এলোকেশী_কন্যা২ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_3 🍁🍁

0
800

#এলোকেশী_কন্যা২
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_3
🍁🍁

_____জলিল মিয়া আলোকে মাছ দিয়ে গেল!আলো মাছগুলোকে কেটে, ধুয়ে রান্না করলো।ছোট মা বাইরে গেছে আর দীদা গেছে পাশের বাসায় বেড়াতে।আলো ওর রান্না শেষ করে! তারপর রান্না ঘর ঝাড়ু দিয়ে রান্নাঘরের সবকিছু গুছিয়ে রাখলো!একটুপর ছোট মা বাসায় এসে গোসল সেরে বসে!আলো গুটি গুটি পায়ে ছোট মায়ের কাছে গেল তারপর ছোট মাকে উদ্দেশ্য করে বললো…!!

আলোঃ ছোট মা আমার শ্যাম্পু লাগবে! যদি টাকা দিতে তাহলে নিয়ে আসতাম (মাথা নিচু করে)

ছোট মাঃদুইদিন পর পর এত শ্যাম্পু করা লাগে ক্যান?জমিদারী কম করেন! আর আপনার মরা মা আইসা তো টাকা দিয়ে যাই না।যে যখন তখন যা ইচ্ছা চাইবেন আর পাইয়া যাবেন!!!

দীদাঃ আচ্ছা তুমি মাইয়ার লগে সব সময় এমন কইরা কথা কও কেন??তোমার মুখে কি তিল পরিমান রস কস নাই..!!

ছোট মাঃএত টুকু মাইয়ার এত বড় চুল রাখার কি দরকার বাপু আমি তো বুঝি না। আম্মা আপনি একদম আমারে ধমকাবেন না কইয়া দিলাম।

দীদাঃমাইয়া মানুষের চুলেই সৌন্দর্য! আর তোমার এত কথা কিসের শুনি!একদম বেশি কথা কইবা না আমার লগে..!! বেশি কথা কইলে ঘর থেইকা বাহির কইরা দিমু! ভুইলা যাইও না এই বাড়িটা আমার..!

ছোট মাঃআমি যা বলি তাতে তো আপনি চেইতা যান!

দীদাঃএই ছেরি এইহানে না দাড়াইয়া! যা এইহান থেইকা। আমার ঘরে শ্যাম্পু আছে লইয়া তারাতারি গোসল কইরা নে।


আলো দীদার রুম থেকে শ্যাম্পু নিয়ে কল পারে চলে যায় গোসল করতে!ছোট মায়ের এসব কথায় আলোর আর খারাপ লাগে না!আলো হাসি মুখেই সব মেনে নিয়েছে।আলো বালতিতে পানি তুলে দাদীকে ডাক দেয়! কারন আগে আলোর মা ওর চুলে শ্যাম্পু করে দিতো আর এখন দীদা করে দেয় কারন একা একা আলো চুল সামলাতে পারে না।তবে চুল সামলাতে না পারলেও আলোর কখনও ভাবে না চুল কেটে ফেলার কথা! কারন আলো দূবল পয়েন্ট ওর চুল!আলো খুব যত্ন করে ওর চুলের…!!
.
.
.
ওই দিকে রোদের আম্মু রোদকে ফোন করে বাসায় ডেকে নেয়!রোদ বাসায় আসে আর জিজ্ঞাসা করে এত জুরুরী ভাবে আসতে বলছে কেন?রোদের আম্মু বলে..

রোদের আম্মুঃ রোদ আমি আনন্দপুর যাবো!
তোমার খালামনির বাসায় যাবো!তোমার খালামনির নাকি অসুস্থ।

রোদঃ কখন যাবে আম্মু??

আম্মুঃ আমি এখুনি বেরিয়ে পড়বো!অনেক দুরের রাস্তা! আমার এখন আর মন বসবে না বাসায়। তুমি কি যাবে আমার সাথে নাকি বাসায় থাকবে??

রোদঃ আমি বাসায় থাকি তুমি মেঘকে নিয়ে যাও!আর আমি ড্রাইভার কাকাকে বলছি গাড়ি বের করতে।

আম্মুঃ আচ্ছা আমি এখুনি রেডি হয়ে আসছি।


রোদের আম্মু আর মেঘ চলে গেল।রোদের বাবা অফিসে এজন্য রোদ বাসায় থাকলো।রোদ সোফাতে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই এলোকেশীকে দেখতে পেলো।রোদ হুড়মুড়িয়ে সোফা থেকে উঠে চুল মুঠো করে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।তারপর গিটার হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল! আর গিটারে টুংটাং শব্দ করতে থাকলো! তারপর রোদ চোখ বন্ধ করে গানের কয়েক লাইন গেয়ে উঠলো…

!!_____মন ভাবে তারে এই মেঘলা দিনে…
শীতল কুয়াশাতে তার স্পর্শে
তার রুমঝুম নূপুরের সাজে..
বাতাসে যেনো মৃদু সুবাসে..
নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক পায়েল খানি বাজে..
মাদল বাজে সেই সঙ্গেতে শ্যামা মেয়ে নাচে___!!

