এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_15 🍁🍁

0
776

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_15
🍁🍁

মেঘঃ ইয়ে মানে স্যার আসলে নামতার সুর টা আমার মনে আছে কিন্তু নামতা টা আপাতত মনে নাই।আপনি চাইলে আমি আপনাকে পাগলু গানটা গেয়ে শোনাতে পারি…(বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)

স্যার মেঘের আর কোন কথা না শুনে ক্লাসের বাইরে মেঘকে কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখলো!যদিও মেঘের কাছে এটা নতুন কিছু না!কারন সপ্তাহে পাঁচদিনই মেঘ ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাড়িয়ে থাকে!মেঘ প্রতিদিন ম্যাথ টিচারের অসুখ কামনা করে! যাতে ম্যাথ স্কুলে না আসতে পারে! আর ওদের ক্লাস নিতে না পারে।বেচারা মেঘ কান ধরে এদিক ওদিক তাকিয়ে পযবেক্ষণ করছে কোথায় কি হচ্ছে?? একটু দুরে মেঘ দেখে একটা বিড়াল একটা প্রাচীরের উপর ঘুমিয়ে আছে!মেঘ গুটি গুটি পায়ে আর একটু সামনে এগিয়ে গেল!আর বিড়ালটাকে ভালো করে দেখছে আর মনে মনে বলছে..!!

মেঘঃ আহারে ম্যাওটা কত কষ্ট করে বালিশ ছাড়া ঘুমাচ্ছে! আমি যদি কোনদিন দেশের প্রধান মন্ত্রী হয় তাদের সব বিড়ালকে একটা করে বালিশ দান করবো।আর বিড়াল ছানা গুলোকে গুলোকে একটা করে দুধের প্যাকেট দিবো…. (মনে মনে)

তারপর মেঘ বিড়ালটাকে দেখে আবার আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালো! আর টিচারের দিকে তাকিয়ে টিচারকে কয়েক দফা গালি শুরু করলো।

মেঘঃ এই স্যারটা আমার জীবনের সব শান্তি কেড়ে নিলো!আমি মনে থেকে দোয়া করলাম স্যার আজকে বাসায় গেলে স্যারের বউ স্যারকে রান্না করতে দিবে। স্যার রান্না করতে গিয়ে রান্না পুড়িয়ে ফেলবে! তখন স্যারের বউ স্যার কে মেরে স্যারের পেছন পার্ট লাল করে দিবে!তখন হারামজাদা স্যার বুঝতে পারবে আমার কষ্টটা! আমারও যে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পেছন পার্ট ব্যাথা হয়ে যায়।আল্লাহ প্লিজ আজকে আমার দোয়াতে কবুল করো। (মনে মনে)

ওইদিকে________!!

আলো কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে!আর রোদের তো ঘুম থেকে উঠার নামই নেই।রোদের আম্মু রোদকে ডাকতে গেলে আলো নিষেধ করে দেয়!আলো বলে আলো একাই চলে যেতে পারবে!রোদের আম্মু আলোকে একা ছাড়ে না বরং বাড়ির গাড়িতে করেই আলোকে কলেজে পাঠিয়ে দেয়।আলো কলেজে গিয়ে ক্লাস রুমে গিয়ে বসতেই কয়েকজন মেয়ে আলোকে ঘিরে ধরে। আলো মুচকি হেসে সবাইকে সালাম দেয়! বাট মেয়েগুলো সালামের উওর না নিয়ে হো হো হাসতে শুরু করে!আলো বুঝতে পারে না ওদের হাসির কারন! এজন্য আলো ফ্যাল ফ্যাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে……!!

রিপাঃ রোদকে বস করলে কিভাবে??আমরা কলেজের টপ সুন্দরী হয়েও ওর পাশে ঘেষতে পারলাম না! আর তুমি কি না ওর বাইকে বসেছো…???

