে আলো শক্ত করে হাত ধরে থাকার রোদ হাত ছড়াতে পারছে না! আর ওদিকে মেঘ রোদকে কাতুকুতু দিয়েই যাচ্ছে!পুরো বেড জুড়ে দুই ভাই দুষ্টুমি চালাচ্ছে!

রোদ হ্যাচকা টাকে আলোকেও বেডে নিয়ে মেঘ আর আলোকে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো!আর আলো আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।তিনজন মিলে বেডটার পুরো নাজেহাল অবস্থা করে ফেলছে!তিনজনই এখন বেডে শুয়ে এখনো হো হো করে হাসছে……!!

রোদ, আলো ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে আর সকালের খাবার খেয়ে নেয়!আলো, রোদ, মেঘ উঠানে দাড়িয়ে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে যে যার মত!ফুল সাউন্ডে গান বাজছে!বাড়িতে মানুষে গিজগিজ করছে।রোদ আলো আর মেঘকে সামনে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে!গ্রামটা অনেক সুন্দর! রোদ আলো আর মেঘটা এটা ওটা দেখাচ্ছে! রোদ আলোকে দেখাচ্ছে কোনটা কোনটা ওর মামাদের জমি!এর মধ্যে মেঘ হাওয়া হয়ে গেছে কেউ খেয়াল করেনি!রোদ ধানের জমির পাশ দিয়ে হাঁটছে আইল ধরে!দুইপাশেই কেবল কাদা মাটিতে ধানের চারা লাগিয়েছে….!!!

রোদ সামনে আর আলো রোদের পেছন পেছন আইল দরে ধীর পায়ে হাঁটছে!পাশে আম বাগান থেকে মেঘ কচি আমগুলো ইচ্ছেমত ছিঁড়ে গেন্জীতে নিয়েছে! বাগানের মালিককে দেখে মেঘ দিলো দৌড়!মেঘ দৌড়ে আলোর কাছে গিয়ে আলোকে ধরতে যায় আর আইলের উপরে একদম চিকন রাস্তা তাই আর আলো নিজেকে সামলাতে না পেরে আলো রোদের উপর পড়ে!হুট করে এমন করা রোদও নিজেকে সামলাতে না পেরে তিনজন মিলে কাদা মাটিতে ঠাস করে পড়ে গেল!রোদের এখন কি বলার উচিত রোদ এটা বুঝতে পারছে না!ওদিকে জমির মালিক দূর থেকে দেখছে তার সদ্য লাগানো ধানের চারার উপর তিনজন আরামসে বসে আছে!জমির মালিক চিৎকুর দিতে দিতে ওদের দিকে তেড়ে আসছে।

মেঘঃদাভাই পালাও!ওই আংকেল ধরতে পারলে আমার পেছন পার্টে ট্যাটু করে দিবে।

রোদঃ পেছন থেকে ধাক্কা দিলো কে?(দাঁতে দাঁত চেপে)

মেঘঃ আমি…!! (মাথা নিচু করে)

আলোঃ মেঘ উঠো তাড়াতাড়ি…!!

রোদঃ মন চাচ্ছে তোদের দুটোকেই মেরে প্রতিবন্ধী করে বেডে ফেলে রাখতে।(রাগী চোখে তাকিয়ে)

মেঘঃ ওকে পরে করো!দাভাই আমার সব আম পড়ে গেছে একটু তারাতারি করে তুলে দাও না।

আলোঃমেঘবাবু রাখো তোমার আম!জানে বাঁচলে জীবনে অনেক আম খেতে পারবে।মেঘ দৌড় দাও

রোদ পেছনে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি ওই লোকটা একটা লাঠি হাতে তেড়ে আসছে!রোদ আলো আর মেঘের পুরো শরীরে কাদা লেগে একাকার অবস্থা। রোদ আশপাশে তাকিয়ে উঠে ভৌ দৌড় দিলো। রোদ জীবনেও কল্পনা করেনি কারো ভয়ে এভাবে দৌড় দিবে তারপরেও আজকে পরিস্থিতির স্বীকার আর কি।রোদের দেখে আলোও দৌড় এবার মেঘ ওর আম গুলোর মায়া ত্যাগ করে মেঘকে উঠে দাঁড়াতে হলো!রোদ জানে রোদ না উঠলে আলো মেঘও বসে বসে কাহিনী শুরু করবে! মেঘ একবার পেছনে তাকিয়ে দেখে লোকটি কাছে চলে এসেছে! তাই মেঘ চিৎকুর দিয়া বললো…!!