.
.
.
মেঘ আর ওর আম্মু তিন ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করে রোদের খালামনির বাসায় গেল!তারপর যথারীতি ফ্রেশ হয়ে রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে নিলো।রোদের খালামনির কোন বাচ্চা নেই! এজন্য উনি আর উনার হাজবেন্ড থাকে শুধু এখানে।রোদের আম্মু বলেছিলো ঢাকাতে চলে যাওয়ার জন্য বাট রোদের খালামনি রাজি হয় নি।ওই দিকে মেঘ তো উশখুস করছে ওর সময় কাটছে না আর এখানে নেটও পাচ্ছে না।রাস্তায় আস্তে আস্তে গেম খেলে ফোনের চার্জও শেষ করে ফেলছে! এজন্য ফোনটাও এখন চার্জে দিসে।মেঘ একটা রুমে শুয়ে বিরবির করে বলছে__
.
.
.

মেঘঃ ঝামেলা আসলে সব দিক থেকেই আসে!ইসসস রে কি যে বিরক্ত লাগছে। মন চাচ্ছে উপর দিকে পা তুলে! মাথা নিচে করে শুয়ে থাকি।অশান্তি আর অশান্তি চারদিকে শুধু অশান্তিতে ছড়াছড়ি।ওহহ এবার বুঝেছি দাভাই কেন আসে নি! কিন্তু আমাকে ঠিকই পাঠিয়ে দিল।দাভাই আমারে আসতে দাও তোমার ওয়ালেট ফাঁকা না করতে পারলে আমার নামও মেঘ না। ধুব জীবনডাই প্যারা…!!

তারপর মেঘ বকবক করতে ঘুমিয়ে পড়ে!
.
.
.
______পরেরদিন সকালে…!!!

মেঘ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে আশে পাশে ঘুরতে বের হলো!মেঘ হাটতে হাটতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই কোথা থেকে একদল এক হাঁস এসে মেঘকে দৌড়ানি দিলো!মেঘ মনে করছিলো এক পাশ দিয়ে চলে যাবে! বাট রাজ হাঁস ওকে তাড়া দিলো আর মেঘ প্রাণপণে দৌড় দিলো!আলো তখন পারু আর পুটির কে নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলো!মেঘ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আলোর পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।আলো তারাতারি মেঘকে মাটি থেকে উড়ালো।মেঘ মুখ তুলে একবার আলোর দিকে আবার তাকালো…!!
.
.
.
আলো মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে! এই বাচ্চা ছেলেটি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!আলো মেঘকে ভালো করে দেখলো বাচ্চাটি গাল দুটো গলুমলু অনেক কিউট!বাচ্চাটার ড্রেস দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভালো পরিবারের ছেলে।বাচ্চা হলে কি হবে স্টাইলিশও আছে।হালকা নীল রংয়ের টি- শার্ট আর কালো জিন্স পড়ে আছে।আলো মুচকি হেসে মেঘের গায়ের ধুলো ঝেড়ে দিলো।তারপর আলো মেঘের সাথে কথা বলতে শুরু করলো!মেঘও খুব মিশুক তাই দুজনেই গল্প জুড়ে দিলো!মেঘের কথা শুনে তো আলো খিলখিল করে হাসছে!আর মেঘেরও কেন জানি আলোকে হাসাতে খুব ভালো লাগছে!মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!
.
.
.
মেঘঃ আচ্ছা তোমার নাম কি?? (আলোর দিকে তাকিয়ে)

আলোঃ আমার নাম আতকিয়া ইবনাত আলো!আমার মা আমাকে আলোমনি কইয়া ডাকে।তোমার যেইডা ইচ্ছা হয় সেইডা কইয়া ডাকতে পারো।আচ্ছা এবার তুমি কও তোমার নাম কি??

মেঘঃ আমার নাম মেঘ মেহবুব!আমাকে সবাই মেঘ বলেই ডাকে..!!

আলোঃ আমি তোরে মেঘ বাবু কইয়া ডাকমু..!!

মেঘঃ আচ্ছা! আমি তোমাকে বউমনি বলে ডাকবো।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

আলোঃ ক্যান আমারে বউমনি কইয়া ডাকবা ক্যান??

মেঘঃ আমিও তোমাকে ভালবাসে বউমনি বলে
ডাকবো।আমি বউমনি বললে কি তুমি রাগ করবে??

আলোঃ না রাগ করুম না!তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই বইলা ডাইকো।

মেঘঃ বউমনি তুমি দেখতে খুব সুন্দর!

আলোঃ হা হা হা তাই নাকি মেঘবাবু।তুমিও দেখতে একদম রাজপুত্রের মত(মেঘের গাল টেনে)

মেঘঃ আচ্ছা বউমনি তুমি এভাবে কথা বলো কেন??

