#বুকের_বা_পাশে 🌿🌿
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_3
“প্রিয়ম! প্রিয়ম আব্বু কোথায় তুমি?
প্রিয়ম! আব্বু হুট করে কোথায় গেলে?”
হুট করে কোথা থেকে একটা ছেলে দৌড়ে এসে সোফার এক কোণে বসে পড়লো। আশিক ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো।
–“হুট করে তুমি কোথায় গিয়েছিলে? বলছিলাম না কোন দুষ্টুমি করবে না?” (আশিক রেগে)
–“সরি পাপা। আর এমন হবে না।”
–“থাক ভাই বকবেন না।” (নবনী)
–“তা এটাই কি আমাদের জুনিয়র রাজকুমার না কি রে আশিক?” (জাহিদ)
–“হুমম! এটা আমার ছেলে প্রিয়ম। আব্বু সবার সাথে পরিচয় হয়ে নাও।” (মনি)
–“আসসালামু আলাইকুম আন্টি আংকেল! আমার নাম তাশফিক সাফায়েত প্রিয়ম।” (হাসি হাসি মুখে)
–“বাহ খুব সুন্দর নাম!” (জাহিদ)
–“ধন্যবাদ আংকেল।”
একটু পরে তুরাগের সাথে প্রিয়মের কথা হলো। তারপর থেকেই তুরাগের সাথেই ঘুরছে প্রিয়ম। প্রিয়ম খুব দুষ্ট আর খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। একটু সময়ের মধ্যেই প্রিয়ম তুরাগের কানের কাছে বকবক করে কান ঝলাপালা করে ফেলেছে! প্রিয়ম তুয়াকে দেখে অনেকটা সময় তুয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো! তারপর প্রিয়ম দুষ্টু হেসে তুয়ার গালে চিমটি দিলো। আর তুয়া গলা ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করলো! তুয়ার কান্না দেখে প্রিয়ম ভৌ-দৌড়। অনেক লোকজন এসেছে তুরাগদের বাসায়! তুয়া এত লোকজনের ভিড় দেখে আর প্রিয়মের চিমটি খেয়ে সেই তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে থামার কোন নাম নেই! নবনী তুরাগকে বললো মিথিলার কাছে রেখে আসতে। তাই তুরাগ তুয়াকে কোলে নিয়ে ২য় তলার নেমে এলো! কিছুটা সময় হাটাহাটি করলো! তারপর প্রত্যয়দের বাসার সামনে এসে কলিংবেল চাপ দিলো। মিথিলা দরজা খুলে দেখলো তুরাগ এসেছে তুয়াকে নিয়ে! মিথিলা তুরাগকে ভেতরে এসে বসতে বললো! তুরাগ মিথিলার দিকে তাকিয়ে বললো…..!!
–“আন্টি আমাদের বাসায় অনেক গেস্ট এসেছে। তাই তুয়া ওখানে থাকতে চাচ্ছে না! তাই আম্মু বললো তুয়াকে যদি কিছু সময়ের জন্য আপনি নিয়ে রাখতেন।” (তুরাগ)
–“আমি ফ্রি আছি; সমস্যা নেই! তুয়া আমার কাছেই থাকুক।” (তুয়াকে কোলে নিয়ে)
–“আচ্ছা আন্টি! আমি তাহলে যাই।”
–“আচ্ছা যাও! আর তুয়া আমার কাছে যতক্ষণ ইচ্ছে থাকুক সমস্যা নেই!”