রুশাঃতুমিও কম সুন্দরী না তারপরেও বলবো রোদের থেকে দূরে থাকো।কারন ঐশী যদি জানে তাহলে তোমাকে জানে মেরে দিবে।

আলোঃ আপনারা কে?আর আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন??

রিপাঃ আমরা কে এখনই তুমি জেনে যাবে! এত অধৈর্য হলে চলবে..!!

ঐশীঃ রোদ আমাকে ইগনোর করে তোকে ওর বাইকে বসিয়েছি।রোদ মনে করছে রোদ যা বলবে আমি চুপচাপ ওর কথায় মেনে নিবো।হা হা হা সো ফানি….!!

ঐশী কথা বলতে বলতে আলোর হিজাব ধরে এক টান দিলো আর হিজাব খুলে গেল!ঐশী জোর করে আলোর হিজাব খুলে মাটিতে ফেলে দিলো! আলো কেঁদে কেঁদে বার বার নিষেধ করছে তাও শুনছে না আলোর কথা কেউ……!!

আলোঃ এমন করবেন না!আপনি আমাকে মারুন
আমি মেনে নিবো! তাও আল্লাহ দোহায় লাগে আমার হিজাবে হাত দিবেন না।(কেঁদে কেঁদে)

ঐশীঃ রোদকে আমি ৪ বছর ধরে ভালবাসি!যে কোন মূল্যে আমার রোদকে চাই ই চাই!আমি যেখানে রোদের সাথে ১০ সেকেন্ডের জন্য কথা বলতে পারি নি! আর তুই কি না আমার রোদের বাইকে বসেছিস। জানে মেরে দিবো তুই আমাকে চিনিস না….(ধাক্কা মেরে)

ঐশী কথাটা বলে আলোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!আর আলোর বেঞের কোনায় গিয়ে মাথায় আঘাত পায়!তারপর ঐশী চলে যায় রুম থেকে। আলো মেঝে থেকে হিজাবটা তুলে কোন কমন রুমে গিয়ে হিজাবটা ঠিক করে!আর কাঁদতে কাঁদতে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়।ওইদিকে১০ টার রোদের ঘুম ভাঙ্গে!আর ঘড়ি দেখে হুড়মুড়িয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়!রোদ নিচে গিয়ে শিউলির থেকে জানতে পারে আলো একাই কলেজে চলে গেছে!রোদ রাগে চোখ মুখ লাল করে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বাইক নিয়ে বের হয়ে গেল।

আলোকে এভাবে যেতে দেখে আবৃতি, আশা, আকাশ, সিয়াম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে!আকাশ সাথে সাথে ফোন বের করে রোদকে ফোন দেয়! বাট রোদ তখন তাড়াহুড়ো করতে করতে ওর ফোনটাই বাসায় রেখে চলে আসে।আকাশ, সিয়াম বার বার রোদকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে বাট কেউ ফোনটা রিসিভ করছে না।এদিকে আলো কাঁদছে আর রাস্তায় দৌড়াচ্ছে আর তখনই রোদের বাইকের সামনেই পড়ে!পিচঢালা রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাত ছিলে রক্ত বের হতে থাকে!রোদ তারাতারি বাইক সাইড করে আলোকে তুলে…

আলো রোদকে দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো!আলোর চোখের পানি দেখে রোদ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে…

রোদঃ কি হয়েছে এভাবে পাগলে মত রাস্তায় হাটছিলে কেন???
আলোঃ….
রোদঃ কেউ কিছু বলছে?? এভাবে কাঁদছো কেন??বলো আমাকে??

আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে!চোখ, নাক ঠোঁট , গাল লাল হয়ে আছে!চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে!রোদ আর আলোকে কিছু জিজ্ঞাসা করে না! রোদ আলোকে বাইকে বসতে বলে!রোদ বাইক স্টাট দেয় আর আলোকে নিয়ে একটা পার্ক যায়।কারন এখন বাসায় গেলে রোদের আম্মু তুলকালাম বাঁধিয়ে ছাড়বে।তারপর রোদ বাইক পার্ক করে আলোকে একটা জায়গায় বসতে বলে আর রোদ একটা দোকানে পানি আনতে যায়।রোদ পানি এনে আলোকে খেতে বলে আর চোখ মুখে পানি দিতে বলে!আলো পানির বোতল নিয়ে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে…!!

রোদ আলোর হাত থেকে পানি বোতলটা কেড়ে নিলো!তারপর আলোর গাল চেপে ধরে পানি মুখে দিলো!আলো চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে।রোদ আলোর মুখে পানি দেওয়ার পরেও আলো মুখ পানি নিয়ে বসে আছে!আসলে রোদের এমন কাজে আলো যে পানি গিলবে এটাই ভুলে গেছে!রোদ দেখে আলো পানি না খেয়ে রোদের দিকেই তাকিয়ে আছে!রোদ এবার আলো নাক চেপে ধরলো আর আলো সাথে সাথে পানি টা খেয়ে নিলো!আলো পানিটা খেয়ে ভ্য ভ্য করে কেঁদে দিলো বেচারা আলো আর সহ্য করতে পারছে না…..

রোদঃ আরে বাবা রে কি হয়েছে না বলে ছিচকাদুনের মত কাঁদছো কেন?আর পার্ক এসে এভাবে কাঁদলে পাবলিক মনে করবে আমি উল্টা পাল্টা কিছু করছি।কান্না থামাবে নাকি থাটিয়ে একটা থাপ্পড় দিবো। অযথা না কেঁদে মার খেয়ে তারপর বসে কাঁদতে থাকো।

আলোঃআপনি শুধু শুধু আমাকে বকা দেন কেন??(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে)

রোদঃনা বকবো না! কোলে বসিয়ে আদর করবো।আর কাঁদছো কেন এটাই তো জানতে চাচ্ছি না বললে আমি জানবো কি করে??

আলো রোদকে কিছু বললো না!রোদ বার বার জিজ্ঞাসা করছে বাট আলো টু শব্দও আর করে নি!রোদ আলোর পাশে বসে ফোনে কিছু একটা করছে আর আলো তাকিয়ে আছে একটা গাছের ডালে দিকে।আলো যে গাছের ডালের দিকে তাকিয়ে আছে সেখানে একটা পাখি তার ছানা গুলোকে কিছু খাওয়াচ্ছে।আর পাখির ছানাগুলো কিচিরমিচির শব্দ করছে!হয়তো আলোও এখন ওর বাবা মাকে মিস করছে।রোদও খেয়াল করছে বিষয়টা তারপর রোদ আলোকে উদ্দেশ্য করে বললো….

রোদঃ আমি সকালে খেয়ে আসিনি!আমার খুব খুধা লাগছে। চলো আমি এখন কিছু খাবো….

আলোঃ আমি কিছু খাবো না! আপনি যান

রোদঃ যা বাবা! আমি আবার তোমাকে আমি কখন খেতে বললাম।আমি খাবো আর তুমি বসে বসে দেখবে..!!

আলোঃ আমি বাসায় যাবো এখন!আমার ভালো লাগছে না।

রোদঃ না এখন বাসায় যেতে হবে না!কারন এখন বাসায় গেলে তোমাকে দেখার সাথে সাথে আম্মু আমাকে ঝাড়া শুরু করবে!

আলোঃ…

রোদঃ আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলো তো..??
আলোঃ কি সত্যি কথা??

রোদঃ তোমরা মেয়েরা এত ছিচকাদুনে কেন?আর তোমাদের চোখের এত পানি আসেই বা কোথায় থেকে!কিছু হলেই এমন ভাবে মরা কান্না শুরু করে যে বন্যা বানানো কনট্রাক নিয়েছো…!তারপরের নাক টেনে কান্না করো। ছিঃ!ইয়াক…..