আলোঃআমি শুদ্ধ ভাবেও কথা কইতে পারি কিন্তু যেহেতু গেরামে থাকি! এখন যদি আমি শুদ্ধ ভাবে এখানকার মানুষের লগে কয়! তাহলে অনেক ভাববে স্কুলে যাইয়া দুই লাইন শিইখা এখন মর্ডেল কইরা কথা কই!

মেঘঃকেন তারা তাই বলবে কেন???

আলোঃ কারন গ্রামের তো সবাই পড়াশোনা করে না!আর করলেও একটা কথা আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী এর মত ব্যাপার।সেসব তুমি বুঝবা না মেঘবাবু

মেঘঃ আচ্ছা! এখন যে ভাবে কথা বলছে এটা কি এই গ্রামের ভাষা??

আলোঃহুমম!প্রতিটা গ্রামের বা জেলার আঞ্চলিক ভাষা আছে!আর যেখানে যে ভাষা ব্যবহার করে কথা বলা দরকার সেখানে সেইভাবেই আমি কথা বলি।তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে শুদ্ধ ভাবে কথা বলবো।

মেঘঃ না না তুমি এভাবে কথা বলো!আমার শুনতে ভালো লাগছে..!!

আলোঃ আচ্ছা (মেঘের গাল ধরে টেনে)
.
.
.
আলো আর মেঘের দুইজনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়!আলো পারু আর পুটির সাথে মেঘের আলাপ করে।মেঘের খুব ভালো লাগছে আলোর সাথে থাকতে!আলো মেঘকে নিয়ে ওর বাসায় চলে যায়! কারন এখনই গোয়ালা আসবে দুধ দোয়ানোর জন্য! মেঘও আলোর সাথে আলোর বাসায় যায়!আলো মেঘকে একটা মোড়া দেয় বসার জন্য! মেঘও চুপটি করে বসে আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে।আলো একটা বাটিতে মেঘকে তিলের নাড়ু আর ভাজা বাদাম দিলো।মেঘ বাটিটা হাতে ধরে বসে আছে..!!ঠিক তখনই গোয়ালা তার ভাঙা সাইকেলে বেল বাজাতে বাজাতে আসলো..!!
.
.
.
মেঘ বসে বসে গোয়ালার কাজের গতি বিধি ফলো করছে!গোয়ালা দুধ দোয়াতে শুরু করলো আর মেঘ তখন গুটি গুটি পায়ে হেটে গোয়ালার পাশে দাঁড়ালো! গোয়ালা তখন মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো__!!

গোয়ালাঃ এই ছ্যারা কি দেখো?তোমারে তো দেখে মনে হইতাছে শহরে পোলা।তা এইহানে কি করো??

আলোঃ কাকা এইডা আমাগো পাশের বাসার রুপা চাচির বোনের পোলা।ওর নাম মেঘ বাবু..!!

গোয়ালাঃএর আগে দুধ দোয়ানো দেখছোনি??

মেঘঃ না দেখিনি!আচ্ছা আমিও এমন চ্যা চু চ্যা চু কইরা দুধ দোয়াবো।প্লিজ আংকেল আমাকেও একটা সুযোগ দেন।
.
.
.
গোয়ালাঃ পারবা তো!ব্যাটা মানুষের সব কাজে শেখা উচিত! আসো আমি তোমারে দেইখা দেই! কেমনে দুধ দোয়াই
.
.
.
মেঘ খুশি মনে গোয়ালার সামনে বসে বসলো!তারপর মেঘকে হাত ধরেই দেখালো কিভাবে দুধ দোয়াতে হয়!মেঘের হাত কাঁপছে তারপর একা একাই চেষ্টা করলো দুইবারের বেলাতে পারলো না কিন্তু তিনবারের বেলায় ঠিকই পারলো।মেঘের তো খুশি ধরে না!তারপর গোয়ালা মেঘকে সরিয়ে আবার নিজের কাজে লেগে পড়লো!মেঘ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুধ দোয়ানো দেখছে! ধবলির মায়ের গায়ে মশা বসেছিলো এজন্য ধবলির মা লেজ দিয়ে মশা তাড়াতে গিয়ে মেঘের গালে লেজ দিয়েই বারি দিলো।মেঘ সাথে সাথে ওর গালে হাত দিয়ে রাগি চোখে ধবলির মাকে উদ্দেশ্য করে বললো..!!
.
.
.

মেঘঃ বেত্তামিজ কাউ! আমার বাবা,মা আর দাভাই আমাকে কোনদিন মারে নি! আর তুই কি না তোর পটি মাখানো লেজ দিয়া আমি চড় মারলি।দাড়া আমি তোর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিবো..!!স্টুপিট কাউ তোকে আমি দেখে নিবো..!!
.

To be continue….

আগের পার্ট
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=650955365741110&id=100024799560108

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here