–“আচ্ছা আন্টি।”
তুরাগ চলে গেল! মিথিলা তুয়াকে কোলে নিয়ে এ ঘর ও ঘর হেঁটে বেড়াচ্ছে। প্রায় সাড়ে ১২ টার দিকে প্রত্যয় স্কুল থেকে বাসায় ফিরলো। ইশতিয়াক প্রত্যয়কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আবার চলে গেল। প্রত্যয় বাসায় ঢুকে মিথিলার কোলে তুয়াকে দেখে খুব খুশি হলো। প্রত্যয় তুয়াকে কোলে নেওয়া জন্য হাত বাড়াতেই মিথিলা প্রত্যয়কে আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিতে বললো।প্রত্যয় ভদ্র ছেলের মত সব কাজ সেরে তুয়াকে কোলে নিলো! মিথিলা তুয়াকে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে চারপাশে কুশন দিয়ে দিলো। আর প্রত্যয়কে বললো তুয়ার খেয়াল রাখতে। মিথিলা প্রত্যয়কে তুয়ার পাশে রেখে সাওয়ার নিতে চলে গেল।
প্রত্যয় খেয়াল করলো তুয়ার গালে লাল হয়ে আছে! দেখে তো মনে হচ্ছে এক্ষুনি রক্ত বের হয়ে যাবে। প্রত্যয় তুয়ার গালে হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর তুয়ার দুইগালে আদর দিয়ে দিলো আর তুয়া প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো একটা হাসি দিলো। প্রত্যয় তুয়ার সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে আর খেলনা দেখাচ্ছে। আর তুয়া হাত পা ছড়িয়ে মুখের মধ্যে একটা হাত ঢুকিয়ে হাত চুষেই যাচ্ছে! প্রত্যয় বারবার তুয়ার হাত সরিয়ে দিচ্ছে আর তুয়া বার বার মুখে হাত ঢুকাচ্ছে! প্রত্যয় তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো….!!
–“এই দুষ্টু মেয়ে, মুখে হাত দিচ্ছিস কেন? হাতে কত জার্মস থাকে জানিস না?” (হাত সরিয়ে দিয়ে)
–“আবার দেয় মুখে।” (প্রত্যয় আবার হাত টেনে)
প্রত্যয় তুয়ার হাত ধরে রেখেছে তাই তুয়া ঠোঁট ফুলাতে শুরু করলো! প্রত্যয় তুয়ার ঠোঁট ফুলানো দেখে প্রত্যয় খিলখিল করে হেসে বললো।
— “ছিচকাদুনী শুধু কান্না করে! তুই একটা দুষ্টু মেয়ে।”
বেশ-কিছুক্ষণ পর তুরাগ এসে তুয়াকে নিয়ে গেল। আর প্রত্যয়দের সবাইকে তারাতাড়ি যেতে বললো। প্রত্যয়রা সবাই তুরাগদের বাসায় গেলো। প্রিয়ম পুরো বাসায় তুয়াকে খুঁজলো, না পেয়ে ওর বোন মিশির সাথে ইচ্ছে করে ঝগড়া করতে লাগলো! প্রিয়মের কাজই হচ্ছে সবাইকে খোঁচানো! এটা না করলে প্রিয়ম শান্তি তো পায়ই না, বরং দুষ্টুমি না করলে মনে হয় ওর পেছনে কেউ সুঁচ ফুটাতে থাকে। যথারীতি সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলো,কেউ কেউ বিদায় নিয়ে চলেও গেলো। প্রত্যয়দের পরিবারের সাথে প্রিয়মদের পরিবারের খুব ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হলো। এখন যারা যারা এখানে উপস্থিত আছে তারা সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আর প্রিয়ম পাশের রুমে গিয়ে ঘুমন্ত তুয়ার গাল টিপে দিচ্ছে, পায়ের সুরসুরি দিচ্ছে, কাতুকুতু দিচ্ছে, আর তুয়া একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়মের কেন জানি খুব ভাল লাগছে তুয়াকে বিরক্ত করতে! প্রিয়ম আবার তুয়ার গালে সুড়সুড়ি দিয়ে বললো…!!