আলোঃ আচ্ছা আপনি যান কিছু খেয়ে আসুন!আমি বসে আছি..!!

রোদঃ মেঘ যদি সাথে যায় তো যাবে..!!

মেঘের কথা শুনে আলো রোদের দিকে একবার তাকালো!কারন এখন আলোর মেঘকেই খুব দরকার।মেঘেই পারবে আলোর মনটা ভালো করতে।
রোদ আলোর তাকানোর মানে বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ালো! রোদ আর আলো মেঘের স্কুলে গেল! মেঘের স্কুল ছুটি দিতে আর ৫ মিঃ বাকি।রোদ মেঘের স্কুলের সামনে গিয়ে দেখে ওদের গাড়ির ড্রাইভার এসেছে মেঘকে নিতে!রোদ ড্রাইভারের কাছে গিয়ে বললো….

রোদঃ রমিজ আংকেল আপনি আমার বাইক নিয়ে বাসায় চলে যান।আর আমি মেঘকে নিয়ে পরে বাসায় ফিরবো…

রমিজঃ আচ্ছা বাবা!

রমিজ আংকেল রোদের বাইক নিয়ে চলে গেল!রোদ আর আলো দাড়িয়ে আছে মেঘের জন্য! রোদ আড়চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।তখন মেঘ গেট দিয়ে সবাইকে ঠেলেঠুলে বের হচ্ছিলো।মেঘ আশে পাশে তাকিয়ে ওদের গাড়ি খুঁজতে থাকে! রোদ আর আলো এক সাইডেই দাড়িয়ে মেঘের কান্ড দেখছে।মেঘের স্কুলে ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে মেঘ যুদ্ধ করে বের হলো!শার্টের উপরে একটা বোতাম খোলা!টাই টার বেহাল দশা,আর জুতার কথা নাই বা বললাম।তবে চুল গুলো একদম ঠিক ঠাক আছে।রোদের ভাই বলে কথা।রোদ আর মেঘ তাদের চুল নিয়ে মজা করা একদমই পছন্দ করে না।মেঘ আশ পাশে তাকাচ্ছে ড্রাইভার আংকেল কে খুঁজছে! আর রোদ তখন গাড়িতে থাকা ফাস্ট এইডের বক্সটা বের করে! আর আলোর হাতে পরিষ্কার করে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করে দেয়।

মেঘ কোমরে দুই হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকাচ্ছে!হঠাৎই আলোর দিকে মেঘের চোখ যায় আর একদৌড়ে আলোকে জড়িয়ে ধরে।আলোকে দেখে মেঘ খুব খুশি হয়েছে!রোদ আলো আর মেঘকে গাড়িতে বসতে বললো।আলো পেছনে বসতে গেলে রোদ আলোকে সামনে বসতে বসলো।আলো ওর সাইড ব্যাগ আর মেঘের থেকে কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পেছনের সিটে রেখে দিলো!আর মেঘকে কোলে নিয়ে সামনের সিটেই বসে পড়লো।আলো মেঘকে ওর দিকে ঘুরিয়ে শার্ট টা ঠিক করলো!টাই টা সুন্দর করে বেঁধে দিলো তারপর মেঘের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে হাত ভিজিয়ে মেঘের মুখটা ধুয়ে দিলো! তারপর নিজের ওড়না দিয়ে মেঘের মুখটা মুছে দিলো!মেঘ ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে…!!

হঠাৎ মেঘ রোদের উপর হামলে পড়লো!কিল,ঘূষি,কামড় সাথে রোদের শার্ট ধরে টানতে শুরু করলো…..!!!

To be continue…..

(আজকের পার্ট বড় করেই দিসি!তোমরাও বড় করে কমেন্ট করবা। আর কমেন্ট করার কিছু না পেলে আমার প্রশংসা করবা কেমন।আমি রাগ করবো না..!! 😜😜)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here