মেঘঃউরি বাবা!দাভাই দাঁড়াও…!!! আমারে নিয়া যাও

এবার মেঘকে পায় কে! তিনজনে মিলে চোখ মুখ খিঁচে দৌড় দিসে আর জমির মালিক পেছন থেকে চিৎকুর করতেই আছে!রোদ একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হাফাচ্ছে মেঘ মাটিতে দুই পা ছড়িয়ে বসে পড়ছে!আর আলো হো হো করে হাসছে এছাড়া কি করা উচিত আলোর আপাতত মাথায় আসছে না।তিনজনে কাদায় মাখামাখি…!!

রোদঃ ছিঃ! ইয়াক। পুরো শরীরে কাদায় মাখামাখি…!

মেঘঃ তোমাকে দেখতে ভালো দেখা যাচ্ছে। হা হা হা

রোদঃ তুই আমার সাথে কথা বলবি না!আজকে সকাল থেকে তুই আমাকে অনেক প্যারা দিয়েছিস।

মেঘঃ কত মিনিট কথা বলবো না বলে দাও..!!

রোদঃ৫ ঘন্টা তুই আমার সাথে কথা বলবি না।

মেঘঃএকটু কমানো যায় না।

রোদঃনা!আর একটা কথা বললে আরো বাড়িয়ে দিবো।

আলোঃ চলুন এবার আমরা বাসায় যায়।সবাই
আমাদের খুঁজবে তো।

রোদ পেছন পেছন হাটছে আর আলো আর মেঘ গল্প করছে আর খিলখিল করে হাসছে!রোদ বুঝতে পারে না এরা এত কথা বলে কিভাবে?দুইজন একসাথে থাকলে আর কিছু লাগবে না এদের।সারাদিন কানের কাছে পকপক করতেই থাকবে।রোদ বিরক্ত হয়ে জোরে জোরে হেটে ওদের আগে বাসায় ঢুকে পড়ে!সবাই ওদের তিনজনকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে!রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বললো…!!

রোদের আম্মুঃ রোদ তোর এই বয়সে এসে এভাবে কাদামাটিতে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে হলো.??(ভ্রু কুচকে)

রোদঃ তোমার ছোট ছেলে যেখানে থাকবে সেখানে কি সুষ্ঠুভাবে কিছু হবে।(রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে)

রোদের আব্বুঃ মেঘ তুমি কি করছো??

মেঘঃ আমি কিছু করিনি আব্বু!আমি যে কিছু করছি দাভাইকে বলো তার প্রমাণ দেখাতে।দেখবে প্রমাণ দিতে পারবে না। দাভাই উল্টে আমাকে আর বউমনিকে ধানের জমিতে ধাক্কা দিসে।

রোদঃ আমি কখন তোদের ধাক্কা দিলাম??(অবাক হয়ে)

মেঘঃ বউমনি বলো! দাভাই আমাদের ধাক্কা দিসে তাই না?আমি আর বউমনি আম খেতে চেয়েছিলাম।তাই দাভাই আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিসে।

মেঘের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে!রোদ মেঘের কান টেনে ধরলো আর মেঘ চিৎকুর করতে শুরু করলো।তারপর দুই ভাইয়ের মারামারি শেষ করা শেষ হলে তিনজন মিলে রুমে চলে গেল।রোদের আব্বু বললো একেবারের রেডি হয়ে নিতে কারন আর দুই ঘন্টা পর সবাই আদিলের শশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হবে!

রোদ ওর রুমে গিয়ে দেখে অনেক মেয়ে বসে আছে!রোদকে দেখে সব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।রোদ বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে!তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে দীদান,বড় মামা,রোদের আব্বু, রোদের আম্মু বসে আছে।রোদ ওর আব্বু কাছে গিয়ে বললো…!!

রোদঃ আব্বু গাড়ির চাবিটা দাও তো।

আব্বুঃ ফ্রেশ না হয়ে কোথায় যাবে এখন আবার??

রোদঃ আমি বাসায় যাবো! এখন মানে এখনই..!!

To be continue…..
(বানান ভুল হলে নিজ দায়িত্বে ঠিক করে নিবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here