বুকের_বা_পাশে 🌿🌿 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_39

0
381

#বুকের_বা_পাশে 🌿🌿
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_39

প্রত্যয়ের এমন কথায় শুনে তুয়া শান্ত দৃষ্টিতে প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আর প্রত্যয় চুপ করে বসে আছে।তুয়া প্রত্যয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আর দুই হাত দিয়ে প্রত্যয়ের মুখটা তুললো। প্রত্যয়ের চোখে চোখ রেখে শান্ত সুরে বললো,”হঠাৎ এমন করার কারন কি?” প্রত্যয় একবার তুয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললো,

— “আমি তোর কাছে কোনকিছু লুকায়নি। আজকেও কিছু লুকাবো না। আসলে পার্টিতে আমার খাবারে আমার বন্ধুরা দুষ্টুমি করে শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মেডিসিন মিশিয়েছিলো। আর আমি না জেনে সেটা খেয়ে ফেলেছি। এখন আমার নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। তোর সাথে এমন ব্যবহার করা আমার মোটেও উচিত হয়নি। এজন্য আমি সরি। প্লিজ তুই রাগ করিস না। আমি সত্যি সরি, আর এমন হবে না।” (প্রত্যয় অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে )

তুয়া হতবাক হয়ে প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ওর হতচ্ছাড়া বন্ধু গুলো এত অসভ্য কেন? এগুলো কোন পর্যায়ের অসভ্যতামী? বন্ধুরা ফাজলামি করবে এটা সাধারণ ব্যাপার। এটাও মনে রাখবে হবে ফাজলামি করবে ভালো কথা। তবে সেটা লিমিটের মধ্যে। প্রত্যয়ের বন্ধুদের করা এসব ফাজলামি মোটেও ভালো না। কারণ এসব মেডিসিনের প্রভাবে বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রত্যয় এখনও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। বার বার মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করছে। প্রত্যয় কিছু সময় নিঃশ্চুপ থেকে বললো,

— “আমি রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। আমারও তো কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। আমি আবেগের বশিভূর্ত হয়ে এখন কোন পদক্ষেপ নিতে চাই না। কারণ একটা ভুল হতে পারে আমার সারাজীবনের আপসোসের কারণ।তুয়া আমি আমাদের বৈবাহিক জীবনের পথ চলার শুরুটা আবেগের বশিভূত হয়ে ভুল পথ অবলম্বন করে শুরু করতে চাই না। আজকের রাতটা আমি অন্য রুমে চলে যাচ্ছি। আর আমি যত বড় ডক্টর হয় না কেন, আমিও তো একটা ছেলে। সব সময় যে নিজেকে কনট্রোল করার ক্ষমতা আমার হাতে থাকবে, এমনটাও কিন্তু না।” (প্রত্যয়)

তুয়া প্রত্যয়ের সব কথা মনে দিয়ে শুনলো। আসলেই প্রত্যয়ের কথাগুলোতে যুক্তি আছে। তুয়া প্রত্যয়ের সামনে এসে বললো।
— “তুমি তো বিবাহিত তাহলে এত সমস্যা কিসের?তোমার তো বউ আছে, তাহলে কনট্রোলের কথা আসছে কোথা থেকে?”(তুয়া)
— “তুই কি বলছিস? তোর মাথা ঠিক আছে? বউ আছে তো কি হয়েছে? বউ থাকলে যে তাকে খুবলে খেতে হবে, এমনটা তো না।” (প্রত্যয় শান্ত সুরে)
— “আমি তো সেটা বলিনি। আমার জন্য তো তুমি এতোদিন অনেক স্যাকরিফাইজ করলে। এবার আমাকেও আমার কিছু দায়িত্ব পালন করতে দাও। কেন কেন শুধু আমাকে পাপী বানাচ্ছো?” (তুয়া মাথা নিচু করে)
— “মানে?” (প্রত্যয় ভ্রু কুচকে)
— “ওই হাদীসটা পড়ো নি? কোন হাজবেন্ড যদি তার বউকে কাছে ডাকে। আর সে বউ যদি স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে রহমতের ফেরেশতা গুলো সেই বউয়ের প্রতি লানত অর্থাৎ অভিশাপ দিতে থাকে। তাহলে আমিও তো ওই পথের পথিকই হলাম। আমাকে তুমি বেহায়া মেয়ে ভেবো না। আমি তোমার কথা ভেবেই এতগুলো কথা বললাম। আমি মুসলিম ঘরের মেয়ে। এসব হাদীসকে তো এমনি এমনি হয়নি। প্লিজ আমাকে তুমি ভুল বোঝো না।” (তুয়া মাথা নিচু করে)
— (নিশ্চুপ)