–“তুরাগ ভাইয়া এই পিচ্ছিটার নামটা কি জানি বললো? ওহ হ্যাঁ! মনে পড়েছে, ওর নাম টুপা! না না টুপা না! টুপা আবার কারো নাম হয় নাকি? তাহলে এর পিচ্চিটার কি জানি নাম বললো? থাক মনে হচ্ছে না যখন তখন তোমাকে আমি টুপা বলেই ডাকবো কেমন! পিচ্চি টুপা।” (গাল টেনে হো হো হেসে)
তারপর বড়রা সবাই আড্ডা শেষ করে হালকা কিছু নাস্তা সেরে সবাই সবার থেকে বিদায় নিলো! আর যে যার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
প্রত্যয়রা এখানে নতুন আসলেও বেশ কয়েকদিনে এখানকার সবার সাথে খুব সহজে মিশে গেলো! আর এই ব্যস্ত জীবনে যে যার মত কাজের মনোনিবেশ করলো। তবে সবার সাথেই সবার সুসম্পর্কটা বজায় আছে। এই ভাবে বেশ কয়েকটা মাসও কেটে যায়! তুয়ার এখন ৬ মাস বয়স! তুয়ার দুইটা দাঁত উঠেছে উপরের মাড়িতে একটা আর নিচের মাড়িতে একটা! তুয়া বু বু শব্দ করতে পারে, যা সামনে পাই তাই মুখে দেয় আর কেউ কোলে নিলে তার হাত, কাঁধ কামড়াতে থাকে! কারন নতুন নতুন দাঁত উঠছে দাঁত শিরশির করে তাই যা সামনে পাই তাই কামড়ানোর চেষ্টা করে!
প্রত্যয় স্কুল থেকে ফিরে একবার হলেও তুয়াকে নিয়ে যায় ওদের বাসায়! তারপর বেশকিছু সময় তুয়ার সাথে বকবক করে তারপর আবার তুয়াকে ওর বাসায় দিয়ে আসে। প্রত্যয় তুয়াকে কোলে নিলেই তুয়া ওর লালা ভেজানো হাতে প্রত্যয়ের নাক মুখ ছুঁয়ে দেয় আর প্রত্যয় কান্নার অভিনয় করে আর তুয়া তখন খিলখিল করে হেসে উঠে। প্রত্যয় যখন তুয়াকে ওর লালা মাখানো হাতে ওর মুখে ছুঁতে দেয় না,
তুয়া তখন প্রত্যয়ের চুল টেনে ধরে আর মুখে বু বু শব্দ করতে থাকে।আর প্রত্যয়ের কাঁধ কামড়াতে থাকে তখন প্রত্যয় তুয়াতে ছাড়াতে গেলে তুয়া আরো জেদ নিয়ে প্রত্যয়কে কামড়াতে থাকে! প্রত্যয়কে এভাবে কষ্ট দিয়েই মনে হয় তুয়া আনন্দ পায়! আর প্রত্যয়ের মুখে লালা লাগানো, কামড়ানো, বু বু শব্দ করে অজানা শব্দ করে কি কি বলা এসব যেনো প্রত্যয়ের প্রতি তুয়ার রাগের একটা বহিঃপ্রকাশ।
প্রিয়মরাও মাঝে মাঝে তুয়াদের বাসায় আসে। সবাই মিলে আড্ডা দেয়, অনেক মজা করে। এভাবে হাসি খুশি নিয়ে কেটে যায় আরো একটা বছর! তুরাগ এখন ক্লাস টেনে পড়ে আর প্রত্যয় ক্লাস সেভেনে পড়ে। আর প্রিয়ম পড়ে সিক্সে! তুয়া বয়স এখন ১৬ মাস! যে বাচ্চারা ১৬-১৮ মাসের মধ্যে কথা বলতে পারে না তাদের লেইট টকিং বেবি বলে। কিন্তু তুয়া সেই রকম না তুয়া খুব তারাতাড়ি হাঁটা,কথা বলার শিখে ফেলছে! তুয়া এখন আধো আধো বুলিতে এত এত কথা বলতে পারে! আধো আধো বুলিতে চাইনিজ ভাষার ঝুড়ি খুলে বসে। দৌড়াতে পারে, হাঁটতে পারে বয়সের থেকে বেশি মেচিউর যাকে বলে।
তুয়া যখন রেগে যায় তখন কি কি যে বলে কেউ বুঝতে পারে না! একটা কথার সাথে আরেকটা কথা পেচিয়ে যায়। আর এভাবে কথা বলায় সবাই যখন ওর কথা শুনে হেসে লুটোপুটি খায়। তখন তুয়া রেগে গিয়ে আর কিছু বলে না উল্টে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করে। এভাবেই দিন দিনগুলো কাটছে!