প্রত্যয় আর কোন কথা বললো না। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। তুয়া মুখে যত কথাই বলুক। প্রত্যয় তবুও চাই না এমন ভাবে তুয়াকে কাছে পেতে।প্রত্যয় সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ৩০মিঃ হয়ে গেছে। তুয়া দুইবার দরজায় নক করেছে। কিন্তু প্রত্যয়ের কোন সাড়াশব্দ নেই। তুয়া অনবরত নক করেই যাচ্ছে। কারণ ৩০মিঃ এর জায়গায় এখন ৫৬ মিঃ হতে চললো।তুয়া ভয়ে এবার কেঁদেই দিয়েছে। তুয়া কাঁদছে আর প্রত্যয়কে ডাকছে। কিন্তু প্রত্যয় দরজাটাও খুলছে না। আর কোনো সাড়াশব্দও করছে না। তুয়ার মনে কেন জানি অজানা একটা ভয় এসে হানা দিচ্ছে। তুয়া কেঁদে কেঁদেই বললো,

— “আমি মন থেকে তোমাকে পারমিশন দিয়েছি। আমিও নতুন করে এবার শুরু করতে চাই। তুমি প্লিজ ওয়াশরুম থেকে বের হও। তুমি যেমনটা বলবে তেমনটাই হবে। আমি তোমাকে আগ বাড়িয়ে আর কিছু বলবো না।প্লিজ আমার উপর রাগ করো না।” (তুয়া)
— (নিশ্চুপ)
— “প্লিজ তুমি বের হও। আমাকে যদি একবিন্দুতে পরিমান ভালবেসে থাকো তাহলে প্লিজ বের হও। আমার ভয় লাগছে। প্লিজ আমার কথায় তুমি আর রাগ করো না, বের হও।” (তুয়া)

প্রত্যয় দরজা খুলে দিলো। তুয়া ওয়াশরুমে দরজাতে দাঁড়িয়ে প্রত্যয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। তুয়ার আচানক এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াতে প্রত্যয় ওয়াশরুমের দরজা ধরে নিজেকে সামলে নিলো। তুয়া ভয় পেয়ে শব্দ করে কাঁদছে। প্রত্যয় চুপ করে আছে। তুয়া প্রত্যয়কে ছেড়ে দিলো। আর ওর হাত ধরে টেনে সোফাতে বসালো। তুয়া টাওয়াল এনে প্রত্যয়ের মাথা মুছে দিলো। তুয়া নাক টেনে কেঁদে যাচ্ছে আর প্রত্যয় তুয়ার কান্না দেখছে। তুয়া প্রত্যয়ের হাতে ড্রেস ধরিয়ে দিয়ে ওকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। এরপর তুয়া রান্নাঘরে গিয়ে কড়া করে চা করে আনলো। প্রত্যয় বের হয়ে বেডের উপর শুয়ে পড়লো। তুয়া এসে প্রত্যয়ের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিলো। প্রত্যয়ের ভেজা কাপড় গুলো তুয়া বারান্দায় মেলে দিয়ে আসলো। এরপর হুট করে এসে তুয়া প্রত্যয়ের কোলে বসে পড়লো। আর ঘাড় ঘুরিয়ে প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “প্রথম ভালবাসার কথা কখনো একেবারে ভোলা যায় না। মনের কোনো এক কোণে সেটা রয়েই যায়। তুমি আমার প্রথম ভালবাসার মানুষ নও, কিন্তু তুমি আমার হাজবেন্ড। আর হাজবেন্ড হলো একটা মেয়ে বর্তমান, অতীত, ভবিষ্যত। তুমি কেন আমার বিবেকের কাছে আমাকে খারাপ বউ বানাচ্ছো? আমি তো তোমাকে আমার হাজবেন্ড হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমি তোমার বউ। সেক্ষেত্রে তোমার সব দায়িত্ব তো আমারই।আজকের পর থেকে আমি খুব ভাল বউ হয়ে দেখাবো।তুমি দেখে নিও, আমার নামে তুমি তখন আর কোন অভিযোগ করতে পারবে না। অনেক কাহিনীই তো হলো। আমি এবার সবকিছু স্বাভাবিক করতে চাই, সাথে আমাদের এই পবিত্র সম্পর্কটাকে নতুন রুপ দিতে চাই।” (তুয়া)

তুয়া কথাটা বলে প্রত্যয়ের কপালে আদর দিলো।প্রত্যয়ের চোখে পানি ছলছল করছে। তুয়া মুচকি
হেসে প্রত্যয়কে জড়িয়ে ধরলো। প্রিয়মকে তুয়া হারিয়েছে। কিন্তু প্রত্যয়কে কিছুতেই হারাতে পারবে না।তুয়া এখন নিজের বিবেকের কথা শুনছে, এই একটা মাস তুয়া নিজেই নিজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো। আর শেষ পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে তুয়া কোনো ভাবেই প্রত্যয়কে আর কষ্ট পেতে দিবে না। প্রিয়মের শেষ চাওয়াটাও তুয়াকে পূরণ করতে হবে। আর প্রিয়মের শেষ চাওয়া ছিলো প্রত্যয়কে ভাল রাখা। তুয়া শুধু প্রিয়মের কথাতে না, বরং মন থেকে প্রত্যয়কে হাজবেন্ড হিসেবে মেনে নিয়েছে। তুয়া ওর ভাগ্য কে মেনে নিচ্ছে, ওর আর প্রত্যয়ের পবিত্র সম্পর্কটাকে মূল্য দিতে চাচ্ছে।
তিনজনে এভাবে আর কত দগ্ধ হবে? কেউ ভালবাসার মানুষে পেয়েও কষ্ট পাচ্ছে। আর কেউ না পেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। এভাবে তো আর জীবন চলে না। কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন তো ওদের হতেই হবে। একদিন না একদিন এই নিষ্ঠুর খেলার সমাপ্তি তো ঘটাতেই হবে।এজন্য তুয়াও এই পথটাকেই বেছে নিয়েছে।

তুয়ার কথা গুলো শুনে প্রত্যয় তুয়াকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। প্রত্যয় এখন যেন ওর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এতদিনের চাওয়াটা যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তে পূরণ হয়ে যাবে। এটা প্রত্যয় কল্পনাও করেনি।প্রত্যয় মনে মনে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছে। তুয়া যে এত দ্রুত নিজেকে সামলে নিবে, এত সহজে সবটা মেনে নিবে; এটা প্রত্যয় কল্পনাতে ভাবতে পারেনি। তুয়া প্রত্যয়ের কানে কানে বললো,

— “তাই বলে এত সহজে আমার নাগাল পাবেন না ডক্টর সাহেব। এর জন্য কিন্তু মূল্য দিতে হবে হুহ।” (তুয়া)
— “এর জন্য আপনার কি লাগবে শুনি? আমি আপনাকে সব মূল্য দিতে রাজি আছি। আর সেটা বিনাবাক্যে।” (প্রত্যয় তুয়ার নাক টেনে)
— “একটা ফুলগাছকে অনেক যত্ন করার পর একটা পবিত্র ফুলের কলি ফুটে। তেমনি আমার শরীরটাকেও আমি কত সাবান, লোশন কত কি ব্যবহার করে কত যত্ন করেছি। আর আপনি এসে এত সহজে সবটা নিজের দখলে করে নিবেন। আমি তা তো হতে দিবো না।” (তুয়ার মুখে দুষ্টু হাসি)
— “ওহ হো তাই তো! এখন কি যায় বলুন তো? কি করলে আমার ফুলটাকে আমি চিরদিনের জন্য শুধু আমার করে পাবো?” (প্রত্যয় তুয়ার কাঁধে থুতনি রেখে)
— “এজন্য বিল পরিশোধ করতে হবে আপনাকে? আর এর মূল্য হিসেবে আপনাকে অমূল্য কিছু দিতে হবে। সেটা আর কোনদিনও ফেরত চাইতে পারবেন না। আর না অন্য কাউকে দিতে পারবে?” (তুয়া)
— “আপনার কি চাই, সেটা তো বলুন?” (প্রত্যয়)
— “আপনার সবটুকু ভালবাসা আমার চাই। আপনার প্রতি শুধু আমার অধিকার থাকবে। কোনভাবেই আমাকে দুরে সরিয়ে দেওয়া যাবে না। আমি ছাড়া আপনার এই বুকের বা পাশে আর অন্য কাউকে জায়গা দেওয়া যাবে না। এবার বলুন দিতে পারবেন কি না? রাজি থাকলে এক চাপুন আর না হলে দুই চাপুন।” (তুয়া)
— “তাই বুঝি! আমার বুকের বা পাশে শুধু আমার তুয়াপাখিটা আছে। আর সেই থাকবে সারাজীবন। তুই তো আমার হৃদপিন্ড। একটা মানুষ যেমন তার হৃদপিন্ড ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনি আমি তোকে ছাড়া একেবারে নিঃস্ব। আমি যে তোকে ছাড়া বাঁচার কথা ভুলেও কল্পনাতে আনতে পারি না।” (প্রত্যয় তুয়ার দুইগাল ধরে,আদুরে সুরে)
— “ঠিক আছে বৎস্য। তোমার এই আবদার খানা মন্জুর করা হলো। তারপরেও বলবো, ডক্টর সাহেব তুমি আমার মন পাবে। কিন্তু শরীর পাবেনা।” (তুয়া খিলখিল করে হেসে)
— “ওহ তাই না! বালিকা তোমার মনটাই আমার বড্ড বেশিই প্রয়োজন। শরীর হিসাবটা না হয় তোলায় রইলো। ” (প্রত্যয়)