সময় যেমন ধরে রাখা যায় না, তেমনি ওদের জীবনটাও চলমান স্রোতের মত চলতেই আছে। একটা দিনের সমাপ্তি ঘটিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আরেকটা দিনের। সৃষ্টির শুরু থেকেই যেমন নবজাতক থেকে যৌবন আর যৌবন থেকে বৃদ্ধ এটাই সৃষ্টির আরেক খেলা! আমাদের জীবন বৃক্ষের ৫টি শাখা। যেমন: দিন,বছর, সময়, বয়স আর আয়ু এগুলো বহমান আর এগুলো তার নিয়ম অনুযায়ী বয়ে চলতেই থাকে! সময়ের তো নেই কোন পিছুটান! আর না আছে কারো জন্য থেমে অপেক্ষা করার কোন সময়।
একদিন প্রত্যয় স্কুল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে ওর টেবিলের উপর কিছু একটা দেখে ওর আম্মুকে ডাকতে থাকে। প্রত্যয়ে আম্মু প্রত্যয়ের রুমে আসতেই প্রত্যয় ওর আম্মুকে বলে…!!
–“আম্মু আমার রুমে কি দুষ্টুটা এসেছিলো?”
–“হুমম! কেন কিছু করেছে?”
–“কালকে সারারাত জেগে আমি এই ইংলিশ এসাইমেন্টটা তৈরি করেছিলাম। আর দুষ্টুটা এসে আমার এসাইনমেন্টের উপর লাল কালি দিয়ে আঁকিবুঁকি করে অবস্থা একেবারে খারাপ করে দিয়েছে। এখন আমাকে আবার করতে হবে নতুন করে। একটা পেজে না সব পেজে দেখো কত বড় বড় দাগ টেনে দিয়েছে।” (ঠোঁট উল্টে)
–“টেবিলের উঠলো কি করে?”
–“বেডে থেকে টেবিলে ওঠা কি কোন ব্যাপার?”
–“হা হা হা তাও তো ঠিক! তুয়া খুব দুষ্টু হয়েছে। এখন তো কিছু বলাও যায় না। কিছু বললে ওই উল্টে আঙুল তুলে বলে ‘বপ’ ”
–“হুম! আম্মু আজকে আমি আর কোচিং এ যাবো না। আমার এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করতে হবে। কালকে এটা স্কুলে জমা দিতেই হবে।”
–“আচ্ছা ঠিক আছে।”
তারপর প্রত্যয় আবার ওর এসাইনমেন্ট হাফ রেডি করলো! আসরের আযান হচ্ছে তাই প্রত্যয় নামাজে গেল আর যখন বাসায় ফিরছিলো তখন বাগানের দিকে দেখলো তুরাগ আর তুয়া বল খেলছে! প্রত্যয় তুয়ার কাছে গেলো আর ঘাসের উপর বসলো! তুয়া দুইপাশে দুটো ঝুঁটি করছে দৌড়াদৌড়ির সাথে ঝুঁটি দুইটাও দুলে দুলে যাচ্ছে। প্রত্যয়ও ওদের সাথে খেলতে খেলতে বলটা ছুঁড়ে মারতে গিয়ে তুয়া গায়ে লাগেছে আর তুয়া দৌড়ে এসে প্রত্যয়ে হাতের কব্জিতে কামড় বসিয়ে দিলো….!!
—“আহহ্! তুয়া ছাড় আমি ব্যাথা পাচ্ছি।”
–“তুলা ছাড় প্রত্যয়কে! ও লাগছে তো তুয়া!” (তুরাগ)
তুরাগ তুয়াকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলে নিলো! তুয়া রেগে গিয়ে এবার তুরাগের কাঁধে কামড়ে ধরলো! তুরাগ রেগে গিয়ে তুয়াকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো! প্রত্যয় ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে তুয়া ওর হাতে দাঁত বসিয়ে দিয়েছে! তুয়া কামড় দিয়ে নিজেই আবার কান্না করে দিলো। তুরাগ তুয়ার একটা ঝুঁটি নিয়ে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে গেল! তুরাগ পেছনে ঘুরে প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে বললো ওখানে এন্টিসেপ্টিক ক্রিম লাগিয়ে নিতে।
To be continue….!!
(চুপ করে না থেকে তোমরা রেসপন্স করো! যাতে আমার পরের পার্ট লিখার মনোযোগ সৃষ্টি হয়)