প্রত্যয় কথাটা বলতে বলতে তুয়ার কাঁধে একটা কামড় বসিয়ে দিলো। তুয়া চোখ মুখ খিঁচে প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। প্রত্যয়ের মুখে দুষ্টু হাসি। আর ওর চোখ মুখে সুখের আভাস। তুয়া প্রত্যয়ের বুকে একটা কিল বসিয়ে বললো,

— “তোমাকে যতটা ভদ্র মনে হয়, তুমি মোটেও ততটা ভদ্র নও। তোমাকে দেখে সবাই ভাবে তুমি শান্ত আর ভদ্র ছেলে। এটা একদম ভুল তথ্য। তুমি খুব দুষ্টু একটা ছেলে।অনেকে বলে যে দেখতে যত বেশি ভদ্র, চার দেওয়ালের মাঝে সে তত বেশি দুষ্টু । তুমিও তেমন।” (তুয়া মুখ ভেংচি দিয়ে)

তুয়ার কথা শুনে প্রত্যয় হো হো করে হেসে দিলো। তুয়া প্রত্যয়ের এমন মন খোলা হাসি, খুব কম সময়ই দেখেছে।প্রত্যয় হাসলে যে ওকে দেখতে এতটা সুন্দর দেখায়। এটা তুয়ার জানা ছিলো না। আর এটাও সত্যি, তুয়া প্রত্যয়কে ভাল ভাবে কোনদিন খুঁটিয়ে দেখেই নি। এজন্য প্রত্যয়ের বিষয়ে অনেক কিছু তুয়ার অজানায় থেকে গিয়েছিলো।তুয়া প্রত্যয়কে এভাবে হাসতে দেখে, নিজেও হেসে দিলো। তুয়া প্রত্যয়ের কোলে থেকে নামার জন্য ছটফট করছে। আর প্রত্যয় তুয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।প্রত্যয় তুয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে খুব স্লো ভয়েজে বললো,

— “এতদিন আপনি আমার নাগালের বাইরে ছিলেন।এখন থেকে আপনি শুধু আমার পাখি। এবার থেকে আমার বুকের বা পাশে আপনাকে বন্দী করে রাখবো।আর কোথাও আপনাকে যেতে দিবো না। এবার থেকে এই দুষ্টু ছেলেটার সব অত্যাচার আপনাকে সহ্য করতে হবে। বুঝলেন বাবুর আম্মু?” (প্রত্যয় খুব আদুরে সুরে)

তুয়া আর প্রত্যয় মিলে ঠিক করলো।আর পাঁচটা হাজবেন্ড ওয়াইফের মত ওদের সম্পর্কটাও এবার স্বাভাবিক করে নিবে। এরপর, প্যারিসে আর কিছু দিন থেকে ওরা বাংলাদেশে ফিরে গেল। মাঝে মাঝে দুজনের ঘুরতে যাওয়া, তুয়ার ছোট ছোট আবদার, খুনশুটি ঝগড়া এসব করেই ওদের দিন কাটছে। তুয়া ওর মতো করে পড়াশোনার চালিয়ে যাচ্ছে । প্রত্যয় হসপিটালে যত ব্যস্ত ই থাকুক, তার মধ্যেও তুয়ার প্রতি প্রত্যয়ের ভালবাসাটা একটুও কমেনি। বরং দিন দিন আরো বেড়ে গেছে। তুয়া এখনও প্রত্যয়কে ওর সেই ছোটবেলার পুতুলের ব্রেসলেটাকে স্বযত্নে তুলে রাখতে দেখেছে। তুয়া এখন জানে, কেন প্রত্যয়কে প্যারিসে যেতে হয়েছিলো?তুয়া এটাও জানে প্রত্যয় ছোট বেলা থেকেই ওকে ভালবাসে। তুয়া প্রত্যয়ের ডাইরির পড়ে আরো অনেক অজানা তথ্য জেনেছে। সেগুলো তুয়ার কাছে একদম অজানা ছিলো। তুয়া ছোট্ট বেলায় প্রত্যয়ের হাতে যে কামড় দিয়ে সেই দাগটা আজও রয়ে গেছে। আর এটা নিয়ে প্রত্যয় তুয়াকে খোঁচাতে থাকে। তুয়া রেগে গেলে, প্রত্যয় তখন মুচকি হাসে ।এখন প্রত্যয় আর তুয়া যথেষ্ট সুখী। ওদের দুজন দুজনের প্রতি রয়েছে অসীম ভালবাসা আর অগাত বিশ্বাসের সমাহার।

প্রায় ৬ বছর পর__

— “মাম্মা আমি বাবার সাথে কথা বলবো। এখনই বাবাকে ফোন দাও। এখন মানে এখনই।” (প্রাণ চিৎকার করে)

— “তোমার বাবা এখন ব্যস্ত আছে। তোমার বাবা তোমার সাথে পরে কথা বলবে। এখন তারাতাড়ি খেয়ে নাও, আর লক্ষী ছেলের মত ঘুমিয়ে পড়ো তো আব্বু।” (তুয়া)

— “না না আমি আগে বাবার সাথে কথা বলবো। তুমি ফোন দাও, এখনই ফোন দাও বাবাকে।” (প্রাণ)

— “বাপের মতই খাটাশ হচ্ছে দিন দিন। মন চাই আমিই এদের অত্যাচারে বনবাসে চলে যায়।” (তুয়া মনে মনে)

তুয়া ওর ছেলের জেদের কাছে হার মানলো। আর প্রাণের বাবাকে ভিডিও কল করলো। প্রাণ তুয়া হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। ফোনের ওপর পাশের মানুষটা কল রিসিভ করলো। তবুও প্রাণের মুখে হাসির রেখা দেখা দিলো না। তুয়া ওখানে আর না থেকে চলে গেল।আর প্রান ওর বাবার সাথে কথা না বলে চুপ থাকলো।প্রাণের মুখে গম্ভীরতা ছাপ স্পষ্ট। ওর অসম্ভব মায়াবী দুটো চোখ আর গুলুমলু দুটো গাল। আর রাগে নাক আর ফর্সা কান দুইটা লাল হয়ে আছে। প্রাণকে এখন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে কোন কারনে রেগে আছে। আর একবার রেগে গেলে ওর রাগ ভাঙ্গাতে সবার কাল ঘাম ছুটে যায়। এতটুকু একটা বাচ্চা। কিন্তু ওর রাগ আর জেদের দিক থেকে সবাই ওর কাছে কাবু। প্রাণ ঠিক কার মত হয়েছে, এটা বলাও খুব মুশকিল। কারণ প্রাণকে এখন দেখেই বোঝা যায়, প্রান বড় হলে একদম স্ট্রং পারসোনালিটির একজন মানুষ হবে। যেটা এই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায় না বললেই চলে।
প্রাণকে চুপ থাকতে দেখে ওর বাবা হাসি হাসি মুখে আদুরে সুরে বললো,

— “আমার প্রিন্স চার্মিং কি করছে, হুম? সেকি খেয়েছে, নাকি এখনো না খেয়ে আছে, শুনি?” (প্রিয়ম হাসি হাসি মুখে)

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here